{এক বন্ধুর কনভোকেশন পার্টিতে গিয়েছিলাম এনএসইউতে। চব্বিশ ঘন্টার থ্রেশোল্ডটা অতিক্রম হয়েছে, পেরিয়ে গেছে আরো কয়েকটা ঘন্টা । দুঃখিত।}
----------------------------------------------------------------
শ্রোতাদের কাছ থেকে মুসলমানদের নামটা তিনি আরো কয়েকবার শুনবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না চারদিক ' মুসলমান ' শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এরপর তিনি গলার স্বর দ্বিগুন বাড়িয়ে বলবেন, ' হ্যাঁ, এ জমিন মুসলমানের, বাংলার এ জমিন হাজী শরীয়তউল্লাহ, শাহজালাল, শাহ মখদুম, ইখতিয়ার উদ্দীন বখতিয়ার খিলজী আর নজরুলদের- রবীন্দ্রনাথদের নয় '। এরপর রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলকে নিয়ে তিনি কয়েকটা তুলনামূলক কথা বলবেন। প্রতিটি মাহফিলেই তিনি এগুলো বলেন, মুখস্ত আছে। এটা অনেকটা এরকম , ' হ্যাঁ , নজরুলের জমিন রবীন্দ্রনাথের নয়। কাজী নজরুল ইসলাম যখন বাংলা থেকে ব্রিটিশদের তাড়াতে কবিতা লিখছিলেন আর সেজন্য জেল খাটছিলেন , তখন রবীন্দ্রনাথ কি লিখছিলেন জানেন ? জানেন তিনি কি লিখছিলেন? '। শ্রোতারা নিরুত্তর থাকবে। তখন তিনি ব্যঙ্গোক্তির সূরে গাইবেন ,' ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা '। গানের ব্যঙ্গাত্মকতার খাতিরেই হোক অথবা বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বুঝেই হোক লোকজন হেসে ফেলবে। এটারও দরকার আছে। রসকষহীন বয়ান মাজিদ মুনওয়ার পছন্দ করেন না। কিন্তু লোকজনের এই হাসি মাটিতে ফেলতে দেয়া যাবে না। হাসির শব্দ মিলিয়ে যাবার আগে গলায় একটা প্রকট গর্জন তুলে বলতে হবে,' কি বেয়াদাতি, নাফরমানি কাজকারবার, একমাত্র আল্লাহতায়ালা ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করা শিরক '। মাজিদ মুনওয়ারের এই গর্জন শুনে শ্রোতাদের হাসিমুখ শক্ত হয়ে যাবে। তাদের এই শক্ত মুখের উপরেই ইসলাম শিক্ষার ব্যাপারটা আটকিয়ে দিতে হবে।
মুসলমানের জমিন যে ইসলামের শিক্ষা ছাড়া চলতে পারে না , চলা উচিতও নয় , এ বিষয়টা তাদের ভালভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার যে কি বেহাল অবস্থা চলছে এটা বুঝানোর জন্য মাজিদ মুনওয়ার কয়েকটা ছড়ার আশ্রয় নেন। গত সপ্তাহের মাহফিলে তিনি বলেছেন ' হট্টিমাটিমটিম, তারা মাঠে পাড়ে ডিম, তাদের খাঁড়া দুটি শিং' ছড়াটার কথা, আজকের মাহফিলটায় বলবেন ' আগডুম বাগডুম ' ছড়াটার কথা। মাজিদ মুনওয়ার এই ছড়াগুলো মাহফিলে আবৃতির ঢংয়ে পড়ার সময় কিছুটা বিব্রত বোধ করেন কারন এজন্য তাকে কিছু নির্জলা মিথ্যা বলতে হয়, গল্প বানাতে হয় ছোট মেয়েটাকে নিয়ে। তিনি ঠিক করেন এবার বলবেন এরকম করে,' এই দেশে ইসলামের শিক্ষাকে পাঠ্য করা হয় নি, যা পাঠ্য করা হয়েছে তার থেকে আমরা শিখেছি? কি শিখেছি আপনারা শুনবেন?'। তিনি মুখটা কৌতুকময় করে শ্রোতাদের দিকে এমনভাবে তাকাবেন যে , তারা আসন্ন কৌতুকের সম্ভাবনায় আহলাদিত হয়ে মুখ গোল করে বলবে ' শুনব '। তখন তিনি বলবেন,' আমার ছোট মেয়েটা কয়েকদিন আগে গেছে স্কুলে। সেখানে মাষ্টার কি শেখায় জানেন? শেখায় ' আগডুম '। মেয়ে আমার আগডুম বোঝে না । সে স্যারের কাছে জানতে চায় স্যার আগডুম কি? স্যার তখন বলেন ' বাগডুম ' । মেয়ে বাগডুমও বোঝে না। সে স্যারের কাছে আবার বাগডুম কি জানতে চায়। স্যার তখন বলেন ,' ঘোড়াডুম সাজে' । মেয়ে আগডুম-বাগডুম-ঘোড়াডুমের কিছুই না বুঝে বাসায় এসে আমাকে বলে ,' আব্বা স্কুলে স্যার কি শেখায় কিছুই বুঝতে পারি না '। এখন ভাইয়েরা আপনারাই বলেন আগডুম, বাগডুম, ঘোড়াডুম এইসব কি? এইসবের কি বাস্তবে কোন অর্থ আছে। মানে একেবারে ছোট থেকেই আমরা মিথ্যা শিখে আসছি। এই হল আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। অথচ কুরআন-হাদীসে বারবার এসেছে কৌতুক করে হলেও শিশুকে মিথ্যা বলা যাবে না। আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেছেন......'। এখানে তিনি একটা বড়সড় আয়াত সূর করে তেলাওয়াত করবেন। মোফাচ্ছেরে কোরআন হয়েছেন বলে অনেকে মনে করে তিনি কোরআনের সব আয়াত আর তার বিশ্লেষণ মাথায় নিয়ে ঘোড়েন। অথচ বাস্তবতা হল কিছুদিন না দেখলেই তিনি অনেক আয়াতেরই কিছু অংশ ভুলে যান। এটা অবশ্য তেমন কোন সমস্যা না। বয়ানের প্রতিটা টপিকের উপর তার লেখা খাতা আছে। মাজিদ মুনওয়ার টেবিলের ড্রয়ারের অনেকগুলো খাতার মধ্য থেকে সাদা কভারের একটা খাতা বের করেন। খাতাটার উপরে লাল মার্কার দিয়ে লেখা ' শিক্ষাব্যবস্থা '। এখানে তিনি শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত আয়াতগুলো টুকে রেখেছেন। আয়াতগুলো থেকে উপযুক্ত কয়েকটা আয়াত বের করে তিনি নোট করে রাখেন। উপরে ডাবল কালিতে মোটা করে লেখা ' দলকে বেশি করে প্রমোট করতে হবে ' লেখাটা মাজিদ মুনওয়ারের চোখে পড়ে। তিনি ঠিক করেন বয়ানের এই পর্যায়েই দলকে প্রথমবারের মত প্রমোটের ব্যবস্থা করবেন, বলবেন,' সুতরাং এই শিক্ষাব্যবস্থা পাল্টানোর চেষ্টাটা কিছু লোক করছেন নাকি করছেন না ? কিছু লোক আল্লাহর রাস্তায় কাজ করে যাচ্ছেন কি না? একটি দল ইসলামের পথে আছে নাকি নাই ? আপনারা ইসলামের পথে আছেন নাকি নাই?' । আশা করা যায় এ প্রশ্নগুলোর উত্তর সবাই হ্যাঁ বাচকই দেবে এবং এর পরপরই তিনি বলবেন,' তাহলে আপনারা সেই দলটার সাথে থাকতে রাজী আছেন তো? কারা কারা রাজী আছেন একটু হাতটা উপরে তুলে দেখান তো '। লোকলজ্জার খাতিরেই হোক অথবা বয়ানকারীর চোখের রোষ আটকাতেই হোক প্রায় সবাই হাত তুলবে। তখন তিনি উচ্চস্বরে বলবেন,' মাশাল্লাহ '। এতবড় একটা মাহফিল থেকে দুই চার দশটা লোক যদি দলে না আসে তবে মাহফিল করেই বা লাভটা কি? মাজিদ মুনওয়ার যখন একথা ভাবছেন তখন দরজার কলিংবেলে আওয়াজ হয়।
হাজেরা এসে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন নাকি এসেছে কিছু, তার সাথে দেখা করতে চায়। মাজিদ মুনওয়ার খুশি হন। মোহাম্মদপুরের এই বাড়িটা তিনি নতুন কিনেছেন। এলাকার লোকজনের সাথে আস্তে আস্তে ঘনিষ্টতা বাড়ছে। অবশ্য এই পরিচয়ের জন্য তাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে না। মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সেই ইসলামিক স্কলার হিসেবে সমঝদারদের মধ্যে তিনি একটা জায়গা করে নিতে পেরেছেন। শহরের অনেক অডিও-ভিডিওর দোকানে তার বয়ানের ভিডিও বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। কাঁটাবন মোড়ের কাফেলা ইসলামিক মাল্টিমিডিয়া সেন্টারের মালিক তো তাকে আগাম টাকাই দিয়ে রেখেছেন বয়ানের কপিরাইট হিসেবে। এছাড়া পার্টির টেলিভিশন চ্যানেলে নিয়মিত বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করছেন, শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরের এক ঘন্টা তো তার ' ইসলামিক সওয়াল ও জবাব ' অনুষ্ঠানের জন্য বাঁধা। এসব অন এয়ারে যাচ্ছে নিয়মিত , কখনো কখনো পুনঃপ্রচারও হচ্ছে। সুতরাং একটা এলাকায় নতুন আসলে পরিচয়ের জন্য কষ্টটা তাকে করতে হবে কেন?
ড্রয়িংরুমে বসে থাকা ছেলেগুলোর দিকে তাকান মাজিদ মুনওয়ার। অধিকাংশের বয়স আঠারো থেকে চব্বিশের মত হবে। তিনি ধারনা করেন কোন পাবলিক প্রোগামে তাকে অতিথি করার জন্যই হয়ত এরা এসেছে। মাজিদ মুনওয়ারকে দেখে এরা সবাই দাড়িয়ে পড়ে ও হাল্কা স্বরে সালাম দেয়। তিনি তাদেরকে বসতে বলে তাদের আসার কারন জানতে চান। দলের মধ্যে যাকে দেখলে সবচেয়ে বড় মনে হয় সে বলে, ' হুজুর, আমরা নববর্ষ উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করব পুলিশ ফাঁড়ির সামনের খেলার মাঠটাতে, চাঁদা চাইতে এসেছি সবার কাছে '। ' নববর্ষ ' শব্দটা মাজিদ মুনওয়ারের কানের মধ্য দিয়ে ঢুকে ঠিক যেন কলিজায় গিয়ে আঘাত করে, শব্দটা শুনলেই তার আসমা খানের কথা মনে পড়ে।
বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ার সময় তিনি যখন নান্নুর হোটেলে বিকেলে সিংগারা-পুরী এসব খেতেন তখন ঠিক ঐ সময়টায় নিয়ম করে হাজী বিস্কুট এন্ড কোং এর স্বত্বাধিকারী মোফাজ্জল খান হাজীর মেয়ে আসমা খান হেঁটে যেত হোটেলের সামন দিয়ে। হয়ত প্রাইভেটই পড়তে যেত। বিশ বছরের যুবক মাজিদ মুনওয়ার মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে জুল জুল করে আসমা খানকে দেখতেন। আসমা খানকে কখনো তার লাল কৃষ্ণচূড়া মনে হত , কখনো রজনীগন্ধা, কখনো বা লালপদ্ম। আসমার ফেরার পথেও তাই তিনি দাড়িয়ে থাকতেন নান্নুর হোটেলের সামনে। কিন্তু মাজিদ মুনওয়ারের এই লাল কৃষ্ণচূড়া ধরা হয় নি। সেবার পয়লা বৈশাখে বমনার বটমূলে আসমা খানকে তিনি দেখেছিলেন ছত্তিশ নম্বর বংশাল রোডের সাইকেল ব্যবসায়ী রমিজ সরকারের ছোট ছেলে রফিক সরকারের সাথে। পয়লা বৈশাখ অথবা নববর্ষ শব্দগুলো শুনলে তাই মাজিদ মুনওয়ারের মনটা খান খান হয়ে যায়, রমনার বটমূলে আসমা খানের রফিক সরকারের হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো তার চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। তার পুরো ক্ষোভটা অন্যায়ভাবে গিয়ে পড়ে নববর্ষের উপর, যেন সেবার নববর্ষের এই অনুষ্ঠানগুলো না থাকলে আসমা খানকে আপন করে পেতে তার কোন সমস্যাই হত না। মাজিদ মুনওয়ার ব্যক্তিগত ক্ষোভের পরিধি হতে নববর্ষকে কিছুতেই আলাদা করতে পারেন না। কে জানে এই ক্ষোভের কারনেই হয়ত তিনি নববর্ষের আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নববর্ষকে হিন্দুয়ানী অনুষ্ঠান বলে তুলোধুনো করেন। তিনি ভাবেন এই ছেলেগুলো এসে ভালই হয়েছে, সামনে যে একটা নববর্ষ আছে এটা তার স্মরণে ছিল না। নববর্ষর ব্যাপারটাও পয়েন্ট আকারে লিখতে হবে। মাজিদ মুনওয়ার তার ভাগের চাঁদার টাকাটা ছেলেদের দিয়ে দেন। এলাকার ছেলেপুলে, প্রথমেই এদেরকে বাঁধা দিয়ে ক্ষ্যাপানো ঠিক হবে না। কিছুদিন আগে হাত করতে হবে, পরে দু-একদিন ঝেড়ে বয়ান দিলেই এরা লাইনে আসবে। এরকম তিনি বহুত দেখেছেন। ছেলেগুলো টাকা নিয়ে চলে গেল।
মাজিদ মুনওয়ার আবার লিখতে বসলেন। তিনি পয়েন্ট করতে থাকলেন, বলবেন, ' ভাইয়েরা আমার, সামনে নববর্ষ। ঢাকার ভদ্রলোকরা কি করবে জানেন ? সকালে এরা রমনার বটমূলে যাবে, যুবক-যুবতীরা ঢলাঢলি করবে, আর কিছু শিল্পী গলা ছেড়ে গাইবে ' এসো হে বৈশাখ, এসো ,এসো......' । এরা নাফরমান,নাদান। নববর্ষ একটা হিন্দুয়ানী অনুষ্ঠান। আল্লাহতায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন আর আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এই প্রকৃতি। আমরা আল্লাহর গোলাম আর প্রকৃতি আমাদের গোলাম। বৈশাখ আসবে বলে তাকে ফুল-ফল আর পান্তাভাত দিয়ে আরাধনা, তাকে বরণ করে নেয়ার জন্য সমস্থ অনুষ্ঠাননাদি সবই ইসলাম ধর্মের বিরোধী। এসবই এসেছে হিন্দুদের পূজা-অর্চনা থেকে। আমাদের পবিত্র ধর্মে এসবের কোন স্থান নাই। যদি কেউ এসবের মধ্যে থাকে তবে সে পরকালে কঠোর শাস্তির ভাগীদার হবে '। কথাগুলো তিনি বলবেন যতটা না জোরে তার চেয়েও জোরে বলবেন,' সুতরাং আপনারা এবার নববর্ষের কোন অনুষ্ঠানে কেউ যাবেন?'। সবাই সমস্বরে ‘ না ‘ বললে তিনি বলবেন,' আলহামদুলিল্লাহ ' ।
মাজিদ মুনওয়ার তার ড্রয়ারের খাতাগুলোর মধ্য থেকে আরেকটা খাতা বের করেন। এটাতে মোটা লাল মার্কারে ' ইংরেজী ' কথাটা লেখা আছে। ইদানিং তিনি মাহফিলে দু-চারটা ইংরেজী বাক্যও বলছেন, মানে যতটা সম্ভব বলতে চেষ্টা করছেন। যারা ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত,হুজুর দেখলেই নাক সিটকায়, মাহফিলের আশেপাশে থাকলে এরা বুঝুক। বুঝুক তিনি হেজিপেজি বা ফেলনা লোক নন, দুচার লাইন ইংরেজীর বিদ্যাও তার পেটে আছে। অবশ্য ইংরেজীগুলো শিখতে তাকে একটু কষ্টই করতে হচ্ছে। তার এক পুরনো বন্ধুকে বাংলা লিখে দিয়ে সেগুলোর ইংরেজী তরজমা তিনি লিখে নিয়েছেন এই খাতাটায়। ঘুরে ফিরে প্রতিটা মাহফিলেই এগুলোর কয়েকটা করে বলেন। অবশ্য এই ইংরেজীগুলোও বলতে তাকে কিছুটা বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়। আবারও কিছু নির্জলা মিথ্যা গল্প বানাতে হয়। গত মাহফিলের ইংরেজীটা তার বেশ পছন্দের। তিনি বলেছিলেন, ' দেশে মূর্খ লোকজনে ভর্তি। ঠিক উচ্চারণে বিসমিল্লাহ বলতে পারে না অথচ হুজুদের এসে জ্ঞান দেয়। সেদিন এক মাহফিলে পেয়েছিলাম একটা এরকম। আমার মাহফিলে এসে সে হুজুরদের বলছে হুজুররা এটা করবেন না, সেটা করবেন না। আমি তাকে বললাম ,' আপনি কে? হু আর ইউ'। সে বলে সে ঐ এলাকার চেয়ারম্যান। আমি তাকে বললাম,' সো ব্লাডি হোয়াট? গেট আউট অফ দিস ষ্টেজ। আমরা চেয়ারম্যানদের পুছি না। এলেম নাই হুজুরদের জ্ঞান দিতে আসছেন। হুজুরদের জ্ঞান দিতে হলে সেটা দেবেন হুজুররা, আলেমরা। আপনি জ্ঞান দেয়ার কে? ' ।
' সো ব্লাডি হোয়াট ' গালিটা মাজিদ মুনওয়ারের বেশ মনে ধরে। এটাকে তিনি আবার ব্যবহার করতে চান। খাতাটা থেকে তিনি আরেকটা বাক্য টুকে নেন। বেশ কয়েকবার প্রাকটিস করতে হবে বাক্যটা। বাক্যটা তার মাথায় ঘুরতে থাকে ' ইন্ডিয়ানদের কখনো বিশ্বাস করবেন না, জাষ্ট লাইক দেয়ার ওল্ড ফাদার দে আর অলসো গোইং টু হেল এন্ড অলওয়েজ ট্রায়িং টু মেক আওয়ার লাইফ হেল'।
মাজিদ মুনওয়ার চোখ বন্ধ করে বিড়বিড়িয়ে বাক্যটা আওড়াতে থাকেন। ' ব্লাডি ইন্ডিয়ান' দের নিয়ে কোন গল্পটা ছাড়বেন সেটা ভাবতে ভাবতে তিনি ঝিমিয়ে পড়েন। ' দলকে বেশি করে প্রমোট করতে হবে' কথাটা তার স্মরণ হয়। ব্লাডি ইন্ডিয়ানদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে কেন একটা দলই করতে হবে তার যুক্তি খুঁজতে খুঁজতে তিনি এই অবেলায় ঘুমিয়ে পড়েন।
-----------------------------------
পতিত হাওয়া
মন্তব্য
গদ্য চমৎকার লাগলো, দারুণ গতিশীল।
কিন্তু গল্পটা যেন হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেল, কোনো বক্তব্য ছাড়াই। বিশেষ করে, গত পোষ্ট পড়ে পাঠকরা অনেকটাই রোমাঞ্চিত ছিলেন, লেখক কীভাবে এই শয়তানদের পশ্চাদ্দেশে কষাঘাত করেন সেটা দেখার জন্য। আমার কথা বলতে পারি, আমি কিছুটা হতাশ।
দেখা যাক, অন্যদেরও সেরকম অভিব্যক্তি কিনা।
পুনশ্চ: গদ্যের হাত কিন্তু আপনার দারুণ!
'পশ্চাদ্দেশে কষাঘাত' জাতীয় কোন কিছু চিন্তা করে আসলে গল্পটি লেখা হয়নি। গল্পটাতে ' একটা কিছু ' মাত্র প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই ' একটা কিছু ' কে পাঠকরা নানানভাবে দেখতে পারেন। গল্পে যেভাবে একটা সূচনা থাকে এবং সমাপ্তি থাকে এখানে তেমনটা নেই বরং এটা পারস্পারিক সম্পর্কযুক্ত অনেকগুলো ঘটনার সংযুক্তি যেটা থেকে অনেককিছুই ইনফার করা সম্ভব বলে আমার মনে হয়।
যাই হোক, লেখাটার দুই পর্ব পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
......................................................
পতিত হাওয়া
ও আচ্ছা
ইমরুল, এইটাকে একটা উপন্যাস করা যায়। চিন্তা করেন।
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
টুটুল ভাই, আপনার কথাটা মাথায় থাকল।
......................................................
পতিত হাওয়া
এরকম একটা গল্প কেন আমি আগাগোড়া মিস করে গেলাম নিজেই বুঝতে পারছি না
দুর্দান্ত
দুই পর্বই পড়লাম। ভালো লিখেছেন। তবে বাস্তবের বয়ানীরা এরচেয়েও মারাত্মক। সেদিক দিয়ে আপনার গল্পে বরং অনেকটাই সফট বিষয় উঠে এসেছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
গল্প ভালো হয়েছে, আমিও বলব উপন্যাসে আসতে পারে। লালসালুর মতো অন্যসালু
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
হু, সেটা হলে অবশ্য মন্দ হয় না। জীবন-জীবিকার চাপে সেটা কদ্দুর সম্ভব কে জানে?
......................................................
পতিত হাওয়া
- ঐটাও বলেন, কোনো একদিন মাজিদ চান্দিওয়ালা বয়ানের সময় উল্লেখ করলেন এক যুবকের সাথে কথোপকথনের কথা। বলাই বাহুল্য এই কথোপকথনের পুরো অংশটাই বানোয়াট এবং মিথ্যা।
এক জায়গায় বয়ানের দাওয়াতে গিয়ে সেখানকারই এক ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত যুবককে মাজিদ চান্দিওয়ালা জিজ্ঞেস করলেন, 'দোয়ায়ে ক্কুনুত কী?'
যুবক উত্তর করলো, 'জানাজায় পড়ে যে দোয়া সেটাই হলো দোয়ায়ে ক্কুনুত।' বয়ানের এ পর্যায়ে এসে গলায় হাল্কের শক্তি এসে জড়ো হয় মিঃ চান্দিওয়ালার। তিনি পারলে মাইকের পর্দা ফাটায়ে ফেলেন এমন স্বরে চিৎকার দিয়ে বলেন, 'অরে জাহেল, বেআলেম, আনপাড়াহ্, তুই পড়িস দোয়ায়ে ক্কুনুত তোর বাপমা'র জানাজায়!'
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দুটি পর্বই পড়লাম একসাথে। খুবই চমৎকার। অন্তত আমি গল্পের সমাপ্তিতে আশাহত হইনি।
আপনার গদ্যের হাত খুবই শক্তিশালী (সম্ভবত আপনি নিজেও জানেন না কতটা শক্তিশালী)। লেখাটি পড়ার সময় মনে হয়েছে কোন প্রতিষ্ঠিত, বিখ্যাত কোন লেখকের লেখা পড়ছি। লেখকের নাম দেখে লেখা খুব একটা পড়ি না, তবে এখন থেকে আপনার নাম দেখলেই পড়ব।
ভবিষ্যতে এরকম আরো অনেক চমৎকার লেখার প্রত্যাশায় রইলাম।
ধন্যবাদ।
......................................................
পতিত হাওয়া
ইমরুল কায়েস, নিশ্চয়ই আপনার জন্য রহিয়াছে
শিরোনামের সাথে আমার কাছে গল্পটা সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়েছে। এক সকালে এর চেয়ে বেশি আর কী বা ঘটতে পারে?
আমার ধর্মানুভূতি সংবেদনশীল, সে হিসেবে এই গল্পটি আমার পড়া নিষেধ ছিল। কিন্তু ধর্মানুভূতি সংবেদনশীল মানে এই নয়, ধর্ম নিয়ে ভণ্ডামী আমি চোখ বুজে মেনে নেব। বরং ব্যাপারটা উল্টো, আমিই সবার আগে ধর্ম নিয়ে ভণ্ডামী প্রতিরোধ করতে এগিয়ে যাব। কারণ ধর্মের প্রতি আমার ভালবাসা আছে।
এই গল্পটিতে ধর্মের অপব্যবহারটি ফুটে উঠেছে চমৎকারভাবে, আরও ফুটে উঠেছে আমাদের ধর্মচর্চা এখনআসলে কোথায় বন্দী হয়ে আছে সেই ব্যাপারটি। গল্পের বিষয়বস্তু এবং বর্ণনা উভয়ই চমৎকার। প্রথম পর্বটি পড়ে দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় ছিলাম। দুই পর্ব শেষ করে তৃপ্ত হলাম।
ধন্যবাদ।
সালাহউদদীন তপু
ভাল্লাগলো। তবে গল্পটা বিস্তারিত উপন্যাস হিসাবে পড়ার প্রত্যাশা রইলো।
দুটো পর্বই একসাথে পড়লাম।
চমৎকার !
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
গল্প পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। দারুণ শক্তিশালী লেখনি আপনার।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
পড়লাম দ্বিতীয় পর্বও! উপন্যাস না হোক, নিদেনপক্ষে বড় গল্পে রূপ না দিতে পারলে গল্পটা মাঠে মারা যাবে।
হুঁম, কায়েস, ঠিক আছে। আরো কিছু বিষয় মনে হয় আনতে পারবেন আগামীতে, যখন এটাকে টেনে আরো লম্বা করবেন।
অভিনন্দন আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
গল্পটা ভালো বেশ
তবে পুরোটা পরে ডিসক্লেইমারটা অপ্রয়োজনীয় মনে হলো
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ঠিক আছে, মুছে দিলাম ডিসক্লেইমারটা।
......................................................
পতিত হাওয়া
উপন্যাস করুন । দাবী রইলো।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
গল্পটি সচলে দিয়েই সিলেটে ঘুরতে গিয়েছিলাম, সবার কমেন্টে ট্র্যাক রাখা সম্ভব হয় নি। মাত্র আসলাম শ্রীমঙ্গল থেকে।
যারা গল্পটি পড়ে কমেন্ট করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অনেকে গল্পটিকে উপন্যাস হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। তাদের এই চাওয়াটা যে গল্পটার প্রতি তাদের ভালবাসারই একটা বহিঃপ্রকাশ তা বোঝা যাচ্ছে। তাদের আমি হতাশও করব না আবার আশাও দিতে পারছি না। দেখি কি হয়। টাইম উইল সে। তাদের এই বাড়তি চাওয়াটার জন্য তাদের আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
......................................................
পতিত হাওয়া
নতুন মন্তব্য করুন