বিশ্বকাপ ফুটবলঃ একদিন আমরাও

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: সোম, ০৯/০৬/২০১৪ - ৬:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বঞ্চনা বড় কঠিন শাস্তি, কিন্তু হতাশা তার চেয়েও বড়। কোনো একদিন মুক্ত আকাশ দেখার আশায় অর্ধেক জীবন অন্ধকার কুঠুরিতে কাটিয়ে দেওয়া যায়; কিন্তু বন্দিত্ব অবসানের কোনো আশা বা সম্ভাবনা না থাকলে কয়েক মাসেও মন ভেঙে যায়, বেঁচে থাকা নিরর্থক হয়ে যায়। আশা নিয়েই তাই জীবন। অন্ধকারে থাকলেও আশা চাই, বেদনায় থাকলেও আশা চাই, গহীন অরণ্যে হারিয়ে গেলেও আশা চাই, উত্তাল সমুদ্রে ভেসে গেলেও আশা চাই, একলা বিকেলে বিক্ষিপ্ত মনেও আশা চাই, বায়ুশূন্য অন্তরীক্ষে নিক্ষিপ্ত হলেও আশা থাকা চাই, জগতের বিশালতায় কুঁকড়ে গেলেও আশা থাকা চাই।

সেই আশাবাজি থেকেই জেগে জেগে ভাবি, এই তো আর কিছুদিন পরেই বাংলাদেশও খেলবে ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে, এই তো কিছুদিন বাদেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ হবে সবার প্রিয় আন্ডার-ডগ দল, এই তো কিছুদিন পরই দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ লাল-সবুজ জার্সি পরবে বিশ্বকাপ এলে।

শুধুই স্বপ্ন, অনেকটাই অলীক এবং অসম্ভব, তবু আশা করতে দোষ কী? মাত্রই তো একটা প্রজন্মের ব্যাপার। আজ যে শিশু পাঁচ বছর বয়সে জোড়া-তালি দেওয়া ফুটবলে খেলছে, কাঁটা-কাঁকড় উপেক্ষা করে খালি পায়ে দৌঁড়াচ্ছে, পানাপুকুর সাঁতরে বল ফেরত আনছে, পাশের বাড়ির জানালায় ঝুলে বা শো-রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছে, তার মধ্যে জন্ম নেওয়া স্বপ্নই হয়তো কুড়ি বছর পর পূর্ণতা পাবে বিশ্বমঞ্চে।

ফুটবলে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। আমরা এতটাই পিছনে যে স্বপ্ন দেখতেও ভয় লাগে। আমাদের যাবতীয় সমর্থন এবং উদযাপন অন্য দেশের ঘাড়ে চেপে। এই নিয়েই আমরা পাগলামো করি, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা (ইদানীং স্পেন-ইতালি-ফ্রান্স-জার্মানিও আছে টুকটাক) ঝগড়া করে মানুষ খুন করে ফেলি। এত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের পতাকা যেই দেশে বিশেষ দিবসগুলোতেও উড়ে না সেই দেশেরই পাড়া-মহল্লা ছেয়ে যায় ভিনদেশী পতাকায়। পতাকা আইন বলে কিছু একটা আছে, যাতে বাংলাদেশের মাটিতে অন্য কোনো দেশের পতাকা উড়ানো নিষিদ্ধ – এই বিষয়টি সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। কেউ বলেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা উড়িয়েছি, ভারত-পাকিস্তানের তো না। কেউ বলেন খেলাধূলার সাথে রাজনীতি মেশাতে না। কেউ বলেন চিল আউট ডুড।

ক্রীড়ানুরাগী হওয়া ভালো, কিন্তু তাই বলে নিজের স্বত্বা ভুলে যাওয়া ভালো না। বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার যত বড় এবং যত সংখ্যক পতাকা উড়ে এবং তৈরি হয়, তার কাছাকাছিও কি বাংলাদেশের খেলার সময় দেখতে পাই? ফুটবল বাদ দিলাম, ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময়ও কি দেখতে পাই? এখানেই হয়তো আমাদের মজ্জায় ঢুকে যাওয়া হতাশার পরোক্ষ প্রকাশ। ফিফা রেটিং-এ ১৪০-এর আশেপাশে ঘুরাফেরা করা বাংলাদেশ কোনোদিন সেরা ৩২টি দেশের একটি হতে পারে, এটা আশা করার দুঃসাহসও যেন নেই আমাদের। নেই বলেই অন্যের কাঁধে সওয়ার হওয়া, অন্যের খুশিতে বাকবাকুম হয়ে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। স্কুল-কলেজ-অফিস-দোকান বন্ধ করে খেলা দেখতে বসা।

বয়সের সাথে সাথে আরো বেশি নিরানন্দ মানুষ হয়ে যাচ্ছি বলেই হয়তো বিশ্বকাপের প্রাক্কালে এমন চিন্তা-ভাবনা মাথায় আসছে। তবে এর পেছনে যে একেবারেই কোনো কারণ নেই, তা না। ২০১০ বিশ্বকাপের কাছাকাছি সময়ের একটা ঘটনা খুব মনে পড়ে।

গত বিশ্বকাপের এক বছর আগে এক আর্জেন্টাইন ছেলে আমার রুমমেট ছিলো কিছুদিনের জন্য। ভীষণ নিয়ম মেনে চলতো, নিজের মতো থাকতো, পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, বাজে আলাপ করতো না। কিছুদিন পর থাকতে না পেরে তাকে বলেই ফেললাম, তুমি তো ম্যারাডোনার দেশের মানুষ, বিশ্বকাপের জন্য নিশ্চয়ই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছো। ছেলেটা কিছুক্ষণ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো, তো? অধমের অপ্রস্তুত অবস্থা দেখে বললো, দেশে মানুষ খেতে পায় না, এর মধ্যে বিশ্বকাপ নিয়ে মাতামাতির কিছু নাই। খেলাধূলা হবে নিজের মতো।

বাইরে সম্মতি জানিয়ে এবং মনে মনে অবাক হয়ে নিজের কাজে ফিরে গেলাম। এত বছর খুব একটা গায়ে মাখিনি, ধরে নিয়েছি যে এই একটা মানুষের কিছু আসে-যায় না। জোর করে ভুলে থেকেছি তার চার বছর আগের কথা, যখন কোরিয়া-জাপানে অনেকেই বিরক্ত ছিলো এত টাকা খরচ করে এবং কাজের ক্ষতি করে বিশ্বকাপ আয়োজনের ব্যাপারে। কিন্তু ইদানীং ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া দেখে ধারণা বদলেছে। এখন মনে হয়, এই ধরনের মানুষ এবং চিন্তাই বরং মূলধারার। যেই দেশ নিজে গুণে বিশ্বকাপের অংশ, যেই দেশ অন্য কাউকে তালতো ভাই ডেকে বিশ্বকাপের অংশ হয় না, সেই দেশের মানুষ ফুটবলের জন্য নাওয়া-খাওয়া ভুলে যায় না। ঠিক যেমন আমরা ক্রিকেট বিশ্বকাপের পিছনে অতিরিক্ত খরচ করলে ভ্রূ কুঁচকে প্রশ্ন তুলি, জানতে চাই লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনাহারে রেখে এসব অপচয়ের কী অর্থ। ক্রিকেট নিয়ে আমাদের মনে এই প্রশ্নগুলো জাগে, কারণ ক্রিকেট নিয়ে আমরা আর হতাশার অন্ধকারে ডুবে নেই। ক্রিকেটে আমরা আর বড় কোনো তারকাকে দেখলে থমকে দাঁড়াই না। ক্রিকেটে আমরা নিজ দেশের খেলোয়াড় বাদ দিয়ে ভিনদেশি কারও পোস্টার সেঁটে রাখি না আর। ক্রিকেটে আমরা নিজের দেশ বাদ পড়ে গেলে বাকি টুর্নামেন্ট ঠিকমতো অনুসরণও করি না। কারণ ক্রিকেট নিয়ে আমাদের মনে আশা কাজ করে, ক্রিকেটের প্রসঙ্গ এলে আমরা বিশ্বাস করি যে ‘উই বিলং দেয়ার’।

অথচ মাত্র কুড়ি বছর আগেই ক্রিকেটের অবস্থা ছিলো সঙ্গীন। আমার আজও মনে পড়ে ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারির রাতে রেডিওতে ধারাভাষ্য শুনার কথা, কেনিয়ার ২৯৫ রান তাড়া করতে গিয়ে মাত্র ১৩ রানে হেরে যাওয়ার কথা। সেই দুঃখ আজও মনে আছে। সেদিন কোথায় ছিলাম মনে আছে, আবহাওয়া কেমন ছিলো মনে আছে, কতটা বাতাস বইছিলো মনে আছে, ঘাসের গন্ধ মনে আছে, দুমড়ে যাওয়া স্বপ্নটাকে সাথে করে বারান্দায় বসে থাকার কথা মনে আছে। শুধু আমি না, আমি নিশ্চিত আরো কোটি কোটি মানুষের মনে আছে। সেই বাংলাদেশ তার মাত্র ৫ বছর পরই বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাই করে। বাকি ইতিহাস তো সবারই জানা।

এজন্যই বলছিলাম, আশা ধরে রাখতে হয়। নিজের মনে জানতে হয় যে অনেক দুরূহ আশাও পূরণ হওয়া হয়তো শুধুই একটা প্রজন্মের ব্যাপার। আজকের প্রজন্ম রেডিওতে ক্রিকেটের ধারাভাষ্য শুনার রোমাঞ্চকে জানে না। ঠিক তেমনি ভাবে আজকের প্রজন্ম হিসাব মেলাতে পারে না কেন বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বকাপ এলে ভারত-পাকিস্তান নিয়ে মারামারি করতো। হয়তো আজ থেকে কুড়ি বছর পর ফুটবল নিয়েও এভাবেই ভাববে আমাদের পরের প্রজন্ম।

অনেকের কাছেই এই কথাগুলো অবান্তর বা অপ্রাসঙ্গিক ঠেকতে পারে, কিন্তু অলিম্পিক কিংবা বিশ্বকাপের মতো আসরগুলোর সাথে ‘দেশ’-এর ধারণা অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। সারা বছর আইপিএল দেখেও আমরা বিশ্বকাপ এলে নড়েচড়ে বসি, কারণ সেই আসরে নিজের দেশের পতাকা উড়ে, সেই সময়টায় খেলোয়াড়রা দেশের জন্য নিজের শেষ বিন্দুটুকু নিঙড়ে দেয়। ফুটবলের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। সারা বছর ধরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, প্রিমিয়ার লীগ, লা লীগা, বুন্দেসলীগা দেখার পরও আমরা চার বছর পরপর নড়েচড়ে বসি, কারণ এই আসরগুলো আমাদের চেনা-পরিচিত খেলোয়াড়রা নিজেদের দেশের জন্য জান বাজি রাখে, চেষ্টা করে যেকোনো মূল্যে ইতিহাসের অংশ হতে, নিজের দেশের মানুষকে গর্ব করার মতো একটা অর্জন দিতে।

দেশ কীভাবে জড়িত, সেটা বিশ্বকাপ নিয়েই আরেকটা ঘটনার মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করি গত আসরে। ২০১০-এর ব্রাজিল-হল্যান্ড খেলার সময় আমার বাবা-মা সাথে ছিলো। সেই খেলায় ব্রাজিলের হার আমার দুবলা বুক সইতে পারে নাই। সোফায় বসে ‘হায় ব্রাজিল’ করছিলাম শুধু। পাষণ্ড বৌ সেটার ভিডিও করে ফেসবুকে তুলে দিয়েছিলো (যদিও একদিন পর আর্জেন্টিনাও বাদ পড়ে যাওয়ায় তার জারিজুরি বেশিক্ষণ টেকেনি)। যাই হোক, সেই খেলায় আমার বাবা ছিলো হল্যান্ডের সমর্থক। আমি যথারীতি তর্ক জুড়ে দিলাম, প্রশ্ন করলাম যে এমন মারদাঙ্গা দলকে কেউ সমর্থন করতে পারে নাকি? জবাবে আমার বাবা বলেছিলো যে হল্যান্ড বাংলাদেশকে উদার হাতে সাহায্য করা একটা দেশ, তাদের সমর্থন করবে না তো কাকে করবে?

খেলার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা মনে তখন কিছুটা যুক্তিবুদ্ধির উদয় হলো। আমার বাবা খাদ্য অধিদপ্তরে কাজ করার সূত্রে জানি হল্যান্ড-বেলজিয়াম বাংলাদেশে শস্যগুদাম তৈরিতে কী পরিমাণ সাহায্য করেছে, মনে পড়লো বিভিন্ন বিদেশি কনসালটেন্টদের সাথে দেখা হওয়ার কথা। আসলেই তো, ব্রাজিল জিতলে বাংলাদেশের কী? এবারে অবশ্য ব্রাজিলের খেলা পছন্দ না করলেও তাদের জার্সিতে বড় করে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা থাকবে জেনে মন একটু তরল। কিন্তু তবুও গত চার বছর ধরেই ধীরে ধীরে মন সরে এসেছে ভিন্ন দেশের সমর্থন থেকে। কেউ ভালো খেললে ভালো; কিন্তু আমি সমর্থন করবো শুধু আমার নিজের দেশকেই, আমি জার্সি পড়বো শুধু আমার দেশেরই, আমি পতাকা ঝুলাবো শুধু আমার দেশেরই, আমার ফেসবুক থেকে বাড়ির দরজার পর্যন্ত সব জায়গায় থাকবে শুধু আমার নিজের দেশের রঙ।

এই গোয়ার্তুমি আর কারও কাছে খারাপ লাগতে পারে। কেউ চাইলে ভাবতে পারেন আমি বিশ্ববিযুক্ত, ক্ষ্যাত, বোরিং, আঁতেল, কিংবা বিকারগ্রস্ত। কিন্তু আমি মনে করি, বাকি পৃথিবীর চোখে শ্রেষ্ঠ হওয়ার আগে নিজের মনে হতে হয়। বাকি পৃথিবী রত্নগর্ভা উপাধি দেওয়ার আগেই নিজের মাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা বলে জানতে হয়। অন্য কেউ প্রশংসা করার আগে নিজেই নিজের দেশকে সকল দেশের রানী ভাবতে হয়। বিশ্ববাসী তালি দেওয়ার আগে নিজের দেশের খেলোয়াড়কে নিজেই চিনতে এবং উৎসাহ দিতে হয়। এখানে কোনো রাজনীতি বা জাতীয়তাবাদ নেই, আছে শুধুই আশা এবং আত্মসম্মান।

একদিন আমরাও যাবো বিশ্বমঞ্চে। আমাদের অর্জন নেই হয়তো, কিন্তু আশা এবং প্রয়াস আছে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা একটু একটু করে নজর কাড়ছে বিদেশি লীগের, আঞ্চলিক ফুটবলে আমাদের মান বাড়ছে, আমাদের তরুণ প্রজন্ম বিভিন্ন খুঁটিনাটি শিখছে, নিজে নিজে প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। হতাশার সাথে বসবাসের অনেক বছর হলো, এবার আশায় সওয়ার হওয়ার সময় এসেছে। আর দশটা অভুক্ত দেশ বিশ্বকাপে যেতে পারলে একদিন বাংলাদেশও পারবে। আমাদের এক দশমাংশ জনসংখ্যার দেশ বিশ্বকাপে নিয়মিত হতে পারলে বাংলাদেশও পারবে। লাতিন আমেরিকার বস্তি থেকে ফুটবল জাদুকর উঠে আসতে পারলে বাংলাদেশ থেকেও পারবে।

সবার প্রতি তাই অনুরোধ রইলো দৃষ্টি, মনোযোগ, এবং অর্থ নিজের দেশের জন্য ব্যয় করার। মাইলের পর মাইল লম্বা ভিনদেশি পতাকার সারি ঝুলিয়ে কিংবা বিশাল দালান ভিনদেশি পতাকা দিয়ে ঢেকে দিয়ে কী লাভ? সেই অর্থ দিয়ে কিছু ফুটবল কিনে বস্তিতে বিলিয়ে দিন বরং। বিশ্বকাপ দেখার জন্য খোলা জায়গা ভাড়া না নিয়ে বাচ্চাদের একটু খেলার জায়গা দিন বরং। অন্য দেশের খেলা নিয়ে ঝগড়া-হাতাহাতি না করে বরং আপনার উঠানে বল উড়ে এলে বাচ্চাগুলোকে একটু কম বকা দিন। আপনার কর্পোরেট অর্থায়নে ভিনদেশের খেলা নিয়ে মাতামাতি না করে বরং সেই টাকায় একটা ফুটবল অ্যাকাডেমি খুলুন, নিজেকে প্রশ্ন করুন কেন মালয়েশিয়া থেকে ভারত পর্যন্ত সব দেশে শীর্ষ ফুটবল দলগুলোর অ্যাকাডেমি থাকলেও বাংলাদশে নেই।

এরকম আরো অনেক অনেক কিছু করার আছে, তবে সবার আগে চাই আশা। নিজের দেশ নিয়ে আশা, নিজেকে নিয়ে আশা। সবাই বিশ্বকাপ ফুটবল উপভোগ করুন, সার্বজনীন এই খেলার মিলনমেলায় সামিল হোন, তবে পাশাপাশি নিজের দেশকেও অনুগ্রহ করে স্মরণে রাখুন। আপনি-আমি ছাড়া কেউ নাই এই দেশটাকে মনে রাখার জন্য।


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সেই অর্থ দিয়ে কিছু ফুটবল কিনে বস্তিতে বিলিয়ে দিন বরং।

-চমৎকার প্রস্তাব! কি জানি, আমার কাছে বিষয়টা বেশ ষ্পর্শকাতর মনে হয়েছে। ধরুন, কোন ব্রাাজিল সাপোর্টারের কোন কাজের সমালোচনা করলে, বাকিরা ভেবে নেয় আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক (এবং Vice Versa),

এই খবরটা পড়ে আর ছবি দেখে খানিকটা অবাক হয়েছি। তাও ছবিতে দেখলাম একজন তিনহাজার ফুট পতাকার পাশে একটা ছোট হলেও বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে এসেছে। ভারত-পাকিস্তান ও বিশ্বকাপে খেলে না, এই দুই দেশের লোকেরা পতাকা বিষয়ে কি করে সেটা জানা নেই।

আপনার হয়ত চোখে পড়েনি, পতাকা নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম কিছুদিন আগে। পড়ে দেখার আমন্ত্রণ রইল।
বড় বড় পতাকা নিয়ে ছোট ছোট তিনটা গল্প

ভাল থাকুন, শুভেচ্ছা হাসি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কেউ ভাবলে ভাবুক, তবু বলতেই হবে। এরকম হর-হামেশা ট্যাগিং তো নতুন কিছু না। যেকোনো ব্যাপারেই একটা শক্ত অবস্থান নিলে এরকম মন্তব্য শুনতেই হবে।

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

এখন থেকেই সঠিক পরিকল্পনা আর বিনিয়োগ করলে আগামী বিশ-পঁচিশ বছর পরের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ অবশ্যই সম্ভব।

গোঁসাইবাবু

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অসম্ভব না একেবারেই। ফুটবল অনেক বিচারেই টাকা এবং পেশির খেলা, কিন্তু তবুও পরিকল্পনার ভূমিকা আছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ হলো বেলজিয়াম। মাত্র ১১ মিলিয়ন জনসংখ্যা এবং ৩৪টি পেশাদার ফুটবল দলের দেশ বেলজিয়াম বিশ্বমঞ্চে পিছিয়ে পড়ছিলো। সেটা উপলব্ধি করে তারা খুব সুচারু পরিকল্পনা করে, এবং তার ফলশ্রুতিতে এক প্রজন্মের ব্যবধানে তারা বিশ্বের অন্যতম সেরা দলে পরিণত হয়েছে। কেউ বিস্তারিত জানতে চাইলে এই প্রতিবেদনটা পড়তে পারেন

নীড় সন্ধানী এর ছবি

একসময় ক্রিকেট ছিল বড়লোকদের খেলা, ফুটবল গরীবের। হাওয়া এখন ক্রিকেটের দিকে। শুধু হাওয়া না, বাস্তবতাও বলে তাই। ফুটবলে শারিরীক সক্ষমতার একটা বিশাল ভূমিকা আছে বলে ওই জায়গায় বাংলাদেশ বিশ্বমাপের দল হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ক্রিকেটে শারিরীক সক্ষমতার চেয়েও ব্যক্তিগত নৈপূণ্যতাই প্রধান। তাছাড়া পৃথিবীর ১০০ দেশও হয়তো ক্রিকেট খেলে না। কিন্তু ফুটবলে লাথি মারে দুইশোর বেশী দেশ। তাই ওখানে রেটিং গড়ে বাংলাদেশ টিকে থাকতে পারে সীমিত সামর্থ্য দিয়েও। ফুটবল নিয়ে সেরকম কোন আশাবাদ করা যায় না।

কিন্তু অন্য দেশের পতাকা নিয়ে আমরা যা করি, সেটার নাম হুজুগ। বাঙালী সেই মুষ্টিমেয় সৌভাগ্যবান কয়েকটি জাতের একটা যারা চরম দুঃসময়কে কাঁচকলা দেখিয়েও হুজুগে নাচে মেতে থাকতে পারি। এটাকে মূর্খামি মনে হয় মাঝে মাঝে, আবার মাঝে মাঝে মনে হয় এই যে পেটে খিদা নিয়েও ফূর্তি করার যে আমেজ বাঙালীর আছে, সেটা কি একেবারে মূল্যহীন? বস্তির ছেলেরাও পয়সা জমিয়ে পতাকা পানায়। এই উৎসাহের উৎস কী? কেউ কী জানে?

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তাহসিন রেজা এর ছবি

আপনি-আমি ছাড়া কেউ নাই এই দেশটাকে মনে রাখার জন্য।

সেই অর্থ দিয়ে কিছু ফুটবল কিনে বস্তিতে বিলিয়ে দিন বরং। বিশ্বকাপ দেখার জন্য খোলা জায়গা ভাড়া না নিয়ে বাচ্চাদের একটু খেলার জায়গা দিন বরং। অন্য দেশের খেলা নিয়ে ঝগড়া-হাতাহাতি না করে বরং আপনার উঠানে বল উড়ে এলে বাচ্চাগুলোকে একটু কম বকা দিন। আপনার কর্পোরেট অর্থায়নে ভিনদেশের খেলা নিয়ে মাতামাতি না করে বরং সেই টাকায় একটা ফুটবল অ্যাকাডেমি খুলুন, নিজেকে প্রশ্ন করুন কেন মালয়েশিয়া থেকে ভারত পর্যন্ত সব দেশে শীর্ষ ফুটবল দলগুলোর অ্যাকাডেমি থাকলেও বাংলাদশে নেই।

সহমত।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সেদিন ফেসবুকে কে জানি মারাদোনার বাইসাইকেল কিকের একটা ভিডিও দিলো। তো, সেই প্রসঙ্গে আমার পরিচিত এক আর্জেন্টাইন পোলাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে মারাদোনার বাইসাইকেল কিক সম্পর্কে জানে কিনা! সে কতোক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে চায়া থাকলো, তারপর জবাব দিলো, বাইসাইকেল কিক কী? মারাদোনা এই কিক মারতে পারতো!

ছেলেটা নেহায়েত ভদ্রলোক। তাই মনে মনে বললাম, হালায় মদন। আমাদের গ্রামের আমির আলির পোলা পাগলা আনার আলিও মারাদোনার বাইসাইকেল, মোটর সাইকেল, ট্যাক্সি, বাস, বিমান, রকেট সব রকমের কিকের খোঁজ রাখে এই হালায় মারাদোনার দেশের লোক হইয়াও সে কোন কোন কিক মারতে পারে সেই খবরই জানে না! ফাউল জানি কোনহানকার!

শুধু তাই না, কয়দিন আগে মহা উত্তেজিত হয়া বলে ফেলছিলাম, আরে একবার তো আর্জেন্টিনা হাইরা যাওয়াতে আমাদের দেশের একজন সুইসাইডই খেয়ে ফেললো! সে যথারীতি চোখ কপালে তুলে খালি একটা কোয়েশ্চনই করছে, 'হোয়াই!'
আব্বে বলদের ঘোড়া, আর্জেন্টিনা যদি বিশ্বকাপেই না থাকে তাইলে আর এই জীবন রাইখা ফায়দা কী? জীবনের এই গূঢ় দর্শন আমাদের দেশের জনগণের চেয়ে বেশি কেউ বুঝে!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

মন্তব্যটা বাঁধিয়ে রাখার মতো। হাসি

কোরিয়া-জাপানে বিশ্বকাপ নিয়ে অনেক আপত্তি ছিলো। দক্ষিণ আফ্রিকায় তো বিশ্বকাপের পর স্টেডিয়ামগুলো এখন মরুভূমি। ব্রাজিলেও সেটাই হবে। আমাজন জঙ্গলের মধ্যে জনবসতিহীন মানাউসে আড়াইশ' মিলিয়ন ডলার খরচ করে স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে মাত্র চারটা খেলার জন্য। এসবের কারণে সেখানেও অনেক প্রতিবাদ চলছে। এদিকে আমরা হই-চই করে কূল পাই না।

জন অলিভারের এই অংশটা দেখতে পারেন।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

যে টাকা দিয়ে ভিনদেশের পতাকা বানাচ্ছেন, সেই টাকা দিয়ে কি পারেন না একটা অসহায় পথাশিশুকে জামা কিনে দিতে? তার মুখে একটু হাসি ফোটাতে? খুব কামড়ায় যদি, তাহলে নাহয় আপনার প্রিয় দলের জার্সিই কিনে দিন একটা!!!

____________________________

এক লহমা এর ছবি

চলুক
ফুটবল অ্যাকাডেমিটা হওয়া নিশ্চয়ই দরকার। তার সাথে দরকার, যেমন আপনি বলেছেন, অন্ততঃ এইটুকু আশা করতে পারা যে নিজের দেশ ও পারবে খেলাটার সর্বোচ্চ পর্যায়ে অংশ নিতে, আজ নয় ঠিকই, কিন্তু একদিন, একদিন অবশ্যই।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

"বিশ্বকাপ কারলিংঃ একদিন আমরাও" সম্ভবত "বিশ্বকাপ ফুটবলঃ একদিন আমরাও" এর আগেই ঘটবে খাইছে
কারলিং কি জিনিশ সেটা এখানে দেখে আসা যেতে পারেঃ

http://www.youtube.com/watch?v=3KswO6ReHs8

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কারলিং কী খেলা জানি সেটা। কানাডায় এত এত বাঙালি, হয়ে যেতেও পারে ঐটা আগে। দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ফুটবলে সমগ্র এশিয়া মহাদেশই কেমন জানি পিছিয়ে, আমাদের বিশ্বকাপ খেলার আশাটা মনেহয় একটু বেশী হয়ে যাচ্ছে।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।