দ্য গিফট্‌ অফ্‌ দ্য ম্যাজাই - রিমেক

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি
লিখেছেন ঈপ্সিত আর চম্পাকলি [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২২/১২/২০১২ - ৪:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(১)
~বিপাশা~

- “হ্যালো, রীনা এবার শুনতে পাচ্ছিস? ব্লু-টুথটা একটু নড়ে গেছিল। যাইহোক যা বলছিলাম, আরে সে অনেক ঝামেলা। রাজপরিবারে বিয়ে হওয়া যে কি ঝকমারি, সে আর তুই কি বুঝবি?”

- “থামতো বিপাশা! এদিকে ‘হার হাইনেস বিপাশা সিং’ শুনতে নিশ্চয়ই দারুণ লাগে?”

- “হার হাইনেস শুনতে খারাপ লাগে বলিনি তো, সেসব অনেক প্রিভিলেজ তো আছেই, কিন্তু একেকসময় নিয়ম-কাননের বহরে মাথা ঘোরে। আর বাড়িতে পঞ্চাশটা খিদ্‌মতগার থাকলে কোন প্রাইভেসি থাকে, তুইই বল? দেখ, আমি তো আর কোন রাজপরিবারে বড় হইনি, কাজেই দমবন্ধ লাগাটাই স্বাভাবিক।”

- “তবে তুই কিন্তু আবার বাড়াবাড়ি রকমের মড্‌। রয়্যাল ফ্যামিলিতে ওদেরও তোর জন্যে নিশ্চয়ই প্রচুর অ্যাস্পিরিন খেতে হয়!”

- “হয় তো হয়। যখন মিস্‌ ইন্ডিয়া কন্টেস্টের রানার্স-আপ্‌-কে বিয়ের প্রোপোজাল দিয়েছিল জাজেস্‌ প্যানেলের জয়সলমীরের মহারাণা হিজ হাইনেস রবিপ্রতাপ সিং, তখন কি ভেবেছিল বিপাশা ব্যানার্জী রাতারাতি অসূর্যম্পশ্যা রাজবধূতে ট্র্যান্স্‌ফর্মড হয়ে যাবে? সুইম্‌-স্যূট রাউন্ডের পরেই তো পেছন পেছন এসেছিল।”

- “আর তুইও একটা জাজকে হাত করতে পারবি বলে তৎক্ষনাত হ্যাঁ করে দিয়েছিলি!”

- “বাজে বকিস না তো, সেবারের মিস্‌ ইন্ডিয়াকে তো জনা পাঁচেক জাজের ডিলাক্স স্যুইট থেকে ভোর পাঁচটায় বের হতে দেখা গিয়েছিল বিভিন্ন দিনে। নাহলে ওইরকম লোড্‌শেডিং-এর মত গায়ের রঙ হওয়া সত্ত্বেও ক্রাউন জিততে পারে? আমি একটা জাজকে মেরে হাত গন্ধ করব কেন বলত? আর হিজ হাইনেসের রাজ্যপাট তো সবই গেছে। তাজ গ্রুপের হাতে প্যালেসের সাড়ে-তিনশোটা ঘর দিয়ে দিয়েছে আর সেটা ইন্ডিয়ার একটা হেরিটেজ হোটেল হয়ে গেছে।”

- “আহা, শুধু হোটেলটা বললি, আর এই যে তোর বর গাদাগাদা ব্যাঙ্ক আর ফাইন্যান্স কোম্পানির বোর্ড অফ্‌ ডিরেক্টর্সদের মেম্বার হয়ে আছে, সেগুলোর কি? যাকগে, কোলকাতায় কতদিন আছিস?”

- “আরে আমি আছি জাস্ট এই সপ্তাহটা। রবি রাজস্থান থেকে পরশু আসবে এখানে মর্গ্যান ব্যাঙ্কের কি একটা কাজ আছে, তারপরের দিন তাজবেংগলে আমার বার্থডে পার্টি। আর শুক্রবার আমরা ডাব্ল-ডলার ইনশিওরান্স কোম্পানির চ্যারিটি ফান্ড্রেইজারে গেস্ট অফ অনার হিসেবে যাব। শনিবার রাজস্থান ফিরে যাব। প্যালেসের মিউজিয়ামে ভিক্টোরিয়ান টাইম্পিস কালেকশানের উদবোধন আছে। মান্‌ডে আবার আমি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির রিইউনিয়ানে পার্টিসিপেট করতে রওনা দিচ্ছি। আজ আর কালের মধ্যে আমার বার্থডে গিফট্‌টা ফাইনালাইজ করব। রবির একদম সময় হচ্ছে না, আমাকেই বলেছে পছন্দ করে রাখতে, পেমেন্টটা ও করবে।”

- “গিফটটা কিন্তু নিজে পছন্দ করায় কোন মজা নেই যাই বল?”

- “আর মজায় কাজ নেই, শেষে কি না কি নিয়ে আসবে একটা জুরাসিক এজের গয়নার ডিজাইন হয়ত, তার চাইতে আমিই পছন্দ করে রাখব, সেটাই বেটার। এনিওয়ে, তুই তোর ফ্যামিলি নিয়ে আসিস থার্সডেতে, আমার বাটলারকে দিয়ে তোর বাড়িতে ফর্ম্যাল ইনভিটেশানটা অবশ্য আজকেই পাঠাব। বিয়ের পর এই প্রথম কোলকাতায় আমার জন্মদিনের পার্টি হচ্ছে। বাবার ইচ্ছে ছিল আমাদের ভবানীপুরের বাড়িতেই পার্টিটা দেবার। কিন্তু নয় নয় করেও সাতশো নিমন্ত্রিত, বুঝতেই পারছিস ভবানীপুরের বাড়িতে ইম্পসিব্‌ল। রাভী তাজ বেঙ্গলে অ্যা্রেঞ্জ করেছে,ওরা আমাদের বিজনেস পার্টনার। কিন্তু মা বাবা কিছুতেই তাজে পার্টির ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছে না। ওঁদের এখোনো মিডলক্লাস মেন্টালিটিটা গেল না। আচ্ছা শোন এখন রাখি, একটা লাল ফেরারি সেই আলিপুর থেকে আমাকে বারবার ওভারটেক করে যাচ্ছে জাস্ট শো-অফ্‌ করতে। ওটাকে এবার একটু সমঝে দিতে হবে।”

- “ওফ্‌, তুই নিজে গাড়ি চালাচ্ছিস কেন? শোফারের কি হল?”

- “আরে মার্সেইডিজ নিজে না চালালে মজা নেই, তুই আর আমার বরের মত কথা বলিস না তো, প্লাস শোফার রাখা মানে পুরো দিনের আইটিনারারিটা পাব্লিক করে ফেলা। আর জুতোর তলায় রেখে কিছু চালাতে পারাটা আমার চিরকালের হবি। আচ্ছা রাখছি এখন। পরে কথা হবে।”

- “বাই বাই হার হাইনেস, তরশু দেখা হচ্ছে।”

(২)
~শতদ্রু~

-“আব্বে ইয়ার, সেই আলিপুর থেকে একটা ত্যাঁদোড় ব্ল্যাক মার্সিডিজ আমাকে রিপীটেডলি ওভারটেক করে যাচ্ছে। দেখি দাঁড়া, এটাকে কি করে লুজার বানানো যায়”, ব্লু-টুথটা অফ্‌ করে অ্যাক্সেলারেটারে চাপ দিল শতদ্রু। লাল ফেরারিটা যখনই রাস্তায় বের করেছে, রাস্তার অন্য সব গাড়ি তাকে সসম্মানে ওভারটেক করতে দিয়েছে। কোনদিন কেউ রেস করার কথা কল্পনাও করেনি। ১২ সিলিডার ৫৯৯৮ সি.সি.র ইঞ্জিন যার শূণ্য থেকে একশ কিলমিটার পার আওয়ারে অ্যাক্সেলারেট করতে স্রেফ ৩.১৪ সেকেন্ড লাগে। তাকে কিনা কোলকাতার রাস্তায় পেছনে ফেলে বেরিয়ে যাবে মারসিডিজ বেঞ্জ যা শতদ্রুর মতে স্ট্যাটাস সিম্বল ছাড়া পার্ফরমেন্সের দিক থেকে কিস্যু না। যাই হোক, ন্যাশানাল লাইব্রেরির সামনে এসে যখন সিগ্নালে দাঁড়ালো, তখন ঠিক পাশে এসে দাঁড়াল কালো মার্সিডিজটা।
শতদ্রু কৌতূহলী হয়ে কালো কাঁচটা নামাল। ওদিকে মার্সিডিজেরও কাঁচ নামল। আর তখনই শতদ্রু দেখল স্টীয়ারীং-এর পেছনে বসা চালক, থুড়ি চালিকাকে। ৯ বছর আগেকার প্রাক্তন প্রেমিকাকে চিনতে অবশ্য ৯ সেকেন্ডের অনেক কম লাগল শতদ্রুর। বিপাশার চোখেও খুশি-মেশানো বিস্ময়। বিপাশা ওর সিগ্নেচার স্মাইলটা হেসে সামনের দিকে হাতের কি একটা ইশারা করল। সিগ্নাল গ্রীন হলে বিপাশাকেই আগে যেতে দিল শতদ্রু। বিপাশার মার্সিডিজটা চিড়িয়াখানা ছাড়িয়েই ডান দিকে ইন্ডিকেটর দিয়ে তাজ-বেঙ্গলে ঢুকে গেল। শতদ্রুও পৌঁছল। ভ্যালে পার্কিং-এ গাড়িটা পাঠিয়ে লবিতে গিয়ে দেখল বিপাশা বসে আপেক্ষা করছে একটা সোফায়।
- “হা-আ-আ-ই, কিরে কি খবর তোর বিপ্স্‌?” শতদ্রু বিপাশার গাল গাল ঠেকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল, “কোথায় আছিস, বিয়ে করেছিস? না ফ্যাসান আর মডেলিং এর দুনিয়াতে জাঁকিয়ে বসেছিস?”

- “আরে না, তুই দেখছি কোন খবরই রাখিস না দেশের। হ্যাঁ বিয়ে করেছি, কোলকাতায় নয় অবশ্য”, একটা ‘জোর কা ঝটকা ধীরে সে’ পরে দেবে বলে আর রবিপ্রতাপ সিং-এর প্রসংগ তুলল না বিপাশা, “আর তুই কি করছিস, কোথায় আছিস?”

- “আমি অ্যামস্টারড্যাম আর কোলকাতার মধ্যে শাট্‌ল্‌ করি। একটা মাল্টিন্যাশানাল ব্যাঙ্কের সি-ই-ও হয়েছি গত বছর। এখানে একটা টেক-ওভার করতে এসেছি। তবে আমি প্রায়ই যাতায়াত করি। মা আছেন, জানিসই তো”

হ্যাঁ, বিপাশা জানে। স্ট্যানফোর্ডে বিপাশা গিয়েছিল কম্প্যারেটিভ লিটারেচার পড়তে। আর সেখানেই দেখেছিল ফাইনানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট এর ছাত্র শতদ্রুকে। বিদেশে এমনিতেই দেশী কমিউনিটি খুব তাড়াতাড়ি তৈরি হয়, তার ওপর দুজনেই বাঙ্গালি। শতদ্রুর প্রেমে পড়তে বিপাশার দু দিনও দেরী হয়নি। ওইরকম ছ-ফুট লম্বা, ঋত্ত্বিক রোশানের মত চেহারা দেখে ব্লন্ড্‌স্‌দেরই লালাক্ষরণ হত! বিপাশা অবশ্য নিজেও যাকে বলে ‘প্রকৃত সুন্দরী’।

তিন বছর পরে মিস্‌ ইডিয়া ক্রাউনটা একটুর জন্যে ফস্কেছে। কিন্তু বিপাশাও অত সুপুরুষ বঙ্গসন্তান কোনদিন বঙ্গে থাকতে দেখেনি। দুজনেই জানত কেউই কাউকে বিয়ের কথা ভাবছে না। চুটিয়ে প্রেম করেছে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট থাকাকালীন। অবশ্যই প্রেম মানে কলকাতার ছাত্রছাত্রী দের মত লেকের ধারে বসে হাতের উপর হাত দিয়ে বাদাম ভাজা খাওয়া নয়। ওদের রিলেশনে প্রথম এবং শেষ কথা ছিল সেক্স। শতদ্রুর, বিপাশার হস্টেলের ঘর, ক্লসেট, বাথটাব, কোন ‘এন্‌ক্লোজ্‌ড্‌ স্পেসই’ ওরা বাদ দেয়নি। বিপাশা চোখ বুজলেই দেখতে পাচ্ছে শতদ্রুর পেশীবহুল হাত, লোমশ বুকের ওঠানামা, ঠোঁটের প্রতিটা বাঁক। মনে পড়ছে যখন শতদ্রু ন্যুড ওবস্থায় বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে যেত, বিপাশা একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকত ওর নিতম্বের ঠিক ওপরে দুটো টোলের দিকে। দু গালের টোলের থেকে কোন অংশে কম আকর্ষণীয় ছিল না। এখনও মনে পড়ে বিপাশার গায়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম দিচ্ছিল, আর ঠিক তক্ষুনি শতদ্রুকে জড়িয়ে ধরে একটা স্মুচ করার ইচ্ছেটা খুব জোড় করে থামিয়ে রাখছিল। অনেকদিন কোন যোগাযোগ ছিল না। বিয়ের পাঁচবছর পরে আজকে আবার দেখা হতে বিপাশা মনে মনে শতদ্রুর ফীচার্সের সাথে রাজা রবিপ্রতাপের ফীচার্সগুলোর তুলনা করছিল। খানিক পরে বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিল।

বিপাশা আর শতদ্রু দুজনেই খুব ইন্টেলিজেন্ট আর প্র্যাক্টিকাল। কলেজ ছাড়ার সময় অন্যান্য অনেক জুটির মত ওদের কোন রেইনকোটের দরকার হয়নি চোখের জল থেকে জামাকাপড় বাঁচাতে। বিপাশা জানত শতদ্রু অনেকদুর উঠবে। কিন্তু উঠতে এখোনো ঢেড় দেরী। ততদিনে জীবনের উপভোগ করার বেস্ট সময়টা খরচের খাতায় চলে যাবে। নিজের মা বাবার মত মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চমধ্যবিত্ত হওয়াটাই বিপাশার এইম নয়। ওকে পৌঁছতে হবে টপ অফ দ্যা সোসাইটিতে। ও তখন মিস্‌ ইন্ডিয়া কন্টেস্টের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল। ওর লক্ষ্য ছিল হয় ফ্যাসান, মডেলিং এর দুনিয়ায় জাঁকিয়ে বসা বা কোনো ধনকুবেরকে বিয়ে করা। আর ওদিকে শতদ্রুও জানত এখন ওর কেরীয়ার ম্যানেজমেন্ট ছাড়া অন্য কোন ইমোশানাল দিকে এনার্জী ইনভেস্ট করার মত সময় নেই। বিপাশা পার্টিং গিফট হিসেবে শতদ্রুকে একটা সোনার হারের সাথে একটা পেন্ড্যান্ট দিয়েছিল, আর সেই পেন্ড্যান্টে ইজিপ্সিয়ন হায়রোগ্লিফিক্সে ‘বিপাশা’ লেখা, যাতে ভবিষ্যতেও শতদ্রুর গার্ল-ফ্রেন্ড বা বউ লকেটটা দেখলেও কিছু সন্দেহ না করে। শতদ্রুর তখন কোন এক্সপেন্সিভ গিফট্‌ করার মত অবস্থা ছিল না। তবে একটাই ইমোশানাল মন্তব্য করেছিল, “বিপ্স্‌, আই ও ইউ সাম্থিং এক্সপেন্সিভ ফর অল দ্যাট ইউ হ্যাভ গিভেন মি” বলে চোখ টিপেছিল, “তোরটা পেন্ডিং থাকল”

ফ্ল্যাশ-ব্যাক থেকে ফিরে এসে বিপাশা আবারো ওর সিগ্নেচার হাসিটা হেসে বলল, “চল, লেট আস্‌ গো সামপ্লেস কোয়ায়েট”। দুজনে এখনও সমান প্র্যাকটিকাল রয়ে গেছে। একে অপরের বর বা বউ নিয়ে প্রশ্ন করে সময় বা ব্রেইনের স্পেস নষ্ট করার কোন অপচেষ্টাই করল না। কি হবে জেনে? মরালিটির ধ্বজা উড়িয়ে এরকম সুবর্ণ সুযোগ ছেড়ে দেবে? নাকি ‘হ্যাপিলি ম্যারেড’ জেনে নিয়ে “তাহলে এক দান লুডোই খেলি” বলে বিছানায় লুডোর বোর্ড পেতে বসবে?

-“তাজ বেঙ্গলেই একটা রুম বুক করে নেব?”
-“না না, তাজ ছাড়া যেকোন হোটেল চলবে।”
-“কেন রে? কোন বিটার অভিজ্ঞতা...?”
- “না, সে পরে একদিন বলব, জাস্ট এইটুকু জেনে রাখ যে তাজে আমাকে সিনীয়ার ম্যানেজমেন্টের অনেকে চেনে আর আমি আর তুই রুম রিজার্ভ করলে সেটা আমার বরের কানে খুব সহজে চলে যেতে পারে।”
-“উঁ... তা’লে ওবেরয় গ্র্যান্ডে যাবি?”
-“নো প্রব্লেম, চ!”

ঘন্টা তিনেক পর বিপাশা ব্ল্যাক মার্সেইডিজে ওঠার আগে কি মনে করে থমকে দাঁড়িয়ে বলল, “আচ্ছা শোন্‌ থার্সডে আমার বার্থডে পার্টি, তাজ বেঙ্গলের ব্যাঙ্কয়েট হলে। তুই আসিস কিন্তু।”
-“ওকে, আই হোপ নোবডি উইল নোটিস।”
-“খেপেছিস? ওই সাতশো লোকের ভিড়ে কারও খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই?”
-“কি গিফট নেবো বল তো তোর জন্যে? রিমেম্বার, আই টোল্ড ইউ যে তোর আমার কাছে একটা দামী গিফট ডিউ আছে?”
-“ওকে, আমি তোকে বলব, আমি কোলকাতা এসেছিই হচ্ছে একটু অ্যাননিমাস্‌লি শপিং করব বলে, আমার শ্বশুরবাড়ির শহরে ঘুরে ঘুরে শপিং করার খুব অসুবিধা।”
-“কেন রে, ছোট্ট গ্রাম-ফ্রাম নাকি? হাঃ হাঃ”
-“না, সে অনেক ব্যাপার, কাল পরশু তো আসছি এই রুমে, কখনও বলব’খন।”
-“ওকে, টেস্ট ইউ টুমরো এগেইন্‌”
-“চ্যাও”

(৩)
~~বিপাশা~~
-“আচ্ছা, আপনাদের ওই শোকেসে যে নেকলেসটা ডিস্পলে করা আছে ওটা একটু দেখান না প্লিজ”, পার্ক-স্ট্রীটের তিনতলা ‘গ্যালাক্সি ইন্টার্ন্যাশানাল বুটিক জুয়েলার্স’-এর গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাউন্টারে পৌঁছে বিপাশার প্রশ্ন।
-“শ্যীওর ম্যাডাম, জাস্ট আ সেকেন্ড”, কর্মাচারীটি কিন্তু নিয়মমত সাথে সাথে ইন্টরকমে ওপর তলার চেম্বারে জেনারেল ম্যানেজারকে ফোন করে দিয়েছে। নিয়ম হচ্ছে যদি কোন কাস্টমার দশ লাখ টাকার বেশী কোন জুয়েলারী কিনতে বা দেখতে চায়, তাহলে সেই সব ইন্‌ভ্যালুয়েব্ল কাস্টমারদের শুধুমাত্র গ্যালাক্সির জেনারেল ম্যানেজার মিস্টার খৈতানই অ্যাটেন্ড করবেন।
-“ওয়েলকাম ম্যাডাম”, সহাস্য মিস্টার খৈতানের আবির্ভাব, “আই অ্যাম মিস্টার আনুপ খৈতান। বলুন, কিভাবে সেবা করতে পারি আপনার?”

-“হাই, আমি আমার জন্যে একটা নেক্লেস খুঁজছিলাম...”

-“ম্যাডাম, গ্যালাক্সি ইন্টার্ন্যাশানালের প্রত্যেকটা আইটেম কিন্তু ইউনিক, কোন ছাঁছে ফেলে লটে বানানো নয়, কাজেই এক্সক্লুসিভ বলতে যা বোঝায়, আক্ষরিক আর্থেই তাই। প্লাস, আমাদের অনেক অর্নামেন্টস্‌এর হিস্টরিক্যাল ভ্যাল্যু আছে। ইতালির নেপ্ল্‌স্‌, টুরিন, রোম, ভেনিস, ফ্র্যান্সের মার্সেইল, বর্দু, প্যারিস ছাড়াও গোটা ইউরোপেই আমাদের শোরুম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, ইন্ডিয়ায় এইটাই প্রথম এবং কারেন্টলি একমাত্র শোরুম। আর আমাদের যে কোন প্রডাক্টের আরেকটা ইউনিক ব্যাপার হচ্ছে যে আমরা তার ডিজাইনের পেটেন্ট ফাইল করি যাতে অন্য কেউ ওই ডিজাইনের কপিরাইট ভাওলেশান করলেই আমরা লিগ্যাল স্টেপ নিতে পারি। সো ইউ ক্যান রেস্ট অ্যাশীওর্ড যে আপনি যে প্রডাক্টটা কিনলেন সেটা অন্য কেউ কোনদিন কিনতে বা পরতে পারবেনা।”
-“উন্ডারস্টুড মিস্টার খৈতান, আমি অনেক খবরই রাখি। আপনি আমাকে ওই যে ওই নেকলেসটা একবার দেখাবেন?”
-“ম্যাডাম, আপয়ার রুচির তারিফ না করে পারছি না। ইউ হ্যাভ ট্রুলি অ্যান আই ফর দ্য বেস্ট! ওই নেকলেসটা আমাদের বেস্ট এবং কস্টলিয়েস্ট অ্যান্ড হ্যাজ দ্য মোস্ট রিমার্কেব্ল ‘প্রোভেন্যান্স’।
এর ক্রোনোলজি অফ্‌ ওনারশিপ শুনলে আপনার তাক লেগে যাবে ম্যাডাম!”
-“বেশ বলুন শুনি কি এমন ইউনিক হিস্টরি আছে এই নেকলেসের?”

-“১৭৭২ সালে ফ্র্যান্সের রাজা লুই দ্য ফিফটিন্‌থ্‌ প্যারিসের সবথেকে বিখ্যাত জুয়েলার্স বোয়েমার অ্যান্ড ব্যাসেঞ্জ-কে একটা ২৮০০ ক্যারাটের নেক্লেস বানানোর অর্ডার দেন যেটা কিনা রূপে-গুণে, দামে অন্য সমস্ত গয়না-কে ম্লান করে দিতে পারবে। সেইটা হবে তাঁর মিস্ট্রেসের জন্য এক অনন্য উপহার। বোয়েমার অ্যান্ড ব্যাসেঞ্জ ৬৪৭টা হীরে খুঁজে পেতে বের করে যতদিনে নেকলেসটা বানায়, ততদিনে রাজার পঞ্চত্ত্বপ্রাপ্তি হয়েছে। বোয়েমার অ্যান্ড ব্যাসেঞ্জএর তো মাথায় হাত! অত টাকার জিনিস তো রাজা ছাড়া আর কারও কেনার সামর্থ হবে না, তাহলে তো ওদের দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে, বোয়েমার অ্যান্ড ব্যাসেঞ্জ অনেক ভেবে ইতিহাসে কুখ্যাত ফরাসী রানী মেরী আঁতোয়ানেতের দ্বারস্থ হয় এটা কেনার জন্য, কিন্তু রানী অন্য কোন নারীর জন্য অর্ডার দেওয়া গয়না নিজের গলায় তুলবেন কেন? কাজেই পত্রপাঠ বিদায় দিলেন বোয়েমার অ্যান্ড ব্যাসেঞ্জকে।”

-“কোন মেরী আঁতোয়ানেত? যে বলেছিল, ‘রুটি জোটেনা তো কেক খায়না কেন’? যাকে ফরাসী বিপ্লবে গিলোটিনে মুন্ডু কেটে নিয়েছিল?”

-“আজ্ঞে হ্যাঁ, দ্য ওয়ান অ্যান্ড ওনলি, মেরী আঁতোয়ানেত! ইতিহাসে লেখে জেঅ্যান দ্য সেইন্ট রেমী বলে একজন নারী এক নাটকীয় ফন্দি করে ওই নেকলেস নিয়ে পালায়; এই নিয়ে ফিল্ম, গল্প, উপন্যাস অনেক আছে, কিন্তু নেকলেসটা আজ পর্যন্ত মিস্টরিই থেকে গেছে, তবে আমরা জুয়েলার্সরা জানি জেঅ্যান সেটা থেকে হীরেগুলো খুলে নিয়ে ইন্ডিভিজুঅ্যালি বেচে দিয়েছিল। আপনি যে নেকলেসটা পছন্দ করেছেন তার যে আটটা হীরে আছে, সবগুলোই অরিজিন্যাল নেকলেসটার, বোয়েমার অ্যান্ড ব্যাসেঞ্জ জুয়েলারী হাউস আমাদের গ্যালাক্সি ইন্টার্ন্যাশানালকে ‘সার্টিফিকেট অফ্‌ ওরিজিন্যালিটি’ দিয়েছে, যেটা আমরা আপনার পার্চেস ইনভয়েস-এর সাথে অ্যাটাচ করে দেব।

-“ডিজাইনটা অদ্ভূত সুন্দর তো? এরকম সত্যিই কখনও দেখিনি, ডিজাইনটা নিশ্চই ওই মান্ধাতা আমলের ১৭০০ খৃষ্টাব্দের নয়?”
-“কি বলছেন ম্যাডাম? এই নেকলেসএর ডিজাইনটা আমাদের ফ্রান্সের আর্টিস্টরা তৈরি করেছে গ্রীক মিথলজির ‘মেডুসা’র আদলে। দেখুন ম্যাডাম, কি অপূর্ব সুক্ষ কারুকাজ মেডুসার মাথার এই সাপগুলোর! প্রত্যেকটা সাপের গায়ের চামড়ার আঁশগুলো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। গ্রীক ওডিসি-তে বলে মেডুসার চোখের দিকে তাকালেই মানুষ পাথর হয়ে যায়। আমাদের বিশ্বাস এই মেডূসা নেকলেস-এর দিকে তাকালেও যে কোন আর্ট কনৌশিয়ার শুধু নয়, আম-জনতারও একই অবস্থা হবে। চোখ ফেরাতে পারবে মেডুসা নেকলেসটা থেকে ভেবেছেন? মেডুসার চোখ আর ওর মাথার চুলের যে মেইন তিনটে সাপ, তাদের চোখগুলোর ডায়মন্ড এসেছে সেই বিখ্যাত ঐতিহাসিক নেকলেসের ডায়মন্ডগুলো থেকে, দেখেছেন কিরকম চমকাচ্ছে? এই ‘মেডুসা’ নেকলেসটা গ্যালাক্সি ইন্টার্ন্যাশানাল বুটিক জুয়েলারী হাউসের সিগ্নেচার কালেকশান বলতে পারেন, এর পেটেন্ট ফাইল করা হয়েছে ফ্রান্স, ইতালি, ইন্ডিয়া সহ আরও অন্যান্য দেশে যেখানেই আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইসি আছে, যাতে এটা সত্যিই একমেবাদ্বিতীয়াম্‌ হয় গোটা বিশ্বে!”

-“ওকে, আমার এটা পছন্দ হয়েছে। কত দাম এটার? যাইহোক, আমি আজকে নিচ্ছি না। আমি কালকে এসে কিনে নিয়ে যাব।”
-“ওকে ম্যাডাম, এটা এই ভ্যাট দিয়ে ৫০ লাখ মত পড়বে”
-“ওকে, থ্যাংক্স!”

(৪)
~~রবি~~
-“হাউ ওয়াজ ইয়োর ডে, বিপাশা?” রবিপ্রতাপ সিং-এর গমগমে সম্ভাষণ। আজকে হিজ হাইনেসের মেজাজ একটু বেশীই শরিফ। মর্গ্যান ব্যাঙ্কের মার্জারটা কিছুতেই বোর্ড অফ্‌ ডিরেক্টররা মেনে নিচ্ছিল না। এদিকে অ্যামস্টার্ড্যাম-বেস্‌ড্‌ কূপার ব্যাঙ্ক অনেকদিন ধরেই বিড করে যাচ্ছে টেক-ওভারের উদ্দেশ্যে। রবিপ্রতাপ বোর্ডের একমাত্র মেম্বার যে এই টেক-ওভারের পক্ষে ছিল। অবশ্য তার কারণ একটু পার্সোনাল। মর্গ্যান ব্যাঙ্কের সি-ই-ও শ্রীনিবাসন বালাসুভ্রামনিয়ম কিছুতেই রবিপ্রতাপকে বোর্ডের মেম্বারই করতে রাজি হচ্ছিল না, নিজে হার্ভার্ডের এম.বি.এ বলে ধরাকে সরা জ্ঞান করে আরকি। ফর্ম্যাল ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনিং বা এক্সটেন্সিভ এক্সপেরিয়েন্স না থাকলে নাকি অ্যাপ্রুভড্‌ নয় কেউ বোর্ডের মেম্বার হতে। আরে বাবা, হিজ হাইনেস আর কতগুলো আপ-স্টার্ট ডিরেক্টার এক হল? তাই কূপার ব্যাঙ্কের সাথে প্রথম হাত মিলিয়েছিল রবি। এবার বুঝুক কত ধানে কত চাল, এক বছর ধরে প্ল্যান কষে একটা ফ্রেন্ডলি মার্জার-কে একটা হস্টাইল টেক-ওভারে ট্র্যান্স্‌ফর্ম করেছে রবি। দৈবক্রমে কুপার ব্যাঙ্কের সি-ই-ও একজন ভারতীয় হওয়াতে খেলাটা জমে গেছিল। ‘প্রক্সি ব্যাটল’ কর্পোরেট টেকনিকটা সেই ওকে শিখিয়েছিল। আর তাতেই একজন একজন করে বোর্ডের প্রত্যেকটা মেম্বারকে একএক করে এই টেকওভারের পক্ষে নিয়ে এসেছে, কাউকে যুক্তি দিয়ে, কাউকে ব্ল্যাকমেল করে, কাউকে ঘুষ দিয়ে, কাউকে ভবিষ্যতের কূপার-মর্গ্যান ব্যাঙ্কে আরও ক্ষমতার প্রলোভন দেখিয়ে। এই পুরো প্ল্যানটা এগজিকিউট করার ফী হিসেবে অবশ্য মোটা টাকা ক্যাশে স্মল কারেন্সীতে রাভীর হাতে এসেছে টেবিলের তলা দিয়ে। নেগোশিয়েট করার কিছু অনবদ্য উপায় সে শিখে নিয়েছে এই ফাঁকে উদীয়মান সেই বাঙ্গালী সি-ই-ওর থেকে। আজকে ফাইনাল টেক-ওভার অ্যানাউন্সড হল। মর্গ্যান ব্যাঙ্কের সি-ই-ও অফিসিয়ালি রিজাইন করতে বাধ্য হল।
-“গুড, তোমার কেমন গেল দিনটা ডার্লিং?” বিপাশা আজকে কালো স্বচ্ছ মস্‌লিন শাড়ি আর ব্যাকলেস ব্লাউজ পরে ডীনার টেবিলে এসেছে, যাতে শুরু থেকেই হিজ হাইনেস সিডিউসড্‌ হয়।

-“ভালো, যে কাজে কোলকাতা এসেছিলাম, সেটা সাক্সেসফুল হয়েছে।”
-“ওহ্‌, তুমি কি লাকি, ডার্লিং”, পুষ্পধনুর মত ভুরুটা কপালে তুলে গালে গাল ঠেকিয়ে বিপাশার মন্তব্য, “তবে লাকিই শুধু নও, খুব ইন্টেলিজেন্ট!”

ডিনার টেবিলে আর এর চেয়ে বেশী ন্যাকামি করার সুযোগ নেই। চাইদিকে, ওয়েটার, শেফ্‌ ঘোরা-ফের করছে। মা-বাবা আগে খেয়ে উঠে গেলেও এখনও শুয়ে পড়েনি, সৌজন্য-সম্ভাষণে ডাইনিং হলে আসতেই পারে।
ডিনারের পর বেড রুমে ঢুকে বিপাশার প্রথম কথা, “হানি, তোমাকে খুব টায়ার্ড লাগছে। বাথ-টাবে উষ্ণ জল ভরে দিতে বলেছি, তোমাকে মি আজকে নিজে হাতে মাসাজ করে দিই চল।”

মাস্লিন শাড়ি চেঞ্জ করে এখন বিপাশার পরণে ট্রান্সপারেন্ট নাইট গাউন।

-“তুমি তোমার জন্মদিনের জন্য কোন গিফট পছন্দ করলে? আমি তো এইসবের চক্করে এবার সময়ই... আঃ”, রাজার মুখ দিয়ে শীৎকারের মত আওয়াজ বের হতে শুরু করল আরামে।

-“হ্যাঁ, একটা নেকলেস পছন্দ হয়েছে, কালকে তোমার সকাল এগারোটায় সময় আছে? তাহলে তোমায় নিয়ে যাব দোকানে, দেখো তোমার পছন্দ হয় কিনা”

এটা পুরোটাই বাহুল্য কারণ বিপাশার পছন্দ কোনদিনই রবিপ্রতাপ নাকচ করে দেবে না।
-“ঝিলামকে জিজ্ঞাসা করতে হবে আমার কালকের অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলোর কিরকম কি আছে, তবে যতদূর মনে পড়ছে লাঞ্চের আগে আমি ফ্রীই আছি”

ট্রান্সপারেন্ট নাইট গাউনে বিপাশা রাতের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। ওর বডির কার্ভ গুলোর দিকে তাকিয়ে হিজ হাইনেসের প্রবল ইচ্ছা করছিল বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ার। কিন্তু বিপাশার সাথে খেলতে নামা অত সহজ নয়। একতরফা নিজের খিদে মিটিয়ে ঘুমিয়ে পরলে বিপাশা ছেড়ে কথা বলবে না। বিপাশার চাহিদাও একশো ভাগ পূরন করতে হবে। সারাদিন ধকলের পর রাভী আর এনার্জী পাচ্ছিল না বিপাশা সাথে মেতে ওঠার। মিস ইন্ডিয়া কন্টেস্টে যখন সুইম স্যুট পরা বিপাশাকে দেখেন তখনি রাভীর রাজরক্ত বলেছিল এই নারীকে নিজের অধিকারে আনতে হবে। তাই অন্য কোনো প্রস্তাব না দিয়ে সরাসরি বিয়ের জন্য প্রোপজ করেছিল। বিয়ে মানেই নারীর উপর সম্পুর্ন অধিকার। বিয়েটা ভালোই উতরেছিল। স্ত্রী হিসাবে মর্ডান সোসাইটিতে বিপাশা যাকে বলে ক্লাস ওয়ান। কিন্তু অধিকারে আনলেও রাভী ওকে জয় করতে পারেনি। বিছানাতে বিপাশার পারফরমেন্স দারুন কিন্তু ওর সাথে সমানে সমানে খেলতে হয়। বিপাশা কোনোদিন রাভীর কাছে আত্মসমর্পন করে না। তাই বিপাশার সাথে মিলনের পর রাভীর রাজরক্ত তৃপ্ত হয় না।

বিপাশারও রাভীকে সিডিউস করার মূল উদ্দেশ্য ছিল বার্থডে গিফটের ব্যাপারটা ফাইনালাইজড করা। সেটা যখন হয়েই গেছে তখন আর বিছানায় সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আর আজ শতদ্রুর সাথে দাপাদাপির পরে রাভীর সাথে খেলাটা আরোই পানসে মনে হত।
পরেরদিন সকালে একটা ব্ল্যাক আর একটা সিল্ভার মার্সেইডিজ থামল গ্যালাক্সি বুটিক জুয়েলার্সের সামনে। হিজ হাইনেসের এখান থেকেই মর্গ্যান ব্যাঙ্কের একটা শেয়ারহোল্ডার্স মীটিং-এ যেতে হবে, তাই বিপাশা নিজের গাড়ি নিজে ড্রাইভ করে এসেছে।
মিস্টার খৈতান যথারীতি ওঁদের খাতির করে বসিয়ে হিজ হাইনেসকে আবার শুরু থেকে শেষ অবধি এর প্রোভেন্যান্স সম্পর্কে বলে গেলেন।

-“জাস্ট নেম ইটস্‌ প্রাইস, মিস্টার খৈতান”, রবিপ্রতাপের অধৈর্য মন্তব্য ঘড়ি দেখতে দেখতে।
-“স্যর, এটা একটা ইনভ্যালুয়েব্ল নেকলেস, উই আর আস্কিং জাস্ট ফিফ্‌টি ল্যাখস্‌”, খৈতানের বিনয়ী উত্তর। হিজ হাইনেস অবশ্য নিজের টাইটলটা বলেননি যাতে বার্গেইন করতে সুবিধা হয়। প্লাস রাজার পক্ষে দরদাম করাটাই একটা সম্মানহানিকর ব্যাপার।
-“ পাচ্চিস লাখের এক পয়সাও বেশী না।” রবির ঠান্ডা কন্ঠস্বর।
-“স্যর, গ্যালাক্সিতে বার্গেইনিং চলে না, উই হ্যাভ আ ফিক্সড প্রাইস পলিসি”
-“শুনুন, আমাকে আর যাই বলুন ওইটি বলবেন না, বার্গেইনিং পৃথিবীর সমস্ত কেনাবেচায় করা হয়, ছুঁচ থেকে একটা গোটা দেশ কেনাবেচার সময়, আর এ তো একটা নেকলেস”
-“কি বলছেন স্যার, আমার কেনাদামও উঠবে না”, খৈতান এতক্ষনে বুঝে গেছে যে সিং-জী বেশ ঝানু বিজনেসম্যান, এনং দরকষাকষিতে বেশ পাকা। দামী নেকলেস, শাঁশালো মক্কেল, কিন্তু সত্যিই এই দামে ওর পোষাবে না।
-“ঠিকই উঠবে”
-“ম্যাডাম আপনিই বোঝান না স্যারকে, এই নেকলেসের হীরেগুলো ঐতিহাসিক, যা-তা নয়। প্লাস মেডুসা নেকলেস এক্সক্লুসিভিটির টেক্সটবুক ডেফিনিশান”
রবিপ্রতাপ গম্ভীর ভাবে বলল, “মিস্টার খৈতান, আমি পঁচিশ-লাখ টাকার একটা চেক লিখে রেখে যাচ্ছি টেবিলে, কালকে যেন শুনি এটা এন্‌ক্যাশড্‌ হয়েছে, আর আমার ওয়াইফ যেন কালকে এই নেকলেসটা পরে অর জন্মদিনে কেকটা কাটে।”
বিপাশা খুব আলতো করে একটু চোখের ইশারা করে খৈতানকে কিছু একটা বোঝাতে চেষ্টা করল। খৈতানও অনেক দিনের পাকা ব্যবসায়ী, পুরোটা না বুঝলেও এটুকু বুঝল কিছু একটা প্ল্যান আছে ম্যাডামের। তাই আর কিছু কথা বাড়ালো না।
রবিপ্রতাপ গাড়িতে উঠতে উঠতে বিপাশাকে বলল, “আমি চললাম বিপাশা, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, কালকের আগে ঐ হার তোমার কাছে ডেলিভার্ড হবে।”
-“বাই বাই ডার্লিং, আমি জানি, ইউ আর সো ক্লেভার ইন এভ্রিথিং!”

(৫)
~~শতদ্রু~~

বিপাশা ফোনে শতদ্রুকে বলল গ্র্যান্ডের সুইটে চলে আসতে। শতদ্রু নিজে অফিশিয়াল ট্যুরে এসেছে, কিন্তু এটা নাকি ওর কেরিয়ারের প্রথম মেজর স্ট্র্যাটেজিক মুভ, তাই অনেকটা সময় স্পেন্ড করবে কোল্কাতায়, বউ-কে নিয়ে এসেছে এবার। কোম্পানি শেরাটন-এ অ্যাকমোডেট করেছে।
বিপাশা সোজা ড্রাইভ করে উঠল গ্র্যান্ডে। শতদ্রু আগেই চেক-ইন করে গেছে। আধঘটা দাপাদাপির পর ক্লান্ত হয়ে শুয়ে শুয়ে শতদ্রু বলল, “আগাম হ্যাপী বার্থডে, রাত বারোটায় তো আর তোকে ফোন করতে পারবনা। কালকে অবশ্য চেষ্টা করব আসতে। যদিনা, আমার স্ত্রী চিনাব-এর কোন ইনফ্লেক্সিব্ল প্ল্যান থাকে। বাই দ্য ওয়ে, তুই কিছু পছন্দ করেছিস নিজের গিফট্‌?”
-“হ্যাঁরে, একটা নেকলেস পছন্দ হয়েছে। তুই দেখবি তোর বাজেটএর মধ্যে কিনা?”
-“বিপাশা ইউ ওয়্যার অলোয়েক রীসনেব্ল, আমি জানি আমার পছন্দও হবে, আর ওয়ালেটেরও হার্ট-অ্যাটাক হবে না”

ঘন্টাখানেক পর একটা ব্ল্যাক মার্সেইডিজ আর একটা লাল ফেরারি থামল গ্যালাক্সি বুটিক জুয়েলার্সের সামনে।
মিস্টার খৈতান যথারীতি ওঁদের খাতির করে বসিয়ে শতদ্রুকে আবার শুরু থেকে শেষ অবধি এর প্রোভেন্যান্স সম্পর্কে বলে গেলেন।
-“জাস্ট নেম ইটস্‌ প্রাইস, মিস্টার খৈতান”, শতদ্রুর অধৈর্য মন্তব্য ঘড়ি দেখতে দেখতে।
-“স্যর, এটা একটা ইনভ্যালুয়েব্ল নেকলেস, উই আর আস্কিং জাস্ট ফিফ্‌টি ল্যাখস্‌”, খৈতানের বিনয়ী উত্তর।
-“টোয়েনটি ফাইভ লাখের এক পয়সাও বেশী না।” শতদ্রুর ঠান্ডা কন্ঠস্বর।
-“স্যর, গ্যালাক্সিতে বার্গেইনিং চলে না, উই হ্যাভ আ ফিক্সড প্রাইস পলিসি”
-“শুনুন, আমাকে আর যাই বলুন ওইটি বলবেন না, বার্গেইনিং পৃথিবীর সমস্ত কেনাবেচায় করা হয়, ছুঁচ থেকে একটা গোটা দেশ কেনাবেচার সময়, আর এ তো একটা নেকলেস”
-“কি বলছেন স্যার, আমার কেনাদামও উঠবে না”, খৈতান এতক্ষনে বুঝে গেছে যে শতদ্রু বেশ ঝানু বিজনেসম্যান, এনং দরকষাকষিতে বেশ পাকা।

-“ঠিকই উঠবে”
-“ম্যাডাম আপনিই বোঝান না স্যারকে, এই নেকলেসের হীরেগুলো ঐতিহাসিক, যা-তা নয়। প্লাস মেডুসা নেকলেস এক্সক্লুসিভিটির টেক্সটবুক ডেফিনিশান!”
শতদ্রু গম্ভীর ভাবে বলল, “মিস্টার খৈতান, এই আমার মাস্টারকার্ড, পঁচিশ-লাখ টাকার একটা ট্র্যাঞ্জাকশান সোয়াইপ করুন। কালকে যেন শুনি ম্যাডাম এই নেকলেসটা পরে ওর জন্মদিনে কেকটা কেটেছে।”
খৈতান তড়িঘড়ি ২৫,০০,০০০ টাকার একটা ক্রেডিট কার্ড ট্র্যাঞ্জাকশান করে শতদ্রুকে থ্যাঙ্কু বলে কার্ড ফেরত দিয়ে দিলেন।
শতদ্রু গাড়িতে উঠতে উঠতে বিপাশাকে বলল, “আমি এলাম বিপাশা, দারুণ লেগেছে নেকলেসটা, আর আমার বাজেটের মধ্যেও এসে গেল। হোপফুলি কালকে ঐ হার পরেতুই কেক কাটবি।”
-“শ্যীওর, বাই বাই, সী ইউ টুমরো, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ ফর দ্য গিফট!”

(৬)
~~রবি~~

পরপর দুদিন বিপাশা এই নেকলেসটা পরেছে, নিজের জন্মদিনের পার্টিতে, আর পরের দিন ডাব্ল-ডলার ইনশিওরান্স কোম্পানির চ্যারিটি ফান্ড্রেইজারে। যদিও জুয়েলারী রিপীট করা বিপাশার স্বভাববিরুদ্ধ, মেডুসা নেকলেসটা শো-অফ্‌ করার লোভটা সামলাতে পারলনা। আর দুটো পার্টির গেস্ট-লিস্ট একেবারেই ভিন্ন, কাজেই রিপীটেশানটা কারোর চোখে পরার সম্ভাবনা নেই। রবিপ্রতাপ রাত্রে খুব ক্যাজুয়ালি জিজ্ঞাসা করে, “মেডুসা নেকলেসটা ইনশ্যিওর করিয়েছ বিপাশা?”

-“ওঃ না তো, ভুলে গেছিলাম গো, তুমি একটু করিয়ে দেবে?”
-“ঠিক আছে, কালকে আমি হারটা নিয়ে যাব, ফোটোগ্র্যাফ তুলিয়ে জমা করতে হবে ইনশিওরান্সে। ওঃ ভালো কথা, আমি যে কাজে কোলকাতা এসেছিলাম, সেটা দুটো ব্যাঙ্কের মার্জার সংক্রান্ত। গত পরশু পুরো ব্যাপারটা ফাইনাল হয়েছে, এই উপলক্ষে আগামী কাল একটা পার্টি আছে, তুমি এই হারটা পরবে?”, রবিপ্রতাপের এর উত্তরটাও জানাই ছিল বলতে গেলে।
-“তুমি কি পাগল হল নাকি? আজকের পেজ থ্রীতে অল্‌রেডি রিপোর্ট করেছে এর অনবদ্য ডিজাইন, আর আমার স্টাইল স্টেট্মেন্ট নিয়ে। আর এর পরে আবার কালকে ওটা পরলে, পরেরদিন সবকটা কাগজের পেজ থ্রী-তে ছেপে দেবে হার হাইনেস বিপাশা সিং-এর একটাই নেকলেস! নানা, ওটা পরব না, তুমি নিয়ে ইনশিওর করিয়ে তোমার লকারে রেখে দিও। চুরি গেলে আবার একটা তোমাকেই কিনে দিতে বলব কিন্তু! আর মনে রেখো”
-“আই নো, জাস্ট আস্কিং। ঠিক আছে, আমার কাছে রেখে দিচ্ছি, যখন পরবে আগে থেকে বলবে, আমি তুলে নিয়ে আসব।”

(৭)
~~ঝিলম~~

-“রাভি, কালকে তুমি আমাকে কিছুতেই যেতে দিলে না তাজ বেঙ্গলে, অত বড় পার্টি হল, ম্যাডাম বিপাশাকে নিশ্চয়ই দারুণ লেগছিল দেখতে! অথচ আমাকে আসতে তুমি নিষেধ করে দিলে। কেন, সেক্রেটারিকে কি কেউ বাড়িতে পার্টিতে ডাকে না?” ঝিলমের অভিমান ভরা মন্তব্য।
-“নিশ্চয়ই ডাকে। ঝিলম, আমাদের সম্পর্কটা শুধু যদি বস্‌ আর সেক্রেটারি হত, নিশ্চয়ই তোমাকে ডাকতাম। কিন্তু তুমি আমার অনেক আদরের, তোমার কালকে ওখানে গেলে ভালো লাগত না। বিপাশা আর আমাকে খুব কাছাকাছি থাকতে হচ্ছিল। এটা তো আর অফিসিয়াল পার্টি নয়, যে প্রোটোকল মেনে একসাথে হাত ধরে ঢুকে তারপর আলাদা হয়ে গেলে কেউ কিছু মনেও করবে না। এটা একেবারে ঘরোয়া জন্মদিনের পার্টি, তাও আবার বিপাশারই বাবার বাড়িতে। অত গা ঘেঁষাঘেঁষি দেখলে তোমার কষ্ট হত মনে।”
-“না রাভি, আমি ওরকম নই। আমি জানি তুমি ম্যারেড, আমাদের আগে দেখা হলে কি হত কেউ জানে না, কিন্তু এখন আমি শুধুই দ্য আদার উওমান” ঝিলমের চোখ ছলছল করে ওঠে।

-“আমি সব বুঝি সুইটহার্ট, তাই তো তোমাকে আমার এত ভালো লাগে, জানো তোমার জন্য আমি কি গিফট এনেছি? একটা এক্সক্লুসিভ নেকলেস।” রবিপ্রতাপের এই চালটা মোক্ষম।

ঝিলম খুব নরম সরম, কিন্তু কন্সার্ভেটিভ টাইপের। কিছুতেই শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতে রাজি হচ্ছিল না। এখনও মাসে দু একবারের বেশী রাভীকে সুযোগ দিচ্ছে না। অথচ প্রতিবার মিলনের পরে রাভী অদ্ভুত এক তৃপ্তি অনুভব করে। ঝিলাম ওর বিছানায় নিঃসর্ত আত্মসমর্পন করে। ঝিলাম হল সেই ধরনের মেয়ে যারা জানে মিলনের উদ্দেশ্যই হল পুরুষকে তৃপ্ত করা। মেয়েদের শরীরের কোনো চাহিদা থাকতে পারে এটা ওর ধারনায় নেই। রাভীকে সন্তুষ্ট করেই ওর সুখ। তার বদলে ও চায় রাভীর প্রেম। রাভী অবশ্য ঠিক বুঝে উঠতে পারে না শরীর ছাড়া আর কি্ভাবে প্রেম করা যায়। তবে গভীর প্রেমের নিদর্শন হিসাবে এক্সপেন্সিভ গিফট দিতে ও সবসময় প্রস্তুত। তাই রবিপ্রতাপ এক ঢিলে দুই পাখি মারার সুযোগ পেয়ে আর হাতছাড়া করেনি। একদিকে বিপাশার জন্মদিনের গিফট, অন্যদিকে একই হার ঝিলমের কাছে প্রমাণ করবে রবিপ্রতাপের প্রেমের গভীরতা।

- “ওয়াও! সাচ্‌মুচ্‌ মেরে লিয়ে? এত দামী হারের কি দরকার ছিল রাভি?”
-“দামী সম্পর্কের মান রাখতে দামী উপহারই দিতে হয়, সুইটহার্ট।”
-“কিন্তু আমি এত দামী হার কোথায় পরব? সবাই সন্দেহ করবে এটা আমার উপার্জিত টাকায় কেনা সম্ভব নয়।”
-“তা ঠিক, তুমি এটা পাব্লিকলি পরনা। এটা শুধু তোমার আমার মিলনের সাক্ষী হয়ে থাকবে। আমরা নির্জনে যখন শুধু দুজন থাকব, শুধু তখন তুমি এই নেকলেসটা পরবে।”
-“হ্যাঁ সেই ভালো, রাভি, আমি কখনই এটা বাইরে কোথাও পরবনা। এটা একেবারে আমাদের মোস্ট ইন্টিমেট মোমেন্টস্‌এর জন্য তোলা থাকবে। কিন্তু এত দামী জিনিস, আমার বাড়িতে তো রাখতে পারব না, রাভি, তুমি বরং তোমার লকারে রেখে এস, আর যখন মনে হবে আমি তোমাকে বলব নিয়ে আসতে আমার জন্য।”
এই রিঅ্যাকশানটাও রবিপ্রতাপের প্রত্যাশিতই ছিল। তাও একটু অবাক হয়ে বলল,“তুমি কাছে রাখবে না? আজকেই ফেরত দিয়ে দেবে?”

-“আচ্ছা আজকের দিনটা থাক আমার কাছে, কালকে তুমি নিয়ে যেও।”
-“ওকে, আচ্ছা, আজকে উঠি, কাল তো তোমার অফ্‌-ডে, পরশু সকালে দেখা হবে।”

(৮)
~~চিনাব~~

-“ইশ্‌ কতদিন পরে আবার তোর সাথে দেখা হল রে!” চিনাব আর ঝিলম শেরাটনের স্যুইটে বসে কথা বলছিল, চিনাব বলল “আমি এবারে শতদ্রুকে বললাম যে যখন ১৫ দিনের জন্য যাচ্ছ, তখন আমাকেও নিয়ে চল। আমি তো ভাবলান রাজস্থানে ফ্লাই করতে হবে, তারপর তুই বললি যে তুই আবার এই সময়ে কোলকাতায় আসবি, যাক্‌ ভালোই হল! তোর খবর বল? তোর লাস্ট কয়েকটা ই-মেল কিন্তু আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। তুই শেষে তোর বসের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে পরছিস মনে হচ্ছে। তুই তো বলেছিলি লোকটা বিবাহিত।”

ঝিলম আর চিনাব দুই বোন। চিনাবের সাথে শতদ্রুর বিয়েটা হয় বছর চারেক আগে যখন ওদের বাবা জয়প্রকাশ আগরওয়াল ক্যুপার ব্যাঙ্কের বোর্ড অফ ডিরেক্টরসে ছিলেন। শতদ্রু ক্যুপার্স গ্রুপে জয়েন করার পর থেকেই দ্রুত ওপরে উঠছিল, তখনি আগরওয়ালের নজরে পড়ে সে। বিদেশে এমন চমৎকার ভারতীয় ছেলে পেয়ে মিস্টার আগরওয়াল আর দেরী করেননি। চটপট বড় মেয়ে চীনাবের সাথে শতদ্রুর বিয়ের প্রস্তাবটা পারেন। শতদ্রুও এককথায় রাজী হয়ে যায়। এখন চীনাবের মনে হয় যতটা না চীনাবের রূপে মুগ্ধ হয়ে তার থেকে বেশী ওর গরজ ছিল ক্যুপার্স ব্যাঙ্কের একজন বোর্ড অফ ডিরেক্টরের জামাই হবার। যাতে ক্যুপার্স গ্রুপে ও আরো টপাটপ শীর্ষে উঠতে পারে। তাই বিয়ের বছর খানেক পর যখন মিস্টার আগরওয়াল হঠাৎ মারা গেলেন তখন থেকেই ওদের দাম্পত্য সম্পর্কটা কেমন স্টেল হয়ে গেল। বাবা মারা যাবার পর মা আর ঝিলাম রাজস্থানে ওদের পৈত্রিক বারিতে ফিরে যায়। চিনাব অ্যামস্টার্দামে একরকম একাই থাকে। শতদ্রু মাঝে মধ্যেই কোলকাতা আসে, কিন্তু ওর অত বেশী আসা হয়ে ওঠে না।
চীনাবের কথার উওরে ঝিলাম বলে “দেখ আমার কাছে ভালোবাসাটাই আসল, প্রেমহীন বিবাহিত জীবনের থেকে আমাদের রিলেশনটা অনেক বেটার।“

চীনাব একটু আহত হল। ওর আর শতদ্রুর ভাঙ্গাচোরা সম্পর্কের কথা ও ঝিলামকে ইমেলে লিখেছে। ঝিলাম কি তাই নিয়ে ওকে খোঁচা দিল? শুকনো গলায় ও বলল “আশা করি তুই সিওর তোর বস তোকে সত্যি ভালবাসে। দুদিন পরে ছেড়ে দিয়ে পালাবে না। বিয়ে করা বর ভালোবাসুক আর নাই বাসুক অত সহজে ফেলে পালাতে পারে না। রোমান্টিসিজম না থাক সিকিউরিটি থাকে।“
ঝিলম বুঝল দিদির গোপন ব্যাথায় ও আঘাত করেছে। কথা ঘুরিয়ে বলল “তুই আমায় নিয়ে একদম চিন্তা করিস না, রাভী আমাকে খুব ভালবাসে। এই দেখ না কালকে কি এক্সপেন্সিভ একটা গিফট দিল।”
মেডুসা নেকলেসটা দেখে চিনাবেরও চোখ টেরিয়ে যায়। ও বলল এগুলো রীয়েল ডায়মন্ড?”
-“তাই তো মনে হয়, রানা রাভী আমাকে ঝুটা হীরে দেবে না। কিন্তু নেকলেসটা কেমন বল?”
-“কেমন মানে? জাস্ট অসাধারণ!”

ঝিলম চাইছিল একটু আগের অপ্রিয় কথোপকথনের প্রসঙ্গটা চীনাবের মন থেকে সরিয়ে দিতে। চীনাব কে খুশি করার জন্য ও বলল, “চিনাব, তুই পড়বি এটা? আজকে সন্ধ্যায় কোথায় পার্টিতে যাচ্ছিস বলছিলি না?”
-“হ্যাঁ, কিনতু...” চিনাবের চোখই বলে দেয় যে এই অফারটায় সে কতটা খুশী হয়েছে।
-“কিন্তু কিসের? যা না আজকে পড়ে, জিজাজিকে বলিস ঝিলম পড়তে দিয়েছে, ব্যাস্‌!”
-“আরে তোর জিজাজি গয়না অত খেয়াল করে তাকিয়ে দেখে না। আর ওর সাথে একেবারে পার্টিতে গিয়ে দেখা হবে আমার, ও এখন ওই অফিসের কাজে ভয়ানক ব্যাস্ত, ডাইরেক্ট অফিস থেকে পার্টিতে চলে যাবে। আমাকে হটেলের কার্টসি ক্যাব পৌঁছে দেবে”।
-“এই নেকলেসটা শ্যীওর খেয়াল করবে দেখিস দিদি? এই ডিজাইন কিছুতেই ওভারলুক করতে পারবে না!”

সেদিন সন্ধ্যার কুপার-মর্গ্যান ব্যাঙ্কের পার্টিতে হিজ হাইএস রবিপ্রতাপ সিং ব্যাঙ্কের সি-ই-ও শতদ্রু বোসের সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন হার হাইনেস বিপাশা সিং-এর। শতদ্রু, বিপাশা দুজনেই চমকেছে দুজনকে দেখে আর এক মুহূর্তে অনেকদিনের টুকরো কথোপকথকে জোড়া লাগিয়ে বুঝে গেছে যা প্রথম সাক্ষাতেই বুঝতে পারা উচিত ছিল। কিন্তু এসে যায়না তাতে কিছু। জানাই ছিল ওরা ম্যারেড। দুজনেই চমৎকার অভিনয় করে গেল অপরিচিত দুই সদ্য আলাপ হওয়া গেস্টের ভূমিকায়।
শতদ্রুর মোবাইল ফোন বেজে উঠল, “এক্সকিউজ মি”, বলে ফোনটা ধরল। চিনাবের ফোন। “ও, তুমি এসে গেছ, এই তো ডান্স-ফ্লোরের বাঁদিকে যেখানে ড্রিঙ্কস সার্ভ করছে ওখানে চলে এস।”
চীনাব এসে শতদ্রুর পাশে দাঁড়ালো। কিন্তু বাকি তিনজনের তখন আলাপ পরিচয়ের দিকে হুঁস নেই। চীনাবের গলার মেডুসা নেকলেসের দিকে তাকিয়ে শতদ্রু, বিপাশা, রাভী তিনজনেই প্রস্তরমূর্তিতে পরিণত হয়েছে। তিন পাকা খেলোয়ারের মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরছে; এবারের খেলায় কোন চালেই আর চেকমেট্‌ হওয়া আটকানো গেলনা।

ঋণস্বীকার -
• Cheap at half the Price – Jeffery Archer
• প্রেমচক্র – পরশুরাম
• মেরী আঁতোয়ার হীরের নেকলেসের ব্যাপারটা কিন্তু সত্যি ঘটনা


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

shohidull এর ছবি

অসাধারন। পাত্রপাত্রী কেউ পাঞ্জাবী না হলেও সবার নাম পাঞ্জাবের নদীর নামে কেন ? কোনো কারণ আছে নাকি?

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

নাঃ, এমনিই পাঁচটা ক্যারেকটার পাঁচটা নদীর নামে। বাঙ্গালি-অবাঙ্গালি মিলিয়ে।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

শাব্দিক এর ছবি

দারুন লাগল।
কিন্তু আপনাদের একি অংশ কপি করার ব্যাপারটা ভাল লাগে না। শতদ্রু আর রাভির জয়েলারীর দোকানে ডায়ালগ গুলির কথা বলছি।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

আসলে, এটা বোঝাতে চেয়েছিলাম দুটো ক্যারেকটারের মধ্যে কোথায় যেন চিন্তা-সূত্রের মিল আছে। আর কপি-পেস্টের লোভ আছেই, সেটা অস্বীকার করব না। হাসি

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন লাগলো।

কিন্তু আমার মনে হয় ফাসলো শুধু হিজ হাইনেস। -কাজী

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

প্রশংসার জন্য অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

গগন শিরীষ এর ছবি

ঝিলম আর চিনাব দুই বোন না হয়ে বান্ধবী হলে ভাল হত মনে হয়।কুপার্স ব্যাঙ্কের বোর্ড অফ ডিরেক্টরের মেম্বারের মেয়ে হিসেবে চিনাবকে মানিয়েছে, কিন্তু আরেক মেয়ে ঝিলম রবিপ্রতাপ এর সেক্রেটারি এ ব্যাপারটা মনে হয় ঠিক খাপ খায়নি। যাই হোক পড়তে দারুন লেগেছে।ভাল থাকবেন,আরো লিখবেন এই শুভ কামনা রইল!!
-গগন শিরীষ

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

আপনার মন্তব্য পড়ে আমাদেরও এটা মনে হল, ঠিকই তো! বান্ধবী হলেই বেটার হত।
কখন বই হিসেবে প্রকাশ করার সুযোগ পেলে দুজনকে বোন না করে বান্ধবী বানিয়ে দেব। হাসি

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

আলতাইর এর ছবি

সেলাম গুরু, সেলাম গুরু গুরু

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধরা তো শুধু রাভি/রবি খেলো, বিপাশা আর শতদ্রুর ভয় পাওয়ার কারণ কী?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

তা কেন? বিপাশাও বুঝল যে শতদ্রুর কাছে ধরা পড়ে গেল। শতদ্রু ভাবল চিনাবের হয়ত সব জানা হয়ে গেছে।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

কৌস্তুভ এর ছবি

কই, বিপাশা তার স্বামীকে ওটা রাখতে দিতেই পারে। দোষটা পুরো রাভি'র ঘাড়ে চাপিয়ে দুজনেই বেঁচে যেতে পারে।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

কিন্তু শতদ্রু-কে তো বিপাশা জানায়নি যে ওটা রাভী অর্ধেকটা দাম দিয়েছে, কাজেই বিব্রত হওয়া স্বাভাবিক।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

এটা একদম অন্য একটা জঁরে লেখার চেষ্টা। ভাবলাম অনেক নিন্দা হবে আর তখন রবীন্দ্রনাথের স্টাইলে বলতে হবে 'নিন্দার দ্বারাই এর প্রায়ঃশ্চিত্ত হওয়া উচিত'। হাসি কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখছি খুব একটা মারধর খাচ্ছি না। হাসি

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

কালো কাক এর ছবি

হাততালি

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

নিশিতা এর ছবি

আমি এবার একদম ধরতে পারছিলাম না যে শেষে কি হবে হাসি
হাততালি আমার লেখা পড়ে মনে হলো দারুন মসলাদার কাবাব খেলাম।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- নিশিতা!

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

কৌস্তুভ এর ছবি

আরে ছি ছি, আপনারা নাহয় বিবাহিত তাই বলে এসব অচলীল লেখা দিয়ে বাকিদের ডিস্টাপ করবেন?

এই গল্পটা অতটা ভাল লাগল না। প্লটটা বেশ সরল, কিন্তু গল্পটা অনেক লম্বা মনে হয়েছে, বিল্ড-আপ করতে গিয়ে এতটা বড় না করলেই হয়ত ভাল হত। আর শেষদিকে অনেকটা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল কী হবে।

গিফট্‌ অফ্‌ দ্য ম্যাজাই নাম দেওয়ার কারণ বুঝলাম না, এটার মূলভাব তো প্রায় ওটার উলটো!

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

আমাদের আগের গল্পগুলিতে একটা সমালোচনা ছিল চরিত্র চিত্রনে সময় না দেওয়া। এই গল্পে পাঁচটি চরিত্রকে সময় দিতে গিয়ে একটু লম্বা হয়ে গেল। আসলে প্লটটা সরল ছিল না কিন্তু প্রেমচক্রকে পরিণতি দিতে গিয়ে ক্লাইম্যাক্সটা হয়ত সরল হয়ে গেল। স্বয়ং পরশুরাম হারিত-লারিত-জারিত , সমিতা-তমিতা-জমিতা র প্রেমচক্র ফেঁদে শেষকালে ক্লাইম্যাক্সটা গিন্নী উনানে দিয়েছেন বলে অব্যাহতি নিলেন। আমরা কর্তা গিন্নী মিলে গল্প লিখি তাই সে অজুহাত খাটবে না, তাই জোড়াতালি দিয়ে ক্লাইম্যাক্স দাঁড় করাতে হল।
গিফট্‌ অফ্‌ দ্য ম্যাজাই -রিমেক হল পুরো নাম টা। বলিউডি সিনেমা ডন রিমেকের মতই মূল গল্পটার উলটো। সেখানে উপহার গুলো ব্যবহার হল না ভালোবাসা টা রয়ে গেল। এখানে উপহার টা সুদে আসলে পাঁচ জনে মিলে ব্যাবহার করে নিল। সম্পর্ক গুলো ভালোবাসাহীন।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হাচলাভিনন্দন! যুগলে মিলে এক অ্যাকাউন্টে হাচল/সচল হওয়া দেখা দূরে থাক কেউ শোনেওনি। দাঁড়িওয়ালা বুড়া বলেছিলো, "পতির পূণ্যে সতীর পূণ্য নইলে খরচ বাড়ে"। এখানে কার পূণ্যে কে খরচ কমালো?

অলঙ্কার, রত্ম, চিত্রকর্ম ইত্যাদি দামী দামী জিনিস নিয়ে কয়েকটা তো হল; এবার একটু অন্য লাইনে না হয় ভাবুন। তবে genre যাই হোক টান টান উত্তেজনা, জটিল প্লট, ভাষার কারিকুরি এগুলো থাকতেই হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ!
আরে তা কেন? অলঙ্কার, রত্ন, চিত্রকর্ম ছাড়াও আমাদের একটা গল্প "শাহী-তন্দুর" করফাঁকি নিয়ে লেখা। বিতংস গল্পটা সচলে আমাদের প্রথম লেখা, ক্রাইম থ্রীলার - মুক্তিযুদ্ধের একটা ক্লু আছে; অচিন গল্পটা লেখা হিন্দুস্থানী রাগ-সঙ্গীত নিয়ে। ওস্তাদের মার শেষ পাতে উপন্যাসটা যদিও ক্রাইম থ্রীলার, তাও রান্না নিয়েই মূলত লেখা। জঁর নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এই দম্পতি সবসময় করে যাবে ষষ্ঠ-পান্ডবদা! হাসি

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

ফাহিম হাসান এর ছবি

লেখা দুর্দান্ত হয়ছে, সংলাপগুলো বেশ লাগসই। কিন্তু এত বেশি ইংরিজি কথার ছড়াছড়িতে মাঝে মাঝে তাল কেটে যাচ্ছিল।

যেমন:

আজকে ফাইনাল টেক-ওভার অ্যানাউন্সড হল।

নেগোসিয়েশান, অ্যাটেন্ড, টেক-ওভার, ফাইনাল/ফাইনালি এগুলোকে অনায়াসেই বাংলা করা যেত। আর কিছু টাইপো রয়ে গিয়েছে। চটাপট ঠিক করে ফেলুন।

আপনাদের আরো গল্প পড়ার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি

গগন শিরীষ এর ছবি

কিন্তু ফাহিম ভাই, আমাদের নিজেদের আলাপচারিতাতে কিন্তু আমরা প্রায়ই এই ইংরেজী শব্দগুলো ব্যবহার করি!
-গগন শিরীষ

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

ঠিক ঠিক। তবে বাংলা লেখায় বোধহয় আমাদের সত্যিই উচিত বেশী বাংলা শব্দই ব্যাবহার করা।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

ফাহিম - এই লেখাটা আপ্‌লোড করেই গিন্নি বলেছিল যে এইবার সচলের বন্ধুরা সবাই ইঁট-পাটকেল ছুঁড়বে একগাদা ইংরেজি শব্দ ব্যাবহারের জন্য। কেউ এতক্ষন বলছিলেননা দেখে বেশ আশ্চর্যই হচ্ছিলাম! হাসি

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

কাজি মামুন এর ছবি

অসাধারণ লাগল, প্রিয় হাচল দম্পতি। জিম আর ডেলার গল্পের শিরোনামাংশ গল্পটির ভিতর ঢুকতে বাধ্য করেছিল, এরপর আর শেষ না করে উঠতে পারিনি। সাবলীলতায় আদ্যোপ্যান্ত মোড়া।

এমন সচল-সজল গল্প সৃষ্টি চলুক অবিরল।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

খুব ভালো লাগল এমন প্রসংশা পেয়ে কাজি মামুন!

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি মজা পেয়েছি। আরো লিখতে থাকুন। -রু

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- রু!
লেখা চলতে থাকবে। চোখ টিপি

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

দীপ্ত এর ছবি

মজা পেলাম। অন্যান্য গল্পের মতই কাহিনী গোছানো, ডিটেইলসগুলো সুন্দর। প্রথম কয়েক প্যারা ইংরেজি শব্দের আধিক্যে পড়তে কিছুটা আড়ষ্ট ঠেকছিল।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

সহমত। এই লেখাটা আপ্‌লোড করেই গিন্নি বলেছিল যে এইবার সচলের বন্ধুরা সবাই ইঁট-পাটকেল ছুঁড়বে একগাদা ইংরেজি শব্দ ব্যাবহারের জন্য।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালই পেঁচিয়েছেন দু'জনে মিলে। ক্লাইম্যাক্স দারুণ লাগলো। তবে আমার মনে হয় আসল ধরাটা খেয়েছে রাভী/রবি। শতদ্রু আর বিপাশা তো একটু বেশীই প্র্যাক্টিকাল, ওরা ঠিকই বুঝে নিবে।

রীনার সাথে কথোপকথনের সময়ে বিপাশার মুখে একবার রবি আরেকবার রাভী শুনে একটু থমকেছি।

আপনাদের গল্প পড়ার মজা হলো একেকবার একেক টপিক নিয়ে লেখেন।

ফারাসাত

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

এই ভুলগুলো কবে যে প্রথম চান্সেই ঠিক করতে পারব কে জানে? এখান আমাদের টেস্টার-দ্বয় ভারতে পারি দিয়েছেন, তাই বেশী বেশী ভুল থেকে যাবে লেখায়। মন খারাপ

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

অতিথি লেখক এর ছবি

পারি = পাড়ি চোখ টিপি

ফারাসাত

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

আরে তখন কিছুতেই পাড়ি লিখতে পারছিলাম অন্য একটা ল্যাপটপ থেকে, খালি পাড়ই হচ্ছিল। তখন ধুত্তেরিকা বলে পারি লিখেছি।
এত খুঁটিয়ে পড়ার আর প্রশংসার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

পথিক পরাণ এর ছবি

দারুণ!
চিনাব আর ঝিলম বোন না হলেই ভাল হত বেশি মনে হয়।
গল্পের নামটাও একটু কেমন অমিল ঠেকল।
তবে সব মিলিয়ে কিন্তু দারুণই লাগলো।

হাচল অভিনন্দন--

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

হ্যাঁ, বই হিসেবে প্রকাশ করা যদি কোনদিন কপালে লেখা থেকে তাহলে তখন বন্ধু করে দেব।
গল্পের নামটা একটা অ্যান্টি-ক্লাইম্যাক্স মূল গল্পটার থেকে। হাসি

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

CannonCarnegy এর ছবি

ভাল লেগেছে। পরের গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম।
হাততালি

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

আপনি আমাদের গল্পের নিয়মিত পাঠক। আমরাও অপেক্ষা করি আপনার কেমন লাগল শোনার জন্য।
পরের গল্প আগামী শুক্রবার।
তারপর এক মাস কোল্কাতায় ছুটি কাটাতে যাব কয়েকবছর বাদে। কাজেই তার পরের গল্প আসবে ফেব্রুয়ারীর শেষে। হাসি

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।