গণআত্মহত্যা প্রসঙ্গে.........

জাহেদ সরওয়ার এর ছবি
লিখেছেন জাহেদ সরওয়ার (তারিখ: সোম, ১৬/০৭/২০০৭ - ৪:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহে ঘঠে যাওয়া একটা মর্মান্তিক গণআত্মহত্যার ঘঠনা আমাকে প্রায় তিনদিন ঘুমোতে দিচ্ছেনা। একই পরিবারের নয়জন সদস্য হাতে হাত রেখে চলন্ত ট্রেনের নীচে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। সারাজীবন আত্মহত্যাকারী কবিসাহিত্যিকদের আমি অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা করে এসেছি। কেননা আত্মহত্যা করতে যে মানসিক শক্তি দরকার তা গড়পড়তা মানুষের কম্ম নয়। এটা হচ্ছে একজন মানুষের ব্যক্তিক শক্তিকে সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এসে তার চুড়ান্ত ব্যবহার করা। এই জন্য আমি সক্রাতেসকে শ্রদ্ধা করি, শ্রদ্ধা করি এসেনিন, মায়াকোভস্কি,সিলভিয়া প্লাথ, আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে প্রমুখ দেবদেবীদের। কিন্তু সম্প্রতি ময়মনসিংহের এই ঘঠনা আমার শ্রদ্ধায় বেঘাত ঘঠিয়েছে। আত্মহত্যা সম্পর্কে নতুন করে গবেষনার ভাবার দরকার বলে মনে করিয়ে দিয়েছে। একবার ভাবুনতো নয়জন মানুষ হাতে হাত বেধে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে যৌতভাবে তাদের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিতে। কি সাংঘাতিক এই সিদ্ধান্ত। তাদের পায়ে পায়ে তৃণলতাগুলো কি কেপে উঠে নাই। বাতাস কি তাদের চারপাশে কেদে কেদে ফেরে নাই। ইস্পাতের রেললাইন কি নদী হয়ে যাবার বাসনা করে নাই!!! কিন্তু কেন কেন কেন এই গণ আত্মহত্যা? তাদের ডায়রীতে বেশ কিছু লেখা পাওয়া গেছে। তারা লিখেছে তারা সকল ধর্মের উর্ধ্বে। তারা কোনো ধর্মের অনুসারী নয়। তাই মনে হয় এটা কোনো সাধারন আত্মহত্যার ঘঠনা নয়। তাদের পরিবারের সামান্য ইতিহাস থেকে জানা যায়। তাদের পরিবারের বড় ছেলে আরিফ আদম অক্সফোর্ড থেকে লেখাপড়া শেষ করে। বিলেতে কোনো এক কালেজে পড়াতেন। দেশে আসলে কে বা কারা তাকে হত্যা করে। সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। আমার মনে হয় সেই থেকেই এই পরিবার ধর্মের ওপর ইশ্বরের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছে। পুরোপরিবারটাই উপলব্ধি করেছে যে আসলে মানুষের জীবনটা এক অনন্ত শূণ্যতার গোলকধাধা ছাড়া আর কিছু নয়। তবে তাদের ধারনা গুলো খুব পাকা ছিল বলে মনে হয়না। তারা নিজেদের আদমের লোক হিসাবে পরিচয় দিত। কিন্তু আদমকে স্বীকার করা মানেতো সেমেটিক ধর্মগুলো মেনে নেয়া। পক্ষান্তরে আরবীয় ইশ্বরকেও মেনে নেয়া। নয় জনের এই গণআত্মহ্যা আমার কাছে এখনও বিশাল এক প্রশ্নচিহৃ।।


মন্তব্য

অচেনা এর ছবি

নয় জনের এই গণআত্মহ্যা আমার কাছে এখনও বিশাল এক প্রশ্নচিহৃ।।

আসলেই বিশাল এক প্রশ্নচিহৃ।
-------------------------------------------------
যত বড়ো হোক ইন্দ্রধনু সে সুদূর আকাশে আঁকা,
আমি ভালোবাসি মোর ধরণীর প্রজাপতিটির পাখা॥

অপ বাক এর ছবি

গল্পের অনেক পিঠের একটা ছিলো সেই পরিবার ধর্মান্তরিত হয়েছিলো বলে তাদের সামাজিকভাবে একঘরে করা হয়- এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে সেখানের স্থানীয় চার্চের যাজক- এবং তাদের পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্যা বলেছেন তারা তাদের পিতার ইচ্ছা মোতাবেক তাকে তার পরণের কাপড়ে দাফনের জন্য এ গল্প তৈরি করেছিলো- তবে তার বাবার দাফন হয়েছে কাফনেই- এবং পরিবারটা সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে গিয়েছিলো-

বিষয়টা মানুষের অবিবেচনার একটা উদাহরণ এবং আমাদের অনুদারতার একটা স্মারক- আমরা অনেক উদারতার কথা বলি- আমরা সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় বড় কথা বলি, তবে সত্য হলো আমরা ধর্মান্তরিতদের অবজ্ঞা করি এবং সম্ভবত ঘৃনাও করি-

দোষটা মুসলিম থেকে খ্রীষ্টান হওয়ার গুজবের নয়- এমন ধর্মান্তরিত হওয়ার ধার্মিক ঘৃনা আদিবাসি সমাজের অধিবাসীদেরও ভোগ করতে হয়-

হাসিব এর ছবি

ওরা সামাজিকভাবে নিগৃহীত হওয়ায় আত্নহত্যা করেছে এরকম প্রমান পাওয়া যায়নি । ওরা বরঞ্চ নিজেরাই সমাজ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছে । গত কয়েকদিনের পত্রিকাগুলোর আপডেট এটাই ।

পশ্চিমে ধর্মীয় কারনে গণআত্নহত্যার সাথে এই ঘটনার বেশ মিল আছে ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

হাসিব এর ছবি

কেননা আত্মহত্যা করতে যে মানসিক শক্তি দরকার তা গড়পড়তা মানুষের কম্ম নয়। এটা হচ্ছে একজন মানুষের ব্যক্তিক শক্তিকে সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এসে তার চুড়ান্ত ব্যবহার করা।

বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এটাকে একটা অসুস্থতা । মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তিরাই আত্নহত্যা করে । মানসিকভাবে শক্তিশালীরা এটা করে না । এটাকে মহিমান্বিত করার কিছু নেই ।

এধরনের গণ আত্নহত্যা পৃথিবীতে নতুন না । মধ্যযুগে দখলদার শত্রুর হাত থেকে বাচার জন্য মানুষ গণ আত্নহত্যা করতো । আর আধুনিক কালে ধর্মবিশ্বাসের কারনে মানুষ এরকম করে । এ জাতীয় আত্নহত্যাগুলো আমেরিকা ও জাপানে প্রচলিত । কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে এটাই হয়তো প্রথম ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

হাসান মোরশেদ এর ছবি

অদ্ভূত ।
জীবন এতো তুচ্ছ নাকি? জীবন ফুরালে পর কিসের সাহিত্য,কিসের ধর্ম,কিসের রাজনীতি-

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

??? এর ছবি

একটা স্নায়ুক্ষয়ী টপিক। ১১ জুলাই এই খবর পড়বার পর থেকে কতকিছু পড়ছি, কতকিছু লিখছি, কিন্তু ভাবছি ঐ একটা বিষয়েই।

কী ভাবছি?

ভাবছি... যে আমাকে আরো আরো বেশি করে ভাবতে হবে।

তাতে কি কোনো কিনারা হবে এই রহস্যের? কবে?

নাকি...সভ্যতার অন্যসব ক্ষতচিহ্নের মত, অসহায় আর রক্তস্নাত ঐ রেললাইনটিকেও ভুলে যেতে হবে?

জাহেদ সরওয়ার এর ছবি

হাসিব
বিতর্কের শুরু করার জন্য ধন্যবাদ। আপনি উদ্ধৃতি দিয়ে তার বিপক্ষে মত দিয়ে জানিয়েছেন। আত্মহত্যা মানষিক রোগীদের কাজ। কিন্তু গভীর ভাবে ভেবে দেখুন তো। অচল পিছনমুখো মানুষদের সমাজে আলোকিত মানুষেরা কত অসহায়। যে সমাজ পুরোটাই অসুস্থ সেখানে একজন সত আলোকিত মানুষই কি মানসিক বিপর্যস্ত নয়। ভলতেয়াররে মতো বলতে হয় দুর্নীতিপরায়ন মানুষের সমাজে কারাগারই সত মানুষদের একমাত্র বাসস্থান নয়তো কবর।

*********************************************

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।