• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

নীড়ে ফেরাঃ গর্ভধারিণী পর্ব

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: মঙ্গল, ১১/০৩/২০০৮ - ১১:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রতীক্ষার প্রহর অনেক দিনের। চাইলেই আবেগগুলোর বল্গা ছেড়ে দেওয়া যেত। মুখোমুখি হতেই তবু দেওয়ালগুলো দাঁড়িয়ে গেল কীভাবে যেন। দুষ্টুমিভরা বাঁকা হাসি মুখে নিয়ে বললাম, পঞ্চাশ হওয়ার আগেই আশি হয়ে গেলে দেখছি। কথাটা আমার মাকে বলা। ভুললো না দূরত্বের ছলে। মাথাটা আলতো করে ঝাঁকিয়ে, একটু পেছনে হেলিয়ে, মুচকি হেসে এসে জড়িয়ে ধরলো, মাথায় হাত বুলালো। আমিও চিরচেনা বড় ছেলের মত করেই আলাদা হয়ে গেলাম, চোখ সরিয়ে নিলাম, গাড়ির বুট থেকে মালপত্র নামাতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। এভাবেই শুরু চার দিনের এক ঝটিকা সফরের গর্ভধারিণী পর্ব।

লুইজিয়ানা ছেড়েছি ঠিক সাত মাস আগে। স্প্রিং-ব্রেকে অনেকটা ধুম করেই বেড়াতে চলে আসা। মা অসুস্থ, মাঝে কিছু সময় হাসপাতালে ছিল। পড়শি বাঙালিরা কেউ খাবার দিয়ে গেছেন, কেউ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছেন, কেউ দিনে কয়েক দফা করে খোঁজ নিয়ে গেছেন। ছোট ভাইটা ক্লাস আর কাজের ভাঁজে চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থার মাঝেও যেটুকু পেরেছে করেছে। পুরুজিত তো বন্ধুর মাকে নিজের মায়ের মত করে আগলে রাখছে অনেক দিন ধরেই। একই দেশে আমি দূরে বসে কোন বেলায় মুড়ি-চানাচুর খাই, তো কোন বেলায় বসে বসে স্পেলবাইন্ডার দেখি। চোখের আড়াল হতে পারলে জীবন কী সহজ, অনাবিল। পড়তে ভাল লাগুক চাই না লাগুক, হোমওয়ার্ক শেষ হোক বা না-হোক, লেখাপড়াকে দায়িত্ব এড়ানোর উছিলা হিসেবে কী সহজে দাঁড় করিয়ে দেওয়া যায়।

এক বেডরুমের ছোট্ট বাসাটায় ঢুকতেই স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরলো যেন। নাতিদীর্ঘ প্রবাসজীবনে একবার দেশে গিয়েছিলাম। নস্টালজিয়া তেমন একটা কাবু করেনি। শুধু কেমন যেন একটা অন্য রকম লাগা ছিল। এবার লুইজিয়ানা ফিরে বুঝলাম, নীড় মানে নিজের দেশ, ঘর, আলো, বা বাতাস না। মা যেখানে, নীড় সেখানেই; সর্বংসহা গর্ভধারিণীর স্মিত হাসি যেখানে, সেখানেই জীবন। গুড়ি গুড়ি তেলাপোকাগুলো দেখে কত্ত দিনের চেনা মনে হচ্ছিল। ফেলে যাওয়া শেভিং ক্রিমের কৌটায় তেলাপোকার ডিম, রংচটা কার্পেটে মশলার গন্ধ, পানির কলের বিকট আওয়াজ। মনে হচ্ছিল যেন এই গতকালই এখানে ছিলাম আমি।

হার্ভার্ড ব্র্যান্ডের আফটার শেভ’টা চোখে পড়ে গেলো। দেশ ছাড়ার আগে বাবার দেওয়া। ছেলে গায়ে-গতরে বেড়ে ওঠার প্রথম স্বীকৃতি ছিল সেটা। সেই দিনটায় সামান্য এক কৌটা ঝাঁঝালো সুগন্ধী পেয়েই কী খুশি হয়ে গিয়েছিলাম। সংসারের দায়িত্বের পালাবদল হতে হতে আজকের অবস্থা অনেক ভিন্ন। আমার এককালের জাঁদরেল বাবা আজকে ফোন করে বলে মাকে দেখে রাখতে, মায়ের সাথে ঝগড়া করে দুই তরফ থেকেই ফোন করে অনুযোগ করে। এমনতর কথা ভাবতে ভাবতে বসে পড়লাম ৩৫ ডলারে কেনা রিক্লাইনারটায়। মাত্র একটা বছর আগে এখানেই একা বসে কাটিয়েছি জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সময়টুকু। পুরো দিন ঘুরে আমার প্রতীক্ষিতার জন্য বিয়ের আংটি কিনে এনে এই রিক্লাইনারে বসেই ফোন করে অঞ্জনের সুরে বলেছিলাম, আর মাত্র কয়েকটা মাস, ব্যাস্‌। এইতো সামনেই মা জিজ্ঞাসু চোখ নিয়ে বসেছিল। এখানে বসেই জবাবে শুনেছিলাম, তোমাকে বলা হয়নি, আমি আমার এক ক্লাসমেটের সাথে আছি এখন, বিদায়। সেই মুহূর্তটার আগ পর্যন্ত জানতাম আমাকে দিয়ে কোনদিন অভিনয় সম্ভব না। হায় রে জীবন।

আমার মাকে নিয়ে আমি কখনো লিখি না। শুধুমাত্র কোথায় শুরু করবো জানি না দেখেই। নানা পিএইচডি করার সময়টায় আমার মাকে গ্রামে থাকতে হয়েছে পাঁচ বছর। লেখাপড়ার সেই ছেদ উত্তরণ করে অনার্স সেরেও মাস্টার্স করতে পারেনি আমি পেটে চলে আসায়। মা-বাবা-ভাই বছর তিনেক আগে ডিভি পেয়ে আমেরিকা চলে এসেছে। মা সেই থেকে আমাদের দুই ভাইয়ের পড়ার খরচ যোগাচ্ছে হাড়কেপ্পন এক চাইনিজ রেস্তোরাঁয় অহর্নিশ কাজ করে। বকলে শুনে না, বারণ করলে মানে না। বাসা ভাড়া, প্লেনের টিকেট, হরেক রকম বিল, ভার্সিটির টিউশন, ইত্যাদির সবকিছু আমরা দেই আমার মায়ের মাংস বেঁচে।

বাবা দেশে আটকে আছে সরকারী চাকরি আর পেনশনের দুশ্চিন্তা নিয়ে। মায়ের শরীরের ভাঙনটা শুধু সময়ের ব্যাপার ছিল। শুকিয়ে আধখানা হয়ে যাওয়া আমার মাকে দেখে মনে পড়ছিল প্রথম দিকের দিনগুলোর কথা। হিসপ্যানিক ম্যানেজার এক বেলায় ষোল থেকে কুড়ি বালতি বরফ টানাতো, আমি কাউন্টারের ওপাশে বসে দেখতাম। ইংরেজি বলতে সংকোচের সুযোগ নিয়ে দাসের মত খাটাতো। আমার মাও নিঃশব্দে শ্রম দিয়ে যেতো, স্বামী-সন্তানের স্বাচ্ছন্দ্যের স্বপ্ন নিয়ে। রিৎজ্‌ কোম্পানির বিস্কুট ওয়ালমার্টগামী মাত্রই চেনেন। স্যাম্‌স ক্লাব থেকে রিৎজের প্যাকেট নিয়ে আসতাম। ছোট ছোট প্যাকেটে ছোট্ট, গোল বিস্কুটগুলো। মা আমার সকাল-সন্ধ্যা কামলা খাটতো সেই বিস্কুট খেয়ে। ভিড়ের দোহাই দিয়ে ম্যানেজার লাঞ্চ ব্রেক দিতো না, দোকানের খাবার খেলেও টাকা নিতো, মেপে মেপে ড্রিংক দিতো। পকেটে লুকানো বিস্কুটগুলোই ছিল ভরসা। আমরা দুই ভাই প্রেম আর বন্ধু নিয়ে মেতে থেকে জগৎ উদ্ধার করতাম। লন্ড্রি থেকে কাপড় এনে রাগ হতাম মায়ের উপর, পকেট থেকে বিস্কুট বের করতে ভুলে গেছে দেখে। আমার সেই মা’টা কেমন ছোট্ট, শুকনো আজকে।

বহুদিন পর সামনে পেয়ে আলাপচারিতাগুলোও যেন কেমন হয়ে গেল।

- না, বাবা। তেমন কষ্ট হয় নাই। এমনিই মাথা ঘুরাচ্ছিল খুব। তোমার লোপা আন্টি এসে বললো, এভাবে বসে থাকার মানে নেই। ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেল। ওরা দেখে হাই-প্রেশার, ফ্লু। ব্রেইনে স্ক্যান করে দেখলো সাইনাস ইন্‌ফেকশন। ভর্তি করে রেখে দিলো। কাজে যেতে পারলাম না সেদিন আর। এরপর কী একটা ওষুধ দিলো, শুধু ঘুমালাম কয়দিন। সাথে অ্যান্টিবায়োটিক।

- হুম, ভাল হয়েছে। দরকার ছিল বিশ্রামটা। আমাদের কথা তো শুনবা না, এভাবেই ঘুম দরকার ছিল। তোমার তো চিরকাল লো-প্রেশার ছিল, হঠাৎ উল্টাযাত্রা কেনো?

- আমি কী জানি! আমিও তো শুনে অবাক। চোখের ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে সামনে। আমার একটা চোখ নাকি সরে যাচ্ছে, অপারেশন করতে হবে ঠিক রাখতে। দৃষ্টিশক্তি তেমন একটা ভাল হবে না আর। থাক, কী দরকার এখন এসব করে টাকা নষ্ট করার?

- দেখা যাক। আর কয়টা দিন সময় দাও, দেখি কী করা যায়। আহা, মানা করলাম তো এটা নিয়ে কথা বলতে। হাতের এই অবস্থা কীভাবে হল? রক্ত নিতে গিয়ে হাত এভাবে মোরব্বা বানানোর মানে কী? ধমকও দিতে পারলা না একটা। মুখচোরাই থেকে গেলা আজীবন। নিজের কথা মুখ ফুঁটে বলার সাহস কবে হবে তোমার?

- নতুন একটা নার্স, বলে ভেইন খুঁজে পায় না। অযথা ওদের উপর রাগ কোর না। ওরা অনেক যত্ন নিয়েছে আমার। বিনাপয়সায় এরচেয়ে ভাল চিকিৎসা আশা করা ঠিক না।

- কী করতে যে আমেরিকা আসলাম। পেলাম তো না-ই কিছু, বরং হারালাম সবকিছু। দেশের জীবন কত গোছানো ছিল। কোন ভূতের কামড়ে যে আমি আমেরিকা আসলাম। আমি না আসলে তুমিও সুরসুর করে এসে পড়তা না। যৎসামান্য যা-কিছু ছিল, তাও গেলো।

- এভাবে ভাবতে নাই। আর সবার মত ভাবতে পারো না? ঐ এক দুঃখ বুকে নিয়ে নিজের জীবনটা নষ্ট করে দিবা এভাবে?

- আমি কিন্তু কোন পুরানো কথা তুলি নাই, মা। আমি ভালই আছি।

- আমার কাছে লুকানোর চেষ্টা করছো? একটা মেয়ের জন্য এভাবে সব ছেড়ে দিচ্ছো? দেখিয়ে দেওয়ার জেদ কাজ করে না বুকের মধ্যে? মনে হয় না, কোন একদিন যেন ভুল বুঝতে পারে?

- আমি তো প্রতিশোধ-তাড়িত মানুষ না! আমাকে দিয়ে এরকম চিন্তা আসে না। আমার কষ্টটা শুধু আমি একা বুঝি। আমার মত করে ছেড়ে দাও, প্লিজ। আমি আমার জগৎটা একটু একটু করে আবার তৈরি করছি।

- মাত্র দু-তিন বছর ধরে চেনা একটা মেয়ের জন্য এত কিছু ছেড়ে দিচ্ছো, একবার এই মা’র কথা মনে পড়ে না? আমি যে পঁচিশ বছর ধরে তোমাকে একটু একটু করে বড় করলাম, সেটার কী হবে? আমি যে সেই চার বছর বয়স থেকে সাথে সাথে ঘুরে তোমাকে লেখাপড়া করালাম, তার কী হবে? তোমার উপর ঐ মেয়ের দাবি আছে, আমার দাবি নেই?

সেই সে রিক্লাইনারে বসে জীবনের দ্বিতীয় ঝাঁকিটা খেলাম। আমার মা আমার সামনে দাঁড়িয়ে তার পাওনাটুকু দাবি করছে, করতে হচ্ছে। আর কীই বা করবে? ভাল রেজাল্ট চাইতো, পেতো। অথচ কুসন্তান এই আমি তো কোনদিন মা-বাবাকে খুশি করার মানসে লেখাপড়া করিনি, করেছি ছেলেভুলানো এক সুন্দরীকে ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর হয়ে। এভাবে কেটে গেল প্রথম রাত।

পরদিন ব্লাড টেস্ট করাতে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে। অপেক্ষা করতে করতে এক কাল্লুমামার কায়কারবার দেখছিলাম। গাম চিবাচ্ছে, গাম বিলাচ্ছে, সবার কুশল জানতে চাচ্ছে, সবার সাথে হাত মেলাচ্ছে। নাহ, আমেরিকার সাউথ আসলেই আলাদা। দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলাম, বললো ভয় পায় না আর। যাবার পথে মা বলছিলো গাড়ি চালানোর কথা।

- আজকে আমি চালাই, তুমি দেখো তো আমার চালানোটা কেমন এখন। আমি মাঝেমধ্যে একটু-আধটু শিখেছি।

- নাহ, হাতটা ঠিকমত ঘুরানো শিখবা না তুমি কোনদিন। এ কী, খালি পায়ে চালাচ্ছো কেন? পায়ে গরম লাগবে তো।

- আমার এভাবেই সুবিধা। আমাকে আমার মত একটু চালাতে দিয়েই দেখো না। আহারে, আজমীরের ঐ গাড়িটা আর নাই, না? খুব মনে পড়ে ওটার কথা। ওটায় করে আমাকে নিউ ইয়র্ক থেকে নিয়ে গিয়েছিল তোমাদের ওখানে।

- আর বোল না ঐ পাগলের কথা। আমারো খুব মন পড়ে ঐ গাড়িটার জন্য।

- আচ্ছা, এবার যে তুমি আমাকে তেমন বকা-ঝকা করছো না?

- দেই নাই, তবে দিতে কতক্ষণ? রাস্তার দিকে চোখ রাখো। আরেকটু জোরে চালাতে পারো, স্পিড লিমিট ৩৫ এখানে। ওহ, আজকে বিকেলে তোমাকে সমুদ্রের পাড়ে নিয়ে যাবো কিন্তু।

- জানো, সেদিন তোমার মঞ্জু আঙ্কেল একটা কথা বলছিল। মানুষ তো মিড্‌ল-ইস্ট থেকে কত কত দিনার পাঠায়, তবু সবাই আমেরিকা আসতে চায়। এর জন্য আমরাই দায়ী। দামী জিনিসপত্র সব দেশ থেকেই যায়, তবু লোকে আমেরিকা আসতে চায় সুন্দর সুন্দর ছবি দেখে, ঘুরে বেড়ানোর গল্প শুনে। ছবি দেখে দেশের লোক শুধু সমুদ্রের পাড়টাই জানবে, ভিতরের কষ্টগুলোকে জানবে না।

চলছিলো এভাবেই আমাদের সেই টয়োটা ক্যামরি – আমার দ্বিতীয় বৌ, আমার আদরের আদমজী জুট মিল। মা বলছিলো কুকুরের ডাক শুনে ভয় পেয়ে গাড়িটার রিয়ারভিউ মিররে ব্যাথা পাবার কথা। আমি আফসোস করছিলাম কাল্লুদের হাতে হেনস্তা হবার দিনে গাড়িটা না থাকা নিয়ে। হাঁটার সময় মা আর পিছিয়ে পড়ছিল না, হয়তো আমি তার তালে হাঁটার কারণেই। একসাথে বাজার সারলাম। শেষ বেলাটা কেটে গেল ঘরোয়া আলাপ করে।

- ঘরে শানের শিক কাবাব মশলা আছে? না থাকলে নিয়ে রাখো কিছু। গরুর মাংসে দিয়ো, কষানোর সময়। অন্যরকম মজা।

- বাসায় স্যামন ম্যারিনেট করে রেখেছি তোমাদের জন্য। শরীর ভাল না দেখে তেমন কিছু করতে পারলাম না এবার, বাবা। তোমার ছোট খালুর কাছ থেকে শিখেছি টেলিফোনে। লেমন-পেপার আর মধু দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখা আছে। ঘরে গিয়ে বেক করবো।

- না করে ভাল করেছো। আমি তো এবার এসেছি তোমাকে খাওয়াতে। এত এত লোক আমার রাঁধা বিরিয়ানি খেয়ে যায়, অথচ তুমিই বাদ থেকে গেলে। শর্টকাট শিখেছি একটা। তন্দুরী মশলা দিয়ে মুরগি ওভেনে বসিয়ে দিবা, আর রাইস কুকারে সিন্ধি মশলা দিয়ে বিরিয়ানি। ৪৫ মিনিটে মামলা খতম। গন্ধ বা নোংরার বালাই নেই।

কোনদিন কি ভেবেছি এরকম ‘মেয়েলি’ আলাপ করবো আমি মায়ের সাথে? সাথে সাথেই মনে হল, অনুভূতিশূন্য হওয়ার মধ্যে আদতে কোন পৌরুষ নেই। পেছনের দিকে তাকালে আফসোস হয় আড়ালে থাকার দিনগুলো মনে করে। খেতে বসে মনে হচ্ছিল, কতদিন পর তিনজন একসাথে, কতদিন আব্বুসহ চারজন একসাথে খাই না। মা চোখে পানি এনে বললো যেন দারুর দুনিয়া থেকে দূরে থাকি। না, চেখে দেখার জন্যও না। ১% অ্যালকোহল থাকলেও না। অন্য সময় হলে আলাদা কথা ছিল, এখন তোমার মনে অনেক কষ্ট, এখন এটা নেশা হয়ে যাবে। কী আশ্চর্য যুক্তিবাদী হয়ে গেছে আমার আবেগপ্রবণ মা, কত বড় হয়ে গেছে আমার ছোট ভাইটা।

নীড়ে ফেরা বোধহয় একেই বলে।

(প্রায় শেষ)


মন্তব্য

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বেদনা-মেশানো সুখপাঠ্য লেখা।

ছোট্টো একটি নালিশ। লেখায় উল্লেখ করা অনেক ঘটনা বা প্রসঙ্গ জানা না থাকায় একটু-আধটু হোঁচট লাগে। পুরো লেখার তাতে ক্ষতিবৃদ্ধি কিছু ঘটে না, তা একই রকম সুখপাঠ্য থেকে যায়। কিন্তু পাঠকের মন কুঁত থুঁত করতে থাকে। মনে হয়, ওই বিষয়টা তো ঠিক বুঝলাম না! এই রকম আর কি!

সেরা উদ্ধৃতিযোগ্য বাক্য : অনুভূতিশূন্য হওয়ার মধ্যে আদতে কোন পৌরুষ নেই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

খাপছাড়া, ছোট ছোট লেখা লিখতে গিয়ে এই বদভ্যাস ধরে গেছে। আরেকটা ব্যাপার কাজ করে মনে হয়। নিজের জীবন নিয়ে লিখতে গেলে তৃতীয় পক্ষের কাছে অজানা কতটুকু, সেটার পরিমাপ বোঝা দুষ্কর। নাহয় ঐ খুঁতখুঁত দূর করতে লেখককেই চিনলেন ব্যক্তিগত ভাবে। 'ব্লগীয় সম্পূরক প্রশ্ন' আর কি!

বেশি বড় হয়ে যাবার ভয়ে অনেক ডিটেইল এড়িয়ে গেছি। বিশেষ কোন বাক্যে সংযোজনের প্রয়োজন বোধ করলে জানাবেন, জুড়ে দেবো।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- একটা পর্যায়ে এসে আর পড়তে ইচ্ছা হলো না। বলা যায় শক্তিতে কুলালো না!
লেখা নিয়ে তাই কিছু বলছিনা।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মাত্র পরশু মা'কে ছেড়ে প্রবাসে এসেছি। এসব লেখা চোখ ভেজায়। পুরোটা পড়া যায় না।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

পুরাটা একটানে পড়লাম ... কিছু একটা বলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কি বলব বুঝতে পারছি না ... লেখাটা খুব ভালো হয়েছে এইসব বলার মনে হয় মানে নেই কোন ...

ভালো থাকো ...

[তোমার মাকে একবার রানা স্যারের বাসায় দেখেছিলাম ... লেখাটা পড়ে হঠাৎ সেটা মনে পড়লো ... উনি রোজা রেখেছিলেন সেদিন ... তুমি এসি রুম থেকে বেরিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলে আযান দিয়েছে কিনা ...

ছয়-সাত বছর আগের কথা, ভাবা যায়?]
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

তোমার স্মৃতিশক্তি তো অসাধারণ!

পরিবর্তনশীল এর ছবি

নীড়ে ফেরা বোধহয় একেই বলে

---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অনিন্দিতা এর ছবি

নিজে মা বাবার সাথে থাকলেও পড়ে কেমন যেন আনমনা হয়ে গেলাম। ছোট ভাইটা কথা মনে পড়ল। বেচারা বিদেশে হয়ত এভাবে মন খারাপ করে থাকে।

কনফুসিয়াস এর ছবি

এইসব লেখা এ কারণেই পড়তে চাই না। আর কোন লেখা পড়তে আর ইচ্ছে করে না।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হিমু এর ছবি

একবার ভাবলাম, বলি, এইরকম লেখা আর লিখো না। তারপর মনে হলো, এরকম লেখার জন্যেই তো ব্লগিং। পড়বো, কাঁদবো কিছুক্ষণ। কিন্তু এমন লেখা লিখবো না নিজে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

রেজওয়ান এর ছবি
ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ।

হযবরল এর ছবি

অসাধারণ। কিন্তু লেখাটা না পড়লেই আমার জন্য ভালো ছিলো। যত বেশী সম্ভব ভুলে থাকতে চাই মানবিক অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

সিনেমা দেখে আসলেও বই বা লেখা পড়েআমার সহজে চোখে পানি আসেনা ,,, অথচ এখন চশমাটা বেশ ঝাপসা
আপনার মাকে আমার শ্রদ্ধা জানাবেন
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

মনে পড়ছে কতদিন মাকে দেখি না। মায়ের পাশে দুদন্ড বসে কথা বলি না। আমরা এভাবেই দিন দিন সরে যাচ্ছি মায়ের কাছ থেকে! অথচ একসময় মায়ের সঙ্গে ঘুমুলেও তিনি উঠার সঙ্গে সঙ্গে জেগে যেতাম বলে, তাঁর একটি আটপৌড়ে শাড়ি আমার বুকে গুঁজে দিয়ে উঠে পড়তেন। শাড়িতে মায়ের শরীরের ঘ্রাণ ছিলো বলে ফাঁকিটা ধরতে পারতাম না। (মায়ের মুখে শোনা।)

সেই জননী থেকে আজ কতটা দুরে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছি। মাঝে মাঝে নিজকে খুবই স্বার্থপর মনে হয়।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

মা এখানে থাকতে দিনে দুই-তিনবার ফোন করতো। মাত্র সপ্তাহ খানেক হয়ে দেশে। আশ্চর্য ব্যাপার হল, আমাকে আর কেউই ফোন করে না। উপলব্ধির খুব কঠিন উপায়।

বর্ষা এর ছবি

ইশতি, লেখাটি অনেক আগেই পড়েছিলাম, হিমু লিংকটা দিয়েছিলো। আজ আবার পড়লাম। আমি যেনো প্রয়োজনে তোমার মায়ের মতো হতে পারি। মাকে দেখে রেখো আর নিজের যত্ন নিও, তোমরা ভালো থাকলেই উনি ভালো থাকবেন।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

তিথীডোর এর ছবি

(গুরু)
সব মায়ের প্রতি (আলো)

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

রেজওয়ান [অতিথি] এর ছবি

আমার মা আমার সামনে দাঁড়িয়ে তার পাওনাটুকু দাবি করছে, করতে হচ্ছে। আর কীই বা করবে? ভাল রেজাল্ট চাইতো, পেতো। অথচ কুসন্তান এই আমি তো কোনদিন মা-বাবাকে খুশি করার মানসে লেখাপড়া করিনি, করেছি ছেলেভুলানো এক সুন্দরীকে ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর হয়ে।

মরিচীকার পেছনে ধাওয়া করে তো আফসোস ছাড়া আর কিছু পেলাম না। মা বাবার পাওনাটুকু কি আদৌ ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।