কয়েক দিন আগে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের ফলে সমগ্র আমেরিকায় সমকামী বিয়ে বৈধ হয়েছে। ফেসবুক ও অন্যান্য সোশাল মিডিয়ার কারণে এই সংবাদ বহুদূর ছড়িয়েছে, এবং এই রায়ের কারণে বিভিন্ন দেশ ও সমাজে সমকামিতা নিয়ে উচ্চকিত বিতর্ক এখনও চলছে। বিভিন্ন জনের মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য অনুসরণ করে দুঃখের সাথে পর্যবেক্ষণ করলাম যে আলোচনাগুলো তথ্যের অভাবে প্রায়ই অকথ্য গালিগালাজ এবং আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ায় পর্যবসিত হচ্ছে। লাইন ছাড়া ছুটে বেড়ানো সেই রেলগাড়িকে পথে আনার প্রচেষ্টা হিসাবেই এই লেখা। যেই সমাজ এবং যেই সময়ে এই রায় এসেছে, সেটার স্বরূপ না জেনে আমরা রায়ের মর্ম বুঝতে পারবো না।
আমেরিকার শাসনব্যবস্থা অঙ্গরাজ্যগুলোর (‘স্টেট') স্থানীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় (‘ফেডারেল') সরকারের মধ্যে বিভক্ত। সাধারণ অবস্থায় অঙ্গরাজ্যগুলো স্বাধীন ভাবে নিজেদের আইন তৈরি করতে পারে। এ-কারণে একেক অঙ্গরাজ্যে একই অপরাধের বিভিন্ন মাত্রায় শাস্তি আছে, করের হার একেক জায়গায় একেক রকম, ইত্যাদি। তবে, কিছু মৌলিক আইন ফেডারেল ভাবে আরোপিত, যা সব অঙ্গরাজ্য মানতে বাধ্য। উদাহরণ হিসাবে দাসত্ব বিরোধী আইনের উল্লেখ করা যায়। একটা সময় পর্যন্ত দক্ষিণের অনেক অঙ্গরাজ্যে দাসত্ব বৈধ ছিলো, কিন্তু এক পর্যায়ে তা আইন করে দেশব্যাপী নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আমেরিকার ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একটা বড় অংশ বেশ অনেক বছর ধরেই সমকামী বিয়ের অধিকার দিয়ে আসছে। অতএব, এমন নয় যে হঠাৎ করে সমকামী বিয়ের পথ পরিষ্কার হলো। এই রায়ের আগ পর্যন্ত কিছু মৌলিক অসামঞ্জস্য ছিলো, যা রায়ের পর আর থাকছে না। সেগুলো হলো –
১) একই দেশের এক অঙ্গরাজ্যে সমকামীরা বিয়ে করতে পারলেও ভিন্ন কোনও অঙ্গরাজ্যে পারতো না।
২) এক অঙ্গরাজ্যে বিবাহিত কোনও সমকামী দম্পতি ভিন্ন কোনও অঙ্গরাজ্যে গেলে সেই বিয়ে অবৈধ বলে গণ্য হতো।
উপরে যেই অসামঞ্জস্য দুটির কথা বললাম, তা যেকোনো ধরণের বিয়ের জন্যই সমস্যাজনক। ধরুন, আপনি বাংলাদেশে বিয়ে করলে তা মালয়েশিয়ায় গণ্য হচ্ছে না, বা আপনি নিউ ইয়র্কে বিয়ে করলে তা ভার্জিনিয়ায় গণ্য হচ্ছে না। এর ফলে অহেতুক দুর্ভোগ পোহাতে হবে। বিভিন্ন রকম জটিলতার কারণে আপনি স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম হবেন। সেই বিষয়গুলোই এই রায়ে নিরসন করা হয়েছে।
সমকামিতার কারণ, যৌক্তিকতা, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, এবং ধর্মীয় নির্দেশনা নিয়ে অনেক আলাপ-তর্ক হয়েছে, হচ্ছে, হবে। সেই অংশ পরবর্তীতে আলোচনা করছি। প্রথমে দেখা যাক রায়ের ফলে কী পরিবর্তন হচ্ছে সেই দিকে।
আমেরিকায় আইনের চোখে নর-নারীর বিয়ে-বহির্ভূত সম্পর্কে কোনও বাধা নেই। সামাজিক ভাবে বিভিন্ন জায়গায় একে দৃষ্টিকটূ ভাবে দেখা হয়, তবে আইনের চোখে এতে কোনও শাস্তিযোগ্য অপরাধ নেই। দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজ গৃহে, স্বেচ্ছায়, আইন অমান্য না করে যেকোনো কিছু করতে বা বলতে পারেন। এই ব্যাক্তিস্বাধীনতা সাংবিধানিক ভাবে সংরক্ষিত। প্রচলিত অর্থে আমরা একে ‘লিভ টুগেদার’ বলে জানি। একত্রে বসবাসরত কোনও ‘জুটি' নিজের মতো জীবনযাপন করতে পরবেন, তবে কিছু অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত থাকবেন। সেই অধিকারগুলো পাওয়ার জন্য তাদের বিয়ে করে একটি ‘দম্পতি'-তে রূপান্তরিত হতে হবে।
এক নজরে এরকম কিছু অধিকারের দিকে তাকানো যাক।
– বিয়েবদ্ধ দম্পতি একে অপরের নিকটতম আত্মীয় (‘নেক্সট অফ কিন’) হিসাবে স্বীকৃতি পাবেন। এর ফলে কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকলে অন্য জন তার পাশে থাকতে পারবেন।
– পারিবারিক ভাবে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বীমার অধীনে থাকতে পারবেন। এর ফলে কোনও একজনের চাকরিক্ষেত্রের স্বাস্থ্যবীমা থেকে সবাই উপকৃত হতে পারবেন।
– আয়কর দেওয়ার ক্ষেত্রে যৌথ ভাবে আবেদনপত্র জমা দেওয়া যাবে। এর ফলে পৃথক ভাবে আয়কর দেওয়ার বাড়তি খরচ বহন করতে হবে না।
– উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না। এর ফলে কোনও একজন মারা গেলে অন্যজন সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারবেন।
– বিয়ে করতে না পারার কারণে বিয়েবিচ্ছেদ, সম্পত্তির ভাগাভাগি, সম্পর্কে অবনতি হলে পারিবারিক আদালতের নিরাপত্তা, ইত্যাদির সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে না।
– পারিবারিক ছুটি থেকে বঞ্চিত হবেন না। এর ফলে কোনও একজন অসুস্থ হলে বা মারা গেলে অন্যজন ছুটি নিতে পারবেন।
– অভিবাসনের ক্ষেত্রে দম্পতি হিসাবে স্বীকৃতি পাবেন। এর ফলে কোনও একজনের কারণে অন্যজন অভিবাসন নিতে পাবেন।
– সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার পাবেন। এর ফলে দত্তক নেওয়া শিশুর নিকটতম আত্মীয়ের মর্যাদা পাওয়া যাবে, সেই শিশুটি সামাজিক ও আইনি নিরাপত্তা পাবে।
– আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার বাধ্যকতা থেকে মুক্তি। এর ফলে কোনও একজনের বিরুদ্ধে অপরজন আদালতে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য থাকবেন না, ঠিক যেমন স্বামী-স্ত্রী একে অপরের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে আইনত সুরক্ষিত।
এরকম আরও বিষয়াদি আছে যেগুলো সবই যেকোনো বিবাহিত দম্পতির জন্য সুরক্ষিত অধিকার। পার্থক্য বলতে, এতদিন সমকামীরা বিয়েবদ্ধ হয়ে এই সুযোগগুলো থেকে বঞ্চিত ছিলো। এই রায়ের ফলে কেন্দ্রীয় ভাবে এই অধিকারগুলো তাদের জন্যও সুরক্ষিত থাকবে।
সুপ্রিম কোর্টে সমকামী বিয়ের অধিকার পাশ হয়েছে ৫-৪ ভোটে। পক্ষ-বিপক্ষ থেকে বিচারকগণ তাঁদের অবস্থানের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন বিস্তারিত মন্তব্যে। সামাজিক মাধ্যমে সমকামী বিয়ের বিপক্ষের যুক্তির বড় অংশ চিরায়ত (‘ট্র্যাডিশনাল') সংজ্ঞায় শুধু নারী-পুরুষের উল্লেখ থাকার কথা বলা হয়, এবং সেটাই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব আইনে প্রতিফলিত হয়েছে। রায়ের বিপক্ষে অবস্থানকারী বিচারকদের কেউ কেউ মনে করেন, নিজস্ব অঙ্গরাজ্যের অধিকার আছে তাদের মতো করে আইন প্রণয়নের। সংবিধানের যথাসম্ভব আক্ষরিক অনুবাদের এই রীতি সুপ্রিম কোর্টের ডানপন্থী/রক্ষণাত্মক বিচারকরা নিয়ে থাকেন প্রায়শ।
এই রায়ের পক্ষের বিচারকরা মনে করেন, বিয়ে একটি মৌলিক অধিকার যা সকল নাগরিকের সমান ভাবে প্রাপ্য। সমকামিতার কারণে অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে যেমন মানুষকে বঞ্চিত রাখা যায় না, তেমনি ভাবে বিয়ের অধিকার থেকেও বঞ্চিত রাখা যায় না। আইন ও সংবিধানের চোখে সব নাগরিক সমান, বিভিন্ন রকম প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তার অধিকার সবার জন্য সমান, অতএব বিয়ের সুবিধাদিও সকলের প্রাপ্য।
মূলধারার ধার্মিকতার সাথে সমকামিতার বিতর্ক বেশ অনেক দিন ধরেই চলমান। আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত সব সমাজেই এটা সরবে বিতর্কিত একটি বিষয়। সমকামিতা ধর্মীয় ভাবে নিষিদ্ধ হওয়ায় এবং প্রজননের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একে প্রকৃতিবিরুদ্ধ মনে করার কারণে অনেকে এর তীব্র বিরোধিতা করেন। সেই প্রসঙ্গে একটা সাহসী, গবেষণাঋদ্ধ বই লিখেছিলেন অভিজিৎ রায়। আমরা ধর্ম রক্ষার তাগিদ থেকে তাঁকে কুপিয়ে খুন করে ফেলেছি। আমি তাঁর কিয়দাংশ জ্ঞানও ধারণ করি না, তাঁর মতো করে গুছিয়ে লিখতেও পারি না। যাদের এই প্রসঙ্গে আপত্তি আছে, তাঁরা অনুগ্রহ করে অভিজিৎ রায়ের বইটি পড়ে নেবেন। জানার আগ্রহ থাকলে অনেক খোরাক পাবেন। ক্ষেপে উঠলেও সমস্যা নাই, কারণ লেখককে তো কুপিয়ে খুন করে শাস্তি দিয়েই দেওয়া হয়েছে। স্ত্রী-সন্তানের সাথে কিছুদিন কাটানোর স্বার্থপর তাড়না থেকে এই প্রসঙ্গে ফাঁকিবাজি করলাম, পাঠক মার্জনা করবেন।
সমকামী বিয়ের সমর্থকরা এক কথা বলছেন এই রায়ের ফলে ভালোবাসার জয় হয়েছে (“লাভ উইন্স”), অর্থাৎ যেকাউকে ভালোবাসার অধিকার সবার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যারা এই রায় সমর্থন করেন, তারা মোটা দাগে দুইটি বিষয় মানেন –
১) সমকামিতা কোনও ঐচ্ছিক বিষয় না, কিছু মানুষ প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরি হয়েছেন সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে। এর পিছনে যেই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে সেটার প্রতি তারা বিশ্বাস রাখেন। উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ হলো, বৃহৎ জনগোষ্ঠির মাঝে বসবাসকারী এবং সমকামী কারও সাথে পরিচয় আছে, এমন মানুষের মধ্যে সমর্থনের হার বেশি।
২) নিজগৃহে যা খুশি করবার মতো ব্যাক্তিস্বাধীনতা সবার আছে, এবং সেটার কারণে আইনের চোখে কাউকে অসমান বা ঊনমানুষ হিসাবে দেখার অবকাশ নেই।
বিপক্ষের যারা আছেন, তাদের মধ্যে কয়েক রকম শঙ্কা কাজ করছে –
১) দেশ-বিদেশ নির্বিশেষে অনেকেই ভয় করছেন যে সমকামী বিয়ে আইনসিদ্ধ হওয়ায় পৃথিবীর জনসংখ্যা ধসে যাবে। এরা অনেকেই সমকামিতাকে ঐচ্ছিক এবং নিরাময়যোগ্য মনে করেন। উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ হলো, তারা বন্ধ্যা নারী-পুরুষের বিয়ের অধিকার রহিত করার কথা বলছেন না। নিরবে সমকামী জীবন যাপন করে যাওয়ার ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি না হওয়ার এবং শিল্পায়িত সমাজে সন্তান গ্রহণের অনীহার কথাও এই বিতর্কে অনুল্লেখিত।
২) দ্বিতীয় প্রতিক্রিয়াটি একটু কৌতূহল জাগানোর মতো। সমকামিতাকে ‘বৈজ্ঞানিক' এবং ‘অনৈচ্ছিক' মেনে নেওয়া এই রায়ের মূল ভিত্তি। সেই ধারাক্রমে পরবর্তীতে কোন্ বিষয় উঠে আসবে, তা নিয়ে বিভিন্ন রকম শঙ্কা ও তর্ক-বিতর্ক চলমান। আমেরিকার রক্ষণশীলরা ভয় করছেন যে এর পরবর্তীতে বহুবিবাহ এবং নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে দেওয়াকেও বৈধতা দেওয়ার দাবি উঠবে। বাংলাদেশে (এবং মোটা দাগে বললে মুসলিম বিশ্বে) এই দুটোই বহুল প্রচলিত। ইসলাম ধর্মে চার বিয়ে পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া আছে, এবং ফার্স্ট কাজিনদের (চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো, খালাতো ভাই-বোন) মধ্যে বিয়ে দেওয়াও হরদম হচ্ছে। আমেরিকায় এই দুটোই জঘন্য বলে পরিগণিত এবং আইনত শাস্তিযোগ্য। বিপরীতে, বাংলাদেশের সমাজে ইন্সেস্ট (ভাই-বোনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক) বৈধ হওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ হতে দেখলাম, যা পশ্চিমা প্রতিক্রিয়াগুলোয় তেমন একটা চোখে পড়েনি।
বিশ্বায়নের অবধারিত প্রভাব হিসাবে আমেরিকার এই রায় বাংলাদেশের সমাজেও প্রভাব রেখেছে। দুই সমাজ ভিন্ন দুই সময়ে অবস্থান করছে, তাই প্রতিক্রিয়াও খুব ভিন্ন। নানান ঝগড়া-তর্কের ডামাডোলে এই কথাটাই শুধু স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। বাংলাদেশে আজও বাবা-মায়ের অমতে বিয়ে করলে ঘর ছেড়ে পালাতে হয়, সেখানে ছেলে-ছেলে বা মেয়ে-মেয়ে বিয়ে নিয়ে খোলামেলা আলোচনা তো বহু দূরের ব্যাপার। সে-কারণেই যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে আলোচনার তুলনায় দল বেঁধে বিদ্রূপ করাই দেখতে পেলাম বেশি। তার উপর আছেন গরম তাওয়ায় রুটি ভেজে নিতে সদাপ্রস্তুত ফেসবুক সেলিব্রিটির দল, যারা সব বিষয়েই জ্ঞান ধারণ করেন।
আশা করি রায়ের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে এই লেখায় কিছুটা আলোকপাত করতে পেরেছি। ব্যাক্তি জীবনে আমরা সমকামিতা বা সমকামী বিয়ে সমর্থন-অসমর্থন করতেই পারি, সারা পৃথিবীই কোনও একটা পক্ষে অবস্থান করছে। শুধু একটাই অনুরোধ, আমাদের প্রতিক্রিয়ায় যেন আমরা শিষ্টতার মাত্রা অতিক্রম করে না যাই। আমরা যেন কাউকে ঊনমানুষ বা সাব-হিউম্যান বলে বিবেচনা না করি, সবাইকে আইনত সমান অধিকার দেওয়ার মৌলিক নীতিটা বুঝতে পারি। আমরা যেন সমকামিতা নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে দুই বাক্য পরেই তারা কীভাবে যৌনাচার করেন সেই আলাপে পর্যবসিত না হই। দুই জন মানুষ – হোক তারা নারী বা পুরুষ – একটা ঘরে প্রবেশ করার পর যদি আমাদের প্রথম কাজই হয় তাদের রতিক্রিয়া কল্পনা করা, তাহলে তাদের যৌনাঙ্গের চেয়ে আমাদের মস্তিষ্কে সমস্যা বেশি।
মন্তব্য
ভালো লেখা!
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
যাক অনেক দিন পরে লিখলেন। প্রাসঙ্গিক একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস এখানে মন্তব্য হিসেবে দিয়ে রাখি।
_______________________________________
বিবর্তন এবং সমকামিতা এই দুইটা জিনিস নিয়ে এক পাতাও না পড়ে শুধু আবেগের উপর ভিত্তি করে দশ পাতা লিখে ফেলার, মন্তব্য করার মতো মানুষ দেখি চারদিকে। বিবর্তন নিয়ে কথা উঠলেই যেমন কিছু পরিচিত স্টুপিড প্রশ্ন আছে যেগুলো শুনলেই বোঝা যায় সেই বিষয়ে তার/তাদের জ্ঞান/জানাশোনা ঋণাত্মক দিকে, সমকামিতার ক্ষেত্রেও বেশিরভাগ মানুষের একই অবস্থা। সব বিষয়ে সব মানুষ জানবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে বিষয়ে নিজে জানি না সেই বিষয়ে চুপ করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ না? বিবর্তনের ক্ষেত্রে একটা কমন স্টুপিড প্রশ্ন হলো, যদি বানর থেকে মানুষ আসে তাহলে চিড়িয়াখানায় কোনো বানরকে কেন কোনোদিন মানুষ হতে দেখে না কেউ? আরেক ধরণের প্রশ্ন আছে যেটা অনেক আবেগ মাখিয়ে করা হয়। যেমন, বিবর্তন যদি সত্য হয় তাহলে তো আমাদের পূর্বপুরুষ বানর, সেটা নিশ্চয়ই হতে পারে না, তাই না? বা বিবর্তন সত্য হলে আমার ধর্ম বাপ-দাদার ধর্ম কি মিথ্যা হয়ে যাবে? এত মানুষের ধর্ম নিশ্চয়ই মিথ্যা না! নাকি মিথ্যা?
বিবর্তনের দিকে না যাই আজকে। বরং সমকামিদের নিয়ে এরকম দুই একটা স্টুপিড প্রশ্নের উত্তর জ্ঞান বিজ্ঞানের না ঢুকে একেবারেই কমন সেন্স দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন ১ঃ সমকামিদের বিয়ে হলে বাচ্চা-কাচ্চা কীভাবে হবে? পৃথিবী জনশূন্য হয়ে যাবে না?
উত্তরঃ এককথায়, না জনশূন্য হয়ে যাবে না। পৃথিবীতে সব মানুষের মধ্যে একটা একটা ছোট শতাংশ সমকামি। তাদের বিয়ের অধিকার না দিলেও তারা সাধারণ প্রচলিত বিষমকামী বিয়েতে আগ্রহী হতো না, হলেও সমাজের চাপে হত। এই ছোট অংশ বিয়ে না দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা প্রজননে অংশ নিত না আর নিলেও অনিচ্ছাকৃতভাবে। তাই এই অল্প জনগোষ্ঠীর প্রজননে অংশ না নেয়ার ফলে মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই। এত কিছু না বলে একটা সম্পূরক প্রশ্ন করলেই আসলে এর উত্তর আরও সহজে পাওয়া যায়। এরকম অনেক মানুষ আছেন যারা বিষমকামি, কিন্তু সন্তান ধারণে সক্ষম নন। এরকম মানুষ তো বিয়ে করছেন, সুখে শান্তিতে বাস করছেন, কেউ দত্তন নিচ্ছেন কেউ নিচ্ছেন না। সন্তান ধারণ করতে পারে না বলে তো এমন মানুষের বিয়েতে কেউ আপত্তি করে না? নাকি আপনি করবেন?
যেহেতু পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষ বিষমকামি। সমকামি বিয়ে বা সম্পর্ক আইনের চোখে বৈধ করা হলেও তারা প্রচলিত পদ্ধতিতে বিয়ে করে বা বিয়ে না করেই সন্তান ধারণের মাধ্যমে মানবজাতি টিকিয়ে রাখবে। মানবজাতি টিকিয়ে রাখার জন্য সমকামি একজন মানুষ অনিচ্ছুক ভালোবাসাহীন সম্পর্কের মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত সন্তান দিয়ে মানবজাতি পুর্ণ করার দায়িত্ব নিলে সেটা মানবজাতির জন্য ভালো কিছু হবে কি?
প্রশ্ন ২ঃ সমকামিতা তো প্রকৃতিবিরুদ্ধ। এটা নিশ্চয়ই আমাদের জন্য ভালো হবে না তাই না?
উত্তরঃ এককথায়, সমকামিতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ নয়। 'প্রকৃতি' শব্দটা এমন একটা শব্দ যেটা মানুষ নিজের ইচ্ছামতো সুবিধাজনক সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধাজনক জায়গায় ব্যবহার করে। অনেকে সমকামিতাকে একটি 'চয়েস' বা 'ফ্যাশন' হিসেবে মনে করে। এটা বুঝতে হলে বা জানতে হলে বেশিদূর যাবার দরকার নেই, গুগলে খুঁজে মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রজাতির প্রাণির মধ্যে সমকামের উদাহরণ একটু খুঁজে দেখুন। এক দুইটি প্রজাতি নয়, হাজারের ওপর প্রজাতির প্রাণির মধ্যে সমকামিতার প্রচুর প্রচুর দৃষ্টান্ত পাওয়া গেছে। সেইসব প্রাণিও কি তাহলে 'ফ্যাশন' করছে? তারাও কি একটি 'চয়েস' বেছে নিয়েছে? তাহলে তাদের এই আচরণও কি প্রকৃতিবিরুদ্ধ? আসলে এখানে আপনি প্রকৃতিবিরুদ্ধ বলতে বোঝাতে চাইছেন আপনার প্রকৃতিবিরুদ্ধ। ঠিক যেমন আপনার যৌন আচরণ, আকাঙ্ক্ষা একজন সমকামি মানুষের সাপেক্ষে প্রকৃতিবিরুদ্ধ।
প্রশ্ন ৩ঃ সবই যদি আমরা গ্রহণ করে নেই তাহলে একসময় যারা শিশুকামি (পেডোফিলিক) তাদেরকেও নিশ্চয়ই স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলা হবে (কারণ অনেক মানুষ শিশুদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এটাকে উদাহরণ হিসেবে এনে সমকামিতাকে বিকৃত যৌনাচার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়)? আপনাদের লিমিট কোথায় ভাই?
উত্তরঃ এটার উত্তর খুব সহজ। একজন শিশু অপ্রাপ্তবয়স্ক। শিশুকামিতার ক্ষেত্রে কিন্তু সম বা বিষমের হিসাব আসে না। এখানে বিবেচ্য বিষয় হলো যে এই ধরণের সম্পর্কের এক পক্ষ শিশু যার মানসিক এবং শারীরিক পরিপক্কতা কোনো ধরণের যৌন সম্পর্কের জন্যেই উপযোগী নয়। অন্যদিকে সমকামিরা যদি প্রাপ্তবয়স্ক হন, তাহলে নিজেদের সঙ্গী বেছে নেয়ার অধিকার তারা অবশ্যই পাবেন বা পাওয়া উচিত। কারণ সেক্ষেত্রে দু'জনেই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ।
অনেক সময় এই প্রসঙ্গটি সামনে আসে যে যেহেতু শিশুদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়াও অনেক মানুষের অন্তর্গত বিষয় এই ব্যাপারে তো তার কিছু করার নেই, তাহলে সেটাকে আমরা যদি বিকৃতি হিসেবে দেখি তাহলে সমকামিতাকে নয় কেন? এর উত্তর আসলে আগেই দেয়া হয়ে গেছে। সেটা হল সমকামিতার ক্ষেত্রে 'জোর' করে সম্পর্ক করার বিষয়টি আসছে না।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এই কমেন্টটা মনে হয় আলাদা ব্লগ হিসাবেও আসতে পারত।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
মন্তব্য লাফাং
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
facebook
আরও লেখা আসুক -
facebook
এটা আলাদা পোস্ট হিসেবে দিতে পারতা। এখন নাহয় এক জায়গায়ই থাকলো।
এই কিছুদিনে কতো হোমোফোবিক যে দেখে ফেললাম।
ফেসবুকে এনার নোটগুলো প্রাসঙ্গিক।
http://tinyurl.com/qd6la5g
সেজান মাহমুদ ভাইয়ের নোটগুলো পড়েছি। উনি বেশ যুক্তি এবং ধৈর্যের সাথে বিভিন্ন রকম প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন একের পর এক নোটে।
দেবদ্যুতি
লাইক দিলাম বিষয়ে, লেখায়। দারুণ ভালো লিখেছেন
দেবদ্যুতি
সংক্ষেপে সুন্দর একটা লেখা । অধিকারের দিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেটা আমাদের 'সদাকামুক' মস্তিষ্কের পরিসীমায় আসে না!
-হুঁকোমুখো হ্যাংলা
ধন্যবাদ
চমৎকার লেখা। কতোকিছুই অজানা থেকে যায় আমাদের। আজ এই বিষয়টা নিয়ে অনেক তথ্য জানলাম। আরো মানুষকে জানানোর জন্য আপনার অনুমতি ছাড়াই শেয়ার দিলাম।
আবারও লেখাটার জন্য
ধন্যবাদ
ভালো হয়েছে। গুড সামারি। আমরা নিজেরা ভালবাসতে পারি আর নাই পারি, অন্যদের ভালোবাসার মাঝে কাঁটা হতে অনেক ভালো পারি মনে হয়।
আমাদের নাক যে কতো লম্বা, সেটা প্রবাসে এসে বুঝেছি। যে যার মতো আছে, কেউ অন্যের ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করছে না, কিছু পারসোনাল স্পেস সবাই মেনে চলছে। এই ভদ্রতাবোধ আমরা চর্চা তো করি না-ই, উল্টা তাকে সমালোচনা করি। পাশ্চাত্যের অনেক কিছু নিয়ে লোকে কথা বলে, কিন্তু যতদিন "নান অফ ইয়োর বিজনেস" কথাটা বুঝতে শিখছি, ততদিন মনে হয় না পাশ্চাত্যের সমকালীন ইস্যুগুলো বুঝতে পারবো আমরা।
সংক্ষিপ্ত, গোছানো, পক্ষপাতমুক্ত লেখা। সমপ্রেমের পক্ষে বিপক্ষে যতটুকু তর্ক দেখেছি, মূল ব্যবধান মনে হয়েছে সমপ্রেমের ব্যক্তিগত সংজ্ঞায়। সমপ্রেম ঐচ্ছিক কি না এটাই মূল নির্ধারণী পয়েন্ট। আইন, মানবিকতা ইত্যাদি ব্যাপার নিয়ে ভাবিত নন অধিকাংশই। নিজের ভাবনাগুলোকেই অগাধ বিশ্বাসে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করছেন তারা। বিশ্বাস পরিবর্তনের উপায় নেই। তবে ভাবনার উপর কাজ করা যেতে পারে। সামাজিক প্রাণী হিসেবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য, নিদেনপক্ষে পরস্পরকে "সহ্য" করা জন্য হলেও ভাবনাচিন্তা জারি রাখা জরুরি। পক্ষে বিপক্ষে অনেক মত থাকবে, তর্ক চলবে। তার শুরুতে মৌলিক তথ্য আর পটভূমিটুকু পরিষ্কারভাবে জানার জন্য এমন একটা লেখার দরকার ছিলো।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ধন্যবাদ। পটভূমি ব্যাখ্যা করাটাই মূল উদ্দেশ্য ছিলো। লেখায় যোগ করতে ভুলে গেছি – এমন না যে এই প্রথম সমকামী বিয়ে শুরু হলো। এটা বহু বছর ধরেই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে চলে আসছে। এই রায়ের মাধ্যমে সেটা সারা দেশে বৈধ হলো শুধু।
ফোঁড়ন কাটি। লেখার মধ্যে স্ত্রী সন্তানের কথা ঢুকায় দিয়ে "তুমি সমকামী নিয়ে কথা বলো, কাজেই তুমিও সমকামী" এই বখাট্য যুক্তি টানার সুবর্ণ সুযোগে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিলা।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
যা দিনকাল পড়েছে, সব কিছু খোলাসা করে না দিলে কে যে কোথায় নিয়ে যায়!
লেখায়, বিশেষ করে শেষ লাইনে
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
এই ব্যাপারটা নিয়ে খুব উদারমনা এক বন্ধুর সাথে কথা আলোচনা করতে গিয়ে টের পেলাম, সে কোন ভাবেই বিষয়টা মেনে নিতে পারছেনা। যুক্তি সেই পুরোনো – সমকামিতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ। অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। প্রকৃতিতে অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে সমকামিতা আছে এই ব্যাপারটার উপর বেশী জোর দিলাম, লাভ হলনা। তার প্রশ্ন, আমরা কি পশু? এখন আমরা কেন জগতের সেরা জীব নই, আর দশটা প্রানীর মত একটা প্রানী সেইটা বোঝাতে গেলে মেলা কথা খরচ করতে হয়। শেষে কইলাম, এক সময় আমাদের সমাজে বাঁহাতিদের অস্বাভাবিক হিসেবে গন্য করা হত। বাঁহাতিদের জন্মগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় নষ্ট করছি এবং তাদের অনেক কষ্ট দিছি, কিন্তু এখন কি কেউ আর তা করে? আমাদের সেরা অলরাউন্ডাররে দেখ। হয়ত সময় বেশী লাগবে, কিন্ত একদিন আমাদের সমাজ সমকামিতাকে বাঁহাতিদের মতোই মেনে নিবে। ইংল্যান্ড সরকার অ্যালান টুরিং এর মতো প্রতিভাকে কি কষ্টটাই না দিছে আর পরে ক্ষমাও চাইছে এর জন্য। উইকিতে অ্যালান টুরিং এর ভুক্তিটা দেখানোর পর কিছুটা নিমরাজী মনে হইল আমার বন্ধুকে।
চমৎকার লেখার জন্য ।
আমি তোমাদের কেউ নই -> আতোকেন
বাঁহাতিদের উপরে আমাদের সমাজের এই অযথা চোটপাটের কোন মানেই নেই।
বাঁহাতি সুপারম্যাসিস্ট (বাংলা মাথায় আসছে না) দের এটা করতে দেয়া যেতে পারে:
" আমি যদি কোন সমাজে জন্মাতাম যেখানে 'ডানহাতি' হওয়াটা অচ্ছুৎ আর আমাকে খাওয়া-দাওয়ার মত কাজ বাঁহাতে করতে বাধ্য করা হত, কেমন কঠিন হত জিনিসটা আমার জন্য?"
আপনার বন্ধুকে ইমিটেশন গেম দেখতে বলতে পারেন। যদিও মুভিতে 'ঐ' অংশটা অনেকটা হালকা ভাবে এসেছে। (সম্ভবত: বাণিজ্যিক কারণে মুভিতে এনিগমা-কেই কেন্দ্রে রাখা হয়েছে, ট্যুরিং এর জীবনকে না)।
উইকি থেকে:
" ২০০৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন টুরিংকে যে ক্ষতিকর চিকিৎসায় বাধ্য করা হয় তার জন্য দাপ্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।" -ভালো কাজ। ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া।
"২০১৩ সালে রাণী এলিজাবেথ তাঁকে মরণোত্তর ক্ষমা প্রদান করেন।" -বিরক্তিকর! অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে সেই সাজা মওকুফ করাটা জঘন্য একটা কাজ।
শুভেচ্ছা
যতদূর মনে হয় এই কাজটা করা হইছে গনদাবীর মুখে অপরাধীদের খাতা থেকে অ্যালান টুরিং নামটা মুছে ফেলার জন্য। আপনি এই লিঙ্কটা আর এই লিঙ্কটা পড়ে দেখতে পারেন। যদিও লিঙ্ক দুইটা পড়ে আরও একটা প্রশ্ন মাথায় আসলো – টুরিং এর সমসাময়িক যাদেরকে একই অপরাধের জন্য শাস্তি দেয়া হয়েছিল তাদের কাছেও ক্ষমা চাওয়া হইলনা কেন??
আপনাকেও শুভেচ্ছা
আমি তোমাদের কেউ নই -> আতোকেন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অল্পকথায় লক্ষ্যভেদী লেখা
প্রথমত, আমাদের সবার বোঝা দরকার যে এই মানুষগুলো ইচ্ছে করে এমনটা হয় নি। কোথায় যেন ইংরেজি পত্রিকার পাতায় পড়েছিলাম যে, কোন এক মা তার মেয়ের 'অরিয়েন্টেশনটা ঠিক না, কী করা যায় বলুন' টাইপের প্রশ্ন করেছিলেন। উত্তরদাতা বিনীতভাবে বলেছিলেন যে, "আরেহ! ওরিয়েন্টেশন বদলানো কোন বিষয়ই না। আপনি কিছুদিন নিজের ওরিয়েন্টেশন বদলে আপনার মেয়েকে প্রমাণ করে দেখান যে চাইলেই যখন তখন 'দিক' ঘুরিয়ে 'হোমো' থেকে 'হেটেরো' করে ফেলা যায়"
দ্বিতীয়ত, একটা মজার জিনিস দেখেছি এই দক্ষিণ দিকে। এরা মহা ধার্মিক অথচ তাদের ছেলে-মেয়েরা একসাথে থাকছে, কখনও কখনও বাচ্চা-কাচ্চার বাবা-মা হচ্ছে - যেটা বাইবেলে নিষেধ করা আছে -এটা নিয়ে তারা খুব একটা মাথা ঘামায় না। একজনের বয়স্ক লোকের সাথে আলাপ হচ্ছিল, কথা প্রসঙ্গে পরে যেটা বলল সেটা হল, তারা পোলাপানকে মানিয়ে রাখতে পারে না। তাই ব্যাপারটা চেপে যাওয়া হয়। বাইবেলে বলা আছে যে, বিবাহ বিচ্ছেদ বিরাট পাপ, অথচ ডিভোর্সি লোকজন তো চার্চে অসম্মানিত হয় না যেটা প্রকাশ্যে সমকামীরা হবে । সমকামীদের বিরুদ্ধে বলার সময় এরা লেভিটিকাসের কিছু শ্লোক আওরায়, অথচ ঐ শ্লোকের আগের পরের কথা বার্তা নাকি সম্পত্তির হিসাব নিকাশ নিয়ে শুনেছি। (একসময়ে মেয়েরা পিতৃলয়ে থাকার সময় পিতার অধীনে থাকত, বিয়ের সময় পিতা মেয়েকে স্বামীর হাতে হস্তান্তর করত -অনেকটা সম্পত্তি হিসেবে দেখা হত মেয়েটাকে)। সে যাই হোক, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাইবেল অনুসারীদের এই দ্বিমুখী এবং সিলেক্টিভ নীতি বিরক্ত করেছে আমাকে।
পুনশ্চ: এখানে কোন বিশেষ ধর্মকে ইচ্ছে করে আক্রমণ করতে বসিনি। সব ধর্মের বিষয়ে অনেক অনেক লেখা আছে ব্লগে। কাদের কি মতামত, কে কি বলেন সেটা সবাই জানি। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে বসবাসের অভিজ্ঞতা একটু ভাগ করে নিলাম অন্য জায়গায় পাঠদের সাথে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই এলাকার লোকজনকে বাকি যুক্তরাষ্ট্রের লোক 'রেডনেক' বলে, এই এলাকার আরেকটা নাম হল 'বাইবেল বেল্ট'।
শুভেচ্ছা
লুইজিয়ানা এবং ক্যারোলাইনাজ মিলে বাইবেল বেল্টে পর্যায় ৮ বছর কাটিয়েছি। ঐটা নিয়ে বলতে গেলে বহু ঘণ্টা চলে যাবে।
গুছিয়ে লিখেছেন ।
লেখার একেবারে শুরুতে বলছেনঃ
এখানে বোধ হয় "বৈধ বলে গণ্য হতো না" বলতে চেয়েছিলেন?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
তাই তো! প্রথম ভার্শনে ঠিক ছিলো। অন্য একটা টাইপও ঠিক করতে গিয়ে এটা ভুল করে ফেলেছিলাম। ধন্যবাদ।
শেষের লাইনটা দারুন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সময়োপযোগী মূল্যবান লেখা। সাথের মন্তব্যগুলো নিয়ে এই পোস্ট সচলায়তনের ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখযোগ্য পোস্ট হয়ে রইল।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ফেসবুকীয় ঝড়ে ব্যাপারটা নিয়ে আমিও কনফিউজড ছিলাম। এটা পড়ে অনেক কিছুই জানলাম। দারুন লেখা, ধন্যবাদ।
তাও ভাল এই তর্ক বিতর্কে কিছু জ্ঞান ছড়ানো গেছে, অনেকেই আছে উদারমনা যারা হয়তো আসল ব্যাপারটা বুঝতেন না, তারা জানতে পেরেছেন বুঝতে পেরেছেন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
আশেপাশের পরিচিত গন্ডীতেই অনেকের মাঝে এক অজানা ভীতি দেখলাম এই নিয়ে। আমরা আসলে পরিবর্তন ভয় পাই।
দরকারি লেখা। বেশ গোছানোভাবে সব তথ্য উঠে এসেছে।
নতুন মন্তব্য করুন