ছেলেবেলায় আমি কখনও জমাট কলা ( দুইটি কলা একসাথে থাকে ) খাই নি । আরও সহজভাবে বলতে গেলে জমাট কলা কখনও পাইনি যে খাব । আমাদের বাসায় আব্বা কখনও জমাট কলা আনতেন না । বাসায় সবাই জানত কোন পুরুষমানুষ জমাট কলা খেলে তার বৌ এর জমজ বাচ্চা হয় ! এক বাচ্চার দুনিয়ায় আসা আর তার বেড়ে ওঠা নিয়েই যত সমস্যা দুইটা বাচ্চার রিস্ক নেয় কোন বোকা ? তাই বাসায় পাওয়া এ শিক্ষাটা আমি অনেকদিন মেনে চলেছি । পরিচিত অনেক বন্ধু ও মানুষকেই পরবর্তিতে দেখেছি তারাও এ ঝুঁকি নিয়ে জমাট
কলা খান না । সুতরাং এই বিষয়টা নিয়ে কোথাও তেমন কোন বিড়ম্বনার মধ্যে আমাকে পড়তে হয়নি , মুখোমুখি হতে হয়নি বন্ধু-বান্ধবের টিটকারীরও ।
জমাট কলা না খেয়ে ,বৌয়ের ডাবল কাচ্চা-বাচ্চার ঝুঁকি এড়িয়ে দিন আমার ভালই যাচ্ছিল কিন্তু বিধাতার বুঝি আর সহ্য হল না । আঠারো বছর বয়সে যখন সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বান্ধবি( পড়ুন প্রেমিকা ) জোটানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ল তখন ঐ বয়সে আমার মধ্যে তীব্র বৈরাগ্যবোধ জন্ম নিল । এই অধমের মনে হল এই জীবন আর সংসার সব ঝুটা হ্যায় । কি লাভ এতে ? সিদ্ধান্ত নিলাম সারাটা জীবন অকৃতদারই থেকে যাব (এখন অবশ্য মাথা থেকে ভূতটা নামছে , মনে হচ্ছে বিয়াটা জরুরীই!)। বিয়েই যখন আর করছি না তাই বৌ বা কাচ্চা-বাচ্চা কিছুই আর হচ্ছে না । সুতরাং ডাবল বাচ্চার রিস্ক থাকা সত্ত্বেও জমাট কলা আমার জন্য হালাল হল । কিন্তু অন্য সকল ভাইরা যারা বিয়ে করেছিলেন বা বিয়ে করার মনস্ত করেছিলেন তাদের জন্য এই প্রজাতির কলা তখনও হারাম(!) ছিল । বলা বাহুল্য তার সুফল সেই সময় থেকে আমি পেতে শুরু করেছিলাম এবং এখনও পাচ্ছি । কিভাবে ? সেই হিসাবটাই আমি এখন বলব ।
একবার টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার পর হলে খাবার-দাবারের প্রার্দুভাব দেখা দেয় । পর্যাপ্ত ছাত্র নাই এই হেতু প্রায় সব হলের (একটি বাদে ) ক্যান্টিন বন্ধ করে দেয়া হয় । আহার গ্রহনের নিমিত্তে জৈষ্ঠ মাসের তালপাকা দুপুরে দূরবর্তী হলের ক্যান্টিনে নির্দিষ্ট সময়ে যেতে হয় । সময়ের একটু এদিক ওদিক হলেই সারা ! গিয়ে কতগুলো টেবিলে ছাত্রদের চাবানো মুরগীর হাড় ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না । সুতরাং সময় নিয়ে সবসময় তৎপর থাকি । কিন্তু বন্ধের মাসে কতই বা আর ঘড়ি ধরে চলা যায় ? দুপুরের প্রবল ঘুমের তোড়ে একবার ক্যান্টিনের টাইম মিস হয়ে যায় । অগত্যা ক্ষুধায় কাতর আমি যাই পলাশী বাজারে রুটি আর কলা কিনতে । তখন দ্রব্যমূল্যর উদ্ধগতিতে প্রতি পিস কলার দাম সবে দুই টাকা থেকে তিন টাকা হয়েছে । এমনিতেই সারা মাস বাহিরে বাহিরে খেয়ে পকেটের অবস্থা টাইট তারপরে দোকানীও দেখি বা হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির সমান কলা তিন টাকা করে চায় প্রতিটা । মেজাজ অত্যধিক খারাপ । জমাট দুইটা কলা দেখিয়ে দোকানীকে বলি আলাদা দুইটার ঝামেলা না করে ঐ দুইটাই দিন । দোকানীকে দশ টাকার একটা নোট দেই। দোকানী আমাকে সাত টাকা ফেরত দেয় । আমি লোকটার কান্ডজ্ঞান দেখে অবাক হই । এরে দিয়ে ব্যবসা হচ্ছে কিভাবে ? দোকানীকে বলি আমি তো দুইটা নিছি আপনি একটার দাম রাখছেন । দোকানীও মনে হয় আমার কান্ডজ্ঞান দেখে অবাক হয় । বলে জমজ কলার দাম একটার দামের সমান । দোকানীর ভাবটা এমন এই সাধারণ জিনিসটা আমি এতদিন জানতাম না ! আমি যুগপৎ অবাক আর আনন্দিত হই । এই চরম দুর্দিনে একটার দামে দুইটা কলা ( হোকনা জমজ) পাওয়া যাচ্ছে এটা কি কম আনন্দের ! আমি প্রথমে ভেবেছিলাম ঐ দোকানেই শুধু মনে হয় এই হিসাব কিন্তু পরে অন্য দোকানেও দেখেছি একই অবস্থা । আমি সেই থেকে কলার দোকানে গেলে জমাট কলা খুঁজি । একটা কলার দামে যখন দুটি পাওয়া যাচ্ছে সেখানে আলাদা করে দুটি কিনে দোকানীকে বেশী টাকা দিয়ে কি লাভ !
--------------------------------
someone is waiting
মন্তব্য
হাঃ হাঃ হাঃ
আমি এসব কুসংস্কারে কখনোই বিশ্বাস করিনা। ছোট বেলা থেকেই দেদারসে জমজ কলা খাচ্ছি। আমার বৌয়ের জমজ বাচ্চা হলেও তো সমস্যা দেখিনা তাইনা ? এক প্রচেষ্টায় দুইটা বাচ্চা পাওয়া গেলে ক্ষতি কি !!! অনেকটা একটার দামে দুইটা কলা পাবার থিওরির মতন। জমজ কলা দেখলে তাই আমাকে খেতেই হয়। তবে এখানে আসার পর থেকে একটাও খাওয়া হয়নাই। বড়ই দুঃখ।
--------------------------------------------------------
ইশ! দেশে থাকতে কেন এই কথাটা জানতাম না!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
খুবই ভুল করসেন। এক কলার জাগায় দুই কলা। জমাট কলার খোসায় জট- কলায় না। দোকানে গেলে এখনও জমাট কলা খুঁজি।
আমাদের অবশ্য জমজ সন্তান। তবে জন্মের পার্থক্য আট বছর। হা হা হা!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
নতুন মন্তব্য করুন