উপদেষ্টাতন্ত্র ও ব্লগ নিয়ন্ত্রণঃ সভয় প্রাসঙ্গিকতা

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: সোম, ২৬/১২/২০১১ - ৪:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ হাতিমার্কা পোস্ট]

উপদেষ্টাতন্ত্রঃ আমারে নিবা মাঝি লগে

সময়ের সাথে সাথে মানুষের অভিলাষ কীভাবে বদলায়, তা ভেবে প্রায়ই অবাক হই। প্রাইমারি স্কুলে থাকতে ভাবতাম বড় হয়ে পাইলট নয়তো আইসক্রিমওয়ালা হবো। একটু বড় হয়ে মাধ্যমিকে এসে সাহস করে ভাবতাম ক্রীড়া-সাংবাদিক নয়তো আলোকচিত্রী হবো। তারও ক’বছর পর কলেজে উঠে কীভাবে যেন পড়ে ফেললাম দুই পাতা কার্ল মার্ক্স। আর ঠেকায় কে? দেশ নিয়ে ভাবতে হবে, মানুষের মাঝে মিশে রাজনীতি করতে হবে, জান দিয়ে হলেও ন্যায়ের পথে লড়তে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। জীবনের অবিরাম কষাঘাতে জর্জরিত এই বুড়ো মন এখন আর এসবের কিছুই চায় না। শুকনো চোখে একটাই স্বপ্ন দেখি, আরেকটু বড় হলে “উপদেষ্টা” হবো।

হোমরা-চোমরা রাজনীতিকের আর দাম নেই বাংলাদেশে। এখন চলছে উপদেষ্টাদের রাজত্ব। নামে কেউ একজন সরকারপ্রধান থাকেন বটে। তাঁর অধীনে মন্ত্রীও থাকেন অনেকেই। কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা এখন ন্যাস্ত থাকে গুটিকয় উপদেষ্টার হাতে। বিগত আমলে এই পদ অলংকৃত করে রেখেছিলেন সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরির মতো "বিশিষ্ট রাজনীতিক"। এই আমলে আছেন এইচ টি ইমাম, গওহর রিজভী, প্রমুখ। আমি বড় কৌতূহল নিয়ে এই লোকগুলোর কাজ-কারবার দেখি, এবং নিত্যদিন মুগ্ধ হই এঁদের ধূর্ততার নতুনতর উদাহরণে।

রাজনীতিক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা এই যুগে শূন্যের কোঠায়। রাজনীতি করতে গেলে পুলিশ প্রহরা এবং বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ সহকারে হলেও জনগণের কাছে যেতে হয়। উন্মুক্ত মঞ্চে অগণিত নাগরিকের সামনে উচ্চকণ্ঠে দায়িত্ব নিতে হয় দেশ ও দশের দেখভালের। নিয়মিত সংসদে হাজিরা দিতে হয়, আয়-ব্যায়ের খতিয়ান দিতে হয়, ক্ষুদ্রতম সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্যও অনেক রকম জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আফসোস, এত কিছুর পরও রাজনীতিকদের আর “বেইল নাই”। “বেইল” নামক এই অচেনা, অধরা বস্তু এখন পুরোটাই উপদেষ্টাদের হাতে।

একজন উপদেষ্টাকে কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় না, মানুষের দাবি কানে তুলতে হয় না, কারও সাথে আলাপ করতে হয় না, মর্জিমাফিক কোনো পরিবর্তন আনার আগে আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় না, এবং সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সময় এবং অখণ্ড মনোযোগ পেতে তিল পরিমাণ কাঠ, খড়, ম্যাচের কাঠি, কিংবা কাগজের ঠোঙা পোড়াতে হয় না। উলটা বনে-বাঁদাড়ে ঘুরে বেড়ানো হতচ্ছাড়া খ্যাত রাজনীতিকগুলো তাঁদের হাতে-পায়ে ধর্ণা দেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দু’দণ্ড সময় কাটানোর সৌভাগ্য পেতে। দল যদি দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়, তবে সেই দায়ও এই উপদেষ্টাদের ভুগতে হয় না। তাঁরা প্রসিদ্ধ আমলা, অন্য কোথাও উপদেষ্টা হয়ে জুড়ে বসা তাঁদের জন্য ডাল-ভাত। মাঝে কপাল পুড়ে জনগণের।

আরও অনেকের মতো আমি এই শাসনামল নিয়ে অনেক আশাবাদী ছিলাম। আশার কারণ দু’টি। প্রথমত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার এক বিলম্বিত কিন্তু মহান ব্রত। দ্বিতীয়ত, মন্ত্রীসভায় প্রসিদ্ধ লুটেরাদের পরিবর্তে নতুন মুখ দেখতে পাওয়া। সবই ঠিক ছিলো, শুধু হাবিজাবি উপদেষ্টা নিয়োগ করার আগ পর্যন্ত। যেই “উপদেষ্টা” পদবীকে সারা জীবন আলংকরিক বলে জানতাম, সেটাই দিনে দিনে পরিণত হচ্ছে “উজির” পদবী।

প্রাণিজগতের ধ্রুব সত্যগুলোর একটি হলো, সব সাপই এক সময় গর্ত থেকে বের হয়ে আসে। খুব সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুই প্রজাতির সাপ গর্ত থেকে বের হয়ে এসেছে। একটি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বাঁচাতে বিএনপি-জামায়াতের বিষাক্ত শপথরূপী গোখরা, অন্যটি আওয়ামী লীগকে আষ্ঠে-পৃষ্ঠে ঘিরে থাকা উপদেষ্টারূপী অ্যানাকোন্ডা। প্রথমে তাকাই দেশের পাঁজড় ভেঙে, শ্বাসরুদ্ধ করে, তাকে তিলে তিলে হত্যা করা অ্যানাকোন্ডার দিকে।

শাসনামলের শুরুতে ন্যূনতম জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে এই উপদেষ্টারা পর্দার আড়াল থেকে সিদ্ধান্ত নিতেন। আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে আন্দাজ পাওয়া যেতো ক্ষমতার এই অদৃশ্য উৎসগুলো সম্পর্কে। আজ তিন বছর পর সেই আনুষ্ঠানিকতার আর প্রয়োজন নেই। যাঁদের প্রান্তিক ব্যাক্তিত্ব হওয়ার কথা, সেই উপদেষ্টারা এখন বলিষ্ঠ কণ্ঠে (অনেকটা উপ-প্রধানমন্ত্রীর স্বরে) জানান দেন নিজেদের কী করণীয়। সংসদ নামক হাস্যকর এক নাট্যমঞ্চে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ক্রীড়নকের মতো সেই সিদ্ধান্ত মুহূর্তে রাবার-স্ট্যাম্প করে দেন।

আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ নই, তবে গড়পড়তা নাগরিকের চেয়ে একটু হলেও বেশি ভাবি দেশ নিয়ে। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক অনেক বিশ্লেষণের পরও আধুনিক বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থায় কিছু বিচিত্র পরিবর্তনের কোনো আগা-মাথা খুঁজে পায় না। সংসদকে আমি চিরকাল জেনে এসেছি “আইনসভা” হিসাবে। এখানে দেশের আইন তৈরি হবে, আইন নিয়ে আলোচনা হবে, দেশের নীতি নির্ধারিত হবে। এর এক ধাপ নিচে রয়েছে পৌরসভা, যেখানে রাস্তা-ব্রিজ-পাইপ-হাইওয়ে ইত্যাদি তৈরির নৈমিত্তিক কাজের দায়িত্বে থাকবেন স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা। এই আমলে দেখছি আইন বদলে সংসদসদস্যদের দেওয়া হয়েছে রাস্তা মেরামতের কাজ, আর আইন তৈরির কাজ বিনা ব্যাখ্যায় ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে হাতে গোণা কিছু উপদেষ্টার হাতে।

কী বিচিত্র এক দেশ আমাদের... এক দিকে সংসদ বিনা আলোচনায় ঢাকা ভাগ করে ফেলে পাঁচ মিনিটের ভোটে, অন্য দিকে একের পর এক উপদেষ্টা বক্তব্য দিয়ে চলেন টিপাইমুখ থেকে সেন্সরশিপ পর্যন্ত নানান বিষয়ে। তাঁরা আজ যা মিডিয়ায় বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তা আরও ছয় মাস আগে থেকেই বাস্তবায়িত হয়ে আছে কোনো এক গায়েবী ইশারায়।

সব দেখে খুব মনে পড়ে কপিলার সেই অমর উক্তি – “আমারে নিবা মাঝি লগে?” এখন সময় গণতন্ত্রের নয়, উপদেষ্টাতন্ত্রের। সাধারণ, স্বাভাবিক পথে চলে রাজনীতিকদের মতো ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে উপদেষ্টা কুবেরদের হাত ধরে ময়নাদ্বীপে চলে যাওয়াই উত্তম!


ব্লগ নিয়ন্ত্রণঃ শ্লীলতার অজুহাতে স্বাধীনতার ঠিকাদারি

উপদেষ্টাকূলের অন্যতম শিরোমণি এইচ টি ইমাম অতি-সম্প্রতি একটি লাখ টাকা দামের মন্তব্য করেছেন ব্লগ নিয়ে। তিনি শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে ব্লগ বন্ধ করে দেওয়ার “উপদেশ” দিয়েছেন। বর্তমানে যেই মাত্রায় উপদেষ্টাতন্ত্র চলছে, তাতে তাঁর বক্তব্য হালকা ভাবে নেওয়ার অবকাশ নেই। কে জানে, হয়তো সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা হিসাবেই তিনি জানান দিয়েছেন এই সিদ্ধান্তের কথা। টিপাইমুখ ও ট্রানজিট প্রসঙ্গে তাঁদের আচরণ অন্তত তেমনটাই নির্দেশ করে। দুই ক্ষেত্রেই একমাত্র তাঁদের মুখ থেকেই জাতি জেনেছে নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে, এবং উভয় ক্ষেত্রেই তাঁরা ঘোষণা দেওয়ার প্রহসনটুকু করার আগেই চালু হয়ে গেছে সবকিছু।

একটু খেয়াল করে দেখা যাক তিনি কী বললেন, কখন বললেন, কাদের সাথে যোগসাজসে বললেন, এর মধ্য দিয়ে কী অর্জন করার চেষ্টা করলেন, এবং প্রতিক্রিয়ায় কত বড় গর্ত খুঁড়লেন।

জবাব ইমাম এই ঘোষণাটি দিয়েছেন বিবিসি বাংলা আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে। এ-সময় তিনি অত্যন্ত দৃঢ় কণ্ঠে এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে “অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ কোনো ব্যঙ্গচিত্র” প্রকাশ করা হলে ব্লগ বা ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া উচিত। উপদেষ্টা মশাই অভিজ্ঞ আমলা হতে পারেন, বিচক্ষণ রাজনীতিক নন। তাঁর এই মন্তব্যের পিছনে বৃহত্তর কোনো চিন্তা নেই, আছে স্রেফ নিজের ভাবমূর্তি টিকিয়ে রাখার খায়েশ। রাজনীতিকমাত্রই জানেন যে ভোটের হাওয়া অহর্নিশ দিক বদলায়। তিনি এমন আইন প্রণয়ন করেন না যা তাঁর উপর খাটালে অস্বস্তিতে ভুগতে হয়। সাবেক আমলা থেকে বর্তমান উপদেষ্টা হওয়া মহীরূহেরা এই সমতা বা দূরদর্শিতায় অভ্যস্ত নন। চাকরিজীবনের অভ্যাসের ধারাবাহিকতায় এই ক্ষেত্রেও তিনি এমন একটি আইনের প্রতি ইঙ্গিত করলেন যা শুধু এবং শুধুমাত্র তাঁর নিজের স্বল্পমেয়াদী স্বার্থচিন্তা থেকে প্রসূত।

প্রশ্ন হলো, তাঁর এই ঘোষণার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কী? নিদারুণ বাস্তবতা হলো, জগতে বাটপারের চেয়ে তাঁবেদারের সংখ্যা বেশি। বাটপার উপদেষ্টার স্বার্থপর চিন্তা প্রকাশ পেতেই তাঁর আশে-পাশে জড়ো হয়ে গেছে বেশ অনেক মোসাহেব। ফলাফল অনুমেয়ঃ কর্তার ইচ্ছাকে আদেশ হিসাবে ধার্য করে তাঁরা মাঠে নেমেছেন ব্লগ ও ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণের ঠিকাদারি চেয়ে। এই পদলেহন উৎসবে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকায় দেখতে পাই জনৈক তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে, যিনি চাটুকারিদার চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে বলেই বসলেন যে সংবাদ পরিবেশনের “লাগামহীন” স্বাধীনতার জন্য রাজনীতিকদেরই ভুগতে হচ্ছে বেশি। সমাধান সহজ, এঁদের ঠিকাদারিত্বে ছেড়ে দিন ব্লগের স্বাধীনতা, মুহূর্তে পেঁদিয়ে সোজা করে দেওয়া হবে যত নচ্ছাড়দের।

নির্বাচন আসছে আর দুই বছরের মধ্যেই। ব্যর্থতা ও শপথভঙ্গের শাস্তি এড়াতে এটাই সময় অতি-চালাকি করার। দরকারি জায়গায় এখন থেকেই নিজের লোক বসাতে হবে, ঝামেলাবাজদের মেরে-বকে পথে আনতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠে গেল, রাজধানীতে নিজদলের মেয়র রাখার সুবিধার্থে রাজধানীই দুই ভাগ হয়ে গেল। রইলো বাকি ইন্টারনেটেও একচ্ছত্র ভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। নয়তো তিন বছর আগেই যেই তরুণ প্রজন্ম দলে দলে ভোট দিয়েছে তারাই শুরু করবে প্রতি-প্রচারণা। তৈরি মোসাহেব পেলে যেকোনো স্বার্থান্বেষীই এই টোপ গিলবেন।

সমস্যা এই অতি-চালাকিতে না। সমস্যা এখানেই যে, রাজনৈতিক অতি-চালাকির খেলায় আওয়ামী লীগ একেবারে লজ্জাজনক রকম অদক্ষ। এই দল বিশেষ ক্ষমতা আইন করে ভুগেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করে ভুগেছে, জামায়াতের সাথে এক টেবিলে বসে ভুগেছে, এরশাদের অধীনে নির্বাচন করে ভুগেছে, এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেও ভুগেছে, পছন্দের লোক সেনাপ্রধান করে ভুগেছে, পছন্দের লোক রাষ্ট্রপতি করেও ভুগেছে, বিদেশি শক্তির মন জুগিয়ে না চলে ভুগেছে, একই শক্তির মন জুগিয়ে চলেও ভুগেছে। এই ভুলগুলোর প্রতিটার মূলে ছিলো স্বল্পমেয়াদে স্বার্থোদ্ধারের বাসনা থেকে আইনের উপর শল্যচিকিৎসা করতে যাওয়া, যেই ভুলটি ব্লগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আরও একবার করতে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান।

উপদেষ্টারূপী মৌসুমী রাজনীতিকদের অভিযোগের মর্মমূলে আছে “অশ্লীলতা”। ব্লগে অত্যন্ত “কুরুচিপূর্ণ” ভাষায় রাজনীতিকদের আক্রমণ করা হয়, যা বাস্তবে কেউ করতে পারে না। যতদূর বুঝি, এটাই তো তথ্যস্বাধীনতার মূল লক্ষ্য! যেই উচিত কথাটি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে বললে আমাকে রিমান্ড কিংবা গুম-খুনের মুখোমুখি হতে হবে, তা আমি ঘর থেকেই বিশ্বকে জানানোর নিরাপত্তা চাই। ডিজিটাল বাংলাদেশে আমাদের উন্নয়নের মাপকাঠি হওয়া উচিত ঘরের সমান নিরাপত্তা রাস্তার মোড়েও পাওয়া, যাতে যে-কেউ যেকোনো জায়গায় নিজের মত প্রকাশ করতে পারেন। উলটো আমরা চলছি রাস্তার মোড়ের ত্রাসকে ঘরের ভিতর পর্যন্ত ডেকে আনার পথে! ভাবতে অবাক লাগে, এত গর্বের বাংলাদেশ হয়তো ক’দিন পর নাম লেখাবে চীন, ইরান, মায়ানমার, উত্তর কোরিয়ার মতো বন্দী রাষ্ট্রের কাতারে, যেখানে অনলাইনে হাঁচি দিলেও তা সরকার ও ঠিকাদার-মোসাহেব মারফত পাশ হয়ে আসতে হয়।

ক্ষমতাসীনদের গাত্রদাহের কারণ, ব্লগের ব্যাক্তিগত অভিমত ও প্রতিবাদের ভাষা প্রথম আলো বা বিডিনিউজের মতো পরিশীলিত নয়। এখানে গোলাম আযম, নিজামী, সাঈদী, ও সাকা চৌধুরিদের “অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী” কিংবা “জামায়াতে ইসলামীর প্রাক্তন আমীর” কিংবা “সন্দেহভাজন আটক” হিসাবে পরিচয় করানো হয় না, সরাসরি যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধপাপী, এবং মানবতাবিরোধী হিসাবে ডাকা হয়। এখানে এদের শাস্তির দাবি করা হয় দৃঢ়তম কণ্ঠে। এখানে সরলতম ভাষায় দাবি করা হয় সর্বোচ্চ বিচার। এখানে কোনো অপকর্মের কথা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলা হয় না, বরং এক টানে অপরাধীর লুঙ্গি খুলে দেওয়া হয়। টিপাইমুখ নিয়ে ফালতু জোচ্চুরি করতে গেলে এখানে লম্বা খণ্ডন সহকারে সেই দেশদ্রোহী আচরণ দেখিয়ে দেওয়া হয়। এখানে স্বতঃস্ফূর্ত জনমতের মাধ্যমে ঠেকানো হয় হঠকারি সিদ্ধান্ত। এখানে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদকে শিরোধার্য হিসাবে না দেখে ব্যাপক যাচাই-বাছাই করা হয়।

এই ঘটনারগুলো প্রত্যেকটিই রাজনীতিকদের গায়ে বিঁধে শূলের মতো। তেমনটাই উদ্দেশ্য, কারণ অন্যথায় তাঁদের টনক নড়ে না। প্রচলিত সংবাদ মাধ্যমকে গুণ্ডা, পুলিশ, ও বিজ্ঞাপণের ভয় দেখি সোজা রাখা গেলেও ব্লগকে সেই পথে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তাই আজ উপদেষ্টা আনছেন শ্লীলতাহানির অভিযোগ। উদ্দেশ্য যতটা না শ্লীলতা রক্ষা করা, তার চেয়ে বেশি সরকারের সমালোচনা রহিত করা। আরেক প্রতাপশালী নির্বোধ এই উদ্দেশ্য মুখ ফষ্কে বলে দিয়েছেন ক’দিন আগেই। ঢাকা ভাগ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সৈয়দ আশরাফ তো সরাসরি বলেই দিলেন যে ব্লগে বুঝে-সমঝে লিখতে হবে, নয়তো সরকারের রোষানল অপেক্ষা করছে। শুধু কি তাই, তিনি ব্লগকে তুলনা দিয়ে বসলেন পর্নোগ্রাফির সাথে! সাইডনোটঃ শুনেছি পর্নস্টারদের নাম তৈরি হয় পোষা প্রাণি এবং ছেলেবেলার রাস্তার নাম মিলিয়ে। হিসাব কষে বের করেছিলাম, আমার পর্নস্টার নাম হয় ‘শাইনি সেন্ট্রাল’। ছিলাম ব্লগার, হলাম পর্নস্টার। মন্দ কী?

এই পর্যায়ে খুব হতাশার সাথে একটাই প্রশ্ন আমারঃ এঁদের কেউ কি ভেবে দেখেছেন পাশার দান উলটে গেলে অবস্থা কী দাঁড়াবে? আজ সিটি কর্পোরেশন ভাগ নিয়ে কিছু বলতে গেলে তা “অযৌক্তিক সমালোচনা”-র অজুহাতে আইনী হাঙ্গামার কারণ হবে, ব্যাপক সমালোচনার মুখেও চৌর্যবৃত্তি অব্যাহত রাখার দায়ে আবুল হোসেনকে গণ্ডার ডাকলে তা রাজনীতিকের “আপত্তিকর ব্যঙ্গচিত্র” হবে। কাল যদি বিএনপি ও জামায়াত ক্ষমতায় এসে শরিয়া আইনের বাইরে যেকোনো কিছুকেই “অশ্লীল” বলে দাবি করে এবং যেকোনো ব্লগকে এই অজুহাতে বন্ধ করে দেয়? কাল যখন এরা অন্য সব মত রহিত করে নিজেদের মতো ইতিহাস পুনঃরচনা করবে তখন কে ঠেকাবে তাদের? ক্ষমতাসীন এই হতচ্ছাড়াদের কে বুঝাবে যে সরকারের সমালোচনা আর নগ্নদেহের রগরগে উল্লাস এক বস্তু না? কে এঁদের বুঝাবে যে রাজনীতিক নিজে দায়িত্বহীন না হলে তাঁর তথাকথিত দায়িত্বহীন সমালোচনা হয় না?

সমস্যার শেষ এখানেই নয়। সরকার যাঁদের হাতে ব্লগের স্বাধীনতার ঠিকাদারিত্ব দিচ্ছেন তাঁরা আগামী দুই বছরেই কতটুকু ক্ষতি করে ফেলবেন সেটাও কি কেউ ভেবে দেখেছেন? পাশ্চাত্যের ধাঁচে বাংলাদেশেও আজ বিনোদনমূলক সংবাদের প্রসার ঘটছে। এক দিকে স্ট্যান্ড-আপ কমেডিতে একটু একটু করে স্থান করে নিচ্ছে রাজনৈতিক চুটকি, আরেক দিকে অনলাইনে প্রকাশ পাচ্ছে বিভিন্ন রকম ব্যঙ্গাত্মক সংবাদ-ব্লগ। সরকারের সংজ্ঞায় এগুলো অশ্লীল, অথচ ‘মেহেরজান’ নামক কুৎসিত ছবিটি তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য! শুদ্ধ ভাষায় “ডিয়ার ডায়েরি” বলে পাকিস্থানি সৈন্যের প্রতি শারীরিক প্রেম প্রকাশ আমার চোখে অশ্লীল। পারিবারিক পরিবেশে এই দৃশ্য বনাম গে-পর্নের মধ্যে বাছতে বললে আমি সপরিবারে পর্নোগ্রাফি দেখবো। খুব সম্ভবত আমার সব পরিজনও এই দ্বিতীয় দৃশ্যেই অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। এই বাস্তবতা বিচারে কেন তাঁদের হাতেই ব্লগের স্বাধীনতার ঠিকাদারি তুলে দেওয়ার তোড়জোড় করা যাঁরা জানপ্রাণ দিয়ে লড়ে গেছেন মেহেরজান, কাউন্টার ন্যারেটিভ, রিকনসিলিয়েশন, ইত্যাদি অশ্রাব্য ধারণা সমাজে প্রবেশ করাতে? একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঝুলিয়ে রেখে আরেক দিকে এই গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ায় কার লাভ?


পরিশিষ্টঃ

আমার বোধ ও প্রকাশের দুর্বলতা শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞান নয়, আইনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমার সীমিত বোধে এটুকুই বুঝি শুধুঃ আইনের কাজ দুর্বলকে আশ্রয় দেওয়া, সবলকে প্রশ্রয় দেওয়া নয়। ব্লগের ভাষা ও প্রকাশ যতই অপরিশীলিত হোক না কেন, তা অগণিত প্রান্তিক মানুষকে এই নষ্ট সময়ে একটু খানি আশ্রয় দেয়। ক্ষমতার মোহ আর প্রাচুর্যের আলস্যে পথ হারানো রাজনীতিকের স্বার্থোদ্ধারের জন্য ব্লগ বন্ধ করার মতো চিন্তা মাথায় না আসুক, এটাই অনুরোধ।


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

১০০ % সহমত। দেখি দুর্নীতির হিমালয়ের বিরুদ্ধে জনতা ফুঁসে উঠে কি না (নিজেও জনতা)

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

না রে ভাই, আমার মনে হয় না তেমন কিছু হবে। আমাদের জনগণ অনেক বেশি রাজনীতি-মূর্খ। শিক্ষা ও সচেতনতা না বাড়লে যা আছে সেটাই চলবে। এই দল যাবে, ঐ দল আসবে...

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ইশতিয়াক ভাই, উপদেষ্টাতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য আসলে আপনার কী বলে মনে হয়? এটা কি কিছু হঠকারী সরকারী সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের দিয়ে না বলিয়ে কিছু আবালদের দিয়ে বলিয়ে নেয়া? যাতে শেষ পর্যন্ত আলোচনা সমালোচনা ওই আবাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে? টিপাইমুখ বিষয়ে আমাদের বিশিষ্ট উপদেষ্টা সাহেব যা বললেন, সেটা কি আসলে তার ব্যাক্তিগত মতামত, নাকি সরকার তার কিছু বিতর্কিত কাজের মুখপাত্র হিসেবে এসব জম্বিদের ব্যবহার করছে? আমি আসলে কনফিউজড।

আপনি বলছেন, "এখন চলছে উপদেষ্টাদের রাজত্ব। নামে কেউ একজন সরকারপ্রধান থাকেন বটে। তাঁর অধীনে মন্ত্রীও থাকেন অনেকেই। কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা এখন ন্যাস্ত থাকে গুটিকয় উপদেষ্টার হাতে।" - ব্যাপারটা কি এরকম, যে উপদেষ্টারা এতই ইনফ্লুয়েন্সিয়াল যে তারাই আসলে সরকার চালাচ্ছে? নাকি সরকারের এটা একটা সেফসাইডে থাকার চেষ্টা?

আর দ্বিতীয় অংশের ব্যপারে কিছু বলার নেই। একমত সর্বাংশে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সচল জাহিদ এর ছবি

ত্রিমাত্রিক কবির মন্তব্য ভেবে দেখবার মত। কখনো কখনো আমারও মনে হয়েছে সরকার তার নিজের অবস্থান রাজনীতিবিদদের ভাষ্যতে জনগনের কাছে না পৌঁছিয়ে নামের আগে হাতি মার্কা বিশেষন ওয়ালা উপদেষ্টাদের দিয়ে বলাচ্ছে। এতে লাভ দুটিঃ

১) রাজনীতিবিদরা বেঁচে যাচ্ছে যেহেতু মতামত উপদেষ্টারা দিচ্ছে।
২) সংকটকালে একজন উপদেষ্টাকে তার পদ থেকে অপসারন সতটা সহজ, একজন রাজনীতিককে তার পদ থেকে সরানো রাজনীতির মঞ্চে ততটাই কঠিন।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমার কিন্তু উলটা মনে হয়। বিএনপি-র শাসনামলের অসুস্থ অনুকরণ থেকে আওয়ামী লীগও সরকারের প্রাণকেন্দ্র মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে। গত আমলে যা ছিলো হাওয়া ভবন ও তারেক-গিয়াস-হারিছ গং, এই আমলে সেটাই একান্ত উপদেষ্টার দল।

ক্ষমতার কেন্দ্র সরে যাওয়ার অনেক বড় সুবিধা আছে। সব আলোচনা ও সিদ্ধান্ত খোলামেলা ভাবে নিতে হওয়ার বালাই নেই। এই সুবিধাটুকুর মোহ আওয়ামী লীগ ছাড়তে পারেনি। অপসারণের দিক থেকে দেখলে আইনী বিবেচনায় সহজতর পথ এটা। তবে রাজনৈতিক নেতাকে মন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়াটা সেই নেতার উপর দোষের ভার চাপায় (মন্ত্রী আবুল)। একজন উপদেষ্টাকে সরিয়ে দেওয়া মানে প্রধানমন্ত্রীর ইনার-সার্কেলের দোষ/ভুল স্বীকার করে নেওয়া। এই মহত্ত্ব আমাদের রাজনীতিকদের নেই।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

নাহ, উপদেষ্টাদের ক্ষমতাহীন ভাবাটা বড় ভুল হবে। Zombie কেউ থেকে থাকলে সেটা পুরো সংসদ। সাধারণ সদস্যদের কিছুই করবার নেই সংসদে। আইন তৈরির প্রক্রিয়ায় অংশ নেই তাঁদের, মন্ত্রীদের কাছ থেকে কিছু জানতে হলে জোরে-শোরে তলব করা লাগে। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে তাঁদের করবার মতো "কিছু একটা" দিতে আইন বদলে স্থানীয় সরকারের কাজে হস্তক্ষেপের অধিকার দেওয়া হয়েছে। সবাই দ্রব্যমূল্য, ইত্যাদি নিয়ে বলেন, কিন্তু আমার মতে এই কুকর্মটা সবচেয়ে জঘন্য।

এই আমলের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর "একান্ত বিশ্বস্ত" কোনো পুরনো রাজনীতিক ছিলেন না দলে। প্রায় সবাইই বিভিন্ন মাত্রায় পরিবর্তন চেয়ে বিরাগভাজন ছিলেন। কারাবাস, মাইনাস-টু, ইত্যাদি মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীও অনেক বেশি 'প্যারানয়েড' ছিলেন। কোনো রকমের দ্বিমতের তিলেক সম্ভাবনাও নির্মূল করতে মন্ত্রীত্ব দেওয়া হলো একদম নতুন লোকজনকে।

উপদেষ্টা হিসাবে যাঁরা আছেন তাঁরা এক কালের প্রতাপশালী আমলা। এঁরা এত সহজে stooge-এ পরিণত হওয়ার মানুষ না। সিদ্ধান্তগুলোও যে তাঁদের মতামতের আলোকে নেওয়া, সেটা কণ্ঠের ঔদ্ধত্বেই প্রকাশ পায়।

স্বাধীন এর ছবি

অনেক দিন পর ইশতির লেখা দেখে বেশ ভালো লাগলো। নিয়মিত হও এই অনুরোধ রাখি।

উপরে ত্রিমাত্রিক কবির মন্তব্যটা কিন্তু চিন্তা জাগানিয়া। তোমার সাথে দ্বিমত নেই যে উপদেষ্টারা মোটেই ক্ষমতাহীন নয়, বরং তারা যে কোন সাংসদ মন্ত্রীর থেকে বেশি ক্ষমতাশীল। কিন্তু মূল ফোকাস হওয়া উচিত একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার থাকার পরেও কেন এই উপদেষ্টা নির্ভরতা?

আমি এর পেছনে যা দেখি তা হচ্ছে এক ব্যক্তিকেন্দ্রীক শাসন! বিনপি এবং লীগ দু'দলেই চলছে সরাসরি খালেদা আর হাসিনার শাসন এবং সেই সাথে বাংলাদেশও চালাচ্ছে এই দু'জনই। এই এক ব্যক্তিকেন্দ্রীক কিংবা পরিবার কেন্দ্রীক শাসনের ফলে তারা দু'জনেই সজ্ঞানে চামচা/ব্যাবসায়ী/সন্ত্রাসীদেরকে এনে জড়ো করেছে তাদের দলগুলোতে, এবং তাদেরকে মনোয়ন দিতেও এখন বাধ্য (নারায়ঙ্গঞ্জে যা হলো)।, এই দুই মহিলা আবার বোকাও নয়। তারাও জানে এই অর্থব সাংসদদেরকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনা সম্ভব কিন্তু তাদেরকে দিয়ে দেশ চালানো সম্ভব নয়। সুতরাং ভরসা ওই কিছু আমলা। এতে সাপও মরে আবার লাঠিও ভাঙ্গে না। কিছু হলে এই স্কেইপ গোটদের উপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া যাবে।

তাই আমার মতে ফোকাস হওয়া উচিত এই উপদেষ্টাদেরক যিনি নিয়োগ দিচ্ছেন এবং চালাচ্ছেন তাদের উপর অর্থাৎ সরাসরি হাসিনা এবং খালেদার উপর। দলগুলোতেও যদি নুণ্যতম গণতন্ত্রের চর্চা হতো তাহলেও অবস্থা এতো খারাপ হয় না। দুই দলেই প্রতিটি ক্ষেত্রে সরাসরি এই দুই মহিলার শাসনের কারণেই সংসদ নিষ্ক্রিয়, নিষ্ক্রিয় সবই। সাংসদেরা সব কিছু পাঁচ মিনিটে পাস করিয়ে ফেলে কারণ তারা খুব ভালো করেই জানে যে এগুলো উপদেষ্টারা বললেও তাতে আপার সায় আছে। এগুলো শুধু উপদেষ্টাদের বক্তব্য হলে আমি তোমার লেখার সাথে সহমত জানাতাম। কিন্তু এই বক্তব্যগুলো শুধু উপদেষ্টাদের নয়, উপদেষ্টারাও উপরের একজনের হয়ে কাজ করছেন। তাই সকল বক্তব্যের দায়িত্ব যদি কাউকে নিতে হয় তবে সে দায়িত্ব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর।

হিমুও কিছু দিন আগে শকুনী মামাদেরকে নিয়ে একটি লেখা দিয়েছিল। এখানে শকুনী মামাকে খুঁজে বের করার প্রয়োজন নেই। শকুনী মামাদেরকে যারা লালন করছে তাদের দিকে দৃষ্টি দিলেই হয়। তারা তো আর লুকিয়ে কিছু করছে না, যা করছে প্রকাশ্যেই করছে। এই উপদেষ্টারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই কাজ করছে। এখানে প্রধানমন্ত্রী নিজে সরাসরি সংবিধানের বাহিরে যেয়ে, সংসদকে পাশ কাটিয়ে, মন্ত্রীদেরকে পাশ কাটিয়ে, উপদেষ্টাদেরকে দিয়ে একা একা দেশ চালাচ্ছেন। যদি তিনি সফল হতেন তখন যেমন সকল ক্রেডিট নিতেন তেমনি এখন দাঁয়ও তাকেই নিতে হবে তার অসফলতার।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আমি আপনার এই কথাগুলোর সাথে সম্পূর্ণভাবে একমত -

এগুলো শুধু উপদেষ্টাদের বক্তব্য হলে আমি তোমার লেখার সাথে সহমত জানাতাম। কিন্তু এই বক্তব্যগুলো শুধু উপদেষ্টাদের নয়, উপদেষ্টারাও উপরের একজনের হয়ে কাজ করছেন। তাই সকল বক্তব্যের দায়িত্ব যদি কাউকে নিতে হয় তবে সে দায়িত্ব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর।

শকুনী মামাদের যারা লালন করছে তাদের দিকেই আসলে দৃষ্টি দিতে হবে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

দ্রোহী এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

উপদেষ্টাদের দিকটা আসায় ভালো হয়েছে। পড়ে ভালো লাগলো।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ। এই তেলেসমাতি সিস্টেম নিয়ে আমি অনেক দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম কেউ একটু আলোকপাত করবেন ভেবে। শেষতক নিজেই...

চরম উদাস এর ছবি

চলুক সহমতের উপ্রে সহমত

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

সচল জাহিদ এর ছবি

অনেকদিন পর ইশতি। চলুক

উপদেষ্টাদের কাজের পরিসীমা বাড়ছে। আমাদের মাননীয় পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ইদানিং নিজ রাষ্ট্র নিয়েও কাজ শুরু করেছেন। জানিনা এই সীমা আরো কতদিকে বর্ধিত হবে।

ব্লগ নিয়ন্ত্রন নিয়ে কতদূর যাবে এই সরকার সেটি নিয়ে আসলেই চিন্তিত। সম্প্রতি এই খবরের পর সেই চিন্তা আরে বেড়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই ইস্যু নিয়ে সব ব্লগাররা এখনও একই ভিত্তিভূমিতে আসছেনা। সচলে নিয়মিত ভাবে এই ইস্যু নিয়ে আলোচনা হলেও অন্যান্ন ব্লগ এই নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হয়েছে বলে মনে হয়না।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমার মনে হয় না পররাষ্ট্র উপদেষ্টা খুব একটা মহানুভবতা থেকে এই কাজে হাত দিয়েছেন। মুখ ফুটে দু'কথা বলে ঝামেলায় পড়েছেন। বেগতিক অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে নজর দিয়েছেন এই চিরচেনা ইস্যুর দিকে। রাজনীতির অনেক পুরনো চাল এটা -- কোনো কিছু জনরোষের শিকার হলে অতি দ্রুত জনসমর্থিত কিছু একটায় হাত দেওয়া। টিপাইমুখ নিয়ে যেই মাত্রার আহাম্মকি কথাবার্তা উপদেষ্টা এবং মন্ত্রী মিডিয়ায় বলেছেন, তাতে এক-আধটা বিশ্বযুদ্ধ থামানোর আগে ক্ষমা নাই।

ব্লগ সমস্যার মূলে আছে স্রেফ অতি-চালাকি। সরকার চাইছে কিছু চামচা কিনতে। অন্যদিকে ব্লগের কিছু বাতিল মাল নতুন খোল পড়ে চামচা হওয়ার আশায় পা চেটে যাচ্ছে। কানা-ঘুঁষা শুনি, কেউ কেউ নিজের অতীত কুকর্ম ধুয়ে-মুছে সাফ করার কাজেও লিপ্ত।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ডিজিটাল যুগের নতুন ধারনা, 'ক্ষমতাবান উপদেষ্টা মন্ডলী'।
পোস্টের বিষয়ে সহমত।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

ঝুমন এর ছবি

সরকার ব্লগ নিয়ন্ত্রণ করার ধৃষ্টতা দেখাবে বলে মনে হয় না। তবে দেখানোর চেষ্টা করলে অবশ্যই সফল হবে না। তবে কিছু ব্লগের কথাবার্তা আমার কাছে আপত্তিকর ঠেকে। সামু টাইপের ব্লগে যে ব্যাপক গালাগালি করা হয় তা মডারেট করা উচিত বলে আমি মনে করি। আমি (আমরা বললাম না, জানিনা কেউ সহমত পোষণ করবেন কিনা) মনে করি ব্লগ আমাদের সমাজের অস্থিরতা, হতাশা আর তা থেকে পরিত্রাণ লাভের এক অনন্য প্লাটফরম। যদি কেউ এখানে পাকিস্তান প্রীতি, রাজাকারদের হাতিয়ার হিসেবে একে ব্যাবহার করে তাহলে আমার কাছে তা আপত্তিকর ঠেকবে। আমি তাদের বলতে দিতে পারিনা ৭১ একটি ভুল। আপনি এদের ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন? এদেশে মেহেরজান নিয়ে মাতামাতি করবে, শিবির বিজয় দিবসে স্মরণসভা করবে তা আমি মানতে পারি না। এই স্বাধীনতার ইতি টানতেই হবে।

হিমু এর ছবি

সেটা রাষ্ট্রীয় আইনে করতে হবে কেন? সামুর তো নিজেরই নীতিমালা থাকার কথা। তাদের একটা সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টন মার্কা নীতিমালা আছে, যেটা নানা ধারা উপধারায় কণ্টকিত, কিন্তু ছাগুদের হাগামুতা সেই নীতিমালায় আটকা পড়ে না।

আপনি ফুটানি মারবেন আপনার ব্লগে এক লাখ ব্লগার, আর সেই এক লাখ ব্লগারের গুমুত সাফ করার দায়িত্ব দিবেন রাষ্ট্রকে, এটা তো হতে পারে না। দরকার হলে এক লাখ ব্লগারকে সামলাতে পঞ্চাশ হাজার মডারেটর নিয়োগ করেন, কিন্তু ম্যানেজ ইওর ঔন শিট। একদিক দিয়ে ছাগুদের আশকারা দিবেন, হাগামুতার পাহাড় বানাবেন, তারপর সেই হাগামুতার পাহাড়কে উছিলা বানায় ব্লগে নিয়ন্ত্রণে আইনের জন্য পলিটিশিয়ানদের বগলতলায় মুখ গুঁজে কথা বলবেন, এই আবদার তো ছৈল্ত ন।

তাপস শর্মা এর ছবি

এই আবদার তো ছৈল্ত ন।

গুরু গুরু

ঝুমন এর ছবি

হিমু ভাই সম্ভবত আপনি যা বলেছেন আমি সেটাই বলতে চেয়েছি। ব্লগ নিজেদের নীতিমালায় চলবে। এসব দায়িত্ব রাষ্ট্র নিতে পারেনা। নেয়া উচিত নয়। আমার কনসার্ন ভিন্ন জায়গায়। আমার দেশে রাজাকারদের সাপোর্টে ব্লগ লেখা হবে, পাকিস্তান প্রীতি নিয়ে ফুটানি মারা হবে, সেটাকে হালাল করার প্রাণান্ত চেষ্টা থাকবে এসব কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করব বা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে কিছু কি বলবেন।

আরেকটা ব্যাপার, আপনি সম্ভবত আমাকে সামুর কেউ একজন মনে করেছেন অথবা খালিদীর সাথে যোগাযোগ আছে যে কিনা ব্লগ নিয়ন্ত্রণ প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। আপনার ধারণা ভুল।

যদি সামু মডারেট না করে তাহলে আপনি কি পাঠকদের কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দিবেন? তারা বেছে নিবে। তাহলে আপনি ভুল করবে। আমরা সস্তা জিনিস বেশি পছন্দ করি। মুহাম্মদ জাফর ইকবালের একটা কথা খুব মাথায় ঢুকে আছে। এদেশের তরুণেরা দিনে দিনে মৌলবাদী হয়ে যাচ্ছে আর সামু, সোনার বাংলা টাইপ ব্লগগুলো এদের provoke করছে।

সরকার যা করছে তা হীন উদ্দেশ্য, সেটা না হয় রুখে দিলাম (রুখে দেয়া যাবে এই বিশ্বাস রেখেই বলছি ) কিন্তু ব্লগের যুদ্ধে তাদের হারাব কিভাবে?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনি কেন ভাবছেন, যে নিয়ন্ত্রনের কথা বলা হচ্ছে সেটা সামু বা সোনাব্লগকে ছাগুমুক্ত করার জন্যে? আপনার কন্সার্ন ঠিকাছে, আইন যখন করা হবে, তখনও আপনার সেই কন্সার্নের মূলাই ঝুলানো হবে। কোন আইনটা ইটসেলফ খারাপ?

আপনার কি মনে হয় সামুতে কে কাকে কার ভাই বলল, নাকি কিসের পুত বলল এগুলা নিয়ে সরকার বা তাদের উপবিষ্ঠারা মাথা ঘামায়? সোনাব্লগের মডারেশান করার জন্যে এই আইন বলে আপনার মনে হয়? মডারেশান তো সচলেও আছে, এক হিসেবে মডারেশান তো আমরাও সাপোর্ট করি তাইনা? কিন্তু সেই মডারেশান কারা করছে, আসল উদ্দেশ্য কী সেটা কি ভেবে দেখা দরকার না? এখন মনে করেন সচলের মডারেশান যদি আপনার ভাল না লাগে আপনার অধিকার আছে সোনাব্লগে চলে যাওয়ার। সবারই মডারেশানের একটা উদ্দেশ্য থাকে। সচলে কেন মডারেশান করা হয়? সামুতে কেন হয় না? সোনাব্লগে যে লেখা সবার বাহবা পাবে সচলে সেটা প্রকাশই হবে না তাই না? তারমানে সবারই একটা স্ট্যান্ডপয়েন্ট আছে, সেই স্ট্যান্ডপয়েন্টের পেছেনে একটা কারণও আছে ডেফিনিটলি।

একটু ভেবে দেখেন, এখানে সরকারের স্ট্যান্ডপয়েন্ট কী? খালিদী তো সরাসরি বলেই দিয়েছে রাজনীতিবিদদের নিয়ে যেসব অশ্লীল(!) লেখা হয় সেগুলা হওয়া উচিৎ না, রাজনীতিবিদ্রাই সবচেয়ে বেশী অপমানিত হন। সুতরাং যারা এই নিয়ন্ত্রন আইন করতে চান, তাদের মুখে যতই মধু থাকুক, তাদের স্ট্যান্ডপয়েন্ট বুঝতে আমাদের সমস্যা হয় না।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

হিমু এর ছবি

না রে ভাই, আমার মন্তব্যে "আপনি" মানে আপনি নন, আপনি এইখানে চলক সম্বোধন। আপনি সামু বা খালুব্লগের লোক, এটা ভেবে কিছু বলিনি হাসি

ওয়েবসাইট বন্ধ করে মানুষের মৌলবাদিতা বন্ধ করা যাবে না, এই সত্যটা আগে বুঝতে হবে। কেউ কি সামুব্লগ পড়ে বা সোনাব্লগ পড়ে মৌলবাদী হচ্ছে, নাকি তার ভেতরে মৌলবাদিতার বীজ আছে বলেই সে সব ছেড়েছুড়ে ওখানে গিয়ে ছাগুদের হাগামুতায় লাইক্স দিস মারে?

ছাগু কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের একটাই উপায়, নিজে ছাগু না হওয়া, যাদের ছাগু হতে দেখছেন, তাদের বোঝানো। কাজটা খাটনির, এবং কাজটা আপনাকে আমাকেই করতে হবে। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ দিয়ে মৌলবাদ বিনাশ করতে হবে দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষানীতি দিয়ে। সরকার সেখানে মনোযোগ দিলে ফল পাবে।

তাপস শর্মা এর ছবি

আচ্ছা মৌলবাদের যদি বিনাশ করতে হয়, তাহলে তো আগে এর উৎস গুলিকে ধ্বংস করার দরকার। ছাগু ব্লগ গুলি একটা মাধ্যম হতে পারে। কিন্তু এর বীজ কিন্তু অনেক গভীরে। আমার তো মনে হয় একটা ব্যাক্তির পারিপার্শ্বিক জগত ইনফেক্ট তার ঘড় থেকেই মৌলবাদের জন্ম হয়। এর পরিবর্তন কি করে সম্ভব। আসলে ধর্ম এখানে বিরাট একটা ফ্যাক্টার। প্রচুর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে নাকি মৌলবাদের প্রথম দীক্ষা দেওয়া হয়। বীজটা কিন্তু সেখানেও লুকিয়ে আছে। সরকার তো নিরব!! বাংলাদেশের তৃণমূল স্তরের রাজনীতিতে অনেক ছাগুর অবস্থান। যেমন বিম্পি আমলে প্রশাসনিক স্তরে এত ছাগু ঢোকানো হয়েছে যে এদের জন্য কিছুই করা সম্ভব না। এরা তো সেই দায়িত্বে আছে যেখানে কোন একটা জিনিষ পাশ হয়ে আসে। তাহলে পরিবর্তনটা কোথায় দরকার?

ধর্মীয় বিশ্বাস ভালো জিনিষ। যিনি বিশ্বাস করেন তার সেই বিশ্বাসে আঘাত করাটাও নিন্দনীয়। কিন্তু সেটা কি করে মৌলবাদের আকার নিচ্ছে তাও তো দেখা প্রয়োজন।

আর আজ যারা ব্লগ এর উপর নিয়ন্ত্রন আনতে চাইছেন ওরা কারা ? ওরাই তো সেই মানুষ গুলির হোতা...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পোস্টের ভিতরের এই থ্রেডটায় হিমু ভাই ও তাপস শর্মার কথাগুলোর সাথে একমত। কেউ যদি ভেবে থাকেন যে ব্লগ নিয়ন্ত্রণের আইন এলে তা সামু, সোনা, ইত্যাদি ব্লগে জামাতিদের দৌরাত্ম ঠেকাবে, তাহলে তাঁরা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। এই ধরনের যুক্তি "ব্রিটিশরাজ থাকলে ভারতের রেলপথ উন্নত হবে"-র কাতারের খোঁড়া। ব্লগ নিয়ন্ত্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং অনেক বেশি ডেডিকেশন প্রয়োজন। এখানে রাষ্ট্রীয় আইন তৈরি করতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সরকার এই আইন করবে শুধু এবং শুধুই নিজেদের চামড়া বাঁচাতে। মাঝে কিছু মেরুদণ্ডহীন কীট জুটবে লেজুড়বৃত্তি করার জন্য।

রু (অতিথি) এর ছবি

শাইনি সেন্ট্রাল, অতি অসাধারণ লেখা। রাজনীতিবিদ এবং আমলারা যে ব্লগ পড়ছেন এবং গুরুত্বের সাথে নিচ্ছেন, সেটাকে আমি পজিটিভভাবে দেখছি। তবে নিয়ন্ত্রন করার মতো ভুল না করলেই বাঁচি।

উপদেষ্টা পদ নিজে থেকে তো উদ্ভূত হয়নি, রাজনীতিকরাই তৈরি করেছে। উপরে ত্রিমাত্রিক কবি যেমন বলেছেন, সেই একই প্রশ্ন আমারও। উপদেষ্টার আস্তরটা ঢাল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না তো?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমার মনে হয় না আমলারা ব্লগকে গুরুত্বের সাথে দেখছেন। আমার ধারণা, ব্লগ এঁদের জন্য বিরক্তির কারণ। ব্লগের মূল শক্তি হলো প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা নেই এমন মানুষকেও বলবার সুযোগ দেওয়া। এটা শুরুর আগ পর্যন্ত আমলারা স্রেফ কথা বেচে বহু নাম-যশ কামাতেন। এখন তাঁরা এক চুল পরিমাণ ভুল করলেও অজানা-অচেনা লোকে এসে ন্যাংটো করে দিয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ তাঁরা করবেনই। বহু দশকের আমলাতন্ত্রের শিক্ষা তো এটাই!

উপদেষ্টারা যদি ঢাল হয়েই থাকেন, সেটা জনগণ থেকে বাঁচার জন্য না। বরং দলের ঝামেলাবাজ অংশ যাতে বাগড়া দিতে না পারে সেই জন্য প্রস্তুতি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হাতিপোস্ট এখন পড়া সম্ভব না, আগামীকালের জন্য রেখে দিলাম
তবে বহুদিন পর ইশতির পোস্ট দেখে লগিন করলাম... ওয়েল্কামব্যাক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

উহু, এটা হিমুর হাতি নয়, ইশতির হাতি। একটু ছোট।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বাচাল মানুষ তো, লিখতে গেলেই বড় হয়ে যায়। অনেক খসড়া জমে আছে যেগুলো পরে ছোটো করবো ভেবে রেখে দিয়েছি, কিন্তু আর ফিরে আসা হয় নাই। তাই ভাবলাম এটা যেমন আছে প্রকাশ করে দেই। হাসি

ন এর ছবি

চলুক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

চলুক

নীড় সন্ধানী এর ছবি

কথাবার্তায় যতটুকু বোঝা গেছে সরকার চায় সবগুলো ব্লগ আলুব্লগের সুশীল হয়ে যাক। যেখানে কাউকে কটুভাষার সম্বোধন করা যায় না। শালাকে শালা সম্বন্ধীকে সমন্ধী বললেও মডারেশান ফিল্টারে আটকে যায় যেখানে।

তাই - 'বেশী করে আলু খান, আবুলের উপর চাপ কমান' (আবুল কি এখনো তথ্য নিয়ন্ত্রক পদে আছে?)

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কবে যে ব্লগমন্ত্রী হিসাবে দেখবো কোনো এক পুরান পাপীকে!!

উচ্ছলা এর ছবি
ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

চলুক

পাঠক আতিক রাঢ়ী এর ছবি

উপদেষ্টারা এনাকোন্ডা আর সরকার প্রধান শিশু এমন একটা টোন পাওয়া যাচ্ছে লেখার প্রথম অংশে। যা কেউ কেউ উল্ল্যেখও করেছেন। এই টোনটা ছাড়া বাকি লেখা ভাল লেগেছে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

একদম উলটা বুঝেছেন। সরকার প্রধান তো নষ্টের গুরু! আমি কোথাও বলি নাই যে উপদেষ্টারা শেখ হাসিনা বা নির্দোষ সরকারকে ভুল পথে চালিত করছে। আমার কথা হলো, দল থেকে সংস্কার ও অন্যান্য দাবি উঠার পর যেকোনো রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতে তিনি উপদেষ্টা নিয়োগ করেছেন। এই উপদেষ্টারা অনির্বাচিত অথচ শক্তিশালী, এবং এঁদের একমাত্র যোগ্যতা এটাই যে তাঁরা শেখ হাসিনার প্রতি অনুগত।

এখানে অ্যানাকোন্ডা হলো উপদেষ্টামন্ডলী *এবং* প্রধানমন্ত্রী, যাঁদের গোয়ার্তুমির কারণে সারা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আশা করি ভুল বোঝাবুঝি কেটেছে এবার।

ফাহিম হাসান এর ছবি

শাইনি সেন্ট্রাল - গড়াগড়ি দিয়া হাসি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভরা মজলিশে নামের ফজিলত নিয়ে কিছু বলতে পারছি না বলে দুঃখিত। চোখ টিপি ফেসবুকে কেউ কেউ নিজেদের পর্নস্টার নাম বলেছিলেন...

সাফি এর ছবি

লেখা ভাল লেগেছে, কিন্তু উপদেষ্টার মাথা থেকে সিদ্ধান্ত আসে নাকি সরকার প্রধানের মাথা থেকে আসে সেই ব্যাপারে সন্দিহান আরো অনেকের মতন, তবে উপদেষ্টা সিদ্ধান্তের সপক্ষে যুক্তি হাজিরে করে সেই ব্যাপারে সন্দেহ নাই। চ্যালেঞ্জ না করে জি হুজুর করেই মূল সমস্যার সৃষ্টি করে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সরকারপ্রধানের একার মাথা থেকে সব সিদ্ধান্ত আসে না। উপদেষ্টারা একক ভাবে সিদ্ধান্তের উৎসস্থল না হতে পারেন, তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে তাঁদের প্রণোদনা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য।

পদ্মজা এর ছবি

সিদ্ধান্ত তো এখনো সংসদেই হয়, নাকি? সরকার প্রধান এখনো প্রধান্মন্ত্রী, তাইতো?
ছাগল দিয়ে হাল চাষ হয়না। উপদেষ্টারা তেল মারবেন, বঙ্গ দেশে সেটাই স্বাভাবিক। তাই বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়ভার একা উপদেষ্টাদের সেটা আমি বিশ্বাস করিনা।
দলের ভেতরে বাইরে গণতন্ত্রের চর্চা বাড়াতে হবে।
আজ ব্লগ, কাল এটা পরশু সেটা নিয়ন্ত্রণ করে পার পাওয়া যাবেনা।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সংসদ এখন সিদ্ধান্তকে রাবার-স্ট্যাম্প করে শুধু। ঠিক যেমন আগের আমলে হাওয়া ভবনে তৈরি হওয়া সিদ্ধান্ত সংসদ আইনে পরিণত করতো শুধু। জনগুরুত্বপূর্ণ তেমন কোনো সিদ্ধান্তই এই আমলে সংসদে নেওয়া হয় নাই। দিনের শেষে এই দায় উপদেষ্টার না, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।