তাবলীগ বৃত্তান্ত

ইমরুল কায়েস এর ছবি
লিখেছেন ইমরুল কায়েস (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/১১/২০০৯ - ৩:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


১.

ধর্মকর্ম ছেড়েছিলাম কলেজে থাকার সময়েই। কলেজের দুই বছরে খুব বেশি হলে তিন-চারটা শুক্রবারের জুমার নামাজ পড়া হয়েছিল। বুয়েটে ভর্তি হয়েও খুবই অনিয়মিত ধর্ম চর্চা অব্যহত থাকল। কিন্তু তারপরও একবার আমাকে তাবলীগে যেতে হল।

থাকি সোহরাওয়ার্দী হলের নিচতলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্রেশম্যান হলে নিচতলায় দুই সম্প্রদায়ের লোকজনের সবসময় উৎপাত থাকে। হলের বন্ধুবান্ধব আর তাবলীগি সম্প্রদায়ের লোক। ডাইনিং, ক্যান্টিন সবগুলো নিচতলায় হওয়ায় দিনে তিনবেলার মধ্যে অন্তত দু-এক বেলা এরা খেতে এসে রুমে ঢুঁ মেরে যায়। মহা উৎপাত। আমার রুমেও এরকম উৎপাত শুরু হল। নানান কিসিমের তাবলীগের বড়ভাই এসে ধর্মের বয়ান দেওয়া শুরু করল। বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র হওয়ার কারনে এদের আবার কিছু বলাও যায় না। প্রতিদিন ভাইদের একইরকম কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয় আর হু-হা করতে হয়। মহা এক যন্ত্রনায় পড়লাম।

অন্যদিন তবুও ভাল, মঙ্গলবার এলে যাকে বলে বেড়াছেঁড়া সেরকম অবস্থা হয়ে যায়। সপ্তাহের এ দিনটায় এদের "গাস্ত" হয়। গাস্ত মানে হল আসরের নামাজের পর একদল লোক মসজিদে থেকে ঈমান-আমলের কথাবার্তা বলে আর একদল লোক পটেনশিয়াল মুমিন মুসলমান ধরতে রাস্তায় বের হয়। এই বের হওয়া লোকদের আবার একজন দলনেতা থাকে, বাকিরা একটা লাইন ধরে তাকে অনুসরণ করে। দলনেতার মূল কাজ হয় আমাদের মত ধর্ম সম্পর্কে ভুলোমনা লোকদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাস্তায় আনা, মসজিদে থাকা লোকদের সাথে ঈমান-আমলের কথাবার্তায় যোগদান করিয়ে মাগরিবের নামাজ পড়ানো।

গাস্তের দিন আমাদের মত সাধারণ মুসল্লিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মঙ্গলবারের বিষয়টা আমাদের মাথায় সবসময় রাখতে হত। তাবলীগি ভাইদের হাতে তো আর ধরা খাওয়া যায় না, ধরা পড়লে পুরো বিকালটাই মাটি । একগাদা লোকজন একসাথে এসে ধর্মকর্মের কথা বলে মসজিদে নিয়ে যেতে চায়। এতগুলো লোকের মুখের দিকে চেয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাই রাজী হতে হয়। গাস্ত এড়ানোর জন্য তাই নানান ধরণের কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়। অধিকাংশ সময় আমি ঘুম কৌশলের আশ্রয় নিতাম। পাশের কোন রুমে গাস্তপার্টি এসেছে বুঝতে পারলেই মরার মত ঘুমের অভিনয় করে বিছানায় পড়ে থাকতাম, কেউ ঘুমিয়ে থাকলে এরা আর বিরক্ত করত না। সেসময় বিকেলে গোসল করার অভ্যাস ছিল। কোন কোন দিন তাই গাস্তপার্টি আসলে ঐ সময়টাতেই গোসল করতে যেতাম। আর গোসলকালের সময়সীমা কতক্ষণ হত সেটা সহজেই মালুম। তাবলীগি ভাইয়েরা চলে না যাওয়া পর্যন্ত গোসলখানায় আটকে থাকতে হত।

গাস্তপার্টির লোকজনও বোধহয় সাধারণের এধরনের নানান কৌশলের কথা জানত। এরাও তাই আসত একটু কৌশল করেই, অনেকটা নিঃশব্দে দুম করে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখা যেত দলনেতা রুমে এসে হাজির হত। এসেই বলত , "মসজিদ থেকে লোকজন এসেছে, দেখা করতে চায়"। তখনই বোঝা যেত, আজকে ধরা পড়ে গেছি। জনা পনেরো লোকজনের সামনে অনেকক্ষণ অনিচ্ছাসত্ত্বেও বয়ান শুনতে হত।"মসজিদে বয়ান হচ্ছে, আসুন ভাই একটু গিয়ে শুনি", কথাটা শুনলেই আমি শেষ কৌশলের আশ্রয় নিতাম। "ভাই, এখন তো একটু কাজ আছে। টিউশনীতে যেতে হবে", এই কথাগুলোই ছিল আমার শেষ ভরসা। কাজও অবশ্য হত।

প্রথম বর্ষে থাকায় অবশ্য তাবলীগিদের এড়ানোর এসব নানান ধানাই-পানাই মাথায় আসে নি। জুনিয়র থাকায় সিনিয়র তাবলীগি ভাইদের বলাও যেত না কিছু। একবার তাই তিন দিনের তাবলীগেই গেলাম প্রথম সেমিষ্টারের মিডটার্ম ভ্যাকেশনে। মোহাম্মদপুর বেড়ীবাঁধের কাছেই একটা মসজিদে অবস্থান করল আমাদের জামাত। মসজিদে এর আগে অনেক গিয়েছি। শবে কদর, শবেবরাতে হয়ত নামাজও পড়েছি সারারাত কিন্তু এবার টানা তিনদিন মসজিদ থাকার অনুভূতিটা ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। মসজিদেই থাকা, খাওয়া, প্রত্যহিক কর্মকান্ড। এ যেন ঢাকায় নিজের চেনা চারপাশের গন্ডীর মধ্যে আলাদা কোন এক গন্ডী, অচেনা এক পরিবেশ। সে অদ্ভুদ এক অনুভূতি।

মোহাম্মদপুরের মসজিদের ঐ জামাতটির সবাই বুয়েটের ছাত্র ছিলাম। তৃতীয় বর্ষের শেষ টার্মে সিভিলে পড়ুয়া এক ভাইয়ের সাথে আমার বেশ সখ্য ছিল। দুই তিনজনের ছোট ছোট দল করে আমাদের গাস্ত করতে যেতে হয়। আমি আর ঐ ভাই মিলে একসাথে যেতাম গাস্ত করতে। ঈমান-আমলের কথা বলে, একটু পরকালের ভয় দেখিয়ে বহু লোককে মসজিদে টানা হত। বাসের হেল্পার থেকে শুরু করে নির্মাণশ্রমিক সব ধরনের লোককেই আমন্ত্রণ জানানো হত। যদিও বলতে গেলে এদের প্রায় কেউই আমাদের দাওয়াতে মসজিদে আসত না। হতে পারে দাওয়াতকারী হিসেবে আমরা খুবই খারাপ ছিলাম।

দাওয়াত দিয়ে মসজিদে লোক কিভাবে বেশি টানা যায় এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে আমরা একটা কৌশল বের করলাম। কৌশলটা অনেকটা এরকম। গাস্তদের সময় হলে আমরা দুজন বাঁধের পাশে একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসে থাকি। মোহাম্মদপুরের ঐ এলাকাটায় প্রচুর শ্রমজীবি মানুষের বাস। এরা বাঁধের এসব দোকানে এসে চা খায়। আমাদের টার্গেট এই শ্রেনীর লোক। এরা চা খেতে এলে আমরা প্রথমে এদের সাথে একটু সাধারণ কথাবার্তা বলি।

তো, ভাই কি করেন?
হেল্পার।
ও ভাল, তো কোন বাসে আছেন।
দ্রুতি সিটি বাস।
তা, কেমন? টাকা-পয়সা যা পান তা দিয়ে চলে?
চলে আর কি? আমাগো আর চলা। চলে কোন রকমে।
ভাই, এটাই হল দুনিয়াতে ঈমানের আসল পরীক্ষা। দুনিয়াতে ধন-সম্পদের কি এমন তাৎপর্য আছে? সবই পরীক্ষা। বুঝলেন, আল্লাহ পরীক্ষা করছেন আমাদের।

ব্যস, আমাদের শুরু হয়ে গেল। পালাক্রমে আমরা দুজন বক্তৃতা দিয়ে তার কান ঝালাপালা করে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে থাকি। বক্তৃটার মূল বিষয় দুনিয়া কতটা মিথ্যা, আখিরাতের জন্য আমল করা কতটা জরুরী। এমনিতেই ধর্মের কথা, তারপর আবার এই শ্রেনীর লোকদের আমাদের মত ভাল ভাষায় কথা বলা লোকদের 'না' বলার অভ্যাস কম। চায়ের দোকানে লোকজন তাই বাধ্য হয়ে আমাদের বক্তৃতা শোনে। তাদের চা-পান খাওয়া হয়ে গেলে আমরা খুশি মনে পকেট থেকে তাদের টাকা-পয়সা শোধ করি। এক মুমিন আরেক মুমিনের চা-পানের টাকা শোধ করছে, এদের কিইবা আর বলার থাকে? পরিশেষে আমরা আমাদের আসল কথাটা পাড়ি, "ভাই, আপনারদের এই মসজিদে আমাদের জামাত এসেছে। আসরের নামাজে আইসেন। নামাজের পর বয়ান হবে"। ধর্মানুভূতির খাতিরেই হোক অথবা চা-পানের বিল শোধ করেছি এর কৃতজ্ঞতাস্বরুপই হোক সবাই আমাদের আশ্বস্থ করে আসবে, যদিও পরে দেখা যায় এরা কেউ আর আসেনি। চা-পানের টাকাগুলো আমাদের স্রেফ মাঠে মারা যায়।

তিনদিনের তাবলীগটা বেশ ভালই লেগেছিলো। খাওয়াদাওয়ার কোন সমস্যা নাই। অধিকাংশ সময়ই এলাকার লোকজনের বাড়ি থেকে খাবার আসে, পোলাও কোর্মা জাতীয় খাবার লেগেই আছে। তবে সমস্যা একটা, সবাই একসাথে একপ্লেটে খেতে হয়। ডাল-ভাত খাওয়ার সময় একেবারে যা-তা অবস্থা হয়ে যায়। ডাল-ঝোল আছে দেখলেই আমি তাই একপাশ থেকে খেয়ে খাওয়া শেষ হয়েছে ভাব দেখিয়ে বসে থাকি। তাবলীগে খাবার নষ্ট করার নিয়ম নেই, অন্যেরা বিশাল থালার ডাল-ঝোল চেটেপুটে খেয়ে ফেলে। খোলাচোখে দেখলে জঘন্য এক দৃশ্য।

তিনদিনের শেষদিনে মসজিদটায় মাদ্রাসার ছাত্ররা আসল। এদের চেহারা, ক্থাবার্তার ধরণ আর পান্জাবীর গঠন দেখেই বোঝা এরা হয়ত মাদ্রাসায় ফ্রীতেই পড়ে। কে না জানে তিনবেলা খাবার আর পড়াশুনা করানোর নিশ্চয়তার জন্য অনেক গরীর ছাত্রই আবাসিক মাদ্রাসাগুলোয় ভর্তি হয়। সেবেলায় আবার এলাকার কার বাড়ি থেকে জানি খাসীর বিরিয়ানী আসল। মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে আমরা খেতে বসলাম। আমার পাশে নীল পান্জাবীর এক মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। সবাই মিলে বিরিয়ানী খাচ্ছি। সে দেখি মাংশ খাচ্ছে খুবই কম। মাংশ পেলেই সরিয়ে দিচ্ছে আমার দিকে, হঠাৎ হঠাৎ হয়ত একটা-দুটো খাচ্ছে। আমি অবশ্য মাংশের টুকরাটাগুলো সরিয়ে দেই নি, গপাগপ নিজের গলাতেই পুরেছি।

তাবলীগ থেকে চলে আসার পর এই বিষয়টা আমি অনেকদিন ভেবেছি। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমি, টিউশনি করে প্রতিমাসে ভাল টাকা-পয়সা পাই। বাড়িতেও এমন কোন দৈন্য নেই, চাইলেই টাকা-পয়সা পাওয়া যায়। হলে অথবা বাহিরে সবসময়ই ভালমন্দ খাওয়া হয়। অথচ আমার দিকে লোভনীয় মাংশের টুকরা এগিয়ে দিচ্ছে মাদ্রাসার একজন দরিদ্র ছাত্র, যে হয়ত বিশেষ কোন উপলক্ষ্য ছাড়া এরকম খাবার কোন সময় পায় না। আর আমি নির্লজ্জের মত টপটপ সেগুলো খেয়ে নিচ্ছি। এই বিষয়টা দীর্ঘদিন আমাকে পীড়া দিয়েছিল, আমার আত্বার দৈন্য আমাকে আহত করেছিল। পরে আমি যখনই তাবলীগের কথা শুনেছি বা ভেবেছি ততবারই আমার এই দৃশ্যটা মনে হয়েছে, আকাশী কালারের পান্জাবী পরিহিত এক মাদ্রাসার ছাত্র আমার দিকে মাংশের টুকরা এগিয়ে দিচ্ছে।

২.

তাবলীগে গিয়ে অবশ্য একটা লাভ হয়েছিল। তাবলীগি ভাইদের হাবভাবটা বোঝা যেত সহজেই। এটার সুফলও এক সময় পেয়েছিলাম। বুয়েটের মিডটার্মের এক বন্ধে সিল্ক সিটি ট্রেন ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছি। আমি বসেছি জানালার পাশে, অন্য পাশের জানালায় আরেকজন ভদ্রলোক। আমাদের দুই পাশে দুইজন পান্জাবী-টুপি পরা লোক। কথাপ্রসঙ্গে জানতে পারলাম এরা একমাসেরও অধিক সময় কাকরাইল মসজিদে ছিল। এখন নিজের বাড়ি রাজশাহীতে যাচ্ছে। আমি তো ভাবলাম সর্বনাশ। মাসাধিককাল এরা কাকরাইলে বয়ান শুনে, শিখে এসেছে। এখন তো এরা প্রয়োগক্ষেত্রে। ভাগ্য খারাপ হলে সারা রাস্তাই বয়ান শুনতে হতে পারে। এমনিতেই নিজে ধর্ম সম্পর্কে নিরাশ লোক, তার মধ্যে আবার ছুটি কাটাতে যাচ্ছি রাজশাহী। এসময় পরকাল নিয়ে বয়ান কে শোনে?

অনুমান আমার মিথ্যা হল না। আমার পাশের টুপি পরা ভাই বয়ান শুরু করলেন। ধর্ম নিয়ে শুদ্ধ-অশুদ্ধ যা জানেন সব উগরে দিতে শুরু করলেন। মিনিট দশেক সময় গেলে বুঝতে পারলাম ঢের হয়েছে, লাই দিলে সারা রাস্তাই এই চলবে। তাবলীগি ভাইকে বললাম,
ভাই, সবই তো শুনলাম, কিন্তু একটা সমস্যা আছে।
কি সমস্যা? চোখ গোল হয়ে গেল তার।
একটু ধর্ম নিয়ে সমস্যা আছে। আমি তো অন্যধর্মের লোক।
মনে হয় তার মাথায় যেন একটা বাজ পড়ল। তিনি বললেন
আপনার নাম কি?
আমি সন্তোস সাহা বা শুভ সাহা নামের কি যেন একটা নাম বললাম।

তাবলীগি ভাইয়ের মুখটা শুকিয়ে গেল। মুখে কেউ যেন তার মুখে একটা ঠুলি পড়িয়ে দিল। সারা রাস্তায় আমার সাথে তিনি আর টু শব্দটা করলেন না আর তাকানোর সময় চোখ গোল তাকালেন। একটু পরেই অবশ্য তার সামনের টুপিওয়ালা বন্ধু জানালার পাশের ভদ্রলোককে ধরলেন। সবাই তো আর আমার মত হিন্দু না!ঐ ভদ্রলোককে তাই সারা রাস্তায় অনেক বয়ানই শুনতে হল।

এই ঘটনা শুনে অনেক বন্ধুবান্ধব রাগই হল। নিজেকে হিন্দুর নাম দিয়ে আমি নামি ধর্মকে পথে নামিয়েছি। পরে আমি বিষয়টা চিন্তা করলাম। না ধর্ম নিয়ে এতটা বাড়াবাড়ি করা ঠিক হয় নি। বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষের ধর্মকে পথে নামানোটা একদম ভাল কাজ হয়নি।

৩.
বৃহসপতি শুক্রবার বুয়েট বন্ধ থাকে। বুয়েটে যারা তাবলীগ করে অধিকাংশ সময় ঐ দুই দিন তারা কাকরাইল মসজিদে কাটিয়ে আসে। বহুদিন হল ধর্মীয় স্থানের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। একবার আমারও মনে হল যাই, কাকরাইলে একটু সময় কাটিয়েই আসি। এই মনে হওয়াটা হঠাৎ করেই। রাত বারোটার দিকে পলাশী বাজারে গিয়েছি চা খেতে। চা খেয়ে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে হলে ফিরছি। গেটের কাছাকাছি এসে দেখি তড়িৎ কৌশলে পড়ুয়া আমাদের পরিচিত এক ভাই কাকরাইলের রিকসা ঠিক করছেন। এই ভাই কঠোরভাবে তাবলীগ করেন। এক সময় তার সাথে ভালই খাতির ছিল কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আমাকে লাইনে আনতে পারেন নাই বলে সম্ভবত আমার সঙ্গ বাদ দিয়েছিলেন, রাস্তাঘাটে দেখা হলেও অনেক সময় এড়িয়ে যান এই অবস্থা।

ধর্ম কখন কোন অবস্থায় কারে ডাকে তার কি কোন ঠিক-ঠিকানা আছে? কি যে মনে হল আমিও সিগারেট ফেলে দিয়ে তার সাথে ঐ অবস্থাতেই কাকরাইল যেতে চাইলাম। পোশাকের অবস্থা ধর্মীয় পরিবেশে যাওয়ার মত উপযোগী ছিল না। পরনে ছিল আজিজ সুপার মার্কেট থেকে কেনা একটা টি শার্ট, সেখানে আবার মুক্তিযুদ্ধের সময়কার একটা পোস্টারের ছবি ছিল যাতে লেখা "বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলমান, বাংলার খ্রীষ্টান, আমরা সবাই ভাই ভাই"। এই পোশাক পরে ধর্মকর্মের স্থানে যাওয়াটা কেমন হবে? সেখানে যারা যায় তাদের সবার ধর্মানুভূতি এক না। তারপরও রিকশায় উঠলাম। ধর্মের ডাক বলে কথা!

কাকরাইল মসজিদে যারা কখনও যায়নি তাদের এটা সম্পর্কে বলে বোঝানো খুব শক্ত। মসজিদ বললে যে সাধারণ চিত্রটা আমাদের চোখে ভেসে ওঠে কাকরাইল মসজিদের চিত্রটা সেরকম নয়। মসজিদের সামনের ফুটপাথে অসংখ্য দোকান। সেগুলোতে পান্জাবি থেকে শুরু করে পাজামা, টুপি, তসবী, কোরআন শরীফ, নামাজ শিক্ষা, নানান রকম ধর্মীয় বইপত্র এমনকি মেশওয়াক পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মসজিদের গেটে চোখে পড়ে দুজন মুসল্লি হাতে লাঠি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। দেশের আর কোন মসজিদে মনে হয় এরকম পাহারার ব্যবস্থা নেই।

মসজিদের ভিতরে গিয়ে দেখি শতশত লোক। এখানে ওখানে শুয়ে আছে। প্রথমে মনে হল এভাবে হুট করে এসে বোধহয় ভুলই হয়ে গেল। এখন কি মাথায় দিয়ে কোথায় ঘুমাই? সাথে আসা জোহা ভাই সব ম্যানেজ করলেন। ওখানে আগে থেকেই আরও বুয়েটের ছাত্র ছিল। দেখতে দেখতে কাঁথা, বালিশ এসব জোগাড় করে দিলেন জোহা ভাই। এক কোনায় ফাঁকা জায়গা দেখে কাঁথা বিছিয়ে শুয়ে পড়লাম।

তখন ছিল রমজান মাস। ঘুম ভাঙ্গল সেহরীর সময় জোহা ভাইয়ের ডাকাডাকিতে। কোন রকমে মুখহাত ধুয়ে সেহরী খেতে নিচে নামলাম। বিনামূল্যে সেহরী পাওয়া যাচ্ছে। এক পাত্রে দুইজনের খাবার একসাথে দেয়া হচ্ছে। জোহা ভাই একটা পাত্র নিয়ে আসলেন। খাবারের অবস্থা খুবই করুণ। ভাত আর ডাল। ডালের মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ পুঁইশাকের ডাটার মত জিনিস পাওয়া যায়। অবশ্য আয়োজন যত সামান্যই হোক ফ্রীতে তো পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার মত শহরে এটাই বা কম কি? লোকজন ডালভাত অমৃতের মত খাচ্ছে। একটা ভাতও নষ্ট হচ্ছে না। আমি ও কষ্ট করে হলেও খেলাম। কি আর করা যাবে এক রাতের ব্যাপারই তো।

ফজরের নামাজের পর কাঙ্খিত বয়ান শুরু হল। জামান সাহেব নামের একজন বয়ান শুরু করলেন। কথাবার্তা শুনে মনে হল বিহারী লোক। কথাবার্তা আমাদের সাথে যায় না। পার্থক্য আছে স্পষ্ট বোঝা যায়। বয়ানকারী এমন বিশেষ কিছু বলছিলেন না, যা বলছিলেন সবই সাধারণ কথাবার্তা। এগুলো বহুতবার আগেই শোনা হয়েছে। সকালে জেগে থাকার অভ্যাস নেই। চোখ যে একটু বুজে রাখব সে সুযোগও নেই। চোখ বন্ধ করলেই পাশের লোকজন আলতো করে হাতে স্পর্শ করে, আলহামদুলিল্লাহ না বিসমিল্লা কি যেন বলে। অনেক কষ্টে সকাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। চারদিক হাল্কা পাতলা পরিস্কার হয়েছে মনে হলে জোহা ভাইকে বলে চলে আসলাম। হলের ছেলে হলে এসে আরামের ঘুম দিলাম। ধর্মচেষ্টা আবার লাটে উঠল।

তাবলীগের লোকজনের কাছে থেকে সিনিয়র হয়েও কখনও রেহাই পাইনি। হল জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এরা আমাকে বারবার লাইনে আনার চেষ্টা করেছে আর ব্যর্থ হয়েছে। তবুও কখনও এরা হাল ছাড়েনি। অবশ্য এটাই ঠিক যে এদের সরাসরি কখনও না ও কখনও বলা হয়নি। আমার মত একজন একগুঁয়েকে ধর্মের পথে আনতে পারলে হয়ত সওয়াব খানিকটা বেশিই পাওয়া যাবে বলেই সম্ভবত এরা ভেবেছে। এদের দোষ দিয়ে কি লাভ? অবশ্য চোরে যে ধর্মের কাহিনী শোনা না এটা বোধহয় এদের মাথায় কখনও আসেনি।


মন্তব্য

অকুতোভয় বিপ্লবী [অতিথি] এর ছবি

আমি রশীদ হলে থাকতাম। একটু বড় হয়ে হলে উঠেছিলাম বলেই বোধ হয় তাবলীগের লোকেরা খিব একটা জ্বালাত না। আর কখনো এলেই আমি "একটু ব্যস্ত আছি" বলতাম, আর তেমন একটা ঘাটাত না। এমনিতেও আমার রুমের আশেপাশে এইরকম হুজুরগোষ্ঠীর বসবাস বেশি ছিল, কিন্তু প্রায় সবসময়ই "অল্প কাপড়" পরে থাকতে দেখত বলেই বোধ হয় খুব একটা ঘাঁটাত না দেঁতো হাসি

"অকুতোভয় বিপ্লবী"

ইমরুল কায়েস এর ছবি

হু, "অল্প কাপড়" পরে থাকা অবশ্য একটা ভাল টেকনিক বটে! অল্পটা আবার যাতে খুব বেশি অল্প না হয়ে যায় হাসি
......................................................
পতিত হাওয়া

সিরাত এর ছবি

দারুণ লাগলো ভাই, দারুণ। সবচেয়ে ভাল লেগেছে আপনার মোটামুটি নন-জাজমেন্টাল দৃষ্টিভঙ্গী।

যাহোক, থিওরটেকালি নন-জাজমেন্টাল হলেও প্র্যাকটিকালি হওয়াটা বেশ কষ্টকর, তবে আমি একবার ধরা খেয়ে হতে পেরেছিলাম। আইবিএ হোস্টেল থেকে বের হওয়ার সময় ধরেছিল ৪-৫ জন। আমি অনেকক্ষন আলোচনা করলাম, তাইমিয়্যা থেকে ইবন কাথির, আবদুল-আজিজ বিন আব্দুল্লাহ ইবন বাজ থেকে সালিহ আল-ফাওজান, আবুল আলা মওদুদী থেকে জাকির নায়েক। তারপর দেখি হেরাই যায় গা। আমারে যাওয়ার সময় কয়: "না ভাইয়া, আপনি তো অনেক জানেন। চিন্তা-ভাবনা করে দেখেন। সালাতে অনেক সওয়াব।" সঙ্গে আমার দুই বন্ধু ছিল - ওরা সারাটা সময় খ্যাক খ্যাক কইরা হাসতেসিল! চাটগায়ি মুসলিম, কিন্তু এদের সেন্স অফ হিউমার দারুণ!

যাই হোক, চার দিলাম!

ইমরুল কায়েস এর ছবি

চার ধন্যবাদের সাথে গৃহীত হল।
......................................................
পতিত হাওয়া

ওডিন এর ছবি

আহারে বেচারারা! পড়বি তো পড় বাঘের মুখে দেঁতো হাসি
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা। চিন্তিত

শেহাব [অতিথি] এর ছবি

আমি একটা টেকনিক বের করেছিলাম। আমাদের বিল্ডিংয়ে তাবলীগ আসলে আগে থেকে খবর পেয়ে যেতাম। আমি সাথে সাথে ডেস্কটপে বাচ্চাদের দেখানো যায়না এমন ছবি ওয়ালপেপারে দিয়ে রাখতাম। দরজায় নক করলে দরজা খুলে ভিতরে আসতে বলতাম। ওয়ালপেপার দেখে সালাম দিয়ে বের হয়ে যেত। ধরে নিত অলরেডী আমার হাবিয়া কনফার্ম। জাস্ট দুনিয়াতে শিক্ষাসফরে আসছি।

মনজুর এলাহী [অতিথি] এর ছবি

কায়েস ভাই,

আমি যখনই তাবলীগের কথা শুনেছি বা ভেবেছি ততবারই আমার এই দৃশ্যটা মনে হয়েছে, আকাশী কালারের পান্জাবী পরিহিত এক মাদ্রাসার ছাত্র আমার দিকে মাংশের টুকরা এগিয়ে দিচ্ছে।

উপলব্ধিটার স্বিকারোক্তি দেখে মুগ্ধ হলাম। একচোখা হবার আসলেই কোন মানে নেই।

'আপনার মাঝে আপনাকে খোজে কয়জনে???
বিধাতার রুপ খুজিতে যাই কোন জ্ঞানে???'

ইমরুল কায়েস এর ছবি

স্বীকারোক্তি নিজের ভিতরে থাকলে সেটা পুষে রাখার কোন কারন দেখি না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
......................................................
পতিত হাওয়া

মাসরুফ হোসেন এর ছবি

স্বীকারোক্তিটা আসলেই অসাধারণ লাগল।ঠিক যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম সবকিছু।

দ্রোহী এর ছবি

রাসেল ভাই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের তিন বছরের সিনিয়র। থাকতেন শহীদুল্লাহ হলে। একদিন বিকাল বেলায় তিনি নাস্তা করতে হল থেকে বের হচ্ছিলেন। গন্তব্য শহীদুল্লাহ হলের পুকুরপাড়ের কোনায় অবস্থিত দোকানগুলো। দোকানের কাছাকাছি আসামাত্রই স্বল্পপরিচিত কয়েকজন হুজুর তার পথরোধ করে দাঁড়ালো। হুজুরদের একজন রাসেল ভাইয়ের ডান হাতখানা নিজের দুই হাতের মুঠোয় পুরে আটা মলার মতো করে মলতে শুরু করে দিলেন। অন্য একজন হুজুর রাসেল ভাইয়ের পরিধেয় জামার বোতাম নিয়ে টানাটানি করতে শুরু করে দিলেন।

হুজুরদের লিডার- যিনি রাসেল ভাইয়ের হাত মলছিলেন, তিনি তার বয়ান শুরু করলেন।

হুজুর বকেই যাচ্ছেন, "বুঝলেন রাসেল সাহেব? আমাদের মন হচ্ছে জমির মতো। জমিতে যেমন বছর বছর চাষ দিতে হয়, আগাছা পরিষ্কার করতে হয়, ফসলের যত্ন নিতে হয় তেমনি মনের ও যত্ন নিতে হয়। না হলে মনের অবস্থা হয় পতিত জমির মতো।"

রাসেল ভাই চুপচাপ হুজুরের কথা শুনলেন। তারপর হুজুর যখন দম নেবার জন্য চুপ করে রাসেল ভাইকে কথা বলার সুযোগ করে দিলেন তখন রাসেল ভাই বললেন, "হুজুর হাত ডইলেন না। সেক্স উঠে যাচ্ছে!"

সিরাত এর ছবি

দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

হুজুর হাত ডইলেন না। সেক্স উঠে যাচ্ছে!

হুজুরেরতো পুকুরে লাফ দেওয়ার কথা!!

ওডিন এর ছবি

আমার ছোট ভাইয়ের খুব ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু তাবলিগ করে। দারুন ব্রাইট ছেলেদুটো। নানারকম বিষয় নিয়ে আড্ডার ভেতরই মাঝেমধ্যে বেশ উপভোগ্য বাহাস হয় আমাদের - ওরা আমাকে চায় ধর্মপথে আনতে- (ইসলাম না, ওরা চায় আমি আমার নিজের ধর্মপথেই চলা শুরু করি! দেঁতো হাসি কোন অর্গানাইজড ফর্ম আর কি ), আর আমি চেষ্টা করি আমার অজ্ঞেয়বাদি ফিলোসফি ওদের ব্যখা করতে- শেষে দেখা যায় আমরা সবাই চরমভাবে বিভ্রান্ত ! তখন আবার গেমিং নিয়ে আলাপ শুরু হয়। সবমিলিয়ে সময় ভালোই কেটে যায়।
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা। চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

তৃতীয় বর্ষের শেষ টার্মে সিভিলে পড়ুয়া এক ভাইয়ের সাথে আমার বেশ সখ্য ছিল। দুই তিনজনের ছোট ছোট দল করে আমাদের গাস্ত করতে যেতে হয়। আমি আর ঐ ভাই মিলে একসাথে যেতাম গাস্ত করতে। ঈমান-আমলের কথা বলে, একটু পরকালের ভয় দেখিয়ে বহু লোককে মসজিদে টানা হত।

বলে কি! বলে কি! আমি জানিনা! এতো বড় ঘটনা!!!!!

গরীব
সাউথ কোরিয়া
mostofa)_01buet@yahoo.com

আহমেদুর রশীদ [অতিথি] এর ছবি

ছোট থাকতে কত বার যে রাহবার( গাস্তের মিছিলের সামনে থাকা পথ প্রদর্শক) হতে হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পথ আর খুঁজে পাওয়া হলোনা....

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এইখানে খালি নিজের ধর্মের তাবলীগি না খেরেস্তান ধর্মের তাবলীগের পাল্লায়ও পড়তে হয়েছে বেশ কয়েকবার। এমনকি হলদে চাদর জড়ানো সাদা চামরার 'হরে কৃষ্ণা' পার্টিও ছাড়ে নাই। কয়েকদিন শুনছি না পাইরা। তারপর কেমনে জানি কী হইলো, এখন আর কেউ আটকায় না। লাস্ট যেবার আটকাইছিলো হিমু, বদ্দা আছিলো সাথে। হিমু তার ক্যামেরার লেন্স তাক কইরা কাইঞ্চা হয়ে এক দিকে হাঁটা দিলো, আমি "হৈ হৈ, ঐটা না এইটার ফটুক তোল" করতে করতে তারে ফলো করলাম, বাঁটে পড়লো নিরীহ বদ্দা। হাতের ডলন মলন যা খাওয়ার তিনিই খাইতে থাকলেন কিয়দক্ষণ। আমি আর হিমু দূর থেকে বদ্দার দিকে চাইয়া দাঁত কেলায়া হাসি আর বদ্দা আমগো দিকে কুরবানীর গরুর মতোন অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

একদিন আহসানউল্লাহ হলের সামনের বাগানে বসেছিলাম। এক বন্ধুর আসার কথা ছিল।খানিক বাদে দেখলাম আমার দিকে এগিয়ে আসছেন দুজোড়া হুজুর। তাঁরা আমাকে ঘিরে বসলেন। নানান কিছু বলে আমাকে বুঝাতে লাগলেন। আমি মাঝে মধ্যে হু হাঁ করলাম। এভাবে বোধহয় আধা ঘন্টা পার হয়ে গেল। আমার নাম, রুম নাম্বার লেখার জন্য খাতা বের করলেন। বললাম শুভাশীষ দাশ ,আহসানউল্লাহ উত্তরে থাকি,রুম ১৪১। সব শুনে আর কিছু না বলে সবাই উঠে চলে গেলেন।

সিরাত এর ছবি

হাহ হাহ!!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি যখনই তাবলীগের কথা শুনেছি বা ভেবেছি ততবারই আমার এই দৃশ্যটা মনে হয়েছে, আকাশী কালারের পান্জাবী পরিহিত এক মাদ্রাসার ছাত্র আমার দিকে মাংশের টুকরা এগিয়ে দিচ্ছে

এরকম পরিস্থিতিতে আমি ও একবার পরেছিলাম। পরে খুব খারাপ লেগেছিল।

স্বপ্নদ্রোহ

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আমি যখনই তাবলীগের কথা শুনেছি বা ভেবেছি ততবারই আমার এই দৃশ্যটা মনে হয়েছে, আকাশী কালারের পান্জাবী পরিহিত এক মাদ্রাসার ছাত্র আমার দিকে মাংশের টুকরা এগিয়ে দিচ্ছে।

এটা মনে রাখার মতনই একটা ঘটনা।

ধূগোর সাথে সহমত করছি, এখানে (জার্মানীতে) এসে খৃস্টান তাবলীগের হাতে প্রায়ই পরতে হয়। এদেরকে 'আমি তো মুসলিম'বলে ফায়দা হয় না। এটা বিরাট সমস্যার বিষয়। মনোযোগ দিয়ে কথা শুনতে হয়। ত্যাড়া কথা বললে এরা আরও নরম হয়ে যায়, সময় বেশী নেয়। আমি সব কথায় হু হু বলে পার পাবার চেষ্টা করি।

ডরমে থাকতে এদের সাথে গেরিলা কায়দায় লুকোচুরি খেলতাম। সবাই মিলে একরুমে অবস্থান নিতাম। এরপরে এদের সাথে সিঙ্ক্রোনাইজেশন করে একের পরে এক রুম বদলাতাম।

হালে হরে কৃষ্ণ পার্টির হাতেও ধরা খাওয়া হলো! পরে ২ ইউরো দিয়ে চটি বই কিনে তারপরে রক্ষে পেলাম! বইয়ের নাম 'কৃষ্ণ: ননি চোর Krisna: the butter thief'

আপনার লেখা পড়ে অনেক স্মৃতি মনে পরল। ধন্যবাদ।

ইমরুল কায়েস এর ছবি

এইসব খ্রীষ্টান, হরে কৃষ্ণ জাতীয় বৈদেশী তাবলিগ নিয়ে লিখে ফ্যালেন না ক্যান। আমরা একটু পড়ি।
......................................................
পতিত হাওয়া

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এখনো আছে এরকম বুয়েটে... তবে আমি চুর। তাই ধর্মের কাহিনী শুনন হয় না।

______________________________________________________

মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

পাজি পোলা এর ছবি

তাবলীগ খুবই উপকারী জিনিস। তাবলীগী প্রতিবেশীর বউয়ের সাথে ব্যাপক ফস্টিনস্টি হইছিল আমার। পরে তারা বদলি হইয়া গেছে। হয়ত অন্য কারো কপাল খুলছে।

আলমগীর এর ছবি

লং টাইম নো সি।

মূলত পাঠক এর ছবি

নাদান বলে মাফ চেয়ে প্রশ্ন রাখছি: এই জাতীয় লোকেদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলে কী হয়? এর কি সুদূরপ্রসারী কোনো কুফল আছে (যেমন এদের মস্তানির শিকার হতে হয় পরে?) নাকি স্রেফ অভব্যতা করাটা মুশকিল বলে এদের সহ্য করতে হয়?

আমাকে আমেরিকায় একবার ধরেছিলো এই ধর্মবেচা এক উল্লুক, তাকে সোজা দূর করে দিয়েছিলাম এক কথায়। কিন্তু দেশে হয়তো এতো সোজা নয় ব্যাপারটা। আমি নিজে দেশে অপরের ধর্মাচরণের কারণে উত্যক্ত হয়েছি কিন্তু গায়ে পড়ে ধর্ম বেচতে আসে নি কেউ, তাই সমস্যার আসল রূপটা জানা নেই। আলোকপাতের আশায় রইলাম।

ভিন্নমত এর ছবি

ভাই মূলত পাঠক,
আপনার মন্তবব্যটা ভাল লাগলনা। আমিও এদেরকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি, তবে এরা এমন কেউ না যে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। আর এদেরকে মাস্তান মনে করার কারন কি? মাস্তানির সঙ্ঘাটি দয়া করে এট্টু বুঝায়া দিতেন যদি?

আমি রাগিব ভাইয়ের সাথে একমত, এদের আচরন পুরোপরি অহিংস মনে হয়েছে আমার কাছে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

মূলত পাঠকদার মত আমারও একই প্রশ্ন। যদিও আমি জানি এদের সাথে মাস্তানি কথাটা নিশ্চিতভাবে যায় না। রাগিব ভাই যেভাবে বললেন, সম্পূর্ণই অহিংস এরা এবং এই কাজ করার একশভাগ অধিকার তাদের আছে।

কিন্তু মুখের উপর না করে দেবার অধিকারও কিন্তু আমাদের আছে, যদি আমরা তা করতে চাই। কিন্তু ভদ্রতাবশত বা চক্ষুলজ্জার ভয়ে অনেকে হয়ত করেন না। আর অনেকে হয়ত মনে করেন, কি দরকার!

কিন্তু, আমার মনে হয়, বেশ ভদ্রভাবে এবং সংক্ষেপে নাও বলা সম্ভব।

আমার মনে হয় তাদের প্রতি ঘৃণার দৃষ্টিতে নয় বা ফেঁসে গেলাম এই দৃষ্টিতেও নয়, বরং ভীষণ মানবতা ভ'রে তাদের কর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আমি যদি বলি, 'দুঃখিত ভাইয়েরা, আমি আপনাদের এই বয়ান (এই মুহূর্তে) শুনতে অপারগ। (ঠিক আছে?)'

এরপর দেখা দরকার তারা কি বলেন। যদি বলেন, 'কেন জানতে পারি?' তবে উত্তর আবার একইরকমভাবে হতে পারে, 'আমি (এই মুহূর্তে) তা বলতে অপারগ।' প্রশ্ন যদি 'কেন জানতে পারি?' না হয়ে হয় 'কেন পারবেন না?' তাহলে আমি বলতে পারি 'আমি এর উত্তর আপনাকে দিতে পারছি না' এবং তা এমনভাবে যার অর্থ দাঁড়ায় ওই প্রশ্নও উনি করতে পারেন না।

ওনারা ওনাদের অধিকার মত কাজ করছেন। আমার অধিকার আমি আদায় না করলে তো ফেঁসেই যেতে হবে। ফেঁসে যাবার অনুভূতিটাও কিন্তু ওনাদের কাছে মারাত্মক কার্যকর। কারণ, পরিশেষে আপনি কিছুটা অপরাধবোধেই ভুগবেন।

--------------------------------
~পর্যবেক্ষণ-অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন~

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই,
আপনার লেখাটা নিয়ে আজ একটা বিপদেই পড়েছিলাম!
সত্যি বলতে কী, দোষটা আমারই। লেখাটার প্রথম ভাগের শেষাংশ (আকাশি পাঞ্জাবীর ছেলেটা) বেশ ভাবিত করেছে আমাকে। তাই অতি উৎসাহ নিয়ে আমার এক নিকট (সদ্য-তাবলিগী) বন্ধুকে লেখার লিংকটা পাঠিয়েছিলাম কাল (এখন বুঝছি, বিরাট ভুল হয়েছে)।
আজ দেখি তার বিশাল এক উত্তর যার সারমর্ম হচ্ছে- “কীভাবে আমি ভাবলাম এটা তার ভালো লাগবে... আমিই বা কী করে এটা পছন্দ করলাম...!” শুধু কি তাই? আমাকে একেবারে “মোনাফেক” এর দলভুক্তও করে ফেললো মন খারাপ

কী আর করা! আমি শুধু তাকে আপনার লেখার আকাশি পাঞ্জাবীর ছেলেটার অংশটুকু আবার পাঠিয়ে দিয়ে অনুরোধ করলাম নেতিবাচক সন্দেহ বাদ দিয়ে ওইটুকু আবার পড়তে।
যাই হোক, খুব ভালো লেখাটার জন্য ধন্যবাদ।
সাঈদ

ইমরুল কায়েস এর ছবি

দেখার চোখ আর ভাবার ক্ষমতা তো আর ভাই সবার সমান নয়। আপনি হয়ত যেভাবে ভেবেছেন আপনার বন্ধু হয়ত সেভাবে ভাবতে পারেনি। যাই হোক, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
......................................................
পতিত হাওয়া

সাইফ তাহসিন এর ছবি

কয়েস ভাই, আপনার লেখা পড়লাম অনেকদিন পরে, তবে আমার কখনো পড়তে হয় নি এদের খপ্পরে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া করার কারনে সম্ভবত, আর বড় লোকের পোলাপাইন সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় এখানে শিবিরের লোকজন উৎপাত করত না। আর বাংলাদেশ মেডিকেলে আমাদের এক্সিকিউটিভ কমিটির বেশির ভাগই চরম মাত্রার বোতলখোর, ফলে তাবলীগি লোক না থাকায় এরা এখানে আসত না। তবে আমার মামা আবার সিরিয়াস তাবলীগি, কাকরাইল মসজিদে নিয়মিত যদি যেয়ে থাকেন, নাম বললেই চিনবেন। তাই এদের কার্যকলাপ সাইড লাইন থেকে অনেক দেখেছি।

আপনার লেখাটা অনেক জায়গায় ছুয়ে গেল। অসাধারন একটা লেখা, এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এদের খপ্পরে পরে পুরা ভেড়া বনে যেতে দেখেছি সরকারী মেডিকেলে অধ্যয়নরত কিছু বন্ধুকে।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

ইমরুল কায়েস এর ছবি

তাবলীগ এখন প্রায় সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায়। কোথাও কম কোথাও বেশি।

ভেড়া বনার বিষয়টা একটু অন্যভাবেও নিতে পারেন। সবাই কিছু না কিছু নিয়ে থাকে। এরাও তাবলীগ নিয়ে আছে।
......................................................
পতিত হাওয়া

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

বহুবার ঐরকম থার্ডস্লিপে কট খেয়েছিলাম। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা ছিলো আমাদের তথাকথিত ব্যান্ডদলের লীড গিটারিস্ট যখন হুট করে এই দলে ভীড়ে গিয়ে আমাদেরই জ্বালাতন করতো। আমার ঐ বন্ধু আমাকে যতই ধর্মের বয়ান করতো আমি তাকে তত বেশী করে 'বার'-এ যাবার দাওয়াত দিতাম (কাটা-কাটি করার ইচ্ছায়)। পরে এমন অবস্থা হয়েছিলো যে ঐ বন্ধুটি আমাকে দেখামাত্র আকাশের তারা গুনতে ব্যাস্ত হয়ে যেতো।

==================================================
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

প্রবাসিনী এর ছবি

চলুক

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।