গবেষণা এবং বিদ্যাপীঠকেন্দ্রিকতা
মহাবিজ্ঞানী নিউটন বলেছিলেন, তিনি ঋদ্ধ হয়েছেন অগ্রবর্তী অনেক মহৎ মানুষের কাঁধে দাঁড়াবার সুযোগ পেয়ে। বিজ্ঞানের প্রতিটি এলাকায় নিউটন তাঁর অবদান রেখে গেছেন, তবে সব ক্ষেত্রে যে নতুন কিছু আবিষ্কার করেছেন, তা নয়। এক কথায় বললে, নিউটনের সবচেয়ে বড় অবদান ছিলো বিজ্ঞানের এলোমেলো জগৎটিকে গুছিয়ে দেওয়া। আর্কিমিডিস থেকে গ্যালিলিও পর্যন্ত সবাই বিজ্ঞান নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন, বিচ্ছিন্ন সমাধান দিয়েছেন। নিউটন এই চিন্তার ধারাগুলো এক সূত্রে গেঁথে দিয়েছিলেন।
বিজ্ঞানে আজও নিউটনের দেখিয়ে যাওয়া সেই পথ অনুসৃত হয়। গবেষণাকর্মে কেউ আর রাতারাতি নতুন কিছু আবিষ্কারের সাধনা করেন না। নিউটনের মতোই সবাই একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যান বিজ্ঞানকে। বৈপ্লবিক কিছুর চেয়ে ক্রমযোজিত উন্নতিই এখন গবেষণার ধর্ম। এই পরিবর্তন একটু একটু করে আসে। প্রতিটি ধাপে সূক্ষ্ণভাবে যাচাই হয়ে আসায় ভোক্তাও আচমকা জীবন বদলে ফেলার ঝামেলায় পড়েন না। অ্যারিস্টটলের যুগে যেমন প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্র ছিল অনাবিষ্কৃত, আজ তেমন নেই। সকলের সুবিধার্থে বিজ্ঞানের যাবতীয় প্রগতিকে নথিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে। জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ দ্রুত ফুরিয়ে আসা বিশ্বে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে টিকে থাকতে হলে এই গবেষণাস্রোতে অবগাহনের বিকল্প নেই। এ-ব্যাপারে প্রত্যাশিত দিকনির্দেশনা থাকতে হয় জাতীয় শিক্ষানীতিতে।
সম্প্রতি প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষার গাঠনিক দিক নিয়ে সবিস্তার আলোকপাত হলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত রয়ে গেছে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কী ধরনের গবেষণা কাঠামো গড়ে তোলা হবে, তা স্পষ্ট করে বলা নেই। শুধু তা-ই নয়, প্রস্তাব করা হয়েছে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষাকেই (ব্যাচেলর্স) চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচনা করার কথা। এর পেছনে দু’টি যুক্তি দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, লেখাপড়ার পর্ব চুকিয়ে জীবনে প্রবেশ করতে করতে মধ্যবয়সী হয়ে যাওয়া নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, যাঁরা শিক্ষকতা করবেন না, তাঁদের অহেতুক স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স ও পিএইচডি) অর্জন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। মোটা দাগের বিবেচনায় আধুনিক ও ভবিষ্যৎমুখী শিক্ষানীতিতে এই অবহেলা ইঙ্গিত করে প্রযুক্তি বিষয়ে দূরদর্শিতার অভাব কিংবা সার্বিক হতাশার প্রতি।
বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে অন্যতম প্রধান বাধা হলো প্রযুক্তি গবেষণায় সীমাবদ্ধতা। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় কোনো উপকরণই দেশে নেই বলা যায়। যা আছে, তাও দু’দিন পরপর মেরামত করতে হয়। এ-দিয়ে আর যাই হোক, আধুনিক গবেষণা সম্ভব নয়। উদ্যম থাকা সত্বেও তাই অনেকেই পিছিয়ে পড়ে সুযোগের অভাবে। এই হতাশাটুকু বাস্তব, এবং আর সব বাস্তবতার মতোই একেও মেনে নিয়ে ধীরে ধীরে বদলাতে হবে। প্রথম করণীয় হলো বাস্তবসম্মত এবং ব্যাপকবিস্তারী পরিকল্পনা করা। শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, যাঁরা শিক্ষকতা করছেন তাঁরা ব্যতীত বাকিদের স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রয়োজন নেই। এই উপলব্ধি খুব সম্ভবত উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার অন্ধ বিশ্লেষণ থেকে উদ্ভূত। সামাজিক বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করলে সীমাবদ্ধতাটুকু স্পষ্ট হবে।
একটি বিশ্ববিদ্যালয় বর্ধনশীল হওয়ার পেছনে শিক্ষকতার চেয়ে গবেষণার ভূমিকা বেশি। কোনো এলাকায় একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান থাকলে তাকে ঘিরে আপনা থেকে একটি ‘সাপোর্ট সিস্টেম’ গড়ে ওঠে। আদমজী জুট মিল থেকে কোচিং সেন্টার পর্যন্ত সব কিছুর ক্ষেত্রেই এটি সত্য। উন্নত বিশ্বে এই সাপোর্ট সিস্টেম কিংবা পরজীবি প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ভৌত নয়, গবেষণামূলকও। বাংলাদেশে এই আনুষাঙ্গিক বর্ধন সীমিত হয়ে আছে কিছু পান-বিড়ির দোকান ও আবাসিক মেস গড়ে ওঠার মধ্যেই। বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট অনেক ছোট-খাটো গবেষণা হয়ে থাকে আশে-পাশে গড়ে ওঠা ছোট প্রতিষ্ঠানে। বিশ্ববিদ্যালয় এভাবেই প্রাণ জুগিয়ে যায় তার আশে-পাশের জীবনধারায়। উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার সামর্থ্য কিংবা অভিলাষ প্রতিটি মানুষের নেই, কিন্তু প্রতিটি মানুষেরই পেটের তাগিদ আছে। সেই তাগিদ ও ডলার-পাউন্ড-ইউরোর অনেক বেশি ক্রয়ক্ষমতার যৌথ ফলাফল হলো উন্নত বিশ্বে খুব বেশি মানুষ স্নাতকোত্তর ডিগ্রির দিকে ধাবিত না হওয়া।
বিশ্ব রাজনীতিতে এগিয়ে থাকার তাগিদ থেকে অনেক দেশেই অত্যাধুনিক গবেষণা হয়ে থাকে সামরিক সরঞ্জামাদি তৈরির জন্য। এই গবেষণাকাজে যোগ দেওয়ার জন্য উচ্চতর ডিগ্রির চেয়ে নাগরিকত্বের ভূমিকা বেশি। ফলে, অনেকেই স্রেফ স্নাতক বা ব্যাচেলর্স ডিগ্রি নিয়েই যুগান্তকারী গবেষণায় রত হতে পারছেন অনেক উচ্চ বেতনের বিনিময়ে। বিজ্ঞানের সামগ্রিক অগ্রগতি, উন্মুক্ত গবেষণা, ভোগ্যপণ্য বিষয়ক গবেষণা, ইত্যাদিতে কাজ করার জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে যোগ দেয় আমার মতো প্রবাসী ছাত্ররা। আমরা কোনো রকমে পেটে-ভাতে চলবার মতো আয় নিয়ে তুষ্ট থাকি, দাসের মতো শ্রম দিয়ে যাই।
দূর থেকে এই বাস্তবতা দেখে কেউ ধারণা করে নিতেই পারেন যে পাশ্চাত্যের সফল শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ হলো সবাই স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পেছনে না ছোটা। বাংলাদেশ পৃথিবীর মুষ্টিমেয় কিছু দেশের একটি যারা নিজের পয়সায় ভিন্দেশের জন্য মেধার খামার হিসেবে কাজ করে। বাকি বিশ্বের কয়েক দশক পর প্রযুক্তির দেখা পাওয়ার খয়রাতি সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হলে বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্যোগে গবেষণায় আত্মনিয়োগের বিকল্প নেই। প্রশ্ন হলো, শুরু কোথায় হবে, কীভাবে আমরা গড়ে তুলবো নিজস্ব ঘরানার গবেষণার সংস্কৃতি।
প্রারম্ভে বর্ণিত ক্রমযোজিত উন্নয়ন ও সংকলিত জ্ঞানের ধারণা থেকে গড়ে উঠেছে কিছু বিষয়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এ-সি-এম, আই-ট্রিপল-ই, এ-এস-এম-ই, ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান নিজ বিষয়ের যাবতীয় গবেষণার সংকলনের কাজ করছে। যে-কেউ চাইলেই বাৎসরিক চাঁদার বিনিময়ে এখানে পেতে পারেন কোনো পিয়ার-রিভিউড গবেষণাপত্র। আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোয় এই জ্ঞান শুধু বিশদে বর্ণিত নেই, সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের দ্বারা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে যাচাই করা আছে। সম্প্রতি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে ছাত্রদের। তার আগ পর্যন্ত প্রবাসী কারও মারফত গবেষণাপত্র ডাউনলোড করে কাজ চালাতে হতো বাংলাদেশি ছাত্রদের।
সীমিত পরিসরের এই সুযোগ থেকেই উদ্যমী ছাত্ররা অনেক ভালো কাজ করতে পারছে। গ্র্যাজুয়েট স্কুলের প্রথম দু’বছর চলে যায় পুরনো গবেষণা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে এবং ছাত্র নিজে কী করতে চায় তা জানতে। এই জ্ঞানটুকু দেশ থেকেই পেয়ে অনেকে গবেষণাপত্র প্রকাশ করছে কম সময়ে। কেউ কেউ ভর্তির সুযোগ অনেক এগিয়ে নিচ্ছে শিক্ষকদের গবেষণা সম্পর্কে নিজেকে আগে থেকে অবগত করে। এই সুযোগ সকলের জন্য নিশ্চিত করা উচিত।
গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রথম ধাপে এভাবেই অল্প মূলধনের বিনিময়ে আমরা ছাত্রদের জন্য একটি নতুন জগৎ খুলে দিতে পারি। শিক্ষানীতিতে এ-ব্যাপারে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য অন্তর্ভুক্ত হলে তাত্ত্বিক গবেষণা গতি লাভ করবে। বাকি বিশ্বের তুলনায় আমরা যদি ১০ বছর পিছিয়ে আছি বলে ধরে নেই, তবে তার মধ্য থেকে অন্তত ২ বছর আমরা পুষিয়ে নিতে পারি এভাবেই। এই প্রক্রিয়া বেগবান করার জন্য পাঠক্রম সংশোধন করে স্নাতক পর্যায়ের শেষ দু’বছরে ‘লিটারেচার রিভিউ’-এর উপর কিছু কোর্স সংযুক্ত করা উচিত। গবেষণাপত্রের গ্রাহক হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নে প্রবাসী অনেক প্রকৌশলী ও পেশাজীবি মুখিয়ে আছেন। তাঁদের সেই সদিচ্ছাকে কাজে লাগিয়ে অরাজনৈতিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এঁরা দেশের রাজনৈতিক বিভেদ ও দুর্নীতির কারণে দেশে বিনিয়োগে অনিচ্ছুক হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখতে আগ্রহী। এই গোষ্ঠীর উদ্বৃত্ত অর্থ ও আন্তরিক সদিচ্ছাকে দ্রুততার সাথে কাজে লাগানো উচিত।
তাত্ত্বিক জ্ঞান বৃদ্ধির সাথে সাথেই ছাত্রদের কাছে স্পষ্ট হয় তারা কী নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করতে আগ্রহী। বর্তমানের টপ-ডাউন পন্থায় ছাত্রদের নির্দেশনামূলক কিছু কাজ দেওয়া হয়। ছাত্রদের নিজস্ব জ্ঞান বৃদ্ধি হলে তারা নিজেরাই আশে-পাশে ছড়িয়ে থাকা উপকরণ নিয়ে দেশজ প্রকৌশলে আত্মনিয়োগ করবে। এর দ্বারা দেশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রকৌশল দেখতে পাবো আমরা। নতুবা বাংলাদেশের শীর্ষ মেধাবীরা প্রবাসে এসে উচ্চতর গবেষণা করে সেই দেশগুলোকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকবে শুধু।
অবধারিত ভাবেই কেউ কেউ প্রবাসে আসবেন গবেষণার কাজে। তাঁদের জন্য প্রবাসের গবেষণাগার থেকেই যথাসম্ভব দেশের জন্য গবেষণার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। পাশ্চাত্যের প্রায় সব উৎপাদন চীনে স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়ায় এখন অনেক সুলভে গবেষণার কাঁচামাল পাওয়া সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিক ডিজাইন তৈরি করে তা চীনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় উৎপাদনের জন্য। বাংলাদেশ খুব সহজেই এই ‘রিসার্চ ব্যাকবোন’-এর সাথে যুক্ত হতে পারে। এতে দেশের মেধা প্রবাসে বসেও দেশের জন্য কিছু করতে সক্ষম হবে, আমরাও ‘ফাইবার অপটিক ব্যাকবোন’-এর সাথে যুক্ত না হওয়ার পাপ মোচন করতে পারবো কিছুটা।
ফাইবার অপটিক কেবল ব্যবহার করে ইদানীং বিভিন্ন গবেষণা চালিত হয় দূরে বসেই। উদাহরণ হিসেবে নিজে দেখা একটি ল্যাবের কথা বলি। পারড্যু ইউনিভার্সিটির একটি বিখ্যাত ল্যাবে গিয়েছিলাম বেড়াতে। সেখানে কাজ করা হতো একলা ঘরে থাকা বয়স্ক ব্যক্তিদের দেখভাল করার উপর। দেখবার মতো কেউ না থাকলে আচমকা জ্ঞান হারিয়ে কিংবা হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে হয়তো কেউ মরণাপন্ন হতে পারেন। সেই ল্যাবের কাজ ছিলো ক্যামেরা ও ইমেজ প্রসেসিং ব্যবহার করে বয়স্কদের নিজগৃহে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ল্যাবটি ছিলো ভুট্টাক্ষেতে, যাঁদের দেখভাল করা হচ্ছিলো তাঁরা ছিলেন টোকিওতে।
আমারই দেখা আরেকটি উদাহরণ দেই। আমাদের ভার্সিটিতে নদী নিয়ে গবেষণা করা হয় বিভিন্ন দেশের জন্য। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নদী নয়, এখানে বসে ভারতের নদী নিয়েও গবেষণা করা হয়ে থাকে। এই ল্যাবে অনেক উন্নত উপকরণ, সফটওয়্যার, ও লোকবল আছে যা অনুন্নত একটি দেশে কল্পনা করা যায় না। কেউ কেউ অন্য দেশে বসেও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকেন। বিশাল একটি ল্যাব গড়ে তোলার বৃহৎ পরিকল্পনা হাতে নিয়ে আরও পিছিয়ে না গিয়ে তাঁরা সুলভে গবেষণার সুফল লাভ করতে পারছেন নিজ দেশে বসেই। গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলার দ্বিতীয় ধাপে বাংলাদেশ একই পথে দেশজ প্রকৌশলীদের জন্য সুবিধা তৈরি করে দিতে পারে।
গবেষণায় দুনিয়ায় শীর্ষে উঠতে না পারলেও সম্মানজনক অবস্থান লাভের জন্য বিভিন্ন দেশ গবেষকদের মানবিক দিকটির কাছে আবেদন করে থাকে। পর্যটনের টোপ ফেলে গবেষকদের জড়ো করা হয় নিজ দেশে। সেখানে উঠতি ছাত্ররা যেমন সুযোগ পায় গবেষকদের সান্নিধ্য পাওয়ার, তেমনি জীবনের পরিধি বাড়ানোর আকর্ষণে অনেক গবেষকই যৌথ গবেষণায় হাত দেন সেই দেশের গবেষকদের সাথে মিলে। বিশ্বব্যাপী অনেক কনফারেন্স হয় যার কিছু আমরাও আয়োজন করতে পারি। এটি হতে পারে গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলার তৃতীয় ধাপ।
গবেষণার কচকচি উপেক্ষা করে আপাতদৃষ্টিতে অপ্রাসঙ্গিক এই তিনটি ধাপ উল্লেখ করার কারণ হলো, এর তাৎপর্য যেকারও পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব। বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে সরাসরি সংযুক্ত নয় বলে একে দলমতনির্বিশেষে নিয়মিত করে তোলা যায় সহজেই। এই তিনটি ধাপ অনুসরণ করা হলে ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপীঠভিত্তিক একটি সাপোর্ট সিস্টেম গড়ে উঠবে। সেটাই হবে গবেষণামুখী ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের চতুর্থ ও চূড়ান্ত ধাপ।
পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে মানুষ এখন স্নাতক পর্যন্ত লেখাপড়া করছে বেশি। আগে স্রেফ এইচ-এস-সি পাশ করে যে-কাজ পাওয়া যেতো, তার জন্যও এখন স্নাতক ডিগ্রি চাওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের উচিত বর্ধিষ্ণু উৎসাহকে ঠিক পথে চালিত করা। ছোট্ট বাংলাদেশে এখন স্থাপিত হচ্ছে সুবিশাল সব ক্যাম্পাস। সেগুলোর আশে-পাশের যৎসামান্য স্থানগুলো ভরে উঠুক গবেষণার চিন্তা ও স্বপ্নে।
(চলবে)
ছবিঃ ফ্রন্ট-রো-সিট // শোভন নাজমুস
মন্তব্য
প্রিয় পোস্টে যুক্ত করলাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
অনেক ধন্যবাদ! ভাস্তি ভালো আছে?
আপনার লেখায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় উঠে এসেছে, ভালো লেগেছে পড়তে।
তবে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষাকেই টার্মিনাল ডিগ্রি করার ব্যাপারটিকে আমি সমর্থন করি। অধিকাংশ চাকরির বিজ্ঞাপনে অকারনেই মাস্টার্স ডিগ্রি চাওয়া হয়, দরকার লাগুক আর না লাগুক। এবারের শিক্ষানীতিতে বরং এই ব্যাপারটিই নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, যারা শিক্ষকতা করবেন না তাদেরকে মাস্টার্স ও পিএইচডি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু যারা শিক্ষকতা করতে চান না অথচ গবেষনায় আগ্রহী তাদের জন্য দরজাটা কি বন্ধ?
উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থায় এটি অনেক আগে থেকেই আছে একথা হয়ত সত্য, কিন্তু বাংলাদেশে কি এই ব্যাপারটি একেবারেই নতুন? সরকারি চাকরির বেলায় (যেমন বিসিএস এর প্রায় সব ক্যাডার- দু একটি ছাড়া) স্নাতককে কিন্তু আগে থেকেই টার্মিনাল ডিগ্রি ধরা হয়। বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরির ক্ষেত্রেও কি তা নয়? আরো অনেক ডিসিপ্লিনের ক্ষেত্রেও (বিশেষত আপ্লাইড ডিসিপ্লিন) কিন্তু অঘোষিতভাবে স্নাতককে টার্মিনাল ডিগ্রি ধরা হয়ে আসছে, এবং তা এই প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির অনেক আগে থেকেই।
যেকোন পর্যায়ের শিক্ষাকে টার্মিনাল ডিগ্রি করার অর্থ হলো শিক্ষার উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা ceiling তৈরি করে দেওয়া। ঐ পর্যায়টি পর্যন্ত প্রাণপূর্ণতা থাকবে, প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু তারপর বাকিটুকু স্রেফ ম্যাড়মেড়ে হবে -- যেমনটা এই মুহূর্তে দেশের মাস্টার্স প্রোগ্রামে দেখা যায়।
চাকরির ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনে উচ্চতর ডিগ্রি চাওয়ার একটা সম্ভাব্য কারণ হলো আবেদনকারীর সংখ্যা শুরুতেই কমিয়ে দেওয়া। যেখানে ৩ জনের চাকরি জায়গা আছে, সেখানে হয়তো ব্যাচেলর্স নিয়ে ৩০০০ জন আবেদন করবেন, মার্স্টার্স নিয়ে ১০০ জন। আবেদনকারীর সংখ্যা কমিয়ে না আনলে অনৈতিক ছুতায় কাউকে বাদ দিতে হবে, নয়তো মাস খানেক ধরে ইন্টারভিউ নিতে হবে, নয়তো স্কুলঘর ভাড়া করে ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে খুব কম মানুষের মাস্টার্স ডিগ্রি থাকাটা অনেক বড় সংকট। এই সংকট সম্পর্কে আমাদের অবগতি কম হওয়ার কারণ হলো মাস্টার্সধারীদের জন্য যথাযথ চাকরির সুযোগ না থাকা। উদাহরণ দেই। ব্যাচেলর্স ডিগ্রিধারীরা যেকোন প্রতিষ্ঠানে স্রেফ ব্রেইনলেস চাকরের ঊর্ধ্ব কিছু না। পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা অন্য প্রান্তের মানুষ। তাঁরা মোটা দাগে কিছু নীতিমালা ঠিক করে দেন, এবং নিজেদের কোনো না কোনো মারফতি গবেষণায় নিয়োজিত রাখেন। অতিবুদ্ধিমান ও বুদ্ধিহীনদের মাঝের ব্যবস্থাপনার কাজের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রিধারী প্রয়োজন। সফল দেশগুলোর কাঠামো তেমনটাই।
আরেকটি দিক আছে। পিএইচডি করতে গেলে চূড়ান্ত পর্যায়ে গবেষণা করতে হয়। একটি পর্যায়ে গিয়ে তা মৌলিক গবেষণার সমতুল হয়ে যায়। অনেকে এমনটা করতে আগ্রহী না, আবার বাদবাকিদের তুলনায় অনেক দক্ষ। আমাদের পিএইচডি রিসার্চের জন্য প্রায়ই বিশাল বিশাল code প্রয়োজন হয়। সেই কাজটা করে দেয় মাস্টার্স ডিগ্রিধারী একজন সুদক্ষ প্রোগ্রামার। পিএইচডি করার 'যোগ্যতা' আমাদের চেয়ে বেশি হলেও এই ব্যক্তি স্রেফ নিজের 'ইচ্ছা'-র কারণে তা করছে না। এভাবেই সাপোর্ট সিস্টেম গড়ে ওঠে। নিজে একটি পিএইচডি না করে অনেকেই মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে গবেষণা সম্পর্কে জেনে নেন। যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করার পর তারা একটি কোম্পানি খুলেন যা নিয়মিত রিসার্চ ল্যাবগুলোকে সহায়তা যুগিয়ে চলে।
বাংলাদেশের জন্য এই ধরনের একটি কিছু প্রয়োজন মনে করি আমি।
ভালো লিখছেন...।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
এই হাতি-মার্কা পোস্ট পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ!
ব্যাপক ভাল হইছে! আমার মনে হয় শুধু আধুনিক প্রযুক্তিগত দিক বাদ দিলে অনেক কিছু নিয়েই আমাদের দেশে গবেষণার বিশাল সুযোগ আছে...দরকার সেই সংস্কৃতি গড়ে তোলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শুধু এক চোথা পড়িয়ে উপরে উঠতে থাকবে এটাও বন্ধ করা দরকার; গবেষণায় অবদান রাখতেই হবে।
'উদ্দম' চোখে লাগছে...'উদ্যম' হবে মনে হয়...
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
বানানটা নিয়ে লজ্জিত। ঠিক করে দেবো নে।
আমাদের একটা বড় দোষ হলো অন্যের মুখে অতিরিক্ত ঝাল-মিষ্টি খাওয়া। বাকি পৃথিবী যে-বিষয় নিয়ে গবেষণা করে, তা তাদের আপেক্ষিকে প্রাসঙ্গিক হলেও আমাদের জন্য অনেকাংশেই অপ্রাসঙ্গিক। তবুও আমরা সেগুলো নিয়েই মশগুল থাকি। অবশ্য প্রবাসে এলে পড়াশোনার টাকাও এদিকেই পাওয়া যায়, সেটা একটা চিন্তা।
গবেষণার দুনিয়াটা একটা স্রোতস্বিনী নদীর মতো। সারাজীবন খটখটে মাটিতে বড় হওয়া এই আমরা সেখানে খুব সহজেই ভেসে যাই। এই ধারার সাথে পরিচয় ঘটানোর জন্য উচিত সীমিত পরিসরে এর সাথে প্রারম্ভিক পরিচয় করিয়ে দেওয়া। ফলে ছাত্ররা ভেসে যাবে না, এ-ব্যাপারে নিজেদেরও প্রাথমিক ধারণা হবে।
গবেষণা মানে তো একটা নির্দিষ্ট পরিমান বিষয়-বস্তু মুখস্ত করা না, গবেষণা মানে স্বাধীন ভাবে চিন্তা করতে শেখা। একবার চোখ খুলে গেলে সেই মানুষ নিজের মতোই বিচরণ করবে এখানে। চোখটা দেশে থাকতেই খোলানো উচিত, যাতে আমাদের চিন্তায় দেশ-বিষয়ক গবেষণাগুলো আগে আসে।
চোথা অনেক বড় বাস্তবতা। একে রাতারাতি ঠিক করা যাবে কিনা জানি না। কোনোভাবে একে কপচে ভালো ফল বের করতে হবে।
খুব সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে এসেছো। তোমার অধিকাংশ বক্তব্যের সাথেই সহমত। দু'একটি বিষয়ে আমার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা তুলে ধরছি। আমি তো মনে করি পাশ্চাত্যের এই উন্নতির পেছনে গবেষনাই মূল। আমাদের দেশ বা যে কোন দেশের ক্ষেত্রেই এই সত্যটি প্রযোজ্য। উন্নতির মাপকাঠি হবে গবেষনা লব্ধ কাজ। এই কথাটি আমাদের নীতি নির্ধারকদের বুঝতে হবে সর্বপ্রথম। সব কিছুতে যদি বসে থাকি যে বিদেশে কি হচ্ছে, আর গাঁটের পয়সা খরচ করে শুধু আমদানী করার চিন্তা করি তাহলে আমাদের সবসময় অন্যের পেছনেই চলতে হবে, সাথে নয়।
তাই নীতি নির্ধারণ হল সর্বপ্রথম। যদি আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে গবেষনাকে আমরা অধিকতর মূল্য দিব তখন বাকি কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের কি কি করণীয় হতে পারে তা বলছি।
প্রথমতঃ শিক্ষকদের গবেষনার কাজে উদ্বুদ্ধ করা। এ জন্য শিক্ষকদের সুবিধাদি বাড়ানো বিশেষ প্রয়োজন। আমি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি। যদি আমার সংসার চালানোর জন্য বেতনের বাহিরে অন্য কাজ করার কথা চিন্তা করতে হয় তবে আমি নিশ্চিত গবেষনা হবে সবচেয়ে শেষের কাজ। সব শিক্ষকই যে শুধু কন্সালন্টেন্সির পেছনে ছুটতে চায় তা নয়। অনেকেই গবেষনার স্বপ্ন নিয়েই দেশে ফেরৎ আসে। কিন্তু জীবিকার প্রয়োজনেই তিনি অন্যত্র তার সময় ব্যয় করেন। যদি পর্যাপ্ত সুবিধে দেওয়া হয় তখন শিক্ষকদের গবেষনা বা একাডেমিক কাজের বাহিরে অন্য কাজে নিরুৎসাহিত করা যেতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ আমাদের শিক্ষা ক্যলেণ্ডার বারো মাসের স্থলে আট মাস করা যেতে পারে। তাহলে শিক্ষকরা গবেষনা এবং একাডেমিক কাজ ভিন্ন ভিন্ন সময় করতে পারেন। তবে আবারো সেই পর্যাপ্ত সুবিধে বাড়ানোর কথা এখানে আসবে। সুবিধে পর্যাপ্ত না থাকলে সেই বাড়তি সময় শিক্ষক গবেষনা না করে অন্য কাজে ব্যয় করবেন।
তৃতীয়তঃ মাস্টার্স বা পিএইচডি কে যেন কোন ছাত্র চাকুরীর বিকল্প হিসেবে চিন্তা করতে পারে তার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ দেওয়া প্রয়োজন। তাহলে শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহীরা ছাড়াও অন্যরা গবেষনাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারবে। তবে গবেষনা বা শিক্ষকতা ব্যতীত অন্য চাকুরীর জন্য স্নাতকোত্তর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে আমি মনে করি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই অর্থই মূল নিয়ামকের ভূমিকা রাখছে। এ কারণেই নীতি নির্ধারকদের ভূমিকা এখানে অনেক বেশি জরুরী। তবে হ্যাঁ অর্থ যে সরকারী পর্যায় থেকেই আসতে হবে তা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগেও হতে পারে। তা বাহিরের বিশ্ববিদ্যলায় থেকেও আসতে পারে। আমি যতটুকু জানি, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাহির হতে অর্থ অনুদান নেওয়ার বিষয়গুলো আমলাতান্ত্রিক ভাবে অনেক জটিল করে রেখেছ। এই ক্ষেত্রে সরকারের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বনির্ভর করে তোলার ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা।
চতুর্থতঃ আন্ডারগ্র্যজুয়েট প্রোগ্রামে দু’বছর লিটেরাচার রিভিউ নিয়ে যেটা বলেছো সেটার বিশেষ প্রয়োজন আমি দেখিনা। সবাই আন্ডারগ্রাজুয়েট শেষ করে গবেষনা বা শিক্ষকতায় আসে না। বরং বুয়েটে যেমন আছে, শেষ বছরে একটি থিসিস করতে হয়, সেটিই একজন ছাত্রের গবেষনা সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য পর্যাপ্ত। শেষ বছর একটি থিসিস করার ব্যাপারটি যেন অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে করা হয় সেটা নিশ্চিত করা উচিত।
বারংবার যেটায় ফিরে আসি তাহল আমাদের নীতিনির্ধারকদের গবেষনার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে। সমাজে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে। ভাল ছাত্ররা যেন শিক্ষকতার পেশায় আসতে পারে সেটার ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাজের এত অবক্ষয়ের পেছনে কারণ হিসেবে আমি মনে করি আমাদের শিক্ষক সমাজকে অবহেলার ফল। যে সমাজ আমাকে বাধ্য করে শিক্ষকতা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে যেতে, শুধু মাত্র উন্নত জীবিকার জন্য, সে সমাজের উন্নতি কিভাবে সম্ভব আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে নেই।
প্রতিমন্তব্য করার মতো কিছু নেই, এতটাই একমত আপনার সাথে। তবু কিছু উদ্ধৃতি দেই, যাতে আলাদা করে চোখে পড়ে।
আমার পুরো লেখার সারবস্তু এটাই।
আংশিক ভাবে সহমত। ৮ মাস না হলেও ৯ মাসে নামিয়ে আনা যায়। সেই সাথে বাইরের সাথে ক্যালেন্ডার মেলানোর পক্ষপাতী আমি। এতে করে বাইরে পড়তে আসা সহজতর হবে। বাইরে যখন গবেষণায় জোর দেওয়া হয়, তখন আমরাও সমান তালে গবেষণা করতে পারি তাদের সহযোগিতা নিয়ে। আলাদা করে সময় দেওয়াটা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দিকে একটা জরুরী ধাপ হতে পারে। তবে, এক্ষেত্রে "টেনিউর"-এর মতো ধারণারও প্রবর্তন করা প্রয়োজন। নয়তো সবাই সেফ বসে বসে খাবে।
একবার শুনেছিলাম, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য নাকি সরকারের নিজস্ব কিছু টাকা থাকে। সেই টাকার কোনো অংশ অনুদান থেকে এলে সরকার ততটুকু টাকা কেটে নেয়। এখনও সেই প্রথা থেকে থাকলে বিপদ। ধরুন বুয়েট চালাতে ৩৫ কোটি টাকা লাগে। আমি ১ কোটি টাকা অনুদান দিলে তা বুয়েটের বাজেট ৩৬ কোটি করতে দেবো, সরকারের ব্যয় ৩৪ কোটিতে হ্রাস করতে নয়।
এটা লেখাতেই স্পষ্ট করা প্রয়োজন ছিলো। আমাদের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ভরে আছে অবান্তর সব কোর্সে। উদাহরণ দেই। যেই ছাত্রটি সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে পড়াশুনে করতে চায়, তাকে মেশিন ও পাওয়ার সিস্টেমের উপর গোটা দশেক কোর্স করানোর তো প্রয়োজন নেই। এই অপ্রয়োজনীয় কোর্সগুলো বাদ দিলে একটা বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হবে। তা পূরণ করার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু লিটারেচার রিভিউ ব্যবহার করা হলে তা প্রকারান্তে থিসিসেরই মান উন্নততর করবে। এক্ষেত্রে একটু ভিন্ন পথে শুরু করা যায়। ধরুন আপনার একটি পুরষ্কারজয়ী পেপার প্রকাশিত হলো যাতে আপনি ২০টি রেফারেন্স ব্যবহার করেছেন। ছাত্রদের হাতে সেই ২০টি পেপার ধরিয়ে দিয়ে বলা যায় আপনার কাজটির মতো কিছু দাঁড় করাতে। নিয়মিত মিটিং-এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায় যে আপনার কাজটি ধাপে ধাপে অনুসৃত হচ্ছে, নকল করা হচ্ছে না।
এটাই সব কথার শেষ কথা।
লেখা খুব ভাল লেগেছে। দেশজ পরিসরে গবেষনার সুযোগ এবং প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দু'টোই দরকার। শিক্ষানীতিতে উচ্চশিক্ষার সম্পর্কে কি মতামত রাখা হয়েছে পরিষ্কার হয়নি যদিও একটা বিষয় হচ্ছে গবেষনার বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর গুরুত্ব কতটা দেয়া হবে সেটার উপর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভবিষ্যত নির্ভর করছে অনেকাংশে।
উচ্চমান গবেষনার ক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যপার খুব গুরুত্ব দিয়ে লক্ষ্য করা দরকারঃ
সিরিজ চলুক; সাথে থাকার চেষ্টা করব।
পত্রিকায় পড়ে যেটুকু বুঝেছি, বলা হয়েছে যে শিক্ষকতায় আগ্রহীরাই কেবল উচ্চশিক্ষায় আত্মনিয়োগ করবেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে শিক্ষাবিষয়ক বিবেচনার চেয়ে ৩৫ বছরে আইবুড়ো হয়েও ছাত্র থেকে যাওয়ার সামাজিক কারণ বিবেচনা পেয়েছে বেশি। কেউ গবেষণায় আগ্রহী হলে তাঁকে প্রবাসে অফলোড করে দেওয়াই করণীয় বলে মনে হয়েছে আমার কাছে।
ঠিক এই দিক দিয়েই আপনার লাইনের কাজকর্ম আমার পছন্দ। দূর থেকে যেটুকু দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে অর্থনীতিবিদের গবেষণা করেন প্রচুর। একই ধারা প্রযুক্তিতেও শুরু হওয়া উচিত। যদিও সেক্ষেত্রে মূলধনের অভাব স্বীকার করতেই হবে।
বই/ব্লগ পড়িনি, তবে ধারণাটার সাথে পরিচিত। ইতিহাসের ক্লাসে পড়েছিলাম।
পরের একটি পর্বের জন্য একটা আইডিয়া মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মেইল করে জানাবো নে, মতামত দিয়েন।
যাদের জন্য গবেষনা প্রয়োজন (যেমন ছোট বড় উদ্যোক্তা, চেম্বার অব কমার্স, বিজিএমইএ ইত্যাদি) তারা সহজেই নানা রকমের গবেষনায় অর্থ সংস্থান করতে পারে। এছাড়া সরকারও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। কিন্তু এর জন্য গবেষনা প্রতিষ্ঠান আর এই সব গোষ্ঠীর মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ, মিথস্ক্রিয়া, আর গবেষনার ফল যে তাদের কাজে আসতে পারে এমন বিশ্বাস তৈরি হওয়া দরকার। এরকম কিছু প্রক্রিয়া হয়ত ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় শুরু হতে পারে। কিন্তু স্বাধীন ভাই উপরে যেমন বললেন লাল ফিতার দৌরাত্ম এক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো দূর হতে হবে।
অপেক্ষায় থাকব।
ঠিকানাঃ rz_uddin এট yahoo ডট com
অনেক, অনেক ভাল লাগল লেখাটি এবং মন্তব্যগুলো। যদিও আমি মনে করি শিক্ষানীতিতে স্নাতককে টার্মিনাল ডিগ্রী হিসেবে ঘোষণা করার কারণ নিয়োগদাতাদের অযাচিত মাস্টার্সপ্রিয়তা রোধ করার জন্য। এবং আমাদের দেশের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় এটাকে আমি ভুলও মনে করি না। কিন্তু আপনার লেখায় আপনি খুব চমত্কারভাবে আপনার যুক্তি দিয়ে কনভিন্স করতে পেরেছেন।
আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থার একটা বড় সমস্যা এটা আমাদেরকে চাকুরে হওয়ার জন্য প্রস্তুত করে--উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য নয়। আমাদের যদি নানা ধরনের ইন্ডাস্ট্রি থাকত তাহলে সেগুলোর উত্পাদনশীলতা এবং পণ্যের গুণগতমান বাড়ানোর নিমিত্ত ক্রমাগত গবেষণা করার জন্য কিন্তু আমাদের অনেক স্নাতকোত্তর গবেষক প্রয়োজন হত। দুর্ভাগ্যবশত ফার্মাসিটিকাল ইন্ডাস্ট্রি ছাড়া দেশের আর কোন কিছুর কথা এখন মনে পড়ছে না এক্ষেত্রে।
আমার এক বন্ধুর কাছে শুনলাম বিটিসিএল নাকি মোবাইল ফোন বানাবে দেশে। দেখা যাক, বাংলাদেশী মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সৌভাগ্য আমাদের হয় কিনা।
আমি নিয়োগদাতা হলেও সম্ভবত মাস্টার্স ডিগ্রি চাইতাম। এর পেছনে আমার কারণগুলো উপরের কারণে লিখেছি। বাংলাদেশে এমন কোনো কাজ হয় না যার জন্য এইচ-এস-সি বা সমমানের শিক্ষার বেশি কিছু প্রয়োজন। আমরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে কেরানীগিরিই করে যাই শুধু। মাস্টার্সের কথা বলে যদি আবেদনকারীর সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়, মন্দ কি? পাশাপাশি চাহিদা-যোগানের বৈষম্যের ব্যাপারটিও আছে। আমার কাজ যত ছোটই হোক না কেন, আমি একই খরচে উচ্চতর শিক্ষিত কাউকে পেলে তাকেই চাকরি দিতে চাইবো। ব্যাচেলর্সের কদর বাড়াতে তাই মাস্টার্সের জন্য উপযুক্ত চাকরিক্ষেত্র তৈরির বিকল্প নেই। সরকার এই বিকল্পের দিকে নজর না দিয়ে স্রেফ এদের অফলোড করে দিয়েই খালাস।
খুব সত্য। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের ডানা কেটে দেয়। ছোট্ট একটা বাক্সে আমাদের মনকে বন্দী করে দেয়। বাংলাদেশের প্রচলিত পাঠক্রমের কলেবর ও গভীরতা কোনো দেশের চেয়ে কম নয়। অনেকেই হয়তো আমাদের তুলনায় কম পড়েই পার পেয়ে যাচ্ছে। পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা আমাদের জ্ঞান কাজে লাগাতে জানি না। পাশ্চাত্যে শুধু ছেনি-র কাজ শেখায়, বাংলাদেশে আমরা ছেনি থেকে করাত পর্যন্ত সবকিছু ব্যবহার করতে শিখি। তফাৎ হলো, ওদের ছেনির কাজের পাশাপাশি কল্পনা করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়, আর আমাদের চোখ গেলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশি ছাত্ররা তাই "Close-ended" কিছুতে (তা যত বড়ই হোক না কেন) ভালো করে থাকে, কিন্তু "Open-ended" কিছুতে (তা যত ছোটই হোক না কেন) হোঁচট খায়। এই বিষয়টি খেয়াল করা উচিত নীতিনির্ধারকদের।
লেখা পড়বার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
চমৎকার বিশ্লেষণ আর প্রস্তাব। ভালো লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ, ভাইয়া।
পড়েছি। ব্যাপক কাজের পোস্ট। একটু বিশাল কলেবরে বিস্তারিত মন্তব্য দিবো।
(কেন্ত্রিকতা শব্দটা কি ঠিক আছে? নাকি কেন্দ্রিকতা হবে?)
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ধন্যবাদ। অপেক্ষায় রইলাম।
একটু তাড়াহুড়ায় পোস্ট করেছি, তাই ইশটুপিড সব টাইপো রয়ে গেছে। ধরে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন