দেশজ আন্তর্জাল
প্রজন্ম কথাটি এক সময় বয়স দিয়ে নিরূপিত হত। শিশুরা ছিল চিৎকার আর ছোটাছুটির প্রজন্ম, কিশোরেরা ছিল বোকা স্বপ্ন আর ঔদ্ধত্যের প্রজন্ম, তরুণেরা ছিল মিছিল আর প্রেমের প্রজন্ম, প্রৌঢ়েরা ছিল শাসন আর সাবধানতার প্রজন্ম, বৃদ্ধেরা ছিল খিটখিটে মেজাজ আর হতাশার প্রজন্ম। আজ এ-ধরনের বিভেদগুলো ধুয়ে-মুছে গেছে। বয়সে বড় হয়েও আমার বাবা আমার বড় চাচার চেয়ে এক প্রজন্ম আধুনিক। সমবয়সী হয়েও আমার মা আমার বন্ধুর মায়েদের চেয়ে আধুনিকা। যে-বিভেদ ছিল আচরণ আর চিন্তাধারা থেকে উদ্ভূত, তা আজ নির্ণীত হচ্ছে প্রযুক্তিজ্ঞান দিয়ে। বাইরের দুনিয়ার আপেক্ষিকে বাংলাদেশ কয়েক প্রজন্ম পিছিয়ে আছে এই সীমাবদ্ধতার কারণেই।
প্রযুক্তির সর্বব্যাপী সফলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে ইন্টারনেট বা আন্তর্জালের উপর। স্রেফ একটি কম্পিউটার মানুষকে আধুনিক করে না। পনের-ষোল বছর বয়সে কম্পিউটার হাতে পেয়ে আমি যেটুকু শিখেছি, তার চেয়ে অনেক বেশি শিখছে আমার আট-দশ বছর বয়সের ভাইবোনগুলো। এর পেছনে মুখ্য কারণ হলো ইন্টারনেটের প্রসার। এরা কম্পিউটারকে দেখছে বিশ্বের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। নতুন এই প্রজন্ম তাদের সব রকম চাহিদা ও খোঁজ-খবরের মাধ্যম হিসেবে কম্পিউটারকে ব্যবহার করতে শিখছে।
স্রেফ টেবিলের উপর বসিয়ে রাখার জন্য কিনলে কম্পিউটার তার আক্ষরিক অর্থের (গণকযন্ত্র) চেয়ে উন্নত কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না মানুষের জীবনে। তাই বলে ইচ্ছা থাকলেও সাধারণ মানুষকে প্রোগ্রামিং কিংবা আরও জটিল কিছু শেখানো দুষ্কর। তুলনায় নৈমিত্তিক ব্যবহার শেখানো সহজ। এ-ধরনের কাজের জন্য খুব দামী বা শক্তিশালী কম্পিউটারের প্রয়োজন নেই। এ-যুগে ইন্টারনেট সংযোগও তেমন কষ্টকর কিছু নয়। এর পরও প্রকৃত প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারা এবং ইন্টারনেটের সুবিশাল তথ্যভাণ্ডার থেকে বঞ্চিত হওয়ার পেছনে কারণ রয়েছে দু’টি। কারণ দু’টি একই মুদ্রার দুই পিঠ। এক দিকে, যাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করবার মতো সত্যিকার প্রয়োজন আছে, তাদের ইন্টারনেট নেই। অন্য দিকে, যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সত্যিকার প্রয়োজন নেই, তাদের জন্য ইন্টারনেট খুবই প্রতুল ও সুলভ। এই দূরত্ব ঘুচিয়ে সকলকে কম-বেশি এই প্রযুক্তির অধীনে আনা প্রয়োজন।
বয়স্ক, কর্মজীবি মানুষের জীবনে মুখ্য প্রয়োজনগুলোর মধ্যে আছে খোরাকের চিন্তা, ব্যাক্তিগত যোগাযোগ, স্বাস্থ্যচিন্তা, অপত্যের শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থনীতির হাল-হকিকত, এবং রাজনীতি। এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট তথ্যের খনি। শহুরে জনগোষ্ঠী ইন্টারনেটের সুবিধা ব্যবহার করতে ব্যর্থ হলে তার দায় সরকারের নেওয়া প্রয়োজন নেই। সরকারের মনোনিবেশ করা প্রয়োজন প্রান্তিক জনগণের দিকে। ইন্টারনেটের সুবিধা তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াই হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত বড় সমস্যা হলো আমাদের ইন্টারনেট গেটওয়ে ও ব্যান্ডউইডথ। বটলনেক বা বোতলের মুখের মতোই সংকুচিত এই সদর দরজা। এটুকু দরজা দিয়ে যখন কোটি কোটি মানুষের আসা-যাওয়া করা দুষ্কর, তখন দরজার এপাশেই আমরা নিজেদের মতো একটি জগত তৈরি করে নেই না কেন?
বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি, সরকারি টাওয়ার, বিশ্বময় উদ্বৃত্ত অনেক অনেক ফাইবার অপটিক কেবল, ইত্যাদির সুফল নিয়ে আমরা নিজেদের মতো করে তৈরি করতে পারি একটি দেশব্যাপী ল্যান (লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক)। এটি তৈরির পেছনে নীতিগত লক্ষ্য হবে শুধু এবং শুধুই প্রান্তিক মানুষের কাছে প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়া। অঢেল ঘি যোগাড় হলে বিস্তর কিছু সম্ভব, তবে প্রাথমিক ভাবে শুধুই কৃষি, শিক্ষা, ও স্বাস্থ্য বিষয়ক নানাবিধ তথ্যের সন্নিবেশ থাকবে এখানে।
- কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ
কৃষিক্ষেত্রে থাকতে পারে চাষাবাদের আধুনিক পদ্ধতির বর্ণনা, নতুন কৃষি উপকরণ তৈরির ব্যাপারে সচিত্র সহায়িকা, বিশ্ববাজারে বিভিন্ন প্রকার কৃষিপণ্যের বর্তমান অবস্থা, রপ্তানি-উপযোগী কৃষিপণ্য তৈরি ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য উপদেশমালা, মান নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা, চাহিদা-যোগানের পরিসংখ্যান, কিংবা দেশের বিভিন্ন অংশে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও জনবলের বিবরণ। সব মিলিয়ে কৃষিবিষয়ক সব রকম তথ্যের একটি বিশাল সংগ্রহশালা হিসেবে তৈরি করে তোলা যায় একে। যে-দেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মানুষ সরাসরি কৃষির উপর নির্ভরশীল, সে-দেশে কৃষিকে বাইরে রেখে কোনো প্রকার আধুনিকায়নই দেশকে সামনে এগিয়ে নেবে না।
যেহেতু কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত জনশক্তির অধিকাংশই উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত নয়, সেহেতু তাঁদের জ্ঞান দানের প্রক্রিয়াটি যথাসম্ভব সহজবোধ্য করতে হবে, ‘ইনটুইটিভ’ করতে হবে। লিখিত পাঠ্য থেকে পড়ে বুঝবার মত শিক্ষা সকলের নেই, পাঠ্যপুস্তক লেখার গুণটিও আমাদের তেমন বিকশিত নয়। শিক্ষকস্বল্পতার দরুণ চাইলেও সবার মাঝে উন্নতর ধারণাগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে সব জায়গায় হাতে-কলমে অভ্যাস করানোও দুষ্কর। যাবতীয় সমস্যার সমাধান করা সম্ভব খুব বিস্তারিত কিছু চলচ্চিত্র দিয়ে।
অক্ষরজ্ঞানশূন্য মানুষ পড়তে না পারলেও ছবি দেখে তাঁর চাহিদার ফসলটি সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। একটি কম্পিউটার, বিশেষায়িত সফটওয়্যার, এবং উচ্চক্ষমতার আন্তর্জালই এই প্রক্রিয়া চালু করার জন্য যথেষ্ট। একটি সহজগম্য স্থানে কম্পিউটার থাকবে। এর অপারেটিং সিস্টেম বিশেষ ভাবে তৈরি হবে। কম্পিউটার চালু করলেই স্ক্রিনে দেখা যাবে বিভিন্ন রকম সাহায্যের অ্যানিমেশন। আড়াই বছরের শিশু যেভাবে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই কার্টুন নেটওয়ার্ক বা নিকেলোডিয়ানের ওয়েবসাইটে ঘুরে বেড়ায়, ঠিক সেভাবেই কৃষিজীবিরা যাবতীয় সহায়িকা খুঁজে বের করবেন। এক কথায় বললে, যাবতীয় ইনপুট-কে মাউসে সীমিত করলেই ল্যাঠা চুকে গেলো। তখন আর কীটনাশকের প্রয়োগবিধি শেখানোর জন্য স্কুল খুলতে হবে না।
পৃথিবীময় গবেষণা করে কম আয়াসে ফসল ফলানোর অনেক প্রযুক্তি তৈরি হচ্ছে। সে-সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা রাখা থাকতে পারে এই নেটওয়ার্কে। গ্রামে জমি কমে যাওয়া কিংবা কৃষিকাজে যথেষ্ট আয় না হওয়ায় অনেক মানুষ শহরমুখী হয়ে পড়েন। এই বিপুল পরিমান অদক্ষ জনশক্তি শহরের গতিশীলতাকেও শ্লথ করছে। দেশের কোন অঞ্চলে কী ধরনের চাষাবাদে জনশক্তি প্রয়োজন, বিশ্বময় নতুন কী কৃষিজ পণ্যের দাম বাড়ছে, ইত্যাদি জানা থাকলে শহরমুখিতা ক্রমে হ্রাস পাবে।
কৃষিপ্রধান দেশগুলোর আয়ের একটি বিরাট উৎস হলো খাদ্য রপ্তানি। উন্নত বিশ্বে আমাদের ঘরানার খাবারের চাহিদাও প্রচুর। তবে এক্ষেত্রে অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা হলো প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতি যারা আয়ত্ত করেছে, তারা একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে বিশ্ববাজারে। স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতিগুলো নিয়েও প্রশিক্ষণমূলক চলচ্চিত্র থাকতে পারে এতে।
এভাবে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকতে পারে দেশের ভেতরেই। বুয়েট কিংবা আইইউটি-র আবাসিক হলে ইদানীং প্রচুর নেটওয়ার্কিং হয়। এই প্রযুক্তিকেই ছড়িয়ে দেওয়া যায় দেশব্যাপী। প্রাথমিক অবস্থায় ‘মাটি ও মানুষ’-এর মত অনুষ্ঠানে সঞ্চিত তথ্য/নির্দেশিকাকে আধুনিক ভাবে পরিবেশন করা যায়। কোনো একটি বিশেষ ফসল সংক্রান্ত সকল তথ্য নিবন্ধিত করা, চাষপদ্ধতির অ্যানিমেশন তৈরি, ইত্যাদি হতে পারে বাস্তবানুগ কিছু সিমেস্টার প্রোজেক্ট। ধরা যাক, একটি পর্বে কাঁঠাল, ফার্মের মুরগি, এবং পানি সেচের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। প্রাথমিক কাজ হবে অনুষ্ঠানের এই অংশগুলোকে আলাদা ক্লিপ-এ পরিণত করা এবং তা ডেটাবেজের উপযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ। দ্বিতীয় কাজ হবে এই অংশে বর্ণিত তথ্য বা নির্দেশিকা একটি সহজ অ্যানিমেশন বা স্থিরচিত্রে পরিবেশন। পরবর্তী ধাপে একে আরও এগিয়ে নেওয়া যায়।
বর্তমানে প্রযুক্তিঋদ্ধ জনশক্তির সাথে দেশের প্রাণকেন্দ্রের সংযোগ খুব ক্ষীণ। এই দুর্বল যোগাযোগ ও অজ্ঞানতার কারণে সমাজের আলোকিত ও আশীর্বাদপুষ্ট অংশটি দেশে কিছু করার চেয়ে দেশ ছাড়তে আগ্রহী হচ্ছে বেশি। গ্রামাঞ্চলের কৃষিকাজে হতাশ হয়ে শহরে এসে রিকশা চালানোর সাথেই তুলনা করা যায় এই মানসিকতাকে। দেশজ আন্তর্জালকে কৃষিকাজের প্রয়োজনে ছড়িয়ে দিয়ে এই সমস্যার সমাধানের পথে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় মানুষ শিক্ষার অনেক উচ্চতর ধাপে গিয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করে। আমরা অন্তর্বর্তী ধাপগুলো সরিয়ে দিয়ে কৃষিক্ষেত্রকে গতিশীল করতে পারি খুব সহজেই। প্রযুক্তি পড়ে আছে, প্রযুক্তিবিদ বসে আছে। প্রয়োজন শুধু এক ছটাক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর দু’মুঠো সদিচ্ছা।
(চলবে)
মন্তব্য
টপিক দেখেই তারা দিয়ে যাই। পরে এসে ধীরে সুস্থ্যে পড়ে কমেন্ট দিব
ফাঁকিবাজ হয়ে যাচ্ছেন রে ভাই... নাকি, হয়তো আমারই লেখাগুলো নিরামিষ হয়ে যাচ্ছে!
সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন, এবং সব প্রস্তাবই বাস্তবসম্মত। আরো আলোচনার অপেক্ষায় রইলাম।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আমিও অপেক্ষায় রইলাম। বিশেষত, কোনো চিন্তায় ত্রুটি থেকে থাকলে সেটা জানার অপেক্ষায় আছি। এত লম্বা লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আপনার কাছ থেকে কিন্তু পরের এক পর্বের জন্য কিছু ইনপুট প্রয়োজন। তৈরি থাকবেন, ফোন দিবো নে।
পড়লাম, বেশ গুছিয়ে সমাজচিন্তার একটি ভালো উদাহরন লেখাটি। যা যা উল্লেখ করেছেন, সদিচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব হয়তো। কিছুটা উচ্চাকাঙ্খি চিন্তা নিঃসন্দেহে। অবশ্য ২০২১ কে লক্ষ্য ধরে নিলে এ কার্যসাধন খুব অসম্ভব কিছু না। তারপরও ভয় হয়, ২০২১ এ এসে হয়তো এই লেখাটা আবার সচলায়তনে পোস্ট হবে, তখন হয়তো অন্য কেউ লিখবেন এটা, এই যা।
#ওসিরিস
আকাশের দিকে লাফ দিলে অন্তত গাছের আগায় চড়া যায়! এই সিরিজে নতুন কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কথা বলা নেই। পুরনো, পূর্বেই আবিষ্কৃত সমাধানগুলো কাজে লাগানো দিয়েই কথা। একটু উচ্চাভিলাষ তাতে জড়িয়ে থাকতেই হয়। আশা করি ২০২১ পর্যন্ত সচলায়তন থাকবে, তবে এই রকম লেখার আর প্রয়োজন পড়বে না।
পড়ছি এবং সাথে আছি!
জানি।
ধন্যবাদ।
সিরিজটি একটি স্বপ্নময় সুচিন্তার প্রতিফলন। সিরিজটি আরো কার্যকর হবে যদি এর সাথে এর প্রায়োগিক বাঁধাগুলোকে সনাক্ত করা যায়। সদিচ্ছা যেমন দরকার তেমন বাঁধাগুলো জানা থাকলে উত্তরনের পথ খোঁজা দিয়ে কাজ শুরু করা যায়। তথ্যপ্রযুক্তি যে আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগতে পারে নানা উপায়ে তাতে সন্দেহ নেই। যোগাযোগ বা কমিউনিকেশনের গুরুত্বের কথা ইকবাল কাদির বলেছিলেন, অনেকটা সোশাল বিজনেসের আঙ্গিকে। এখন বাংলাদেশে সেল ফোনের বিস্তারের পেছনে তার এই ভাবনার প্রভাব অনেকটাই। সবাই একভাবে ভাববে এটা আশা করি না। কিন্তু উন্নয়ন ভাবনায় অর্থনৈতিক চ্যনেলগুলোকে (উপায় এবং ফল -means and ends দুই ক্ষেত্রেই) ভাবনার ফ্রেমে আনতে পারলে চিন্তার সাফল্যের বা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। কাজেই নর্মেটিভ থিংকিংয়ের এই দুই ক্ষেত্রেই আচরন এবং প্রক্রিয়াগত ব্যপারগুলোর সন্নিবেশ কার্যকর চিন্তার পরিচয় হতে পারে।
ইকবাল কাদির বা ইউনুসদের ভাবনার সাফল্যের পেছনে এই সন্নিবেশটা বেশ গরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ইউনুসের চিন্তায় পূঁজিবাদের মিশ্রন থাকায় (যেটা সমাজতন্ত্রিয় ধারার বৈপরিত্য) যেমন তা বামদেরকে প্রতিপক্ষ করেছে তেমনি তার রাজনীতিতে আসার চিন্তা (তা সাময়িক হলেও) তাকে সহজেই অনেক প্রতিপক্ষ জুটিয়ে দিয়েছে। যেজন্য আবার তার কথা আসল সেটা সামাজিক নেটওয়ার্কিং এর গুরুত্বের বিষয় নিয়ে আসার জন্য। ইউনুসের জন্মদিনের শুভেচ্ছার ফলোয়াপ পোস্টে এটা নিয়ে অনেক মন্তব্য দিয়েছিলাম।
পারলে এভাবে একবার দেখা যেতে পারে। ধরা যাক কারো ইচ্ছা হল দেশের সবাইকে একবেলা হাজীর বিরিয়ানি খাওয়ানোর। অর্ডার দেয়া হল। এবং যোগানের নিশ্চয়তাও পাওয়া গেল। কিন্তু সেটা সবার হাতে পৌছে দেয়া হবে অনেক কঠিন একটা কাজ। এই উদাহরনটি ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কিত যেকোন আলোচনায় দিয়ে থাকি। আমরা অনেক সময় সহজ বীজগনিত দিয়ে সমস্যাকে ভাবার চেষ্টা করি। সেটা সমস্যার স্বরূপকে হালকা করে দিতে পারে বা সমস্যা সম্পর্কে ভুল নির্দেশনাও দিতে পারে। এই ডিজিটাল প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেবার ক্ষেত্রে যেমন সামাজিক নেটওয়ার্ক একটা গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা তেমনি এই নেটওয়ার্কের ফলপ্রসুতার ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বসতির বিন্যাস গুরুত্বপূর্ণ একটা বাঁধা। যেই ভাবনা 'ক্ষুদে শহর'বিষয়ক পোস্টে হয়ত কিছুটা উঠে এসেছে।
লেখায়
ইকবাল কাদিরের লিংকটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। পুরোটা শুনে নেই, তারপর আরও কিছু বলতে পারবো আশা করছি।
অর্থনীতি নিয়ে জ্ঞানের অভাব আমার জন্য অনেক বড় একটা হ্যান্ডিক্যাপ। কিছু মৌলিক বিষয় জানি, তবে আরও গভীর ভাবে জানা প্রয়োজন। এ-প্রসঙ্গে কিছু ব্যাপার ধরিয়ে দিলে অধমের উপকার হয় প্রচুর। আমি মূলত প্রযুক্তির সম্ভাবনা এবং বিদ্যমান সমাজব্যবস্থায় তার প্রায়োগিক বাস্তবতা নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি। এর বাইরে অনেক সমীকরণ আছে, যেগুলো চাইলেও লেখায় আনতে পারছি না।
হাজীর বিরিয়ানির উদারহণটা দারুণ কার্যকর। বীজগণিতের অকার্যকরতা খুব প্রয়োজনীয় একটি পয়েন্ট। এজন্যই আমার মতে দু'টি বিষয় নিশ্চিত করা জরুরী। প্রথমত, যিনি এই প্রকল্প হাতে নেবেন, তাঁর যেনো কোনো প্রকার সুপ্ত অভিলাষ (ব্যবসা, রাজনীতি) না কাজ করে। দ্বিতীয়ত, কাজটি যেনো সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে এবং উৎসাহের সাথে সমাধা করে। অন্যথায় এটি সাফল্যের মুখ দেখবে বলে মনে হয় না।
ক্ষুদে শহরের চিন্তাটা খুব বৈপ্লবিক। আমি ব্যাক্তিগতভাবে এটি সমর্থন করি। এ-নিয়ে ভবিষ্যতে বলার জন্য কিছু কথা জমা আছে। তখন আপনার ইনপুট বিশেষ ভাবে প্রয়োজন পড়বে।
সুবিনয় ভাইকে খুব মিস্ করছি। উনার কাছ থেকে অর্থনীতির ব্যাপারগুলো বুঁঝা বাকি রয়ে গেল। হঠাৎ করে উনি শীতনিদ্রায় চলে গেলেন কেন জানি না। সুবিনয় ভাই, নিদ্রা ভঙ্গ করে আপনি আবার লেখা দিন।
১.
ব্যাপারটাকে অন্যভাবে দেখতে পারি। তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার সাথে সেচের অনেক মিল আছে।
আমরা কমান্ড এরিয়াটাকে ছোট ছোট ইউনিটে ভাগ করে ফেলতে পারি। প্রত্যেকটা ইউনিটে দু'জন করে স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন, যাঁরা কৃষি সংক্রান্ত আপডেইট কৃষকদের কাছে ডেলিগেইট করবেন। সপ্তাহে একদিন সন্ধ্যাবেলা কৃষকরা সমবেত হবেন কোন বাজারে, চা-পুরি খাওয়া চলবে, সাথে সেই আপডেট। স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেরা কৃষক পরিবারের মানুষ হলে তাঁরা ঠিকভাবে বুঝতে বা বোঝাতে পারবেন। আর আমাদের কৃষকরা নিরক্ষর হলেও তাঁদের কৃষিজ্ঞান উঁচু মানের। একটি তথ্য যদি তাঁদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনে, তাহলে তাঁরা অত্যন্ত হার্দিকভাবে সেটি আত্মস্থ করেন।
২.
আমার লেখাপড়ার সাথে এনেরগিমিটিয়োরোলোগি বলে একটি বিষয়ের নিবিড় যোগ রয়েছে। প্রাকৃতিক শক্তির সাথে সম্পর্কিত আবহাওয়ার বিদ্যা। জার্মানরা অতি নিখুঁতভাবে বাতাসের বেগ ও সৌরালোকসংক্রান্ত তথ্য অনুমানের পেছনে জোর দিয়েছে, নবায়নযোগ্য শক্তির সাথে জ্বালানিচালিত শক্তির দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্যে। বাংলাদেশে প্রয়োজন কৃষি আবহাওয়াবিদ্যা। সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে, তার আগাম তথ্য সংগ্রহ করে কৃষকের করণীয় স্থির করতে হবে দ্রুত। অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টির ইমপ্যাক্ট অ্যাসেস করে উপদ্রুত এলাকার কৃষককে তার প্রতিষেধক প্রেসক্রাইব করতে হবে। মাইক্রোইনফ্রাস্ট্রাকচারের মাধ্যমে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।
কমান্ড এরিয়া শুধু ছোট নয়, যথাসম্ভব স্বাবলম্বী করাও জরুরী। অন্যথায় এই গুড় খেতে অনেকেই ভিড় করবে। হায়ারার্কির কারণে অনেক রকম ঝামেলাও ভিড় করবেই। সে-কারণেই এমন কিছুর দিকে জোর দিতে চাচ্ছি যা প্রয়োজনে একেবারেই ব্যাক্তিগত ভাবে অ্যাক্সেস করা যাবে। ধরুন বাজারে একটি কিয়স্ক থাকলো। কিংবা একটি এটিএম মেশিন, যা আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি তথ্যবিস্তারের কাজও করবে। এই ব্যাকবোনের সাথে কৃষি আবহাওয়াবিদ্যার সংযোগও করে দেওয়া যায় খুব সহজেই। প্রসঙ্গটা স্রেফ একটি সহজ কিন্তু বিস্তারিত অবকাঠামো নির্মাণের।
আমি আপনার সাথে একমত। কম্পিউটার ব্যবহার এখন পৃথিবীকে অনেক ছোট আর সহজলভ্য করে দিয়েছে।
আপনি যে প্রস্তাব দিয়েছেন এতে অনেকটা ডাবল পুশ গ্রোথ প্রয়োজন। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করি - আপনার বক্তব্যের মূল প্রক্রিয়া দুভাবে সক্রিয় - প্রথমত তথ্যভাণ্ডার তৈরী হতে হবে, দ্বিতীয়ত সেই তথ্যভাণ্ডার সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এবার সমস্যা হল, দুটো দুই আলাদা দলের কাজ। যতক্ষণ তথ্যভাণ্ডারে যথেষ্ট তথ্য থাকবে না, ততক্ষণ কেউ পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করবে না, আর উল্টোটাও সত্যি - পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা ভাল না হলে তথ্যভাণ্ডার পরিবর্ধনের ব্যবস্থাও কেউ করবে না। অনেকটা মুরগী আগে না ডিম আগে অবস্থা।
এই অবস্থা থেকে বেরোতে গেলে বিগ পুশ দরকার - সরকার বা কোনো বড় বিনিয়োগকারী একসাথে অনেকটা বিনিয়োগ করে এই দুয়ের মধ্যে কোনো একটা বানিয়ে ফেলবে। ধরা যাক, প্রচুর ছাড় ঘোষণা করে বাংলাদেশে ৫০% গ্রামে অন্তত একটি করে ইন্টারনেট কানেকশন পৌঁছে দেওয়া হল (এর আগে বিদ্যুত পৌঁছতে হবে)। এই অবস্থায় NGO গুলো আপনা থেকেই তথ্যভাণ্ডার তৈরী করে তা মানুষের মধ্যে সহজে পৌঁছে দিতে পারবে।
এবার সমস্যা হল - কতটা বিনিয়োগ লাগবে এর জন্য? বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে - দাতা দের কাছ থেকে না সরকার সরাসরি নিজের ফাণ্ড থেকে দেবেন? বিনিয়োগ হলে তার আর্থিক রিটার্ণ কিভাবে আসবে - মানে প্রকল্প কিভাবে লাভে চলবে? প্রকল্পের মধ্যে দুর্নীতি হতে থাকলে রিটার্ণ কমে যেতে বাধ্য - সেটা কি ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
"ডাবল পুশ গ্রোথ" কথাটি খুব ভালো ভাবে লেখাটির সারমর্ম ব্যাখ্যা করে। ধন্যবাদ।
স্বাভাবিক অবস্থায় যেকোন বৃহৎ প্রকল্প কাজে নিতে দু'টি বিষয়ের একটি লাগে -- ১) অর্থায়ন, ২) জনশক্তি। এই চাহিদাগুলো পূরণ করে থাকে সরকার। সরকারের উপর আস্থা রাখার কোনো কারণই নেই। নেই বলেই যথাসম্ভব ব্যাক্তি- বা সমবায়-উদ্যোগে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। সরকারের তরফ থেকে শুধুই নীতিগত দিকনির্দেশনা আশা করে এই সিরিজ লিখছি।
১) অর্থায়নঃ
প্রাথমিক অবস্থায় পুরো বাংলাদেশে না হলেও কিছু জেলায় কম্পিউটার পৌঁছে দিয়ে এই প্রকল্প চালু করা যায়। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের সাফল্যের ভিত্তিতে আর্থিক সাহায্য চালু করা যায়। পাইলট প্রকল্প চালু করার জন্য যে-পরিমাণ অর্থায়ন প্রয়োজন, তা প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন থেকে যোগাড় করা দুষ্কর নয়।
২) জনশক্তিঃ
প্রকল্পের শুরুটা "নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো"র মতো করেই হতে হবে। আপনার-আমার মতো বয়স বা পেশার মানুষ করবেন না, আমাদের দিয়ে এই কাজ করালে তা পূর্ণতাও পাবে না। কাজটি করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক খাটনি দিতে পারে নতুন প্রজন্মের কিশোরেরাই।
উদাহরণ হিসেবে এ-কারণেই "মাটি ও মানুষ" অনুষ্ঠানটির কথা বলেছি। বছরের পর বছর এতে কৃষিবিষয়ক অনেক তথ্য ও নির্দেশিকা সঞ্চিত হয়েছে।
সরকারের কাজ -- আর্কাইভ উন্মুক্ত করে দেওয়া
প্রবাসীদের কাজ -- প্রাথমিক অবস্থায় কিছু অনুদান দেওয়া
আধা-টেকি তরুনের কাজ -- ভিডিওগুলোর ফরম্যাট কনভার্ট করা, বিষয়ভিত্তিক একটি করে ট্যাগ দেওয়া
পূর্ণ-টেকি তরুণের কাজ -- একটি সাধারণ ডেটাবেজ তৈরি
এক অর্ধের 'পুশ' কিন্তু এখানেই হয়ে যায়। পুরো দেশে এক বছরের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া ছড়িয়ে দিতে হবে, এমন কথা নেই। সে-স্বপ্নের ডেডলাইন ২০২১ সাল। আপাতত দুয়েকটি জেলায় এটি শুরু করা যায় বছর খানেকের মধ্যেই।
জনশক্তির একেক অংশকে একেকটি ব্যাপার উপলব্ধি করানো খুব জরুরী। নন-টেকিদের বুঝতে হবে এই প্রযুক্তির তাৎপর্য, আর আধা/পূর্ণ-টেকিদের বুঝতে হবে যে কাজটা খুব সহজ। চূড়ান্ত পর্যায়ের বিনিয়োগের সময় এতে সরকারের অংশগ্রহণ থাকতেই হবে। এতে দুর্নীতির আশংকা আছে, তা-ও সত্যি। এই দুর্নীতি রোধে সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। কী চাই, এবং চুরির দরুণ কী হারাচ্ছি, তা জানা এই জন্যই জরুরী।
বাংলাদেশে SSC/HSC পরীক্ষার পর আমরা ৩ মাস বসে থাকেই ফলাফলের জন্য। কাজে লাগাতে পারলে এটুকুই কিন্তু অনেক সময়।
প্রত্যন্ত পল্লীঅঞ্চল্গুলোতে কিন্তু আজকে মুঠোফোন পৌঁছে গেছে। যদি বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নতি করা যায়, মুঠোফোনের আওতাধীন এইসব এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছানো খুব দুষ্কর হবে না।
_______
চিন্তিত (sajjadfx@জিমেইল.কম)
এতোকিছু ভাবেন কিভাবে?!!
ইচ্ছা বা আয়োজন করে যে ভাবি, তা কিন্তু না। দুর্ভাবনা হয় প্রচুর। সেটাকে কার্যকরী কোনো খাতে প্রবাহিত করার ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।
সুপারভাইজার পয়সা দেয় সফটওয়্যার রেডিও নিয়ে ভাবতে, আমি ভাবি ট্রাক্টর নিয়ে। এরেই বলে বাঙ্গাল...
চমৎকার ভাবনা। এভাবে ভেবে দেখেনি কোনদিন। মাথার ভেতর মনে হচ্ছে এক সঙ্গে হাজারখানেক বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে উঠল।
বাতিগুলো আবার দপ করে নিভেও গেল। লোড শেডিং।
হ্যাঁ, প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ডেটাসেন্টার দিয়ে একটা সম্পূর্ণ দেশীয় অন্তঃর্জাল (অথবা আন্তরজাল) গড়া সম্ভব কিন্তু চাই বিদ্যুতের সুব্যবস্থা। নয়তো দরিদ্র শিশুদের মত দেশজ ব্রাউজারগুলোও অপুষ্টিতে ভুগবে।
________
চিন্তিত (sajjadfx@জিমেইল.কম)
প্রতিটি মোবাইল বেজ স্টেশনে একটা করে সার্ভার আর জেনারেটর বসিয়ে দেওয়া হোক। খুবই কম খরচের ব্যাপার। পুরো দেশের তো বিদ্যুৎ প্রয়োজন নেই। সার্ভারে ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলেই চলবে। যে যার মতো সময়ে সার্ভার অ্যাক্সেস করবেন। লোডশেডিং হলে পরের ঘন্টায় আবার। নাহয় তারপরের ঘন্টায়...
প্রতিটি মোবাইল বেজ স্টেশনে একটা করে সার্ভার দিয়ে হয়তো আমরা অনেকগুলো সার্ভার পাবো কিন্তু তাতে কি একটা কেন্দ্রীয় data center 'এর কাজ আদায় হবে? এইরূপ ব্যবস্থায় "single point of failure" 'এর ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যাবে এবং অনির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে সিস্টেম।
তার চাইতে বরং কিছু কেন্দ্রীয় data center প্রতিষ্ঠা করে নিশ্চিত করতে হবে সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ (এটা করতে আমরা সৌরশক্তির সাহায্য নিতে পারি অবলীলায়)।
_______
চিন্তিত (sajjadfx@জিমেইল.কম)
অবশ্যই! দেশটা এতই বেশি ছোট আমাদের... এটুকু করাই যায়।
এত ভাবনাগুলো কি জায়গামতো পৌঁছায়?
আমরা যদি প্রত্যাশা করি যে সবসময় টপ-ডাউন অ্যাপ্রোচে কাজ হবে, তাহলে ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে বটম-আপ অ্যাপ্রোচ কাজে আসবে বেশি।
ছোট একটা পাইলট প্রকল্প দিয়ে শুরু করতে হবে। প্রকল্পকে স্থানীয় কৃষিকর্তাদের সাথে একজোটে কাজ করতে হবে। স্থানীয় কলেজপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটা টিম হবে। ঢাকার ফিডার সাইটে তথ্য আপলোড করা হবে লাইটওয়েট কোন ফরম্যাটে, গ্রামে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেই সাইট নির্দিষ্ট সময় পর পর ভিজিট করা হবে। এক এক এলাকায় যেহেতু কৃষির ফোকাস এক এক রকম, তাই ফিডার সাইটে শ্রেণীবিন্যস্ত থাকবে সব তথ্য। সরিষা, ধান, ভূট্টা, মুরগি ... এভাবে বিভিন্ন তথ্য সাজানো থাকবে। ফিডার সাইটের কাজ হবে একেবারে সাম্প্রতিকতম সব তথ্য সাজানো। ধরা যাক দেশে বার্ড ফ্লুর আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে তিনটা মুরগি আছে যে দরিদ্র কৃষাণীর, তার কী করণীয়, তা পরিষ্কারভাবে লেখা থাকবে। তথ্য আর তথ্যপ্রযুক্তি যেন সবচেয়ে দরিদ্র মানুষটিকে উপকৃত করে।
সাইটটি কি সচলের একটি প্রকল্প হতে পারে না? তথ্য ভান্ডার বা সার্ভার ঢাকাতেই হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গ্রামে শুধু একটি কম্পিউটার আর মোবাইল ইন্টারনেট প্রয়োজন। যেটা যে কোন স্কুল বা কলেজ বা সরকারী কৃষি ভবনের সামনে থাকতে পারে। সকলের জন্য উম্মুক্ত থাকতে পারে। যে যার মত এসে ব্যবহার করত পারে।
সচলের এমন কোন সদস্য আছেন যারা হিমুর উল্লিখিত প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন (বা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা) করতে পারেন? কাউকে না কাউকে এগুলো করে দেখাতে হবে। কোন এনজিও হয়তো এগিয়ে আসতে পারে।
এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত কেউ খুব উপযোগী। যদি ডিপার্টমেন্ট থেকে সাহায্য ও অনুমতি মেলে, তবে চেষ্টা করে দেখা যায়।
যেমনটা আমরা প্রবাসী ছাত্ররা জানি -- প্রতিটা দেশেই নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা হয়। এদেশে বাজারে চাহিদা আছে বলেই IC নিয়ে গবেষণা হয়, বিজ্ঞানের অগ্রগতির স্বার্থে না। আমরাই কেবল দেশজ কিছু নিয়ে ভাবি না, স্রেফ বিজ্ঞানের উৎকর্ষ ও ভিন্দেশে চাকরির চিন্তায় লেখাপড়া করি।
ব্যপারটা অনেকটা এইভাবে বলা যেতে পারে যে প্রক্রিয়াটি সাপ্লাই ড্রিভেন না হয়ে ডিমান্ড ড্রিভেন হওয়া উচিৎ। অর্থাৎ যাদের জন্য এই তথ্যপ্রযুক্তির কথা ভাবা হচ্ছে তারা নিজেরা এটার প্রয়োজন উপলব্ধি করা দরকার। আমাদের দেশে কারিগরী পর্যায়ে অনেক কাজ (বিশেষত গবেষনা) হয় যেগুলো আসলেই আমাদের দেশের জন্য কার্যকর। কিন্তু যেহেতু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব গবেষনার ফল অথবা কৌশল ব্যবহারের ব্যপারে আগ্রহী নয় অথবা গুরুত্ব বুঝতে পারছেনা এগুলো কাজে আসছে না।
ব্যপারটা অনেকটা যার বিয়া তার খবর নাই অবস্থা। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে "লিপফ্রগিং" সমস্যাটি কাটিয়ে ওঠা কিছুটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এটা কাটিয়ে ওঠার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যাদের কাযে লাগবে তাদের সাথে ব্যপক আলোচনা করে করা দরকার। এই প্রকল্পটি সরকারি পর্যায়ের উদ্যোগ অথবা আন্তরিক কোন এনজিওর হস্তক্ষেপে করা যেতে পারে হয়ত।
এরমধ্যে সরকারি পর্যায়ে জাতিয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতি প্রণিত হয়েছে অথবা খসড়া তৈরি হয়েছিল। এর একটা ভার্সন একবার পড়েছিলাম। কাগযে কলমে খারাপ নাহলেও 'সাপ্লাই ড্রিভেন'ব্যপারটা তেমন কাটিয়ে উঠতে পারেনি এই নীতি।
কাজেই ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা ভাবার ক্ষেত্রে এই মাত্রাটি ভাবা দরকার।
একটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার তথ্যপ্রযুক্তিকে আমরা কেবল তথ্যপ্রযুক্তির খাতিরে চাচ্ছিনা বরং চাচ্ছি এইজন্য যে সেটা কাজে লাগতে পারে। কাজেই যাদের কাজে লাগবে বলে ভাবা হচ্ছে তাদের ইনপুট খুব দরকার।
সম্প্রতি বাংলাদেশে কৃষিকাজে পানির ব্যবহারের পরিমানকে অপটিমাইজ করার জন্য একটা ছোট ডিভাইস আবিষ্কৃত হয়েছে। সেটার দরুন সেচের পরিমান এবং উৎপাদন খরচ অনেক কমে আসবে। এরকম অপটিমাইজেশনের আরো অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি এক্ষেত্রে অনেক কাজে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর, প্রযুক্তিবিদ আর কৃষকদের একসাথে কাজ করতে হবে। হিমুর প্রস্তাবটি সেদিক থেকে একটা প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে ল্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (LIS)। গ্রামে ভূমিব্যবস্থাপনা এবং ফলত সে সাথে কৃষির উপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনাও দরকার আছে আলোচ্য প্রসঙ্গে।
আমারও উপলব্ধি এটাই। এ-কারণেই কারিগরী খুঁটিনাটি যথাসম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করছি। প্রযুক্তিজ্ঞানহীন কেউ যেনো বুঝতে পারেন তিনি কী হারাচ্ছেন, সেটাই লক্ষ্য।
প্রাথমিক পর্যায়ে অজ্ঞানতা এবং অবিশ্বাসের কারণে কিছুটা সাপ্লাই-ড্রিভেন হতে হবে। নেতৃত্বের ভূমিকা শুধু জনমত অনুসরণ নয়, তাকে প্রয়োজনে সামনে যাওয়ার পথ দেখানো। কাউকে গিয়ে এর উপকারিতা দেখাতে হবে। হয়তো "হোপ অ্যাগেইনস্ট হোপ", তবু আমার বিশ্বাস করতে ভালো লাগে যে এতে কাজ হবে।
আলোচনায় ভরসা কম। এটাই "লিপফ্রগিং"-এর সমস্যা। যেই গোষ্ঠীর ভালোর জন্য এত কিছু, তাঁরা এই প্রসঙ্গে একেবারেই আলোকিত নন। আলোচনার টেবিলে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু আনতে পারার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তুলনায়, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের কাজ কিছুদিন দেখলেই অনেক ভালো চিন্তা খেলবে বাকিদের মাথায়। ইনপুট প্রয়োজন, কিন্তু তাঁদের "চিন্তা"র চেয়ে "চিন্তার ধরন" হয়তো বেশি কিছু জানাবে বাকিদের।
সিরিজের মূল সুর এটাই। কোথাও যদি মনে হয় বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছি, ধরিয়ে দেবেন।
এ-প্রসঙ্গে আমারও কিছু জানার আগ্রহ আছে। লিখে ফেলুন। প্রকাশায়তন তো এসে গেলো। দেশচিন্তার ইবুক করে ফেলা যায় একটা। ভেবে দেখতে পারেন। মন্দ হয় না। গল্পকার আর কবিদের দাপটে আমরা পিছিয়ে থাকি কেনো, বলেন?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একমত। তবে আমি বোধহয় কিছু বিষয় স্পষ্ট করতে পারিনি।
এ বিষয়ে আমার ধারনা/অভিজ্ঞতা অন্যরকম। অর্থাৎ রেপোর্ট বিল্ডিং ব্যপারটাতে পারদর্শী যারা তারা কৌশলি হয়ে সহজেই অনেকটুকু দুরত্ব পেরিয়ে যেতে পারে। তবে ডেমন্সট্রেশনের ধাপটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম।
এবার খোলাসা হলো। পূর্ণ সহমত প্রতিটা কথায়ই। হায়, কবে যে দেশে সত্যিই কিছু হবে...
এটা ই-বুক হবে নাকি, ইশতি?
আমার লেখা আমি লিখে যাচ্ছি, প্রকাশায়তন যদি যোগ্য মনে করে, তাহলে ইবুক করে ফেলা যায়। সচলায়তনে গত কিছুদিনে "দেশচিন্তা" নিয়ে বেশ কিছু লেখা এসেছে। একটা ইবুক করে ফেললে তা পরবর্তীতে কাজে আসবে। নদী, জ্বালানি, রাজনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, ইত্যাদি নিয়ে লেখাগুলো কাজে আসবে।
ভাবনার বিষয় হলো, লেখার পাশাপাশি আলোচনাগুলোকেও কীভাবে নেওয়া যায়। বাছাইকৃত মন্তব্যসহ প্রকাশ করলে ব্লগের চরিত্রটাও প্রকাশিত হয়।
তোর লেখা পড়ে মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি এই ছোট্ট ছেলেটার মাথায় এতকিছু আসে কেম্নে?!! আমার সবকথা আগেই সবাই বলে দিয়েছে। আগে বাড়!
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
নতুন মন্তব্য করুন