বাঙ্গালির ডিখ্যাতিফিকেশন

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৪/০১/২০০৮ - ৬:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১. খ্যাৎনামা
মানুষ হিসেবে আমি প্রাচীন, অচল। কমপক্ষে এক প্রজন্ম আগে আটকে আছি। আমার মারকুটে বাবা অত্যন্ত যত্নের সাথে শিখিয়েছিল, লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে। সকাল হলেই ছিল আমার নাম ধরে বিকট এক ডাক, আর সাথে ফ্যান বন্ধ করে দেওয়া। ঘুম ভেঙে বিবিসি রেডিও শুনতে পেতাম প্রতি সকালে। সরকারী চাকরিজীবি বাবার সিংহভাগ উপার্জন চলে যেত আমাদের দুই ভাইয়ের স্কুল আর প্রাইভেট টিউটরের পেছনে। ছোট মামা স্কলারশিপের টাকা দিয়ে একটা আটারি কিনে দিয়েছিল। বয়স তখন বছর সাতেক হবে হয়তো আমার। জীবনে আর কখনও কোন টিভি গেইম হাতে পাইনি। আমার মিতব্যয়ী বাবা প্রতি বছর হাজার কয়েক টাকা তুলে রাখতো একুশে বইমেলার জন্য, মেলা এলে পূর্ণ স্বাধীনতায় খরচ করতাম। ঘরে সম্পদ বলতে ছিল শুধু কয়েক শেলফ বই। প্রতি বেলায় এক তরকারি, এক ভাজি, আর ডাল ছিল মেন্যু। ভোগ বলতে জুম্মাবারে বুটের ডাল দিয়ে গরুর মাংস। আর প্রাত্যহিক বিনোদন বলতে বইগুলো নাড়াচাড়া করা। সান্ধ্য আইন মেনে ঘরে ফিরতে হত। হাজার অপছন্দ সত্ত্বেও ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পড়ার টেবিলে বসে থাকতে হত। অন্যথায় শাস্তি ছিল বেতপেটা, আর মেনে চলার পুরস্কার ছিল সেই শাস্তি থেকে রেহাই।

এমনি করেই বেড়ে ওঠা এই আমি যে খ্যাৎ আর বিব্রতকর হব, তাতে অবাক হবার কিছু নেই। প্রবাস বলতে সবাই বাইরের কোন দেশকে বোঝে। আমার কাছে প্রবাসের সংজ্ঞা মিলে যেতে না পারায়, স্বকীয়তাকে সংকুচিত করে রাখায়। সে-অর্থে আমার প্রবাস জীবনের সূচনা দেশে থাকতেই। উন্নত ব্যক্তি, সমাজ, ও রাষ্ট্রের উৎকর্ষের সামনে নিজেকে অপ্রস্তুত অবস্থায় আবিষ্কার করেছি অগণিত বার। খেতু থেকে আধুনিক হবার চেষ্টা খুব একটা গা লাগিয়ে করিনি, তবে চিনেছি অনেক খ্যাতাচারই। মনটা একদিকে ছোট হয়ে যায়, আবার আরেক দিকে ভেবে ভাল লাগে যে আমি অচল হলেও খুব দুর্লভ কোন প্রাণি নই।

২. কুলির কাপে ঝড়
আমি মানুষ হিসেবে ভীতু বলেই কিনা জানি না, আমার শখের বিষয় বা বস্তুগুলো কিছুটা নিরীহ। লোকের গাড়ি কেনার শখ থাকে, আমার শখ একটা সাইকেলের। কেউ সাগরপাড়ে বেড়াতে চায়, আমি চাই স্রেফ একটা ডিঙি নৌকা। সবাই বাড়ি চায়, আমি চাই ছোট্ট, সুন্দর একটা ছোটঘর। খালার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে একবার সুন্দর এক ‘বিশ্রামাগার’ ঢোকার সৌভাগ্য হল। আলতো করে এদিক-ওদিক হাত বুলাতে বুলাতে হাঁটছিলাম। হঠাৎ চোখ আটকে গেল বেসিনের উপর রাখা একটা ছোট্ট কাপে। গবেষণা করে বের করলাম, এই কাপের কাজ কুলকুচিতে সাহায্য করা। আজলা তুলে পানি নিয়ে কেউ কুলি করে না এই যুগে। শিখলাম।

৩. সুড়ুৎ সুড়ুৎ সুড়ুৎ
এবার বলছি চায়ের কাপের কথা। না, চা খাওয়ার সময় হাজারো আয়েশ সত্ত্বেও সুড়ুৎ করা যাবে না। নানি যদি কাপ থেকে পিরিচে ঢেলে দেয়, তাহলে হয়তো ফু দিয়ে খেয়ে নেওয়া যায়, তবে তা খুবই সন্তর্পনে হতে হবে। প্রকাশ্যে কখনো নাকি চায়ে ফু দেওয়া যায় না, পিরিচে নেওয়া তো দূরের কথা। মন যত উচাটনই হোক, এক থেকে দেড় চামচের বেশি চিনি নেওয়া যায় না। জ্বালার শেষ এখানেই নয়। আরামে নাকি সশব্দে আহ্‌ করাও বারণ। চা তবু গরম গরম পান করতে হবে। উফ, এত নিয়মের বালাই কেন?

৪. মন্ডা-মিঠাই যত চাও
মিষ্টি খাওয়ার বাতিক পেয়েছি দাদার কাছ থেকে। দাদা ছিল গ্রামের ডাক্তার। উত্তরাধিকারসূত্রে একটা শিক্ষিত বাপ, পরার্থপর হিসেবে রেখে যাওয়া সুনাম, আর কিছু বদভ্যাস ছাড়া এমনিতেও কিছু পাবার কথা না। দাদার উৎপাতে নাকি মিষ্টিওয়ালা গ্রামে ঢুকে মসজিদ পেরিয়ে বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারতো না। তার আগেই হাঁড়ির মিষ্টি খতম। ম্যাট্রিকের রেজাল্টের পর বিষম আনন্দে আমার বাবা অনেক মিষ্টি এনেছিল। আমার আনন্দ দেখে সবাই খুব খুশি। আমি যে বেশি নম্বরের চেয়ে বেশি মিষ্টি দেখে আনন্দিত, তা খোলাসা করে বললে মনে হয় না আর লেখাপড়া করা হত। যাক সে কথা। মিষ্টিও নাকি এক বসায় বেশি খাওয়া অনুচিত। হাত লাগিয়ে খাওয়া তো চূড়ান্ত অসম্মানজনক। দাদার যুগই ভাল ছিল, এই ভাবতে ভাবতে চামচ তুলি আজও।

৫. টয়োটা ক্যামরি
সুযোগ হলে কেউ ‘ডুড, হোয়্যার ইজ দ্য পার্টি’ মুভিটা দেখে নিয়েন। দেসি কালচারের বীভৎস খ্যাতাচার নিয়ে তৈরি দুর্দান্ত কমেডি। চলচ্চিত্র থেকে ধার করেই বোঝাই এই খ্যাতাচার। উঠতি বয়সের কিছু ভারতীয় তরুণ গোরা মেয়ে বাগানোর জন্য পার্টি দিচ্ছে। কীভাবে যেন খবর পেয়ে চলে এসেছে তেলচপচপে খেতু থেকে শুরু করে গলায় মাথায় তিলক দেওয়া ভোলাভালা লোকজনও। আধুনিক প্রজন্মের তো জাত যায়-যায় অবস্থা। গেট ভেঙে যেন ঢুকে পড়বে সবাই। কী করা যায় এই ভিড় থেকে রেহাই পেতে? কীভাবে তাড়ানো যায় এত লোক? কী মতলব আঁটা যায় সবাইকে বের করে প্রপার স্ক্রিনিং করে লোক ঢোকানোর? চ্যাংড়া এক বান্দা মাইক্রোফোনে ঘোষনা দিল, মিস্টার প্যাটেল, ইয়োর টয়োটা ক্যামরি হেডলাইটস আর অন। মুহূর্তে ফ্লোর খালি হয়ে গেল। প্রবাসীমাত্রই এই ক্যামরি-প্রীতির সাথে পরিচিত। খেতু থেকে জাতে উঠতে চাইলে ক্যামরিবিনা চলতে হয়। তেলে নাহয় কম মাইল গেল, গাড়িও নাহয় বসে গেল বছর সাতেকের মাথায়। তবু নিশ্চয়ই খ্যাৎ থাকবেন না আপনি?

৬. ব্যবহার শেষে গোল বোতাম টিপুন
জনৈক বড়ভাই মাত্র এলেন দেশ থেকে। বলছিলেন এমিরেটস’এর টয়লেটের কথা। ঢুকেই নাকি বিশাল এক সাইনবোর্ড। বড় বড় হরফে একেক ভাষায় আকুতি জানানো হয়েছে, ব্যবহার শেষে যেন কোন এক গোল বোতাম টিপে দেওয়া হয়। ইংরেজি তো আন্তর্জাতিক ভাষা, তাই ক্ষমা করে দেওয়া যায়। সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যীয় দেশ, তাই তাকেও কিঞ্চিৎ ক্ষমা করা গেল। তাই বলে বাংলা, হিন্দি, বা থাই ভাষাকে ক্ষমা করি কীভাবে? শুভ্র, সুন্দর একটা জায়গা বিশ্রী রকম ময়লা আর দুর্গন্ধযুক্ত করে আসার পর কারো যদি পানি ঢালার কথা খেয়াল না থাকে, তাদের জন্য কীই বা করার আছে বেচারা এয়ারলাইন্সের? ভাই সাহেব বলছিলেন, কোন জাতি কতটা সভ্য, বা সভ্য বলে পরিগণিত, তা জানার উপায় এমিরেটসের টয়লেট ঘুরে আসা। সাইনবোর্ডের ভাষাই যা বলার বলে দেবে।

৭. জান, জানু, জান্টু, জানেমান
আমার মা আদরে-আবদারে বাবাকে ডাকে ‘এই’। নাটকে দেখতাম ঝন্টুর বাবা জাতীয় কিছু, আর সিনেমায় লক্ষ্মী। স্থান-কাল-পাত্রান্তরে ওগো, হ্যাগো, সোনা, জাদু, হানি, ডিয়ার, সুইটি, লাভলির চলও প্রচুর। আমি কোনদিনই তাল খুঁজে পেতাম না এই সম্বোধনযুদ্ধে। নিতান্তই দৈবদুর্বিপাকে একটা বান্ধবী জুটেছিল জীবনে। পাখি আসতে আসতেই ফুরুৎ করে উড়ে চলে গেছে আরেক গাছে। তার এক বিশাল অভিযোগ ছিল তাকে জান বলে না ডাকায়। আমি বলেছিলাম গোপাল ভাঁড়ের ছেলের গল্প। বাজারের কোণায় দাঁড়িয়ে যেই সুপুত্র ‘গোপাল বাবা, গোপাল বাবা’ বলে চিৎকার করে গোপালের গাট্টা খেয়েছিল। ছেলের যুক্তি ছিল, বাবাকে যেমন নাম ধরে ডাকা যায় না, তেমনি ভরা মজলিশে স্রেফ বাবা বলে ডাকা যায় না। অতঃপর গোপাল বাবা ও গোপালের গাট্টা। না, পোষালো না। ভালবাসা তর্কের উর্ধ্বে হলেও আগ্রাসনের উর্ধ্বে নয়। বলেছিলাম আজকাল যে-সে জান ডাকে, কোন স্যাঙ্কটিটি নাই এধরনের গণসম্বোধনের। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আমার এককালীন পাখি এখন বেশ জানময় হয়ে আছে। ওহ, জানের সাথে আই লাভ ইউ’ও যুক্ত করে দিতে হয়। নাহয় আম-ছালা সব যাবে। অন্তত এই লাইনে আর খ্যাৎ নই, যদিও একটু বেশিই ক্ষতি হয়ে গেছে শিখতে শিখতে।

৮. খুউউঅল
না, শব্দটা কুল না। ক্যুল, কিউল, এবং কুঅল এর মাঝামাঝি উচ্চারণ হবে, আর ক-কে খ করে দিতে হবে। বহুমূল্য এই শিক্ষাকে পথের পাথেয় হিসেবে বিবেচনা না করলে এযুগে অযথা খ্যাৎ বলে গণ্য হবেন। যেকোন প্রকার সুন্দর ও সমর্থনযোগ্য ঘটনার পরেই এই শব্দ উচ্চারণ করতে হয়। সম্ভব হলে একই সাথে হাত মেলাতে হয় কিংবা পিঠ চাপড়ে দিতে হয়। ভালকে ভাল, সুন্দরকে সুন্দর, বা সুস্বাদুকে সুস্বাদু বলবার দিন আর নেই। সকল প্রকার ধনাত্মক বিশেষণের প্রতিস্থাপনের জন্য তৈরি শব্দ। আরেকটু জাতে উঠতে চাইলে বাক্যের আগে-পিছে-মাঝে-ভাজে লাইক যোগ করে বাক্যটি পরিবেশন করুন। কাজে না লাগলে পয়সা ফেরত।

৯. বোতলে বোতলে সুখ
আমি কোকাকোলার এক অন্ধ ভক্ত। প্রেমে পড়ার সময়টুকু বাদ দিলে আমার পঁচিশ বছরের জীবনে একমাত্র আসক্তি হল কোক। নানার বাড়ি বেড়াতে গেলে আমাকে দেখেই পাড়ার মুদির দোকানদার দুই বোতল কোক বের করে ফেলতো। ছয় টাকা বোতল দিয়ে শুরু, আজ এই প্রবাসে পঁয়ষট্টি সেন্ট ক্যান পর্যন্ত গিলে চলছি। চাবি নিয়ে ঘুরবার মত হিম্মত হবার পর থেকেই একটা বটল-ওপেনার থাকতো রিঙে। নেহায়েত আমার মত কুদ্দুস হয়ে না থাকলে কখনো বিয়ারের ক্যান এই ধরনের ওপেনার দিয়ে খুলতে যাবেন না। বিয়ার বস্তুটাই বেহুঁশ করার জন্য। সমুদ্র সৈকতে লোকে জামা-কাপড় ফেলে গেলেও বিয়ারের বোতল নিয়ে যায়। আমি বুঝে পেতাম না, যারা কাপড় ছাড়া সমুদ্রের পাড়ে যায়, তারা কীভাবে খেয়াল করে ওপেনার নিয়ে যায় সাথে করে? কালে জানলাম, বিয়ারের ছিপি খালি হাতে মোচড় দিলেই খুলে যায়। পকেটের ওপেনার বের করে রেখেছি তার পর থেকে। দারু না খেয়েও খেতুর গাল যে কত খেয়েছি, তাই ভাবি। খ্যাৎ, খুব খ্যাৎ।

১০. খেতু খ্যাদাও, দেশ বাঁচাও
যাক, এমনি করে এগুলে মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে যাবে। থাকুক নাহয় এটুকুই। যুগের সাথে সাথে দর্শনের পরিবর্তন দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যাওয়া অনেক খেতুর একজন হয়েই নাহয় থেকে গেলাম। সব মানুষ আধুনিক হলে কি আধুনিকের মর্যাদা থাকে? নাহয় আমাকে দেখেই সবাই জানলো খেতু হবার জ্বালা কত। কীই বা ক্ষতি শখের বশে জগাখিচুড়ি গিটারিস্ট না হলে? কীই বা আসে-যায় ব্রেসিঙের যন্ত্রণায় যাবার বদলে দুটো বাঁকা দাঁত নিয়ে বসবাস করলে? জগতের তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না আমি স্রেফ একটা মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে। আমি নাহয় শাহরুখের মত বুক-ফারা জামা না-ই পড়লাম। সাম্প্রতিক ইন্ডিয়ান আইডলের চেয়ে নাহয় সিএনএন-এর অ্যান্ডারসন কুপারকেই বেশি চিনলাম। কে বলেছে বাক্যপ্রতি গোটা চারেক ইংরেজি শব্দ না বলে বাঙ্গালি হওয়া যায় না? আমি শার্ট প্যান্টে গুঁজে পড়লে কার কী?


মন্তব্য

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

"মিস্টার প্যাটেল, ইয়োর টয়োটা ক্যামরি হেডলাইটস আর অন। মুহূর্তে ফ্লোর খালি হয়ে গেল।"

হাহাহ উত্তম বলিয়াছো! ড্যালাসে বড় দেশী স্টোরের নাম ছিল আল-মারকাজ। ঐখানে গেলে আমি পার্কিং লটে ক্যামরি, সিভিক আর একোর্ড গুনতাম। ৮০% পার্ক করা গাড়ি এই লিস্টের মধ্যে পরতো।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সিনেমার ঘটনাও কিন্তু ড্যালাসেই ছিল, যদি না স্মৃতিভ্রম হয়ে থাকে। খাইছে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আপনারা দুইজনে ডালাসরে পচানোর তালে আছেন দেখি। একজন তো সেখানকার আবার প্রাক্তন বাসিন্দা। রংবাজের কবরীর মতো গাইতে ইচ্ছে করছ - "এবার আসুক তারে আমি মজা দেখাবো।" চোখ টিপি

মনে রাখবেন, সচলের এক ব্লগার এখনো সেখানে বাস করে। দেঁতো হাসি

ভালো কথা, লেখাটা খুবই উপভোগ্য। দারুণ স্মার্ট ভাষা।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এই দিকে কিছুটা এগিয়ে, তবে অবস্থা তবুও সঙ্গীন। আমার বাবা একা শহরে এসেছিল, আমি একা বিদেশে এসেছি। সেই দিক থেকে ভাবলে আব্বুর অনুভূতিগুলো মনে হয় নিজেও কিছুটা টের পাচ্ছি।

তানভীর এর ছবি

প্রচলিত অর্থে যুগের বা সময়ের পরিপন্থী কিছু করাকে হয়ত ক্ষ্যাত বলে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় স্বাভাবিকতার বাইরে যা কিছু আরোপিত তাই ক্ষ্যাত। দেশে নাকি শুনছি এখন ইংরেজীর টানে বাংলায় কথা বলার চল হয়েছে। সেদিন টিভিতে গায়িকা তিশমার উপস্থাপনা আর সাজ-পোষাক দেখে চেয়ার থেকে উল্টায়ে পড়ে গিয়েছিলাম। এখন তিশমা যদি দাবী করে সে স্মার্ট আর আমার মত প্যান্টে শার্ট গুজানেওয়ালা ভেতো বাঙ্গালীরা সব ক্ষ্যাত, তবে আমি ক্ষ্যাত হতে কোন মাইন্ড করব না। অমন স্মার্টনেসের আমার কোন দরকার নাই।

পুনশ্চ- আরো শুনেছি দেশে মদ খাওয়াও নাকি এখন একটা স্মার্টনেসের লক্ষণ! আমার মত কোকপেয়ীরা ক্ষ্যাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বড়ই দুর্দিন!

=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বোরাত না জানাও খ্যাতের পর্যায়ে পড়ে কোথাও কোথাও। এই তালে পড়েই দেখেছিলাম মুভিটা। সেই সূত্রেই... আসুন, "আই লাইকস, হাই ফাইভ!" আধমের সাথে উত্তমের মিলে যাওয়ায় আনন্দিত! হাসি

অতিথি এর ছবি

ইশতিয়াক
খ্যাত হওয়া ভাল।
মেয়েরা একটু খ্যাত ছেলেই বেশি পছন্দ করে!
cheer up!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সবই কপাল! এই কমেন্ট জুটলো কোন এক বেনামি পাঠকের কাছ থেকে! জয়তু খেতু! দেঁতো হাসি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

০১
আমি এখনও শহরের রাস্তা পার হওয়া শিখিনি
কিছুদিন আগে এক ফ্রেন্ডের সাথে রাস্তা পার হবার সময় রিকশার সাথে হাবিজাবি করে ফেলার পরে রিকশাওয়ালা আমার সঙ্গের ফ্রেন্ডটাবে বলল-

আপা গাইয়া পাবলিকরে নিয়া ঢাকার রাস্তায় হাটতে কে বুদ্ধি দিছে আপনেরে?

০২

আমার এক সিনিয়র ফ্রেন্ড ৫ বছর মার্কিন মুলুকে থেকে ফিরে আসার পরে বলছিলেন

ভাইরে ইংরেজিতে কথা বলতে পারি কিন্তু এখনও হাসতে পারি না
আমার হাসিটা এখনও বাঙ্গাল হাসি থেকে গেলো

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আমার চেনা কিছু পোলাপাইন - (শত হইলেও আংরেজী মিডিয়ামের গর্বিত প্রতিনিধি চোখ টিপি) - তারা শরীরে কোন রকম ব্যথা পাইলে কইতো - Ouch! এই আউচ-এর উপদ্রবটা ক্লাসের মাইয়াগো মইধ্যে বেশী আছিলো, তয় কোন কোন পোলারাও কইতো। এই 'আউচ' শুনলে আমি ওগোরে জিগাইতাম - শালা 'উফ' কইতে পারোস না? কিম্বা 'মা রে!' ব্যথা পাইলি, সেইটাও ইংলিশে ব্যথা পাইলি!!
------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

"ইউ!!!" ভুলে গেলে চলবে না কিন্তু। সামান্য কারণেও অযথা বাড়াবাড়ি রকম কৃত্রিম গা গুলানোর এই প্রকাশ দেখে শুধুই খাবি খেয়ে যাই। বিশেষ করে নারী জগতে। ইদানিংকার পোলাপান মোটামুটি দুই ধারায় বিভক্ত। একদল অতি-মাচো, আরেকদল অতি-মেয়েলি। দ্বিতীয় ঘরানার ছেলেগুলোর মধ্যেও এই ইউ!! বাতিক ছড়াচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

লেখাটা সেই রকম! (বিপ্লব) না দিয়ে উপায় কি!!

শোবিজ ওয়ালাদের গারগেল - বাংলা বলা নিয়ে আমার একটা পুরনো লেখা ছিল এখানে


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হা হা হা। পড়তে দেরী হলো ভায়া।

চা শব্দ ছাড়া কিভাবে খায় এটা আমার মাথাতেই আসে না!

বিদেশী বন্ধুদের সাথে পার্টি ফার্টিতে গেলে আমি আগে থেকেই হেডস আপ দিয়ে রাখি যে, আমার কিন্তু শব্দ হবে। এতে খানিকটা আরাম পাওয়া যায়।

আমার উপদেশ (শব্দটা এগ্রেসিভ হলো কি না কে জানে!) হচ্ছে, বি ইয়োরসেলফ এক্সেপট ইউ আর ইন এন ইন্টারভিউ হাসি

বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

কনফুসিয়াস এর ছবি

চমৎকার ভাষায় দারুন একটা লেখা।
পাঁচ তারা।

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হা হা হা...
চমৎকার !
লেখাটা অসাধারণ লাগলো ।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে।

ইফতেখার নূর এর ছবি

গবেষণা করে বের করলাম, এই কাপের কাজ কুলকুচিতে সাহায্য করা। আজলা তুলে পানি নিয়ে কেউ কুলি করে না এই যুগে। শিখলাম।

আমি মাত্র আজ শিখলুম, পিএইচডির এক বছরের মাথায়, স্কুলের এক মেয়েকে আমাদের লাবে কুলি করতে দেখে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এ যুগের মেয়েদের কাছে আরো শেখার আছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার। ইউরোপের লোকজনের সামনে পড়লে মাফলাফ (থুক্কু, স্কার্ফ) এর ব্যবহার শেখা যায়। সন্ন্যাসীর ব্লগে শিখেছিলাম ভদকা খাওয়ার তরিকা। হীরক রাজাই ঠিক ছিল-- জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই!

অমিত এর ছবি

যে যাই কউক, ক্যামরি সেরম গাড়ি। আমারটা প্রায় ২০০k হতে চলল। গ্র্যাড স্টুডেন্ট থাকার সময় টেক্সাসের কোনা কান্চিতে এই পঙ্খিরাজরে নিয়ে বেড়াইসি। একবার আ্যারিজোনা যাওয়া আসা করসি। শেষ পর্যন্ত এইটা নিয়েই ক্যালিফোর্নিয়া আসলাম। নতুন গাড়ি কেনার পরও এইটা নিয়েই অফিসে যাওয়া আসা করি।
সারাজীবন খালি একটাই প্রবলেম দিয়েছিল। তাও সেটা এসিতে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

লুইজিয়ানা থাকতে আমিও ক্যামরি চালাতাম একটা (এখন মালিকানা ছোট ভাইয়ের কাছে হস্তান্তরিত)। ১৯৯৯-এর ক্যামরি, এখন প্রায় ১৩৫k হবে। ৪ বার অ্যাক্সিডেন্ট হওয়া গাড়ি, ৮ হাত ঘুরে আমার হাতে এসেছিল। একবার টোটাল করতে বলার পরেও আমি রেখে দিয়েছিলাম। এত আরামে আর কোন গাড়ি চালিয়েছি বলে মনে পড়ে না। আজো গ্যালনে ২৪ মাইল করে পাই শহরে, হাইওয়েতে ৩৪! মাত্র আড়াই গ্যালন তেলে নিউ অর্লিন্স চলে যেতাম। ভাবলেই কেমন লাগে এখন। তবে ২০০২ থেকে ক্যামরি অনেক বড়/ভারি করে ফেলায় মাইলেজও কমে গেছে সেই তুলনায়।

কনফুসিয়াস এর ছবি

গ্যালনরে লিটার ভেবে প্রথমে আঁতকে উঠেছিলাম! আপনারা ৩৩/৩৪ এর আলাপ করেন, এদিকে আমি টেনেটুনে ৮ গেলে খুশি! পরে ভালো করে খেয়াল করে দেখি ঠিকাছে। গুগলে দেখলাম ১ গ্যালন= ৩.৭ লিটার। সেই হিসাবে আমার হয় ২৯ এর মতন। খারাপ না! কিন্তু আসলে তারপরেও ঠিক নাই। আপনারা নিশ্চয় মাইলের হিসাব করেন, আমরা এখানে কিলোমিটার।
আমাদের এখানে অবশ্য ফোর্ড আর হোল্ডেন এর চল বেশি। পরিচিতদের মধ্যে একজনেরই কেবল ক্যামরি।

রাগিব ভাই,
নিসানের ব্যাপারে আমারও ভোট আছে। আমার প্রথম গাড়িটা ছিলো নিসান ভেক্টর, লক্কর ঝক্কর, ৮৭ মডেলের। দারুন ভালো চলতো, মেইনটেন্যান্স বলতে দুই বছরে তিনবার সার্ভিসিং, আর কিছু না। লিটারে ১১/১২ করে চলে যেত।
ওইটা বদলে যেটা কিনলাম, এইটা মাশাল্লাহ তেলখোর। ফোর্ড টাওরাস, ৯৭ এর, ভি সিক্স। সেই জন্যেই লিটারে ৮ করে গেলে আমার দাঁত বের হয়ে যায় খুশিতে।

পুরাতন গাড়ির ব্যপারে ইউএস আর এখানকার পার্থক্য দেখলাম আপনাদের মন্তব্যে। ১৩৮k এই দেশে পুরাতন গাড়ির জন্যে তেমন কিছুই না। চোখ বুজে মানুষ কিনে নিবে। ২০০k না উঠা পর্যন্ত যে কোন সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ির বাজার দর ঠিক থাকে, তারপরে নেমে যায়। ( এইটুকু লিখে আবার মনে পড়লো মাইল আর কিলোমিটারের কথা...। তারমানে আসলে তেমন পার্থক্য নেই। )
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।