প্রবাসের কথোপকথন ৫

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: বুধ, ১১/০৭/২০০৭ - ১১:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“তুমি কি এই ক্লাসে?”
জ্বী, আমি ইংলিশ ১০০৫ এর রুম খুঁজছি।

“হ্যাঁ, এটাই। কিন্তু তুমি ১০ মিনিট লেট।”
দুঃখিত। আমি ১০০৪ এর ক্লাসে চলে গিয়েছিলাম ভুলে।

“তুমি কি একটা সিট নেবে?”
ধন্যবাদ।

“ক্লাস, আমরা এখন একটা খেলা খেলবো। খেলায় খেলায় আমরা পরিচিত হব সবার সাথে। সবাই ডেস্কগুলো একপাশে সরিয়ে গোল হয়ে দাঁড়াই আমরা।”
(এ কোন নতুন কুঁড়ির পাল্লায় পড়া গেল!)

“আমি শুরু করছি। আমি মিস কার্নি।”
(উফ! সুন্দরীরা কেন জোড়ায় জোড়ায় ঘোরে? ক্লাসের পিছনে আসলাম সুন্দরীর গন্ধ শুঁকে শুঁকে, তবু লাভ নাই।)

“এবার তোমরা যার যার নাম, কোন দেশ থেকে এসেছো, এবং কী পড়তে চাও বল। কেউ চাইলে অন্য কোন গল্পও বলতে পারো।”
(এত্ত সুন্দরী মহিলা, বয়স মনে হচ্ছে ৩০ এর একটু ওদিকে হবে। কোরিয়ান চেহারা। কী সুন্দর! হাতে আংটি নাই কেন? ধুর, সম্ভাবনার কী নিদারুণ অপচয়!)

“আমার নাম ঝঁন। আমি সাউত খোইয়া থেকে এসেছি। পিএইচডি করতে এসেছি। আমার একটা বৌ আর একটা বাবু আছে দেশে। আই রাইক আমেলিকা।”
(ঝঁন? ওহ, জন! যাক, উচ্চারণ নিয়ে আমাকে না ভাবলেও হবে। এত হাসছে? আশ্চর্য। আমারই লজ্জা লাগছে বুড়া বয়সে এই শিশুতোষ ক্লাস করতে। যাক, শিক্ষনীয়।)

“আমি ম্যাগি। আমি বুলগেরিয়া থেকে। ক্রিমিনোলজি পড়বো। আর নয়তো সাইকোলজি। নয়তো বায়োলজি। আমি সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস ১২ বার পড়েছি। আমি ধনু রাশির জাতিকা।”
(ওয়াও! একে দিয়েই হবে। ডার্ক টেইস্ট, খুল্লামখুল্লা রূপ, চোখেমুখে পূর্ব ইউরোপের সপ্রতিভ চঞ্চলতা। রাশিও এক।)

“আমি ডিনা। কোলোম্বিয়া থেকে এসেছি। লাইফ সায়েন্সে পিএইচডি করতে। আমার বরও এখানে পড়ে।”
(আমরা সবাই কত্ত বুড়া। এই দেশিগুলো কত অল্প বয়সের। আমরা সব আদুভাই এসে জুটেছি। ধ্যাৎ!)

“আমি সাইফ। আমি স্কেটবোর্ডিং করি। আমি ১৩ বছর বয়সে হাইস্কুল পাশ করেছি। আর... আই লাভ স্কেটবোর্ডিং।”
(১৩ বছর বয়সে আমি সেভেনে পড়ি। মর শালা! মেয়েগুলা যাও বা একটু তাকাচ্ছিল, এই বাচ্চা এখন সব নিয়ে গেল।)

“এবার তোমার নাম বল।”
আমার নাম ইশতিয়াক রউফ।

“ওয়ো! আস্তে, আস্তে। আবার বল।”
ইশ...তি...আক রো...উফ।

“ইটঠাক?”
ইশশশ...তি...আক।

“তোমার নাম অনেক ডিফিকাল্ট।”
বুঝতে পারছি। ছোট ছোট অংশে ভেঙ্গে চেষ্টা করে দেখতে পারো। আমার বন্ধুরা আমাকে ইশতি ডাকে। তোমরাও তাই ডেকো।

“ইত্থি?”
ইশশশ...তি!

“ইশঠি?”
আই এস এইচ টি আই।

“আইশঠি, রাইট?”
ইউ নো হোয়াট, এত কষ্ট করতে হবে না। আমাকে স্রেফ ইশ ডেকো তোমরা।

“আই এস এইচ। ওহ, এটা অনেক সহজ। আইশ, অর ইশ?”
(রক্ষা কর মাবুদ। বাপ-মা যে কেন আমার নাম জন ডো রাখলো না?)

“ইসশ, ওকে? এটাই ডাকবো তোমাকে।”
এখানেই এক বড় ভাই থাকেন। ওনার নামও ইশতিয়াক। উনি ফিশ লেখা একটা বেল্ট পড়ে ঘুরেন। এখন বুঝতে পারছি কারণটা।

“আমরা খুবই দুঃখিত। তোমার নামটা বুচার করছি আমরা। আসলে, নামটা একটু আনকমন তো।”
ব্যাপার না। সহজ করে দিচ্ছি। আমাকে শুধু আই ডেকো। নামের বাকি সব ভুলে যাও।

“এটা বেশ মজার। আই! আমি তাহলে মিস সি এখন থেকে।”
সেটাই। খারাপ না। এই ক্লাসটাকে চিরজীবন মনে রাখার মত একটা কাহিনী পেয়ে গেলাম প্রথম দিনেই।

“আর! এই আর! তুমি কোন দেশ থেকে এসেছো বললে না?”
তা মিস সি, আপনি কতদিন এই দেশে?

“ম্যাগি একটা প্রশ্ন করেছিল তোমাকে, আই।”
ওহ, ওটা আমাকে বলেছিল?

“ওহ। আই! ধুর! ভুল করে ফেলেছিলাম।”
কোন ব্যাপার না। তুমি আমাকে যা খুশি ডাকতে পারো। চাইলে ‘হে!’ বলে ডেকো। চাই কি হাতের কাছে যা পাও ছুঁড়ে মেরো।

“বাট হে ইজ ফর হর্সেস!”
(তোমার মত সুন্দরীর জন্য শুধু ঘোড়া কেন, খচ্চরও সই!)

“তোমার জামায় কি ওটা তোমার দেশের নাম লেখা? লম্বা নাম। ব্যাং... লা...”


মন্তব্য

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সুন্দর লেখা। আগেরগুলো মিস করে গেছি। পড়বো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ।

অচেনা এর ছবি

দারুন হচ্ছে। থামবেন না। হাততালি

-------------------------------------------------
যত বড়ো হোক ইন্দ্রধনু সে সুদূর আকাশে আঁকা,
আমি ভালোবাসি মোর ধরণীর প্রজাপতিটির পাখা॥

মাশীদ এর ছবি

হা হা হা!
আসলেই জোশ হচ্ছে। চালিয়ে যা।

আমি সিঙ্গাপুরে মাস্টার্সে গেলাম যখন আমার সাথে গিয়েছিল আমার এক ব্যাচ জুনিয়ার সাজিদ নামের একটা ছেলে। আমরা দু'জন একই ল্যাবে ছিলাম। প্রথম বেশ কিছুদিন আমাদের কোরিয়ান সুপারভাইজারসহ ল্যাবের সবাই আমাদের নাম গুলিয়ে ফেলত। ওকে ডাকত মাশীদ আরা আমাকে সাজিদ। সাজিদ পরে একটা চাইনিজ ভাষা শিক্ষার ক্লাসে গিয়েছিল। ভাষা তেমন না শিখলেও জানতে পেরেছিল চাইনিজে 'সা-জ্-যি-দা' মানে না কি 'চিকেন কিলার'! আমরা এই নিয়ে ওকে খুব পঁচাতাম। অন্যদের থেকে অবশ্য আমাদেরই ওদের নাম বুঝতে বেশি কষ্ট হত।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

জীবন বড়ই মজার জায়গা, যদি পদে পদে বিব্রত হওয়ার বাঙ্গালিয়ানাটা থেকে বের হয়ে আসা যায়।

মাশীদ এর ছবি

ঠিক বলেছিস।
luckily, আমাদের অনেকেরই এই বিব্রত হওয়ার বদোভ্যাস আজকাল কমে যাচ্ছে। জীবন আসলেই মজার। বিব্রতবোধ জলাঞ্জলি দিয়ে জীবন উপভোগ করা চালিয়ে যা আর তার সাথে চলুক তোর এই কথোপকথন।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

দুর্দান্ত।
চলুক।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

ঝরাপাতা এর ছবি

আমি তো কথোপকথন পড়তেই আপনার ব্লগে আসি। আমার কথোপকথন-১ ও ২ পড়ে দেখার আমন্ত্রণ রইলো। ব্রাকেটের ভেতর নিজের কথাগুলো খুব জোশ লাগলো।



রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

অমিত আহমেদ এর ছবি
সিরাত এর ছবি

জাঝা! আবারও পড়লাম, হাসলাম! হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।