আমার এক বন্ধু আছে, নাম সুমন। সারাদিন মেয়েদের পিছনে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে। পাত্তা টাত্তা খুব একটা পায় না (অবশ্য আমিও যে খুব একটা পাই, তা না...অবশ্য সেটা ভিন্ন কথা...ব্লগ তো আমি লিখছি...সুমন তো না )। সে যা হোক। সুমনের কথায় ফিরে আসি। ওর বাসায় ইন্টারনেট নেই, ফোনও নেই (সেই সময় মোবাইল কেজিদরে বিক্রি শুরু হয়নি)। তো সে আমাদের বাসায় আসতো...কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই আস্তে আস্তে কম্পিউটারের রুমে ঢুকে পড়তো (কম্পিউটার আমার বড় বোনের ঘরে)...তারপর আস্তে আস্তে আয়েশ করে একটার পর একটা ফোন করা শুরু করত। ফোনের রাউন্ড শেষ করে অতঃপর ইন্টারনেট। একটু পরপর হুদাই মেইল চেক করে (যদিও ইনবক্স খালি)...আমাদের তখন ডায়াল আপ। আমি নিজে ওয়ার্ডে আগে মেইল লিখে তারপর ইন্টারনেটে ঢুকে অসম্ভব দ্রুততায় কোনমতে ইয়াহুতে ঢুকে লেখা কপি পেস্ট করি, তারপর 'ম্যাসেজ সেন্ট' বার্তা আসার সাথে সাথে ডিসকানেক্ট করে দিই। দুনিয়াতে ইয়াহু ছাড়া অন্য কিছু আছে, সেটা বহুদিন জানতামই না। তো সুমনের এহেন নবাবী চালে আমার গা জ্বলে যেত।
তো, সুমন ইন্টারনেটে ঢুকলেই আমি উসখুস করা শুরু করতাম...সেকেন্ডে তিনবার ঘড়ি দেখতাম...আর হারামজাদা ইন্টারনেটে থাকা অবস্থায় একবার চায়ে চুমুক দেয়, আরেকবার চানাচুর খায়। আপ্নারা হয়তো ভাবছেন, যদি এতই বিরক্ত হই, তবে ওকে বলি না কেন......কিংবা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ওকে এড়িয়ে গেলেই হয়!
চেষ্টা যে করিনি, তা কিন্তু নয়। কিন্তু কিছু মানুষ থাকে না...ভীষন গায়ে পড়া...ও ছিল তেমনই। কে কি ভাবছে, কে বিরক্ত হচ্ছে, তার কোন প্রভাবই ওর উপর পড়তো না। সকালে আসুক আর বিকালে...কেউ ওকে বলুক আর না বলুক, সে একবেলা ভাত না খেয়ে আমাদের বাসা থেকে কখনও গিয়েছে, এরকম হয়নি। মাঝে মাঝে আবার রাতেও থাকতো। আমি ব্যাজার মুখ করে আমার কোলবালিশটা আর খাটের অর্ধেকটুকু ছেড়ে দিতাম।
তো সে যাক... তার ধারণা ছিল, ইন্টারনেটে সব মেয়েরাই আসলে ছেলে। বিশেষত সেই মেয়ের সাথে যদি আমার খাতির হয়ে গিয়ে থাকে। আমি ইন্টারনেটের বিভিন্ন মেয়ের কথা বলতাম, আর ও অবিশ্বাসের ভঙিতে শুনতো, তারপর শোনা শেষ হলে বলতো...এটা নির্ঘাত ছেলে। আমি মানতে না চাইলে বলতো...মেয়ে ফোন নাম্বার দিয়েছে? দেখা করেছে? জবাব না বোধক হলেই তার মুখে বিজয়ীর হাসি।
তো, সে একদিন মহা উত্তেজিত হয়ে বললো...এক মেয়ে নাকি তাকে দেখা করতে যেতে বলেছে শিশুপার্কের সামনে। কোন চ্যাট রুমেতে নাকি পরিচয় হয়েছে...একা যেতে সাহস পাচ্ছে না। তো, আর কি করা...আমি গেলাম ওর সাথে।
নির্দিষ্ট দিনে দুইজন গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি শিশুপার্কের সামনে। কিছুক্ষণ পরে আমাদের একটু দূরেই তিনটা মেয়ে দেখা গেল...একটু পরপর খিলখিল করে হাসছে। সুমন সানগ্লাস পড়ে এসেছে... তাই সে ঐদিকে দিব্যি তাকিয়ে রইলো...আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের কাক গুনতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পর সুমন আমার কানের কাছে প্রায় চিক্কুর দিয়ে বললো...ওর দৃঢ় ধারণা ঐ তিনটি মেয়ের একটিই ওর আকাঙ্খিত মেয়ে হবে...ওরা নাকি একটু পরপর আমাদের দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে।
তা, আমি বললাম, বেশতো...যাহ...জিজ্ঞেস করে আয়...
সুমন গাধাটা মাথা নাড়িয়ে রওয়ানা হয়ে গেল.....একটু পর ঝামেলা লাগলে কোনদিকে দৌড় দিব, তা হিসাব করছি।
একটু পর দেখি, সুমন হাসিমুখ করে এদিকে আসছে। কাছে আসলে জিজ্ঞেস করলাম...কিরে পেলি মেয়েকে?
ও বলে...না দোস্ত...ওগুলা সেই মেয়ে না।
আমি বলি, ওহ। তাইলে তুই এত খুশি ক্যা?
ও বলে... মেয়ে তিনটা আমাদের সাথে খাওয়াদাওয়া করতে রাজি হইসে।
আমি বলি...কস কি হারামজাদা? এখন এই তিন মেয়েকে খাওয়াবি? টাকা কি গাছে ধরে?
সুমন বলে...তোর অসুবিধা কি? টাকা আমি দিমু।
আমি অনিচ্ছা সত্তেও ওদের সাথে একটা দোকানে ঢুকলাম। চায়ের সাথে টায়ের ও অর্ডার দেয়া হল...মেয়েদের নামধাম জানা হলো...খাওয়া দাওয়া চলছে...
এমন সময় একটা মেয়ের মোবাইল বেজে উঠলো...
হ্যালো...এইতো আমরা কাছেই একটা দোকানে... তোমাদের আসতে দেরী দেখে দোকানে ঢুকলাম...নাহ নাহ...তোমরা দাঁড়াও...আমরা এখুনি চলে আসছি...
ফোনের কনভার্সেশন শুনে অলরেডি বাকি দুই মেয়ে ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে।
আমার মোটামুটি হাসি পাচ্ছে...
ফোন শেষ করে মেয়েটা সুমনের দিকে তাকিয়ে বললো...সরি ভাইয়া...আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে...নাইস মিটিং ইউ! বাই!!
সুমন দেখলাম কোনরকমে ঘাড়টা কাত করলো...
ফেরার পথে আমি সান্তনা দিলাম...দুঃখ করিস না... আমার মত অন্তত মেয়েরূপী ছেলেদের পাল্লায় তো পড়িস নাই...
তবে মেয়েগুলো আমাকে মাসখানেকের জন্য সুমনের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল...সেটাই বা মন্দ কি?
মন্তব্য
লেখা মজার হইসে।
আপনে বরং চ্যাটিং ক্যারিয়ার নিয়ে একটা সিরিজ শুরু করে ফেলেন। মনে হইতেসে আপনারে দিয়াই হবে
---------------------------------
তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস্ পাটুস্ চাও?!
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
তাই নাকি?
আসলে সচলে লেখা শুরু করেছিলাম অন্য লেখা দিয়ে...তখন অনেকেই ভেবেছে আমি জীবনের উপর খুবই বিরক্ত।
তাই গিয়ার চেঞ্জ করলাম আরকি! আবার সবাই মিলে যখন ভাবা শুরু করবে চ্যাটিং ছাড়া দুনিয়ায় আর কিছু নাই, তখন আবার গিয়ার চেঞ্জ করবো
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
----------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
--------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
চমেৎকার
পইড়া অনেক কথা মনে পইড়া গেলো...
লিখে ফেলুন না!
-------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
--------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
হ, দুয়া কইরেন
সুমন নামক বেকুবের জন্যে খারাপই লাগল কিঞ্চিত, তবে কলেজ জীবনে সম্ভবত সবারই একটা সুমন মার্কা দোস্ত থাকে, যাদের সদরঘাটী নবাবী হজম করতে হয়। লেখা অনেক মজা হয়েছে, আরো লেখুন
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
হ
হ
-----------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
--------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
মজার।
ধন্যবাদ
----------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
--------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
মানব, আপনাদের কপাল ভালো, খুব অল্পের উপর দিয়া গেছেন। আমি এর থেকেও সাড়ে সাংঘাতিক কাহিনী জানি
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
- "জীবন থেকে নেয়া" নাতো!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আবার জিগস ঃ)
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
বুড়া আঙুল ব্রেকে জলদি এসব অপকীর্তি লিখে ফেলুন তনুপা
-------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
--------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
- আপনের আগের গল্পের রহস্য সমাধান হইছে?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নাগো
ঐ মেয়ে আবার আমার ব্লগ পইড়া ফেলল নাকি চিন্তা করতেসি
-------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
--------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
কপাল খারাপ
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
হ
--------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
--------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
বেচারা!!!!!
সুমনরাই কেবল খারাপ হবে কেন? জগতের সকল সুমনের পক্ষ থেকে তীব্র পোতিবাদ।
আমিও দিক্কার জানাই
....................................................................................
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
--------------------------------------------------------
২০. হাতি খাইতে গেলে গিল্লা না খাওনই ভালো
নতুন মন্তব্য করুন