ছোটোবেলা থেকে শুনে বড় হয়েছি, যে দেশে গুণীর কদর নেই সেই দেশে নাকি গুণী জন্মায় না। কথাটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষিত মানুষজনের কার্যকলাপে বিশ্বাসটুকু ধরে রাখা দুষ্কর। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে ৩০ লক্ষ প্রাণ বিসর্জনে আমাদের যত না ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে হয়তো বেশি ক্ষতি হয়েছে ১৯৭১-এর ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি হত্যা দিবসে। নয়তো শিক্ষিত, সুশীল, বুদ্ধিজীবি, ইত্যাদি নামধারী কিছু ফাঁকিবাজ ও মেরুদণ্ডহীন মানুষের দৌরাত্ম্য থেকে বেঁচে যেতাম আমরা। এই বিরক্তি এবং বিবমীষার প্রেক্ষাপট হলো বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশি সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের সমর্থনে প্রায় ৫০ জন বুদ্ধিজীবির যৌথ বিবৃতি।
এই তালিকায় যেই নামগুলো আছে, তাঁদের অনেকেই নিজেকে পরিচয় দেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হিসাবে। তাঁরা কেউ অধ্যাপক, কেউ সাংবাদিক, কেউ মানবাধিকারকর্মী, এবং প্রত্যেকেই নিজ কর্মক্ষেত্রে হোমড়া-চোমড়া কেউ। এঁরা দেশ-বিদেশে পরিচিত, এঁরা বিভিন্ন পত্রিকা ও গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তবুও তাঁরা কোনো প্রকার বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আদালতের প্রতীকী শাস্তির প্রকাশ্য সমালোচনা করেছেন। এই বিবৃতির মাধ্যমে তাঁরা প্রমাণ করেছেন যে তাঁরা প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও গোষ্ঠীতন্ত্রের ঊর্ধ্বে নন। এই গোষ্ঠীতন্ত্র নতুন কিছু না। ‘আমার দেশ’ পত্রিকার মাহমুদুর রহমান বা ‘অধিকার’-এর আদিলুর রহমানের ক্ষেত্রেও আমরা এটাই দেখেছি। একজনের পত্রিকা সাম্প্রদায়িক খুনাখুনির উৎসাহ দিয়েছে, টার্গেট করা লোকজনের নাম-ছবি প্রথম পাতায় ছেপেছে। আরেকজনের তালিকায় নাম দেওয়া মুর্দা দেড় বছর পরে হেঁটে বেড়াচ্ছে, ওদিকে তাঁরা বিদেশে পুরষ্কার নিচ্ছেন। এঁদের বেলায় যারা শক্ত ভাষায় সমালোচনা করতে পারেন নাই, সেই বুদ্ধিজীবিরা যে ডেভিড বার্গম্যানের সমালোচনা করবেন, সেই আশা করাটাই হয়তো ভুল ছিলো আমাদের।
কিছু বুদ্ধিজীবি যেহেতু নিজের নাম স্বাক্ষর করে ডেভিড বার্গম্যানকে সমর্থন জানিয়েছেন, সেহেতু এই মুহূর্তে তাঁরাও ডেভিড বার্গম্যানের মিথ্যাচার ও অপকর্মের ভাগিদার। সাম্প্রতিক সময়ে ডেভিড বার্গম্যানের কিছু বক্তব্য এই ব্লগ পোস্টে তুলে ধরছি। এগুলো সম্পর্কে সবার জানা থাকা প্রয়োজন। আশা করি আলোচ্য বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে দাবি করা ব্যাক্তিবর্গও নিজেদের সমর্থন পুনর্বিবেচনা করবেন।
ব্লগ, ফেসবুক, টুইটারের চ্যাংড়া পোলাপান ডেভিড বার্গম্যানকে আদর করে জাতির দুলাভাই ডাকে। তিনি আতা-সংবিধান ডঃ কামাল হোসেনের জামাই, ব্যারিস্টার সারা হোসেনের স্বামী। ১৯৯০-এর দশকে ইংল্যান্ডে সাংবাদিকতা করার সময় তিনি ‘ওয়ার ক্রাইমস ফাইল’ নামে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজে জড়িত ছিলেন। সেই বিখ্যাত অনুষ্ঠানের কথা আমরা অনেকেই জানি, আমার বয়সী অনেকে সেই সময়েই বুদ্ধিজীবি হত্যার কারিগর চৌধুরী মুঈন উদ্দীনের নাম জানতে পারি। এর আগে ১৯৯০-র দশকের শুরুতে ডেভিড বার্গম্যান বিভিন্ন পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি করেন। তখনও পর্যন্ত তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা হিসেবে ৩০ লক্ষই লিখেছেন।
অতি সম্প্রতি ডেভিড বার্গম্যান এই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। যদিও তাঁর পূর্বপরিচিত সবাই ১৯৯০-এর দশকের ডেভিড বার্গম্যানের স্মৃতি বুকে নিয়েই বসে আছেন। যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিচারকার্য নিয়ে তাঁর আড়াই শতাধিক ব্লগ পোস্টের একটিতে বিভিন্ন গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি দাবি করেন যে মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হওয়ার সরকারি পরিসংখ্যান একটি অতিরঞ্জন। অত্যন্ত কৌশলে লিখিত সেই ব্লগ পোস্টটি তিনি বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করেছেন, সেই ব্লগ পোস্টকে ভিত্তি করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় জামায়াত-সমর্থকদের প্রচার করা ৩ থেকে ৫ লক্ষ শহীদের কথা উল্লেখ করেছেন। একজন ইংরেজ সাংবাদিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে এই সংশোধিত সংখ্যা প্রকাশ করছেন, এই ঘটনা দেখেই অনেকে বিমোহিত হয়ে পড়েন। বাংলাদেশের কোনো পত্রিকা বা গবেষক সেই ব্লগ পোস্ট এবং রেফারেন্সগুলো খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করেন নাই, বরং ঔপনিবেশিক মানসিকতার বশবর্তি হয়ে অন্ধ সমর্থন দিয়ে গেছেন। এ যেন “কর্তা কইছে চুদির ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই” অবস্থা!
ডেভিড বার্গম্যানের হাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পুনর্লিখিত হতে দেখা প্রৌঢ়-বৃদ্ধ প্রজন্মের জন্য তেমন কোনো ব্যাপার না। তাঁরা খুশি মনে তাঁর বন্ধুতা চেয়েছেন, বিনা যাচাইয়ে সব কথা গিলেছেন। তরুণ প্রজন্ম এত নির্বোধ বা মেরুদণ্ডহীন না, তাই তারা ডেভিড বার্গম্যানকে বিভিন্ন ভাবে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। বিশেষত ২০১৩-র শুরুর দিকে শাহবাগ আন্দোলনের পর অনেকেই মনোযোগী হয় ডেভিড বার্গম্যানের লেখালেখির ব্যাপারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাই খুন হওয়ার পর তিনি নিশ্চুপ, বিচারপতির কম্পিউটার থেকে সাক্ষীদের গোপন তথ্য চুরি করার ব্যাপারে তিনি উৎফুল্ল, কিন্তু ওদিকে ‘দৈনিক সংগ্রাম’-এর গপ্পো অনুসারে সুখরঞ্জন বালি-কে নিয়ে সুবিশাল অন্তর্ধান রহস্য ফেঁদে বসার ব্যাপারে তিনি অগ্রণী। এই প্রসঙ্গে বিভিন্ন অসংগতি উল্লেখ করে একটি অনুসন্ধানী লেখা প্রকাশ করেন ব্লগার ওমর শেহাব, এর জবাবে ডেভিড বার্গম্যানের লেখা শুরুই হয় আইনী হুমকি দিয়ে। তাঁর এই হুমকির বিস্তারিত জবাব দেওয়ার পর তা নিয়ে কোনো প্রতিউত্তরও তিনি করতে পারেন নাই। শুধু তাই না, ডেভিড বার্গম্যানকে নিজের ব্যাক্তিগত ফেসবুকে সমালোচনা করায় উনি প্রবাসী শিক্ষক এবং 'সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চ'-এর ডঃ রায়হান জামিলকে চাকরিক্ষেত্রে অভিযোগ করার হুমকিও দেন। যাঁরা ডেভিড বার্গম্যান এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে এত উচ্চকিত, তাঁরা কি এর পরেও সমর্থন জানাচ্ছেন তাঁকে?
এই প্রবণতা নতুন কিছু না। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় এবং মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা নিয়ে ডেভিড বার্গম্যানের করা দাবিগুলোর অসংগতি তুলে ধরে ব্লগার-টুইটারুদেরও তিনি এভাবেই হাইকোর্ট দেখিয়ে উড়িয়ে দেন। কাউকে কাউকে তো বলেন মূর্খের মতো কথা না বলে পড়াশুনা করতে। যাদের প্রতি তিনি এই উন্নাসিকতা দেখিয়েছিলেন, তারা এই প্রজন্মের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। কেউ এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষায় স্ট্যান্ড করা ছাত্র-ছাত্রী, কেউ বুয়েটে সেরা ছাত্র, এবং সবাই প্রবাসের সেরা বিদ্যাপীঠে অধ্যায়নরত। তারা বাংলাদেশের পত্রিকার সম্পাদক বা নামস্বর্বস্ব গবেষকদের মতো ফাঁকিবাজ না। এদের কেউ এক রাতে আদালতের পুরো রায় পড়ে ফেলেছে, কেউ গণহত্যা বিষয়ে মূল গবেষকদের সাথে যোগাযোগ করেছে। এবং দিনে দিনে উন্মোচিত হয়েছে ডেভিড বার্গম্যানের অনেক দাবির অসারতা।
এরই মধ্যে ঘটে যায় পৃথক দুইটি ঘটনা। আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করা এবং গণহত্যা নিয়ে মনগড়া কথা বলার দায়ে ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং প্রতীকী শাস্তির বিধান হয়। এর আগে বিবিসি-র মতো প্রতিষ্ঠিত সংবাদ সংস্থা ডেভিড বার্গম্যানের ব্লগ পোস্টের রেফারেন্স দিয়ে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩ থেকে ৫ লক্ষ বলে প্রচার করা শুরু করে।
এই সুদীর্ঘ ব্লগ পোস্টে ডেভিড বার্গম্যানের কিছু মূল দাবির (ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত) ত্রুটি তুলে ধরা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার অন্যতম বিভীষিকাময় দিক ছিলো হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের আক্রমণে সম্পূর্ণ এলাকা এবং অগণিত পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া। ২৫শে মার্চ রাতে গোপনে ধারণকৃত গণহত্যার ভিডিও থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দাখিলকৃত তথ্য-উপাত্তে এই চিত্র দেখতে পাই আমরা। এই নির্বিচার গণহত্যার কারণে নাম গুণে ৩০ লক্ষ শহীদের তালিকা উপস্থাপন অসম্ভব। প্রত্যেক গবেষক বিভিন্ন সময়ে এই কথা উল্লেখ করেছেন। হত্যাকাণ্ডের ধরণ এবং পরিমাণের কারণে জনমিতি ব্যতিরেকে নিহতের আনুমানিক সংখ্যা নিরূপণের উপায় নেই। বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন সময়ে এই নিয়ে আলোকপাত করেছেন। আমরা দুঃখের সাথে পর্যবেক্ষণ করেছি যে ডেভিড বার্গম্যানের ব্লগ পোস্টে প্রতিটি গবেষণাকেই ভুল ভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। ডেভিড বার্গম্যানের ব্লগ পোস্ট মূল গবেষকদের গোচরে আনার পর তাঁদের প্রতিক্রিয়া ছিলো – তিনি যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ ভুল। বিগত বছর দেড়েক ধরে এই ত্রুটিগুলোর প্রতি ক্রমাগত ডেভিড বার্গম্যানের মনোযোগ আকর্ষণ করা হলেও তিনি তা সংশোধন করেননি। শুধু তাই না, কিছুদিন আগ পর্যন্ত তিনি গণহত্যার সংখ্যা নিয়ে ডঃ আর জে রামেল-এর ‘১৫ থেকে ৩০ লক্ষ’ হিসাবকে সজ্ঞানে উপেক্ষা করেন। বোধ করি এই অনুমান তাঁর নিজস্ব এজেন্ডার সাথে সাংঘর্ষিক বলেই তিনি তা এড়িয়ে গেছেন। আদালতের শাস্তির সময় ঘনিয়ে আসার কিছুদিন আগে তাঁর সুর বদলায়, এবং রায়ের পর তিনি এই তথ্যগুলোও তাঁর ব্লগে সংযোজন করেন।
উল্লেখ্য – ডেভিডঃ বার্গম্যানকে সমর্থন যোগানো বিদ্বান ব্যাক্তিবর্গের কেউ তাঁর এই দাবিগুলো খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করেননি, এবং ডেভিড বার্গম্যানও বিদেশি পত্র-পত্রিকায় এই সংশোধনির কথা লিখে জানাননি। শুধু তাই না, এই ফাঁকিবাজ বিদ্বান গোষ্ঠি অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের সুযোগ পেলেই সমালোচনা করেছেন ডেভিড বার্গম্যানকে উৎপাত করার জন্য। বিশেষত ‘ঢাকা ট্রিবিউন’-এর সম্পাদক জাফর সোবহান তো মূল পাতায় সম্পাদকীয়ই লিখে বসলেন তাঁর দুলাভাইয়ের সমর্থনে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন ব্যাক্তি, অতীতে শর্মিলা বোস সহ অনেকের সমালোচনা করে কলম ধরেছেন, কিন্তু স্রেফ আত্মীয় বলে ডেভিড বার্গম্যানকে বিনা যাচাইয়ে সমর্থন দিলেন। এটা অকল্পনীয় যে একজন ব্যাক্তি শর্মিলা বোসের শত শত পৃষ্ঠার বই পড়ে জবাব লিখতে পারলেন, কিন্তু ডেভিড বার্গম্যানের ব্লগের একটি লেখাও না পড়ে এবং না যাচাই করে তাঁকে সমর্থন দিয়ে ঢাল হিসাবে এগিয়ে এলেন। তাছাড়া ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে সুশীল-শিক্ষিত লোকদের আড্ডায় বিনা যাচাইয়ে বার্গম্যান-বন্দনা চালু আছে। মুখে মুখে মুক্তচিন্তার কথা বলা অনেকেই এসব ফোরাম থেকে তাঁর সমালোচকদের গণহারে বিতাড়ণ করেন। অথচ এই চেহারাগুলোকেই সারা বছর জুড়ে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গালভরা বুলি আওড়াতে।
এই হলো আমাদের সমাজের উঁচু তলার অবস্থা। এখানে শিক্ষা, বিবেক, এবং চেতনার চেয়ে আত্মীয়তা এবং ব্যাক্তিপরিচয়ের দাম বেশি।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে কী পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে সেই বিষয়ে একেবারেই যে কোনো পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা নেই তা না। নাম ধরে, মাথা গুণে করা গবেষণা আছে। সেই গবেষণা বিদেশিদের করা, অতএব সরকারি দলিল বলে খারিজ করে দেওয়ার উপায় নেই। সেই গবেষণা আন্তর্জাতিক ভাবে প্রকাশিত, তাই সেটা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। সেই গবেষণায় জড়িতদের বাংলাদেশ সরকার পুরষ্কৃত করেছে তাঁদের অবদানের জন্য, তাই একে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলার সুযোগ নেই। সেই গবেষণাটি হয়েছিলো ডঃ লিংকন চেন-এর নেতৃত্বে তদানীন্তন ‘কলেরা হাসপাতাল’ (বর্তমানে ‘আইসিডিডিআরবি’)-এর অধীনে। এই গবেষণার রেফারেন্স ঘুরে-ফিরে এসেছে ডেভিড বার্গম্যানের লেখায়। তবে, তিনি একে আংশিক ভাবে প্রকাশ করেছেন নিজের এজেন্ডার সাথে সামঞ্জস্য রেখে। যাঁরা বিভিন্ন সময়ে ডেভিড বার্গম্যানকে সমর্থন জুগিয়েছেন, তাঁদের জন্য এই গবেষণাপত্রটি পড়া অবশ্যকর্তব্য। ডেভিড বার্গম্যানের শঠতা উন্মোচনের জন্য গবেষণাপত্রটির উপসংহার পড়াই যথেষ্ট।
মুক্তিযুদ্ধের বেশ কিছু বছর আগে থেকেই চাঁদপুর জেলার মতলব থানা এলাকার অধিবাসীদের বিস্তারিত স্বাস্থ্যগত তথ্য পর্যবেক্ষণ করা হতো কলেরা হাসপাতালে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর এই প্রক্রিয়া সাময়িক ভাবে ব্যাহত হয়। যুদ্ধশেষে গণনা করে দেখা যায় যে যুদ্ধের নয় মাসে ৮৬৮টি অতিরিক্ত/অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। গবেষকরা নির্ণয় করেন যে মুক্তিযুদ্ধের কারণে এই বাড়তি মৃত্যু ঘটেছে। মতলব এলাকার ১লক্ষ ২০ হাজার মানুষের মধ্যে ৮৬৮ জন মারা গেছেন, অতএব ঐকিক নিয়ম করলে সারা বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষের মধ্যে মারা গেছেন ৫ লক্ষ ৬ হাজার জন।
কোনো পূর্বাপর বর্ণনা না করে এই “প্রায় ৫ লক্ষ” সংখ্যাটি ডেভিড বার্গম্যান ব্যাবহার করেছেন তাঁর প্রতিটি লেখায়। কয়েক দিন আগে টেলিভিশনে ডেভিড বার্গম্যানের পক্ষে কথা বলতে এসে তাঁর স্ত্রী ব্যারিস্টার সারা হোসেনও বলেছেন যে ডেভিড বার্গম্যান যেই কথা বলেছেন সেই কথা তো ডঃ লিংকন চেন-ও বলেছেন, তাহলে ডঃ চেন-কেও শাস্তি দেওয়া হবে কি না। এই বক্তব্য হঠকারি, আপত্তিকর, এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন। এটা খুব স্পষ্ট যে ব্যারিস্টার সারা হোসেন মূল গবেষণাপত্রটি না পড়েই মন্তব্য করেছেন। আরও অনেক শিক্ষিত বুদ্ধিজীবির মতো তিনিও ফাঁকিবাজি করে গেছেন। পুরোটা না পড়ে শুধু উপসংহার পড়লেও তিনি জানতেন কেন ডঃ লিংকন চেন-এর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষকের সাথে ডেভিড বার্গম্যানের মতো প্রশ্নবিদ্ধ সাংবাদিকের তুলনা করা মূর্খতার নামান্তর।
মূল গবেষণাপত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করা আছে, যা আজতক প্রতিটি প্রকাশনায় ডেভিড বার্গম্যান বেমালুম চেপে গেছেন। একে একে সেগুলো বিবেচনা করা যাক। আন্ডারলাইন করা কথাগুলো আমার নিজের বক্তব্য নয়, বরং মূল গবেষণাপত্র থেকে কৌশলে এবং সজ্ঞানে উহ্য রাখা বক্তব্য।
ক) মতলব থানায় যুদ্ধ হয়েছিলো জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত
গবেষণাপত্রের একদম শুরুতেই বলা আছে যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এপ্রিল মাসে চাঁদপুর সদর (প্রায় ১৩ মাইল দূরবর্তী) পর্যন্ত আসতে পারলেও জুন মাসের আগে মতলব থানায় আসতে পারেনি। গবেষণাপত্রেই উল্লেখ আছে যে নভেম্বভ মাস নাগাদ মতলব থানা মুক্তাঞ্চল ছিলো। অতএব, নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের শুরু এবং শেষের সবচেয়ে বিভীষিকাময় ৪ মাস মতলব থানা হানাদার বাহিনীর কবলমুক্ত ছিলো।
খ) ১৯৭১-এর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মতলব থানায় সন্তান ধারণের হার ৪০% বেড়েছিলো
বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে এবং পরবর্তীতে শহরাঞ্চলে হানাদার বাহিনীর ক্র্যাকডাউন থেকে বাঁচতে দলে দলে মানুষ গ্রামে চলে যায়। যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে দূরে তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কারণে অনেক বেশি সন্তান ধারণ হয় সেই সময়ে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত অঞ্চলে এই দৃশ্য কষ্টকল্প ছিলো।
গ) যুদ্ধের কারণে কলেরা হাসপাতাল বন্ধ থাকায় মৃত্যুহার বেড়েছে
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মাত্র দুইটি স্থানে কলেরা ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল ছিলো। তারই একটি ছিলো মতলবে, এবং সেটি যুদ্ধের কারণে বন্ধ থাকায় মানুষ চিকিৎসাবঞ্চিত ছিলো। এর কারণে যেই অতিরিক্ত মৃত্যু, তার জন্য যুদ্ধকেই দায়ী করেন গবেষকরা। দশ বছরের অধিক সময় ধরে সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা পাওয়ার পরেও মতলব থানায় এই দুরবস্থা হয়। বাংলাদেশের যেসব স্থানে এই রকম চিকিৎসা, সচেতনতা, বা স্বাস্থ্যশিক্ষা ছিলো না, সেখানে অবস্থা আরও করুণ হওয়াই স্বাভাবিক।
ঘ) যুদ্ধের পর বাংলাদেশে বসন্ত রোগ ফিরে আসে
গবেষণাপত্রে উল্লেখ আছে যে ১৯৬৯ সাথে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানকে বসন্ত-মুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়। যুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া হিসাবে ১৯৭২ সালে হাম ও বসন্ত রোগের মহামারী দেখা যায়। এই স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় এবং এর ফলে ১৯৭২ সালে মৃত ব্যাক্তিদেরও যুদ্ধের কারণে নিহত বলে ধরা উচিত বলে গবেষকরা উল্লেখ করেন। তাঁরা আরও বলেন যে যুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি হয়েছিলো, এবং এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম কলেরা মহামারী দেখা যায়।
ঙ) এটি শুধুমাত্র একটি এলাকার তথ্য
বিজ্ঞানের ছাত্র মাত্রেই জানে যে একটি বিন্দু থেকে সরলরেখা আঁকা যায় না। কমপক্ষে দুইটি বিন্দু প্রয়োজন, এবং সেই রেখা ঠিক দিকে কি না তা নিশ্চিত করতে তৃতীয় আরেকটি বিন্দু প্রয়োজন। এই গবেষণা শুধু একটিমাত্র বিন্দু, যার স্পষ্ট উল্লেখ নেই। তিনি শুধু লিখেছেন যে গণহত্যার উপর শুধুমাত্র একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে, সেখানে ৫ লক্ষ শহীদের কথা উল্লেখ আছে।
সুস্পষ্ট ভাষায় এবং অরাজনৈতিক ভাবে লিখিত এই বক্তব্যগুলোর কোনো উল্লেখ পাওয়ার যায়নি ডেভিড বার্গম্যানের কোনো লেখায়। ইংরেজিতে lying through omission (তথ্য গোপন করার মাধ্যমে মিথ্যা বলা) বলে একটি কথা আছে, তারই সুচারু প্রয়োগ দেখতে পারি আমরা তাঁর ব্লগ পোস্টে। অন্যান্য রেফারেন্স নিয়েও অনুরূপ ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। পরিতাপের ব্যাপার হলো, তাঁকে সমর্থন দেওয়া কোনো একজন শিক্ষিত, সুশীল, জাতিরবিবেক এই গবেষণাপত্রের একটি পাতাও পড়ে দেখার ফুরসত করতে পারেননি। এই শিক্ষা ধুয়ে কি আমরা পানি খাবো?
যাঁরা সাংবাদিকতার মতো পেশায় নিয়োজিত আছেন, তাঁদের দায়িত্ব ছিলো এই বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করা। আমরা সেটাও দেখতে পাইনি আজ পর্যন্ত। আমার নিজের বাড়ি মতলব থানায়, তাই আমি সেই এলাকার কিছু গল্প শুনেছি যুদ্ধের সময়ের। আমার দাদির কাছে জেনেছি যে সারা বাংলাদেশের সব আওয়ামী লীগ এমপি-র বাড়ি পুড়িয়ে দিলেও মতলব থানায় আমার দাদা (বাবার বড় মামা) মরহুম ফ্লাইট লেফটেনেন্ট এ বি সিদ্দিকের বাড়ি অক্ষত ছিলো। আমার বাবার কাছে শুনেছি আর্মি আসবার ভয়ে তারা কীভাবে রাস্তা কেটে রেখেছিলো। শুনেছি রিকশায় চড়ে আসতে আসতে আর্মি কীভাবে রাস্তার ধারে ক্ষেত-খামারে গুলি ছুঁড়েছে। শুনেছি তার টুইন-ওয়ান রেডিওর কথা, যেটা দিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সম্প্রচার শুনতো, যেটা মেরামত করতে দেওয়া দোকানটা পুড়িয়ে দিয়েছিলো আর্মি। মতলব এলাকার ইতিহাস সবিস্তারে লিপিবদ্ধ বই হাতে পেয়েছি আমার বাবার সূত্রে, যেখানে লেখা আছে ঐ এলাকার সব শহীদের নাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৪ জন শহীদ হয়েছেন আর্মির হাতে, যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ হয়েছেন ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। এই শহীদদের তালিকা লিপিবদ্ধ আছে ১৯৯৮ সালের ‘দীপ্তকণ্ঠ সাময়িকী’-তে।
গবেষণাপত্রের উহ্য রেখে দেওয়া অংশ এবং বাড়তি তথ্যগুলো থেকে বুঝতে কষ্ট হয় না যে যুদ্ধের বিভীষিকার নিকৃষ্টতম রূপ থেকে মতলব থানা সুরক্ষিত ছিলো। বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ ভাগের এক ভাগ আয়তনের মতলব থানার অনুপাতেই কম করে ৫ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। যেসব এলাকায় একেক বেলায় একই পরিবারের সব সদস্য শহীদ হয়েছেন, বা যেখানে ট্যাংক-মর্টার-যুদ্ধবিমান-মেশিনগান নিয়ে আক্রমণ হয়েছে, বা যেখানে সমগ্র এলাকা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে, সেই স্থানের কোনো তথ্যও কোনোদিন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ভারতে আশ্রয় নেওয়া যেই শরণার্থি পিতা তাঁর মৃত ছেলের লাশ শুইয়ে এসেছেন চাটাই ঘেরা আরও অনেক লাশের উপর, তাঁদের কোনো তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এই একই মেথডোলজি/পদ্ধতি অনুযায়ী সেই অঞ্চলের হিসাব রাখতে পারলে যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা অনেক গুণ বেশি হবে।
এই নিষ্ঠুর বাস্তবতা বুঝবার মতো বুদ্ধি অনেকেরই আছে, তবে তা স্বীকার করার বোধ সবার নেই। এটি উপলব্ধি করার ক্ষমতা আছে বলেই ডঃ লিংকন চেন একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় গবেষক, এবং এই প্রসঙ্গে এজেন্ডাভিত্তিক লেখালেখির কারণে ডেভিড বার্গম্যান জামায়াত-তোষণের অভিযোগে অভিযুক্ত।
পৃথিবীতে যত ধরনের অপরাধ আছে, তার মধ্যে ধর্ষণ এবং গণহত্যা নিকৃষ্টতম। এই অপরাধগুলোর পুনরাবৃত্তি রোধে উন্নত বিশ্বে কঠোর আইন আছে, সেখানে সংশোধনবাদি আচরণের জন্য আজও হরদম আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাকস্বাধীনতা বা ব্যাক্তিস্বাধীনতার স্তম্ভের উপর দাঁড়ানো সেই সমাজে কেউ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় ৭০ বছর পরেও একটা কটাক্ষমূলক কথা বলতে পারে না। কেউ ইহুদিবিদ্বেষী বক্তব্য দিতে পারে না, কেউ গণহত্যা অস্বীকার তো দূরে থাকা এর মৌলিক ও প্রতিষ্ঠিত উপাত্তগুলো নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে না। পাশ্চাত্যে স্বদেশের পতাকার ছবি আঁকা অন্তর্বাস পরে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো যায়, কিন্তু গণহত্যা নিয়ে কোনো প্রকারের ফাজলামি বরদাস্ত করা হয় না। এই সীমার সাথে মুক্ত প্রকাশের কোনো সংঘর্ষ নেই।
বাংলাদেশে যাঁরা কথায় কথায় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার কথা তোলেন, তাঁরাই এই বিষয়টা জেনে না জানার ভান করেন। এই জ্ঞানপাপীরা ভালো করেই জানেন, পাশ্চাত্যে বসে হলোকস্ট নিয়ে একটা বাঁকা কথা বললে এক সপ্তাহ পর পান-বিড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতে হবে। তাঁদের কারও ধৃষ্টতা হবে না “হলোকস্টে ৬০ লক্ষ ইহুদি মারা গেছে বলে দাবি করা হয়, তাদের তালিকা দেখাতে হবে” বা “হলোকস্টে ৬০ লক্ষ ইহুদি মারা গেছে বলে দাবি করা হয়, তবে আমার মতে এইটা মাত্র ৬ লক্ষ” বা “হলোকস্টের অল্টারনেট ন্যারেটিভ বিবেচনা করলে আমরা উন্নত জাতি হবো না”-এর মতো বক্তব্য দেওয়ার। এরকম অবারিত স্বাধীনতা পৃথিবীর কোথাও নেই, এবং বাংলাদেশেও থাকা উচিত না। শিক্ষিত শ্রেণীর উন্নাসিকতা, সুবিধাবাদ, ফাঁকিবাজি, আত্মীয়তন্ত্র, এবং যেকোনো মূল্যে নাহক কাজ করার খায়েশের কারণে বাংলাদেশে এখনও গণহত্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত গবেষণা নিয়েও এরকম ফাজলামি করা যায়, সেই ফাজলামি করার পর বড় গলায় কথা বলা যায়, এবং এক ডাকে আরও কিছু ডিগ্রীধারী ধামাধরা হাজির করে ফেলা যায় সমর্থন বাড়ানোর জন্য।
চাষা-মুটে-মজুরের এই দেশ এই সব শিক্ষিত, ব্রিটেন-আম্রিকাপ্রেমী, ঔপনিবেশিক মানসিকতায় আক্রান্ত শিক্ষিত লোককে ছাড়া স্বাধীন হয়েছে, এবং এদের ক্রমাগত মেরুদণ্ডহীনতার পরও এগিয়ে যাবে। এই দেশ কোনো সম্পাদকীয় বা সুললিত ভিন্ভাষার না, এই দেশ “জয় বাংলা”-র। এই দেশ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ত্যানা পেঁচিয়ে বিশ্বপ্রভুর প্রিয়পাত্র হওয়ার না, এই দেশ নিজের হারানো পরিজনের কথা প্রত্যয়ের সাথে স্মরণ করার। মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা ৩০ লক্ষ শহীদকে অসম্মান করাকে সায় জানিয়ে যেই সব শিক্ষিত ব্যাক্তি আজ বিবৃতি দিয়ে জাতে উঠেছেন, ইতিহাসের বিষ্ঠালয়ে তাঁদের স্থান হবে এই ফাঁকিবাজির দায় মেটাতে।
গণহত্যা নিয়ে মিথ্যাচারকারী ডেভিড বার্গম্যানের প্রতি সমর্থন জানানো ব্যাক্তিবর্গের তালিকা জুড়ে দিলাম লেখার শেষে। এই লিংকে পাবেন তাঁদের বিবৃতিঃ http://www.sacw.net/article10212.html
আগামী দিনগুলোয় তাঁরা সুযোগ বুঝে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিভিন্ন রকম বক্তব্য দেবেন অবশ্যই। সেই সময়ে অনুগ্রহ করে তাঁদের জিজ্ঞেস করবেন ডেভিড বার্গম্যান যখন গণহত্যা নিয়ে মিথ্যাচার করছিলেন, তখন একটা পাতা পড়ে এবং আধা ঘন্টা সময় নিয়ে একটা প্রতিক্রিয়ার লেখার দায়িত্বে ফাঁকি দিয়ে তাঁরা কোন গুপ্তকেশ উৎপাটনে ব্যাস্ত ছিলেন।
1. Dr. Shahdeen Malik, Advocate, Supreme Court
2. Khushi Kabir, Women’s Rights Activist
3. Rasheda K. Choudhury, Development Practitioner, Former Adviser to the Caretaker
Government
4. Dr. Ali Riaz, Professor and Chair, Department of Politics and Government, Illinois State
University, USA
5. M. Hafizuddin Khan, Chairman, Shujon
6. Dr. Binayak Sen, Academic
7. Imtiaz Ahmed, Professor of International Relations, University of Dhaka
8. Shireen Huq, Women’s Rights Activist
9. Dr. Zafrullah Chowdhury, Health Activist
10. Ali Ahmed Ziauddin
11. Dr. Badiul Alam Majumder, Secretary, Sushasoner Jonno Nagorik
12. Syeda Rizwana Hasan, Advocate, Supreme Court
13. Dr. Perween Hasan, Professor
14. Dr. C R Abrar, Professor of International Relations, Dhaka University and President,
Odhikar
15. Dr. Firdous Azim, Academic
16. Dr. Amena Mohsin, Academic
17. Farida Akhter, Executive Director, Narigrantha Prabartana
18. Mohiuddin Ahmed, Publisher Emeritus
19. Dr. Faustina Pereira, Human Rights Advocate
20. Dr. Bina D’Costa, Peace and Conflict Specialist, Australian National University
21. Shaheen Akhter, Writer
22. Afsan Chowdhury, Researcher
23. Dr. Asif Nazrul, Academic and Political analyst
24. Rahnuma Ahmed, Writer
25. Dr. Shahidul Alam, Photographer
26. Leesa Gazi, Cultural Activist
27. Dr. Dina M. Siddiqi, Academic
28. Anu Muhammad, Professor of Economics, Jahangirnagar University
2
29. Lubna Marium, Cultural Activist
30. Dr. Naila Zaman Khan, Professor and Head, Department of Pediatric Neuroscience,
Bangladesh Institute of Child Health, Dhaka Shishu Hospital
31. Zakir Hossain, Human Rights Activist
32. Tahmima Anam, Writer
33. Arup Rahee, Singer, Writer and Activist
34. Muktasree Chakma Sathi, Activist
35. Dr. Zarina Nahar Kabir, Associate Professor, Karolinska Institute, Stockholm, Sweden
36. Md. Nur Khan Liton, Human rights activist
37. Dr. Samia Huq, Associate Professor, Department of Economics and Social Sciences, BRAC
University
38. Dr. Shahnaz Huda, Academic
39. Shabnam Nadiya, Writer
40. Mahmud Rahman, Writer
41. Nasrin Siraj Annie, Anthropologist and film maker
42. Seuty Sabur, Academic
43. Anusheh Anadil, Founder of Jatra, singer/song writer and activist
44. Sarah Shehabuddin, Academic
45. Ilira Dewan, Writer and Activist
46. Tibra Ali, Editor at Alal O Dulal and Fellow at Perimeter Institute for Theoretical Physics
47. Delwar Hussain, Anthropologist, University of Edinburgh
48. Masud Khan, Consultant
49. Rezaur Rahman, Activist
50. Ziaur Rahman, Advocate
51. Hana Shams Ahmed, Writer and Activist
মন্তব্য
খুশী কবির নাকি এই বিবৃতি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন [সূত্র]।
একান্নভূক বাকি পঞ্চাশ জনের প্রতিও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণের আহ্বান রইলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের নিয়ে কোনো হাবিজাবি কথা বলে কোনো অগামগা সাংবাদিক প্রথম বিশ্বে শাস্তি পেলে তার সপক্ষে দাঁড়িয়ে টুঁ শব্দ করার সাহস আপনাদের হবে না, আমরা জানি। নিজের দেশের বুকে বসে দাড়ি ওপড়ানো পর্যন্তই আপনাদের দৌড়। বিবৃতিতে সইসাবুদের আগে একটু লেখাপড়া করেন। যে দেশে শিক্ষিত লোকেরা এমন মূর্খ, সে দেশে মূর্খ লোকেরা না জানি কেমন।
ডেভিড বার্গম্যানের উচিত প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে লিংকন চেন-এর গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ অংশ চেপে যাওয়ার ব্যাপারটা স্বীকার করা।
নাম ধরে ধরে দেখলে, এদের একটা বড় অংশ এক আমলে তাঁদের বন্ধু-পরিজন। এঁদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ অনেক বড়, কিন্তু ব্যাক্তিগত বন্ধুতা তার চেয়েও বড়। আরেকটা অংশ আছেন যাঁরা ডাব্লু-ডাব্লু-এফ এর মতো পাতানো বুদ্ধিবৃত্তিক ঝগড়া-তর্ক করেন, একে অপরের পিঠ চুলকে দেন। এঁদের কাছে প্রত্যাশা নেই কোনো।
গুরুত্বপূর্ণ লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
গুপ্তক্যাশের কারবারীরা এমন লেখা পড়ার সময় পায় না। পড়লেও মত বদলাবে না।
জাতীর দুলাভাইর বউ যখন ড চেন এর কথা বল্লেন আগ্রহ জেগেছিলো নামটা নিয়ে। জানতে পারলাম সেটা। আবারও ধন্যবাদ।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ডেভিড বার্গম্যানের হাবিজাবি লেখা নিয়ে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় কাটিয়েছি। ফেসবুকে অনেক ঝগড়া-কাইজ্জ্যা হয়েছে। লিখতে শুরু করেও শেষ হয় নাই। মনে হয়েছে, বিচার চলছে চলুক, এসব আগাছার পিছনে এত সময় দেওয়ার কিছু নাই। কিন্তু ওনার স্ত্রীর মুখে ডঃ লিংকন চেন-এর নাম শুনে এবং তারপর এই বিবৃতিবাজদের তালিকা দেখে এক দলা থুথু চলে এলো মুখে। মেজাজ খারাপ ছিলো, তাই এক টানে লিখে ফেলা।
আমার ধারণা ছিল শুধুমাত্র সুখরঞ্জন বালী-গণেশচন্দ্র সাহা কেলেংকারীর জন্যই ডেভিড বার্গম্যান হলুদ সাংবাদিকতার ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেটি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সংখ্যা নিয়ে কেলেংকারীর কারণেও হতে পারে। মানুষ একবার মরলে আর মরে না। ঠিক তেমনি একবার অমর হয়ে গেলে আর অমর হওয়া যায় না। বার্গম্যান শুধু শুধু এত কষ্ট না করলেও পারতেন।
একলা বার্গম্যান কী লিখলেন তাতে কিছু আসে-যায় না। আমাদের স্বদেশি শিক্ষিত লোকজন যে কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই ওনার লেজ ধরে ঝুলছেন সেটাই সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার।
তালিকার সবগুলা জাতের না। কিছু স্রেফ হিটখোর। চামে দিয়া বিদেশি সম্প্রীতি বাড়াইতে আসছে খোক্কসের দল!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ঐ যে বললাম -- কর্তা কইছে চুদির ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই! আজকে নিউ ইয়র্ক টাইমসেও ডেভিড বার্গম্যানের সমর্থনে সম্পাদকীয় এসেছে। ছাগু মহলে তো ফূর্তিই ফূর্তি। অথচ এরাই নিজেদের জাতীয়তাবাদী বলে দাবি করে, দেশ গেল দেশ গেল বলে রব তোলে নিয়ম করে।
এমন বিবৃতি নতুন নয়, যারা মাহমুদুর রহমান আর আদিদুলর রহমানের মতো জাতীয় মিথ্যুক-অপসাংবাদিক-ষড়যন্ত্রকারীর পক্ষে বিবৃতি দিতে পারে তারা এবং তাদের মতো আরও অসংখ্য শিক্ষিত পাপী সেই কাজ বারবার করবে এতে বিস্ময় নেই। তবে নতুন প্রজন্ম (ব্রেইন ওয়াশ/জ্ঞানপাপী পাকুমনা ব্যাতিত) ওদের মতো সুবিধাভোগী আতঁতকারী নয় যে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যে বুঝে না। বুঝার বিষয়টা আসলে দুভাবে হতে পারে, আকাশ হতে আগত ওহীর মতো, যা বিশ্বাস করতে যুক্তি-প্রমাণ লাগে না, স্বর্গের লোভে অন্ধভাবেই করা যায় এবং আরেকটি হলো যুক্তি-প্রমাণের ভিত্তিতে। যতই শিক্ষিত হোক এরা প্রথম দলে, এদের স্থান হবে একদিন ইতিহাসের সেই নিকৃষ্ট ডাষ্টবিনে।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
শেহাবের মন্তব্যে আপনি যেমন বলেছেন "একলা বার্গম্যান কী লিখলেন তাতে কিছু আসে-যায় না। আমাদের স্বদেশি শিক্ষিত লোকজন যে কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই ওনার লেজ ধরে ঝুলছেন সেটাই সবচেয়ে মর্মান্তিক ব্যাপার।" - সেইটাই।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বরাবরের মতোই ইশতিয়াক রউফীয় বিশ্লেষন ধর্মী। অসাধারণ লেখা।
ইচ্ছে করছে লিস্ট ধরে ৫১ জনের টাইমলাইনে গিয়ে লেখাটা পোস্ট করে আসি।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
প্রায় বছর দুই আগে এমন একটা দাবি জানিয়েছিলাম (‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা প্রত্যাখ্যান ও সামান্যীকরণ বিরোধী আইন’ চাই)। সময়টা ছিল গণজাগরণের। আশা করেছিলাম এই বিষয়টা নিয়ে কথা হবে। অন্য অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও এই আইনটা প্রণীত হবে। যদি সেটা হতো তাহলে আজকে ঐ আইনের আওতায় ডেভিড বার্গম্যান আর তার জ্ঞানপাপী অ্যাপোলজিস্টদের বিচার করা যেতো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মনে আছে পোস্টটার কথা। কয়েক দিন আগেই হিমু ভাইয়ের সাথে আলাপ হচ্ছিলো এটা নিয়ে।
লেখককে ধন্যবাদ, অনেক কিছু জানতে পারলাম
গুরুত্বপূর্ণ লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
আসলে এই বাঞ্চুদের চেয়ে এইসব প্রতিবাদকারীদের ধরে বিচার করা উচিত কারন এরাই বেশী ক্ষতিকর। তাঁর একটা প্রমান দেই- কিছু দিন আগে আমার এক পরিচিতজনের সাথে আমার তুমুল তর্ক হয়, তিনি আমাকে বলেন এমন কি কোন প্রমান আছে যে এই সংখ্যা ৩০ লক্ষ ? প্রত্যুত্তরে তাঁকে বলি আগে আপনি প্রমান করেন যে ৩লক্ষ। তখন তিনি এই বাঞ্চুদের প্রমান আমাকে দেন। সাথে এইও বলেন এই লোক সত্য কথা বলে শাস্তি পেয়েছে , এমনকি এটাও বলেন দেখছেন উনার শাস্তির প্রতিবাদ কারা করেছেন এরা সবাইতো আপনাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির লোক।
এই বিজয় দিবসে নতুন একখান তথ্য জানলাম (সত্যি/মিথ্যা জানিনা কেউ জানলে, জানাবেন) এই ৪৩ বছরেও জাতিসংঘ বা আমেরিকা বা দুনিয়ার কোন দেশ (একমাত্র ভারত ছাড়া) বাংলাদেশে গনহত্যা হয়েছে তার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি!!!
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি
এইসব কীটদের পেছনে আমাদের দেশের তথাকথিত 'বুদ্ধিবেশ্যা'দের বিবৃতী লগ্নী করাটা চিন্তার বিষয়। এই দলটা হঠাৎ করে কিছু করে বসে না, একটা নির্দিষ্ট প্ল্যান নিয়ে আগায়। জানিনা, এদের প্ল্যানটা কী! তবে বুকে এতটুকু সাহস আছে যে, নতুন প্রজন্ম এদের কোনো ফাত্রামিকেই চ্যালেঞ্জ ছাড়া এগুতে দেবে না।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
তারেক জিয়ার জন্য ব্যাপারটা হবে "বার্কস্বাধীনতা।"
বিশেষ্য। ইতিহাস নিয়ে যাচ্ছেতাই ঘেউ ঘেউ করার অধিকার।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
জরুরী লেখা। কিন্তু আমাদের উন্নাসিক তথাকথিত বুদ্ধিজীবি গোষ্ঠী কি সাদা চামড়ার লোক না হলে সেসব লেখাকে পাত্তা দেবেন?
এই তালিকার অনেককেই চিনি না, বা অনেকের শুধু নাম জানি। এই তালিকার সবার এক বাঃ একাধিক ছবি কি এক পোস্টের সাথে বাঃ কমেন্টে যুক্ত করা যায়?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
জনমিতির কিছুই বুঝি না, কিন্তু ড. চেন-এর এই পদ্ধতি কি আদৌ যুদ্ধে নিহতদের সংখ্যার জন্যে উপযোগী হতে পারে? একটি থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যাকে সারা দেশে এক্সট্রাপোলেট করা কি যৌক্তিক? ঢাকার চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা দিয়ে যেমন সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা যাবে না।
সহমত
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ: বিবৃতি জমা দিতে প্রথম আলোকে নির্দেশ
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের দণ্ড হওয়ার পর উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া ৫০ জনকে তাদের ‘আচরণের’ ব্যাখ্যা দিতে বলেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
নতুন মন্তব্য করুন