আগের পর্ব এখানে
http://www.sachalayatan.com/ipsito/51810
(৯)
তবে মোবারককে ডাকার আগেই ঝাঁকরা চুল কামেশ ঢুকলেন হাসিমুখে। বয়েস চল্লিশ ছাড়ায়নি। বললেন, “ভিক্টিম তিনটে বারোতে শেষ ইমেল করেছেন। কাজেই ধরে নেওয়া যায় ইমেল করার পর আততায়ী ওঁর ক্যাবিনে ঢুকেছে, কিছু কথা নিশ্চয়ই হয়েছে, আর তারপর ছুরি মেরেছে আততায়ী। এই পুরো ব্যাপারটার জন্য তিন মিনিট বরাদ্দ করলেও এটুকু বলা যায় যে খুনটা তিনটে পনেরোর পর হয়েছে।”
প্রবীর বললেন “কাকে ইমেল করেছেন?”
কামেশ বললেন “ই-মেল অ্যাড্রেস টা সাবিরাখান@জিমেল, মিস্টার খানের সেক্রেটারী আরমান আভেদিনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম ওটা ওনার বড়বিবির ই-মেল অ্যাড্রেস। কিন্তু স্যার ইমেলের কন্টেটটা দুর্বোধ্য। ইংলিশ ফন্টে কিন্তু অন্য ভাষায় লেখা, মিস্টার আভেদিন বললেন এটা ইজিপ্টের কোনো পরিচিত ভাষা নয়। এই যে ইমেলের প্রিন্ট্-আউট।”
প্রবীর পাল প্রিন্ট আউট টা হাতে নিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে চমকে উঠে বললেন “একি এতো বাংলায় লেখা। তিষ্যা সবে ভাবছিল ইজিপ্সিয়ান হায়ারোগ্লিফিকে কোনো গুপ্ত সঙ্কেত ই-মেল করে পাঠানোর ফলেই রশীদ খান খুন হয়েছেন। হলিউডের মুভির মত একটা ক্রাইম থ্রিলারের জাল সবে বুনতে শুরু করেছিল কল্পনায়। তখন প্রবীর পাল কিনা বলে বসলেন হায়ারোগ্লিফিক নয়, হিব্রু নয়, ফার্সী নয় এমন কি উর্দু পর্যন্ত নয় একেবারে বাংলা ভাষা !!
তিষ্যা বাবার ঘাড়ের উপর দিয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখল ছোটখাটো একটা ইমেল।
প্রিয় সাবিরা
আইজকের বিবিসি নিউজে দেখি কায়রোতে আয়েশা ইউনুসের উপর হামলার খবর নিয়া জোর হল্লাগুল্লা চলছে। আমেরিকার দালালগুলা মাইয়াডারে নবী বানাইয়া দিছে। তুমি কাল তোমার সমিতির মাইয়াদের সাথে নিয়া প্রেস কনফারেন্স ডাক। আমেরিকার দালালগুলা রে জানাইবা যে ইসলামে মাইয়ালোকদের বিদ্যা শিক্ষা নিয়া কোনো বাধা নাই। কিন্তু আয়েশা হইল আমারিকার চর। আমেরিকার ব্লগে সে ইসলামিক অনুশাসনের নিন্দা কর্ছে। পশ্চিমি শিক্ষা পাইয়া,হিজাব খুইলা সে ছেমড়ি ইসলামের অপমান করছে। তাই তাকে তার গুনাহের সাজা পেতে হল।
খোদাহাপিস
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা জিজ্ঞেস করলেন “আয়েশা ইউনুস কে? কি করেছে? এই রশীদ খান এর উপর এত খাপ্পা কেন?”
তিষ্যা বলল “ওমা সেকি? তুমি আয়েশার কথা কিছু জানো না? মাত্র তেরো বছরের মেয়ে কিন্তু দুর্দান্ত সাহসী। ইজিপ্টের মৌলবাদী দল মেয়েদের পড়াশোনা, উচ্চশিক্ষার উপর ফতোয়া জারি করেছে। এই আয়েশা তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিল। বিভিন্ন ব্লগে লিখেছিল ও এবং ওর বন্ধুরা পড়তে চায়। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, মহাকাশ বিজ্ঞানী হতে চায়। সেই ব্লগ পড়ে মৌলবাদী দলের লোকের ওকে গুলি করে মাথায়, কাঁধে, পেটে মোট তিনটে। এখন হসপিটালে কোমায় আছে। সারা পৃথিবীর লোক এই ঘটনার নিন্দা করছে। আমরা তো দিনে চার পাঁচটা এই রিলেটেড মেসেজ শেয়ার করছি ফেসবুকে। নিউজ চ্যানেলগুলো ওই মৌলবাদী দলের খুব নিন্দা করছে। কিন্তু ওরা বলছে আয়েশা আমেরিকার চর, ইজিপ্টের সার্বোভৌমত্ব নষ্ট করতে চায়, এইসব। মনে হচ্ছে এই রশীদ খান এই দলের সদস্য। আয়েশার বিরুদ্ধে ইজিপ্টের মেয়েদের তাতানোর চেষ্টা করছে।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা ঘটনাটা জানতেন না। শুনে রাগে জ্বলে উঠলেন। একটা কচি, নিরস্ত্র কিশোরীকে নির্মম ভাবে গুলি করে ভন্ডগুলো ধর্মের বুলি কপচাচ্ছে। সদ্য মৃতের উপর রাগ দ্বেষ করতে নেই কিন্তু ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা রশীদ খানকে ঘৃণা না করে পারলেন না।
প্রবীর পাল পুলিসের লোক। নৃসংশতা দেখে দেখে চোখ সয়ে গেছে। আয়েশার ঘটনার থেকে তার বেশী আগ্রহ ছিল বাংলা ভাষার ই-মেলে। প্রবীর বললেন “কিন্তু রশীদ খান বাংলা জানলেন কি করে? তাও কলকাতার বাংলা ভাষা নয়, পূর্ববঙ্গের ভাষা।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা ই-মেল টা আরেকবার পড়লেন। একটুখন ভুরু কুঁচকে স্থির হয়ে রইলেন তারপর বললেন ভদ্রলোকের বড়বিবি ও বাংলা জানেন। মনে হচ্ছে মিস্টার খানের হয় পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের সাথে কোনো কানেকশান ছিল।“
তিষ্যা ট্যাবলেটে স্টাইলাস চালাতে চালাতে বলল দাঁড়াও গুগল, আর উইকিতে দেখি রশীদ খানের কোনো পরিচয় বেরোয় কি না।“
কামেশ বলল “মিস্টার আভেদিন বললেন মিস্টার খানের বড়বিবি-ও রাজনীতিতে ছিলেন। ওঁর দলের-ই মহিলা সংগঠনের নেত্রী ছিলেন।“
কামেশ প্রবীর কে জিজ্ঞেস করল বাংলা ই-মেল টা পড়ে কোনো ক্লু পাওয়া গেল কিনা? প্রবীর একটু হতাশ ভাবে বলল, "নাহ্ ই-মেলের কন্টেক্সটে সেরকম কোনো ক্লু নেই। তবে ই-মেলের সময়টা ভাইটাল। এর থেকে এইটুকু সাফ বোঝা গেল যে সোওয়া তিনটের পরে খুনটা হয়েছে। কাসেম, তুমি বরং মোবারককে পাঠিয়ে দাও। দেখি ওকে কড়কে কিছু বের করতে পারি কিনা।"
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার ভুরুটা কুঁচকেই রইল। বিড়বিড় করে কতকটা নিজের মনেই বললেন, “কি যেন একটা অসঙ্গতি চোখে ধরা পড়ি পড়ি করেও পড়ল না। খটকা একটা লাগল তারপর তালেগোলে হাপিশ হয়ে গেল।”
(১০)
মোবারক সালাম দেহরক্ষী হিসেবে বেশ মানানসই। ছ-ফুটের ওপর লম্বা, মিনিমাম ১২০ কেজি হবে।
ইজিপ্টের নাগরিক। একটু যেন বিব্রত হয়ে আছে। অ্যাফ্রিকা মহাদেশের লোক বলে চিনতে কোনরকম অসুবিধা হবে না। ঘন শ্যামবর্ণ, কোঁকড়া কোঁকড়া চুল, কানে বড় বড় সোনার মাকড়ি। অন্ ডিউটি বলেই বোধহয় ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায়ই রয়েছেন। ঘরে ঢুকতে প্রবীর পাল শুরু করলেন জিজ্ঞাসাবাদ। সালামের মিশরীয় পাসপোর্টটা নেড়ে চেড়ে দেখলেন।
“আপনার নাম?”
“মোবারক সালাম”, গলার স্বরটা গম্গমে। অতিমন্দ্র সপ্তকের রুদ্র-বীণার মতন। ইংরেজী ভাষায় বেশ অস্বচ্ছন্দ।
“নিহত রশীদ খান আপনার এম্প্লয়ার ছিলেন?”
“হ্যাঁ।”
“আপনার ইউনিফর্ম দেখে তো মনে হচ্ছে আপনি সরকারি কর্মচারী নন, কোন বেসরকারী সংস্থা মারফত কি আপনাকে নিয়োগ করেছিলেন প্রয়াত রশীদ?”
“হ্যাঁ”
“ওনার তো সরকার থেকেই দেহরক্ষী পাওয়ার কথা। তাহলে বেসরকারী সংস্থা থেকে...?”
“ওনার সরকারি বডি-গার্ডও আছে। কিন্তু সরকারি রক্ষীটি সবসময় ওনাকে অনুসরণ করতে পারেনা। নানারকম সরকারি নিয়ম কানুন আছে। এই উড়ানে উনি তাকে পাননি। তাই আমাকে নিয়ে ট্র্যাভেল করছিলেন।”
“কতদিন কাজ করছেন আপনি রশীদের সাথে?”
“বছর তিনেক হবে।”
“ওনার পরিবারের সাথে আপনার কিরকম আলাপ?”
“আজ্ঞে সেরকম আলাপ নেই। মনিবের পরিবারের সাথে যেরকম সদ্ভাব থাকে সেরকম।”
“কোনকিছু গোপন করার চেষ্টা করবেন না। একথা কি ঠিক নয় যে আপনি নিহতের ছেলেকে ফোন করে এই সংবাদ-টা দিয়ে এটাকে একটা ফর্চুনেট ইন্সিডেন্ট বলেছিলেন?”
সালামের মুখে একটা ভয়ের ছায়া পড়ল। আমতা আমতা করে বলল "মানে ওনার ছেলের পক্ষে ফরচুনেট। ছেলে বাপে বনিবনা নেই। "
"আপনি ওনার ছেলের নাম্বার পেলেন কোথায়? আর কেনই বা ফ্লাইট নামতেই সাত তাড়াতাড়ি ওকে ফোন করলেন? দেখুন কেস টা কিন্তু আপনার বিপক্ষে যাচ্ছে। আপনি রশীদ খানের দেহরক্ষী, সর্বক্ষন ওর পাশে থাকেন। রক্ষী হিসাবে আপনার কাছে অস্ত্র থাকা টা স্বাভাবিক। মার্ডারের ওয়েপন আর ওপারচুনিটি দুটোই আপনার পুরো মাত্রায় আছে। শুধুমাত্র মোটিভ টায় একটু আটকাতো। কিন্তু ফোন টা করে আপনি মোটিভ টাও প্রাঞ্জল করে দিয়েছেন। ধরাই যায় রশীদ খানের ছেলে আপনাকে মোটা টাকা দিয়ে নিয়োগ করেছিল ওনাকে খুন করে ছেলের পথের কাঁটা দূর করার জন্য। রশীদ খানের মত হাই প্রোফাইল মানুষের কাছে সাধারণ লোক ঘেঁষতে পারে না। কিন্তু সর্ষের মধ্যে ভূতের মত ওঁর দেহরক্ষী কে এই কাজে নিয়োগ করলে কাজ টা সহজেই নেমে যাবে। দেখুন সারকুমস্টান্সিয়াল সব এভিড্যান্স আপনার বিপক্ষে যাচ্ছে।"
যদিও যুক্তিতে অনেক ফাঁক ছিল কিন্তু দুঁদে পুলিস অফিসার প্রবীরের এই বক্তৃতায় কাজ হল। মোবারক বেশ ভেঙ্গে পড়ল। খানিকখন চুপ করে বসে থাকল। তারপর বলল "দেখুন আমি সব খুলে বলছি। হ্যাঁ একথা ঠিক রশীদ খানের ছেলে আমাকে নিয়োগ করেছিল। তবে খুন টুন করতে নয়। শুধু ওর বাবার ওপর নজর রাখতে। রশীদ খানের ছেলে ইমরান প্যারিসে আছে। ওখানকার এক খ্রীস্টান মেয়ে ওর গার্লফ্রেন্ড। ওরা বিয়ে করতে চায়। রশীদ খানের তাতে খুব আপত্তি। এই নিয়ে বাবা ছেলের অনেক কথা কাটাকাটি হয়। বাবা ভয় দেখায় ওই মেয়ে বিয়ে করলে রশীদ খান ছেলেকে সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবে। ছেলে রাগ করে প্যারিস ফিরে যায়। কিন্তু ভয় ছিল বাবা যদি সত্যি ওকে সম্পত্তি থেকে বঞ্ছিত করে। তাই ও আমার সাথে যোগাযোগ করে বাবার উপর নজর রাখতে বলে। যদি সত্যি রশীদ খান উইল করে তা হলে যেন ওকে ততক্ষনাত জানাই। সেরকম হলে ইমরান হয়ত বাবার সম্পত্তি আর গার্লফ্রেন্ড এর মধ্যে সম্পত্তি বেছে নিত। আমি শুধু টাকার জন্য রাজি হয়ে যাই এই কাজটা করতে। আমাদের কাজে কত আর টাকা বলুন। এই বেশী টাকার লোভ টা সামলাতে পারিনি। তাই বলে খুন জখমের কথা আমি ভাবতেও পারি না।"
প্রবীর বলল "আপনি সত্যি বলছেন কিনা সেটা আমরা ঠিক ভেরিফাই করে নেব। মিথ্যে বললে আপনার বিপদ বাড়বে। যাই হোক আপনি তো দেহরক্ষী, নিশ্চয়ই অস্ত্র আছে কিছু?"
"হ্যাঁ আমাকে কোম্পানী থেকে একটা রিভল্বার দিয়েছে। সেটা চেক ইন লাগেজে আছে। রিলেটেড পেপারস আমার পার্সেই আছে।"
"আর কোনো অস্ত্র নেই? ব্যাক্তিগত ব্যাবহারের জন্য?"
"নাহ আর কিছু নেই। শুধু ওটাই"
"আচ্ছা তিনটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে আপনি কি করছিলেন?"
"আমি সিটেই ছিলাম। সিনেমা দেখছিলাম। ঘড়ি দেখিনি। তবে প্লেন ল্যান্ড করার আগে সিট ছেড়ে কোথাও যাইনি। প্লেন ল্যান্ড করলে আভেদিন স্যার আমাকে ডেকে দুঃসংবাদ টা দিলেন।"
"ঠিক আছে আপনি যেতে পারেন।"
মোবারক বেরিয়ে যেতে প্রবীর ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা কে বলল "কি বুঝলেন ?" ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন মোটিভ, ওয়েপন, অপারচুনিটির দিক থেকে দেখলে মোবারকের দিকেই পাল্লা ভারি লাগে।
প্রবীর বলল "কামেশ মোবারকের পাসপোর্ট টা চেক করেছ? কোন দেশের নাগরিক বা কোন কোন দেশের ভিসা ছিল বা আছে কিছু জানা যায়?
কামেশ ছিল বলে কথা বার্তা তখোনো ইংরাজীতেই হচ্ছিল। প্রশ্ন শুনে সে বলল "হ্যাঁ দেখেছি ইজিপ্টের নাগরিক। আফ্রিকার তিন চারটে দেশের ভিসা আছে।রশীদ খানের পাসপোর্ট মিলিয়ে দেখলাম ওই সময় মোবারক রশীদ খানের দেহরক্ষী হিসাবেই ওই সব দেশে গিয়েছিল। মালয়েশিয়ার ভিসা চার পাঁচ দিন আগেই করানো হয়। শুধু ফ্রান্সের ভিসা করানো হয়েছে দিন পনেরো আগে। কিন্তু আরমানকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম রশীদ খানের ফ্রান্স যাবার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আরমান জানায় মোবারকের ফ্রান্সের ভিসা আছে সেও জানত না। মালয়েসিয়ার ভিসা করানোর সময় ও মোবারকের পাসপোর্টটা হাতে পায় তখন জানতে পারে। মোবারক নাকি ওকে বলে মোবারকের এক বন্ধু ফ্রান্সে আছে সে বলেছে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে একবার ফ্রান্সে ঢুকে পড়লে সে কাজ কর্মের সুবিধা করে দেবে। ওই ইললিগাল ইমিগ্রেশন আর কি। আরমান নাকি এনিয়ে আর ঘাঁটায় নি। কথা বার্তা শুনে মনে হয় আরমান নিজেও ওরকম কাজ দু এক বার করেছে। কাজেই ও ব্যাপারটা সেরকম বেআইনি মনে করে না।"
প্রবীর বলল "সেটা হতেই পারে। ইললিগাল ইমিগ্রেশন তো এখন জলভাত হয়ে গেছে প্রায় সব দেশেই। আবার মোবারক খুন করে ফ্রান্সে গা ঢাকা দিতেও পারে। যদি ও টাকার জন্য রশীদের ছেলের হয়ে খুনটা করে তবে রশীদের ছেলেই ওর গা ঢাকা দেবার ব্যাবস্থা করে দেবে।"
কামেশ বলল "তবে আমার মনে হয় মোবারক খুন করতে চাইলে আরো সুযোগ ছিল। প্লান করে খুন করলে ও কেন ফ্লাইটের মধ্যে খুন করতে যাবে? অন্যত্র নিরিবিলিতে কাজ টা সারতে পারত।"
প্রবীর বলল "সেটা একটা পয়েন্ট ঠিক-ই। আবার দেখো ফ্লাইটে খুন করলে অলরেডি ও দেশের বাইরে। দেশের মধ্যে একজন ডিপ্লোম্যাটকে খুন করে পার পাওয়া খুব শক্ত। কিন্তু দেশের বাইরে খুন করলে ওকে দেশে ফেরাতে গেলে ইজিপ্ট গভর্নমেন্টকে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে। তাছাড়া দেশের পুলিশ যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে খুনি কে খুঁজবে বিদেশে সে সম্ভবনা কম। ভাব একবার আমাদের দেশের কোনো ডিপ্লোম্যাট খুন হলে কি আমার মত একজন সাধারন ইন্সপেক্টর তদন্ত করত? সিবিআই এর বড় বড় মাথারা ঝাঁপিয়ে পড়ত।"
কামেশ বলল সে সম্ভবনার কথা যদি বল তাহলে মারিও আর আরমানেরও একই রকম সুযোগ ছিল। মারিও তো ইতালিয়ান নাগরিক। কাজেই ওর পক্ষে খুন করে ইতালিতে পালিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার না। বরং মোবারকের ক্ষেত্রে ফ্রান্স চাইবে না একজন ইললিগ্যাল ইমিগ্রান্ট ওদের দেশে থাকুক। মোবারক ফ্রান্সে ধরা পড়লে ওকে ইজিপ্টে ফেরত পাঠানোর সম্ভবনা অনেক বেশী। কিন্তু মারিও কে ইতালি গভর্নমেন্ট অত সহজে প্রত্যর্পন করবে না।"
তিষ্যা বলল "মারিও রাগের মাথায় বা মোবারক টাকার লোভে খুন করতেই পারে। কিন্তু আরমানকে সন্দেহ করার কারণ কি? এমন সৌম্য ভদ্রলোকের পক্ষে কাউকে খুন করা সম্ভব নয়।"
প্রবীর হেসে বলল "কেন তিষ্যা যীশুখ্রীষ্টের মত ক্ষমাসুন্দর চাহনিওয়ালা একজন লোকের ধ্বংসলীলার কথা ভুলে গেলে। পুলিশে চাকরি করলে দেখতে চমৎকার দেখতে লোকজন কত জঘন্য অপরাধ করে। আচ্ছা কামেশ আরমানের সম্পর্কে আর কিছু জানতে পেরেছ?"
কামেশ বলল "একটা ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট হল আরমান আদতে আর্মেনিয়ার বাসিন্দা। ন্যাচারালাইজেসন এর ফলে ইজিপ্টের নাগরিকত্ব পেয়েছে কিন্তু আর্মেনিয়ার নাগরিকত্ব ছাড়েনি। দুদেশের ই নাগরিকত্ব আছে। প্রমাণ না পেয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয়। তবে শুনেছি আর্মেনিয়াতে নাকি রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি বেশ সক্রিয়। ওখানকার লোকাল এজেন্ট দের ট্রেনিং দিয়ে মিডল ইস্ট, আফ্রিকার অনেক দেশে ছড়িয়ে দেয়। রাশিয়া তো ইজিপ্টের বর্তমান সরকারের বিপক্ষে কাজেই রশীদ খানের খুন টা রাজনৈতিক খুন কিনা কে জানে?"
প্রবীর অট্টহাস্য করে বলল "তোমার আমার সেরকম কপাল নয় হে কামেশ যে কেজিবি এজেন্টকে খুনের দায়ে গ্রেপ্তার করব। সেরকম লেভেলের কেস হলে দেখতে আরমান এতক্ষনে জাল কেটে বেরিয়ে গেছে। আমার মতে এই খুন কোনো একটা ব্যাক্তিগত কারনে হয়েছে।"
তিষ্যা বলল "আচ্ছা দেশের বাইরে খুন করে পালিয়ে যাওয়াই যদি উদ্দেশ্য হয় তবে মোবারক, মারিও বা আরমান ফ্লাইটে খুন করবে কেন? তিন জনেরই মালয়েশিয়ায় নেমে খুন করার সুযোগ ছিল। সেটা আরো নিরাপদ হত। ধরুন ফ্লাইটটা যদি ভারতে না নেমে ইজিপ্টে ফিরে যেত? তবে ত পালানোর প্ল্যানটা মাঠে মারা যেত। ফ্লাইটে খুন করবে তারাই যারা ফ্লাইটের বাইরে রশীদ খানের পাত্তা পাবে না। মানে ফ্লাইটের অন্য কোনো অচেনা যাত্রী বা কেবিন ক্ররা।"
কামেশ বলল "তিষ্যার কথায় যুক্তি আছে। তবে অন্য কারো তো সেরকম কোনো মোটিভ নেই। "
প্রবীর বলল "সব থেকে বড় কথা হল "মোটিভ, অপারচুনিটি যার যতই থাক ওয়েপনটা গেল কোথায়। যদি কোনোভাবে সিকিউরিটির চোখ এড়িয়ে ফ্লাইটে উঠেও যায় খুনের পর সেটা গেল কোথায়? ফ্লাইট তো আর ট্রেন নয় যে কেই দরজা খুলে বাইরে ফেলে দেবে।" তারপর একটু হেসে যোগ করল "আর বাকি রইল ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা যদি ভ্যানিস করে দেন।"
শুনে তিষ্যা আর কামেশ হেসে উঠল। কিন্তু ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার কোনো ভাবান্তর হল না। তিনি গভীর চিন্তায় ডুবে ছিলেন। তিষ্যা বলল "কি হল বাবা? কি ভাবছ? তোমার কি মনে হয় অস্ত্রটা কোথায় গেল ?"
তিষ্যার কথায় ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা সম্বিত ফিরে পেলেন। ভ্রু কুঁচকে কিছুটা আপন মনেই বললেন "সেটাই তো বুঝতে পারছি না।"
(১১)
কথা বলতে বলতে ওরা সবাই ফ্লাইটের বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। তিষ্যা দেখল গেটের সামনে জোর হইহল্লা চলছে। পুলিসের ইউনিফর্ম পরা মোটাসোটা একজন ভদ্রলোক স্থানীয় ভাষায় সকলকে জোর ধমক ধামক করছেন। প্রবীর বাবু ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা কে বললেন আমার বস শিনিভাসন। ওদের দেখতে পেয়ে শিনিভাসন প্রবীর বাবু কে লক্ষ্য করে ইংলিশ এ বললেন "তুমি তো দেখছি ওয়ার্থলেস প্রবীর, একটা বেসিক সার্চ পর্যন্ত করতে জান না। এতক্ষনেও মার্ডার ওয়েপনটা পেলে না।" প্রবীর বাবু বললেন" তা পাইনি স্যার কিন্তু কিছু ইন্টেরেস্টিং ক্লু পেয়েছি।" প্রবীর বাবু শিনিভাসন কে সবিস্তারে রশীদ খানের শেষ ইমেল এবং তার সাথে খুনের সময় ঘটিত যোগ খুলে বললেন। তারপর বললেন ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার দু একটি বিশ্লেষণের কথা উল্লেখ করলেন। শিনিভাসন ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকালেন। প্রবীর বাবু বললেন উনি কয়েকটা কেসে "আই জি অরুন বসু কে হেল্প করেছেন। ওনার ডিডাকশন পাওয়ার অসাধারণ।" শিনিভাসন তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন "আমাদের ডিপার্টমেণ্ট যথেষ্ট এফিসিয়েন্ট। কলকাতা পুলিসের মত অ্যামেচারের হেল্প নিয়ে কেস সল্ভ করতে হয় না।" প্রবীর বাবুর দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললেন "কোন সাহসে তুমি কেসের গোপন কাগজ পত্র, সাক্ষী প্রমাণ একজন আউটসাইডারকে দেখিয়েছ।" এটা ইন্টারন্যাশনাল কেস। ঈজিপ্ট অ্যাম্বাসী জানতে পারলে তোমার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। " ম্যাজিশিয়ান গুপ্তাকে বললেন "আপনি বাইরে গিয়ে বসুন, পুলিসের ব্যাপারে নাক গলাবেন না, সাক্ষ্যপ্রমাণ টেম্পারিং এর দায়ে আপনার বিরুদ্ধে কেস দিতে পারি জানেন?" এরকম অপমান জনক কথা শুনে তিষ্যা সঙ্গে সঙ্গে বাইরের দিকে রওনা দিল। কিন্তু ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা শান্ত গলায় বললেন খুনি কে কি আপনারা এখানে গ্রেপ্তার করবেন ? না মালয়েশিয়া বা ঈজিপ্ট গভর্নমেন্টকে ইনফর্ম করবেন?" প্রবীর বাবু চমকে উঠে বললেন "আপনি কি কিছু সন্দেহ করছেন।" কিন্তু তাকে কথা শেষ না করতে দিয়ে শিনিভাসন ঠান্ডা গলায় কামেশ কে বললেন "কামেশ এক্ষুনি বাইরের লোকজন বের করে দিয়ে জায়গা খালি কর। বডি মর্গে পাঠানোর ব্যাবস্থা কর, আমি ঈজিপ্ট কন্সুলেটে ফোন করেছি ওরা বলেছে অটোপ্সি এখানে করার দরকার নেই বডি ওরা নিয়ে যাবার ব্যাবস্থা করবে। প্রবীর কে আমি এই কেস থেকে ডিসমিস করলাম। তুমি অফিসে ফিরে গিয়ে কেস রিপোর্ট লিখে ফেল, আমাদের তদন্তের রিপোর্ট আমরা ঈজিপ্ট গভর্নমেন্টকে পাঠিয়ে দেব তারপর ওদের পুলিস টেক-ওভার করবে। আমাদের কাজ শেষ।" তারপর কামেশের চোখে মুখে আপত্তির ছাপ দেখে বললেন "যা বলছি কর, এটা হলিউডের সিনেমা নয় যে দু ঘন্টায় কেস সল্ভ হয়ে যাবে।"
এরপর আর দাঁড়িয়ে থাকার মানে হয় না। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা আর তিষ্যা লাউঞ্চের দিকে রওনা দিলেন। একটু এগিয়ে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা হঠাৎ পকেট চাপড়ে বললেন এইরে মোবাইলটা বোধহয় ফ্লাইটে ফেলে এসেছি। শিনিভাসন কে বললেন "একবার ভেতরে যাচ্ছি মোবাইলটা আনতে" শিনিভাসন কামেশকে বললেন "তুমি সঙ্গে যাও।" কামেশ যথেষ্ঠ বিব্রত হয়ে পড়ল, কিন্তু বসের আদেশ অমান্য করতে না পেরে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার সঙ্গে ফ্লাইটের ভিতরে ঢুকল। পাঁচ মিনিট বাদে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বেরিয়ে এসে শিনিভাসন কে বললেন ধন্যবাদ। প্রবীর রাগে অপমানে ততক্ষনে বেরিয়ে অফিসের দিকে রওনা দিয়েছিল তার সাথে আর দেখা হল না।
-“হ্যালো তিষ্যা? কি ব্যাপার ফোন তুলছিস না কেন? আচ্ছা লোক তুই। খুনের খবর দিয়ে ফোন করলি, তারপর আর ফোন তুলছিস না? আমি এদিকে সাসপেন্সে মরে যাচ্ছি, কি হল খুনি ধরা পড়ল?“
-“তোর রেলগাড়ি থামল? তা হলে এক এক করে বলি। ফোন তুলছিলাম না কারণ পুলিশ অফিসার প্রবীর পাল জেরা করছিলেন, আমি আর বাবা সঙ্গে ছিলাম। আর খুনি ধরা পড়েনি, এক্ষুনি ধরা পড়বে তার চান্স কম। একটু আগে প্রবীরবাবুর বস শিনিভাসন এসেছেন। এসেই বলছেন এটা রুটিন এঙ্কোয়ারি। পুলিস নিজের প্রসেসে চলবে। এটা ক্রাইম থ্রিলার নয় যে কেউ দুঘন্টায় কেস সল্ভ করে বাহবা নেবে। এই সব দেখে হোপলেস লাগছে। তাই সরে এসে তোকে ফোন করছি। “
-“সেকি রে এখোন যদি খুনি ধরা না পড়ে তো আর কি করে ধরবে? একবার মালয়েশিয়া পৌঁছলে ত প্লেনের লোক জন কে কোন দেশে ছড়িয়ে পড়বে তার ঠিক নেই। এই শিনিভাসন লোকটা তো দেখছি একটি তৃতীয় সুর ষষ্ঠ সুর।“
-“সেই তো মনে হচ্ছে, অরুনকাকুর মত পুলিস অফিসার কমই হয়। এই লোকটা টিপিকাল সরকারী কর্মচারী। তবে কি জানিস রনি আমি এই খুনের ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছি।“
-“সেকি রে আমি ঠিক শুনছি তো? এরকম রিয়েল লাইফ জমজমাট ক্রাইমে তোর ইন্টারেস্ট নেই?”
-“কি জানিস ভিক্টিম রসিদ খান খুব একটা সুবিধার লোক ছিল না। “
-“সে ডিপ্লো্ম্যাটরা একটু সাদা কালো হয়। তাই বলে সকলেই একেবারে খারাপ হয়ে যায়না।“
-“না আমি ডিপ্লোম্যাট রসিদ খানের কথা বলছি না। তার আগে আরেকটা ইতিহাস আছে। এই রসিদ খান আসলে বাঙালি।“
-“মানে কলকাতার লোক?”
-“ না ঢাকার লোক, বাংলাদেশী। ইন্টারনেটে পড়লাম উনিশশো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় রসিদ খান গোপনে পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। অনেক বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবি, সাধারণ মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। ওই সময় রসিদ খান ছিল একটা বাংলাদেশী খবরের কাগজের রিপোর্টার আর এক মৌলবাদী দলের সদস্য যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল। জানিস বোধহয় এদেরকেই রাজাকার বলত। পাকিস্তান আর্মির মদতে এরা দেশের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহানুভুতিশীল লোকজনকে খুন করে। তারপর যখন পাকিস্তান দেখে যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত তখন যাবার আগে মরণ কামড় দিয়ে যায়। রাজাকার দের নিয়ে তৈরী হয় আলবদর দল। যারা বাংলাদেশের জ্ঞানী গুনী বুদ্ধিজীবিদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে। এই রশীদ খান ছিল সেই দলে।
-“মানে যুদ্ধের সাথে সরাসরি জড়িত নয় এরকম মানুষদের খুন করেছিল ? কেন?”
-“যাতে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের কোমর ভেঙ্গে দেওয়া যায়। ওরা চেয়েছিল বংলাদেশের বেস্ট ব্রেনগুলো ধংস করে দিতে। লেখক, কবি, সাংবাদিক, ডাক্তার,শিক্ষক সব রকম পেশার বেস্ট মানুষদের বেছে বেছে খুন করেছিল এই রাজাকাররা। “
-“তুই কি করে জানলি এই রশীদ খান একজন রাজাকার ছিল?”
-“গুগলে দেখলাম। দুহাজার দশে বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধোপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই রশীদ খানের বিরুদ্ধে অন্তত আঠারোটা খুনের অভিযোগ আছে। লোকটা কি নিষ্ঠুর ভাবতে পারবি না। যে খবরের কাগজের সাংবাদিক ছিল সেই পত্রিকারই তিনজন সাংবাদিক কে মানে নিজের সহকর্মীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে টর্চার করে খুন করেছিল। তাদের মধ্যে একজন মহিলা সাংবাদিক ছিলেন তাঁর ডিকম্পোস বডিটা পরে পাওয়া গিয়েছিল ব্রেস্ট দুটো কাটা অবস্থায়। জানিস রিপোর্টে বলছে ওই রশীদ খান নাকি জীবন্ত অবস্থাতেই ওই মহিলার ব্রেস্ট কেটে নিয়ে তারপর খুন করে।“
-“কি সাংঘাতিক। সত্যি এরকম হয় নাকি? এসব তো হলিউডের মুভিতে হয় বলে জানি।“
-“নারে আমার মনে হয় সত্যি হয়েছে। আরো শুনবি ? একজন হার্ট স্পেশালিস্টকে খুন করার আগে হার্ট খুবলে বের করে নেয়। একজন আই স্পেশালিষ্টের চোখ খুবলে তুলে নেয়।“
-“না না আর শুনতে চাই না আমার গা গুলোচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর কেউ লোকটাকে ধরল না?“
-“আরে ধরবে কি করে? বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগেই লোকটা পাকিস্থানে পালিয়ে যায়। তারপর এদেশ সে দেশ ঘুরে ইজিপ্টের পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হয়ে বসে। তারপর তো ইজিপ্টের এক মৌলবাদী দলে বড় গোছের নেতা হয়ে বসেছে। সলমন রুশদির স্যাটেনিক ভার্সেস নিয়ে সারা বিশ্বে যখন প্রতিবাদ হয় তখন রশীদ আর ওদের দল প্রতিবাদীদের মধ্যে অন্যতম ছিল। তাই রাজনীতিক হিসাবে রশীদ খানের একটা আন্তর্জাতিক পরিচিতিও আছে।“
-“আচ্ছা ইজিপ্টে তো রিসেন্টলি একটা পালাবদল হয় আর তারপর রশীদ খানের দল ক্ষমতায় আসে। তাই না?”
-“হ্যাঁ সেইজন্য বাংলাদেশ চাইলেও হয়ত রশীদ খানকে ওর দলের সরকার যুদ্ধপরাধী বলে হস্তান্তর করত না। যে লোকটার চল্লিশ বছর আগেই ফাঁসি হওয়া উচত ছিল তার অপঘাতে মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো সহানুভুতি জাগছে না।“
-“সহানুভূতি আমারও জাগছে না। কিন্তু খুনটা কে কিভাবে কি করে করল সেটা জানতে আমার খুব কৌতুহল হচ্ছে।“
-“সেটা যে আমারও হচ্ছে না তা নয়। তবে দেখেশুনে মনে হচ্ছে শিনিভাসন সে আশায় ছাই ফেলতে এসেছে।
-
(১২)
কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে ফ্লাইট ল্যান্ড করার সাথে সাথে তিষ্যা উঠে দাঁড়িয়ে কেবিন লাগেজ নামাতে যাচ্ছিল। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বাঁধা দিয়ে বললেন, “এখন বোস, ভীড়টা কমুক।“ তিষ্যা আশ্চর্য হয়ে দেখল বাবার নামার কোনো তাড়া নেই। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা সবার শেষে ধীরে সুস্থে নামলেন। তারপর লাগেজ বেল্টের দিকে না এগিয়ে গেটের সামনে একটা চেয়ারে বসে পড়লেন। তিষ্যাকেও বসতে বললেন। আর মাত্র দশ ঘন্টা পরে কুয়ালালাম্পুরে শো, অথচ বাবার হাবভাবে কোনো ব্যাস্ততা নেই দেখে তিষ্যা আশ্চর্য হল।
ফ্লাইটের লোকজন সবাই নেমে গিয়েছিল প্রায়। কেবিন ক্রুরা দু-চয়ার জন করে বেরিয়ে আসছিল। আদিলা, জারিনা বেরোনোর সময় তিষ্যাকে হাত নেড়ে বাই বলে গেল। তিষ্যা অলস ভাবে ওদের গমন পথের দিকে তাকিয়ে বাবার এই অদ্ভুত আচরণের কথা চিন্তা করছিল চমক ভাঙল ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার গলার স্বরে। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বাংলায় কাকে যেন বলছেন “আব্দুল ভাই আপনার হাতে একবার স্কিউয়ারড্ চিকেন উইথ পীনাট্ সস্ খাওয়ার ইচ্ছা রইল।“
তিষ্যা তাকিয়ে দেখল মাস্টার শেফ আবদুল ম্যাজিশিয়ান গুপ্তের কথায় চমকে ফিরে তাকিয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার বাংলা কথার অর্থ তিনি বুঝতে পেরেছেন। আবদুলের মুখের রঙ অতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। প্রথমে তার চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল, তার পর মুখের সব রক্ত নেমে গিয়ে সমস্ত মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। প্রায় তিরিশ সেকেন্ড পর আব্দুল ইংরাজীতে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তাকে বললেন “আপনি কি বলছেন, আমি বুঝলাম না।“ যদিও তিষ্যা বুঝতে পারল আব্দুল মিথ্যা বলছেন। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা স্মিত হেসে আবার বাংলাতেই বললেন “আপনার সাথে কিছু কথা আছে, যা পাঁচকান না হওয়া আপনার পক্ষে ভাল তাই বাংলাতে বলছি। আপনি যদি না বোঝার ভান করেন তা হলে সর্বসমক্ষে আমাকে কথাগুলো ইংলিশেই বলতে হবে। আর তা না চাইলে চলুন সামনের ওই কফি শপে বসি।“
আবদুল একমিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে কফি শপের দিকে পা বাড়ালেন। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা নীরবে তাঁর পাশে হাঁটতে শুরু করলেন। তিষ্যা দেখল শো শুরু হবার সময় বাবা যেভাবে স্টেজের দিকে হেঁটে যান সেই রকম ভঙ্গীতে কফিশপের দিকে চলেছেন। তিষ্যা বুঝল যবনিকা উত্তোলনের সময় হয়েছে। সে হ্যান্ড লাগেজ দুটো তুলে নিয়ে দুরুদুরু বুকে বাবাকে অনুসরন করল।
তিনটে ব্ল্যাক কফি অর্ডার দিয়ে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা আবদুলের দিকে ফিরে হাল্কা গলায় জিজ্ঞেস করলেন ---“আপনি বাংলাদেশে ছিলেন?
আবদুল মাথা নাড়লেন। বললেন “আমি বাংলাদেশী, পেটের টানে বহুদিন ঘরছাড়া।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্ত বললেন “আমি কলকাতায় থাকি কিন্তু আমার দেশের বাড়ি পাবনা জেলার কুঁচেমারা গ্রামে। ঠাকুমা, ঠাকুর্দা ওখানেই থাকতেন। আমার বাবা কলকাতায় চলে আসেন। কিছু জ্ঞাতি খুড়তোতো জেঠতুতো ভাই এখোনো দেশের বাড়িতে আছেন। আবার মায়ের দিকে কিছু আত্মীয়স্বজন আছেন ঢাকায়।“
আবদুল একটু চুপ করে থেকে বললেন “আমার বাসা ছিল পাবনায়। বহুদিন যাই না। সে বাসা আছে কি নাই জানিও না।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্ত এবার সোজাসুজি আবদুলের চোখের দিকে তাকালেন। খুব শান্ত ভাবে ধীরে ধীরে বললেন “রশীদ খানকে আপনি খুন করেছেন। ওয়েপ্ন আর অপারচুনিটি দুটোই আমি খুঁজে পেয়েছি।মোটিভ টা নিয়েই এখোনো কিছুটা ধন্ধ আছে। আশা করছি আপনি আলোকপাত করবেন।“
আবদুল বললেন “প্রথমত কোনো প্রমাণ নেই আমি খুন করেছি। আপনার কাছে যদি প্রমাণ থাকে তবে পুলিসে যান না। আর যদি বা আমি খুন করেই থাকি সে ব্যাপারে আলোকপাত করে আমি নিজের কবর খুঁড়ব কেন?”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা তার পেটেন্ট নেওয়া হাসিটা সারা মুখে ছড়িয়ে বললেন “পুলিসে যাইনি তার কারণ শিনিভাসন কোনো কথা বলার সুযোগ দিল না। ইজিপ্ট বা মালয়েসিয়া পুলিসকে সব জানাবো কি না সেটা নির্ভর করছে এখনকার আলোচনার ফলাফলের উপর। আর একটা কথা আমি আপনাকে জানিয়ে রাখি আমি যদি কখওনো এই মার্ডার কেসের সাক্ষী দিতে যাই তবে আজকের কথোপকথনের কোনো অংশ আমি ব্যাবহার করতে পারব না। কারণ আইনের ভাষায় সেটা হবে হেয়ার সে যা আদালতে গ্রাহ্য নয়। কাজেই আপনি ইচ্ছা করলে আমরা আলোচনা চালিয়ে যেতে পারি।“
আব্দুল চুপ করে রইলেন। উঠে যাবারকোনো লক্ষন দেখালেন না, আবার কোনো কথাও বললেন না।
তিষ্যা বলে উঠল “অপারচুনিটির কথা কি বলছিলে বাবা? রশীদ খান যখন খুন হন তখন তো আবদুল কিচেনে ছিলেন।জারিনা সাক্ষী ছিল। “ তিষ্যা তখোনো সৌম্য দর্শন বাঙ্গালী মাস্টার শেফ কে খুনি বলে মেনে নিতে পারছিল না।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্ত বললেন “রশীদ খান যে তিনটে বারো মিনিটের পর খুন হন সেই কনক্লুশনে আমরা পৌঁছই ওই ই-মেলটার জন্য। ই-মেল টা তিনটে বারো তে পাঠানো হয়েছিল। কাজেই সবাই ধরে নেয় ততক্ষন রশীদ খান জীবিত ছিলেন। কিন্তু ওই ই-মেলটা একটা ট্রিক। ওটা রশীদ খান শুরু করেছিলেন কিন্তু শেষ করে সেন্ড করার আগেই তার মৃত্যু হয়। চালটা চমৎকার ছিল কিন্তু আমার মত আরেকজন বাংলা জানা লোকের জন্য চালটা ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এল। ইনফ্যাক্ট ওই ই-মেলটা থেকেই আমি প্রথম একটা ডিডাকশনে পৌঁছই। ই-মেলের ভাষাটা কি তোর মনে আছে?”
-তিষ্যা বলে “ওটা তো আয়েশাকে নিয়ে লেখা একটা মৌলবাদী ই-মেল। ভাষাটা কথ্য বাঙ্গাল ভাষা।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা একটু বিরক্ত হয়ে বললেন “তোরা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া কলকাতার ট্যাঁশগরুরা বুকিস বাংলা ছাড়া বাকি সমস্ত রকম বাংলা ডায়ালেক্টকে বাঙ্গাল ভাষা বা আদিবাসীদের বাংলা বলে ছেড়ে দিস। দুই বাংলার ভাষা মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ রকম বাংলা ডায়ালেক্ট হয় জানিস? পাবনা, কুশটিয়া, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ সর্বত্র কথ্য বাংলা ভাষার রকমফের আছে। একই বস্তুর অঞ্চলভেদে নাম বদলে যায়। তোরা তো কথার মধ্যে অর্ধেক ইংরাজী শব্দ বলিস তোরা আর অন্য ডায়ালেক্টের খবর কি রাখবি? “
মালয়েসিয়া এয়ারপোর্টের কফিশপে, একজন সাম্ভাব্য খুনিকে সামনে বসিয়ে বাংলা ভাষা চর্চার বৈঠক তিষ্যার কাছে খুব আশ্চর্য মনে হল। তাই ট্যাঁশগরু ইত্যাদি অপমানজনক মন্তব্য হজম করে ও অধৈর্য্য হয়ে বলল “কিন্তু এর সাথে ই-মেলটার কি সম্পর্ক?“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “ই-মেলটা মন দিয়ে পড়ে বুঝতে পারি ওটা একহাতে লেখা নয়। ওতে দুজনের হাত পড়েছে। কি ভাবে বুঝলাম জানিস? ঐ ডায়ালেক্টের রকম্ফের দেখে। ই-মেলের প্রথম দিকে আয়েশা কে উল্লেখ করা আছে মাইয়া বলে। যার মানে তোদের বুকিস বাংলায় মেয়ে। কিন্তু শেষ লাইনে মেয়ে বোঝাতে লেখা হয়েছে ছেমড়ি। ছেমড়ি মানেও মেয়ে তবে ছেমড়ি কথা টা ব্যাবহার করেন পাবনার লোকে।আমার ঠাকুমা পাবনার মানুষ, চিরকাল বলেছেন ছাওয়াল, ছেমড়ি। দিদিমা ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন বলতেন পোলা, মাইয়া। এখন কথা হল দুই লেখকের একজন তো রশীদ খান। আরেকজন কে? সেই কি তাহলে খুনি? রশীদ খানের জীবিতাবস্থায় কে তার পার্সোনাল ট্যাবলেট থেকে তার অর্ধ সমাপ্ত ই-মেল সম্পুর্ন করবে। তখন মনে হল নিশ্চয়ই খুনের পর খুনি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে মেলটা শেষ করে সেন্ড করেছে। একটা জোরালো উদ্দেশ্য অবশ্যই খুনের সময়টা গুলিয়ে দেওয়া। এই ই-মেলটা থেকে দুটো সিন্ধান্তে পৌঁছেছিলাম। এক খুনটা তিনটে দশের আগে হয়েছে। দুই খুনি বেশ ভালো রকম কথ্য বাংলা জানে এবং লিখতে পড়তে পারে।
এইখানে সন্দেহের বৃত্তটা ছোট হয়ে গেল। মারিও কে সন্দেহের তালিকা থেকে ছেঁটে ফেললাম। ও বাংলা জানলেও বুকিশ বাংলা জানবে, এরকম ডায়ালেক্ট সম্বৃদ্ধ কথ্য ভাষা নয়। আরমান আভেদিন দীর্ঘদিন রশীদ খানের সাথে আছেন। বসের থেকে তিনি বাংলা ভাষা শিখতেই পারেন কিন্তু সেক্ষেত্রে তিনি বসের ডায়ালেক্ট-ই শিখবেন অন্য অঞ্চলের ডায়ালেক্ট শিখবেন না।
তখন স্বভাবতই নজর পরে কেবিন ক্রু ইত্যাদিদের উপরে। আদিলা, জাহিরা, আব্দুল এদের প্রত্যেকের অপারচুনিটির অভাব ছিল না। আর একটা ব্যাপার আরমান, মোবারক বা মারিও র চেহারা দেখেই বলে দেওয়া যায় এরা কেউ বাঙালি নয়। কিন্তু মালয়েসিয়ান এয়ারলাইন্সের এয়ার হোস্টেজ, কেবন ক্রু বা শেফের চেহারা প্রাচ্য দেশীয়দের মত। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মালয়েসিয়া ইত্যাদি দেশের লোক জনের চেহারায় মিল আছে। বলে না দিলে কে কোন দেশের সহজে ধরা যায় না। তাছাড়া আমি জানতাম মালয়েশিয়ায় প্রচুর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী বাঙ্গালিরা কাজকর্ম করতে যান। কাজেই কেবিন ক্রুদের কেউ বাঙালি হওয়া আশ্চর্যের নয়।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্ত কফিতে চুমুক দিলেন। তিষ্যা সেই ফাঁকে জিজ্ঞেস করল “কিন্তু খুনের সময় গুলিয়ে দিলে কি লাভ?”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্ত আবদুলের দিকে ফিরে বলল্ব?””কি লাভ সেটা আপনি বলবেন না আমি বলব?”
আবদুল চুপচাপ শুনে যাচ্ছিল। ওকে সাম্ভাব্য খুনি চিনহিত করার পর ধরপাকড়ের কোনো ব্যাবস্থা না করে ম্যাজিশিয়ান গুপ্ত ওকে সামনে বসিয়ে গল্প শোনাচ্ছেন, এতে আবদুল খুব আশ্চর্য হচ্ছিল। অন্যদিকে টেনশনের ভাবটা কেটে দিয়ে একটু স্বস্তি ও পাচ্ছিল। ক্রমশ ওঁর ম্যাজিশিয়ান গুপ্তকে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছিল। তাই মৃদু হেসে বললেন আপনার ডিডাকশনটা শোনা যাক তারপর আমার কিছু বলার থাকলে বলব।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা আবার শুরু করলেন।
“ডিডাকশনের দ্বিতীয় ধাপ হল খুনের সময়। খুনের সময়টা তিনটে বারোর পরে করলে কার কার সুবিধা হয়? অবশ্যই ওই সময় যাদের অ্যালিবাই ছিল, তারা তখন অন্যত্র ছিল। মনে পড়ল আবদুল, জারিনা ওই সময় কিচেনে উপস্থিত ছিল, এবং দুজনেই সময় সংক্রান্ত তথ্যগুলো খুব অ্যাকিউরেটলি দিয়েছিল। কারণ ফ্লাইটের ওয়াই-ফাই এর সময় নির্ধারণ করতে তারা বার বার মাইক্রওভেনের ক্লকটা দেখছিল। তখন সন্দেহ হল এটা হয়ত আরেকটা চাল। কায়রো টাইম, মালয়েসিয়ান টাইম, ওয়াই-ফাই টাইম ইত্যাদি বিভিন্ন টাইম জোনের মারপ্যাঁচে খুনের সময় টা গুলিয়ে দেওয়া। সে কথা মনে হওয়াতে মোবাইল ফেলে আসার ছুতোয় আমি আবার কিচেনের মাইক্রোওভেনটা দেখতে গেলাম। দেখতে গিয়ে প্রমাণ পেলাম আমার ডিডাকশন ঠিক। মাইক্রোওভেনে তখন সময় দেখাচ্ছিল সাতটা আঠেরো। আমার ঘড়ি ইজিপ্টের সময়ে সেট করা ছিল। আমার ঘড়িতে দেখাচ্ছিল সাতটা তেইশ। অর্থাৎ মাইক্রোওভেনের ঘড়িটা পাঁচ মিনিট স্লো। কিন্তু জারিনা বলেছিল ওটা ইজিপ্ট ছাড়ার সময় ইজিপ্টের টাইম অনুসারে মেলানো হয়েছিল। এখন এখানে দুটো সম্ভবনা আছে। এক জারিনা ভুল তথ্য দিয়েছিল। সেই হয়ত খুনের মতলবে টাইমটা ইজিপ্ট ছাড়ার সময় ভুল সেট করেছিল। দ্বিতীয় সম্ভবনা জারিনা বা অন্য কেউ যে খুন করেছে সে পরে মাইক্রোওভেনের টাইম টা অ্যাডজাস্ট করেছে। যাতে মনে হয় খুনের সময় তিনটে বারো মিনিটে সে কিচেনে ছিল। কিন্তু আসলে তখন সঠিক সময় তিনটে সতেরো। “
তিষ্যা বলল “সব ই তো বুঝলাম কিন্তু খুন হল কিভাবে? তন্নতন্ন করে খুঁজেও স্টিলেরোটা পাওয়া গেল না।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্ত আবার তার পেটেন্ট নেওয়া হাসিটা হেসে বললেন “স্টিলেরো দিয়ে তো খুন হয়নি। ইন-ফ্যাক্ট মার্ডার ওয়েপ্নটাই হল এই কাহিনীর উপেক্ষিতা নায়িকা। সারাক্ষন আমাদের চোখের সামনে পড়েছিল কিন্তু আমরা দেখেও দেখিনি। মাইক্রো ওভেনের সামনে দাঁড়িয়ে সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ওভেনটা খুললাম একবার। ভেতরটা আমরা আগেও দেখেছিলাম। চিকেনের ছোট ছোট টুকরো স্কিউয়ারে গ্রিল করতে দেওয়া। প্রথম বার আমরা কিচেনে ছুঁড়ি কাঁটা খুঁজতেই ব্যাস্ত ছিলাম। স্টীলের স্কিউয়ারটা দেকেও দেখিনি। দ্বিতীয়বার মাইক্রোওভেনটা খুলতেই মনে হল আরে এটা তো স্টীলেরোর জ্যাঠামশাই। আমরা প্রথমে ভাবছিলাম অস্ত্রটা লুকিয়ে ফেলা হয়েছে তাই ছোটোখাটো স্টিলেরোর কথা মাথায় ঘুরছিল। এখন বুঝলাম অস্ত্র টা আসলে সরিয়ে ফেলা হয়নি, আমাদের সামনে এমন করে ফেলে রাখা হয়েছিল যাতে কারো মনেও না হয় এটা অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করা যায়। দ্বিতীয়বার স্কিউয়ারটা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখলাম অল্প হলেও রক্তের দাগ। সাধারণ ভাবে মনে হতে পারে চিকেন, বীফ স্কিউয়ারে গেঁথে গ্রিল করা হচ্ছিল কাজেই রক্ত টা চিকেন বা বীফের হতে পারে। কিন্তু ফ্রিজ টা চেক করে দেখলাম কোনো টাটকা মাংস তোলাই হয় নি। চিকেন, বীফ সব ই প্রসেসড্ এবং হাফ কুক। তাতে রক্ত লেগে থাকার সম্ভবনা নেই। তখন স্থির সিদ্ধান্তে এলাম স্কিউয়ারটা দিয়েই খুন টা করা হয়েছে এবং লেগে থাকা রক্তটা রশীদ খানের। স্কিউয়ার দিয়ে খুন করে আবার তাতে চিকেন গেঁথে গ্রিল করতে দেওয়ার আইডিয়াটা একমাত্র মাস্টার সেফের মাথা থেকেই বেরোতে পারে।“
তিষ্যা বলল “তা কেন আদিলা, জাহিরা, গ্যেদা যে কেই কিচেন থেকে স্কিউয়ারটা নিয়ে খুন করে আস্তে পারে। সকলের ই কিচেনে যাতায়াত ছিল।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্ত বললেন “তা ছিল। কিন্তু খুন করার পর ওরা স্কিউয়ারে চিকেন গেঁথে মাইক্রোওভেনে বসিয়ে দিতে পারে না। ওই কাজ টা শুধু মাস্টার শেফ পারে। এয়ার হোস্টেজরা ওই কাজ করলে তাদের মাস্টার শেফের জবাবদিহির মুখে পড়তে হত। তখন ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যেত।“
আব্দুলের দিকে ফিরে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন আপনি রসিদ খান কে লাঞ্চ সার্ভ করতে যান তিনটে দশে। লাঞ্চ দেবার সময় ই খুনটা করেন। সম্ভবত লাঞ্চে মেইন কোর্স আপনি খুব অল্প পরিমাণে নিয়ে গিয়েছিলেন। যাতে পরবর্তী কালে ম্রনে হয় রশীদ খান লাঞ্চ খাবার পর খুন হয়েছিল। ঘরে ঢুকেই আপনি স্কিউয়ার দিয়ে খুন টা করেন। তারপর স্কিউয়ারটা মুছে নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় আপনার ল্যাপটপের দিকে নজর পড়ে। অর্ধসমাপ্ত ইমেলটা ইংরেজী ফন্টে বাংলায় লেখা কাজেই এক ঝলক দেখেই আপনি ইমেলের বিষয়বস্তু বুঝতে পারেন। তখন আপনার মাথায় আরেকটা প্লান খেলে। অর্ধসমাপ্ত ইমেল টা শেষ করে আপনি সেন্ড করে দেন। যাতে মনে হয় ইমেল সেন্ড করা পর্যন্ত রশীদ খান জীবিত ছিলেন। আপনি যখন কিচেনে ফিরে যান মাইক্রো ওভেনের ঘড়িতে তখন তিনটে দশ দেখাচ্ছিল। জারিনার সাক্ষ্য অনুসারে তাই সাম্ভাব্য খুনের সময় অর্থাৎ তিনটে পনেরো নাগাদ আপনি কিচেনে ছিলেন। এইখানে আপনি আরেকটা ভুল করেছেন। পুলিশ আসার আগে যদি মাইক্রোওভেনের সময়টা ঠিক সময়ে ফিরিয়ে দিতেন তাহলে আমার পক্ষেও সাম্ভাব্য খুনির পরিচয় জানা শক্ত হত।"
আব্দুলের মুখের ভাবের খুব একটা পরিবর্তন হল না। মনে হল না তিনি ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার বক্তব্যের কোনো অংশ সমর্থন করছেন না। বরং মৌনং সম্মতি লক্ষনের মত মনে হল খুনটা তিনি এইভাবেই করেছিলেন।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা একটু থেমে আবদুলের দিকে তাকিয়ে বললেন “ওয়েপ্ন, অপারচুনিটি আমি খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু আপনার মোটিভটা কি? ফ্লাইটেও মধ্যে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে একজন কে খুন করলেন, আপনি তো জাত ক্রিমিনাল নন, একজন রেস্পেক্টেড মাস্টার শেফ। নিশ্চয়ই কোনো জোরালো মোটিভ থাকবে। আপনি এবং রশীদ খান দুজনেই বাংলাদেশী। সেজন্য প্রথমে মনে করেছিলাম হয়ত দেশে থাতে আপনাদের মধ্যে কোনো পুরোনো শত্রুতা ছিল তার শোধ নিতে খুনটা করেছেন। কিন্তু হিসাব করে দেখলাম রশীদ খান দেশ ছেড়েছেন প্রায় চল্লিশ বছর আগে। আপনাকে দেখে মনে হয় আপনার বয়স পঞ্চাশের বেশী নয়। কাজেই রশীদ খান যখন দেশ ছাড়েন তখন আপনার বয়স সাত আট বছরের বেশী নয়। তাই পুরোনো শত্রুতার মোটিভটা খুব জোরালো হচ্ছে না।“
তিষ্যা বলল “এমন ও তো হতে পারে ওনার সাথে রশীদ খানের পারিবারিক শত্রুতা ছিল। ওনার বাবা, মা বা কোনো নিকট জনের ক্ষতি করেছে রশীদ খান।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “কিন্তু একচল্লিশ বছরের ব্যাবধানে উনি রশীদ খানকে চিনলেন কি করে? বলিউডি সিনেমার মত পকেটে ফোটো নিয়ে ঘুরছিলেন?”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তের রসিকতায় আবদুল মৃদু হাসলেন। তারপর দীর্ঘক্ষনের নীরবতা ভেঙ্গে বললেন “রশীদ খান আমার মা কে বীভত্ষ্য ভাবে খুন করেছিল। কিন্তু শুধুমাত্র সেজন্য আমি এতদিন বাদে তাকে খুন করিনি। খুন করেছি তার কারন সে তার নিজের মাকে নির্মম ভাবে অত্যাচার করেছিল।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্ত জিজ্ঞেস করলেন “আপনি রশীদ খানের মা কেও চিনতেন? কোনো পারিবারিক যোগাযোগ ছিল?”
আবদুল ম্লান হেসে বললেন “না আমি গর্ভধারিনী মায়ের কথা বলছি না। মাতৃভূমির কথা বলছি। লোকটা মাতৃভূমির সাথে বিস্বাসঘাতকতা করেছিল। আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানেন কি? দেশের বেশীরভাগ মানুষ যখন দেশের স্বাধীনতার জন্য মরণপণ লড়াই করছিল তখন রশীদ খানের মত একদল শয়তান তলে তলে শত্রুপক্ষ কে সাহায্য করছিল। হেন কুকাজ নেই এরা করেনি।“
তিষ্যা বলে উঠল “হ্যাঁ আমি ইন্টারনেটে দেখলাম এই রশীদ খান নাকি আঠারো জন কে খুন করেছিল নৃসংশ ভাবে, এমনকি নিজের সহকর্মীদেরও রেহাই দেয় নি।“
আবদুল বিষন্ন গলায় বলল “তাদের-ই একজন হলেন আমার মা। সোনার বাংলা খবরের কাগজের রিপোর্টার ছিলেন আমার মা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবা যুদ্ধে গেলেন। মা একাই ঘর বার দুই সামলাচ্ছিলেন। বিজয়ের ঠিক দুদিন আগে মাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় রশীদ খান। আমার তখন সাত বছর বয়স, কিন্তু চিনতে ভুল হয়নি। আমার নানী থাকতেন আমাদের বাসায় তিনিও চিনেছিলেন। তারপর দশ দিন বাদে মায়ের ছিন্নভিন্ন দেহ পাওয়া যায়। ওই সাত বছর বয়সেই সে দেহ দেখে বুঝেছিলাম খুন করার আগে যতরকম নৃসংশ অত্যাচার করা সম্ভব তার কিছুই বাদ দেয়নি রশীদ খান আর তার দলবল।“
তিষ্যা চোখ বন্ধ করে শিউরে উঠল। মনে পরে গেল খা্নিক আগে ইন্টারনেটে পড়েছিল রশীদ খান স্তন কেটে মহিলা সাংবাদিককে খুন করেছিল। যে বীভত্ষ্য ঘটনা পড়ে ওর গা গুলিয়ে বমি আসছিল, সাত বছরের একটা বাচ্চার সেই দৃশ্য দেখে কি অবস্থা হয়েছিল ভেবে ও শিউরে উঠল।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্ত বললেন “আপনি রশীদ খান কে এতদিন বাদে চিনলেন কিভাবে? আপনি যে খুনের পরিকল্পনা করে এই ফ্লাইটে উঠেছিলেন তা তো মনে হচ্ছে না। রশীদ খানের সেক্রেটারী বললেন উনি মাত্র দুদিন আগে মালয়েসিয়া যাওয়ার সিন্ধান্ত নেন।“
আবদুল বললেন “না রশীদ খান কে এত বছর পর আমার চেনা সম্ভব হত না। যদি না কিছুদিন আগে আমার দেশে যুদ্ধপরাধীদের বিচার শুরু হত। আমি বিদেশে থাকলেও দেশের পত্র পত্রিকা পড়ি, খবরাখবর রাখি। যুদ্ধপরাধীদের তালিকায় রশীদ খানের নাম আর কুকীর্তির কথা পড়ে বুঝতে পারি এই আমার মায়ের খুনি। কোনো একটি পত্রিকাতে ওর ছবিও ছাপে। তখন ই জানতে পারি লোকটা ইজিপ্টের ডেমোক্রেট। ফ্লাইটে ওঠার আগে আমি জানতামও না যে রশীদ খান এই ফ্লাইটে যাচ্ছেন। কিন্তু ওকে দেখে মনে হল এরকম সুযোগ আর আসবে না। একচল্লিশ বছর পর রাস্কেলটাকে হাতের নাগালে পেয়েছি। এখন ছেড়ে দিলে আবার আমরা দুজনে পৃথিবীর দুপ্রান্তে ছিটকে যাব।“
আবদুল কফিতে চুমুক দিলেন। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় রশীদ খানের নাম আছে মানে তো যুদ্ধাপরাধী হিসাবে তার বিচার হত। দোষ প্রমাণ হলে রাষ্ট্রই তার সাজা দিত। আপনার খুন করার দরকার ছিল না।“
আবদুল মাথা নাড়লেন। “ইজিপ্টে নতুন পালাবদলের পর যে আশায় ছাই পরেছে। রশীদ খান নতুন শাসক গোষ্ঠীর একজন চাঁই। ইজিপ্ট গভর্মেন্ট তাই তাকে বাংলাদেশ গভর্মেন্টের হাতে তুলে দিতে রাজী নয়। আমি একচল্লিশ বছর অপেক্ষা করে আছি বিচারের জন্য। তারপরেও যদি বিচার শুরুই না হয় আর কবে হবে বলুন? রশীদ খান যদি ব্যাক্তিগত আক্রোশে আমার শুধু আমার মাকে খুন করত তাহলে হয়ত আমি ওকে এত বছর পর খুন করতাম না। কিন্তু লোকটা তিরিশ লক্ষ্য মানুষের কাছে যুদ্ধাপরাধী। এই মৌলবাদী দলগুলো নির্লজ্জের মত রাজাকারদের বাঁচাতে উঠে পরে লেগেছে। এরা রশীদ খান আর তার মত অনেক রাজাকারের বিচারটা শুরুই হতে দিল না। আর কি উপায় ছিল বলুন আমার হাতে? আমি সত্যি প্রতিশোধ নেব বলে রশীদ খানের পিছনে ধাওয়া করিনি। কিন্তু আল্লাহ্ ওকে আমার সামনে এনে ফেললেন।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “দেখুন যুদ্ধপরাধীর বিচারের পর মৃত্যুদন্ডের সাজা আর কাউকে খুন করে তার কৃতকর্মের সাজা দেওয়া একরকম নয়। প্রথম ক্ষেত্রে সারা বিশ্ব জানল লোকটা অপরাধী তাই শাস্তি হল। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সে সাজা দিল অর্থাৎ যে খুন টা করল সবাই তাকেই ঘৃণা করল যে সাজা পেল তাকে নয়। যুদ্ধপরাধীর সাজা মানে প্রতিশোধ নয় প্রতিবাদ। তাই আপনার খুন করাটা আমি সমর্থন করছি না।“
তিষ্যা জোরালো গলায় বলে উঠল “আচ্ছা প্রতিবাদ না হোক, প্রতিশোধ-ই বা নয় কেন। আঠারোজন মানুষ, যারা অনেকেই দেশের মুক্তির জন্য লড়েছেন তাদের মৃত্যুর প্রতিশোধের কি দরকার নেই?” তিষ্যার গলা শুনে মনে হল বাবা আবদুল কে ধরিয়ে দেবে এটা ও মেনে নিতে পারছে না। ওর পূর্ণ সহানুভুতি আছে আবদুলের জন্য।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “সে তর্ক থাক। তবে ভারতের পুলিস তো আমার কথা শুনলোই না, আর একজন মৌলবাদী, নারীবিদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, যুদ্ধোপরাধীর জন্য আমি কাজকর্ম ফেলে দেশ, বিদেশের পুলিসের কাছে ছুটতে পারব না। “
আবদুলের দিকে ফিরে বললেন “যজি কখোনো কোনো দেশের পুলিস ঘটনাটা তদন্ত করে বের করতে পারে ভাল। এবিষয়ে পুলিস কোনো প্রশ্ন করলে আমি যা জানি বলব। কিন্তু নিজে থেকে কাউকে কিছু বলতে যাচ্ছি না।“
তারপর তিষ্যার গোমড়া মুখ লক্ষ্য করে বললেন “আর স্কিউয়ারটা তো আপনি এতক্ষনে ধুয়ে মুছে সাফ করে ফেলেছেন। খুনের অস্ত্র না পেলে মনে হয়না কোনো দেশের পুলিস তদন্তে সফল হবে।“
এইকথা শুনে তিষ্যার মুখে হাসি ফুটল। সেই হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে আবদুল বললেন “পুলিস জিজ্ঞেস করলে আপনি সত্যি কথা বলবেন। আমার মা, বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছিলেন। আমি না হয় যুদ্ধোপরাধীকে মেরে মরব। “
কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে আবদুল উঠে দাঁড়ালেন। তিষ্যা কে বললেন “তোমার মত নতুন প্রজন্মের একজনের আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধোপরাধীর বিচার নিয়ে আগ্রহ আর সহানুভূতি দেখে খুব ভাল লাগল।“ ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার সাথে করমর্দন করে বললেন “আসি এখন। “
(সমাপ্ত)
ঋণস্বীকার- চরম উদাসের "এসো নিজে করি -০৭ কিভাবে স্বর্গে যাবেন / How to Go to Heaven (without trying hard)" পোস্টটি থেকে কিছু তথ্য সংগৃহীত।
মন্তব্য
বাহ! অন্যরকম লাগলো
চমৎকার, রহস্যগল্পের সুগার কোটিঙ দিয়ে এভাবে ইতিহাস লেখা যায় ভাবতেই পারিনি,
দুর্দান্ত কাহিনী লিখেছেন, দুনিয়াজুড়ে রশিদ খানেদের এমন গতি হোক
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
দুর্দান্ত, শাস্তি ভাল লেগেছে
ইসরাত
গল্প যেমন-ই হোক, ইতিহাস-কে তুলে ধরার জন্য
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
মিষ্টির মধ্যে যেভাবে ট্যাবলেট পুরে দিয়ে খাওয়ালেন তার জন্য আপনার টা প্রাপ্য।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
নতুন মন্তব্য করুন