ডিল থাকে মিসিসিপির মেরিডিয়ানে, গরমের ছুটিতে ওর র্যাচেল খালার কাছে বেড়াতে এসেছে। এখন থেকে প্রতি গ্রীষ্মেই আসবে ও।
ওর পরিবার আসলে মেকম্বেরই মানুষ, ডিলের মা কাজ করে মেরিডিয়ানের একজন ফটোগ্রাফারের সাথে। ওর মা আবার ওর ছবি দিয়ে ‘সুন্দর শিশু’ প্রতিযোগিতাতে পাঁচ ডলারও জিতেছিল! যেটা উনি পুরোটাই ডিলকে দিয়ে দেন। আর ডিলও কম যায় না, ও সেই পুরো টাকাটাই সিনেমা দেখে উড়িয়েছে!
“প্রভু যীশুর সিনেমা ছাড়া এইখানে আবার কোনও সিনেমাই দেখায় না, তা তুমি কি কি দেখেছো?” ডিলের ব্যাপারে জেমের ধারণাই বদলে গেলো যখন ও শুনল যে ডিল ড্রাকুলা সিনেমাটা দেখে ফেলেছে! বেশ সম্ভ্রমের সাথেই ও ডিলকে সিনেমার গল্পটা শুনাতে বলল!
ডিলকে নিয়ে আমাদের কৌতূহলের শেষ ছিলোনা! ওর জামাকাপড়ও আমাদের থেকে অন্যরকম, নীল লিনেন শর্টস, যেটা আবার বোতাম দিয়ে ওর শার্টের সাথে লাগানো। চুলগুলো শীতকালের বরফের মতো ফ্যাকাসে সাদা, মাথার সাথে হাঁসের পালকের মতো লেগে থাকা! ও আমার চেয়ে এক বছরের বড় কিন্তু লম্বায় আমার ধারে কাছেওনা! ড্রাকুলার গল্প বলতে বলতে ওর নীল চোখের রঙ বদলে যাচ্ছিলো অদ্ভুতভাবে, হঠাৎ হঠাৎ নিজের মনে হেসে উঠে মাথার মাঝখানের খাড়া খাড়া চুলগুলো টেনে ধরছিল! গল্পের শেষে ড্রাকুলা ধূলায় মিলিয়ে গেলে জেম বলল সিনেমাটা ওর কাছে বইটার চেয়েও ভালো বলে মনে হয়েছে।
ডিলকে জিজ্ঞেস করলাম ওর বাবা কই থাকে? ওর এতো গল্পের কোথাওই ওর বাবার কথা ছিলোনা।
“আমারতো নাই, তাই বলিওনাই!” ডিল বলে উঠলো।
“মরে গেছে?”
“না...”
“মরে যেহেতু যান নাই তার মানে তোমার বাবাতো একজন আছে, তাই না?”
ডিল লাল হয়ে যাচ্ছিলো আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে, জেম সেটা দেখে আমাকে চুপ করিয়ে দিলো। ওর কথা শুনে মনে হলো ওর ডিলকে বেশ পছন্দ হয়েছে।
এরপর থেকে আমাদের গ্রীষ্মের বাকি ছুটির একটা জুত মতো রুটিন তৈরি হয়ে গেলো: পেছনের উঠানে জোড়া চায়নাবেরি গাছের মাঝে আমাদের গাছঘরটাকে আরও শক্তপোক্ত করা, নানারকম হট্টগোল থেকে শুরু করে আমাদের নাটকগুলো নিয়ে আরও কাজ করা। আমরা অলিভার অপটিক, ভিক্টর অ্যাপলটন আর এডগার রাইজ বারোজের নাটকগুলো নিজেদের মধ্যে অভিনয় করতে খুব ভালবাসতাম, এখন ডিল থাকায় আমাদের আরও সুবিধা হলো।
ছোট বলে জেম যে চরিত্রগুলো সবসময় আমার উপর চাপিয়ে দিতো, এবার তার ভাগ পেলো ডিল, যেমন ধরো, টারজানের শিম্পাঞ্জী, রোভারবয়েজে মিঃ ক্র্যাব-ট্রি, টম সুইফটের মিঃ ডেমন, সব ডিলের জন্য বরাদ্দ হলো! তখনই আমরা বুঝতে পারলাম, আমাদের ডিলকে আসলে বিখ্যাত জাদুঘর মারলিনের ছোটখাটো সংস্করণ বলা যায়, যার মাথা গিজগিজ করছে দুষ্টুমি বুদ্ধিতে আর উলটাপালটা কাজকর্মের ইচ্ছায়!
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যা হয় আরকি, আমাদের সবরকমের কাজের পরিকল্পনার ঝুলিও একসময় শেষ হয়ে এলো। অগাস্টের শেষদিকে যখন আমরা দুষ্টু বুদ্ধির অভাবে প্রায় হাত পা গুটিয়ে বসেই আছি, তখন ডিল বুদ্ধি দিলো বু র্যাডলিকে খেপানোর! তাতে যদি সে ব্যাটা গর্ত থেকে বের হয়!
র্যাডলিদের বাড়িটা ডিলের খুবই পছন্দের জায়গা ছিলো। আমরা ওকে যতোই বুঝাই, যতই ভয় দেখাই না কেন, আলো দেখে পোকা যেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগোয়, তেমনিভাবে ডিলও র্যাডলিদের বাড়ির কোণের ঐ ল্যাম্পপোস্টের নীচে গিয়েই দাঁড়াবে। ঐ বাড়ির দিকে আমাদের দৌড় ঐ অতদূরই, আর ঐখানে পোস্ট জড়িয়ে ধরে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকাই ডিলের পছন্দের কাজ হয়ে গেলো।
আমাদের বাড়িটা ছাড়িয়ে গিয়ে র্যাডলিদের বাড়িটা থেকে রাস্তাটা বলতে গেলে একটা তীক্ষ্ণ মোড় নিয়েছে। একটু দক্ষিণে যাও, ওদের বারান্দাটা মুখোমুখি পড়বে, এরপরেই ফুটপাথটা বেকে ওদের উঠান ধরে এগিয়ে গেছে। বাসাটা ছিলো নিচু, একসময় হয়তো সাদাই ছিলো, একটা বড় বারান্দা আর সবুজ ঝিলমিল ওয়ালা জানালা। কিন্তু সেই সাদা এখন হয়ে গেছে আমাদের লেখার স্লেটের মতো ধূসর, তার চারপাশের উঠোনের মতোই। খোসপাঁচড়ার মতো মরা চামড়া ঝড়ে পড়ছে বারান্দার সারা দেওয়াল জুড়ে, ওক গাছের ছায়ায় দিনের বেলাতেও জায়গাটা ঠাণ্ডা, অন্ধকার! সামনের উঠোনের ভাঙ্গা খুটিটা মদখোর পেয়াদার মতো ঝুঁকে ঝুঁকে উঠান পাহারা দেয়। অবশ্য উঠান বললে এখন হাসি পাবে, পাগলা বাজরা আর শশতামাকে একেবারে ভরে গেছে।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
johnson grass – বাজরা বা জোয়ার; rabbit-tobacco – এর কোন বাংলা নাম নেই, আমি রাখলাম শশতামাক।
মন্তব্য
দুই বছর তিন মাস পর!
তাওতো চাকা ঘুরতে শুরু করেছে।
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
বইটা শেলফেই আছে, এখনও পড়া হয়নি। ভাবছি আপনার অনুবাদটাই আগে পড়বো।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
ধন্যবাদ!
এই বইটা একটা অসাধারণ বই, জানিনা এর প্রতি সুবিচার করতে পারবো কিনা অনুবাদে! কিন্তু চেষ্টা থাকবে।
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আপনার বর্ননা খুবই সুন্দর ও সাবলীল। তৃতীয় পর্বের অপেক্ষায় আছি এবং অপেক্ষা সবসময়ই ক্লান্তিকর। শুভেচ্ছা রইলো।
-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী
অনেক ধন্যবাদ। তৃতীয় পর্ব অনুবাদে হাত দিচ্ছি আগামীকাল। আশা করি তিন চারদিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন।
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ভাল হচ্ছে, খাসা হচ্ছে
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
থেঙ্কুপেঙ্কু দমুদিদি!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
নতুন মন্তব্য করুন