৪. নির্বাচনের খরচ রাষ্ট্রীয়ভাবে যোগানো এবং রান-অফ ইলেকশন
প্রবাসে অনেকেই দেশের কথা ভাবেন, দেশের জন্য কিছু করতে চান, দেশের রাজনীতির পরিবর্তন চান। ডলার-দিনার-পাউন্ডে উপার্জন শুরু করার পর দেশদরদী হওয়া খুব সহজ। পরিকল্পনার চেয়ে ভালবাসা অনেক সহজ। দূরে বসে দেশকে ভালবাসতে স্রেফ ডিশ নেটওয়ার্কে এনটিভি-চ্যানেল আই, হালাল মাংস, আর চেক বুক লাগে। অথচ বিদেশী শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালিদের সত্যিকার দায়িত্ব তাঁদের জ্ঞানকে কাজে লাগানো, প্রকৌশল থেকে চিকিৎসা বা ব্যবসা পর্যন্ত সবকিছু নিয়ে লব্ধ জ্ঞান দেশে পাঠানো। সবাই শুধু স্কুলে কম্পিউটার দেন, নয়তো মাইক্রোক্রেডিটে টাকা ঢালেন। ফিতরা-যাকাতের যুগ পেরিয়ে এসে প্রবাসী বাঙালি আজ এক ধাপ আধুনিক। ওভারসিজ চ্যারিটির নতুন নাম তাই মাইক্রোক্রেডিট।
কার্যকর উন্নয়নের পেছনে বস্তুগত অবদান রাখতে নারাজ বাঙালি দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি অনেক আগেই। সবাই শুধু স্যানিটারি ল্যাট্রিন বা ধানমণ্ডিতে অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে টাকা পাঠায়। বাড়তি জামা-জুতা কিনতে কারো বাধে না, কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সরাসরি সরকারী তহবিলে দশ-পনের ডলার অনুদান পাঠানোর কথা বললে গরিমসির শেষ নেই। সেই হতাশার মাঝেই অনেকটা আলোর মত ঠেকলো এক বড় ভাইয়ের কথা। দেশ নিয়ে কথা বলতে বলতে এক সময় জানালেন তাঁর পরিকল্পনার কথা। চাকরি-বাকরি করে কিছু টাকা জমাতে পারলে তিনি দেশে কিছু সৎ রাজনীতিককে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করবেন। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকালীন আদর্শগুলোর প্রতি অনুগত থাকার মত কিছু মৌলিক শর্ত ছাড়া আর কোন খবরদারিই থাকবে না। কাগজ-কলম নিয়ে হিসেব করতে বসেই মনে হচ্ছিল কত বেশি সহজ এরকম কিছু করে ফেলা।
জাতীয় সংসদের প্রতিটি আসনে বর্তমান ব্যায়সীমা ৫ লক্ষ টাকা। বাস, ব্যানার, পোস্টার, বিরিয়ানি, আর মীরপুর এলাকায় কামাল মজুমদারের নেতৃত্বে নারী-মিছিল বাদ দিলে এর চেয়ে বেশি খরচের প্রয়োজনও নেই। ১৫ কোটি মানুষের বাংলাদেশে প্রতি আসনে গড় লোকসংখ্যা ৫ লক্ষ। এর অর্ধেক ভোটার হলেও ভোটার সংখ্যা আড়াই লক্ষ। দিনে আড়াই হাজার মত ভোটারের কাছে পৌঁছতে পারলে তিন মাসের মধ্যেই প্রত্যেক ভোটারের সাথে পরিচিত হওয়া যায়। আমেরিকার মত বিশাল দেশেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য মাত্র শ’পাঁচেক পেশাদার প্রচারকর্মী আছেন। বাকি সবাই স্বেচ্ছাসেবক। ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক দিনে ৫০ জন ভোটারের কাছে দেখা করলেই হয়ে যায়। কাজটা কঠিন নয়, তবে ভীতিকর। সাহস করে নেমে পড়লে অস্ত্র ও অর্থের প্রভাব ছাড়া এভাবেই নতুন কোন প্রার্থীর পক্ষে স্বল্প খরচে তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারাভিযান চালানো সম্ভব।
যদু-মধুদের নির্বাচনে দাঁড়িয়ে সরকারের টাকায় মোচ্ছব করা রোধ করতে মনোয়নপত্রের সাথে হাজার পঞ্চাশেক ভোটারের সাক্ষর সম্বলিত একটি পিটিশন জমা দেবার বিধান করা যায়। আপাতদৃষ্টে ছেলেমানুষি মনে হলেও হরতালের মত ধুম-ধাড়াক্কা রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রতিরোধের উপায় হিসেবে নাগরিকদের কাছে যাওয়া ও তাদের সমর্থন-প্রতিবাদের চিহ্নস্বরূপ সাক্ষর নেওয়ার সংস্কৃতি দাঁড় করানো যায় এভাবে। আইন করে হরতাল বন্ধ করে কোন লাভ নেই। রাজনীতিকদের যত বেশি ভোটারদের প্রতি মুখাপেক্ষী করা যাবে, ততই বাড়বে ভোটারের ইচ্ছার প্রতি সচেতনতা।
প্রতি আসনে ৩ জন করে প্রার্থীকে সরকারী তহবিল থেকে অনুদান দিলেও খুব সহজেই নির্বাচনের খরচ যোগানো সম্ভব। ৩০০ আসনে খরচ হবে মাত্র ৪৫ কোটি টাকা। যতদূর মনে পড়ে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর অধ্যাপক আবুল বারাকাতের একটি লেখায় পড়েছিলাম সেই নির্বাচনে হাজার দশেক কোটি টাকা খরচ হবার কথা। হিসেবে খাতায় গোলমাল হয়ে যদি পাঁচ গুণ বেশি খরচ হয়, তবুও নির্বাচনী খরচ অনেক সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সকল প্রার্থীর জন্য নির্বাচনের আগে রেডিও-টেলিভিশন সহ প্রচার মাধ্যমগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া যায়। টাউন হল গুলোয় ইস্যুভিত্তিক তুলনামূলক অবস্থান স্পষ্ট করে রচিত প্রচারণার ব্যবস্থা করা যায়। পরবর্তীতে প্রার্থী মনোনয়নের খরচ বহন, নির্দিষ্ট সমাবেশস্থল দেওয়া, পরিকল্পিত ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব মিডিয়াকে ব্যবহার, ইত্যাদি খুঁটিনাটি সংযোজন করা সম্ভব প্রয়োজন মত।
জর্জ বার্নার্ড শ’ গণতন্ত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একটি দুর্দান্ত উদাহরণ দিয়েছিলেন। ধরুন কোন নির্বাচনে চার জন প্রার্থী যথাক্রমে ১, ২, ৩, ও ৪ ভোট পেল। প্রথাগত গণতন্ত্রে সেই ব্যক্তিই নির্বাচিত হবেন, যিনি ৪ ভোট পেয়েছেন। অথচ বাস্তবতা এটাই যে অর্ধেকের বেশী ভোটার তার প্রার্থিতার বিপক্ষে। আপাতদৃষ্টে বেশি কচলানো বা ত্যানা প্যাঁচানো মনে হলেও এই ধরনের ছোট ছোট ব্যাপারগুলোই অনেক বড় বাটারফ্লাই ইফেক্টের জন্ম দিতে পারে। শুধু ভেবে দেখুন আমেরিকার ২০০০ সালের নির্বাচনের কথা। রালফ নেডার নাম পার্টি-ক্র্যাশার, সুপ্রিম কোর্টের নগ্ন পক্ষপাত, কিংবা গণনাযন্ত্রের ত্রুটির পর শেষতক মাত্র ৭০০ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন জর্জ বুশ জুনিয়র ওরফে ডাবইয়া। অধিকাংশ ভোটার নিশ্চিত ভাবে অ্যাল গোর বা রালফ নেডারের পক্ষে না থাকলেও খুব দৃঢভাবে জর্জ বুশের বিপক্ষে ছিলেন। রান-অফ নির্বাচন হলে ইরাক যুদ্ধ হয় না, তিন হাজার মার্কিন সেনা ইরাকে মারা যায় না, লক্ষ লক্ষ ইরাকি নিজ দেশে পরাধীন হয়ে দিনাতিপাত করে না, এবং সাদ্দাম হোসেনকে অনভ্যস্ত দাড়ির চুলকানি থেকে বাঁচতে ফাঁসিতে ঝুলতে হয় না।
অতএব, কোন আসনে জয়-পরাজয়ের নিষ্পত্তি শতকরা ৫ ভাগের কম ব্যবধানে হলে কিংবা বিজয়ী প্রার্থী অর্ধেকের কম ভোট পেলে সেখানে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত দুই প্রার্থীর মধ্যে পশ্চিমা ধারায় রান-অফ ইলেকশনের প্রচলন করা যায়। ফলশ্রুতিতে অন্যতম উপজাত হিসেবে কিছুটা এলাকাভিত্তিক ঐক্যেরও দেখা মিলবে। যে-ব্যক্তি দুই দুই বার নির্বাচনে জিতে আমার এলাকার প্রতিনিধিত্ব করবে, আমার সাথে মতে অমিল থাকলেও আমি তাকে আমার নেতা হিসেবে মেনে নেবো। কারণ দিনের শেষে একটি নির্বাচনের সফলতা নিরূপিত হয় বিজিত পক্ষ নিজেদের পরাজয় কীভাবে নিচ্ছেন তা দিয়ে, বিজয়ী পক্ষের জয়ের ব্যবধান দিয়ে না।
(চলবে)
ছবিঃ নেগেটিভাসক্রিপাস, ব্লগস্পট।
মন্তব্য
বরাবরের মতই চিন্তাশীল লেখা। সৎ রাজনীতিবিদ দের পৃষ্টপোশকতা দেওয়ার আইডিয়া টা ভাল। তবে সেরকম কাউকে খুজে পাওয়া মুশকিল হবে। আর আজকাল অবস্থা এমন খারাপ সেরকম কারো যদি নিজের অস্ত্র বল না থাকে দেখা যাবে অন্য কেউ তাকে ঝাড়ে বংশে বিনাশ করে ফেলল। এধরনের আসাসিনেশন অহরহই হচ্ছে।
তবে এটা ঠিক যে শুধু যাকাত ফিতরা বা মাইক্রো ক্রেডিট না আমাদের আরো অনেক পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে দেশকে সাহায্য করার।
লেখকের জন্য শুভেচ্ছা।
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
অস্ত্র ও সন্ত্রাসীর ভয় খুবই যৌক্তিক। তবে, "কত খুন"এর চেয়ে "প্রথম খুন"এর ভয়টাই কিন্তু বেশি আমাদের। মৃত্যু দেখে অভ্যস্ত হবার জন্য, মৃত্যুর পরও এগিয়ে যাবার জন্য কিন্তু দুই-একটি মৃত্যুই যথেষ্ট। প্রশ্ন হল, দেশের জন্য সাহস করে মরবার মত কতজন আছি আমরা।
জনসচেতনতার ভূমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব খুনের বিচার হয় না, সব সন্ত্রাসীর শাস্তি হয় না। তবু আমরা মোটামুটি বুঝতে পারি খুন-হত্যা-জুলুম থেকে কারা লাভবান হছে। এই ব্যক্তি/গোষ্ঠীদের ভোট না দিলে সন্ত্রাস কিছুটা কমতে বাধ্য।
ফিতরা নিয়ে কী বলবো আর, ভাই? কাউকে রাজি করাতে পারি না অর্থগত সাহায্যের বদলে/সাথে বস্তুগত সাহায্য করতে। এখনও পর্যন্ত সাফল্যের পিলার স্থাপন করে যাচ্ছি!
কালকেই প্রথম আলোয় ফারুক চৌধুরীর কলামে পড়লাম ভূটানে নির্বাচনে নাকি প্রার্থীদের সব খরচ রাষ্ট্র থেকে দেয়া হয়। প্রতি প্রার্থীকে এক লাখ টাকা করে দেয়া হয়। অধিকাংশ প্রার্থীই সব টাকা খরচ করতে পারে না, অবশিষ্টাংশ রাষ্ট্রকে ফেরত দেয়।
আমাদের দেশেও এটা চালু করা জরুরী। এক লাখের বদলে পাঁচ লাখই দেয়া হোক। কিন্তু পই পই করে নির্বাচনে ব্যয়ের হিসাব দিতে এবং নিতে হবে।
নব্বইয়ের দশকে এক বিশাল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নাকি দম্ভ করে বলেছিলেন, 'মনে রাখবেন, আমরা ভূটান নই'। কালকে ফারুক চৌধুরীর সাথে আমার আক্ষেপটাও বেরিয়ে গেল -' আহ, আমরা যদি এখন ভূটানও হতাম!' (কি লজ্জা! বাংলাদেশ ফুটবলে এখন ভূটানের সাথেও ড্র করে হারা ম্যাচ বাঁচায়)
সিরিজ চলুক
= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙ্গা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।
এই লজ্জাই বাকি ছিল। শেষতক ভূটানের কাছ থেকে সবক নিতে হচ্ছে বাংলাদেশের।
একবার রাজনৈতিক আলোচনায় শুনেছিলাম, নির্বাচনের জন্য বড় দলগুলো থেকে মনোনয়ন চাইতে নাকি ১০০ কোটি টাকা লাগে। প্রাক-মনোনয়ন খরচ হিসেবে ১০ কোটি টাকা শুধুমাত্র "এলাকায় পরিচিতি"র জন্য। বাকি ৯০ কোটি নির্বাচনের সময়!
৩০০ আসনের প্রতিটির গড় আয়তন ২০০ বর্গমাইল মত। আমরা সবাই নিজ নিজ নিবাসের ১৫ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে বসবাসকারী কোন না কোন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, সৎ ব্যবসায়ী, দুঁদে আইনজীবি, বা দক্ষ চিকিৎসক চিনি। এঁদের "পরিচিত" হতে লাখ লাখ টাকা লাগবার কারণ নেই। প্রার্থী হিসেবেও সবাই যোগ্য।
বাকিটা সদিচ্ছার ব্যাপার।
এই মন্তব্যটা নিয়ে কিঞ্চিৎ আপত্তি করি। ভুটান ছোটো ও দরিদ্র দেশ বলে তাদের মধ্যে অনুকরণীয় কিছু পাওয়া যাবে না বা তাদের কোনোকিছু অনুকরণ/অনুসরণ করলে আমরা ছোটো হয়ে যাবো - এই মনোভাবটা ভালো লাগে না। তাহলে বাংলাদেশ থেকে উদ্ভুত মাইক্রোক্রেডিটের ধারণা যে আমেরিকা বা অন্যসব দেশ নিচ্ছে, তাদের তো লজ্জায় মাটিতে মিশে যাওয়ার কথা।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
তা ঠিক। এভাবে দেখাটা ঠিক না আসলেই। হতাশাটাই বের হয়ে আসে আর কি। ভূটানও 'দুর্বল' রাষ্ট্র হিসেবেই পরিচিত। তারা যদি করতে পারে, আমাদেরও পারা উচিত, এটাই আর কি।
সিরিজ দৌড়াক। সাথে আছি।
একটা প্রশ্ন: সৎ রাজনীতিবিদ যাচাই-বাছাই করার প্রকৃয়া কী হবে? ঠিক কোন যোগ্যতা থাকলে তাকে সৎ বলা যাবে? কোন কোন ক্যাটেগোরিতে সততার পরিমান মাপা হবে?
কি মাঝি? ডরাইলা?
শুধু এবং শুধুমাত্র আয়-ব্যায়ের স্বচ্ছতায়।
এই মুহূর্তে যাঁরা রাজনীতি করছেন, তাঁদের কারো কোন আদর্শগত অবস্থান নেই। স্রেফ টাকা ও উচ্চাভিলাষের জোরে তাঁরা জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন। বেশি টাকা থাকলেও কারো সন্ত্রাসী পুষবার অধিকার নেই। এটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতদের কাজ। ভোটারদের কাজ আদর্শগত দীনতা ও দুরভিসন্ধিকে প্রতিহত করা। সেই বিতর্কের ফলাফল প্রকাশ পাবে নির্বাচনের পর। তার আগ পর্যন্ত কালো টাকার জোরে স্রেফ ব্যানার-পোস্টার-বিরিয়ানি-মাইকিং দিয়ে জয়ী হওয়া বন্ধ করতে হবে। টাকার খেলা বন্ধ হলেই এই দিকে দৃষ্টি পড়বে।
তাত্ত্বিকভাবে ঠিক আছে। কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি চিন্তা করতে গেলে কেমন যেন মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা কীভাবে সম্ভবপর হবে? চাইলেইতো আর সবাই সৎ হয়ে যাচ্ছে না।
যাই হোক, পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় ...
কি মাঝি? ডরাইলা?
কাজটা কঠিন, তবে খুবই সম্ভব। রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় সত্য হল, 'পার্সেপশন ইজ গ্রেটার দ্যান রিয়্যালিটি'। কে বা কারা 'অসৎ' বা 'দুর্নীতিগ্রস্ত', তা এলাকার লোকজন খুব ভাল করেই জানে। নির্বাচন এলে তৃণমূল থেকে বিযুক্ত শীর্ষনেতৃত্বের কাছে নিজেকে 'ক্লিন' বলে দাঁড় করানো গেলেও এলাকার লোকজন সেই ধোঁয়ায় ভোলে না। দিনের শেষে ব্যাপারটা তাই জেনে-শুনে চোরা-চামুন্ডাকে ভোট না দেওয়ায় এসে ঠেকে।
একটা মজার ব্যাপার চিন্তা করে দেখুন। আমাদের দেশে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকের সংখ্যা এত বেশি যে 'সৎ' রাজনীতিক হয়ে টিকে থাকলেই অন্য রকম একটা সেলিব্রিটি স্টেটাস জুটে যায়। বাকি থাকে আপনার-আমার গিয়ে সেই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো, সাহস যোগানো।
সমস্যা হচ্ছে দারিদ্র্য। ওটা দুর করতে পারলেই অনেক কিছুর লোভ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে মানুষ।
আমাদের নেতাদের রাজনীতি ব্যবসার মুলে কিন্তু সেই দারিদ্র্যই।
কি মাঝি? ডরাইলা?
এমন কি হতদরিদ্রেরাও মনে হয় নিজেকে বিক্রি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে একসময়। দারিদ্র্য বা শিক্ষার অভাব কাজ করে, কিন্তু সততা এমন একটি ব্যাপার যা বোঝার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন নেই। আমরা ভাল কোন পথ দেখাতে পারছি না দেখেই হয়তো "মাইট অ্যাজ ওয়েল এনজয় ইট" জাতীয় মানসিকতা কাজ করছে।
ঠিক সেই সময় প্রয়োজন হয় একটি স্ফুলিঙ্গের।
কি মাঝি? ডরাইলা?
কিংবা বন্দুক হাতে উলঙ্গোর্ধ্বার্ধমোচুদ্রোহীর...
সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিক স্পনসর করার বিষয়টা খুব বাস্তবসম্মত নয় বলেই ধারণা করি। স্পনসরকারী যে কোনো ধান্দা নিয়ে কাজটা করছে না, তা কীভাবে নিষ্চিত করা যাবে? আর যাঁকে আমি স্পনসর করবো, তিনি আমাকে বিশ্বাস করবেন (তিনি যেহেতু সৎ) কীসের ভিত্তিতে? তিনি পরোক্ষে হলেও আমার হাতে বাঁধা পড়ে থাকছেন, ঠিক যেমন এখনকার রাজনীতিকরা চাঁদা দেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি হয়ে যায়।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
একেবারেই পৃষ্ঠপোষকের হাতের পুতুল হয়ে থাকা প্রার্থিতা আরো বেশি ক্ষতি করবে অবশ্যই। তবে কিছু মূলনীতির প্রতি যাঁরা সহমত পোষন করেন, তাঁদের শর্তসাপেক্ষে আর্থিক সাহায্য দেওয়া যায়। যেমন, জামাত-শিবিরের রাজনীতি থেকে দূরে থাকা কিংবা শিক্ষানীতি সংস্কার জাতীয় কিছু ইস্যুতে একমত, এমন কাউকে আমি খুশি মনে পৃষ্ঠপোষন করবো।
পঁচা মানুষগুলোর মাঝে এক ধরনের সহজাত ঐক্য কাজ করে, কিন্তু সৎ মানুষদের কোয়ালিশন দেখা যায় না তেমন একটা। সেদিকেই কিছু একটার চেষ্টা বলতে পারেন। মানুষে-মানুষে একমত হবার চেয়ে মানুষে-ইস্যুতে একমত হওয়া অনেক সহজ।
এক অর্থে কিছুটা আবেগী হলেও যুক্তি নিয়ে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কিন্তু অসততা আর লোভ যেখানে আমাদের তৃলমূল পর্যায়ে চলে গেছে সেখানকার জন্য কী চিন্তা-ভাবনা?
এমপি-মন্ত্রী-চেয়ারম্যানের যন্ত্রীরা যখন বলে- হালায় নিজেও খাইলো না, আর কাউরে খাইতেও দিলো না। তখন কিন্তু সৎ মানুষটিও নিজের ভিত পোক্ত করতে সরকারের ঘরের সন্দেশ নিয়ে একটু একটু ভেঙে কাছের অনুসারীদের দেবেন। সেই অর্থে কিন্তু তিনি সৎ থাকতে চেষ্টা করলেও পারছেন না। সন্দেশের টুকরো না বিলালে আগামীতে নিজের আসনটা- নিদেন পক্ষে জনসমর্থনটা ধরে রাখা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। আর এমন বাস্তবতায় তিনি নিজে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগেই কথা দিতে বাধ্য হন- আচ্ছা পাশ করলে তোমার কন্ট্রাক্ট, ওমুকের লাইসেন্স কিংবা তমুকের জায়গাটা দখল করে দেবো। সেগুলো বজায় রাখতে গেলে তিনি সৎ থাকতে পারছেন না। নয়তো তার আম-ছালা দুইই খোয়াতে হবে।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
হয়তো গোঁয়ার্তুমি বলবেন, তবু আমি মানতে নারাজ যে অসততা তৃণমূল পর্যায়ে চলে গেছে। সৎ মানুষের সংখ্যা এখনো অনেক বেশি। প্রয়োজনে তাঁরা দেশের জন্য ত্যাগ করতেও প্রস্তুত। যাঁরা সৎ থাকতে পারবেন না, তাঁদের ভোট দেবার কোনই দায়বদ্ধতা নেই ভোটারদের। সন্ত্রাস ও কালো টাকার দাপটের কাছে অনেক প্রার্থী পরাজিত হন বটে, তবে কেউ মনে হয় না সততার দায়ে নির্বাচনে পরাজিত হন।
পাঁচ দিয়ে চুপচাপ পরের খন্ডের অপেক্ষায় আছি।
রাস্তায় এক বস্তা ইউরো কুড়িয়ে পেলে সচলায়তনের পক্ষ থেকে একজনকে মনোনয়ন দেয়া যেতে পারে। আমার পছন্দের প্রার্থী বিপ্লব রহমান। না, তিনি "বিপ্লব" বলে নন, "রহমান" বলে। বাংলাদেশের ভাগ্য একমাত্র রহমানদের হাতেই পরিবর্তিত হয় (উদাহরণের জন্যে ইতিহাস দ্রষ্টব্য)।
হাঁটুপানির জলদস্যু
খাসা বলেছেন! পড়বার জন্য ধন্যবাদ। দেখি কত তাড়াতাড়ি বাকিটা নামাতে পারি। আটকে যাবার সময় ঘনিয়ে আসছে!!
দেইখেন আবার পি এইচ ডি শিকোয় না উঠে এই 'বোনের মোষ' তাড়াতে গিয়ে!!
কিপিটাপ!
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
একবার যখন তাড়া করা শুরু করছি, তখন মোষের বনের মাংস না খেয়ে তো থামছিই না। পিএইচডি == পারমানেন্ট হেড ড্যামেজ। সেই অর্থে ঠিক পথেই আছি মনে হয়। আর, পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেছি। মন চায় মাস্টার্স নিয়ে ভেগে যাই।
আমরা রাজনৈতিক মূল্যবোধ কতটা গড়ে তুলতে পারছি মানুষের মাঝে? অতীতেও দেখা গেছে সৎ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয় আর পেশীশক্তির অধিকারী প্রার্থী সশস্ত্র ক্যাডার সহ যায় বিজয় মিছিলে। অনেক মানুষই ভোট দেয় মার্কা দেখে, দলীয় ইনফ্লুএন্স এখানে কতখানি বিবেচ্য হওয়া উচিৎ?
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
রাজনৈতিক মূল্যবোধের কয়েকটি স্বাভাবিক ধাপ আছে। কিছু মূল্যবোধ শুধুই বর্তমান ও তাৎক্ষণিক অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত। মুক্তিযুদ্ধ কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এই কাতারে পড়ে। এধরনের অবস্থায় নিপীড়নের কারণে "আমজনতা" ঝাঁপিয়ে পড়ে আন্দোলনে।
শান্তিকালীন রাজনীতি অনেক কঠিন। মানুষ সহজাত কারণেই স্বাভাবিক অবস্থায় রাজনীতির চেয়ে ভাত-কাপড় নিয়ে চিন্তা করে বেশি। রাজনীতিকের কাজ মানুষকে সেই সময়টায় ভবিষ্যত সম্পর্কে সচেতন ও সজাগ করা। আমাদের রাজনীতিকরা সৎ হলেও 'স্মার্ট' ছিলেন না সবসময়। মুষ্টিমেয় যে-ক'জন পেয়েছিলাম, তাঁদের মেরে ফেলা হয়েছে স্বাধীনতার বছর দশেকের মধ্যেই। এজন্যই সৎ-এবং-স্মার্ট রাজনীতিকের খোঁজে আমাদের ডঃ কামাল হোসেন কিংবা ডঃ ইউনুসদের দিকে তাকাতে হয়। এঁরা কেউই কিন্তু 'ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ান' নন। পেশাগত ভাবে ফুলটাইম রাজনীতিক যাঁরা, তাঁদের কাতারেই শিক্ষিত ও সচেতন তারুণ্য প্রয়োজন।
জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া বা মার্কা দেখে ভোট দেওয়ার পেছনে দলগুলোর ভূমিকা ব্যাপক। বড় দল শুধু ধারে কাটে না, ভারেও কাটে। এই ভারের কারণেই ছোট দলগুলো হারিয়ে যায়।
শুধু বাংলাদেশের ১৭ বছরের গণতন্ত্রে নয়, সেই ব্রিটিশ ভারতের আমল থেকেই দ্বিদলীয় রাজনীতি চলে আসছে। এর পরও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসেন। এটা অনেক বড় আশার কথা। ভোটার সংখ্যা, নির্বাচনী এলাকার আকার, অর্থে যোগান, স্বেচ্ছাসেবীদের উপর কাজের ভার, ইত্যাদি ব্যাপারে সংখ্যানুপাতিক হিসেব দেওয়ার কারণ একটাই -- মনের মধ্যে এই বিশ্বাসটুকু ঢোকানো যে পরিবর্তন শুধু সম্ভব নয়, সহজসাধ্যও।
তবে আমার মতে সবচেয়ে টেকসই পরিবর্তনের জন্য 'যোগ্য' প্রার্থীদের উচিত রাজনোইতিক দলের তালিকাভুক্ত সদস্য হওয়া, এবং দলের ভেতর থেকে ধনাত্মক পরিবর্তন আনা।
রাজনৈতিক দলের আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র না থাকলে ধনাত্মক পরিবর্তন বেশ কঠিন। দলীয় ঐক্যের ধুঁয়া তুলে অসৎ রাজনীতিকেরাও দলের মধ্যে দৃঢ় জায়গা পেয়ে যায়। ভিশন আছে এমন লোক রাজনীতিতে না এলে অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। রিসেন্ট অতীতে শিক্ষিত তরুণদের রাজনীতিতে আসতে দেখে বেশ আশান্বিত হয়েছিলাম, তবে শেষ পর্যন্ত তা দীর্ঘস্থায়ী হয় নি ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
আমি হতাশ না। কারণ, যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা কেউ "শিক্ষিত তরুণ" হিসেবে আসেননি, এসেছেন রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে। তারেক জিয়া, মাহী বি চৌধুরী, বা সজীব ওয়াজেদ কেউই "যোগ্যতা"র কারণে রাজনীতিতে স্থান পাননি। সৌভাগ্যবশত তাঁরা বিভিন্ন ভাবে রিজেক্টেড হওয়াতেই আগামীতে সত্যিকার রাজনৈতিক দর্শন ও প্রয়াস নিয়ে তরুণদের সামনে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তো যা দেখেছি তার সবই ছিল মুখস্ত রাজনীতি। দেখা যাক 'আউট অফ দ্য বক্স' রাজনীতি পাই কিনা সামনে। কোন শূন্যতাই চিরস্থায়ী নয়।
নিচের কমেন্টে নজরুল ভাই অনেকটা বলে দিয়েছেন তারপরো বলছি, ছাত্র রাজনীতিতে যে কি পরিমাণ নোংরামি তার অনেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা। রাজনীতিটাকে ব্যবহার করা হয় ব্যবসার মাধ্যম হিসেবে।নতুন রাজনীতিবিদ তাহলে আমরা কোথা থেকে পাব?
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
(নজরুল ভাইয়ের মন্তব্যেই জবাব দেই একসাথে)
১.
খুব দ্রুত পড়লাম... দৌড়ের উপরে আছি... কমেন্ট উল্টা পুল্টা হইলে মাইন্ডায়েন না।
২.
প্রার্থীতার সাথে হাজার পঞ্চাশেক ভোটারের পিটিসন দিয়া ফায়দা নাই... মনোন্নয়ন দাখিল করতে লাখ দুয়েক সমর্থকের বিরাট দল নিয়া যাওয়ার রেকর্ড আছে এই দেশে। সেখানে ৫০ হাজারের স্বাক্ষর তো মামূলি... সব টাকার খেলা।
৩.
নির্বাচনে আয় ব্যায়ের সঠিক হিসাব বিধাতাও বাইর করতে পারবো কি না সন্দেহ। এই দেশে প্রার্থীদেরে জিগান তারা এক কোটি টাকাও খরচ করে না। সব তাগো সুহৃদরা করে। অমুকে তমুকে আর সমুকে পোস্টার ছাপায়া দিছে ফ্রি। বন্ধু ব্যানারের খরচ দিছে। অমুকে ঐ খরচ দিছে। অমুক এলাকার 'জনগন' ভালোবাইসা মঞ্চ নিজেরাই সাজায়া দিছে। এই করতে করতে দেখবেন প্রার্থীর কোনও টাকাই খরচ হয় নাই। কসম। আর লোক সমাগম যা হয় মিছিলে মিটিংয়ে তা তো জনগনের ভালোবাসা। তাগোরে তো কেউ তেহারি খাওয়ায় না... মিছিলের পরে ২০ টাকা কইরা দেয় না!! কামাল মজুমদার যে নারীদের সমবেত করে সেগুলা সব তার গার্মেন্টের শ্রমিক... মিছিলে না খাড়াইলে বেতন দিবো না বইলা খারায়।
৪.
এই দেশে অর্ধেক ভোট যায় দলবিচারে। দল কলাগাছ খাড়া করাইলে কলাগাছরেই ভোট দিমু বইলা জনগন নামে। আরেকভাগ ভোট যায় ব্যক্তি বিচারে। এই জন্যই মিরপুরের এস এ খালেকরে নিয়া এইরম টানাটানি হয়। এইখানে সততা বা সৎ প্রার্থীর কোনও দাম নাই। প্রচারে কাজ হয়না নির্বাচনে। আর শেষ রাইতের টাকার খেলাও একটা বড় ফ্যাক্টর। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বস্তিতে বস্তিতে টাকার বস্তা পাঠানো হয় আগের রাইতে। দুই হাজার টাকায় যে নিজের ভোট বিক্রি করে তার কাছে এমপির পরিচয় বড় না, তার একমাসের খাই খরচা উঠলো এইটাতেই মারহাবা।
৫.
সৎ প্রার্থীদের সাহায্য দেওয়া বা নির্বাচন কমিশন থেকে বা রাষ্ট্র থেকে তাদেরে ডোনেশন দেওয়াটা বুদ্ধিযুক্ত মনে হইলো না। আপনি যতক্ষন পর্যন্ত আমারে আইনে খাড়া করায়া অসৎ প্রমাণ করতে না পারছেন ততক্ষন তো আমিই সৎ... কে ঠেকাইবো আমারে?
৬.
এখন যারা নেতৃস্থানীয় আছেন রাজনীতিতে... তাদের প্রত্যেকেরই এই ক্ষেত্রে অনেক পুরানা অবস্থান। বর্তমানে তাদের অবস্থান যাই হোকউক... তারা ৭০ দশক থেকেই মূলত আছেন। কিন্তু সেই অর্থে তার পরে রাজনীতিতে কোনও প্রজন্মই তৈরি হয় নাই। ছাত্র রাজনীতি থেকে ভালো মাল পাওয়া যায় নাই একটাও... ছাত্র রাজনীতির এই বেহাল দশায় ভবিষ্যতেও সেই সম্ভাবনা অসম্ভব।
৭.
এখন যা দেখা যাইতেছে তা নমুনা মাত্র। এইগুলা কিছু না। বুড়াগুলা মরলে পরে রাজনীতিতে নতুন যে প্রজন্মটা আসবে সেই প্রজন্মটা এখনো তৈরিই হয় নাই। একটা বিতিকিচ্ছিরি প্রজন্ম আসতেছে বইলা ধারনা করি।
৮.
পড়তে পড়তে আরো কি কি য্যান ভাবছিলাম... ভুইল্যা গেছি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ, কইলেন একখান কথা!
চার-পাঁচ বছর অন্তর সাধারণ নির্বাচন একটা বিশাল ঘটনা। এই সময় ২ লাখ মানুষ যোগাড় করে ফেলা খুবই সম্ভব। আমি বলছিলাম যেকোন আবেদন-আন্দোলনের আগে পিটিশন সাক্ষর করানোর সংস্কৃতির কথা। হাজার পঞ্চাশেক যাচাইকৃত সাক্ষর (প্রযুক্তি ব্যবহার করলে খুবই মামুলি ব্যাপার) না থাকলে কোন প্রকার অভিযোগ-আন্দোলন পথে/প্রকাশ্যে করা যাবে না, এধরনের আইন করা যায়। কতবার আর ভুয়া সাক্ষর নেবে? কেউ যদি টাকার জোরে বারবার করতে চায় এই কাজ, করুক না! অন্যথায় বারবার মানুষের কাছে যেতে হবে।
দ্রোহীর মন্তব্যও অনুরূপ ছিল। সেখানেই বলছিলাম, রাজনীতিতে রিয়্যালিটির চেয়ে পার্সেপশন বড়। কেউ বেখাপ্পা রকম খরচ করলে সেটা প্রমাণিত হবার দরকার নেই, তাদের ভোট না দিলেই হল। প্রমাণ না হলেও তো অনেক অপঘাতের পেছনে জামাতীদের হাতের কথা আমরা জানি। কেউ এসে প্রমাণ দেখিয়ে গেছে দেখে আমি জামাতবিরোধী নই, বরং আদর্শ আর পার্সেপশনের ভিত্তিতেই তাদের বিপক্ষে। এই চিন্তাটাকেই আর্থিক অনিয়মের বেলায় খাটানোর কথা বলছিলাম।
আপনিও কি মীরপুরের বান্দা, ভাই? দুঃখ যে কই রাখি। চরম হাবা, লুইস সব লোক মনোনয়ন পায় খালি এখানে।
একথা সত্যি যে গরীব মানুষগুলো হাজার দুয়েক টাকার বিনিময়ে ভোট বিকিয়ে দেয়, কিন্তু এর জন্য তাদের আদৌ কতটা দোষ দিতে পারি আমরা? আমরা যারা শিক্ষিত, সুবিধাপ্রাপ্ত, তারা কি আদৌ কিছু দেই/দিয়েছি তাদের জন্য? গ্রামে বা শহরের বাইরে কোথাও গেলে দেখতাম শহর/বুয়েট/বিদেশ থেকে আসা দেখেই অনেক আগ্রহ নিয়ে মানুষ কথা শোনে। কেউ পাশে বসে, কেউ একটু দূরে গাছ ধরে দাঁড়িয়ে। নৈমিত্তিক সমস্যা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যাপার পর্যন্ত সব কিছু নিয়েই তারা সমাধান খোঁজে আমাদের কাছে। পথের ফকিরও যে কতবার "বাবা দেশটা একটু ঠিক করেন আপনারা" বলেছে কিংবা "ছাত্র" জেনে ভিক্ষা নেয়নি, সেটা ভুলে যাবো এত সহজে? এই মানুষগুলোর বিশ্বাসের প্রতি গাদ্দারি হয়ে যায় হাল ছেড়ে দেওয়াটা। কারণ, আমার অভিজ্ঞতা বলে যে শিক্ষিতের মূল্যবোধই বরং অনেক বেশি সস্তায় কিনতে পাওয়া যায়।
এক্ষেত্রে চিন্তিত হওয়া স্বাভাবিক। তবে পৃথিবীর অনেক দেশেই এই প্রথা চালু আছে। আমাদের না পারার কারণ নেই। এটি সফল করার জন্য রাষ্ট্রীয় সাহায্য প্রয়োজন প্রচারাভিযানের সময়। বেশি/কালো টাকা কারো থাকতেই পারে। সবদিকে একসাথে টাকার খেলা শুরু হলে "বেটার ইভিল" তত্ত্ব কপচানো শুরু হয়। জোর করে যদি একটা কমন প্ল্যাটফরম দাঁড় করানো যায়, তাহলে অতিব্যয়ের মাধ্যমেই অসততা বের হয়ে আসবে। বাকিটা ভোটারের দায়িত্ব।
এই খানেই ছক্কাটা মেরেছেন। এই সিরিজটায় হাত দেওয়ার পেছনে কারণ শুধু এবং শুধুই এটা। আমেরিকার প্রাইমারি নির্বাচনটা খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। ম্যাকেইনের ৭০ দশকের রাজনীতি, হিলারির ৯০ দশকের রাজনীতি, আর ওবামার একুশ শতকের রাজনীতি দেখেছি। প্রচারনায় কী বিশাল তফাৎ। আগে যাদের বাতিল/অছ্যুৎ মনে করা হত, তাদের একত্র করেই অনেক বড় বিপ্লব হয়ে যাচ্ছে নীরবে। আমাদের দেশের রাজনীতি ৭০ এর দশকে নয়, ৬০ এর দশকে আটকে আছে। মাঝের ৫০ বছরে আমরা কিছুই পাইনি। আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের ইচ্ছা বা দেশপ্রেম নিয়ে আমার প্রশ্ন নেই, তবে প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ নিয়ে চিন্তা আছে। জাতীয় রাজনীতির সাথে চর দখলের পার্থক্য জানা নেই অনেকেরই। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, মনস্তত্ত্ব, আর ইতিহাস জানা না থাকলে রাজনীতি করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। বর্তমান ছাত্র রাজনীতি সেই ভ্রষ্ট উত্তরাধিকার নিয়েই এগিয়ে চলছে। তাই বলে পরিবর্তন মোটেও অসম্ভব নয়।
এজন্যই সব কথার শেষ কথা, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনই যথেষ্ঠ। যোগ্য কেউ কষ্ট করে দাঁড়ান শুধু কোন এক আসন থেকে। কাজটা কঠিন হোক কি সহজ, আমার মত অনেককে পাশে পাবেন। স্রেফ একটা জয় দরকার।
অসাধারুণ (অসাধারণ আর দারুণ-এর সন্ধি)
এই সিরিজটি দেশের কোনও পত্রিকায় প্রকাশের চিন্তা করে দেখতে পারেন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ। পত্রিকায় ছাপানো নিয়ে আমার কোন চিন্তা বা আপত্তি নেই। কথা হল, কোন পত্রিকা কি আদৌ ছাপাবে এসব?
আরেকটা ব্যাপার আছে। মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্যের মধ্যে দিয়ে অনেক কিছু বের হয়ে এসেছে। ব্লগ বলেই এই সুবিধাটা পাওয়া গেছে। সবটুকু সহ ছাপাতে পারলে সবচেয়ে ভাল হত।
নতুন মন্তব্য করুন