[দৈনিক আমাদের সময়ে পাঠানো চিঠি। সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে। আদৌ কেউ এটি দেখবেন কিনা জানি না, তাই নিজের ব্লগেই লিখে রাখলাম মতটুকু।]
আমি আমাদের সময়ের। অধিকারের সাথেই ভাবি এমনটা। অধিকারটা অর্থ বা অর্জনের অধিকার না, আন্তরিকতার। ছুটির দিনেও প্রকাশিত হয় এবং সবার আগে ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয় দেখেই প্রবাস থেকে আমাদের সময় পড়া শুরু আমার। মৌলিক কিছু গুণাবলি ভাল লাগতো দেখে দিন কয়েকের মধ্যেই আমি আমাদের সময়ের নিয়মিত পাঠক হয়ে উঠি। চটুল নিরপেক্ষতার নামে পাঠকের সাথে এক্কাদোক্কা খেলার চেষ্টা ছিল না, নিজেদের ভুল বুঝতে পারার সাথে সাথে অনুকরণীয় রকম নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা ছিল, পত্রিকার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও সমালোচনাগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা ছিল। কে কী ভাবলো তা নিয়ে ভীত না হয়ে বিবিধ রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির কথা আগাম জানাতো পত্রিকাটি। পর্দার অন্তরালের হিসেব-নিকাশগুলো জেনে আমার মত সাধারণ পাঠক আলোকিত হতে পারতো। সেই বিশ্বাসে বড় একটা ধাক্কা লাগলো পহেলা সেপ্টেমরের প্রধান প্রতিবেদন দুটোয়। ‘যে সভার খবর মিডিয়ায় আসেনি’ শীর্ষক অবমূল্য প্রতিবেদন এবং তার সাথে সাথে সম্পাদকের আন্দাজনির্ভর লেখা পড়ে দুঃখ পেলাম খুব। মেলাতে পারছি না আমাদের সময়ের সাথে।
উক্ত প্রধান প্রতিবেদনের মূল সুর এটাই ছিল যে, একটি সম্মেলনে কিছু শিক্ষক বিদ্যমান সামরিক শাসন নিয়ে বিরুদ্ধমত প্রকাশ করেছেন। ইঙ্গিত করা হয়েছে যে এমনতর মতপ্রকাশের কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা দেশে ছাত্র-জনতা বিস্ফোরিত হয়েছে প্রতিবাদে। চর্বিমুক্ত বিশ্লেষন এটুকুই বলছে আমাকে। উক্ত শিক্ষকেরা দায়ী, কারণ তারা প্রকাশ্যে সেনাশাসন নিয়ে তাদের অসন্তোষ ও বিরুদ্ধমত প্রকাশ করেছেন। এটি কি কোন রাজনৈতিক সমাবেশ ছিল? ‘ছাত্র রাজনীতি, সিভিল মিলিটারি রিলেশন ও বাংলাদেশের উন্নয়ন সমস্যা’ নিয়ে হচ্ছিল আলোচনা। উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন জেনারেলরা। মত রাখলেন শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিনিয়র শিক্ষকেরা। এখানেও বলা যাবে না যে এই দেশের জন্য সেনাশাসন ভাল নয়? বলা যাবে না যে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি সাধারণ মানুষ ভাল ভাবে নেয় না? এখানেও বলা যাবে না যে সরকার ও সেনাবাহিনী নগ্ন রকম পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে? বলা যাবে না যে উর্দি পরে যুদ্ধ করার অধিকার থাকলেও রাজনৈতিক বক্তৃতা দেবার অধিকার নেই সেনাপ্রধানের? কাকে বলবো এই কথাগুলো? কোথায় বলবো? এটা যদি উষ্কানি হয়ে থাকে, তাহলে প্রতিবাদ বা সমালোচনা কী?
সেই সভার কথাগুলো তো মাঠ কাঁপানোর জন্য বলা হয়নি। মিডিয়াতেও আসেনি এই কথা। যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁদের ভূমিকা আলোচনা-সমালোচনার দাওয়াতে এসেও ভুল ধরিয়ে দেওয়া যাবে না? কী ভাষায় বর্ণনা দিলেন এই সমালোচনার? পর্দার অন্তরালে টাকা ঢেলে কে কী করলো তা আমি জানতেও চাই না। আমি শুধু এটুকু বুঝি যে দেশ নিয়ে আমারো সমধর্মী কিছু সমালোচনা আছে। আমি বুঝি যে সাধারণ্যে ক্ষোভ না থাকলে টাকা ঢেলেও আন্দোলন তৈরি করা যায় না।
সভ্য সমাজের সদস্য হিসেবে আমি আমার মত প্রকাশের কথা ভাবি কোন ফোরামে বলবার সুযোগ এলে। আপনাদেরই ডিসেম্বরের প্রবাসী বাঙ্গালিদের সম্মেলনে যদি মুখ ফস্কে বলে বসি এরকম কিছু? এই কথাগুলো তো বাতাসে কান পাতলেই শোনা যায়। উপেক্ষিত অসন্তোষগুলো সম্পর্কে সজাগ করে দিলে কি আমার মান-সম্মান ধরেও এভাবেই টান মারবে আমাদের সময়? পদে পদে সেনাবাহিনীর ‘ব্লাডি সিভিলিয়ান’ গালি খেয়ে আমি কার কাছে অভিযোগ করবো? আমার দেশের সেনাবাহিনী যখন দেশরক্ষা বাদ দিয়ে নিজের ওয়েবসাইটে দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের বিষোদ্গার করবে তখন আমি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো? আমি সেনাশাসন বিরোধী হলেও ভুলেও প্রবাসে দেশের সমালোচনা করি না পাছে কেউ শুনে ফেলে ভেবে। ওদিকে আমারই বিদেশী বন্ধুরা সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইট দেখিয়ে বলে, তোমাদের আর্মি নিজের দেশের শিক্ষকদের নিয়ে এগুলো কী ছেপেছে? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো?
যে সভার কথা মিডিয়ায় আসেনি, তেমনি আরেকটি সভার কথা বলি। ব্যারিস্টার মঈনুল ভান ধরেছিলেন জামাতে ইসলামীর সেক্রেটারিকে না চেনার। অথচ কিয়ৎকাল পরই তার মিথ্যাচারের প্রমাণ বেরিয়েছে। তিনি ছাত্র শিবিরের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছিলেন, এমন ভিডিও বেরিয়েছে। তাঁর বামের তিনটি চেয়ারে যথাক্রমে উপবিষ্ট ছিলেন মীর্জা আব্বাস, মতিউর রহমান নিজামী, এবং আলী আহসাম মোঃ মুজাহিদ। দেশের একটি মাত্র পত্রিকা ছোট্ট করে এর কথা লিখেছে। আমাদের সময় কি পারবে এই সভার কথাও প্রথম পাতায় প্রকাশ করতে? পাঠক হিসেবে আদরের পত্রিকার এই পরীক্ষা নিতে চাইতেই পারি আমি। যাচাই করে দেখার জন্য দেখুন এখানে -- http://www.esnips.com/web/ishtiaqrouf/
সময়টা সততা এবং সত্য উন্মোচনের। আমাদের সময় কি এই সময়ের থাকতে পারবে? পারবে নিজেকে সেনাসরকারের মুখপাত্র হওয়া থেকে বিরত রাখতে?
মন্তব্য
আমাদের সময় আমিও পড়ি অন্য সব পত্রিকার আগেই। কারণ এতে আগাম তথ্য থাকে কি ঘটতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে, এর রিপোর্ট পড়লে বুঝা যায় সরকার পরেরদিন কী করতে যাচ্ছে।
যেদিন এই সভার সংবাদ ছাপা হয়েছিল সেদিন সম্ভবত: ৩/৪টি প্রথম পাতার সংবাদ লিখেছিলেন সম্পাদক নাইমুল নিজেই। তখনই আমার মনে হয় এই পত্রিকার নাম হওয়া উচিত দৈনিক নাইমুল সময়।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ভাল বলেছেন এটা। আমারো এটা মনে হয় খুব। এই ব্যাপারগুলো পত্রিকামহলের অনেকেই হয়তো জানে, কিন্তু ছাপে না। আমাদের সময়ে বলে দেওয়া হয়। আধাদিন পরের খবর পাওয়া যায় কখনো কখনো।
দ্বিতীয়াংশের সাথেও একমত। দু-চার পাতার পত্রিকায় সম্পাদকের একার গোটা তিনেক লেখা... মজা লাগে বেশ। লেখাগুলো একটু আগোছালো হলেও খারাপ লাগতো না। কিন্তু ইদানিং কেমন যেন হয়ে গেছে সব। প্রথম আলো তো তবু কিছু রেপুটেশন জমিয়ে তারপর তা বিক্রি করেছিল, এরা দেখি গাই কেনার আগেই মাইঠ্যা কিনছে!
এই সামরিক শাসন পুর্ববর্তী শাসনের চেয়ে ভয়ংকর হওয়ার সম্ভাবনা আছে কয়েককারনে ।
এর একটা হলো মিডিয়ার দালালী । এরশাদের সময় দেশ্র মুল ধারার সংবাদপত্র গুলো সামরিক শাসনের বিরোধীতা করেছিলো । আহমেদুল কবীরদের মতো উচুঁ মাপের সম্পাদকরা ছিলেন । জোর করে নিউজ ব্ল্যাক আউট করলে তার প্রতিবাদে পত্রিকার এক কোনায় কালো ব্যাজ লাগানো হতো ।
এবার তারা সবকিছু এবং সবাইকে ম্যানেজ করেই মাঠে নেমেছে ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এদের আমি সন্দেহ করতে চাই না। কাউকেই আমি অযথা সন্দেহ করতে চাই না। প্রমাণিত অপরাধী (জামাত, উগ্র জাতীয়তাবাদী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ) বাদে সবাইকেই আমি বেনিফিট অফ ডাউট দেই। তবে এই সরকারের কিছু কাজ খুব খারাপ লাগছে।
* জামাতকে এরা কিছুই করছে না। দালালের মত বরং জামাতের সাফাই গাচ্ছে দিনরাত।
* প্রধান উপদেষ্টা গর্তে ঢুকে আছেন, আর দেশ চষে সচেতনতার শষ্য বুনছেন সেনাপ্রধান। এই লোকের তো টেবিলের পেছন আর ট্রেঞ্চের ভিতর ছাড়া কোথাও থাকার কথা না। পোর্টফোলিও আর পারফরমেন্স মিলছে না।
* দুদকের প্রধান হেলিকপ্টার করে জেলায় জেলায় ঘুরে মানুষকে দুর্নীতি সম্পর্কে সজাগ করছেন। তার মানে এই দেশের চাষাগুলো এমনিতে চোর বা চোরের সহচর বা চুরি বুঝে না?
* উকিল ছিলেন নিক্সন আমলের সিআইএ চর, আর তার বস হলেন বিশ্বব্যাংকের আমলা। চিহ্নিত শত্রু দুটোই। আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সুশাসন পাইনি। স্বাধীনতার অন্যতম ঘোষকের কাছে ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ পাইনি। এক সেনাপ্রধান পরের বউ আর নিজের বিছানা নিয়েই ব্যস্ত থাকলেন। জিয়ার স্ত্রী-পুত্ররা দেশকে গণধর্ষন করলেন। মুজিবকন্যা কিছুটা কম গেলেও রাজাকারদের ছেড়ে দিলেন এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষশক্তিকে নিজ অহমে ধ্বংস করলেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা চুরি করে গেলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মসনদে বসে দালাল হয়ে গেলেন। তবু এই দুইজন মানুষ সহ অনেকেই কীভাবে আশা করেন আমরা 'কর্তার ইচ্ছাই আইন' জাতীয় কথাবার্তা মেনে নিবো?
* এই সরকার ব্যর্থ হলে খালেদা-হাসিনার আমলে ফিরে যেতে হবে, এই কথা শুনতে শুনতে কান খসে যাবার জোগাড়। কেউ কেন বলে না যে এই সরকার খালেদা-হাসিনার আগের সরকারও হবে না? উলটো তো এটা বলতে গেলে দাবড়ানি খেতে হয় এখন।
* ...
যাক, এসব বলে কী হবে আর? আমার টাকায়ই আমার দেশ কিনে নিয়েছে আর কেউ।
আপনি লেখাটি সরাসরি নাঈম ভাইকে ই-মেইল করুন।
উনি সবগুলো লেখা নিজে পড়েন।(যদিও প্রাপ্তি স্বীকার করেন না সবসময়)
-----------------------------------
ঢাকার ভূমে ফিরেছে একাত্তর/প্রস্তুতি নে,সময় হলো তোর..
করেছি। যৎসামান্য এই ভরসাটুকু ওনার উপর আছে বলেই সাহস করে লিখেছি। লিখেই মনে হচ্ছে, দেশে গেলে কি বিমানবন্দরের চৌকাঠ পেরোতে পারবো আদৌ, নাকি তার আগেই দমাদ্দম লাগানো শুরু করবে।
জানলাম।
নতুন মন্তব্য করুন