প্রতিক্রিয়া পোস্টঃ CNN-এ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: শনি, ০৪/০৫/২০১৩ - ৪:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল (মে ০২, ২০১৩) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন CNN-এর ক্রিশ্চিয়ান আমানপুর-কে। সাক্ষাৎকারের বিষয় ছিলো সম্প্রতি সাভারের ভবন ধ্বস। সাক্ষাৎকারটি প্রচার হওয়ার পর থেকে খুব স্পষ্ট বিভাজন দেখতে পাচ্ছি প্রতিক্রিয়ায়। দলীয় আনুগত্যে অন্ধ এই প্রতিক্রিয়াগুলোর ভিড়ে আমার নিজের কিছু প্রশ্ন রেখে যাওয়ার জন্য এই পোস্ট। কিছু প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই, কেউ সেই বিষয়ে আলোকপাত করতে পারলে আগাম ধন্যবাদ রইলো।

[সম্পূর্ণ খবর পড়ুন এখানে।]

১/ আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বেশ অবাক হয়েছি আমানপুরের আগ্রাসী এবং অসম্মানজনক আচরণে। শেখ হাসিনা রাজনীতিক হিসাবে যেমনই হোন না কেন, তিনি একটি স্বাধীন দেশের সরকারপ্রধান। তাঁর সাথে যেই ধমকের সুরে কথা বলছিলেন আমানপুর, তিনি কি আমেরিকায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক কোনো বিপর্যয় নিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও একই সুরে ধামকি দেবেন? আমার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমি যেভাবে খুশি বকা-ঝকা করতে পারি, কিন্তু তাই বলে বিদেশি কেউ অসম্মান করে কথা বললে আমরা কেন আহ্লাদিত হয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। সাক্ষাৎকারটি ব্যাক্তি শেখ হাসিনার ছিলো না, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ছিলো।

২/ প্রধানমন্ত্রী একটা বড় সময় কাটিয়েছেন কোলের দিকে তাকিয়ে। কালো বেড়ালের যুগে আমার দুষ্টু মন খুঁজে বেড়াচ্ছিলো প্রধানমন্ত্রীর কোলের বেড়াল। সরাসরি না তাকানোর পেছনে রাগ একটি কারণ হয়ে থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টতই ক্ষিপ্ত ও বিরক্ত ছিলেন। সেই অবস্থায় এত জরুরী সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরামর্শ তাঁকে কে দিলেন?

৩/ সাক্ষাৎকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো বিদেশি সাংবাদিকদের বাংলাদেশে প্রবেশাধিকার নিয়ে বিতর্ক। প্রধানমন্ত্রী পুরো বিষয়টি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞাত ছিলেন বলে দাবি করেছেন। চিরকালের বিশৃঙ্খল রাজনীতিক শেখ হাসিনা এত সুচারু অভিনয় করতে পারার কথা না। ধরে নিচ্ছি তাঁর বিস্ময়ে কোনো অসততা নেই। তবুও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়।

প্রথমত, বিদেশি সাংবাদিক প্রবেশের ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বের নিয়মাবলি কী? বাংলাদেশের কোনো সাংবাদিক আমেরিকায় এলে কি তাকে ভিসা চুক্তিতে এই মর্মে স্বাক্ষর করতে হবে যে আমেরিকার সরকার চাইলে সেই সাংবাদিকের সংগৃহিত তথ্যাবলি বাজেয়াপ্ত করতে পারে? এই আইন প্রয়োগ হয় কি না, সেটা ভিন্ন কথা। আদৌ এমন কোনো আইন আছে কি না তা বিবেচ্য। যদি না হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশকে ইচ্ছাকৃত ভাবে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দুর্গম দেশের মতো দেখাতে চাওয়াটা আপত্তিকর।

দ্বিতীয়ত, এইটা নির্বাচনের বছর। পর্দার অন্তরালে অনেক কিছুই ঘটে যায় যা আমাদের মতো আমজনতার গোচরীভূত হয় না কোনোদিন। কিছুদিন আগে তুরষ্ক থেকে কিছু রাজনৈতিক ব্যাক্তি পর্যটকের ছদ্মবেশে প্রবেশ করে জামায়াত-পন্থী প্রচারণা করায় বেশ সমালোচনা হয়েছিলো। সরকার কি সেই ঘটনার পর কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছে? দলের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে কি বিদেশি সাংবাদিকদের হাইকোর্ট দেখিয়ে অল্প সময়ের জন্যও বিলম্বিত করার চেষ্টা চলেছে?

তৃতীয়ত, সরকা্রের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ এসেছে বহির্বিশ্ব থেকে সহায়তার প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার ব্যাপারে। এই প্রসঙ্গটি বেশ কিছু কারণে এখনও ঘোলাটে। এই খবরটি প্রকাশ করেছেন ডেভিড বার্গম্যান নামক এক অপসাংবাদিক যিনি গত চার বছর ধরে তপস্যা করে আসছেন বিভিন্ন ভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি করার ব্যাপারে। তবে এই ধরনের আলাপচারিতার কিছু তথ্যাংশ পাওয়া গেছে ফায়ার ব্রিগেড এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে। কেউ কেউ বলছেন সাহায্যের প্রস্তাব কারিগরী নয়, মনস্তাত্ত্বিক ছিলো। সরকার এই প্রসঙ্গে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য দেয়নি। যৎসামান্য যা বক্তব্য এসেছে, তা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী -- এমন দু'জন ব্যাক্তি যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা ও সংবেদনশীলতা শূন্যের কোঠায়। সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে পারা/না-পারা কি একই সূত্রে গাঁথা?

৪/ সাক্ষাৎকারের একটি হতাশাজনক অংশ ছিলো সোহেল রানার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে আলাপ। আমানপুর চেষ্টা করছিলেন ছিঁচকে সোহেল রানাকে যুবলীগ সভাপতি বানিয়ে দিতে, প্রধানমন্ত্রী তো সম্ভব হলে সাভারের দালান ধ্বসের পাশাপাশি সম্ভব হলে দেশের বাদবাকি সমস্যাও পাঁচ গার্মেন্টস মালিকের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন। বাংলাদেশের রাজনীতিকদের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা খুবই সীমিত, তাই প্রধানমন্ত্রী কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করাতে অবাক হইনি। একটু বিস্মিত হয়েছি সিএনএন-এর অতিরঞ্জনে। প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করলে বুঝতে সুবিধা হবে।

শাহবাগ আন্দোলনের শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়া উপস্থিত থাকলেও সম্পূর্ণ লাপাত্তা ছিলো সিএনএন। কৌতূহলউদ্দীপক বিষয় হলো, এই সময়েই সিএনএন-এ ফরিদ জাকারিয়ার ব্লগ পেইজে বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয় যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবি টোবি ক্যাডম্যানের লেখা। একই সময়ে হোয়াইট হাউজ পিটিশন নিয়ে জামায়াতের জালিয়াতির কথা আই-রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়। সেই জালিয়াতির প্রমাণ দেখে হোয়াইট হাউজ থেকে পিটিশন নামিয়ে নেওয়া হয়, কিন্তু সিএনএন এই অনুসন্ধানী রিপোর্টটি বারবার তাদের ওয়েবসাইট থেকে মুছে দেয়। একই সময়ে সিএনএন হেডকোয়ার্টারের সামনে বাঙালিরা জড়ো হতে গেলে সিকিউরিটির লোকজন বেশ রূঢ় ভাবে তাঁদের সরিয়ে দেয়। এর পেছনে বিভিন্ন রকম আন্তঃসংযোগের সন্দেহ আছে, কিন্তু সেই অ-যাচাইকৃত বিষয়ে যাচ্ছি না। সব মিলিয়ে সিএনএন-এর ভূমিকা একটু খানিক চিন্তা করার মতো।

৫/ প্রধানমন্ত্রী বেশ দৃঢ়তার সাথেই বললেন যে তাঁর সরকার বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের সংস্কার করছে। এই দাবির সমর্থনে কোনো প্রকার তথ্য আছে কি? কোনো সাংবাদিক কি যাচাই করে দেখছেন প্রধানমন্ত্রীর উক্তিটি? যদি কাগজে-কলমে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েও থাকে, তার কি কোনো দৃশ্যমান ফলাফল দেখা গেছে আজও? নাকি পুরোটাই 'ডেভেলপমেন্ট' ও 'রেনোভেশন'-এর চিরায়ত মরীচিকা?

৬/ খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থার সাথে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার এটি। কিছুদিন আগেই বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস এবং বিবিসি বাংলার সাথে বসেছিলেন তিনি। এটি কি নির্বাচনের পূর্বে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির কোনো কৌশল? নাকি এমন সাক্ষাৎকার দেবার মতো যোগ্য ব্যাক্তির অভাবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেই বসতে হচ্ছে? বিবিসি-র সাথে যেই বিষয়াদি নিয়ে কথা হয়েছিলো, তা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এক্তিয়ারভুক্ত। সাভারে ভবন ধ্বসের পর উদ্ধারকার্য নিয়ে কথা বলার কথা ত্রাণ ও দুর্যোগব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর। গার্মেন্টস শিল্পের সংস্কার নিয়ে কথা বলার কথা শিল্প মন্ত্রীর। শাসনামলের সূচনালগ্ন থেকেই ব্যাক্তিগত পছন্দ ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে মন্ত্রিত্ব প্রদানের অভিযোগ ছিলো। চার বছর পার হবার পর প্রধানমন্ত্রী কি নিজের সেই সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে দ্বিধায় ভোগেন?

৭/ সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে অনেকটা 'হিডেন এজেন্ডা'-র মতো করেই উঠে আসে শ্রমিক ইউনিয়নের কথা। পশ্চিমা বিশ্বে যেকোনো ধরনের ইউনিয়নই শাসক শক্তির চক্ষুশূল। হঠাৎ করে বাংলাদেশে ইউনিয়ন চালু করার ব্যাপারে পশ্চিমাদের এই আগ্রহের মূলে কী আছে? রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক মিডিয়াকে ব্যবহারের ঘটনা বিরল নয়। নিজের দেশে যেই নীতি অচল সেটাই গরীব দেশের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও বিরল নয়। বাংলাদেশে শ্রমিক সংগঠনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কী ধরনের গবেষণা আছে? প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো আমাদের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে? এই নীতিগুলো পাশ্চাত্যে কতটা প্রচলিত? বিগত নির্বাচনগুলোর আগে প্রাকৃতিক সম্পদের বেসরকারিকরণ যেমন ইস্যু ছিলো, আসছে নির্বাচনে এটাও কি তেমনই একটি ইস্যু হতে যাচ্ছে?

যেমনটা গোড়াতেই বলেছি, এই প্রশ্নগুলো অধমের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। জবাব খুঁজতে যেকোনো প্রকার সাহায্যের জন্য আগাম ধন্যবাদ। এই পোস্টের কিছু বক্তব্য ইংরেজিতে পূর্বপ্রকাশিত, কিন্তু ফেসবুক-আসক্তি কাটাতে ব্লগে ঈষৎ বর্ধিত আকারে প্রকাশিত।


মন্তব্য

শিশিরকণা এর ছবি

নিজের দেশে যেই নীতি অচল সেটাই গরীব দেশের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও বিরল নয়।

সাধু সাবধান!

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অতিথি লেখক এর ছবি

রাজাকার আর সাগুরা খুশি হইচে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

মোল্লা বাড়ির বিলাইও মোল্লা। চান্স পেলে তাতী বাড়ির চিতার সাথেও মোল্লাগিরি দেখায়। আমানপুর'এর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে তাই অবাক হই নাই। কিন্তু 'সিএনএন এন্ড আদার ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনস' কে বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে যে 'নিষেধাজ্ঞা'র কথা সে দাবী করেছে, সেটা আমার কাছে নিতান্তই আমানপুর'এর অতি নিম্ন মাত্রার ফাত্রামী মনে হয়েছে।

আর প্রধানমন্ত্রীর উচ্চারণ নিয়ে যারা দাঁত কেলায়ে বগল বাজাচ্ছেন তাঁদেরকে সবিনয়ে বলি, দাঁত আস্তে কেলান ভাইলোগেরা। নাইলে দাঁত খুলে পড়ে পাও থেঁতলে যাইতে পারে।

মুস্তাফিজ এর ছবি

১। আমাদের মতন তৃতীয় বিশ্বের কোন সরকার প্রধানের সাথে এমন আচরণ অস্বাভাবিক কিছু না। আমাদের মতন কিছু ঘাড়তেড়া নাগরিক তাতে অসন্মান বোধ করলেও সরকারে যারা আছেন তাদের চামড়া আরো মোটা, হয়তো অনেক কিছু ক্যাল্কুলেশন করতে হয় বলেই।
২। প্রধানমন্ত্রীকে আমার কাছেও বিরক্ত মনে হয়েছে। আমাদের সরকার প্রধানরা তাদের প্রতি এধরনের ব্যবহারে অভ্যস্থ নন। আর আমাদের রাষ্ট্রপ্রধানদের মাঝে সিচুয়েশন কন্ট্রোলের ক্ষমতা একমাত্র বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কারো ভেতর দেখিনি (ডেভিড ফ্রস্টের সাথে সাক্ষাৎকারের ভিডিয়ো দেখে/অডিয়ো শুনে নিতে পারেন)।
৩। উন্নত বিশ্বের লোকজন আশা করে যে একটা অনুন্নত দেশের এয়ারপোর্টে নামা মাত্রই ভিসা পাবে বা আবেদনের সাথে সাথেই ভিসা মিলবে। ভিসার ব্যাপারটা অনেকটা পারস্পরিক কুটনীতির আলোকেই নির্ধারিত হয়ে থাকে। ধরে নেয়া যাক “ক” নামের দেশে “খ” নামের দেশের কেউ ঢুকতে গেলে যদি অন-এরাইভাল ভিসার সুবিধা পায় তাহলে “খ” নামের দেশও “ক” নামের দেশের জন্য সেই সুবিধা দিয়ে থাকে। আর বিশেষ কিছু পেশার মানুষদের জন্য সবদেশই বাড়তি কিছু সতর্কতা নিয়ে থাকে। যেমন ধরেন বাংলাদেশের কোন নাগরিকের পাসপোর্টে পেশা হিসাবে যদি “সাংবাদিক” লেখা থাকে তাহলে পাশের দেশ ভারতে বেড়াতে গেলেও তার আবেদন দিল্লী ঘুরে আসতে হয়। এখানে সিএনএন এর সাংবাদিকরা কোথায় কিভাবে আর কখন আবেদন করেছিলেন তার উল্লেখ না থাকাতে অস্পষ্টতা থেকেই যায়। তবে এটা ঠিক সঠিক নিয়মে আবেদন করে থাকলেও এত স্বল্প সময়ে ভিসা পাওয়ার কথা না।
৪। বহির্বিশ্ব থেকে সাহায্যের প্রস্তাবের ব্যাপারটা ঘোলাটে, আদৌ কোনো প্রস্তাব এসেছিলো বলে কোথাও শুনিনি। এক্ষেত্রে বার্গম্যান হলুদ সাংবাদিকতার আশ্রয় নিয়েছে আর দেশের নিউ এইজ তার মাইক হিসাবে কাজ করেছে।
৫। সোহেল রানা সরকারী দলের সাথে সংশ্লিষ্ট তাতে কোন সন্দেহ নাই। যেহেতু সেখানে যুবলীগের স্বীকৃত কোন কমিটি নাই তাই প্রধানমন্ত্রীর কথাও সত্য। সোহেল রানাদের মতন লোকজন সবসময় সরকারী দলই করে আর তাদের মাধ্যমেই রাজনৈতিক নেতারা সুবিধা নিয়ে থাকে। সাভার সংক্রান্ত খবরে এটাও এসেছে যে আটকা পড়াদের মাঝে শিল্প পুলিশের দুই পরিদর্শকও ছিলেন যারা কারখানা কেনো চালু হলো তা তদন্ত করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় আটকা পড়েছিলেন।
৬। শ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ে কথা নাই। গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে অনেক বাঘা বাঘা প্রাক্তন ছাত্রনেতাদের কাজ করতে দেখেছি, সেখানে শুধুমাত্র একজনের প্রতি তাদের আগ্রহের কারণ আমার মাথায় খেলেনা।
৭। প্রধানমন্ত্রীর উচ্চারণর আর ইংরেজী ভাষায় দখল নিয়ে মন্তব্য অপ্রাসঙ্গিক। আমি নিজে পারিবারিক আবহে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক উচ্চারণে কথা বলতে পছন্দ করি। এক্ষেত্রে বিএনপির পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রতি সাবেক স্পিকারের আহবানের কথা মনে পড়ে “আয়া পড়ুইন, আমনেরা আয়া পড়ুইন”।
৮। আমাদের ভেতর বেশীর ভাগ মানুষেরই 'এইম ইন লাইফ' হলো যেই সরকারই ক্ষমতায় থাকুক শুধুমাত্র তার সমালোচনা করা।

...........................
Every Picture Tells a Story

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুরু গুরু

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কোনো সরকার প্রধানের সাক্ষাৎকার নিতে হলে অবশ্যই প্রশ্নগুলো লিখিত আকারে আগে পাঠানো উচিত, সরকার প্রধান সেভাবে প্রিপারেশন নিয়েই সাক্ষাৎকার দেবেন। এমনটাই হওয়া উচিত।
এক্ষেত্রে সেরকম কিছুই হয়নি বুঝা যাচ্ছে। এই সাক্ষাৎকারের আয়োজন নিয়ে ভাবনার অবকাশ আছে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

খায়রুল মাসুদ  এর ছবি

সহমত

অতিথি লেখক এর ছবি

সময় উপযোগী লিখা রউফ ভাই। উপরের মুস্তাফিজ ভাইয়ের কমেন্টটাও সেইরাম হইছে। পুরাই এপিক কমেন্ট। ধন্যবাদ।

পদ্ম এর ছবি

ভাই রউফ, হাসিনা বিদেশী মিডিয়া হ্যান্ডল এ আর কাউকে নিয়োজিত করতে রাজি না। হাসিনাকে আমানপুর যেই ফাপর টা দিলো ওইটা পুঁজির ফাপর। পাশ্চাত্য পুঁজিবাদ যখনই প্রশ্নের সম্মুখীন হয় তখনই সে তার এজেন্টকে জবাবদিহিতা করতে বলে ধমকের সুরে। হাসিনাকে বাংলাদেশের পরজীবি পুঁজির স্পোক্স পারসান হিসাবে আসলে দুনিয়ার কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়েছিল। এখন ডিসিশন নেবে পাশ্চাত্য। হাসিনার এখন খালেদার সাথে বসে কান্নাকাটি করা ছাড়া এমুহুর্তে কিছু করার নেই। আহা দাসপ্রথা, আহা আমাদের দাসনেত্রি।

জয় বাংলাদেশ।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

এই পোস্টটার একটা ইংরেজী রূপ করতে যদি পারো সময় করে, ভালো হয় মনে হয়। বার্গম্যানের পয়েন্টটাসহ কিছু জিনিস ইংরেজীতে শেয়ার করতাম।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

প্রথমতঃ এত বাজে সাক্ষাতকার আমি আগে কোথাও দেখিনি। সাক্ষাতকার দাতা আর গ্রহীতা দুজনের মধ্যেই সৌজন্যতার যথেষ্ঠ অভাব ছিল। সিএনএন বাংলাদেশকে অসম্মানিত করেছে, কিন্তু এই সুযোগ আমরাই করে দিলাম কিনা ভেবে দেখা উচিত।

দ্বিতীয়তঃ এরকম একটি বিষয়ে সরকার প্রধানের সাক্ষাতকার দেবার দরকার কেন পড়লো সেটা বোঝা গেল না। সরকারের কি কোন ভালো মুখপাত্র নেই? দেশী টিভিতে যারা কথা বলেন সরকারের পক্ষে তাদের চেয়ে যোগ্য লোক যদি না থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। রাজনীতি করতে হলে বাকপটু হতে হয়, নেতৃত্বের গুনাবলী থাকতে হয়। দেখা গেছে আমাদের জাতীয় নেতাদের মধ্যে এই দুটোরই অভাব প্রকট। মনে হলো সিএনএন এর মতো মিডিয়ার সাথে কথা বলার জন্য যেরকম নেতার দরকার সেরকম লোক সরকারে নাই।

তৃতীয়তঃ সিএনএন আগের দিন পররাষ্ট্র সচিবের সাক্ষাতকার নিয়েছিল, একদিন পরেই কেন তাদের খায়েশ হলো প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে, এটা কি ইচ্ছাকৃত অপমান করার উদ্দেশ্যে কিনা, সেটা যাচাই করা দরকার।

চতুর্থতঃ ভিসা সংক্রান্ত প্রশ্নটিতে এসে প্রধানমন্ত্রীর থমকে যাওয়াটা প্রমান করেছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। অপ্রস্তুত প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিতে হয় সেটা সম্পর্কে একজন রাজনীতিবিদের অবশ্যই জ্ঞান থাকা উচিত। তিনি বলতে পারতেন, আমি জানতাম না তেমন কিছু ঘটেছে, তবে ব্যাপারটা খতিয়ে দেখবো। এটা কোন লজ্জার বিষয় না, প্রত্যেক দেশের ভিসার নিয়মকানুন আছে। কিন্তু তিনি তা না বলে, প্রায় অস্বীকার করে বসার মতো অবস্থায় চলে গেছেন।

সবশেষে বলি। সাক্ষাতকারটি শুনে আমার মনে হয়েছে, আমাদের অনেক কিছু বলার ছিল, যা প্রধানমন্ত্রী আমানপুরকে বলেননি। বলতে পারেননি, তার কাছে যথেষ্ট তথ্য ছিল না। ঠিকমতো বলতে পারলে আমানপুরের মুখ চুন হয়ে যেতো।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সুবোধ অবোধ এর ছবি

চলুক

সুবোধ অবোধ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে আমি অপমানিত। এ অব্যবস্থাপনার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

স্বদেশী ঠাকুরের চেয়ে বিদেশী কুকুরকে বেশী গুরুত্ব দেয়া আমাদের বহু পুরানা ব্যারাম, এ ব্যারাম থেকে হাসিনাও মুক্ত নন। এর ফলাফল কি হতে পারে হাতেনাতে তার প্রমান মিললো।

আব্দুল্লাহ এ.এম.

Emran  এর ছবি

তাদের দেশের ইউনিয়নগুলিকে শায়েস্তা করার জন্য ১৯৮০-র দশক থেকে পশ্চিমা দেশগুলি outsourcing শুরু করে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের একটা প্রধান শর্ত হলও যে কোন শ্রমিক ইউনিয়ন থাকতে পারবে না। চীন যে বিনিয়োগকারীদের এত পছন্দের জায়গা, সেখানে কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইনবলে শ্রমিক ইউনিয়ন নিষিদ্ধ। বিভিন্ন দাতা সংস্থা, যেমন, বিশ্ব ব্যাংক, আই এম এফ, এডিবি, সব সময় বাংলাদেশকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে আসছে শ্রমিক ইউনিয়ন নিষিদ্ধ করার জন্য। এবং সর্বশেষ, Wal-Mart-এ কিন্তু শ্রমিক ইউনিয়ন। প্রধানমন্ত্রী প্রস্তুত থাকলে এই কথাগুলি আমানপুরের মুখের উপর ছুঁড়ে দিতে পারতেন।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ফেসবুক থেকে একটা প্রয়োজনীয় মন্তব্য টুকে দেই। লিখেছেন তাজীন শাদীদঃ

"On Q3: From Faiyaz Zamal "First, there are specific rules for journalists to obtain visa to BD, like everywhere else in the world. The FF-I and II forms need to be filled which takes 21 days to get approval. The story line of the report needs to be submitted, not only for this particular event, but for any story one wants to make. Here's a link to the FF-II form.

http://www.bdcgny.org/download/forms/visa_ff-ii_form.pdf .

The right to confiscate journalist properties, is not something that is found only in "draconian" states like Bangladesh, but also in "democratic" countries like UK as well.

http://www.infowars.com/british-cops-will-be-allowed-to-confiscate-material-from-journalists/."

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

- দুই পক্ষেই প্রস্তুতির ঘাটতি দেখছি। তবে আমাদের রাষ্ট্র প্রধান কেন এরকম একটা রিস্ক নিলেন সেটাও বোধগম্য নয়।
- গোটা দুর্ঘটনার জন্য প্রকৃত দায়ী কাউকে ইন্টারভিউ করা হল না কেন? তাইলে আমানপুরের শত দোষও ক্ষমা করা যেত হাসি
- আইন যে শুধু বড়দের প্রয়োগের জন্য সেটা আবারও প্রমাণিত। আইন আমরা প্রয়োগ করতে পারি না। নিয়ম নাই।

রামগরুড় এর ছবি

আমিও একটা জিনিস বুঝি নাই, একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে এত সময় থাকার কথা না, যে সি.এন.এন. আর ফক্সের মত চ্যানেলে সাক্ষাতকার দিতে হবে, ভবন ধ্বস পরবর্তী এইরকম লেজেগোবরে পরিস্থিতে তাকে এই বুদ্ধি দেওয়া উচিৎ হয় নাই।

মূল কথা এসব চ্যানেল একমাত্র কিছু মের্কিনি রেডনেক আর তাদের চ্যালা-চামুন্ডা ছাড়া দুনিয়ায় আর কেউ দেখে কিনা সন্দেহ আছে, সাক্ষাতকারের প্রস্তাব সরাসরি রিফিউজ করে দিলেই হইত। সি.এন.এন. এর মত ইন্সিগ্নিফিক্যান্ট/অকিঞ্চিৎকর কোন চ্যানেলে ইন্টারভিউ দেওয়ার মত সময় কোন দেশের প্রধানমন্ত্রীর থাকার কথা না।

-- রামগরুড়

-- রামগরুড়

পরমার্থ এর ছবি

লেখাটা সম্পূর্ণ একপেশে ..

১- এখানে শ্রমিক আন্দোলন এবং শ্রমিক মতামতকে মূল্য দেয়া হয়নি .. দেশের সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ এবং জবাবদিহিতা একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ..
২- স্পষ্টত মার্কিন প্রচারমাধ্যম মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করবে, তাই স্বাভাবিক ..
৩- বাংলাদেশের আয়ের একটি বড় উত্স বস্ত্রশিল্প এবং মার্কিন মুলুকে তার একটি বড় অংশ বিক্রি হয় .. সম্মানিত প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল এই ঘটনার দায়ভার নিয়ে প্রকৃত কৃত কর্তব্য তুলে ধরা .. অর্থহীন বাগ্মিতা তো কাজের কিছু নয় ..

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।