“দিদি, ভাল আছেন?”
এইতো আছি, ভাই। সারাদিন কাজ সেরে ফিরলাম মাত্র।
“দাদা বাসায় নেই?”
না, আপনার দাদা এখনও কাজে। রাত ৩টা পর্যন্ত কাজ। আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।
“দাদা কী ভাগ্যবান! আপনার মত একটা বৌ পেয়েছেন। আপনার মত বৌ এযুগে বিরল।”
এত তেলাতে হবে না। আপনার দাদা আসলে কিছু বলবো?
“না না, এমনি ফোন করলাম। আপনাদের কুশলাদি জানতে।”
হুম, জানলেন তো। যাক, এবার আমি একটু খেতে যাই? খুব ক্ষুধা লেগেছে, ভাই।
“আমাদের যে কী হবে, দিদি। সারাদিন ল্যাবে থাকি, ঘরে এসে কিছু করার নাই। রান্না-খাওয়ার কথা কী আর বলবো।”
সেই দিন তো সবারই গেছে, ভাই। আমরা যে কত কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছি, তা অনেকেই জানে না।
“দাদা ঘরে আসলে আপনি কত মজার মজার রান্না করে খাওয়ান। দাদার তো পূর্ণ জীবন।”
আপনি বিয়ে করে ফেলেন একটা, তাহলেই হল। আর আমার রান্নার যা ছিরি!
“আরে বিয়ে করে ভুগবো কেন অযথা? মেয়েরা সব বুদ্ধু, বুঝলেন? কথা বুঝে না কিছু না। অবাস্তব সব ব্যাপারে তাদের যত বাড়াবাড়ি। কারও মধ্যে কোন বাস্তবজ্ঞান নাই।”
তাহলে আমিও বোকা, বাস্তবজ্ঞানবর্জিত? এভাবে বলাটা মনে হয় না ঠিক হল, মতিন ভাই।
“না না, আপনার মত বৌ পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার!”
এসব ফালতু কথা তাহলে আমাকে বলার কী মানে আছে, ভাই?
“আরে দিদি, আপনার মত বৌ একটা পেলে তো বর্তে যেতাম।”
কেন, আপনি না ঢাকা গেলেন এই শীতে। মেয়ে-টেয়ে দেখেননি কোন?
“তা আর পারলাম কই, দিদি? গিয়েই তো পড়লাম হরতাল আর অবরোধের মধ্যে। আর, আমি তো আবার বিয়ের জন্য তেমন একটা উৎসাহী ছিলাম না কখনই। তবু মা-বাবার দিক ভেবে, আর বড় ভাইবোনদের তাগিদে কিছু মেয়ে দেখতে হল।”
ও, তলে তলে এতদূর? আমাদের সামনে তো শোভিনিস্টিক কথাবার্তা বলেন এত, ওদিকে দেশে গিয়ে মেয়েও দেখে এসেছেন? তা বিয়েটা কবে করছেন?
“আরে ধুর, কী যে বলেন না এসব। বাংলাদেশের মেয়েরা তো দেখি আজকাল বিয়েই করতে চায় না! কেউ আমেরিকা আসতে চায় না। সবাই শুধু বিবিএ খুঁজে!”
আপনি হয়তো এমন কাউকে দেখেছেন যার বাইরে আসার ইচ্ছা নেই। আমেরিকা থাকার হরর স্টোরিগুলো এখন সব বাবা-মা জানেন। তাদের মেয়ে যে দেশে থাকলেই ভাল থাকবে, এই সহজ উপলব্ধিটা এসে গেছে তাদের মধ্যে। আমিই তো আমার সব মাসি-কাকুদের বলি যেন মেয়েকে বাইরে বিয়ে না দেয়।
“আমেরিকা আসা খুব দরকার, দিদি। আমরা যে বুয়েটে পড়াশুনা করেছি, সেটা ভাবলেও কেমন লাগে এখন। এখানে এসে মনে হচ্ছে কিছুই দেখিনি, কিছুই শিখিনি। এরকম একেকটা ল্যাব বুয়েটে থাকলে কত কী করা যেত।”
কী করার আছে বলেন? সব তো আর সম্ভব না। আপনার মত গুণী ছাত্ররাই দেশ ঠিক করে দিবেন নাহয়। তা আমি এবার ছাড়ি? রান্না বসাতে হবে।
“হয়েছে কি বুঝলেন, দিদি...”
দেখেন ভাই, আপনি বিয়ে করতে চান, নাকি চান না? চাইলে একটা বিয়ে করে ফেললেই তো হল। এত বাছাবাছির কিছু নাই। আমাকে কেন বলছেন এসব? আপনার না কয়দিন আগেও একটা প্রস্তাব এল।
“কিন্তু ঐ মেয়ে তো কমিউনিটি কলেজে পড়ে মেয়ে!”
এসব কী বলছেন? আশ্চর্য মানুষ তো আপনি। একটা মেয়ে কমিউনিটি কলেজে পড়ে বলে তাকে বিয়ে করবেন না? সুন্দরী মেয়ে, আমেরিকান সিটিজেন, ফ্যামিলি ভাল। আর কী চান?
“না না, কী যে বলেন! আমি তো রাজপুত্রের মত ছেলে!”
মানে? কী যা তা বলছেন এগুলো? মাথা ঠিক আছে আপনার?
“এভাবে নিচ্ছেন কেন, দিদি? দেখুন, আমি বুয়েট থেকে পাশ করা ছেলে। দেখতে-শুনতে খারাপ না। লম্বা গড়ন। আমেরিকায় এমএস করেছি। এখানে এসে তো টুকটাক শিল্পী প্রতিভার বিকাশও ঘটেছে। আমি কেন কমিউনিটি কলেজে পড়া মেয়ে বিয়ে করবো?”
তাহলে কেমন মেয়ে চান?
“বুয়েটের ছেলেরা তো ধরেন ডাক্তার মেয়ে চায়...”
তো করলেন না কেন ডাক্তার মেয়ে? হরতালের জন্য যেতে পারেননি মেডিকেল কলেজে?
তা আর পারলাম কই, বলেন? সকালে তো বেরই হতে পারতাম না বাসা থেকে। সন্ধ্যার পরে দু-তিনটা মেয়ে দেখতাম হয়তো।
এভাবে বলছেন? আশ্চর্য! কয়টা মেয়ে দেখলেন ৩ সপ্তাহে?
“গোটা পঞ্চাশেক হবে হয়তো। বিয়ে তো খুব জরুরী ব্যাপার, বুঝলেন না! একটু তো যাচাই-বাছাই করে মেয়ে দেখতে হয়। হুট করে একটা বিয়ে করে শেষে সারাজীবন পস্তানোর ভয় আছে।”
কিছু মনে করবেন না, ভাই। এরকম করলে সারাজীবন এমনিতেই পস্তাতে হবে। রুস্তম ভাইয়ের মত হাল হবে শেষে।
“রুস্তম ভাইয়ের কথা আর বলবেন না। উনি তো আমার ইয়ার মানুষ। বিশেষ জ্ঞানী ব্যাক্তি। ওনার কাব্যগুণ খুবই বিরল। কেউ পাত্তা দেয় না, এটা খুব দুঃখজনক ব্যাপার।”
কী বলেন এগুলো? উনি তো বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের সাথে প্রেম করা নিয়ে অশ্লীল সব কথাবার্তা লেখেন! তায় আবার সামাজিক অনুষ্ঠানে ওনাকে স্বরচিত কবিতা পাঠ করতে না দিলে ক্ষেপে চলে যান। ওনার মত খুঁতখুঁতে হলে আপনাকেও ওনার মত একা থাকতে হবে।
“উনি হয়তো ওনার সাথে মানানসই কাউকে পাননি এখনও। পেয়ে গেলেই গলায় মালা পড়াবেন।”
শুনুন, ভাই। এত ঝুটঝামেলা বাদ দিয়ে একটা বিয়ে করে ফেলুন সোজা। আপনার মাথায় বিয়ে করার আদিম ভূতটা ঢুকেছে। মেয়েদের নিয়ে এসব আজেবাজে কথা বাদ দিয়ে চোখটা একটু মাটিতে নামান। নয়তো রুস্তম ভাইয়ের মত কুড়ি বছর পর কোন এক বাড়ি গিয়ে আবিষ্কার করবেন যে মেয়ের মাকেও দেখতে এসেছিলেন আপনি।
“দিদি কী যে বলেন, আমি তো পাত্র হিসেবে...”
মন্তব্য
হা হা হা। মজা পাইসি বস। চলুক কথোপকথন। আমি কথোপকথন ২ নামাবো ভাবছি।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
অপেক্ষায় থাকলাম। এমন ঘটনা জীবনে ভুরি ভুরি। তবে লিখতে হলে একটা ডিটাচমেন্ট লাগে। বিদেশে সেটা মেলে। নয়তো দেশের দিনগুলোও তো একেকটা ঘটনা। অতিরিক্ত ইনভল্ভড থাকি বলে চোখে পড়ে না আমাদের।
বাহ্!
ভাল লিখেছিস।
মজা পেলাম খুব।
কিন্তু একটু চিন্তায়ও পড়ে গেলাম।
এটা তোর কাহিনী নয় তো?
তুই তো বুয়েটে না পড়েই আমাদের ফেলে চলে গিয়েছিলি। তোর তো পা মাটির আরো উপরে থাকার কথা সেই হিসেবে।
চিন্তার বিষয়।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
না, আপু। এটা জনৈক বড় ভাইয়ের। তিনি শেষতক এক ডাক্তারনি বিয়ে করেন তার পরের শীতে। বৌ আসতে দেয় না দেখে দেওয়ানা হয়ে পিএইচডি ছেড়ে দিয়েছেন। যেকোন মূল্যে দেশে চলে যাবেন, নয়তো চাকরি ধরবেন, নয়তো যার পায়ে পরতে হয় পরবেন। এই হল ওনার বর্তমান অবস্থা। আমরা সেই দিনগুলো ধরিয়ে দিলেন বলেন, আরে তোমরা কিছু বুঝো না! বিয়ে করে কেউ 'সাস্কেস হয়, কেউ 'ফেইলিউর' হয়। আমি আমার অনেক বন্ধুকে বিয়ে করে ফেইলিউর হতে দেখেছি। আমার কপাল আমি বলবো এই দিক থেকে ভালো। আমি বিয়ে করে অনেক সাক্সেস হয়েছি।
পালটা প্রশ্ন করি, কতদিন হয় বিয়ে হয়েছে। জবাব, ৬ মাস। পরের প্রশ্ন, কতদিন একসাথে ছিলেন। দিন ছয়েক। এরপর বলে এসেছি আরও কিছুদিন গেলে জানতে চাইবো আবার।
চালায় যান।
-------------------------------------------------
যত বড়ো হোক ইন্দ্রধনু সে সুদূর আকাশে আঁকা,
আমি ভালোবাসি মোর ধরণীর প্রজাপতিটির পাখা॥
পরিচিত অনেকের সাথেই মিলে গেল
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
পরিচিতের তালিকায় আপনি নিজেও না থাকলেই হল!
আমি ব্যক্তিগত ভাবে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজে বিশ্বাসী নই
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
নতুন মন্তব্য করুন