লন্ডনে তুর্কি দুতাবাসের সামনে ২১ সংগঠনের প্রতিবাদ কর্মসূচী ও স্মারকলিপি প্রদান বাংলাদেশে চলমান আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার কার্যক্রমের সহায়ক শক্তি হিসেবে ছাত্র শিক্ষক পেশাজীবী এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ১৩ সংগঠনের আন্তর্জাতিক জোট "ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম" (আইসিএসএফ) এর আহ্বানে আজ ১৬ জানুয়ারী ২০১৩ লন্ডনে তুর্কী দূতাবাসের সামনে মুক্তিযুদ্ধ এবং বিচারের পক্ষের ২১ সংগঠনের এক সম্মিলিত প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হয়।
বিচারাধীন আসামী গোলাম আযমের মামলার রায় বিষয়ে হস্তক্ষেপমূলক তুর্কী রাষ্ট্র প্রধানের সাম্প্রতিক চিঠি এবং এর পরবর্তিতে ট্রাইবুনালের কার্যক্রম পরিদর্শনকারী এক তুর্কী প্রতিনিধিদলের অসদাচরণের প্রতিবাদেই এই কর্মসূচী, যা তুর্কী দুতাবাসে স্মারকলিপি প্রদানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। হিমাংকের তিন ডিগ্রী নিচে তাপমাত্রায় প্রতিকূল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে উক্ত প্রতিবাদ কর্মসূচীতে মুক্তিযুদ্ধ এবং চলমান বিচারের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তি সংহতি জানিয়ে সামিল হন। বর্ণাঢ্য ব্যানার ফেস্টুন প্ল্যাকার্ডে এবং উপস্থিত জনতার শ্লোগানে প্রকম্পিত হয় লন্ডনের বেলগ্রেভ চত্বরের দুতাবাস এলাকা।
উপস্থিত এবং সংহতি জানানো সংগঠনগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), আওয়ামী আইনজীবি পরিষদ, প্রজন্ম'৭১, যুদ্ধাপরাধ বিচার মঞ্চ, প্রবাসী পেশাজীবি পরিষদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, এবং চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যায় লিপ্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আল-বদর এবং আল-শামসদের পক্ষ অবলম্বনকারী রাষ্ট্র তুরস্ক যার নিজেরই বিরুদ্ধে রয়েছে আর্মেনীয় এবং কুর্দিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় রাষ্ট্র হিসেবে তুরস্কের নিজেরই রয়েছে এই সব অপরাধ বিচারের দায়িত্ব, যেই একই দায়বদ্ধতা থেকে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বর্তমানে ১৯৭১ এ সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহের বিচার করছে। এই বিচার প্রক্রিয়ার অধীনে অভিযুক্তদের কয়েকজন ঘটনাচক্রে জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংশ্লিষ্ট হলেও বিচার হচ্ছে ব্যক্তি হিসেবে তাদের কৃত অপরাধেরই, এখানে অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। তাই কেবলমাত্র জামায়াতে ইসলামীর সাথে তুরস্ক সরকারের এবং সেখানকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি মুসলিম ব্রাদারহুডের সাংগঠনিক যোগাযোগকে ভিত্তি করে তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের এই প্রচেষ্টা কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতই নয়, এটি কূটনৈতিক শিষ্টাচার এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনেরও নামান্তর। কারণ এর মাধ্যমে সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনভাবে চলমান একটি বিচার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করা হয়েছে, যা একইসাথে ১৯৭১ এর সকল শহীদ, নির্যাতিত, এবং বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের সুবিচারের দাবির প্রতি অবজ্ঞাজনকও বটে।
এই সব অপতৎপরতার নিন্দা জানিয়ে, এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং তুরষ্ক সরকারের দিক থেকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবী জানিয়ে আইসিএসএফ এর পক্ষে সৈকত আচার্য বলেন, 'এটি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার জন্য আত্ম-মর্যাদার প্রশ্ন, এবং এই লড়াই আমাদের সবার'।
প্রায় শতাধিক মানুষের সম্মিলনে অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে উপস্থিতদের মধ্যে আরও ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ, ব্যারিস্টার নোরা শরীফ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতৃবৃন্দ সৈয়দ আনাস পাশা এবং আনসার আহমেদ উল্লাহ, যুক্তরাজ্য জাসদ এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবুল মনসুর, যুদ্ধাপরাধ বিচার মঞ্চের যুক্তরাজ্য শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক এডভোকেট আনিসুর রহমান, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার সওগাতুল খান এবং সাধারণ সম্পাদক অনুকূল তালুকদার (ডাল্টন), এবং প্রজন্ম ৭১ নেতা মুরাদ রনি প্রমুখ।
প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিবিসি, এটিএন বাংলা, বাংলা টিভি, চ্যানেল এস, চ্যানেল নাইন, এবং চ্যানেল আইয়ের প্রতিনিধিবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই তুর্কি রাষ্ট্র প্রধানের এই শিষ্টাচার বহির্ভুত হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গণতান্ত্রিক, সেক্যুলার এবং ইসলামী চিন্তাবিদদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে। বিবৃতি প্রদানকারী ইসলামী চিন্তাবিদদের সংগঠনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - ওয়ার্ল্ড মুসলিম কংগ্রেস, ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামিক রিফর্ম এবং দ্বীন রিসার্চ সেন্টার। আহ্বানকারী আইসিএসএফ এর জোটভুক্ত উল্লেখিত ১৩-সংগঠন হল বাংলাদেশ সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ, সচলায়তন, আমারব্লগ, মুক্তাঙ্গন ব্লগ, ক্যাডেট কলেজ ব্লগ, ই-বাংলাদেশ, নাগরিক ব্লগ, জেনোসাইড বাংলাদেশ আর্কাইভ, মুক্তমনা ব্লগ, আমরাবন্ধু ব্লগ, লন্ডন লইয়ার্স ফোরাম, নিউজ বাংলা, এবং রেডিও হৈচৈ। ১৯৭১ এর সকল শহীদ এবং নির্যাতিতদের বিচারের দাবীর পক্ষে ২০০৯ সাল থেকে সক্রিয় এই জোট বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ, কারিগরি সাহায্য প্রদানসহ দেশে এবং বিদেশে একে সঠিকভাবে তুলে ধরার কাজে নিয়োজিত।
মন্তব্য
স্যালুট সমস্ত অংশগ্রহণকারীকে - আপনাদের জন্য গর্বিত!
আইসিএসএফ কে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি প্রতিবাদ বাস্তবায়িত করার জন্য।
সচলায়তন এর নাম দেখে খুব ভাল লেগেছে
ফারাসাত
বিবিসি বাংলা কাভারেজ দিয়েছে দেখলাম।
তুরস্কের দূতাবাস বা কনস্যুলেট আছে, এমন শহরের বাংলাদেশীরা কি (প্রয়োজনে তাঁদের বিদেশী বন্ধুদেরও সঙ্গে নিয়ে, কারণ তুরস্কের আচরণ পৃথিবীর সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রার্থীকেই ক্ষুব্ধ করে তোলার কথা [বিদেশীদের সচেতনতা প্রসঙ্গে এই পোস্ট দ্রষ্টব্য]) নিজেদের সংগঠনের ব্যানারে এমন আরো প্রতিবাদ সমাবেশ করতে পারেন না?
দারুন আইডিয়া! আমার বন্ধুদের আমি বলছি - দেখি কি হয়!
দারুন আইডিয়া। খোঁজ নিচ্ছি হিমু ভাই, হেলসিঙ্কিতে দূতাবাস আছে মনে হয়। এখন অনুদা থাকলে খুব ভালো হত। তাও আমি কাল সকাল থেকেই দেখছি কতদুর কি করা যায়। হেলসিঙ্কিতে যে দুয়েকজন বাঙালিকে চিনি কথা বলে দেখি কার কেমন আগ্রহ।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
পোস্টার, ব্যানার, এসবের নকশা সব তৈরি আছে শুনলাম। আপনাদের শুধু প্রিন্ট করে নিতে হবে। আইসিএসএফের পরিবর্তে অন্য কোনো সংগঠনের ব্যানারে করতে চাইলে সেভাবে কনফিগার করেও দেয়া সম্ভব।
আমি ইতিমধ্যে হেলসিঙ্কিতে দুয়েকজন ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, এখনও কারো উত্তর পাইনি, দেখা যাক দিন শেষে কি হয়। সত্যি সত্যি যদি কিছু করতে পারি খুব ভালো লাগবে। যদি সম্ভব হয় পোস্টার, ব্যানারের জন্য আইসিএসএফের ব্যানারেই করব।
অনেক অনেক ধন্যবাদ হিমু ভাই।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
সাফিনাজ - আপনাকে অনেক ধন্যবাদ - অবশ্য এত ধন্যবাদ এর ও কিছু নাই - এটাতো আমাদের সবার দায়িত্ব - আমি যদি আপনি হতাম তাহলে আর কাউকে না পেলে শুধু যোশেফ কে নিয়েই দাঁড়িয়ে যেতাম হেলসিঙ্কিতে - আপনার চেস্টা সফল হোক - কিছু বন্ধু আপনার পাশে দাড়াক - কোন সহযোগিতা করতে পারলে খুশি হব।
এখন পর্যন্ত কারো পজিটিভ রেসপন্স পেলাম না। মেজাজ খারাপ লাগছে। সমস্যা হল আমি হেলসিঙ্কি তে খুব কম মানুষ চিনি আর তাম্পেরে তে বাঙালিদের ধর্ম নিয়ে অনেক কাজ আছে-- সেখানে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধ এইগুল খুব গৌণ বিষয় তাই অনেক আগেই বাঙ্গালীদের সঙ্গ পরিত্যাগ করেছি।
স্যামদা আপনার আইডিয়া ভালো। জোসেফ ফ্রি থাকলে ওকে নিয়েই চলে যাব। দুইজন মিলেই না হয় প্রতিবাদ করলাম। দেখি কাউকে না পেলে তাই করতে হবে।
একটা ব্যাপার হল যে কোন প্রতিবাদে কিছু মানুষ সাথে জুটলে তার গুরুত্ব অনেক বাড়ে।
অনুদাকে সিরিয়াসলি মিস করছি।
উনি হেলসিঙ্কি তে অনেক কে চিনেন।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
সারাবিশ্বে প্রতিবাদ গড়ে উঠুক, সারাবিশ্ব জানুক... এসব হুমকী ধামকীতে আমরা ডরাই না...
ডরাইলেই ডর...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
প্রতিবাদ চলছে, প্রতিবাদ চলবে।
সাথে ছিলাম, আছি, থাকব।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
প্রতিবাদ চলছে চলবে...
সংহতি জানাই ।
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
খুবই ভালো উদ্যোগ।
সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের জন্য গর্বিত
সমর্থন জানিয়ে গেলাম।
'সচলায়তন' জোটভুক্ত থাকায় গর্ববোধ করছি।
আইসিএসএফ এর জন্য শুভকামনা। অনেক ধন্যবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণকারী এবং আয়োজকদের
কৃতজ্ঞতা!!
_____________________
Give Her Freedom!
নতুন মন্তব্য করুন