রাজনৈতিক পোস্টঃ দুই নেত্রীর ফোনালাপ

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: মঙ্গল, ২৯/১০/২০১৩ - ২:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত দুই দিন ধরে বাজার গরম দুই নেত্রীর ফোনালাপ নিয়ে। এক সময় পাশে বসে ছবি তুলেছেন, রাজপথে এক সাথে আন্দোলন করেছেন, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মিলিটারির ধমক কিংবা বিদেশি শক্তির দাওয়াত ছাড়া কোথাও তাঁদের আলাপ হয়নি। যেটুকু মিথষ্ক্রিয়া হয়েছে, সেটাও হয়েছে মেঠো ভাষণ কিংবা সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্বলিখিত বক্তৃতার মাধ্যমে। এই প্রেক্ষাপট বিচারে দীর্ঘ ৩৭ মিনিট ধরে তাঁদের সরাসরি আলাপ তাক লাগানোর মতো ব্যাপার।

তার চাইতেও তাক লাগানোর মতো ব্যাপার হলো দেশবাসীর সেই বক্তব্য শুনতে পাওয়ার সৌভাগ্য হওয়া। যারা এই সুযোগ (?) থেকে বঞ্চিত আছেন, তাদের জন্য রইলো রেকর্ডিং-এর লিংক। জীবন থেকে ৩৭ মিনিট অহেতুক ঝড়ে গেলে আমি দায়ী নই।

http://www.jagobd.com/seikh-hasina-khaleda-zia.html

আমরা এতটাই হতভাগা দেশ যে শীর্ষ দুই নেত্রীর আলাপ আমাদের জীবনে স্যার আইজাক নিউটনের আপেলের মতোই গুরুত্ববহ। তাঁদের ব্যাক্তিগত আলাপ যখন শুনেই ফেললাম, তখন সেই আলাপ নিয়ে আলোচনার ধৃষ্টটাটুকুও দেখিয়ে ফেলি নাহয়। যষ্মিনদেশে যদাচরণ।

আপন বলে কিছু নেই

আমি পেটের দায়ে তথ্য-নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করি। পশ্চিমা বিশ্বে তথ্য খুবই ব্যাক্তিগত একটি বিষয়, কোনো প্রকারের ছুতায়ই তার গোপনীয়তা ব্যাহত করা যায় না। একেবারে নিরীহ কথোপকথন রেকর্ড করার আগেও বারংবার সাবধান করা হয়, ওয়ারেন্ট ব্যতীত কারও অজ্ঞাতে কিছু রেকর্ড করা যায় না, লিখিত অনুমতি ব্যতীত কথোপকথন প্রকাশ করা যায় না, আঘাত বা ভীতি ব্যবহার করে আদায় করা কোনো প্রকারের স্বীকারোক্তি আদালতে ব্যবহার করা যায় না, অন্যায় ভাবে পাওয়া কোনো কিছু কোনো গণমাধ্যমে প্রচার করা যায় না।

দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে এই বিষয়ে তিল পরিমাণ সচেতনতা নেই। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে অনেক কিছুই আছে, নেই শুধু নিজস্ব তথ্য বা আলাপ গোপন রাখার অধিকার। এই প্রসঙ্গে আমাদের চিন্তাধারা এখনও “End justifies the means” প্রথায় সীমাবদ্ধ। গত সামরিক-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতাদের ধড়-পাকড় করা হয়েছে, পত্রিকায় তাদের বিভিন্ন রকম স্বীকারোক্তির বিস্তারিত ছাপানো হয়েছে। গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন রকম ‘Leak’ প্রকাশ করা হয়েছে। এবার প্রকাশিত হলো দেশের শীর্ষ দুই নেত্রীর ব্যাক্তিগত আলাপ। এই রকম কিছু প্রকাশ করার আগে যেই প্রক্রিয়া অনুসরণ প্রয়োজন, তা কি করা হয়েছে?

প্রকাশের প্রসঙ্গ দ্বিতীয়। তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হলো রেকর্ডিং-এর প্রসঙ্গ। বাংলাদেশে কি এই মুহূর্তে যেকোনো ফোনালাপই রেকর্ড করা হয়? এমন কি শীর্ষ পর্যায়ের আলাপেও? নাকি এই আলাপ নেত্রীদের যে-দুই সহকারীর ফোনের মাধ্যমে হয়েছে শুধু তাদের ফোনই রেকর্ড করা হয়? এই রেকর্ডিং বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশের আগের বেলায় তথ্য মন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, যারা রেকর্ড করে তাদের কাছ থেকে চেয়ে নেবেন। এই ভিডিওতে তাঁর নিজের কণ্ঠেই শুনুন।

http://channeli.priyo.com/node/1856

প্রশ্ন হলো, কারা এই রেকর্ডিং এজেন্সি? সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে তোলপাড় চলছে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা NSA-র অবৈধ রেকর্ডিং নিয়ে। বাংলাদেশে কি বৈধ ভাবেই এই কাজ করা হচ্ছে? এই আলোচনার ১৬ মিনিটের মাথায় দুই নেত্রীই স্পষ্টত বলছেন যে তাঁদের পাশে ক্যামেরা নেই, রেকর্ড করা হচ্ছে না। তবুও কীভাবে এই রেকর্ডিং বাজারে আসে?

রেড ফোন

রাষ্ট্রের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের সরাসরি যোগাযোগের জন্য রেড ফোন স্থাপিত থাকে। কী দুঃখের বিষয়, এই ফোনটি কাজ করে কি না সেটাও জানার উপায় নেই। অবশ্য যেই দেশে দুই রাজনৈতিক দলের যোগাযোগ শুধু নিজেদের মধ্যে বৈবাহিক সম্বন্ধ তৈরিতে সীমিত, সেখানে এই ফোন না থাকলেই কী? তবুও আলাপের বিশাল একটা অংশ জুড়ে থাকলো রেড ফোন। আর কিছুদূর চললে হয়তো মুর্দা ফোন উঠে দাঁড়িয়ে গান গাওয়া শুরু করতো।

সে যাই হোক না কেন, দুই নেত্রীর আলাপ হয়েছে, বেশ খোলামেলা ভাবেই হয়েছে। অতীতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সরাসরি বিতর্কের আহ্বান প্রত্যাখ্যাত হয়েছে অনেক বার। ভবিষ্যতে কি সেটা দেখার আশা করতে পারি আমরা? আলাপ ছাড়াও চলছে না, আবার কোনো আলাপই গোপন না, অতএব খোলামেলা ভাবেই না কেন?

শিষ্টাচারের মৃত্যু

বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক পদের প্রতি শ্রদ্ধার চর্চা গড়ে উঠেনি। চূড়ান্ত বিরোধের মুহূর্তেও কোনো সভ্য দেশে শীর্ষ পদের কাউকে অসম্মান করে কথা বলা হয় না। বিশেষ করে বিদেশি কেউ তেমন কিছু করতে এলে সব দল তার প্রতিবাদ করে। শিষ্টাচারের সেই চর্চা থেকে আমরা এখনও বহু দূরে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুদিন আগে সিএনএন-এর সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান আমানপুর যখন প্রধানমন্ত্রীকে ধমক দিচ্ছিলেন, বক্তব্য শেষ করতে দিচ্ছিলেন না, তখন সেই ভিডিও দেখে অনেকেই তালি বাজিয়েছেন। একই ভাবে এই কথোপকথনেও শুনতে পেলাম প্রধানমন্ত্রীকে রীতিমতো ধমক দিয়ে কথা বলা হচ্ছে, তাঁকে বাক্য শেষ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

ক্রান্তিকালীন সময়ে বিরোধীদলীয় নেতার কণ্ঠে এই রকম সুর অত্যন্ত বেদনাদায়ক, অগ্রহণযোগ্য, এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত। তবে এই রকম মনোভাব যে সম্পূর্ণ একতরফা, তা নয়। কিছুদিন আগেই সংসদে শেখ সেলিম ভেংচি কেটে কটূক্তি করেছিলেন বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি। জানি না সেই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হয়েছিলো কি না।

https://www.facebook.com/photo.php?v=531160116966345

আমাদের দুই নেত্রী পরষ্পরকে আপা-আপনি করে সম্বোধন করছিলেন। হয়তো এর পাশাপাশি নিজেদের পদবী অনুযায়ী সম্বোধন করাও শুরু করা জরুরী। পাশ্চাত্যে অনেক দিনের পুরনো বন্ধুও রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে নাম ধরে ডাকার বদলে পদবী উল্লেখ করে সম্বোধন করেন। এর মূলে আছে সেই পদবীর প্রতি শ্রদ্ধা, যা চিরচেনা সম্বোধনের মাঝে প্রায়ই হারিয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রীর ধৈর্য

মুদ্রার অন্য পিঠে আছে প্রধানমন্ত্রীর ধৈর্য করে কথা বলা। রাজনৈতিক মতাদর্শ যার যেমনই হোক না কেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক উত্তপ্ত বিতণ্ডার মধ্যেও ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলেছেন। মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী এমন কিছু কথা বলেছেন (এবং এমন উত্তাপের সাথে বলেছেন) যাতে মাথা ঠাণ্ডা রাখা দুষ্কর। তবুও প্রধানমন্ত্রী ধৈর্যের সাথেই কথা বলেছেন, এবং ঘুরে-ফিরে শুধুই হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধে সীমিত রেখেছেন কথোপকথন। দুঃখের বিষয় (এবং সামাজিক গণমাধ্যমের পর্যবেক্ষণ) হলো, অনেকেই উদ্ধত আচরণকে শক্তিমত্তা ও ব্যাক্তিত্বের নিদর্শন হিসাবে দেখে থাকেন। গুরুত্ববহ এই কথোপকথনে প্রধানমন্ত্রী নিজেও উত্তপ্ত বাক্যবাণে জড়িয়ে না গিয়ে বরং বিরোধীদলীয় নেত্রীকে তাঁর অসন্তোষ প্রকাশের সুযোগ দিয়েছেন, এই সু-কীর্তি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

পরিকল্পিত গণ-আত্মহত্যা

খুব, খুব, খুব স্বাভাবিক কারণেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা। তিনি নিজে সেই আক্রমণে আহত হয়েছেন, তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন অনেকে, মারা গেছেন আইভী রহমান সহ অনেকে। বিরোধীদলীয় নেত্রী এর পেছনে সকল দায় সরাসরি উড়িয়ে দিলেন, বলে দিলেন এই হত্যাযজ্ঞ আওয়ামী লীগের নিজেরই তৈরি। এই উদ্ভট এবং অগ্রহণযোগ্য দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী শুধুই হতাশা ব্যক্ত করেছেন এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন।

একটি দেশের বিরোধীদলীয় শীর্ষ রাজনীতিকদের দিনের আলোয় গ্রেনেড ছুঁড়ে মেরে ফেলার চেষ্টা অকল্পনীয়। সেটাকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পিত গণ-আত্মহত্যা হিসাবে দেখেন, এই চিন্তাটা বেশ অস্বস্তিকর। এই উক্তি এমন এক সময়ে এলো যখন তাঁর রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী দেশব্যাপি বোমা হামলা শুরু করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাথে জড়িত বিচারক ও আইনজীবিদের বাড়িতে আক্রমণ করছে, তাঁদের পক্ষের পোষা বুদ্ধিজীবি ফরহাদ মজহারের বলছেন একাত্তর টেলিভিশনের মতো গণমাধ্যমের অফিসে আরও বেশি করে বোমা হামলা করা উচিত। ভিডিও দেখুন এখানে।

https://www.facebook.com/photo.php?v=186982521487238

বিএনপি-জামায়াতের উচ্চশিক্ষিত সমর্থকরা যেমনটাই দাবি করুন না কেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীর এই উক্তিতে এটা খুবই স্পষ্ট যে আগ্রাসী রাজনীতি সম্পর্কে তাঁদের অবস্থান বদলায়নি। কে জানে আরও কতো গণ-আত্মহত্যা অপেক্ষা করছে আগামী দিনগুলোয়।

“নতুন কালচার”

কথোপকথনে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেশ কয়েকবার রাজনীতিতে “নতুন কালচার” চালু করার কথা বলেছেন। উল্লেখযোগ্য হলো, তিনি এই কথাগুলো বলেছেন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের (যুদ্ধাপরাধ, ২১শে আগস্ট) প্রসঙ্গ উঠলেই। এই প্রসঙ্গ অনুধাবনের জন্য বিএনপি-র রাজনৈতিক বক্তব্যের সাম্প্রতিক বিবর্তনের দিকে তাকানো প্রয়োজন।

দল হিসাবে বিএনপি কোনো কালেই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের পক্ষে ছিলো না। ১৯৭১, ১৯৭৫, ১৯৭৭-৮১, ২০০৪, ইত্যাদি সময়কালের বিভিন্ন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচারে তারা দলগত ভাবে অনীহ। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডকে বিচারের ঊর্ধ্বে রাখার এই সংস্কৃতি বহু বছর ধরে চাপা পড়ে ছিলো জিয়াউর রহমানের cult-এর আড়ালে। সাম্প্রতিক কালে এই cult-এ ভাটা পড়েছে, তাই প্রচারের মাত্রাও বদলেছে। সর্বোচ্চ অপরাধগুলোকে আইন ও বিচারের ঊর্ধ্বে রাখাকে বিএনপি-পন্থীরা reconciliation নামের ভারি শব্দ ব্যবহার করে পাশা কাটাতে সচেষ্ট। তাদের ভাষায়, জিয়াউর রহমান একমাত্র রাষ্ট্রনেতা যিনি ‘anything that works’ পন্থা অবলম্বন করে রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধার সংমিশ্রণে একটি বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। ক্ষমতায় এলে সেভাবেই সকলে মিলে-মিশে দেশ গড়া হবে। বিরোধীদলীয় নেত্রীর কথায় সেই বহুল-চর্চিত বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম।

এই ধরনের দাবি বিবেচনা করা সম্ভব শুধু এবং শুধুমাত্র সদিচ্ছার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেলে। অথচ ১৯৯৬-এর ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনিকে নির্বাচিত করানো হয়েছে বিএনপি-র ব্যানারে, ২০০১-এর নির্বাচনের সময় থেকে শুরু হওয়া রাজাকার-তোষণ নিয়ে তো নতুন করে বলার নেই কিছু। এই অবস্থায় এই “নতুন কালচার”-এর সংজ্ঞা স্পষ্ট হওয়া জরুরী। আজকের বাংলাদেশে শীর্ষ ঋণখেলাপীদের বিচার-আচার না হওয়া একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতি। হয়তো আগামীতে আমরা এরই ধারাবাহিকতায় ঘৃণ্যতম অপরাধের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি পেতে যাচ্ছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে তো বিরোধীদলীয় নেত্রী ঘোষণা দিয়েই দিয়েছেন সবাইকে মুক্ত করার।

এইচ টি ইমাম

প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বেশ বড় বাক্যবোমা ফাটিয়েছিলেন “তিনি বলেছেন মুক্তিযোদ্ধারা গণহত্যা করেছে বলে” উদ্ধৃতিটির মাধ্যমে। রেকর্ডকৃত কথোপকথন শুনে ধারণা হয় যে বিরোধীদলীয় নেত্রী ১৯৭১-এর ডিসেম্বর থেকে আওয়ামী লীগের শাসনামলের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কথা বলেছেন। এর পাশাপাশি “আওয়ামী লীগের যুদ্ধাপরাধী”-দের বিচার না করার বহুল-চর্চিত অভিযোগের পুনরুত্থাপন করেছেন। এ-সময় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করে নিশ্চিত হয়ে নেন ১৯৭১-এ মুক্তিযোদ্ধারা গণহত্যা করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে কি না।

কথোপকথনের এই ভগ্নাংশ শুনেই জনাব এইচ টি ইমাম বেশ গুরুতর একটি দাবি করেছেন প্রকাশ্যে। তিনি কি প্রধানমন্ত্রী বা রেকর্ডকৃত অডিও থেকে এই প্রসঙ্গে নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন না? বাংলাদেশের গনতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো গত দুই আমল ধরে ‘উপদেষ্টাতন্ত্র’-র উত্থান। নির্বাচিত সংসদ সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য, কিংবা দলের শীর্ষ নেতাদের তুলনায় মুষ্টিমেয় উপদেষ্টার ক্ষমতা অনেক বেশি। জনাব এইচ টি ইমাম সেই অতি-ভাগ্যবানদের একজন। হয়তো সেই অধিকার থেকেই তিনি যাচাই-বাছাইয়ের আগেই এত বড় দাবি করেছেন প্রকাশ্যে। জানি না এর সমাপ্তি কোথায়।

(শর্তসাপেক্ষে) সময় যেখানে স্থির

প্রধানমন্ত্রী ঘুরে-ফিরে বারবার অনুরোধ করছিলেন হরতাল প্রত্যাহারের। তিনি বলছিলেন যে আল্টিমেটামের ভেতরেই ফোন করেছেন, এখন যেন জনসভায় দেওয়া কথা অনুযায়ী হরতাল প্রত্যাহার করা হয়। এর জবাবে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলছিলেন যে শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনার সময় নেই। তিনি আরও বললেন যে নিজের ডাকা হরতালে তিনি নিজেই ঘর থেকে বের হন না। অথচ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির কথা এলে বললেন যে দাবি মেনে নিলে তৎক্ষণাৎ হরতাল উঠিয়ে নেবেন। এই দেশে ক্ষমতাবানদের জন্য নিয়ম আসলেই ভিন্ন। তাঁদের মন জুগিয়ে চললে তাঁরা যাদুবলে সময়কে স্থির করে দিতে পারেন।

দলকানা আচরণ

রাজনৈতিক দলের ছায়াতলে নির্বাচিত হলে সেই দলের প্রতি অনুরক্তি থাকা স্বাভাবিক। ছোটো-বড় বিভিন্ন বিষয়ে দলের লোককে বাড়তি সুযোগ দেওয়াও স্বাভাবিক। এই পক্ষপাত খুব একটা আপত্তিকর কিছু না। দলের লোকের অপরাধের প্রতি অন্ধ হয়ে যাওয়াটাই সমস্যা। দুই নেত্রীর কথোপকথনে হতভাগ্য বিশ্বজিতের নাম উঠে এলে সবাই পুরনো সেই ক্ষতে আবার আঘাত পেয়েছেন। দুঃখের বিষয়, সেই হত্যাকাণ্ডের মতো আরও সব ব্যাপারে দুই নেত্রীই দুঃখজনক ভাবে দলকানা। কথায় যেমনটা বলে, “The more things change, the more they stay the same.”

নাস্তিকতার ধারণা বদ্ধমূল

আসছে নির্বাচনের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকবে ধর্মীয় উন্মাদনা। যেই সময়ে আমাদের সভ্যতার পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেই সময়ে আমরা আরও শক্তভাবে জাপটে ধরছি উগ্রতাকে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেশ কটূ ভাবেই কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রীর ধর্মবিশ্বাসকে, হেফাজতে ইসলামের ধ্বংসযজ্ঞ ও কোরআন পুড়ানোর দায় দিলেন প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে। নির্বাচনের ফর্মুলা যেমনই হোক না কেন, এই সত্য স্পষ্ট যে আসছে দিনগুলোয় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প আরও ছড়াবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাসপোর্ট-ভিসা ঠিক করার সময় আসছে মনে হয়।

দুই দণ্ড শান্তি

ধুন্ধুমার ঝগড়ায় ভরা এই কথোপকথনের মধ্যেও আশার ঝলক লুকিয়ে আছে কিছু। ফোনালাপের কিছুদিন আগ থেকেই দুই দল বিভিন্ন রকম ছাড় দিয়েছে। আলাপের বিষয়বস্তুতে উঠে এসেছে পারষ্পরিক অবিশ্বাস এবং অনাস্থার প্রায় সবগুলো কারণ। বিশ্বপ্রভু আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজিনা কোনো প্রকার আমন্ত্রণ ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রতিবেশি দেশগুলোয়, পৃথকভাবে গোপন বৈঠক করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে। মধ্যস্থতার ছুতায় বিদেশিদের হস্তক্ষেপের চেয়ে ঝগড়া করে হলেও নিজেদের সমস্যা নিজে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। তাঁদের রাজনীতিতে যত পার্থক্যই থাকুক না কেন, অন্তত কথা বলার জন্য তাঁরা দুই জনই ধন্যবাদের দাবিদার। আপাতত এটুকু আমাদের জন্য নিউটনের আপেল হয়ে রইলো নাহয়।


মন্তব্য

নীলম এর ছবি

এমন বিশ্লেষণধর্মী লেখার জন্য ধন্যবাদ, ইশতিয়াক ভাই। আপনার কাছ থেকে এমন একটা লেখা যে আসবে সেটা অবশ্য আশাই করে ছিলাম।

যাই হোক, অবাক হয়ে লক্ষ করলাম এমন একটি ফোনালাপ লীক হওয়াতে কেউ বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। প্রথমদিনেই কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রীকে তার সাথে ২৮ আরিখ রাতে খেতে বলছেন এই অংশটুকু ভিডিওসহ বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে এসেছে। অতটুকুই আমার কাছে ঠিক গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়নি। তারপরে কাল রাত থেকেতো এই অবস্থা।

বিরোধীদলীয় নেত্রীর অনেক হতাশাব্যঞ্জক কথার মধ্যে বেশি হতাশ হয়েছি ২১শে আগষ্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর ধর্মবিশ্বাস বিষয়ক কথায়। সাথে তার বাচনভঙ্গীতো আছেই।
'বিশ্বজিতের হত্যাকারীদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তাদের অনেকের বাবা-মা জামাত-বিএনপির সাথে জড়িত।' -প্রধানমন্ত্রীর একটা মন্তব্যেই সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছি। দু'দন্ড শান্তির যে আশার বাণী আপনি শোনাচ্ছেন তাতে খুব একটা আশাবাদী হতে পারছি না।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

যে সুর তাল লয়ে দুজন টেলি সংলাপ করেছেন তাতে সমঝোতার আশার আলোক দেখতে পাওয়াকে আমি হাইপার আশাবাদী বলবো। আমি কোন আশা দেখছি না কেননা সংলাপের শিষ্টাচার ধারণার চাইতেও অনেক খারাপ ছিল। এভাবে এই সুরে আগালে দুই দলের মধ্যে কখনোই সফল আলোচনার সুত্রপাত করা যাবে না। এটা তো সংলাপ হয়নি, রীতিমত কাইজ্যা। আমরা জাতীয় শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে এরকম কিছু আশা করি না। আমি জানি না একটি সভ্য সংলাপের আয়োজন আদৌ সম্ভব হবে কিনা। আলোচনা হলেও সেটা শীর্ষ দুই নেত্রীকে দিয়ে যে হবে না সেটা এই টেলি সংলাপই প্রমাণ করে দিয়েছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক চলুক চলুক
আমি কোন রাজনীতিবিদ নই, রাজনীতি বুঝিও না কিন্তু যেই রাজনীতি মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বদলে ধর্মকে হাতিয়ার করে সেই রাজনীতি বর্জন করার সময় এখনই
ইসরাত

Niloy এর ছবি

পড়ে ভাল লেগেছে

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান (পালাক্রমে) দুই মানুষের কথোপকথন শুনে রীতিমতঃ আঁতকে উঠেছিলাম। সামাজিক সৌজন্য (আনুষ্ঠানিক/অনানুষ্ঠানিক), পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, শিষ্টাচারের যে শিক্ষাগুলি আমাদেরকে পরিবার বা বিদ্যালয় থেকে দেবার চেষ্টা করা হয়, তার খুব সামান্যই দেখা গেলো তাদের মধ্যে। এই মনোভাব নিয়ে তারা সমঝোতায় পৌঁছুবেন?

কিন্তু পরক্ষণে মনে হলো, হয়তো আমিই ভুল করছি। জনসভাগুলোতে তারা অবলীলায় একে অন্যের নামে সত্য মিথ্যা মিশিয়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করেন, এবং তারপরও কেউ কারও নামে মানহানির মামলা করেন না, এতে স্পষ্ট যে তাদের গায়ের চামড়া কতখানি মোটা। সভ্যতার এবং ভব্যতার প্রচলিত মাপকাঠিতে তাদের মাপা সম্ভব নয়।

হয়তো আশা আছে, আজকের গালাগালি কোন এক সময় গলাগলিতে রূপ নিতেও পারে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী যে পরিমাণ ধৈর্য দেখিয়েছেন, তাতে করে সেই আশা কিছুটা বেড়ে যায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

এদের কাইজ্যা শুনে তো রীতিমতো মাথা গরম হয়ে গেল। বিরোধী দলীয় নেত্রীর কথা শুনে গ্রামের নিম্নবিত্ত গৃহ বধূদের কাইজ্যা্র কথা মনে পড়ে গেল।

-ছায়াবৃত্ত

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। হয়তো নিজে প্রবাসে আছি বলেই আমার সবচেয়ে অপছন্দের বিষয় বিদেশি প্রভুদের মাতব্বরি। আমার দেশের রাজনীতিকরা হাজার আপত্তি থাকলেও নিজেরা এক সাথে বসে আলাপ করবেন, এটুকুই আমার চাওয়া। আলাপ করলেই যে সব চুকে যাবে তা না। আমেরিকাতেও সেটা হয় না। এই তো কয়েকদিন আগে ১৭ দিন বন্ধ থাকলো ফেডারেল গভমেন্ট। সেই সময়ে রিপাবলিকান পার্টির এক কংগ্রেসম্যান নাই হোয়াইট হাউজে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বলেছিলেন, "I cannot even look at you." এতটাই তীব্র দুই দলের মধ্যকার ঘৃণা। গণতন্ত্র থাকলে এই রকম ঘৃণা থাকবে, সেটার এরকম সরাসরি প্রকাশও থাকবে। সেটাই স্বাভাবিক।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

এই সংলাপকে সাধারন ব্যক্তিগত আলাপচারীতার মত করে দেখার অবকাশ আছে বলে মনে হয় না, এই আলাপ সময়ের সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ন ও আকাঙ্খিত একটি বিষয়। এটা রাষ্ট্রীয় কোন গোপনীয় বিষয় নয় যে তা সর্বসাধারনের গোচরে আসতে পারে না, আর এটা আদৌ কোন ব্যক্তিগত বিষয়ও নয় যে তা প্রকাশ পেলে কারও ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। এই আলাপচারীতার মাধ্যমে বরং দুটি পক্ষের মনোভাবের স্বরুপ উন্মোচিত হয়েছে, অবশ্য সেই সংগে সংশ্লিষ্টদের ব্যাক্তিগত রুচিবোধেরও কিছুটা পরিচয় এতে প্রকাশ পেয়েছে।

আলাপের বিভিন্ন বিষয় যেভাবে বিশ্লেষন করেছেন তা মোটামুটি সঠিকভাবেই করেছেন বলে মনে করি, তবে এইচ টি ইমামের প্রসংগে যা বলেছেন, সে বিষয়ে আমি কিছু যোগ করতে চাই। খালেদা সুস্পষ্টভাবে উচ্চারন করেছেন- "একাত্তরে আপনারা মানুষ হত্যা করেছেন"। খালেদা নিজে থেকে এই উক্তির কোন ব্যাখ্যা দেন নাই, হাসিনার পাল্টা প্রশ্নে বিষয়টা পরিস্কার করেছেন যে স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ মানুষ হত্যা করেছে। তো স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানুষ নিহত হয়েছে, এটা বোঝানোর জন্য "একাত্তরে আপনারা মানুষ হত্যা করেছেন" বলার কোন অবকাশ আছে কি? প্রশ্নটা এ কারনেই বড় হয়ে দেখা দেয় যে আঠারো দলের মূল চালিকা শক্তি জামাত এখন প্রকাশ্যেই বলে একাত্তরে(মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে) ইসলাম পন্থী জনগণের(মানে রাজাকার) উপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। ইন্টারনেটে জামাত শিবিরের বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকেও এ ধরনের প্রচারণা আছে। সুতরাং সাধু সাবধান!

অতিথি লেখক এর ছবি

আব্দুল্লাহ ভাই আমি একটা বিষয় ঠিক বুঝতেছি না হঠাৎ করে সচলে রাজনৈতিক লেখাগুলোতে তেমন একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই এড়িয়ে যাচ্ছে, এটা কি নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে হচ্ছে নাকি সবাই ভাবছে কি প্রয়োজন তর্কে বিতর্কে যাওয়ার? হয়তো আমার ধারণা ভুল ও হতে পারে। আমি কাউকে ছোট করতে এটা বলছি না, আমার খটকা লাগছে বিষয়টা তাই বললাম।

যদি সত্য হয় তাহলে দুটো বিষয় বলার আছে। কাউকে জ্ঞান দিতে নয়, আমি বিশ্বাস করি রাজনৈতিক বিশ্বাসে মানুষ কখনো নিরপেক্ষ হয় না। ন্যায়কে ন্যায় আর অন্যায়কে অন্যায় বলতে হয়। রাজনৈতিক বিশ্বাসে আমরা সৎ হতে পারি কিন্তু নিরপেক্ষ নয়। আমাদের এখানে নিরপেক্ষতার সংজ্ঞা কিন্তু ভিন্ন ধরণের, দুটো দলকে সমান বলে গালি দিয়ে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হয়। আমি সেই সেন্সে নিরপেক্ষতা বলছি।

আর যুক্তিপূর্ণ তর্ক বিতর্ক ব্লগে না হলে হবে কোথায়?

মাসুদ সজীব

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমার মনে হয় না এখানে নিরপেক্ষতার কিছু আছে। গত কিছু বছরে ফেসবুকে রীতিমতো জনবিস্ফোরণ হয়েছে। ছেলেবুড়ো সবাই ব্লগে মিথষ্ক্রিয়া করতে না পারলেও ফেসবুকে টুক করে মন্তব্য করে দেওয়া যায় সহজেই। তার উপর আছে খুব বেশি চিন্তা না করে দুই লাইন প্রতিক্রিয়া লিখে দেওয়ার সুযোগ। আমি নিজেও এই কারণেই ফেসবুকে ঘুরাফেরা করি বেশি ইদানীং, আর কাউকে কেন দোষ দেবো?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

@মাসুদ সজীব,
ইশতিয়াকের কথার সত্যতা আছে, আবার আমার মনে হয় ব্লগারদের অনেকেই পুরো রাজনৈতিক ব্যাপারেই এক ধরনের হতাশায়ও ভুগছেন ইদানিং।

অতিথি লেখক এর ছবি

১। এমন মানসিকতা নিয়ে আলোচনা করে কোনদিন সমঝোতায় আসা যাবে না। আমার মনে হচ্ছে কেউই চাচ্ছে না আলোচনা করে সমাধান হোক, নিজের অবস্থান থেকে সরে আসুক। উনারা ভাবছেন নিজের অবস্থান থেকে সরে আসা মানেই পরাজয়। সেই সূত্র ধরেই আসলে সংলাপের নাটক করছে দুই দলি। যেন জনগনকে বুঝাতে পারে আমরা আলোচনা চেয়েছিলাম, সমঝোতা চেয়েছিলাম কিন্তু ওদের কারনে সেটা হয়নি। জনগনকে বোকা বানানোর এই খেলার শেষ পরিণতি কি সেটা বুঝতে অনেক বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। বিএনপি+জামাত চাইছে হরালের পর হরতাল দিতে, এতে লাভ অনেক. হরতালে সরকার যতো বেশি কঠোর হবে তত বেশি লাশ পড়বে, আর সেই লাশকে গনহত্যা বলে চালিয়ে দিতে পারবে যেমন ৫ই মে চালিয়েছে আর সাথে ধর্মানুভূতি ও যোগ করে দিবে. বাংলাদেশের মানুষদের আবার ধর্মানুভূতি একটু বেশি তাই এই প্যারাসিটামল সবাই খাবে, যেমন করে কিছুদিন আগে খেয়েছে.

২। সাধারণত শিষ্টাচার আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে লেশ মাত্র নেই। কিন্তু শেখ হাসিনা নি:সন্দেহে টেলি আলাপে নিজের ধৈর্য্য আর সংযমের পরিচয় দিয়েছের। খালেদা জিয়া যে ঝগড়ার সুরে বাক্য বিনিময় করছেন, শেখ হাসিনাকে ঠিক মতো কথা বলতে না দিয়ে সব কিছু নিজেই বলে গেছেন তাতে মাথা ঠান্ডা রেখে কথা বলা আসলেই দুরহ কাজ ছিলো। অনেকেই খালেদা জিয়ার উচ্চ্য বাক্যকে ব্যক্তিত্বের আর মনোবল বলে প্রশংসা করলে ও আসলে সেটা ভূল ধারণা। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাঙালি যে যে দল সাপোর্ট করে তার বিপক্ষদলের কোন ভালো কে প্রশংসা করতে পারে না। আমার কলিগ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ ফলনশীল বিষয় থেকে পাশ করেছে তারা ও সেই একনিষ্ঠি চিলে কান নেওয়া বিএমপি সাপোর্টারদেরে সুরে কথা বলছে। এটা শেখ হাসিনার কৌশল, আওয়ামিলীগ মানেই বাকশাল সেই ত্যানা প্যাঁচানো, সেই নিজের পূর্ব বিশ্বাসের পোশাক পরে বসে থাকা। এরা ভুলকে ভুল বলতে পারে না, যদি শিক্ষিত জনের অবস্থা এমন হয় তবে গ্রামের মানুষগুলোর অবস্থা কেমন হবে সেটা সহজেই অনুমেয়।

৩। আসিফ নজরুল/ফারহাদ মাজাহারের মতো পালিত চুশিলরা কানে কানে জপে যাচ্ছে বিরোধী দলের নেত্রীর প্রতি আপনি শক্ত থাকুন, রাজপথে থাকুন। ক্ষমতা না ছেড়ে যাবে কোথায়, আপনাদেরকে ছাড়া ভোট হলে তো সেই ভোট কেউ মানবে না। জনগনতো আপনাদের পক্ষেই আছে। সুতরাং আপনাদেরকে ছাড়া ভোট করার কথা ওরা ভাবতে সাহস পাবেনা। বিষয়টা আসল এত সহজ না, আন্দোলন করে শেখহাসিনা তথা সরকারকে নামিয়ে ফেললেই যে খালেদা জিয়া আসনে বসে যেতে পারবেন এমন না। মাঝখানে আরো কিছু কিন্তু আছে। সেই কিন্তুগুলোর অপেক্ষায় আছে জামায়ত ইসলাম, ১৮ দলীয় দল ক্ষমতায় আসলে ও যেমন লাভবান তেমনি তৃতীয় পক্ষ এলেও বেশি লাভবান। ১/১১ তে যেমন হাসিনা খালেদা সহ সব বড় নেতা জেলের ভাত খেয়েছে, সেই অদ্ভুত রাজনৈতিক কেয়ামতের সময়ও একজন জামাতের নেতাও কিন্তু জেলে যায়নি, তারা ছিলো পূর্ণ স্বাধীন।

৪. কেউ যদি দুই নেত্রীর সংলাপ নিজের কানে শুনে তার একধরনের প্রতিক্রিয়া হবে আর কথাগুলো যদি পত্রিকা কিংবা অন্যকোন মাধ্যমে পড়ে থাকে তাহলে প্রতিক্রিয়া টা অন্যরকম হবে. যে ঝগটাটে সুরে খালেদা জিয়া কথা বলেছেন সেইটা লেখায় আসবেনা কোনদিনও. আর ধর্মের বিষয়টিও খালেদা জিয়া চিরচেনা কৌশলে নিয়ে এসেছেন। নাস্তিকতা বাঙালির মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে দিতে সফল হয়েছে বিএনপি+জামাত. বাংলাদেশে আগামি নির্বাচনে এটাই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হবে কোন সন্দেহ ছাড়াই.

বি দ্র : মাঝে মাঝে আমার মনে হয় ব্লগে এই বিশ্লেষনধর্মী লেখাগুলো অর্থহীন, কে বুঝবে? যাদের জন্য এই লেখা তারা বোঝার ক্ষমতা এখনো অর্জন করতে শিখেনি. নিজের পোশাকি বিশ্বাস থেকে কি বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়নি। ছাগুরা কোনদিনও এতো গভীরে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে না, তারা অপেক্ষায় থাকে তাদের নেতা-নেত্রীরা কি বলে. যা বলবেই সেটাকে চিরসত্য জেনে ওগলাবে সবখানে. তাদের পড়ার ক্ষমতা কম, জানার চেষ্টা কম কিন্তু কথা বলার সময় গলা সবচেয়ে উঁচু ঠিক তাদের নেত্রীর মতো. এবং দেশে এদের সংখ্যাই বেশি.

মাসুদ সজীব

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক , লেখা ভাল লেগেছে এবং তথ্যবহুল।
আচ্ছা, আমার একটা প্রশ্ন- সংলাপ হলেই কি সমাধান হবে?

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

রব এর ছবি

ট্যাপ শুনে, পাবলিকের প্রতিক্রিয়া পড়ে ও শুনে এবং আপনার লেখা পড়ে আমার কয়েক পয়সাঃ
১। পাড় আওয়ামীরা খালেদাকে আনপড় বোকা কিসিমের মহিলা হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। আদতে তিনি যথেষ্ট ধুরন্ধর।

২। বিনয়-নম্রতা প্রশংসাযোগ্য। হাসিনা উচ্চবাচ্য না করে ভালো করেছেন অবশ্যই। কিন্তু মিনমিন করাকে বিনয় বলি না। বেশ কয়েক জায়গায় তিনি এটা করেছেন। এর চেয়েও খারাপ হচ্ছে, কথা জড়িয়ে যাওয়া।
বিএনপির দেলোয়ারের কথা জড়িয়ে যেত। লীগের হানিফের প্রায়ই কথা জড়িয়ে যায়। তোতলার সাথে থাকলে অনেকের মধ্যে তোতলামি দেখা দেয়। হাসিনার এমন কিছু ঘটলো কীনা ভাবছি। হাসিনা তোতলান তা বলছি না, বলছি তার কথা জড়িয়ে যায়। প্রায়ই দেখি তার কথা জড়িয়ে যায়। একজন নেতার কথার জড়তা (বা এমন কিছু) থাকা একটা বড় খামতি। মুসার তোতলামির কারণে হারুনকেও (এরন) নবী বানাতে হয়েছিল।

৩। তথাকথিত আপোষহীনতাকে এখনো অনেক মানুষ বেজায় ভালুবাসে।

৪।ফোনে আড়িপাতার বিষয়ে বিম্পির আমলে এক আইনের মাধ্যমে এক রকম যথেচ্ছ ক্ষমতা দেয়া হয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। এটার একরকম মচ্ছব চলছে এবং চলবে।

৫। উইকিলিকস থেকে একটা বিষয় বুঝেছি, এদেশের অনেক স্পর্শকাতর বিষয় এদেশের মানুষ না জানলেও বিদেশিরা ঠিকই জানে। বাসি হয়ে যাওয়ার পর মানুষ সেসবের হদিশ পায় (কখনো কখনো একদমই পায় না)। প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এদেশের রাজনীতিকরাই স্পর্শকাতর বিষয়গুলো বিদেশিদের কাছে বিস্তারিত বলে আসে। বিবিসিতে শুনলাম এনএসএর নজরদারি নিয়ে বাংলাদেশের নাকি উদ্বেগ নাই। থাকবে কী করে? ন্যাংটার আর গোপন কী থাকে?
এরকম পরিস্থতিতে এই ফাঁসের বিপক্ষে দাঁড়াবো কীনা ধন্দে আছি। এই ফাঁস অন্তত বিদেশিদের প্রায় কাছাকাছি সময়েই এদেশের আমমানুষকে জানার সুযোগ করে দিল। আমার ধারণা, দুদলই তাদের কমন বিদেশি প্রভুদের কাছে এ কথোপকথন বিষয়ে সাথেসাথেই ব্রিফ করে এসেছে।

৬। ১৫ আগস্ট, ৭ নভেম্বর যে জিয়া এবং তার কপাল খুলে দিছে এটা খালেদার বেশ বুঝার কথা। তিনি ১৫ আগস্টের হৃদয়বিদারকতা বুঝতে চাইবেন- এটা আশা করা বাতুলতা।

৭। ‘গণ-আত্মহত্যা” বা ব্যক্তি পর্যায়ে “আত্মহত্যা” বিম্পি ফিরলে অনেক ঘটবে বলেই ধারণা করছি।

৮। বিশ্বজিতের বা এমন বিষয়ে যে প্রলাপ আওয়ামীরা বকেন তা বন্ধ হবার আশা প্রায় ছেড়ে দিছি।

৯। আম্রিকান বাটপারগুলোর মধ্যস্থতায় সমঝোতার চেয়ে এমন ঝগড়ার মধ্য দিয়ে সমঝোতা ভালো।

১০। সমঝোতা হবে বলে মনে হচ্ছে না।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

৪ নং পয়েন্ট নিয়ে আরেকটু তথ্য দেবেন?

৯ নং পয়েন্টটাই আমার মূল (/একমাত্র) আশার জায়গা। মেরে-বকে-কেঁদে যেভাবেই হোক না কেন, আমার দেশের সমস্যা যেন আমার দেশের রাজনীতিকরাই সমাধান করেন। বিদেশি প্রভুর পিঠা ভাগ চাই না।

রাজকন্যা এর ছবি

৯। আম্রিকান বাটপারগুলোর মধ্যস্থতায় সমঝোতার চেয়ে এমন ঝগড়ার মধ্য দিয়ে সমঝোতা ভালো।

Artistic Biplob এর ছবি

প্রধানমন্ত্রী ফোন দিলেন...কাতর গলায় বুঝাচ্ছেন...আর ওইপাশে দেশনেত্রী কি বলছেন তা অ- অনুমেয় ... দৃশ্যটা দেখে সেইরকম একটা মজা নিলাম।। এ যেন পুঁড়াবাড়ির গেরস্তের বড় বউ ছোট বউ।। রাষ্ট্রের দুই কর্নাধার নয়। মান অভিমান এর এক চমকপ্রদ দৃশ্যপট। দেশের মানুষ গুলোকে নিয়ে মজার এক ছিনিমিনি খেলা।।তৃতীয় বিশ্ব প্রথম বিশ্ব বলে একটা কথা আছে ...আসলেই সত্যি। আমরা তৃতীয় বিশ্বের মানুষ বলেই, আমাদের আবেগকে সুযোগ বানিয়ে নিচ নগন্য ক্ষমতা লোভী এই দুই ডাইনী মানচিত্রে্র উপর প্রলয় নাচন দিচ্ছে। সত্যিই ওরা যদি দেশের মানুষকে ভালবাসত তাহলে কোন ধরনের সংঘাতে যেত না ।প্রসঙ্গত,জনাব সাইদি যদি সত্যি সত্যি দলের সমর্থক কর্মীদের ভালবাসত তাহলে নিজ প্রানের বিনিময়ে হলেও বলত যায় যাক মোর প্রান তথা তুরা প্রান দিস না।। আর দেশের মানুষকে কি বলব...! আমরা কি বুঝি সেটাই আমরা বুঝিনা।। সেই পলাশী থেকেই নিজের ভালো মন্দ নিজে বুঝিনি এখন আর কিই বা বুঝবো !... ওই যে বললাম পশ্চিমারা তৃতীয় বিশ্ব বলে একটা গালি দেয়। কাজটা ওরা ভালই করে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।