ডিজিটাল বাংলাদেশঃ ১ [ভিশন ২০২১]

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: মঙ্গল, ১৪/০৭/২০০৯ - ৯:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভিশন ২০২১

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। প্রত্যাশা পূরণের কথা উঠলে দলীয় নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশিত এই চমকের কথাই জোর দিয়ে বলছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। ইশতেহারে পরিবেশিত 'ভিশন ২০২১'-এ লিপিবদ্ধ কথাগুলো বাংলাদেশকে কতটুকু "ডিজিটাল" করতে পারবে, এবং সত্যিকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা সময়েরই দাবি।

বহুল প্রচারিত এই ‘ভিশন ২০২১’ এর ব্যাপারে ইশতেহারে (বাংলায় আছে, ইংরেজিতে নেই) মাত্র সাত লাইনে যা বলা আছে, তার নির্যাস হলোঃ

  • প্রতিভাবান তরুণ ও আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিয়ে সফটওয়্যার শিল্প ও আইটি সার্ভিসের বিকাশ সাধন করা হবে,
  • ২০১৩ সালে মাধ্যমিক স্তরে এবং ২০২১ সালে প্রাথমিক স্তরে আইটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক টাস্কফোর্স সক্রিয় ও কার্যকর করা হবে,
  • বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইসিটি ইনক্যুবেটর, এবং কম্পিউটার ভিলেজ স্থাপন করা হবে।

খুব একটা বিস্তারিত কিছু নয়, বলা বাহুল্য। এই গোটা পঞ্চাশেক শব্দ বারংবার উচ্চারিত হচ্ছে আগামী দিনে দেশ গড়ার মূল লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে, মানুষও তাতেই বিশ্বাস স্থাপন করছে। যাঁরা ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে আরেকটু সবিস্তারে স্বপ্ন দেখতে চান, তাঁদের জন্য কিছু চিন্তার-খোরাক যোগানো যাক।

উন্নয়নের জন্য প্রকৌশল

উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হওয়ার দু’টি পথ আছে।

একটি পথটি অনুকরণ-ভিত্তিক। অন্যের যা আছে, তা আমারও চাই।

ভারতের অজস্র লোকাল ট্রেন আছে, আমাদেরও চাই। জাপান বা ইউরোপে বুলেট ট্রেন আছে, আমাদেরও চাই। নিউ ইউর্ক বা লন্ডনের মতো মেট্রোপলিটন শহরে পাতাল রেল আছে, আমাদেরও চাই। ব্রাজিলের সাও পাওলোতে পাতাল রেল না থাকলেও অনেক অনেক বাস এবং তার জন্য আলাদা লেন আছে, আমাদেরও এমন ‘ট্রেন অফ বাসেস’ চাই। উন্নত বিশ্বে ক্রেডিট কার্ড আছে, আমাদেরও এমন ‘প্লাস্টিক মানি’ চাই। আমেরিকার ডিজিটাল পাসপোর্ট আছে, আমাদেরও চাই। সিঙ্গাপুর বা ওয়াশিংটন ডিসি’র প্রতিটি কোণে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা আছে, আমাদের চাই। বাকি পৃথিবীর হাইস্পিড ইন্টারনেট আছে, আমাদেরও চাই। এমনি অনেক অনেক ব্যাপার।

চোখ-কান খোলা রেখে চললে এমন অনেক কিছুই দেখা-জানা যায় প্রবাস থেকে। এ-ধরনের কিছু চাহিদার একটি সংকলন তৈরি কষ্টের কিছু নয়। তুলনায় অনেক কঠিন হলো এর পেছনের কারিগরী অবকাঠামো দাঁড় করানো। সদিচ্ছা থাকলে ব্যক্তিগত উদ্যোগ আর প্রযুক্তি কেনাবেচা করে এই ঘাটতির অনেকটাই খুব সহজে পূরণ সম্ভব।

দ্বিতীয় পথটি একটু কঠিন। মুখস্ত বা চোথামারা পদ্ধতি দিয়ে এই পথে সমাধান মেলে না। এর জন্য দরকার নিজের দেশের প্রযুক্তি ব্যবহার, দেশজ মেধা ও শ্রম কাজে লাগানো, দেশের কথা মনে রেখে দেশের মতো করে তৈরি প্রকল্প হাতে নেওয়া।

এ-ধরনের পরিকল্পণা হাতে নেওয়ার আগে অনেক চিন্তা-ভাবনা প্রয়োজন, দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সব রকম মানবসম্পদের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। জোট সরকারের পাঁচ বছর ধরে সবাই ব্যস্ত ছিল প্রতিবাদ-প্রতিরোধ নিয়ে। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলোরই কোন অস্তিত্ব ছিল না। ফলাফল, ক্ষমতার ব্যপ্তি থাকলেও পরিকল্পনার গভীরতা নেই।

সর্বশেষ নির্বাচনে মহাজোটের মহাবিজয়ের পর অনেক বড় প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। এই দাবিগুলোর মধ্যে নৈমিত্তিক কাজে প্রশাসনিক দুর্নীতি কমানো ছাড়া তেমন বড় কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই নিরাশার অন্যতম কারণ হলো, আমাদের বৌদ্ধিক পরিকল্পনাগুলো এটুকুতেই সীমিত। আজও আমরা চুরি এবং দুর্নীতিকে সমার্থক বলে জানি।

যতদিন না ডিজিটাল বাংলাদেশের চাহিদাটুকু সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আসছে, ততদিন এর জন্য সত্যিকার কাজ হবে না। সে-উদ্দেশ্যেই এই প্রকল্পগুলোর পেছনের কারিগরী শৈলী যথাসম্ভব সহজভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রয়াসের লক্ষ্য একটাই – সাধারণ মানুষ প্রযুক্তিবিদের মতো ভাবতে শিখুক। তার এই ভাবনাই কালক্রমে চাহিদায় রূপান্তরিত হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অন্যথায় সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ার সুবর্ণ একটি সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য প্রকৌশল

প্রকৌশল মানেই বাস্তববাদিতা। বিজ্ঞানীর মতো দার্শনিক ও নতুন চিন্তার বিলাসিতা প্রকৌশলীদের নেই। সহজ ভাষায়, প্রকৌশলীরা নিউটনের চেয়ে ম্যাকগাইভার বেশি। প্রকল্পের আগে তাই অনেক রকম হিসেব কষতে হয় প্রকৌশলীদের। বিজ্ঞানীর কাছে দাবিটি বিজ্ঞানের অগ্রগতির, নতুন দিগন্ত খুঁজে বের করার। বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য তাই সাধারণ ভাবে অর্থের যোগান দেওয়া হয় অনেক লম্বা সময়ের জন্য।

পক্ষান্তরে, প্রকৌশলীর কাছে দাবিটি সাধারণ মানুষের। প্রান্তিক ভোক্তার খুব সাধারণ চাহিদাগুলোর সমাধানই প্রকৌশলীর কাজ। প্রকৌশলের জন্য অর্থের যোগান সে-কারণেই সময়ের সীমায় সীমিত থাকে। যে-দেশে যেমন শিল্প গড়ে ওঠে, সে-দেশে তেমন প্রকৌশলই শক্তিমান অবস্থানে থাকে।

প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রায়শ উপেক্ষিত একটি দিক হলো মূলনীতি ও দিকনির্দেশনা। সরকারের কাজ গবেষণা করা নয়, গবেষণার দিকনির্দেশনা দেওয়া। সরকার মানুষের সব প্রয়োজন মেটাবে না, মানুষের প্রয়োজনগুলোর স্বীকৃতি দিয়ে তা যোগাতে সহায়তা করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যাতায়াত ব্যবস্থার কথা। প্রতিটি মানুষকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পরিবহনের কাজ সরকার করবে না, বরং সরকার এই বিষয়টি দৃষ্টিগোচর করবে যে এই দুই মেট্রোপলিটান শহরের মধ্যে সুলভ যোগাযোগ নিশ্চিত করা উচিত। অতঃপর, সরকার এ-কাজে ন্যূনতম দিকনির্দেশনা দেবে শুধু। এরপর কালক্রমে প্রযুক্তি আসবে, আসবে বিস্তারিত নীতিমালা।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোন প্রকল্পে হাত দেওয়ার আগের প্রথম যে প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজতে হবে তার মধ্যে আছেঃ

  • কার জন্য তৈরি করা হবে?
  • হাতে কী কী সম্পদ আছে?
  • পূর্বপ্রস্তুত সমাধান আছে কিনা, থাকলে তা কীভাবে কাজে লাগানো যায়?
  • কত কম খরচে কত বেশি লাভ করা যায়, এবং শেষ দিন পর্যন্ত নিংড়ে কতটুকু বাড়তি আয় বের করা যায়?

সহজ, সাধারণ এই প্রশ্নগুলোর উপর মূলনীতি দাঁড় করানোর কারণ একটাই – প্রযুক্তির ব্যাপারে আপাত-অজ্ঞ মানুষও যেন ভাল-মন্দ বিচার করতে পারেন। শিক্ষা বা পেশা নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিককে কম-বেশি প্রযুক্তি-সচেতন না করলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া অসম্ভব। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ও প্রগতি নিশ্চিত করানোর জন্য প্রান্তিক নাগরিকদের পদার্থবিজ্ঞানের জটিল সূত্র জানার প্রয়োজন নেই, শুধু প্রয়োজন একটি প্রযুক্তির উপযোগিতা বিচার-বিবেচনা করতে জানা।

প্রথম প্রশ্নের উত্তর, দেশের এ-মাথা থেকে ও-মাথা পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের জন্য। সুবিধাভোগীদের জন্য প্রযুক্তির প্রসার খুব সহজ। তুলনায় কঠিনতর হলো এমন কোন উন্নয়ন যা প্রান্তিক মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে। টাকার অংকে বললে বুঝতে সহজতর হবে। একজন শিল্পপতির আয় এক কোটি টাকা বৃদ্ধির চেয়ে এক কোটি রিকশাওয়ালার আয় এক টাকা করে বৃদ্ধি করা অনেক বেশি কষ্টের। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনেই কোন না কোন ভাবে প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে হবে।

সম্পদের বিভিন্ন প্রকরণের মধ্যে শুধু মানবসম্পদই বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে আছে। অদক্ষ শ্রমিক ছড়িয়ে আছে দেশময়, আর প্রবাসে আছেন অনেক দক্ষ শ্রমিক। মাঝামাঝি স্তরের মোটামুটি শিক্ষিত তরুণও আছেন অনেক। তুলনায় প্রাকৃতিক সম্পদ নেই বললেই চলে। শুধু মানুষ দিয়ে প্রযুক্তি হয় না, কিছু না কিছু কাঁচামাল লাগে। প্রযুক্তির যুগে কাঁচামালগুলো আর স্রেফ লোহা বা তামা নয়। রূপান্তরিত যে-কাঁচামাল প্রযুক্তির জন্য ব্যবহার করা হয়, তা খুব কম মূল্যে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশের আপেক্ষিকে সেই কাঁচামালের ব্যবহারই সর্বাধিক উপযুক্ত সমাধান।

যে-কোন কিছুরই নির্দিষ্ট আয়ু আছে, তবে সবকিছুই ওয়ান-টাইম-ইউজ নয়। ইটের বাড়ি ভেঙে সেই ইট যেমন নতুন বাড়ি বানানোর কাজে লাগানো যায়, তেমনি বিদ্যমান প্রযুক্তি ও অবকাঠামোও পুনর্ব্যবহার করে খরচ সীমিত রাখা যায়। অতএব, খরচের কথা মাথায় রেখেই নতুন প্রযুক্তি গড়ে তুলতে হবে। এ-কারণে বিগত শতাব্দিতে গড়ে তোলা সব রকম শিল্প কারখানা সম্পর্কে পূর্ণ ও বাস্তবসম্মত জ্ঞান প্রয়োজন।

সাধারণত ত্যানা প্যাঁচানো কিংবা অতিরিক্ত কচলে তিতারস বের করাকে নেতিবাচক ভাবে দেখা হলেও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এটাই মূল লক্ষ্য। প্রযুক্তি টেকসই হওয়ার পেছনে এটি অনেক বড় উপাদান। উদাহরণ হিসেবে জাপানে নির্মিত গাড়ি ও আমেরিকায় নির্মিত গাড়ির পার্থক্যের দিকে তাকানো যায়। দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহারোপযোগী করে তোলার চেষ্টা থাকে বলে টয়োটা বা হোন্ডার তৈরি গাড়ি বিশ্বজয় করছে। পক্ষান্তরে, স্বল্পকালীন ব্যবসা মাথায় রেখে তৈরি হওয়ায় আমেরিকায় নির্মিত গাড়ি বাজার হারাচ্ছে। প্রখ্যাত সাংবাদিক রবার্ট ফিস্কের বইয়ে আছে, ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তিনি দেখেছিলেন যে তালেবানরা পাহাড়-পর্বতে শুধু টয়োটার গাড়ির উপরেই ভরসা করে, অন্য কিছু নয়। বাংলাদেশের মতো সীমিত আয়ের দেশকে ডিজিটাইজ করতে হলে মূলনীতি হতে হবে এভাবে বিদ্যমান প্রযুক্তির মধ্য থেকে ‘এক্সট্রা মাইল’ বের করে আনা এবং নতুন প্রযুক্তিকে কালোত্তীর্ণ করা।

এই সাধারণ প্রশ্নগুলোর ভিত্তিতেই সাধারণ কিছু চিন্তা, কল্পনা, ও দর্শন মিশিয়ে এবার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়া যাক।

ছবিঃ "স্টেপ-আউট", শোভন নাজমুস

(চলবে)


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক(অফলাইনে) এর ছবি

সুন্দর উপস্থাপনা। ফলো করছি।

স্বাধীন এর ছবি

চলুক। সাথে আছি।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পরিশ্রমী লেখা। চলুক
সব পর্ব লেখা শেষ? মানে- আগামী পর্বগুলোয় কোন কোন বিষয়ে আলোকপাত হবে তা জানলে মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারতাম, দুয়েকটা কথাও বলতাম...

____________
অল্পকথা গল্পকথা

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

নাহ, সব শেষ না। কিছু হয়েছে, বেশ কিছু বাকি। জমিয়ে রাখার চেয়ে লিখতে লিখতেই পোস্টানো ভালো মনে হলো।

সামনের পর্বগুলোয় জাতীয় পরিচয়পত্র, ইন্টারনেট, গবেষণা, শিক্ষা, ইত্যাদি নিয়ে টুকিটাকি থাকবে। জ্বালানি এবং বাণিজ্য নিয়ে কিছু লেখার ছিলো। সম্প্রতি সেগুলো নিয়ে দারুণ কিছু লেখা আসায় আমাকে আর ওদিকে কষ্ট করতে হচ্ছে না।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অপেক্ষায় রইলাম...
____________
অল্পকথা গল্পকথা

দিগন্ত এর ছবি

অপেক্ষা করছি। আমারও কিছু চিন্তা আছে এই নিয়ে। কিছু সমালোচনাও করতে পারি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অবশ্যই। সমালোচনাটুকুই আমার প্রয়োজন বেশি। এই লেখাটার উদ্দেশ্য দুটো। এক, একাধারে টেকসই ও লাগসই কিছু প্রযুক্তির ধারণার অবতারনা। দুই, এই ধারণাগুলো সহজবোধ্য ভাবে উপস্থাপন, যাতে প্রান্তিক নাগরিকেরা বুঝতে পারেন তাঁদের কীভাবে ঠকাচ্ছে সরকার/রাজনীতিক।

নীল ভ্রমর [অতিথি] এর ছবি

লিখাটা সহজবোধ্য হয়েছে। কিন্তু নীতি নির্ধারকদের বুঝাবে কে?

গৌরীশ রায় এর ছবি

স্বাহ্য, চিকিৎসা আপনার এই পর্বে আসেনি । আগামী কোন পর্বে কি লিখার পরিকল্পনা আছে? শুধুমাত্র প্রযুক্তি যথাযোগ্য ব্যবহার করে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব । আমার অন্তত তাই ধারনা ।
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর

'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অবশ্যই! স্বাস্থ্য খাত বাদ দিয়ে কি আমাদের মত রোগা দেশকে আধুনিক করা সম্ভব? স্বাস্থ্য/চিকিৎসা নিয়ে আমার লেখাপড়া কম বলে সচলের ডাক্তার মশাইকে ("সেইফ") বলেছি কিছু লিখতে। মেডিকেল ডিটেইল তিনি লিখলে আমি হয়তো বাতলে দিতে পারি কীভাবে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব। আমার নিজস্ব মতামত থেকে কিছু লিখবার ইচ্ছা আছে কোনো এক পর্বে।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আরে বস, কৃতিত্ব সব আপনার, আমি কিসু সাজেশন দিব। এখন কিভাবে হয়, আর কিভাবে হলে তা সবার জন্যে ভালো।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

ফারুক হাসান এর ছবি

প্রযুক্তি মানেই যে কম্পিউটারে গেম খেলতে জানা কিংবা চাঁদে যাবার রকেট তৈরা করা নয়, সেটা বুঝতে পারাটা জরুরী। ইশতেহার দেখে মনে হলো যে রাজনীতিবিদরা প্রযুক্তি মানেই হাইটেক, হাইভ্যালু, আর আইটি এইসব শব্দকেই বোঝে। শুধু হাইটেক হাইটেক না করে আমাদের 'দেশীয় প্রযুক্তি' এই শব্দযুগলকে আরো বেশি প্রমোট করা প্রয়োজন। প্রয়োজন দুই অর্থেই-
১. জনমনে দেশীয় প্রযুক্তিকে এপ্রিশিয়েট করার মত ক্ষেত্র তৈরি করা আর
২. দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশে সর্বাত্মক সাহায্য করা।

প্রযুক্তির বিকাশ সবচেয়ে বেশি ঘটে যখন লোকাল ইন্টারেষ্ট থাকে, লোকাল মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ হয়, আর লোকালি ব্যবহার করার মত সেটা টেকসই হয়। এজন্যই চীন জাপান আজ প্রযুক্তিতে এত দক্ষ। আর এজন্য আমি ধোলাইখালের এত ভক্ত। হাইটেকের স্বপ্নজগতে প্রবেশের আগে আমাদের জীবনযাত্রার ছোট ছোট বাঁকগুলোতে প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে স্যালোমেশিন চালিত লাঙ্গল কিংবা নদীতে স্যালোইঞ্জিনচালিত নৌকার মত টুকরো টুকরো আরো অনেক প্রযুক্তি সমাজে ঢুকাতে হবে। যে কৃষক ঢেকিকল দিয়ে পানি তুলে জমিতে চাষ করছে, তাকে ছোট্ট একটা প্রযুক্তি দিয়ে তার কাজের ভার লাঘব করতে হবে, এসবের ইমপ্যাক্ট বাংলাদেশে অনেক বেশি হবে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এত প্রাঞ্জল করে যদি মূল কথাটা বলতে পারতাম! এটাই করণীয় আমাদের। হাতি-ঘোড়া মারতে যাওয়ার আগে অন্তত মশা মেরে হাত পাকিয়ে নেওয়া জরুরী।

স্বাধীন এর ছবি

ইশতি, আমি একটি ব্যাপার লক্ষ্য করছি যে ঘুরে ফিরে আমরা একটি জায়গাতেই চলে আসি, সেটি হল আমাদের বর্তমান এবং অতীত নেতৃত্ববৃন্দের দূরদর্শিতার অভাব। সঠিক পরিকল্পনার অভাব। ইস্তেহারটি পড়লেই দেখা যায় যে কথাগুলো কতটা ভেইগ। শুধু বারো বছর ধরেছে প্রাথমিক শিক্ষায় আইটি নিয়ে যাওয়ার জন্য। আর ডিজিটাল বলতে তারা বুঝাবে ক্লাস ওয়ানের একটি বাচ্চাকে কম্পিউটার সম্পর্কিত কিছু তথ্য মুখস্ত করানো।

দেশীয় প্রযুক্তিতে অনেক কিছুই করা সম্ভব। একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ দেই, বুয়েটের IICT এর প্রধাণ লুতফুর কবীর স্যারের তত্বাবধানে তিনি বিদ্যুতের জন্য প্রিপেইড মিটার বানিয়েছেন, যা আজ অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। সুতরাং পরিকল্পনা করলে দেশীয় প্রযুক্তিতে সকল কিছুই করা সম্ভব।

আমি এখন যেটা বলার চেষ্টা করছি যে এই নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে হবে একদম তরুণদের বা মধ্যবয়সীদের। একমাত্র এটা যদি ঘটানো সম্ভব হয় তবেই যদি কিছু হয় ভবিষ্যতে। আমার মতে এ জন্য কি ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেটা নিয়ে আমরা চিন্তা বা আলোচনা করতে পারি।

অফটপিক হয়ে গেল বলে দুঃখিত।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

মোটেও অফটপিক না! এটাই তো মূল কথা। এত কিছু লেখার পেছনের মেসেজ তো এটাই। আমাদের প্রথাগত নেতৃত্ব কিছু করতে পারবে না। যা করার, আমাদেরই করতে হবে। আমাদের সবার পক্ষে তো আর রাজনীতি করে কিছু করা সম্ভব না। সেকারণেই পরিবর্তনের চাহিদাটা একেবারে সমাজের নিচু তলা থেকে আনতে হবে। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে রাজনীতিকরা তাঁদের কীভাবে ঠকাচ্ছে। পৃথিবীর রূপ তাদের দেখাতে হবে, জানাতে হবে অন্য সবার মত উৎকর্ষ অর্জন কত সহজ। তাহলেই তাঁরা পরিবর্তনের দাবি তুলবেন নয়তো পুরো ব্যাপারটা ভোট আদায়ের চমক রয়ে যাবে। এ-ব্যাপারে আলোচনা হওয়া উচিত অবশ্যই।

প্রি-পেইড মিটারের মত আরও অনেক দেশজ প্রযুক্তি অবহেলিত রয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে।

দ্রোহী এর ছবি

লেখাটা ভালো হয়েছে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- যাক, ২০১২ সালের আগে কোনো পদক্ষেপ নাই। বাঁইচা থাকলে এনশাল্লাহ ডিজিটাইজড হয়ে যাবে বাংলাদেশ।

লেখা দারুণ। পড়ছি।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

স্বপ্নহারা এর ছবি

ও ভাই, আমগো "পাচফুট" টাত তাড়াতাড়ি ডিজিটাইজ করন দরকার...এই বছরের মইদ্যে! সামনের এপ্রিল থেইকা ত বুলে কুন এয়ারফুট/ এয়ারলাইন আর আমগোরে চিনবনা! মন খারাপ

লেখা জটিল হচ্ছে...চালিয়ে যা। সাথে থাকছি...

---------------------------------------------
সুরঞ্জনা, ওইখানে যেওনাকো তুমি!...ওইখানে হাপ আছে...কামুড় দিব!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কথা সত্য। পরের পর্বে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আলোকপাতের ইচ্ছা আছে।

মামুন হক এর ছবি

দারুন হচ্ছে ইশতি। মন দিয়ে পড়ছি। কোথাও আটকে গেলে তোমাকে জ্বালাতন করব হাসি

ভুতুম এর ছবি

চমৎকার গুছিয়ে লিখেছেন। এ বিষয়ে আরো লেখা আশা করছি।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

সিরাত এর ছবি

হুম।

তুই আয়, হবে। আর ১০ বছর তো?

আরেকটা হতে পারে ব্যক্তি উদ্যোগ। 'ট্রেন্ডস'। দক্ষিণ কোরিয়ার ট্র্যান্সফরমেশনের মত, যেটা শোয়েবল-গুলো আর আর্মি মিলে করেছিল। না করতে করতে। না চাইতে চাইতে। মাও-এর পর জিয়াও পিং স্টাইলে।

একটু স্কেপটিক বিগ গভর্নমেন্টের রোল নিয়ে। তবুও, যদি লাইগা যায়!

চালা। দারুণ! চলুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আশা করি ১০ বছরের বেশি না। এটুকুও দেরি হতো না, কিন্তু দেনায় বন্দী জীবন। শুধতে কিছু বছর তো লাগবেই।

পদার্থবিজ্ঞানের মতো করে বললে -- ব্যাক্তি উদ্যোগ হলো তাপমাত্রা বৃদ্ধি, আর সরকারী উদ্যোগ হলো সুপ্ততাপ। বিগ গভর্নমেন্ট অবশ্যই সীমাবদ্ধ, কিন্তু এবড়ো-থেবড়ো জমিনকে দুরমুজ করে সমান করে দেওয়ার কাজটা সরকারকেই করতে হয়। এই শক্ত জমিন পেলেই ব্যাক্তি উদ্যোগের সুফল পাওয়া যায়।

তাপ দেওয়ার সাথে সাথেই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ব্যাপারটা দেখতে অনেক cool. তুলনায় সুপ্ততাপ গ্রহণের সময়টা খুব অনাকর্ষণীয়। এজন্যই ব্যাক্তি উদ্যোগ এতটা অতিরঞ্জিত। ভেবে দেখ কিছু সাধারণ উদাহরণ।

গুগুল বনাম ওরস্যালাইন -- কোনটা আইডিয়া হিসেবে বেশি বৈপ্লবিক? তুলনাটা চাইলেই করতে পারবো না আমরা, কারণ আমেরিকা আর বাংলাদেশের অবকাঠামোগত পার্থক্য বিশাল। আমেরিকায় অবকাঠামো অনেক উন্নত বলে গুগুল এখানে অনেক ভূমিকা রেখেছে, যা বাংলাদেশে পারছে না। আবার বাংলাদেশের অবকাঠামো বিবেচনায় গুগুলের তুলনায় ওরস্যালাইন অনেক বৈপ্লবিক। এর কোনোটাই সরকারী উদ্যোগ না, কিন্তু দু'টার কার্যকারিতার পার্থক্যের কারণ সরকারের তরফ থেকে তৈরি করে দেওয়া অবকাঠামোর ফারাক।

আমি সরকারের কাছে কিছু আশা করি না। আমাদের একটাই উপায় আছে এগিয়ে যাওয়ার। তৃণমূল থেকে বিভিন্ন রকম দাবি-দাওয়া তুলে ধরা, এবং সরকারকে কিছু ভালো নীতিমালা প্রণয়নে বাধ্য করা। এই নীতিমালা ও দিকনির্দেশনাগুলো তৈরি হয়ে গেলেই আমরা পরবর্তী স্তরে উঠতে পারবো, এবং আমাদের ব্যাক্তি উদ্যোগগুলোর সুফল অনুভূত হবে।

সিরাত এর ছবি

সেটা মানি। কিন্তু গভর্নমেন্টকে কতটা প্রোঅ্যাক্টিভ করা যাবে সেটা নিয়েই চিন্তাটা। আল্টিমেটলি, তুই যেমন বললি, 'বাধ্য করা'-টাই কি বেস্ট স্ট্র্যাটেজি কিনা সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

আসলে ফালতু গভর্নমেন্ট পেতে পেতে লিবারটারিয়ান হয়ে গেছি, বুঝলি। এজন্য কল্পনায়ও কিছু আশা করি না।

রানা মেহের এর ছবি

আগ্রহ নিয়ে পড়ছি ইশতি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তানবীরা এর ছবি

প্রথম কথা, ডিজিটাল ঠ্যাং তুমি কোথায় পাইলা?

প্রকৌশলী বানানোর জন্য চাই প্রকৌশল বিদ্যালয়। বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্র - ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার জায়গা নেই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক ব্য্যবহুল। চেতনা তৈরীর জন্য পৃষ্ঠপোষকতা কোথাও নেই। জ্ঞানী - অজ্ঞানী কারো মধ্যেই নেই ।

লেখা খুব ভালো হয়েছে
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

জেবতিক রাজিব হক এর ছবি

আমার দৃঢ় সন্দেহ, 'ডিজিটাল' শব্দের মানে আমাদের টাল নেতারা জানে কিনা।

সর্বশেষ নির্বাচনে মহাজোটের মহাবিজয়ের পর অনেক বড় প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। এই দাবিগুলোর মধ্যে নৈমিত্তিক কাজে প্রশাসনিক দুর্নীতি কমানো ছাড়া তেমন বড় কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
--- সুখবরটা পেয়েছেন তো? মখা ভাই খালাস পাইছে দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।