প্রসঙ্গ জঙ্গীবাদঃ আমাদের ছেলেমেয়েগুলো হারিয়ে যাচ্ছে কেন?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি
লিখেছেন ইশতিয়াক রউফ (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/০৮/২০১৬ - ১২:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[ জঙ্গীবাদের মতো এত অচেনা এবং ভয়াবহ সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। একের পর জঙ্গী আক্রমণের পর সেই উপলব্ধি থেকেই এই সিরিজের অবতারণা। নিজের মতামত দিয়েই শুরু হোক, পাঠক মন্তব্যে আলোচনা চালানো যাবে। ]

গুলশানের ‘হোলি আর্টিজান’-এ জঙ্গী আক্রমণের আকস্মিকতা ও বর্বরতার ধাক্কা কিছুটা কাটলেও ঘুরে-ফিরে সবার মনে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে -- আমাদের ছেলেমেয়েগুলো কীভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, কীভাবে আপাত-সাধারণ মানুষগুলো নির্বিকার চিত্তে এত নৃশংস আচরণ করছে? এই পর্বে সেটা নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।

কিছুদিন আগে লোকালয়ে কুমির নিয়ে একটা গল্প শুনছিলাম। এক লোক শখের বশে কুমির ছানা এনেছিলো। প্রথম কিছুদিন মহানন্দে কুমিরকে ঘরেই পেলে-পুষে বড় করার পর এক পর্যায়ে কুমিরের আকার এতটাই বড় হয়ে গেল যে তা আর বাসা-বাড়িতে রাখা সম্ভব না। লুকিয়ে লুকিয়ে পোষা সেই কুমির নিয়ে কী করা যায় বুঝে না পেয়ে সে কাছেই এক পুকুরে কুমিরটা ছেড়ে দিলো -- কুমির চোখের আড়ালে নিজের মতো চড়ে খাক, মালিকের ঝামেলা খতম। পুকুর পাড় দিয়ে নিয়মিত হেঁটে যাওয়া এক লোকের মনে হতো, কে যেন তাকে আড়াল থেকে দেখছে। তার কথা কেউ বিশ্বাস করে না, পাগল ডেকে হাসি-মশকরা করে। অনেক অনুনয়ের পর কয়েক বন্ধু মিলে তার সাথে গেল, এবং গিয়ে দেখে জলজ্যান্ত এক কুমির চেয়ে আছে তাদের দিকে।

গত কিছুদিনের ঘটনাবলির দেখে কুমিরের গল্পটা খুব মনে পড়ছিলো বারবার। আমাদের সন্তানগুলো জন্ম নেয় তুলতুলে মাংসের পিণ্ড হয়ে। তাদের মাথার খুলি তিন ভাগ হয়ে থাকে, তাদের হাড়গুলো কচি পাতার মতো নরম তাকে, তাদের নখগুলো মাখনে মতো নরম থাকে। সময়ের সাথে সাথে আর দশটা প্রাণির মতো করেই তারা বড় হতে থাকে। জীবনের প্রয়োজনে সব প্রাণির মতো তারাও প্রকৃতিদত্ত শক্তি ও বুদ্ধির ব্যবহার করতে শেখে। এই প্রক্রিয়ারই এক পর্যায়ে কীভাবে যেন তারা শ্বাপদে পরিণত হয়। একটা বয়সে গিয়ে এমন কিছু করে বসে যে বাবা-মা সহ সব বন্ধু-পরিজনের কাছে তাদের অজানা, অচেনা লাগে।

গুলশানে হামলাকারী জঙ্গী, সিরিয়ার রাক্কা থেকে প্রচারিত ভিডিওর জঙ্গী, এবং কল্যাণপুর অভিযানে মৃত জঙ্গীদের ব্যাপারে ঘুরে-ফিরে এই রকমই বলছেন তাদের পরিচিত সবাই। এরা সবাই ভদ্র ঘরের সুবোধ সন্তান ছিলো। সবাই চুপচাপ, এবং জীবনের কোনো একটা সময়ে বেশ ধার্মিক। হঠাৎ ঘটে যাওয়া “কিছু একটা”-র কারণে তারা জঙ্গী হয়ে গেছে। এই “কিছু একটা” কী, তা নিয়ে অনেক রকম ভাবনা।

যারা সরকার পক্ষের, তারা বলেন যে এটা বিগত আমলে বংশ বিস্তার করা হরকাতুল জিহাদ। যারা সরকারের বিপক্ষের, তারা বলেন ভোট হয় না বলে জঙ্গীবাদ হয়। যারা মুসলমান, তারা বলেন এটা প্রকৃত ইসলাম না। যারা ইসলাম বাদে অন্য ধর্ম পালন করেন, তারা জানের ভয়ে চুপচাপ থাকেন। যারা ধার্মিক তারা বলেন ধর্ম আরও ভালো ভাবে পড়তে হবে। যারা সংস্কৃতিবান তারা বলেন বেশি করে গান-কবিতা পড়ে মন উন্মুক্ত করতে হবে। সব মিলে একটা জগা-খিচুড়ি অবস্থা। কারণ, আগে “ধর্মীয় কট্টরপন্থী” বললেই মাদ্রাসার ছাত্র এবং টুপি-দাড়ি পরা কিছু নিম্নবিত্ত মানুষের চেহারা ভেসে উঠতো। আজকের জঙ্গীদের এরকম কোনো প্রোফাইলেই বাক্সবন্দী করা যায় না।

এই কারণগুলোর কোন্‌টা সত্য তা আমার জানা নেই। খুব সম্ভবত কোনো একটা মাত্র অনুঘটকের কারণেই এত বড় কিছু হয়ে যায়নি। বিত্ত, শিক্ষা, বা সংস্কৃতির কোটা মেপে এই “কিছু একটা”-কে সরল ভাবে ব্যাখ্যা অসম্ভব। অনেক প্রকার কারণের সম্মিলনেই এত বড় পরিবর্তন আসে।

তবে কারণ পর্যালোচনায় একটা দুঃখজনক পর্যবেক্ষণ হলো, কেউ এর পেছনে নিজের ১% ত্রুটি বা দায়িত্ব খুঁজে পাচ্ছেন না। ওমুক এটা করলে হয়তো জঙ্গীবাদ হতো না, তমুক ওভাবে চললে হয়তো জঙ্গীবাদ হতো না, ইত্যাদি। আমরা হয়তো আইনগত ভাবে দণ্ডপ্রার্থী নই, কিন্তু তাই বলে কি সমাজে এত বড় পতনের পেছনে আমাদের কোনোই দায়িত্ব নেই? কী দায়িত্ব, কতটুকু দায়িত্ব, ইত্যাদি পরের কথা। প্রথমে তো দায়িত্ববোধ আসতে হবে।

জঙ্গী আক্রমণের পর বিভিন্ন আলাপে ঘুরে-ফিরে এই একটা প্রশ্নের জবাব পাইনি আমি। আমার আশেপাশের অগণিত মানুষ ক্ষুব্ধ, আশ্চর্য, দুঃখিত। কিন্তু কেউ দায়িত্ববোধ অনুভব করেন না। সবাই এটা ভেবে নিয়েই খুশি যে আমাদের ছেলেমেয়েগুলোকে অন্য কেউ চোখের আড়ালে মগজ ধোলাই করে দিয়েছে। তারই ফলশ্রুতিতে এত সমস্যা। এখানে ধর্মেরও ভূমিকা নেই, আমাদেরও দায়িত্ব নেই, সব দোষ ঐ অজানা শত্রুর।

আমাদের সন্তানগুলো বাবা-মা, বন্ধু, আত্মীয়ের কাছে থাকে জীবনের প্রথম ১৮-২২ বছর। তারপর তার জীবনে নতুন বন্ধু ও পরিচিতজনের আবির্ভাব হয়। তাদের কেউ অল্প সময়ে অনেক কাছের মানুষ হয়ে যায়, এবং হয়তো ৮-১০ মাসের প্ররোচনায় একজন সুবোধ ছেলে বা মেয়েকে জঙ্গী করে ফেলে। এই যে এত অল্প সময়ের পরিচিত কারও কাছে হেরে যাওয়া, তার দায়িত্ব তো আমাদের সামষ্টিক ভাবে নিতে হবে। ভাই, বাবা, বন্ধু, আত্মীয় হিসাবে আমি দুই দশক ধরে কী শেখালাম, যদি মাত্র কয়েক মাসে আনকোরা নতুন কেউ সেটাকে মুছে ফেলতে পারে?

আরও একটি বিষয় আছে। যেই ২০টা বছর বাবা-মা এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ছেলে-মেয়েরা বড় হয়, সেখানে তারা কী শিক্ষা পাচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের বয়স ৮-১০ বছর হয়ে যাওয়ার স্কুল-কোচিং-ভর্তি ছাড়া তাদের সাথে আলাপ খুব কম। এই সময়টায় তারা বিশ্বকে চেনে, প্রশ্ন করে, রীতি-নীতি শেখে। এই সময়েই তাদের ধর্মশিক্ষা দেওয়া হয়, এবং সেটা বাসায় বা মসজিদে কোনো এক হুজুরের অধীনে। নিজের অজান্তে আমরা সেই সময় থেকেই বীভৎস অনেক কিছু শিখিয়ে দেই, যা ভবিষ্যতে কুপথে চলা আরও সহজ করে দেয়।

গুলশানে নিহতদের মধ্যে একজন ইতালিয়ান নারী ছিলেন যিনি ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাকে আর সবার মতো ছুরি-তলোয়ার দিয়ে খুঁচিয়ে খুন করা হয়েছে। অন্য জিম্মিদের গুলি করার পর নির্যাতন করা হয়েছে। কিছু রিপোর্ট বলছে, নির্যাতনের সময় ফোন করে সেটা নিকটাত্মীয়দের শুনানো হয়েছে। এই জঘন্য কাজগুলো যারা করেছে, তাদের একবারও হাত কাঁপেনি। নিজের মনে তারা নিশ্চিত ছিলো যে এটার বিনিময়ে পৃথিবীতে করতালি এবং পরকালে স্বর্গবাস অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।

নতুন বন্ধু বা গুরুর কাছে শেখা ধর্ম তাকে বলেছে এই বীভৎস কাজে অংশ নিতে। কিন্তু তার জীবনের বাকি ২০ বছরে তো এমন কিছু নেই যার কারণে তার হাত কাঁপবে, তার মন বাধা দেবে। আমরা সবাই ধর্ম, সমাজ, এবং ইতিহাস শিক্ষার অংশ হিসাবে এমন অনেক কিছু “শিখেছি” যার ফলে এত বড় অন্যায় করতে কোনো বিবেক-দংশন কাজ করে না। আমাদের জানা নেই যে, কিছু কাজ এতটাই ক্ষমাহীন যে কোনো প্রকার যুক্তি বা বিশ্বাস তাকে বৈধকরণ দিতে পারে না। উদাহরণ দেখি কিছুঃ

যেকোনো প্রকার অন্যায় করে আল্লাহর কাছে তওবা করলে মাফ পাওয়া যায়।
মন থেকে তওবা করলেই বেহেশত লাভ করা যায়।
কেউ যদি মুসলমান ঘরে জন্ম নেয়, তবে শত অপরাধের পরও একদিন তার বেহেশতে প্রবেশ হবে।
অমুসলিম কেউ সারা জীবন হাজারও ভালো কাজ করলেও তারা মুসলমানদের অধম।
ইসলাম ধর্ম প্রচার ও সুরক্ষার জন্য যেকোনো কিছুই করা যায়।
ধর্মের ক্ষুদ্রতম নির্দেশ অমান্য করার জন্যও রয়েছে তীব্র শাস্তি।
পৃথিবীর জীবনের সব কাজ নশ্বর, শুধু আখিরাতের উদ্দেশ্যে করা কাজই মূল্যবান।
হিন্দুবাড়ির খাবার খেতে নেই।

… এরকম আরও অসংখ্যা “শিক্ষা” আমরা সাথে নিয়ে বড় হই। এর সাথে যোগ করুন দৈনন্দিন আচরণ।

মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় নিচু।
মেয়েরা ঘরের বাইরে কাজ করা খারাপ।
কোনো বিষয়ে বড় মাপের দ্বিমত হলে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যাওয়া।
বখলিয়ার খিলজির মতো গণহত্যাকারীকে আমরা ইসলামের প্রচারক হিসাবে সগৌরবে স্মরণ করি।

… এরকম আরও অনেক, অনেক কিছু আছে। ভেবে দেখুন তো, যেই ছেলেগুলো জঙ্গী হয়েছে তাদের কি একেবারে নতুন করে কিছু শেখানো হয়েছে, নাকি কিছু প্রি-এক্সিসটিং বিষয়কে কাজে লাগানো হয়েছে? যেই “কিছু একটা” নিয়ে আমাদের এত দুশ্চিন্তা, সেটা কি আমরাই ২০ বছর ধরে বুনে দিচ্ছি না? যদি প্রতিটা ছেলে-মেয়ের মধ্যে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে কিছু সীমা তৈরি করে দেওয়া যেত, তাহলে হয়তো এত নৃশংস, জঘন্য কাজ করার আগে তারা দ্বিতীয়বার চিন্তা করতো।

আমি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আমেরিকা প্রবাসী। বাংলাদেশ ছাড়ার আগে সিনেমা-টেলিভিশন দেখে ধারণা হয়েছিলো আমেরিকা উদ্দাম হই-হল্লার দেশ। এত বছর ধরে প্রবাসী জীবন যাপন করে দেখলাম, আমেরিকা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক *বেশি* ধার্মিক দেশ। পর্যবেক্ষণটা অনেকের কাছে আশ্চর্য লাগতে পারে শুরুতে। কিন্তু এখানে রাজনীতির মূলধারায় ধর্ম অনেক খোলামেলা ভাবে আছে। এবং এখানে প্রাত্যহিক জীবনের অনেক রুটিন নির্ভর করে ধর্মকর্মের উপর। তাই যদি হয়, তাহলে কেন উগ্রতা আমেরিকার তুলনায় বাংলাদেশে বেশি?

জবাবের জন্য শুরুর গল্পে ফেরত যেতে হবে। ধর্ম বিনা দ্বিধায় বিশ্বাসের ব্যাপার, এবং বিনা প্রশ্নে পালনের ব্যাপার। এই শক্তি এবং প্রভাবের কারণে ধর্ম খুব সহজে একজন মানুষকে কুমিরে পরিণত করতে পারে। এবং আমাদের অবহেলার কারণে অনেক মানবসন্তান কুমিরের চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমেরিকায় ধর্মপালন অনেক বেশি পারিবারিক ব্যাপার। বাবা-মা নয়তো নানা-দাদা’র সাথে মিলে সবাই রবিবারে গীর্জায় যায়, সবাই মিলে একত্রে বসে ধর্মের আলাপ করে, ধর্মের ব্যাখ্যা পারিবারিক ভাবে দেওয়া হয়। এভাবেই পূর্ব-প্রজন্মের সহনশীলতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ উত্তর-প্রজন্মের মাঝে সঞ্চারিত হয়।

বাংলাদেশি সমাজে আমরা বাবা-র সাথে হয়তো মসজিদে যাই নামাজ পড়তে, কিন্তু ধর্ম বিষয়ে যাবতীয় আলাপ হয় হুজুর, বন্ধু, বা অন্য কারও সাথে। এই দূরত্ব কমিয়ে আনতে না পারলে ধর্মের নামে যেকোনো কিছু করিয়ে নেওয়া খুব সহজ। ইসলাম ধর্মের যেই সব গল্প ও ব্যাখ্যা আমরা জেনে বড় হই, তা বর্বর আরব বেদুইনদের কট্টরপন্থার। এর মাঝে সহনশীলতা এবং উদারতার লেশ নেই।

দেরি অনেকটা হয়ে গেলেও এখনও পথ শুধরানো সম্ভব। উদাহরণ হিসাবে আমার চেনা-জানা অনেকের কথা বলতে পারি। অভিভাবক হিসাবে তারা একটা সময়ে ছেলে-মেয়ে নামাজ পড়লেই খুশি হতেন, ধর্ম-কর্ম করছে মানেই বিপথ থেকে দূরে আছে ভেবে নিজের মতো থাকতেন, তেমন একটা খোঁজ নিতেন না। তারা এখন সন্তানকে ডেকে স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছেন যেন মানুষ হত্যা করার মতো অপরাধ কোনো ভাবেই করা যায় না, এমনকি ধর্মের নামেও না। তারা বলছেন যেন হাজারও হতাশার মধ্যেও কেউ অন্যায়ের পথে না যায়। তারা সন্তানদের সতর্ক করে দিচ্ছেন যেন “ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা”-র ধুয়ো তুলে কেউ নৃশংস হত্যাকারী বানিয়ে না ফেলে।

নিজের দায়িত্ব পালন না করে অন্যের হাতে ছেড়ে দেওয়ার অনেক বড় দায় আমাদের মেটাতে হয়েছে এর মধ্যেই। আশা করতে দোষ নেই যে সামনের দিনগুলো ভিন্ন হবে। আমরা বাংলার মাস্টারের কাছে অংক শিখতে পাঠাই না, কোচিং-এ ভালো নম্বর পেলেও নিজেরা পড়া ধরতে ভুলি না। এসবের কোনো কিছুই হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়াবে না, মানুষ খুন করাবে না। যেই বিষয়টা এমন কিছু করাতে পারে, সেই ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা কেন অচেনা কারও হাতে ছেড়ে দেওয়া? আমাদের সন্তানদের হাতে কেউ বন্দুক তুলে দিলেও যেন তারা গুলি না করে, সেটা শেখানোর দায়িত্ব তো আমাদেরই, তাই না?

ভবিষ্যৎ পর্বঃ ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ও বাস্তবতা অস্বীকার
ভবিষ্যৎ পর্বঃ ধর্ম ও ধার্মিকের সমালোচনা


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

চলুক

ইয়ামেন এর ছবি

চমৎকার লেখা, এবং সবগুলো পয়েন্টের সাথে একশো ভাগ সহমত। অনেকদিন পর ইশতিয়াকের নতুন লেখা দেখে ভালো লাগলো।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

তাহসিন রেজা এর ছবি

আমাদের সন্তানদের হাতে কেউ বন্দুক তুলে দিলেও যেন তারা গুলি না করে, সেটা শেখানোর দায়িত্ব তো আমাদেরই।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

কৈশোর এবং তারুণ্যে বন্ধুত্বের সুবাদে কিছু পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। সেইসব বন্ধু এবং তাদের পরিবারের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক আবহ আমার মনন গঠনে বেশ বড় একটা ভূমিকা রেখেছিল, সেজন্য সেইসব বন্ধু এবং তাদের পরিবারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা বোধ করি।
কিন্তু পরিণত বয়সে এসে দেখছি আমার সেইসব বন্ধুদের অনেকেরই নিজেদের পারিবারিক আবহে কিছু ক্ষেত্রে বিরাট একটা পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। তারুণ্যের সেইসব সাংস্কৃতিক চেতনা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে তাঁদের পরিবারে, সাহিত্য-সঙ্গীত এবং মুক্ত চিন্তার ধারা যেন অপাংতেয় হয়ে গিয়েছে। ব্যাক্তিগত জীবনে নিজেরা একটু বেশী পরিমানেই ধর্মাশ্রয়ী হয়ে পড়েছে, তাদের স্ত্রী পরিজনেরা বাঙ্গালী পোশাক ছেড়ে হিজাব নেকাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, সন্তানেরাও মোটামুটি সেই ধারায়ই চলমান। সুতরাং ক্ষেত্র মোটামুটি প্রস্তুত এবং তা আমাদেরই কারনে।
আমরা নিজেরা বদলে গিয়েছি, তারই প্রভাব পড়ছে আমাদের সন্তানদের উপর। কিন্তু কেন আমরা বদলে গিয়েছি? সেদিন একজন বলছিলেন- বিগত বিশ-ত্রিশ বছরে এদেশে আমাদের প্রায় সবারই হাতে বেশ কিছু পয়সা জমেছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই পয়সা জমার ইতিহাস খুব একটা স্বচ্ছ নয়, তার প্রতিফলন ঘটছে আমাদের জীবনাচরণে। আমরা স্রষ্টাকে তুষ্ট করে আমাদের সম্পদের ইতিহাসটা স্বচ্ছ করতে চাইছি। যাদের অর্থকড়ির ইতিহাস মোটামুটি স্বচ্ছ, তাঁদেরও অনেকে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ বেশী বেশী ধর্ম কর্ম করে তাঁদের প্রতি স্রষ্টার আনুকূল্যের ঋণ শোধ করার চেষ্টা করছে।

মন মাঝি এর ছবি

একটা কৌতুহল। প্রাপ্তবয়ষ্কদের মধ্যে এই পরিবর্তন, বিশেষ করে পোশাক ও অন্যান্য বাহ্যিক চিহ্ন ধারণ বা সমবেত এ্যক্টিভিটির উল্লেখযোগ্য বিস্তৃতি বা তার হারের দৃষ্টি-আকর্ষনকারী বৃদ্ধি - ঠিক কখন থেকে আপনি লক্ষ্য করছেন? সাথে সাথে নোটিস না করে থাকলেও, পশ্চাৎদৃষ্টিতে যেটা মনে হয় সেটা বললেও চলবে। আমার একটা ধারণা আছে (শহরাঞ্চলের ভিত্তিতে, গ্রামের কথা জানি না), তবে নিশ্চিত নই। তাই আপনার সাথে মিলিয়ে দেখতে চাই।

****************************************

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

যতদূর মনে হচ্ছে দু হাজার সালের পরে খুব ধীরে ধীরে এটার শুরু। গত চার পাঁচ বছরে এর ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে।

দিগন্ত এর ছবি

আমার ধারণা ৯/১১ এর পরে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মন মাঝি এর ছবি

এটা কেন মনে হয়? অর্থাৎ ৯/১১-এর সাথে এর ঠিক কিরকম সম্পর্ক বলে আপনি মনে করেন? (প্রশ্নটা উপরের দু'জনকেই)।

****************************************

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আমার মনে হয় ৯/১১ এর সাথে সম্পর্ক খুব একটা বেশী নয়। এটা ঠিক যে বাংলাদেশের অনেক মানুষ ৯/১১ এর ঘটনায় এক ধরনের বিকৃত আনন্দ লাভ করেছে, এদের মধ্যে যে পরিমান মানুষ জেহাদি জোশের কারনে এমন মনে করেছে, তার চেয়ে বেশী মানুষ আনন্দ পেয়েছে রাস্ট্র হিসেবে আমেরিকাকে এক ধরনের শিক্ষা দেয়া হয়েছে, এটা মনে করে।
হিজাবের বিস্তারের অন্যান্য একাধিক কারন রয়েছে বলে আমার ধারনা। এর মধ্যে একটি হল- দুই হাজার সালে এসে জামাতের সমর্থক ও অনুসারীরা মিলে এ দেশে বড় একটি সামাজিক শক্তি। তাদের পরিবারে ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে হিজাব ব্যাবহারের প্রচলন শুরু করা হয়।
দ্বিতীয়ত মধ্যপ্রাচ্যে যে সকল বাঙালি পরিবার নিয়ে থাকেন, সে সকল পরিবারের নারীরা দেশে ফিরে এসে হিজাবের ব্যবহার অব্যাহত রাখেন। এঁদের হিজাবগুলি সনাতনী বোরকার চেয়ে ছিল অনেক আকর্ষণীয়, ফলে তা ধার্মিক অধার্মিক নির্বিশেষে অন্য অনেক নারীকে হিজাবে আগ্রহী করে তোলে।
তৃতীয়ত ধীরে ধীরে একটি প্রচারনা সমাজের সব শ্রেণীর মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে যায়- পর্দানশীন নারীর বখাটেদের নিগ্রহ থেকে সাধারনত নিরাপদ থাকে।
আরও কারন আছে।

মন মাঝি এর ছবি

ইন্টারেস্টিং অব্জার্ভেশন! এবিষয়ে আমার একটা অনুমান এরকম - সম্পর্ক একটা আছে। তবে সেটা সরাসরি ৯/১১-এর সাথে না, বরং তার পরবর্তী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'ওয়ার অন টেরর'-এর সাথে। অনেকটা তার প্রতিক্রিয়ায়। আফগানিস্তান ও ইরাকের উপর আক্রমণ, 'ইয়ু আর উইথ আস অর এগেইন্সট আস' জাতীয় বুশীয় বিশ্বব্যাপী যুদ্ধদামামা, মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তুলকালাম এবং সেই থেকে চলমান ওপেন-এন্ডেড সঙ্ঘাত ও যুদ্ধ-বিগ্রহ -- ইত্যাদিকে বাংলাদেশ-সহ বিশ্বজুড়েই আরব-অনারব নির্বিশেষে মুসলমানরা চেতনে-অবচেতনে তাদের পার্সেপশনে ইসলাম ও তাদের মুসলমানিত্বের উপর, মুসলমান হিসেবে তাদের পরিচয় ও পরিচয়বোধের উপর একটা প্রলয়ঙ্করী আক্রমণ হিসেবে ধরে নিয়েছিল। আর মানুষ যখন আক্রান্ত হয়, তখন সে যে কারনে বা জিনিসের জন্য আক্রান্ত হয়, বা হয়েছে বলে সে বিশ্বাস করে, সেই জিনিসটাই সে অনেকসময় সবচেয়ে বেশী করে আঁকড়ে বা উঁচিয়ে ধরে। পারলে এবং যথেষ্ট আগ্রাসী ও উদ্যমী মনোভাব থাকলে পালটা সংগ্রাম করে, না পারলে বা আগ্রাসী বা সহিংস না হলে নিদেনপক্ষে বাহ্যিক চিহ্ণ ধারণ করে। এটা সম্ভবত একধরণের প্যাসিভ প্রতিবাদ, সেইসাথে হয়তো একধরণের মানসিক / মনস্তাত্বিক ডিফেন্স-মেকানিজমও। এই প্রপঞ্চটা কিন্তু ধর্ম-বিযুক্ত অন্যান্য ধরণের কনফ্লিক্টের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

এটা আমার একটা অনুমান মাত্র। ভুলও হতে পারে।

****************************************

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

এটা ঠিক, বুশ তথা আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতি এবং কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের অনেক মানুষকে আমেরিকার প্রতি বিমুখ এবং বিদ্বেষ ভাবাপন্ন করে তুলেছে করে তুলেছে। কিন্তু আমেরিকার প্রতি বিরূপতা বাংলাদেশে তো নতুন নয়। স্বাধীনতার আগে পরে বেশ কিছুটা সময় এদেশে তীব্র আমেরিকা বিরোধীতা বজায় ছিল। উপরে আমি যে পরিবারগুলির কথা উল্লেখ করেছি, সে সব পরিবারে হিজাব আসার সাথে ৯/১১ কিংবা আরব রাজনীতির কোন সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। সেখানে রুচি, জীবনবোধ এবং মননশীলতায় এক ধরনের অবক্ষয় হয়েছে। পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে তাই নিজেদের শিক্ষা কৃষ্টি সংস্কৃতির উপর আস্থা রাখতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে, অনুকরন করছে পরিপার্শ্বে থাকা অন্যদের।

দিগন্ত এর ছবি

একমত। এটা সারা বিশ্বেই আমি কমবেশি দেখতে পাচ্ছি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মন মাঝি এর ছবি

হ্যাঁ, এই বাহ্যিক চিহ্ণ ধারণ ও প্রকাশের নাটকীয় বৃদ্ধিটা বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য অ-মধ্যপ্রাচ্যীয় দেশগুলিতেও মোটামুটি একই সময় থেকে দেখা যাচ্ছে মনে হয় - দক্ষিণ এশিয়াতে তো বটেই, তবে পশ্চিম ইউরোপ ও ইউকে-তেও মনে হয়। আমি ওসব দেশে থাকি না, যারা থাকেন তারা ভালো বলতে পারবেন হয়তো।

****************************************

ঈয়াসীন এর ছবি

সিরিজটা চালিয়ে যান।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পয়েন্টগুলার সাথে দ্বিমত করার কোনো কারণ নাই

০২
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের ঐতিহ্যে এক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখছে কি না

বৃটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে নকশাল- গণবাহিনি; সর্বহারা পার্টি পর্যন্ত সশস্ত্র/গেরিলা মুভমেন্ট বাংলাদেশসহ পুরা উপমহাদেশেই কোনো না কোনো গোষ্ঠীর মানুষের সমর্থন পেয়েছে। এবং রাজনীতির ইতিহাসে এরকম অনেক কার্যক্রমই অনেকের/সবার কাছে সম্মানজনক হিসাবে গণ্য....

০৩
আমি নিশ্চিত না। রাজনীতির ইতিহাসের গতানুগতিক উপস্থাপানও এক্ষেত্রে কিছুটা দায়ি কি না (রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে অস্ত্র হাতে নেয়া)

দময়ন্তী এর ছবি

একটা কৌতুহল। বাংলাদেশে কি নকশাল আন্দোলনের কোনও প্রভাব পড়েছিল? বা সেইজাতীয় কোনও আন্দোলন হয়েছিল?

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

হ্যাঁ, বাংলাদেশেরও কয়েকটি চীনপন্থি বাম দল চারু মজুমদারের লাইন ধরেছিল, গলা কাটাকাটিও কিছু হয়েছিল।

ইয়ামেন এর ছবি

সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টির কথা বলা যেতে পারে।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...

সোহেল ইমাম এর ছবি

প্রায় ক্ষেত্রেই পারিবারিক ভাবেই মানুষ প্রথম নৈতিক শিক্ষাটা পায়। আর এই নৈতিক শিক্ষাই তার নীতিবোধের মানদণ্ড তৈরীতে একটা বড় রকমের প্রভাব রাখে। কিন্তু অনেক দিন থেকেই এই নৈতিক শিক্ষাটা আলাদা ভাবে দেবার কথা অভিভাবকরা ভাবেননা। তারা ভাবেন ধর্মীয় শিক্ষাই যথেষ্ট, ধর্মীয় শিক্ষা পেলে আর আলাদা করে নীতিকথা শেখাবার প্রযোজন নেই। কিন্তু আমাদের সামাজিক নৈতিকতার সাথে ধর্মীয় নৈতিকতার ফারাকটা অভিভাবকরা প্রায়ই খেয়াল করেননা। আর না করাটার পেছনে অবশ্যই নিজ ধর্ম সম্পর্কে, সেই ধর্মের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতাই দায়ী। একটা সেকুলার নৈতিকতা শিক্ষার বিষয়ে হয়তো এখন থেকেই ভাবা উচিত। ইশতিয়াক ভাই আপনার এই কথাটা ভালো লেগেছে -
“ভেবে দেখুন তো, যেই ছেলেগুলো জঙ্গী হয়েছে তাদের কি একেবারে নতুন করে কিছু শেখানো হয়েছে, নাকি কিছু প্রি-এক্সিসটিং বিষয়কে কাজে লাগানো হয়েছে? যেই “কিছু একটা” নিয়ে আমাদের এত দুশ্চিন্তা, সেটা কি আমরাই ২০ বছর ধরে বুনে দিচ্ছি না? যদি প্রতিটা ছেলে-মেয়ের মধ্যে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে কিছু সীমা তৈরি করে দেওয়া যেত, তাহলে হয়তো এত নৃশংস, জঘন্য কাজ করার আগে তারা দ্বিতীয়বার চিন্তা করতো। ”

লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

দিগন্ত এর ছবি

ভাল লেখা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দময়ন্তী এর ছবি

যথাযথ। ভাল লাগল।

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

নীড় সন্ধানী এর ছবি

প্রতিটি পয়েন্টের সাথে একমত।

'দুনিয়াভর্তি অনাচার অজাচার কদাচার কিন্তু আমার ছেলেটা মাশাল্লাহ সবকিছু থেকে দূরে আছে। নিয়মিত পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করে। নামাজ কালাম পড়ে, নামাজী ছেলেদের সাথে মেলামেশা করে। হিন্দুয়ানী কোন অপসংস্কৃতি নিয়ে মাতামাতি করে না। আমি খুব তৃপ্ত।' ......... এই রকম তৃপ্ত অভিভাবকের সংখ্যা এদেশে অগণিত এবং বাংলাদেশে আজকের এই সমস্যা সৃষ্টি হবার পেছনে সেইসব তৃপ্ত অভিভাবকদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশী।

পরিবারের অভিভাবকের পাশাপাশি রাজনৈতিক অভিভাবকগণও দায়ী যারা কুমীর পুষেছিলেন এককালে, এখন কুমীর স্বাবলম্বী হয়ে নিজের কাজটা বেছে নিয়েছে।

রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেতরে অঙ্গীভূত হয়ে থাকা সহাভূতিশীল অংশের গোপন পৃষ্টপোষকতা না পেলে জঙ্গীবাদের এতটা বংশবৃদ্ধি করা সম্ভব ছিল না।

এই সমস্যার মাত্র সূচনাপর্বে আছি আমরা। আরো ভয়ংকর পরিণতি অপেক্ষা করছে আগামীতে। দেশবাসীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করা ছাড়া তখন আর কোন উপায় থাকবে না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নৈষাদ এর ছবি

আব্দুল্লাহ এ. এম সাহেবের সাথে আমার অভিজ্ঞতা খুবই মিলে গেছে। এবং সময়টাও - মনে হয়েছে ২০০০ দশকের গোড়ার দিক থেকেই এই পরিবর্তনের শুরু। পরিবর্তনটা বেশ ব্যাপক (শেষের প্যারা দিয়ে পুরাপুরি ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না)। তবে আশার কথা দুই একজন বোধহয় কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে হয়েছে... ‘ব্যাপারটা’ মাদ্রাসা, অর্থনৈতিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টি থেকে ... ইংরেজি মিডিয়াম/প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজেদের শ্রেণিতে চলে আসায়...।

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার ভাবে একটা গুরুত্বপূর্ন আলোচনার সূত্রপাত করেছেন... পরবর্তী পর্বগুলির অপেক্ষায় রইলাম।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

খুব ভালো পর্যবেক্ষণ।

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

কয়েকটা বিষয় বলা দরকার মনে করছি ইশিতিয়াক ভাই। এর কয়েকটা ফেসবুকে লিখেছিলাম, হয়ত লক্ষ্য করেছেন বা করেননি। আমার লেখাটাতেও কিছুটা উল্লেখ করেছি। এখানে যেহেতু কিছুটা আলোচনা হচ্ছে এখানেও উল্লেখ করে যাইঃ

(১) অন্য অনেক লেখার মতো এখানেও যেটা আমার সমস্যা মনে হলো সেটা হলো তরুণ প্রজন্মের প্রতি অত্যধিক ফোকাসের ব্যাপারটা। বাচ্চা বয়সী ছেলেগুলোকে যাদের আমরা অনেক ক্ষেত্রেই ব্রেইনওয়াশড বলছি তাদের নিয়েই আমরা আমাদের চিন্তার অনেকটা অংশ ব্যয় করছি। কিন্তু আমার কাছে কিন্তু মনে হয় এরা এই যুদ্ধের সম্মুক যোদ্ধা। এই যুদ্ধে এদের গুরুত্ব খুবই কম। এদের পেছনে যারা কাজ করছে সবাই কিন্তু পরিণত বয়সের। মূল হত্যা পরিকল্পনা বা বিগ প্ল্যানগুলো কিন্তু এত বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের থেকে আসছে না। সাম্প্রতিক ঘটনায় হয়ত আমরা প্রাইভেট ভার্সিটি বা ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেদের সম্মুখ যুদ্ধে দেখেছি, কিন্তু কিছুদিন আগের বাংলা ভাইয়ের সময়কার অবস্থার কথা চিন্তা করে দেখেন সেই সময় কিন্তু এরকম ইংলিশ মিডিয়াম বা প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্রদের ব্যাপারটা আলোচনায় আসে নি। তখন সম্মুখ যোদ্ধার জন্য হয়ত ভিন্ন গ্রুপকে টার্গেট করা হয়েছিল।

(২) আমরা অনেক সময়েই ফ্রেন্ড সার্কেল কালচারাল এক্টিভিটিজ ইত্যাদির কথা বলছি। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবেন সাম্প্রতিক জঙ্গিদের মধ্যে অনেকেই নানা রকম কালচারাল একটিভিটিজ, খেলাধুলা ইত্যাদিতে জড়িত ছিল। আমি জানি না আমরা বারবার যখন এই কথাগুলো বলছি সেটা কি শুধু গৎবাঁধা কথা হিসেবে বলার জন্যই বলছি নাকি আসলেই ভেবে বলছি। আমাদের সিনেমার নায়িকা, আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের গিটারিস্ট, সঙ্গীত প্রতিযোগিতার প্রথমদিকে থাকা গায়ক এরা পর্যন্ত কট্টর ধার্মিক হয়ে যাচ্ছে, জঙ্গি হিয়ে যাচ্ছে। ঠিক কী ধরণের কালচারাল একটিভিটিজ আসলে এগুলো থেকে উত্তরণ দিতে পারে? আমি উত্তর পাই না।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

জনৈক অমুক এর ছবি

অনেক সুন্দর লিখেছেন।

আমি মনে করি, তরুণদেরকে জঙ্গিবাদে প্ররোচিত করার জন্য পরকালের জান্নাত ও হূররা বেশি
দায়ী। গুলশান,শোলাকিয়ায় হামলায় জড়িতদের অধিকাংশই বিত্তবানদের সন্তান। উগ্রবাদী হুজুররা প্রথমে এদের টার্গেট করে। তারপর নানাভাবে এদের ব্রেইন ওয়াশ করা হয়। অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিত। সন্তানদের সাথে তাদেরকে আরো বেশি বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।