ছোটগল্প : : প্রাকৃত

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩১/০৭/২০০৮ - ৬:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মফা আর সাবেতের সাথে বৃদ্ধ দুইজনের দেখা হয় এক গরমের রাতে মফস্বল শহর থেকে সামান্য দূরে গ্রামের নিকটবর্তী একটি কালভার্টে ।

শীতের শেষে কেবলমাত্র গরম পড়তে শুরু করেছে । সারাদিন সূর্যের চরম চোটপাট । বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে রাস্তায় লোকজন কমতে শুরু করে । সরকারী-বেসরকারী অফিসের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা একটু বর্হিমুখী টাইপের তারা এসময় অফিস থেকে বাসায় ফিরে কাপড়-চোপড় বদলে সামান্য চা-নাস্তা খেয়ে বেড়িয়ে পড়ে । কেউ কেউ আড্ডা জমায় বইয়ের লাইব্রেরীতে , কাপড়ের দোকানে , ফার্মেসীর ভিতর ও বাহিরের টুলগুলোতে আবার কারো কারো আড্ডার স্থান হয়ে ওঠে হাটের সামনের চায়ের দোকানগুলো । গ্রামের লোকজন যারা হাট করতে এসেছিল মফস্বল শহরে তারা বাড়ীর দিকে পা বাড়ায় , কাঁচা বাজারের দোকানগুলো বন্ধ হতে শুরু করে । সারা দিন নানান কাজের পর শহরটা যেন ঝিমানোর প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে । শুধু ব্যস্ততা বাড়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের । সারা বিকেল গরু-ছাগলের চামড়া কেনার পর এসময় এরা হিসাব নিয়ে বসে । বিশাল আড়তের কাঁচা চামড়ার কটা গন্ধের মধ্য বসে কর্মচারীরা চামড়া টান টান করে বেঁধে লবন ছিটাতে থাকে । কাল ঢাকা থেকে মহাজন এসে ট্রাক ভরে চামড়া নিয়ে যাবে । আড়তে মহা ব্যস্ততা । ঠিক এই সময়ে নিয়ম করে দুঘন্টার জন্য বিদুৎচলে যায় প্রতিদিন । সেচের মৌসুম শুরু হয়েছে । প্রত্যন্ত অন্চলে চলে গেছে বিদুৎ। স্যালো মেশিনের পানি তোলা হচ্ছে বিদুৎদিয়ে । এইসব মফস্বলে দেয়ার মত কারেন্ট কৈ ?

কারেন্ট চলে গেলে শহরটা যেন আবার সন্ধ্যার পরের ক্ষনিক নিস্তব্ধতা থেকে আবার জেগে ওঠে । প্রতিটা বাসায় হারিকেন-মোমবাতি জ্বালানো শুরু হয় । স্কুল কলেজের ছাত্ররা পড়ার টেবিল থেকে বেড়িয়ে পাড়ার মোড়ে জড়ো হয় , স্থানে স্থানে সংঘবদ্ধ হয়ে আড্ডা দেওয়া শুরু করে । যাদের বাড়িতে ছাদ আছে তাদের বাড়িতে মহিলা-মেয়েরা ছাদে জড়ো হয়ে গল্প-গুজব করে । সারা দিনেই টিভি ছাড়া এটাই এদের একমাত্র বিনোদন ।

মফা আর সাবেতের এ সময়টাই ভাল লাগে । এমনিতেই সারা দিন সূর্যের তাপ শূষে নিয়ে বাড়িগুলো গরম হয়ে থাকে । কারেন্ট না গেলে বাড়িতে থাকাই সমস্যা হয়ে যেত । দুইবার করে ডিগ্রী ফেল করে এরা অনেকদিন নিজেদের বাড়িতেই বোঝা হয়ে ছিল । তখন অন্যদের গরম তো এদের উপর পড়তই । এখনও অবশ্য এদের উপর গরম পড়ে তবে সেটা বাড়ির না বাজারের । শহরের কুদ্দুস মোল্লার হাটগুলোতে এরা ইজারা তোলো । কুদ্দুস মোল্লা ঝানু ব্যবসায়ী । শহরের দুই দিন বসা হাট ছাড়াও এনার ইজারা নেয়া আছে শহরের একটু বাহিরে গ্রামের দিকের দুটা হাট । মফা আর সাবেত আরও অন্যদের সাথে এই হাটগুলোতে হাটের দিন দোকানদারদের কাছ থেকে ইজারা তোলো কুদ্দুস মোল্লার পক্ষ হয়ে । শুধু কি দোকানদার , এসব হাটের গরু-ছাগল বিক্রির চালানের টাকাও রশিদ দিয়ে তোলো গরু-ছাগলের মালিকের কাছ থেকে । গরু-ছাগলের মালিকেরা বদের একশা । আপসে গরু-ছাগল বেচে চালানের টাকা না দিয়েই সটকে পড়ার ধান্দায় থাকে । মফা আর সাবেত পালাক্রমে একজন হাটের নির্দিষ্ট জায়গায় চেয়ার টেবিল আর চালান রশিদ নিয়ে বসে থাকে আর একজন চালানের রশিদ হাতে নিয়ে অনবরত ঘোরে হাটে , কোথাও কোন দরাদরি নজরে পড়লে দূর থেকে লক্ষ্য করে । গরু-ছাগল বেচে লোকজন চালান করলে ভাল , না করে সটকে পড়ার ধান্দা করলেই গিয়ে ধরে - দে জরিমানা দুইশ টাকা ! কাচা বাজারের দোকানদাররা আবার এইদিক দিয়ে ভাল , জিনিসপাতি বেচাবিক্রির নির্দিষ্ট জায়গা আছে । প্রতিদিন এরা ঐ জায়গাতেই বসে । এদের নিয়ে মফা আর সাবেতের কোন ঝামেলা হয়না । সন্ধ্যার পর দোকান ওঠানোর আগে ইজারার টাকাটা তুললেই হল । সপ্তাহে তিন হাটের ছয় হাটবাড়ে মফা আর সাবেতের তাই প্রচন্ড ব্যস্ততা । হাটের হাজার রকমের মানুষের মাঝে মিশে ধুলা বালি আর গনগনে সূর্যের মাঝে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে এদের দিন কেটে যায় । দুপুরের আগ পর্যন্ত এরা অবশ্য ফাঁকাই । তখন কাজ বলতে কেবল প্রিতমের সেলুনে বসে ডিস্টিক্ট শহর থেকে বের হওয়া তিন টাকার নিউজপ্রিন্টের দৈনিক আজকের খবর পড়া আর আওয়ামীলীগ-বিএনপি , ইরান-আমেরিকা নিদেনপক্ষে ঘোড়াশালে নতুন পীরের পানি পড়া দিয়ে নানান ব্যায়াম নিরাময়ের ঘটনা অথবা দুলুর বাড়িতে চোরের জিনিসপত্রের সাথে ঘরে রাখা আধাখাওয়া কাঁঠাল নিয়ে যাওয়ার কথা নিয়ে এর ওর সাথে আলাপ করা ।

বাজার থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতেই মফা আর সাবেতের সন্ধ্যা গড়িয়ে যায় আর কারেন্টটাও যায় এসময় । এরা তখন লুঙ্গি আর টিশার্ট পরে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে হাটতে । হাটা বলতে প্রতিদিন আসলে একই রাস্তায় হাটা । বাড়ির সামনে দিয়ে গ্রামের দিকে যে রাস্তাটা চলে গেছে সেটা দিয়ে পনের-বিশ মিনিট হাটলে একটা ভাঙ্গা কালভার্ট চোখে পড়ে । মফা আর সাবেত প্রতিদিন এই রাস্তাটা ধরেই হাট থেকে গ্রামের দিকে ফিরে যাওয়া হাটুরেদের সাথে হেটে যায় কালভার্টটা পর্যন্ত । এটা বলতে গেলে শহর আর গ্রামটার সঙ্গমস্থল । বাড়িঘর তেমন একটা এদিকে নেই । দুই পার্শ্বে ফসলী জমি । কালভার্টটার উত্তর দিক থেকে এ সময় হু-হু করে বাতাস আসে যেন মনে হয় এটা ভেঙ্গেই যাবে । মফা আর সাবেতের বেশ লাগে বাতাসটা । ওরা সাধারণত কালভার্টটার একপাশে যেখানে বড় করে লাল রং দিয়ে জাকির প্লাস সবুরা লেখা আছে সেখানটাতেই প্রতিদিন বসে । হাটুরে লোকজনের কথাবার্তা শুনতে শুনতে দুজনে হাল্কা-পাতলা বিষয়-আশয় নিয়ে কথাবার্তা বলে । কখনও কখনও এদিকটায় আরও লোকজন হাওয়া খেতে আসলে তাদের সাথে কথা বলে ।

আজকে দিনটায় আকাশে অল্প-স্বল্প মেঘ ছিল । হাওয়াও পাওয়া যাচ্ছিল বেশ । কালাভার্টটাতে সাকুল্যে চারটি প্রাণী । মফা আর সাবেত রং দিয়ে লেখা জায়গাটাতেই বসেছিল । কালভার্টটের অন্যপার্শ্বে ছিল দুজন বৃদ্ধ ,পরনে লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেন্জী । এরা পার্শ্বের গ্রামেরই হবে বোধহয় । মফাই প্রথম কথা বলতে শুরু করে এদের সাথে ।
-চাচা খবরাখবর ভাল ।
-আর খবর জিনিসপত্রের যে দাম । মনে করেন যে আলুভর্তা আর ডাল দিয়া তিনবেলা খাবার খালেউ চলতিছে না ।
-জিনিসের দাম তো বাড়বিই ত্যালের যে দাম বাড়তিছে ।
-হামরা তো বাপু এত কিছু বুঝিনে । আগে দিন চলতিছিল ভালোই এখন আর চলতিছে না কতা এটেই ।
পাশের বৃদ্ধ বিড়বিড় করে সূরার মত কি যেন পড়ছিলেন । এবার তিনিও মুখ খোলেন ।
- আসল কতাটা হল ঈমানের পরীক্ষা চলতিছে দুনিয়াত। আল্লাতো তো কছেই দুঃখ কষ্ট দিয়ে বান্দাক পরীক্ষা করা হবি দুনিয়াত ।
-কিন্তু খিরিসটান-নাসারারাই যে সুখ করল দুনিয়াত । ওমাগের পরীক্ষা নাই ।
- ওমাগের তো দুনিয়াতি সককিছু , আখেরাত তো নাই । সুখতো করবিই ওমরা দুনিয়াত । ফলও পাবি , দুনিয়াতও পাবি এদিক-ওদিক দিয়ে আবার পরকালততো পাবিই। ক্যা তোমরা শেঙ্গলডাঙ্গার ঘটনাটা শোনেন নাই ।
-না কি হছে শেঙ্গলডাঙ্গাত । সাবেত জবাব দেয় ।
বৃদ্ধের মুখ চাঁদের আলোয় চকচক করে ওঠে । সেখানে একটা গল্প বলার আভাস পাওয়া যায় ।
- দিন দুনিয়ার খবরাখবর তোমরা থুবা না । সেদিনের ঘটানাই তো শেঙ্গলডাঙ্গার । এলাকাত তো হইহই পড়ে গেছিল । খবর পাননি তোমরা ?
মফা আর সাবেত একে অপরের দিকে তাকায় । না শেঙ্গলডাঙ্গার এরকম কোন খবর জানা নাই তাদের । মফা বলে ঘটনাটা কি চাচা কন তো দেখি শুনি ।
- শেঙ্গলডাঙ্গা এলাকাটা কবার গেলে খুব একটা কিন্তুক ভাল নয় । সারা উপজেলার মধ্যে ওটি মনে করেন যে হিন্দু-খিরিসটান বেশী । খিরিসটান মানসের গিরজা না কি করে কয় ওটাও আছে একটা । সারা বছর নানান জাগাত থেকে মানুষজন আসে , এটা সেটা লাগিই আছে । ঈমান কালামের অবস্থা কবার গেলে কিছুই নাই ঐ এলাকার মানসের ।
-তাই নাকি ? সাবেত বলে । নিজের উপজেলার মধ্যে এরকম একটা এলাকা আছে ও জানত না ভেবে অবাক হয় সাবেত ।
- তোমরা তো সেদিনের ছল-পল কি আর কবার পাবা এগোর কতা । হামরা এগোক দেকতিছি জন্ম থেকে । হামার নানিবাড়ীও আছিল শেঙ্গলডাঙ্গাত । ছোটত যায়া হামরা কত কীর্তিকলাপ দেখছি খিরিসটানের । অন্যবৃদ্ধও ঢুকে পড়ে কথার মধ্যে ।
মফা আর সাবেতের কৌতুহল আরো বাড়ে । দুজন একসাথে বলে ওঠে তারপর কি হল শেঙ্গলডাঙ্গাত ।
গল্প বড়া বৃদ্ধ কোমড় থেকে লুঙ্গির মধ্যে গুজে রাখা মেস ও বিড়ির প্যাকেট বের করে । তাজবিড়ির প্যাকেটটা থেকে একটা বিড়ি নিয়ে বাতাসের হাত রক্ষা পাওয়ার জন্য মাথা নিচু করে কৌশলে দেশলাই দিয়ে বিড়িটা ধরায় । এরপর আবার সে ঘটনাটা বলতে শুরু করে ।
- শেঙ্গলডাঙ্গার এক বড়লোক বিরাট বাড়ি বানাল । মানুষটাক হামরাও চিনতেম । সূদের কারবার আর ভেজাল ঔসধের ব্যবসা করে অনেক টেকা কামাই করছিল । মানসে ওক কত সূদে মনসূর । সেই সূদে মনসূরের বাড়িত যায়া মানসে রাড়ি দেখে হায়হায় করে । হায় হায় এত টেকা খরচা করে কেউ বাড়ি বানায় ! সূদে মনসূরও খুব খুশি । বাড়ির নাম দিল বেহেশতের বাড়ি । তোমরাই কও এটা কওয়া কি ঠিক হছিল । দুনিয়ার মানসের কি সামর্থ্য আছে বেহেশতের বাড়ি বানাবার ?
কালভার্টের চারটি লোক দুনিয়ার সামান্য লোকের এ অপার্থিব দাবিতে সমস্বরে হেসে ওঠে । কালভার্ট পার হয়ে যাওয়া হাটুরে লোকগুলোও পিছনে ফিরে দেখে কি হল । অনেকক্ষন পার হলেও তাদের হাসি থামে না । বৃদ্ধ আবার গল্প বলতে শুরু করে ।
- চারপাশের মানুষ না হয় কিছু না কবার পায়া থামে থাকল । আল্লাতো তো থামে থাকপে নায় । হলও তাই । একদিন ডিগিত থেকে একটা বান্দরের মতন কি জানি উটে আসল একটা । অনেকে কয় বান্দর অনেকে কয় বাঘ । সেটার নাকি যে সে শক্তি নয় ! সবার আগত গেল মনসূরের বাড়িত । ভায়ে দেখলে বিশ্বাস করবে নও তোমারা একেবারে চূর্নবিচূ্র্ন করে ফেলাছিল বাড়িটা । হামরা নিজে যায়া দেখে আসছি । মনে করেন যে বড় বড় গাছ যেগলা তিন পুরুষেও কাটে নি সেগলেক এক ধাক্কাত তিন চার মাইল নিয়া যায়া ফেলে দিছে । মানসের ঘরের টিনক উড়ে নিয়ে যায়া ফেলে দিছে আরেক এলাকাত । কত মানুস ঘরের টিন নিয়ে আসছে দূর-দূরান্ত থেকে । নিজের দেখা ঘটনা বাপু ,কি আর কমো । মানসের কাছে যায়া শুননো কি নাকি ত্যাজ সে বান্দরের খালি রাগোত শো-শো শব্দ করছে নাকি সে রাতোত । মানষের জান নিয়া টানাটানি । খিসটানের যে গিরজাটা আছিল ওটার তো নিশানা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি পরেরদিন । কি যে করছে ওটার । মসজিদগুলের কিন্তুক আবার কিছু হয়নি , পাকা মসজিদ আছিল তো সকগুলা । যাগের খেড়ের বাড়ি আছিল তারা তো বাড়িঘর ঊড়ে গেলে মসজিদেই আছিল । বিশ্বেস করেন নিজ চোকে দেখা , মসজিদগুলার এনা হলেও ক্ষতি হয়নি ।
- আল্লার ঘর হয় ক্ষতি হয় ক্যামনে । অনেকক্ষন পর অন্য বৃদ্ধ বলে ওঠে ।
- হ কতা তো সেট্যাই ।
- ক্যা একই রাতত পলাশগাছিতও তো একই ঘটনা ঘটছে ।
হ শুনছিলাম পলাশগাছির ঘটনা এনা এনা । ঝড়-বৃষ্টি হছিল নাকি খুব ।
-কিসের বৃষ্টি ! ক্ষেপে ওঠে গল্প বলা বৃদ্ধ । হাওয়া। হাওয়া চষে বেড়ে শ্যাষ করছে পলাশগাছি ।
হাওয়া কিসের হাওয়া ! সাবেত জানতে চায় ।
- হাওয়া বঝলে না বাপু । আমাবশ্যার আন্ধারের নাকান মিশমিশে কালো নাকিন একটা হাওয়া । তছনছ করে দিছে সককিছু । হামারহেরে এলাকার অনেকেই গেছিল দেখপার । মানসে যে পন্চাশ-একশ টেকা নিয়া গেছিল ওমাগের অবস্তা দেখে তাও দিয়ে আসছে ।
অপর বৃদ্ধও মাথা নাড়ে ।
- আল্লার খেল বুঝবার সাধ্য হামাহেরে কিইবা আছে ?
তাই দুনিয়ার মানুষ খোদার খেল কিইবা বুঝতে পারবে । মফেত ও সাবেতও সম্মতির মাথা নাড়ে ।

মফস্বল শহরটাতে কারেন্ট চলে এসেছে । ধানী জমির মধ্য দিয়ে আলোর রেখার আভাস দেখতে পায় মফা আর সাবেত । শহরের সবগুলো মসজিদ থেকে একযোগে এশার নামাজের আজান ভেসে আসে । ওদের এখন বাড়ি যেতে হবে । কারেন্ট আসার পর ওরা সাধারণত আর অপেক্ষা করে না । আজ ওদের আরেকটু থাকতে ইচ্ছা করে । বৃদ্ধদের সাথে গল্প করতে ইচ্ছা হয় আরেকটু । কিন্তু দুই বৃদ্ধ ইতিমধ্যেই বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছে । থাকো বাপু হামরা গেনো নমাজ পড়া লাগবি । দুইবৃদ্ধ বাড়ির দিকে পা বাড়ায় । মফা আর সাবেতও আর বসে না ।

মফা আর সাবেত দুজনে মিলে পরদিন এর-ওর কাছে খোঁজ নেয় শেঙ্গলডাঙ্গা ও পলাশগাছী নিয়ে । হাল্কা একটা টনের্ডো হয়েছিল নাকি বছর খানেক আগে ঐ এলাকায় । মানুষের জানের তেমন ক্ষতি না হলেও মালের ক্ষতি হয়েছিল বেশ ,বিশেষ করে ঘরবাড়ি আর গাছপালার । মফা আর সাবেত এ বিষয়ে তেমন কিছু জানতে পারে নি কারন ঐ সময়টায় দুইবার ডিগ্রী ফেলের ব্যর্থতা ঢাকতে ওরা ঢাকা গিয়েছিল কাজ খুঁজতে এবং যথারীতি ব্যর্থ হয়ে একসাথে ফিরে এসেছিল তেরদিন পরে ।
------------------------------------------------------
কেউ একজন অপেক্ষা করে


মন্তব্য

আলমগীর এর ছবি

শুরুর চেয়ে শেষটা বেশী ভাল লাগল। অনেকদিন বগুড়ার কথা শোনা হয়নি। আজ অন্তত পড়া হল।

ইমরুল কায়েস এর ছবি

কষ্ট করে বড় লেখাটা পড়েছেন এজন্য ধন্যবাদ।

আসলে বগুড়ার ভাষায় গল্পটি লেখা হয়নি । আন্চলিক ভাষার একটা ইচ্ছামাফিক ফর্মে গল্পটি লেখা হয়েছে । কিছু কিছু জায়গায় বগুড়ার ভাষা চলে হয়ত আসতে পারে যদিও আমি নিজে বগুড়ার ভাষার সাথে অতটা পরিচিত না ।

ভাল থাকবেন ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

হুমম।

দেবোওম এর ছবি

ভালো লাগলো ।

রাফি এর ছবি

ভাল লাগল। তবে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে বানানের দিকে একটু নজর দেয়ার দরকার ছিল বোধহয়।
উচ্চারণের সাথে বানান পরিবর্তন করাটাই যুক্তিসঙ্গত মনে হয় আমার কাছে.

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

নাসিফ এর ছবি

কাহিনী সাদামাটা হলেও লেখাটিতে গতি আছে । পড়তে আরাম লাগে । কিছু কিছু ডিটেলস গল্পটির সৌন্দর্য অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে বলে আমার মনে হয় । যেমন :
"... দুলুর বাড়িতে চোরের জিনিসপত্রের সাথে ঘরে রাখা আধাখাওয়া কাঁঠাল নিয়ে যাওয়ার কথা নিয়ে এর ওর সাথে আলাপ করা..."
"...ওরা সাধারণত কালভার্টটার একপাশে যেখানে বড় করে লাল রং দিয়ে জাকির+সবুরা লেখা আছে সেখানটাতেই প্রতিদিন বসে... "
"...কালভার্ট পার হয়ে যাওয়া হাটুরে লোকগুলোও পিছনে ফিরে দেখে কি হল..." ইত্যাদি ।

কালবেলা এর ছবি

বর্ণনা গুলো খুব ভালো লেগেছে। তবে শুরুতে মনে হচ্ছিল যেন কিছু একটা হবে হবে....আপনি সাসপেন্স জিইয়ে রাখতে ওস্তাদ।

ইমরুল কায়েস এর ছবি

ধণ্যবাদ কালবেলা । অনেকদিন পর আপনার দেখা পেলাম ।
-----------------------------------------------------
কেউ একজন অপেক্ষা করে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।