গতকাল (২৫শে ফেব্রুয়ারি) বিডিআর-এর বিদ্রোহ নিয়ে নানান জনের অনেক রকম মত ঘুরপাক খাচ্ছে। আমার নিজের মত অনেকের সাথেই মিলছে না। সেগুলো নিচে দেওয়ার চেষ্টা করছি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সহ। আমার দৃষ্টিভঙ্গি অমানবিক মনে হয়ে থাকলে দুঃখিত। আমার বিবেচনায়, ব্যাপারটা নিয়ে খুব দ্রুত আবেগপ্রবণ না হয়ে প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর সম্ভাব্য ফলাফল দেখা উচিত। কখনও সময়ের অভাবে, কখনও পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকতে গিয়ে অনেক কিছু বলা যায় না। তবু চেষ্টা করছি খোলামেলা ভাবেই বলতে।
স্পেশাল কেস
জীবন-কলমের কালি অমোচনীয়। এতে একবার যা-লেখা হয়, তা মুছবার অবকাশ নেই। ভবিষ্যতে হয়তো টীকা জুড়ে দেওয়া যায়, চাই কি কেটে আবার লেখা যায়, কিন্তু মুছে নতুন করে লিখবার কোন অবকাশ নেই। সেই সাথে আরও সত্য, জীবন-খাতার পাতা উলটে বারবার পেছনে যাওয়া যত কমানো যায়, ততই ভাল। জীবন চলার অংশ হিসেবেই এই শিক্ষাটুকু আমরা ধারণ করি। কথাগুলো রাষ্ট্রের বেলায়ও সত্য। এই বিবেচনায় আমি “স্পেশাল কেস”-এর বিপরীতে।
এখানে “স্পেশাল কেস” হল আইনের স্বাভাবিক গতিকে রহিত বা প্রভাবিত করা। কোন অপরাধের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করা এমনই একটি স্পেশাল কেস। প্রতিটি স্পেশাল কেস একটা রাষ্ট্রকে ঐ সময়টায় আটকে রাখে। আমরা পঁচাত্তরের স্পেশাল কেসে ফিরে যাই আজও বারবার। দেরিতে হলেও আমরা উপলব্ধি করেছি যে অপরাধমাত্রেই তা শাস্তিযোগ্য, উদ্দেশ্য যেমনটাই হোক না কেন।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষনার দ্রুততা
বিডিআর-এর সদস্যরা অস্ত্র জমা দিতে শুরু করেছেন বলে খবরে প্রকাশ। এর বাইরে তাদের হাতে কোন উপায় ছিল না। ঘেরাও অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকতে পারতেন না তারা। অনেকে দ্বিমত পোষন করলেও আমি এত দ্রুত সাধারণ ক্ষমা ঘোষনার বিপক্ষে ছিলাম, আছি এখনও। সেই বিচারই শ্রেষ্ঠ, যার পর বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। বিডিআর-এর দাবিগুলো ন্যায্য, কিন্তু সেই যৌক্তিকতা তাদের মানুষ হত্যার অধিকার দেয় না, দেশ ও সরকারকে জিম্মি করার অধিকার দেয় না। দাবি মেনে নেওয়া উচিত, তবে সেই সাথে বিচারেরও সম্মুখীন করা উচিত। তাহলেই সকল পক্ষের প্রতি সমান থাকা হবে। তাছাড়া, অপরাধের মাত্রা ও কারণ না জেনেই ব্ল্যাঙ্কেট ইমিউনিটি দেওয়া খুব বড় একটি কৌশলগত ভুল। এখন বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে অনেক রকম অপকর্মের কথা। এগুলো না জেনেই সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা ঠিক ছিল বলে মনে করি না আমি।
আনুপাতিক প্রতিবাদ
এরপরের প্রসঙ্গ ছিল অনুপাতের। সেন্স-অফ-প্রোপোরশন অতিক্রম করে যাওয়া যেকোন কিছুই অপরাধ এবং শাস্তিযোগ্য। চুরি, দুর্নীতি বন্ধ করা সবার দাবি, ন্যায্য দাবি। তাই বলে এই দাবি আদায়ের জন্য সহিংস হওয়া ন্যায্য না। যেই দাবিগুলো করা হয়েছে, সেই একই দাবি সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা করে থাকেন। আলোচনা, কর্মবিরতি, বা অবরোধের মাধ্যমে আদায়ও করেন। তারা বিডিআর-এর জওয়ানদের চেয়ে শিক্ষা বা সামাজিক অবস্থানে খুব উন্নত নন। একবার এমন কোন জিম্মি অবস্থায় মাথা নত করে ফেললে তা চিরকালের জন্য সরকারকে দুর্বল করে দেবে।
প্রাণহানি হ্রাস বনাম প্রাণের মর্যাদা
যেকোন সশস্ত্র বিদ্রোহ চলাকালে প্রথম বিবেচ্য অবশ্যই প্রাণহানি হ্রাস। তবে এসময় অনেক রকম হিসাব ও সমীকরণ মাথায় রাখতে হয়। অনেক রকম আলোচ্য ও বিবেচ্য বিষয় থাকে। এর কিছু থাকে অবস্থা-নির্ভর, আবার কিছু থাকে সার্বজনীন। প্রাণহানি সর্বোচ্চ অপরাধ। এর বিনিময়ে যদি কারও দু’দিনের জেলও না হয়, তাহলে আইনের দরকার কী? প্রাণহানি হ্রাস যেমন প্রয়োজন, তেমনি হারিয়ে যাওয়া প্রাণের মর্যাদা দানের প্রশ্নও থেকে যায়।
নেগোসিয়েশন
কোন প্রকার সমঝোতা ততক্ষণই এগিয়ে যায়, যতক্ষণ উভয় পক্ষের কিছু চাইবার থাকে। প্রতিপক্ষের সব চাওয়া একবারেই পূরণ করে ফেললে তাদের মর্জির মুখাপেক্ষী হয়ে যেতে হয়। অতিদ্রুত সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করায় তা-ই হয়েছে। সাধারণ ক্ষমা হল সরকারের হাতের তুরুপের তাস। এটি শুরুতেই খেলে ফেলা মানে প্রতিপক্ষকে হাই-গ্রাউন্ড দিয়ে দেওয়া। এটি চূড়ান্ত মার্জনা, এবং তা পাবার জন্য অপরাধীকে চূড়ান্ত ভাবেই কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুগত হতে হবে। একজন প্রধানমন্ত্রী সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করতেই পারেন। এটি রাজনৈতিক ও মানবিক সিদ্ধান্ত, তবে এটি আসবে একেবারে শেষে। অতি দ্রুত সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করায় বিডিআর-এর সদস্যরা আরও দাবি করেছেন, অস্ত্র জমা দিতে গরিমসি করেছেন। এ-ধরণের ঘটনায় একজন প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান এবং কর্তৃত্ব প্রচণ্ডভাবে দুর্বল হয়।
প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল নিম্নবিধ পালটা প্রস্তাব দেওয়াঃ
- প্রথমে অস্ত্র নামিয়ে রাখতে হবে
- নারী, শিশু, ও বেসামরিক ব্যক্তিদের ছেড়ে দিতে হবে
- সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে
- আত্মসমর্পণের পর অভিযুক্তদের যথাযথ নিরাপত্তার বিধান করা হবে
- সকল অপরাধের বিচার হবে
- বিচারের পর আদালত উপযুক্ত শাস্তির বিধান করবেন
- এই আইনী প্রক্রিয়া যথাযথ ভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকতার সাথে সাধারণ ক্ষমা করে দেওয়া বিবেচনা করবেন
এই পন্থা বিডিআর-এর কেউ স্বেচ্ছায় মেনে নিতে না চাওয়াই স্বাভাবিক, কিন্তু এর বিপরীতে তাদের মনে করিয়ে দেওয়া ছিল দু’টি বিষয়। প্রথমত, একটি সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে তারা প্রধানমন্ত্রীর আদেশ মানতে দায়বদ্ধ। ক্ষমা করবার পূর্বে তাদের দিক থেকেও প্রমাণ রাখা প্রয়োজন যে তারা ব্যারাকে ফিরে একটি অনুগত ও সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে কাজে যোগ দেবে। দ্বিতীয়ত, সাধারণ ক্ষমা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং তা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তুত হলেও দেশের দীর্ঘমেয়াদী ভাল চিন্তা করলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরী। দেশের কথা ভেবেই প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত হতে হবে তাদের। খুনের অপরাধ মাফ হয়ে যাওয়া অনেক বড় ব্যাপার, এবং এই সুবিধাটি তাদের অর্জন করে নিতে হবে।
আইনের শাসন
পরের প্রসঙ্গ আইনের শাসনের। আইন প্রণয়নের সময় তা একদিনের জন্য তৈরি করা হয় না। আইনের কোন বিবেক নেই, আইনের কোন বুদ্ধি নেই। দুইয়ে দুইয়ে যেমন প্রতিবার চার হয়, তেমনি আইনের বিবেচনায় কোন অপরাধের শাস্তি প্রতিবার একই হয়। এই নৈর্ব্যক্তিকতার কারণেই আইন সার্বজনীন। আইনের লক্ষ্য থাকে রাষ্ট্রের দুর্বলতম নাগরিকের সকল নাগরিক অধিকার সর্বোচ্চ প্রতিকূলতার মুখেও রক্ষা করা। এ-কারণেই আইনে স্পেশাল কেস থাকতে নেই। এই সাধারণ ক্ষমা এটাই প্রতিষ্ঠিত করে গেল যে সাধারণ, নিয়মানুবর্তী নাগরিকের চেয়ে বিশৃঙ্খল বন্দুকধারীর ক্ষমতা বেশি। সব অপরাধের আইন আগে থেকেই তৈরি থাকে না। সেক্ষেত্রে বিবেচনার ভিত্তিতে অপরাধের প্রতিবিধান নির্ণীত হয়। এই ঘটনায় খুব খারাপ একটি প্রিসিডেন্স তৈরি করে গেল। এরপর যে-কেউ নিজের মত আইন হাতে তুলে নেবেন।
ক্ষমা বনাম সাধারণ ক্ষমা
সাধারণ ক্ষমা ঘোষনার আগে পরিস্থিতি নিয়ে আরেকটু সবিস্তারে জেনে নেওয়া উচিত ছিল। সব ব্যাপারে সম্পূর্ণ তথ্য না জেনেই এই ক্ষমা ঘোষনা করা হয়েছে। একটু একটু করে অনেক খবর বেরিয়ে আসছে এখন। বিডিআর-এর জওয়ানদের হাতে সার্বক্ষণিক অস্ত্র থাকার কথা না। তারা কীভাবে সুসজ্জিত হয়েই তৈরি ছিলেন? ঊর্ধ্বতন অফিসারদের বিভিন্ন ভাবে অপদস্ত করা হয়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশ। তাদের দিয়ে শারীরিক কসরত করানো হয়েছে। এটি কি দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন, না “হেইট ক্রাইম”? সেনাবাহিনীর কর্নেলদের খুন করে ড্রেনে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে। যত অপরাধীই হোন না কেন, পদস্থ অফিসারদের এভাবে অপমান করা কি ঠিক? ড্রেন থেকে তুলে আনা লাশে শুধু গুলি নয়, মুখে বেয়নেটের খোঁচার দাগও দেখা গেছে বলে পত্রিকায় প্রকাশ। এই অভব্যতা কি ক্ষমার্হ?
সাধারণ ক্ষমা অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর, কিন্তু ক্ষমা করবার আগে জেনে নেওয়া উচিত কী কী অপরাধ ক্ষমা করা হচ্ছে। সে-ব্যাপারে স্পষ্টভাবে আলোচনা হওয়া উচিত। এই অপরাধ সংঘটনের পর বিডিআর-এর সদস্যরা কি আবারও পুনর্বহাল হবেন পূর্বপদে? একটি রাষ্ট্রের জন্য কি খুব সুখকর পরিস্থিতি এটি? সে-কারণেই অপরাধ, প্রতিবাদ, বিশৃঙ্খলা, এবং বাড়াবাড়ির মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত ছিল।
কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্য
একটা সময় মানুষ বর্বর ছিল। সে-আমলে আলফা-মেল বলে একটা ব্যাপার ছিল। এ-কালেও গরিলাদের মধ্যে এমনটা দেখা যায়। সোজা বাংলায় একে “জোর যার, মুল্লুক তার” বলা হয়। সে-আমলে দ্বৈরথে জয়ীরাই হতেন নেতা, তাদের কথায়ই চলতো সবকিছু। আমরা সে-যুগ পেরিয়ে এসেছি। এখন বুদ্ধির শাসনের যুগ। পেশি চালিত হয় বুদ্ধি দিয়ে। সে-কারণেই পেশি বা নিশানা নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন না করলে কোন ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। নিয়ম মানতে কারোই ভাল লাগে না, কিন্তু তবুও নিয়মানুবর্তীতার চর্চা করতে হয় বৃহত্তর স্বার্থেই। খেলার মাঠে আন্ডারডগদের সমর্থন করা এক জিনিস, কোন অর্গানগ্রামের নিম্নপদস্থ কাউকে সমর্থন করা আরেক।
উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে হয় যেখানে অধঃস্তনদের দাবি-দাওয়া শুনা ও মানা হয়। সেক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং তারা কোন দাবি না মানলে সেটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে। সময় সময় অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়, এবং তা অস্বাভাবিক সমাধানের দাবি রাখে। আমি মনে করি না যে বিডিআর-এর অবস্থা অতটা নাজুক ছিল। যদি হয়েও থাকে, তবুও তা নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদের ধাপগুলো অতিক্রম করে এই পর্যায়ে আসা উচিত ছিল। আবেগের বশবর্তী হয়ে কিংবা “সাধারণ কৃষকের ছেলে” বলে কেউ নিয়মের বাইরে বলে দাবি করাটা তাকে প্রকারান্তে অযোগ্য বলে অপমান করা বলে আমি মনে করি।
বিডিআর সদস্যরা সাধারণ মানুষের আবেগের কাছে আহ্বান করেছেন। সেই আবেগ আমাকেও ছুঁয়েছে, তাদের দুর্দশায় আমারও মন কেঁদেছে, কিন্তু তাই বলে আমি তাদের অপরাধটুকু ভুলে যেতে পারছি না। শুধুই আবেগের বশবর্তী না হয়ে তাই একটু দূরপ্রসারী প্রভাবগুলো ভেবে দেখা প্রয়োজন।
সেনাবাহিনী বনাম বাংলাদেশ
এভাবে সাধারণীকরণ করতে আমি নিজে খুব অপছন্দ করি, তবু মন থেকে প্রশ্নটা দূরে সরিয়ে রাখতে পারছি না। এই সংঘাতে সেনাবাহিনীর বিপরীতে মানুষের অবস্থান কি পূর্বের রাগের ফল নয়? মনে রাখা প্রয়োজন যে “বিগত দু’বছরের সেনাবাহিনী” আর “বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী” এক নয়। সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি আধা-সামরিক বাহিনী হিসেবে সেনাবাহিনীর অধীনস্ত। এই বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা অন্য কারও বিরুদ্ধে হলে আমাদের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হত। রাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এ-ধরণের প্রতিক্রিয়া দূষণীয় ও পরিত্যাজ্য।
নির্মোহ, নৈর্ব্যক্তিক দিক থেকে দেখলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে এই বিদ্রোহ ছিল সেনাবাহিনীর গালে একটি চড় কষে দেওয়া। একই ভাবে, বিনা বিচারে বিডিআর-কে ক্ষমা করে দেওয়া সেই অপমানকেই আরও ঘনীভূত করবে। বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য এটি অনেক বড় আঘাত। তাদের কর্তৃত্ব অনেক বেশি কমিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা এটি। সাম্প্রতিক কালে সেনাবাহিনীর দৌরাত্ম্যে বিরক্ত হয়ে এই ঘটনায় খুশিতে বাজনা বাজানো খুব সহজ। ভুলে যাওয়া সহজ যে এই বাহিনীর ঐতিহ্য এবং অহংকারের সাথে আমাদের দেশের নিরাপত্তা ও সম্মান জড়িত। সেনাবাহিনীর অন্যায়গুলো শুধু বিডিআর-এ হয়নি বা শুধু এই ক’মাসে হয়নি। অনেক আগে থেকেই ঘটা আসা এই অনাচার আমরা চলতে দিয়েছি। সেই দায়বদ্ধতা মাথায় রেখি সমালোচনা করা উচিত, সেনাবাহিনী কোন ভাবে অপদস্থ হলে তাতে খুশি হওয়া উচিত নয়।
নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিডিআর হেড কোয়ার্টারে যাওয়া ছিল অনেক বড় ঝুঁকি। এই সিদ্ধান্ত সহ পুরো ব্যাপারে কৌশলের চেয়ে আবেগ কাজ করেছে বেশি। সরকার থেকে নাগরিক পর্যন্ত সকল পর্যায়ে আবেগের এই আতিশয্য খুব খারাপ লক্ষণ। এই সরকারকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে, সেনাবাহিনীর গ্রাস থেকে রাজনীতিকে বের করতে হবে, নিজের দলের দস্যুবৃত্তি ঠেকাতে হবে। এতটা আবেগপ্রবণ হলে এর প্রতিটিই অর্জন করা দুষ্কর।
ঘটনা যেভাবে গেল (বা যেতে দেওয়া হল), তাতে সেনাবাহিনীতে অসন্তোষের সম্ভাবনা থেকে যায়। এই বিবেচনায় বিডিআর-এর ভালর জন্যই হয়তো তাদের জেল-হাজতে যাওয়া উচিত ছিল। ডিজিএফআই ঘটনার আগে ঘাস খেলেও ঘটনার পর শোধ তুলতে ছাড়বে না। কত নালা-নর্দমায় বিডিআর জওয়ানদের লাশ পড়ে থাকবে, তা কে বলতে পারে? পাশাপাশি আইনের শাসনের প্রসঙ্গটি তো আছেই। সেনাবাহিনীর একটি অংশ লোভ এবং দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তারা তাদের এই অবস্থান এমনি এমনি ছেড়ে দেবে না। এ-ধরণের লোক অনেক বেশি বেপরোয়া হয়। সরকার শুধু বিডিআর নয়, সেনাবাহিনীরও অভিভাবক। তাদের এভাবে অপদস্থ হতে দেওয়ায় নিয়মনিষ্ঠদের দলে ভেড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়ে গেল।
শুদ্ধস্বর
সেনাবাহিনীর ভ্রষ্ট সংস্কৃতি শুদ্ধ করতে এবং রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর এক রকম দখলদারিত্ব রোধ করতে সরকারকে খুব দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। যে-সরকার এক দিকে সামান্য বিডিআর-কে (কিংবা ছাত্রলীগকে!) সামলাতে পারে না, এবং অন্য দিকে সেনা কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা কীভাবে আস্থা পাবে সেনাবাহিনীর? এই শুদ্ধির জন্য যেই দৃঢ় স্বর প্রয়োজন, তা এখনও সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে অনেক কথা বেরিয়ে এসেছে। এমনকি কিছু ব্যাপারে সেনাপ্রধানের নামও শোনা গেছে। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত ছিল এমন পথে আগানো যাতে উভয় তরফ থেকেই কিছু মধ্যপন্থী মানুষ তাদের সমর্থন করে। বিডিআর-এর হত্যাযজ্ঞ সকাল নাগাদই হয়ে গিয়েছিল। তাদের ঘিরে ফেলা হয়েছিল, কোণঠাসা করা হয়েছিল। আর কিছুক্ষণ সময় দিলে, এবং সুনির্দিষ্ট কিছু কাজের জন্য ক্ষমা ঘোষনা করলে একটু পরে তারা নিজেরাই বিভক্ত হয়ে পড়তো। শুভবুদ্ধির মানুষেরা সামনে এগিয়ে আসতে পারতো। একই সাথে, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের উপর আক্রমণ করে কেউ সাধারণ ক্ষমা পেয়ে যাওয়াটাও ভাল ভাবে নেওয়ার কোন কারণ নেই।
খুনের অপরাধেরও ক্ষমা হয়, তবে তা বিচারকার্যের নিষ্পত্তি এবং অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়ার পর। এক্ষেত্রেও সেটি করা যেত বলে আমার মত। সেই সাথে এটি আবারও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল যে এই দেশে ভাংচুর করলে সব দাবি মেনে নেওয়া হয়। শাস্তি প্রদান কিংবা নিদেনপক্ষে বিচারকার্য হলে এটি প্রতিষ্ঠিত হত যে ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া হবে, তবে অন্যায্য পন্থা সহ্য করা হবে না।
মন্তব্য
আপনার প্রায় প্রতিটি কথার সাথে একমত।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার বেলায় বড় বেশি তাড়াহুড়া করা হয়েছে। সম্ভবত সরকার তাদের ক্ষমতা গ্রহণের একদম শুরুতে এরকম একটা হাংগামাকে আর বাড়তে দিতে রাজি ছিল না, এ কারণেই এই তাড়াহুড়া।
কিন্তু এর ফলে একটা খারাপ দৃষ্টান্ত দাঁড়িয়ে গেলো। এইরকম সংকট মুহুর্তে নেগোসিয়েশান চালানোর কিছু সাধারণ ফরম্যাট আছে, যে গুলো মানা হলে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সাথে সাথে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের চিন্তা না করেই কোনরকমে কালকের ঘটনার ইতি টানার জন্যে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা চলে এসেছে।
-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
একমত, পরে বিস্তারে লিখব।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
বিশ্লেষণ ভালো হয়েছে । তবে অনেকটা বাইরে থেকে দেখা। সে কথাটাই মনে করিয়ে দিতে চাই- 'we should walk a mile in someone else's shoes before we criticize them'. সেনাবাহিনীর উপর শুধু বিডিআর নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট যত বাহিনী আছে- পুলিশ, আনসার ইত্যাদি সবাই ক্ষুব্ধ (খোঁজ নিয়েই বলছি)। কারণ এদের সাথে সেনাবাহিনীর হাবভাব হল- আমরা হইলাম বামুনের পুত, আর তোরা সব নম্র, শুদ্র (জনগণকেও এরা তাই মনে করে। কিন্তু সরাসরি ইন্টারেকশান না থাকায় বোঝা যায় না)। উদাহরণস্বরূপ বিডিআর জওয়ানদের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের উদ্ধৃতি দেয়া যায়-
তোমাদের কোনো পয়েন্ট হবে না। তোমরা সামরিক বাহিনীর লোক না। তোমাদের পয়েন্ট উত্থাপন হবে না।
তাই কলাটামুলোটা সব সেনাবাহিনী পায়, অন্যরা পায় উচ্ছিষ্ট। সেখান থেকেই এ সংঘাত। ওদের গালে চড় মারা তাই ঠিকই আছে। আমি তাতে লজ্জিত নই।
তবে একই সমস্যা অন্য জায়গায়ও আছে। যেমন- বিসিএস ক্যাডার। এখানে এডমিনরা হলো বামুন, বাকি সব ক্যাডারের উপর এরা ছড়ি ঘুরায়। একজন এডমিন ক্যাডার সরকারি গাড়ি ইচ্ছেমত ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু বাকি ক্যাডাররা একদিনের জন্য গাড়ি ব্যবহার করতে চাইলেও ঐ এডমিনের কাছে হাজারটা দরখাস্ত দেয়া লাগে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা হ্রাস করার পরে রোকনউদ্দৌলার অশোভন লম্ফ-ঝম্পের কথা আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে।
সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্রবাহিনী, সিভিল সার্ভিস, সরকার, রাজনীতিবিদ- এদের সবার হওয়া উচিত জনগণের সেবক। এদেরকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তা জনগণের সেবা করার জন্যই। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে, এরা সবাই ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের ভেতর (এবং পরোক্ষভাবে জনগণের ওপর) ছড়ি ঘুরানোর সংস্কৃতি চালু করেছে। এই সংস্কৃতি রোধ করা না গেলে, এরকম ঘটনা আরো ঘটবে।
আমার কি বুঝতে ভুল হচ্ছে? নাকি আপনি সত্যিই সমস্ত অফিসারদের গুলি করে মেরে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে লাশ ড্রেনে ফেলে দেয়া সাপোর্ট করছেন? গুজব যা শুনছি সেগুলি সত্য হলে অনেক অফিসারের বউ-বাচ্চা পর্যন্ত ছাড়া হয়নি, সেটাও আপনার চড় মারা মনে হয়?
অন্যায়-অবিচার সবখানেই হয় ... বিসিএস ক্যাডাররা করে, পুলিশ করে, সাধারণ মানুষও ধোয়া তুলসিপাতা না, তারাও চান্স পেলেই করে ... তাই বলে সবাইকে ধরে ধরে গুলি করে মেরে ফেলতে হবে?
কথা খুব প্লেইন এন্ড সিম্পল ... যেটা হয়েছে সেটা বিপ্লব না, ম্যাসাকার ... একে সমর্থন করার কোন যুক্তি নাই ... এটার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত ... প্রকাশ্যে না পারলে গোপনেই হোক, মেরে ফেলে দিক খালে, আমার অন্তত আপত্তি নাই ...
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে তাতেও সমস্যা দেখি না ... ক্ষমা নেয়ার সময় তারা জানায়নি এত মানুষের মৃত্যুর কথা [বরং তাদের কথা ছিল অফিসাররা নিরাপদ আছে, তাদের জিম্মি করা হয়েছে], কাজেই সেই ক্ষমা এখন আর প্রযোজ্য না ...
তখনো কি আপনি এটাকে গালে চড় দেয়া ভাবতেন?
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
মাত্রই আমাদের গ্রুপমেইলে খবর পেলাম, আমাদের কলেজের দুইজন বড় ভাই, যারা ওখানে আটক ছিলেন, খবর পাওয়া গেছে ওনারা নিহত।
কী লিখবো বুঝতে পারছি না...
-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ব্যক্তিগত তথ্য বলে নাম প্রকাশ করলাম না। একজন সচলের নিকটাত্মীয় আটক ছিলেন। তাঁর লাশ ভেসে উঠেছে কিছুক্ষণ আগে।
হ্যাঁ, আপনি বুঝতে ভুল করেছেন- আমি খুনোখুনির কথা বলিনি, পোস্ট প্রসংগে বিদ্রোহের কথা বলেছি।
নির্মোহ, নৈর্ব্যক্তিক দিক থেকে দেখলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে এই বিদ্রোহ ছিল সেনাবাহিনীর গালে একটি চড় কষে দেওয়া।
আর বিডিআরে সম্ভবত আমার পরিচিত কেউ নেই। কিন্তু আর্মিতে আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব যা আছে তা হয়ত আপনার চেয়ে কম নয়। আমি শুধু এদের প্রফেশনে আচরণের কথা বলেছি। নির্দিষ্ট কাউকে উল্লেখ করে নয়।
হুঁ তাহলে ঠিক আছে ...
বিদ্রোহ পর্যন্ত মানা যেত কিন্তু প্রায় দেড়শো অফিসার [এবং হয়তো কিছু ফ্যামিলি মেম্বারও] মেরে ফেলার পর আর নৈর্ব্যক্তিক থাকতে দেয় না ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
বিশ্লেষণের সাথে অনেকাংশে একমত...কিন্তু মন ভালো নেই। কি হচ্ছে দেশে এসব?
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
লেখাটা অসাধারণ হয়েছে ইশতি ভাই।
----------------------------
--------------------------------------------------------
ইশতি, অনেকটাই একমত।
তবে আমার মনে হয় সরকার বেশি চিন্তিত ছিল সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত বি.ডি.আর দের নিয়ে । ওদের মাঝেও বিদ্রোহ ছড়ায় গেলে ভয়ানক অবস্থা দাঁড়াবে। এজন্য মনে হয় তাড়াহুড়া করে আপাতত ঠান্ডা করার চেষ্টা করা হয়েছে । তবে এখন তো শুনি সবখানেই ছড়িয়ে যাচ্ছে .....
যদি এই ছড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে যে এটা পেশির জোরের চেয়ে বুদ্ধির অভাব প্রকাশ করে বেশি।
তবে এটি অস্বাভাবিক ঘটনাও হতে পারে। সব জায়গায়ই কাছাকাছি সময়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। একাধিক জায়গায় "আর্মি আসছে ক্যাম্প দখল করতে" গুজব ছড়ানো হয়েছে। এটা একটু খতিয়ে দেখা উচিত। হাওয়ার উপর তাওয়া ভাজার লোকের অভাব হয় না কখনও। ঘরপোড়া গরু তো, একটুতেই ভয় হয়।
ইশতিয়াকের সাথে সহমত। খুব ভেবে চিন্তে লিখেছেন, প্রতিটি কথায় যুক্তি আছে। তবে আমার মনে হয় সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাৎক্ষণিক বিকল্প ছিল না। কারণ পিলখানায় কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ জিম্মি ছিল, এখনও আছে অনেকে। তাদেরকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়ে পাল্টা দরকষাকষির রিস্কটা না নেওয়াই মনে হয় ভাল হয়েছে।
তানভিরের সাথে সহমত। বিডিআর যেমন তাদের বাহিনী থেকে সেনাসদস্য প্রত্যাহার চায় তেমনি সরকারের প্রশাসন যন্ত্রের সকল ক্যাডার স্ব স্ব দপ্তর বিভাগগুলো থেকে অ্যাডমিনের কর্তৃত্ব ও দখলদারিত্বের অবসান চায়। অনেকবার এ বিষয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, সময়মত ব্যবস্থা না নিলে এখানেও এমন বিদ্রোহ দেখা দেবে। তবে টেবিল চেয়ারের বিদ্রোহ তো আর সশব্দে সশস্ত্রভাবে হয় না , সরকারের কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যে ঘুণপোকার মত বসবাস করে এই অস্থিরতা বা বিদ্রোহ। সরকারের জন্য এটা একটা বড় সিগনাল যদি সরকার বুঝতে চায়।
.................................................................................................................
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
হয়তো। এধরণের পরিস্থিতিতে ব্যক্তিত্বের ভূমিকা অনেক। এটা যদি সংঘবদ্ধ আন্দোলন হত, তাহলে চিন্তার ব্যাপার বেশি ছিল। এই বিদ্রোহে ছিল সাধারণ জওয়ানরা। এদের কাছে শেখ হাসিনা অনেক বড় সেলিব্রিটি। এই ওজনটা অনেক ভাবে কাজে লাগানো যেত। এই মানুষগুলোর অবস্থা "in over their heads" টাইপ হয়ে গিয়েছিল। শক্ত নেতৃত্বের ভূমিকা অনেক এসব ক্ষেত্রে অনেক বড়।
যা শুনছি তা যদি সত্যি হয় তাহলে চেইন অফ কমান্ড বলে এখন আর কিছু নেই।বিডিআর এখন পুরোপুরি আনস্টেবল। এই অবস্থায় তারা যদি বিএসএফ এর উপর আক্রমণ করা শুরু করে আমি আশ্চর্য হব না।সেটার ফলাফল কি হবে তা ভাবতে যথেষ্ট ভয় লাগছে।
দরকষাকষির এক পর্যায়ে বিডিআর দাবি করেছে, সংসদ থেকে ইনডেমনিটি বিল পাশ করিয়ে তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে হবে।
এই যে একটি অনৈতিক দাবি, এটি তাদের শিখিয়েছে কে? আয়রনিক হলেও সত্যি, সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর একটি বিদ্রোহী ক্ষুদ্র অংশ ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রীকে সপরিবারে হত্যা করেছে, তাদের শুধু ইনডেমনিটিই দেয়া হয়নি, পুরস্কৃত করা হয়েছে। অপারেশন ক্লিন হার্টে অশক্ত স্বাস্থ্যের লোকজন সেনাবাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছে, তারও ইনডেমনিটি মিলেছে।
এই উদাহরণগুলি যে খারাপ, এই উদাহরণগুলি যে ভুল, এই উদাহরণগুলি যে স্বল্পশিক্ষিত একজন সশস্ত্র মানুষকে একটি ভুল এগজিটের আশা দেখায়, তা কি সেনাবাহিনী বুঝতে পারবে?
এই যে এতজন অফিসারের অকারণ মৃত্যুর সংবাদ পাচ্ছি, এদের প্রত্যেকের ওপরই কি বিডিআরের আক্রোশ ছিলো? একটি নিয়ন্ত্রণহীন বাহিনীর হাতে তারা অকারণে প্রাণ দিলেন। কী ভরসায় সেই উন্মাদেরা এতদূর গেলো? অতীতের উদাহরণ, যা সেনাবাহিনী নিজে সৃষ্টি করেছে।
নিহত অফিসারদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। অবিলম্বে অস্ত্র নামিয়ে না রাখলে কঠোর অভিযানকে সমর্থন করি। এটা দেশের স্বার্থে এখন জরুরি।
গোছানো লেখা।
এখন শুধু বিচার আর প্রতিশোধের সীমা লঙ্ঘন না হলেই হলো।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ভালো লেখা।
কিন্তু সেই মুহুর্তে বোধহয় সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা ছাড়া
আর কোন উপায় ছিলনা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ishtiaq.er shathe ami ekmot. tobe etao mone kori j army "chor"ta deserve kore, but chorta eto jore dewar dorkar chhilo na.
shadharon khoma ghoshona kora holeo ekhon shobar bichar howa uchit. BDR jowan, army officer, shobar. shudhu jowander bichar koratake ami naybichar bolbo na.
ইশতির মত আমারও মত।
হিমুর মন্তব্যের শেষ কথাটা আমারও।
তবে সাধারণ ক্ষমা নিশ্চই শুধু কোর্ট মার্শাল থেকে বিদ্রোহীদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি। এটা নিশ্চই ইনডেমনিটি নয়। খুনের বিচার নিশ্চই হবে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
সচল অতিথি তানিয়ার ৬ জন নিকটাত্মীয় দরবার হলে ছিলেন। তাদের খবর কি কেউ জানেন?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
তিনজন নিহত। বাকিদের খবর কয়েক ঘন্টা আগ পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।
ইশতিয়াক ভাই, এই লেখায় comment করতে ইচ্ছা হচ্ছিল। এখন লিখতে গিয়ে দেখছি আমার ভাবনায় যা কিছু ছিল তার সবটুকুই আপনি চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন। আমার আর কিছুই বলর নেই। এই লেখাটির জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ॥
অত্যন্ত বিশ্লেষণধর্মী একটি লেখা। বেশির ভাগের সাথেই একমত। আমার পরিবারের একজন কর্মকর্তা আটক ছিলেন ভেতরে; ওনার এবং ওনার পরিবারের উদ্ধার নিয়ে উৎকন্ঠায় ছিলাম। ওনারা অনেকটা অলৌকিক ভাবেই বেঁচে গেছেন। এখন চাই পরিস্থিতি যত দ্রুত শান্ত হোক। প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসুক। শান্ত হোক প্রিয় স্বদেশ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
গুছানো লেখা, ভালো লেগেছে।
সাধারণ ক্ষমা যদি তাৎক্ষণিক আর্মি ক্রাশ থেকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়, তাহলে ঠিক আছে। তবে তা নিশ্চয়ই বিচারের উর্ধ্বে নিয়ে যাওয়াকে বুঝায় নি। এটা করা হলে তো সরকারের আর যুদ্ধাপরাধের বিচারের নৈতিকতাই ঠিক থাকে না। কিন্তু এই নৈতিকতাটাই হয়তো একটা অপশক্তি নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল। এবং আরো বড় কিছুও হয়তো চেয়েছিল। এতবড় একটা ম্যাসাকারে কেবল জওয়ানদের কিছু দৈনন্দিকতার ক্ষোভের ফসল বলে আমি মানতে পারছি না। গভীরে জল অনেক ঘোলা হয়তো। বিচার তো করতেই হবে, সাথে সাথে সেই অপশক্তিটাকে বের করে আনতে হবে নিরাপদ আগামীর প্রয়োজনেই।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
সারাদিনের অবসাদে ভেঙ্গে আসছে শরীর, তাই এখন ঘুমাতে চললাম।
যাওয়ার আগে এটুকু বলে যেতে পারি, আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত চমৎকার কাজ করেছে, অন্তত এতোটা আমি নিজেও আশা করতে পারি নি।
আগামীকাল সময়পেলে আমার মতামত লিখে জানাবো।
লেখায়
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
লেকা যে চমেৎকার হইছে তাতে কুনো সন্দ নাই। প্রত্যেকটা কতারেই সত্য মুনে হইবার চায়। কিন্তু শ্যাষতুমা কি সত্য? হয়তো যুরোপ মারিকার নিগা সত্য। বাংলাদ্যাশের নিগা না। যে দ্যাশের মানুষ এহনো রাস্তায় হাগে, সমাজের সকল স্তরের মানুষ চুরি ধারিতে ব্যস্ত, সে দ্যাশে এই ঘটনা যে নিত্যি ঘটে না, তাইতো বেশি।
পুনশ্চ: নিয়ম নিয়মের দ্যাশে চলে, অনিয়মের দ্যাশে কুনো নিয়ম চলে না।
কিছু তথ্য জানতে ইচ্ছুক। সেনাসংশ্লিষ্ট কেউ বেনামে হলেও জানাতে পারলে ভাল হত। ব্যক্তিগত কৌতূহল আমার।
* যাঁরা মারা গেলেন, তাঁদের বিশেষ উল্লেখ্য কাজগুলো কী ছিল? উদাহরণ, বাংলা ভাইকে ধরার সময় এদের কে কী ভূমিকা রেখেছিলেন?
* সেনাবাহিনীর অফিসারদের কোন পর্যায়টি নিশ্চিহ্ন করা হল, এবং এঁদের স্থান যাঁরা পূরণ করবেন তাঁরা কোন সময়ে নিযুক্ত?
এছাড়াও জানতে মন চায় চকচকে ঐ কমলা কাপড়ের পাইকারি সাপ্লাই কোত্থেকে এল। এটা কি জওয়ানদের পোশাকের অংশ? নয়তো কোথা থেকে এল?
আমি দিতে চাইছিলাম তুমি দিয়া দিলা ...
যাই হোক এই দুইটা প্রশ্নই খুব জরুরি।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
মারাত্মক দুইটা প্রশ্ন করেছেন ইশতি ভাই।
=============================
সকল নিহতের এখনও হদিস পাওয়া যায়নি। যাঁদের চিনি, তাঁদের জীবন-বৃত্তান্ত কাল বা পরশু জানাতে পারব। এখনোও যদিও কতজন মারা গেল সঠিক জানা যায় নাই।
কমলা কাপড়গুলো বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে সাজান পতাকার কাপড়। সবাই লাঠি থেকে পতাকার তেকোনা কাপড় খুলেই মাথায় দিয়েছে।
তোর পর্যবেক্ষণ গতকালই দেখেছি। কিন্তু মন্তব্য করা হয় নাই, মন-মেজাজ খুবই খারাপ হয়ে আছে। পরিচিত সবাই সুস্থ, কিন্তু অল্প পরিচিত অনেকেই এখনো নিখোঁজ!
সময় করে জানাইস।
আর্মির ঔদ্ধত্যে মানুষ চরম বিরক্ত। এটা সব স্তরেই সত্যি। বিডিআর-এর সাথে অফিসারদের ব্যবহার যে খুবই অমানবিক, সেটাও অনেক আগে থেকে শুনে এসেছি। তবু তা এত বড় ম্যাসাকার-এর পর্যায়ে যাওয়ার কথা না। কোন দিক থেকে উস্কানি ছিল না, তা জানা প্রয়োজন।
অনেক সমীকরণের জবাব না মেলা থেকে বোঝা যায় যে কোন ইনভিসিবল প্যারামিটার আছে। সেটাই নিশ্চিত করতে চাওয়া আর কি। পুরো ব্যাপারটা থেকে কে সুফলভোগী হচ্ছে, তা জানা প্রয়োজন।
তবে সবুজবাঘ যা বলছে সেইটা কিন্তু ভুল না.....
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
ধন্যবাদ ইশতিয়াক ভাই। অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা করছিল, কিন্তু বলতে পারছিনা। আমি দেখেছি আমার যেই বন্ধুটা পাগলের মত ডিউটি করে দিনরাত, তার চোখে পানি দেখেছি। আমার এক বন্ধু মারা গেছে। আমি জানিনা কত জনের সুবিচার হবে, কিন্তু মনে কিছু প্রশ্ন জাগে -
# এই বিদ্রোহী বিডিয়ার জওয়ানদের সাথে কাজ করতে গেলে কেউ কি সাহস করে বকা দিতে পারবে ওদের কোন ভুলের জন্য?
# যুদ্ধ পরিকল্পনায় পারদর্শী আর্মি আফিসার ছাড়া আর কারো অধীনে কোনদিন কি কাজ করেছে ওরা?
# বি ডি আর হল স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীনে, আর্মি কি করে ওদের ১০০% রেশন দিবে, UN mission এ পাঠাবে? এটা কি আরেকজনের দোষ এ জীবন দেয়া হল না?
# আমার এক বন্ধু গতকাল বললো ওরা মিথ্যা বলেছিল প্রধানমন্ত্রির কাছে যে অফিসাররা বেঁচে আছে। (এখানে দেখি এখনো একজন বলছে অফিসাররা বি ডি আর জওয়ানদের গুলি করে মেরে ফেলতো)। ওদের অযৌক্তিক কথাকেও বিশ্বাস করতে হবে আর্মিদের কাজে বিশ্বাস করি না বলে? এ পর্যন্ত কতজন সাধারন মানুষ মেরছে আর্মি?
# বংগবন্ধুকে হত্যা করেছিল কিছু অফিসার খন্দকার মোশ্তাকের ভরসায়। তাদেরকে কারা প্রতিরোধ করে বিচার করতে গিয়েছিল? আরেক গ্রুপ আর্মি যারা সেই অবিচার সয্য করতে পারছিল না। কেন দোষ হয় পুরা আর্মির?
অনেক দিন পর comment করার জন্য দুঃখিত। যখন মনে হয় সবাই রাজা উজির মারছে, দাগি চোর JMB থাকায় বার বার তার কথা বলছে, তখন দুঃখ লাগে। এই দেশে আসলেই বুঝি হত্যার বিচার নাই।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। অনেক দেরিতে চোখে পড়লো, তাই জবাবে দেরি।
যেকোন মৃত্যুই দুঃখজনক। রাগ, ক্ষোভ, বিষাদ, কিংবা অন্য কোন প্রকার আবেগ থেকে প্রতিক্রিয়া করা খুব সহজ। তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে ন্যায় ও পরিমিতির সাথে কাজ করে যাওয়াই কাম্য। তদন্তে হয়তো সব বের হয়ে আসবে কোনদিন। ততদিন ধৈর্য ধারনের কোন বিকল্প তো নেই আর।
এত বড় হত্যাকাণ্ড মুহূর্তের উন্মাদনায় সংঘটিত হয় না। ঘটনার অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে আর্মির শৃঙ্খলা ও ধৈর্য আমার ভাল লেগেছে। ভাল লেগেছে সরকারের আচরণও। উস্কানি ও কুমন্ত্রণা দেওয়ার লোকের কখনও অভাব হয় না। কেউ এদের শিকার না হলেই হল।
বিডিআর-এর সদস্যদের মৃত্যু ও আত্মহত্যার হিড়িক বন্ধ হোক, এটাই চাওয়া এখন। মাঝে ইউটিউব বন্ধ করার মত বুদ্ধিহীন, বিদঘুটে একটা সিদ্ধান্ত না নিলেও হত। হেলিকপ্টার অ্যাক্সিডেন্টে মৃতদেরও 'রাষ্ট্রীয় মর্যাদা' দেওয়ার মত অতিভক্তি না দেখালেও হত। আশা করি সবাই বাড়াবাড়ি গুলো পরিহার করে চলবে।
পুরো আর্মিকে আমি দোষ দেই না। ঠিক যেমনটা পুরো রাজনীতিক বা সরকারী কর্মচারীদের দোষ দেই না। আমাদের বিদ্যমান ব্যবস্থার অনেক অংশ ঠিক মতই চলছে। সেগুলো এই ডামাডোলে হারিয়ে যেতে দেওয়া ঠিক নয়। আগের মতই স্বাভাবিক আচরণ করে যাওয়া উচিত।
সাধারণ মানুষের ব্যাপক কিছু অসন্তোষ আছে আর্মিকে নিয়ে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগও প্রকট। এই অভিযোগগুলোর বাস্তব ভিত্তি না থাকলে বিডিআর জওয়ানরা উত্তেজিত হয় না, সাধারণ মানুষও ক্ষেপে ওঠে না।
আত্মসমালোচনা আমাদের শ্রেষ্ঠ গুণগুলোর একটি নয়। তবু আশা করতে দোষ কী, বলুন?
নতুন মন্তব্য করুন