একটি ভ্রমনের ইতিবৃত্ত : : কুয়াকাটা-০৩

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: শুক্র, ০৫/১২/২০০৮ - ১২:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[পর্ব-০১] [পর্ব-২]
[১]মিশ্রিপাড়ায় গেছি বৌদ্ধমন্দির দেখতে । এত বড় গৌতমের মূ্র্তি নাকি বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই । দেখলাম , বেশ বড়ই মূর্তিটা ।
এরপর মিশ্রিপাড়ায় রাখাইনদের পাড়ায় একটু হানা দিয়ে একটা স্কুলের সামনে এসে পড়লাম । প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাস হাইস্কুল দুটোই একসাথে । আমরা স্কুলের সামনে দাড়িয়ে স্কুলটা দেখছিলাম আর খোশগল্প করছিলাম । এমন সময় ক্লাসরুম থেকে একজন শিক্ষক বেড়িয়ে
আসেন । হ্যালো,আই আম এন এসিসটেন্ট ইংলিশ টিচার অব দিস স্কুল । আমরা কুয়াকাটায় সাইপ্রাসিয়ান বাংঙালি ভদ্রলোকের সাথে
কথা বলে যেরকম অবাক হয়েছিলাম তার চেয়েও বেশী অবাক হয়ে পড়ি । ব্যাপার কি ? সবাই ইংলিশ কয় ক্যা? আমরা বলি ও , আচ্ছা । ভদ্রলোক এবার স্কুলের গুনগান গাইতে শুরু করেন। দিস স্কুল হ্যাজ এ গুড রেজাল্ট ইন এস,এস,সি এক্সামিনেশন । লাষ্ট ইয়ার এইট স্টুডেন্টস ফ্রম দিস স্কুল গট A+ অ্যান্ড টু অব দেম ওয়ার গোল্ডেন A+ । আমরা বলি ,ও আচ্ছা , বেশ ভাল রেজাল্ট তো । ভদ্রলোক এবার বলেন, ইউ ওয়ান্ট টু সী সামথিং মোর অব দিস স্কুল ? আমরা একটু ইতস্তত করি । না মানে ইয়ে ......। অবশেষে আমাদের মধ্যে একজনের আগ্রহে হ্যাঁ বলি । উনি আমাদের সাথে করে হাইস্কুলের একটা কামড়ায় নিয়ে যান । রুমে চার-পাঁচটি বেঞ্চ বসানো । এর মধ্যে সমকোনে রাখা দুটি বেঞ্চে বসে পাঁচ-ছয়জন ছাত্র পড়ালেখা করছে । ভদ্রলোক বলতে শুরু করেন । দিস স্টুডেন্টস উইল অ্যাপিয়ার ইন দ্যা জুনিয়র স্কলারশিপ এক্সামিনেশন দিস ইয়ার । আই অ্যাম ট্রাইয়িং টু টেক এক্সটা কেয়ার অব দেম এন্ড ট্রাইয়িং মাই লেভেল বেষ্ট । ইউ ক্যান টেষ্ট দিস স্টুডেন্টস । আমরা বলি , না , ঠিক আছে । স্কুলের বাচ্চাদের সাথেকিন্তু ভদ্রলোক ক্ষাম্ত দেন না । প্রথম বাংলা শুনি এবার আমরা তার মুখে । এই ট্রান্সলেশন কর, আমি একজন ইন্জিনিয়ার হতে চাই ......। তিনি আবারো ইংরেজী শুরু করেন । ইউ ক্যান আস্ক দেম অ্যাবাউট দেয়ার এমবিশন অব দেয়ার লাইফ । আমাদের কথা বলার আগেই ছাত্রদের বলেন, টেল ইন ইংলিশ হোয়াট ইউ ওয়ান্ট টু বি ইন ইওর লাইফ । ছাত্ররা একজন একজন করে দাড়ায় আর বলে কে জীবনে কি হতে চায় । কেউ ডাক্টার হতে চায় , কেউ ইন্জিনিয়ার । ভদ্রলোক ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন , দিস পিওপল আর ফ্রম বুয়েট এন্ড দে আর গোয়িং টো বি ইন্জিনিয়ার । ইফ ইউ ওয়ার্ক হার্ড ইউ ক্যান অলসো গো দেয়ার । ছাত্ররা মাথা নাড়ে । ইয়েস স্যার । আমাদের নিয়ে ভদ্রলোক বেড়িয়ে পড়েন । ইফ ইউ হ্যাভ টাইম ইউ ক্যান মিট আওয়ার হেডমাষ্টার । আমরা বলি , না ,ঠিক আছে , আজকে আর না । প্রাইমারী স্কুলটার মনে হয় টিফিন চলছিল । খোলা মাঠে অনেক ছাত্রছাত্রী খেলাধুলা করছিল । আমরা বলি , এসো তোমাদের সাথে ছবি তুলি । সবাই এরা ছবির জন্য দাড়িয়ে যায় । ডিজিটাল ক্যামেরার ক্লীক শুনেই সবাই দৌড়ে যায় অমরের কাছে । ছবি দেখতে ভীড় করছেসেই ছবি তুলছিল । সবাই ছবি দেখতে চায় । সবাইকে ক্যামেরায় তোলা ছবি দেখিয়ে মুক্তি পেতে হয় ।

[২]বাহিরে কোথাও বেড়াতে গেলে সবাই মিলে টাকা-পয়সা দিয়ে আমরা একটা ডেটাবেস তৈরী করে নেই । যাতায়াতের ভাড়া ,হোটেল ভাড়া ,খাওয়া খরচ এইসব এই ডেটাবসে থেকেই দেয়া হয় । আর প্রতিবার এই ডেটাবসের ম্যানেজারের কাজটা আমাকেই করতে হয় । এবারও ম্যানেজার ছিলাম কিন্তু এবার দু-একটা ছোটখাট ঘটনা ঘটে গেছে এবং এ থেকেই বুঝে গেছি বয়স বাড়ছে , বুড়ো হয়ে যাচ্ছি । এধরনের ভুল সাধারনত বুড়োদেরই হয় ।

ঘটনা-১ : ফাতরা বনে যাব । নদী আর সাগরের একটা মোহনা পাড় হতে হয় ট্রলার দিয়ে । ট্রলার ভাড়া ঠিক হল ৩৫০ টাকা । ফাতরা বনে গিয়ে ট্রলারওয়ালারা ৫০ টাকা চাইল , চা-নাস্তা খাবে । দিলাম । ফাতরা বন থেকে ফিরে এসে ৩০০ টাকা দিতে হবে । খুচরা টাকা নেই , সব পাঁচশো টাকার নোট । ট্রলারওয়ালা একটা দোকানে নিয়ে গেল । দোকানদার ২০০ টাকা দিল ৫০০ টাকার নোটটা নিয়ে । আমরা ভ্যানে চড়ে রওয়ানা হলাম কুয়াকাটার দিকে । ফাতরা (!) বনমিনিট ত্রিশেক হওয়ার পর পিছনে কার জানি উচ্চস্বরে ডাক শুনে দুটা ভ্যানই থামানো হল । দেখি সাইকেল নিয়ে ট্রলারওয়ালা এসে হাজির । বুঝলাম ঝামেলা আছে । হয়ত যে পাঁচশ টাকার নোটটা দিয়েছিলাম সেটা জাল । মাইর আজকে একটাও বোধহয় মাটিতে পড়বে না । শ্বাসমূল দেখিয়া সুন্দরবন বলিয়া ভ্রম হয় , আসলে ফাতরা বনট্রলারওয়ালা অনেক জোরে সাইকেল চালিয়ে এসেছে । সে এসেই হাঁপাতে শুরু করল , আপনাদের মধ্যে কে টাকা দিল তখন । একজনকে দেখিয়ে বলল আপনি না । সেই একজনও বোধহয় ভয় পেয়ে গেল । সে বলল না আমি না । আমি তখন আর সরাসরি ট্রলারওয়ালাকে বললাম না আমি দিয়েছি টাকা তার বদলে বললাম কেন কি হয়েছে ? সে বলল টাকা তো দেননি ।ফাতরা বনে ঢোকা হচ্ছে আমি আকাশ থেকে পড়লাম । কেন পাঁচশ টাকার নোট যে দেওয়া হল , দিয়ে দুইশ টাকা নেওয়া হল । না টাকা দেননি , দেখেন । আমি মানিব্যাগ বের করে টাকাগুলা গুনলাম । না আসলেই টাকা দেয়া হয় নি । একটা পাঁচশ টাকার নোট বেশী দেখা যাচ্ছে । ট্রলারওয়ালার কাছে মাফ-টাফ চেয়ে নোটটা দেয়া হল ।

ঘটনা-২ : প্রতিটা বীচেই বীচের পাশে মনে হয় শামুক-ঝিনুকের দোকান থাকে । এখানেও আছে । পোলাপান সবাই মিলে হল্লা করে নানান জিনিস কিনল সেখান থেকে । আমিও দুয়েকটা জিনিস কিনব বলে দোকানে গেলাম । কি কিনি ? কেনার মত কিছুই না পেয়ে তিনটা ঝিনুকের মালা কিনলাম । এই মালা লেবুর বনেদেওয়ার মত কেউ নাই ,এমনকি ছোটবোনও নাই যে দেব । তারপরেও কেনা । দোকানে টাকা পয়সা দিয়ে মালার প্যাকেটটাও মনে হল নিয়েছি কিন্তু ত্রিশ-চল্লিশ পা যাওয়ার পর মনে হল আসলে প্যাকেটটা আমার কাছে নাই । সামনে সবাই দাড়িয়ে ছিল । এদের বললাম ঐ তোরা আমার প্যাকেটটা নিছস নাকি?
-কিসের প্যাকেট?গৌতমের তামার মূর্তি
-ঐতো কয়েকটা জিনিস কিনছিলাম ঝিনুকওয়ালদের দোকান থেকে । ঐ প্যাকেটটা কি তোদের কাউকে দিছি । তোরাও তো আশেপাশে ছিলি ।
-কি কিনছিলি ? অনেকের প্রশ্ন । খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী হলে যা হয় আরকি।
-ঝিনুকের মালা কিনছিলাম কয়েকটা ।
-কারে দিবি ? এর আগেও কক্সবাজার থেকে যে মালাগুলি কিনছিলি তার খবর কি? কারে দিসছ ?
-কাউরে দেইনি । আছে , আমার কাছেই আছে । বউরে দিমু । এবারের গুলাও বউরে দিমু ।
-বউতো নাই ।
-আরে ব্যাটা আজকে বউ নাই বইলা যে কালকে হইব না তার কি গ্যারান্টি । এত প্যাঁচাইতেছোস ক্যা ? মালা কাউরে যদি দিয়া থাকি তো ক ।

সবাই একসাথে হেসে ওঠে । কুয়াকাটায় সূর্যাস্ত
- আর হইছে বউ । এহন পর্যন্ত প্রেমই করতে পারলি না..................। না আমাদের মালা দিস নি । ঐ দোকানেই আবার যা খুঁইজা দেখ ।

আবার মালার দোকানটাতে যাই । দোকানদারকে বলি ভাই দেখেন তো আশেপাশে খুঁজে । মালার প্যাকটটা মনে হয় নেই নাই । এখানেই কোথাও ফেলে গেছি মনে হয় । দোকানদার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আশেপাশে খোঁজে । কোথায় আর থাকব , আপনে তো নিয়াই গেলেন । দোকানদার প্যাকেটটা আর খুঁজে পান না । দোকানদারের সাথে একজন লোক বসে ছিলেন । তিনিও বলেন তার নাকি স্পষ্ট মনে আছে আমি দোকান থেকে প্যাকেটটা নিয়ে বের হয়েছি । আমি মনে মনে বলি ভাই আমারওতো স্পষ্ট মনে আছে আমি প্যাকেটটা নিয়েই বের হৈছি । কৈ রাখলাম । পরীর আছর পড়ল নাকি ? প্যাকেটটা আর পাওয়া যায় না ।

নিজের খবর আর নিজে রাখতে পারছি না । বিশেষ কাউকে মনে হয় খুব দরকার !
=============================================
উত্তর বাংলার অনাহারী যুবক


মন্তব্য

নাসিফ এর ছবি

এই মালা দেওয়ার মত কেউ নাই

আপসোস ...........

মুস্তাফিজ এর ছবি

আমি কিছু যোগ করি। ফাত্‌রার বন সুন্দরবনের অংশ, সিডরে এ অংশ অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যে মূর্তির কথা লিখেছেন সেটা বিশ্বে বুদ্ধের বসা অবস্থায় বৃহত্তম মূর্তি (এর সপক্ষে কোন প্রমাণ আমার কাছে নাই)।

...........................
Every Picture Tells a Story

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- কূয়াকাইট্টা এখনো লিস্টে আছে। যাওয়া হয় নাই। একা যেহেতু যাওয়া হলো না, দেখি একবারে বউদের সঙ্গে করেই যাবো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

একা যেহেতু যাওয়া হলো না, দেখি একবারে বউদের সঙ্গে করেই যাবো।
টাইপো নাকি বস্? চোখ টিপি
আমি তো ভাবলাম শালীদের হবে হয়ত! দেঁতো হাসি


A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- জনগণের শালীদেরকে যদি আমিও শালী বানাই তাইলে আমার বউ হবে কোন শালী?

আমি মানুষটা খারাপ হলেও লোক হিসাবে ভালো। অপরের শালীর দিকে আমার নজর তীক্ষ্ণ, অপরের বউয়ের দিকে নয়। চোখ টিপি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অপরের বউ তো আপনার শালী হতেই পারে! আমি তো আর বলিনি যে অন্যের শালীরে নিজের শালী বানান চোখ টিপি

তাই অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিলে দেন, সমস্যা নাই। কিন্তু সেইটা তাকে শালী বানানোর জন্য, বউ বানানোর জন্য না দেঁতো হাসি


A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- হৈ মিয়া, আপনে ইদানিং দেখতাছি চামে দিয়া বামে ধুগো সাইজিং পর্ষদে যোগ দিতাছেন। ঘটনা কী কনতো! আপনেরে তো আমি নিজের লুক ভাবছিলাম! মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বিশেষ কাউকে মনে হয় খুব দরকার !
পেয়ে যাবেন আশা করি, খুব শীঘ্রই। তবে আপনার যে হারে ভুল হচ্ছে আজকাল, সেরকম কাউকে পেলে আবার মনে রাখতে পারবেন তো? নাকি ভুলে যাবেন? চোখ টিপি

পূর্ণ সচলত্ব প্রাপ্তির জন্য অভিনন্দন।


A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?

দময়ন্তী এর ছবি

ইশ! পৃথিবীতে কত্ত ভাল ভাল বেড়াবার জায়গা আছে --- আর খালি চাকরী করে করেই দিন চলে যায় ৷ যাচ্ছেতাই!

সুন্দর লেখা ৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সচলাভিনন্দন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় ইমরুল, আগে লক্ষ্য করিনি মনে হচ্ছে, পূর্নাঙ্গ সচল হয়ে গেছেন। অভিনন্দন। অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে আপনাকে। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করে আপনি যেভাবে নিয়মিত লেখা চালিয়ে গেছেন তা স্যালুট করার মত। ভালো থাকবেন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।