পদ্মাপারের মহাকাব্য আবু ইসহাকের পদ্মার পলিদ্বীপ।।

জাহেদ সরওয়ার এর ছবি
লিখেছেন জাহেদ সরওয়ার (তারিখ: মঙ্গল, ১০/০৬/২০০৮ - ৩:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বেজন্মা শিশু শ্রী সালমান রুশদী ও তদীয় সাবেক স্ত্রী বারবারা সম্পাদিত- ভিনতেজ কালেকশন অব ইন্ডিয়ান রাইটিং পুস্তকটা প্রকাশের সাথে সাথেই শোরগোল লাগছিল ভারতবর্ষে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ ধর্মী লেখা আমার চক্ষুগত হয়েছে। তার মধ্যে মলায়ালাম উপন্যাসিক শিবশঙ্কর পিল্লাই, মহাশ্বতা দেবী অন্যতম আরো অনেকেই বিষয়টা নিয়ে জলঘোলা করেছে। মানবেন্দ্রনাথ তো এটাকে স্রেফ বাচ্চাদের গুখেলা বলে খতম করলেন। তবে শ্রী পিল্লাইর লেখাটা বিশ্লেষনাত্বক। রুশদী যা করেছেন এই গল্প সংকলনে সেটা হচ্ছে এ বাংলা থেকে যে গল্পটি নিয়েছেন সেটার লেখক সত্যজিত রয়। এরকম আরো পুরা ভারতের প্রাদেশিক ভাষা ভিত্তিক লেখকদেরকে স্রেফ আঞ্চলিক লেখক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তো শ্রী পিল্লাই বলছেন রুশদীর এই বইটির ভুমিকা পড়লে বুঝা যায় তিনি কত কম পড়াশোনা করেন। এবং কম পড়াশোনা করে পান্ডিত্য ফলানোর মজা এই বইটা বের হবার পর রুশদি ভালই টের পেয়েছেন। তার আরেক বইয়ের বিক্রির অনুষ্ঠানে ফ্রাঙ্কফুর্টে
বাংলাসাহিত্য বিশেষজ্ঞ হারমান ফ্রিম্যান মন্তব্য করেছিলেন নিজের দেশের লেখা এত কম পড়েন কেন? ভায়ার মুখটা তখন কি রকম হইছিল দেখতে ইচ্ছে করছিল খুব। যাই হোক এই ভুমিকা টুকু টেনে আনার কারণ হল আমাদের আত্মদারিদ্রের প্রসঙ্গে। ইউরোপে যা লেখা হয় ফ্রান্সে বা স্পেনিষে সব আমাদের থেকে সেরা এই আমাদের মানসিকতা। কিন্তু কত আর্ন্তজাতিক মানরে কথা সাহিত্যিক কবি গোষ্ঠী যে আমাদের ভাষায় লুকিয়ে আছে তা আবিস্কার করতে আমরা সিনিকদের পরিচয় দিচ্ছি নিয়ত। আবু ইসহাকের সাহিত্য তেমনি এক ব্যাপার বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। যদিও খুব বেশী বই তিনি লিখেন নাই। সম্ভবত মাত্র ৫ খানা কিতাবে তার সাহিত্য চর্চা সীমাবদ্ধ। ২খানা উপন্যাস(সূর্য-দীঘল বাড়ী, পদ্মার পলিদ্বীপ) ২খানা গল্পগ্রন্থ(হারেম, মহাপতঙ্গ) একখানা ডিটেকটিভ নভেল জাল। কিন্তু তার প্রত্যেকটি বইই অন্যরকম। ইঙ্গিত বহ। মহাকাব্যের লক্ষানাক্রান্ত। পদ্মার পলিদ্বীপ পড়তে পড়তে মনে হয় কোনো মহাকব্যে পড়তেছি। আবার তিনি রুপজানের রূপের বয়ান দিতে দিতে টেনে আনেন সাম্রাজ্যেবাদি জঙ্গরুল্লাকে। জঙ্গরুল্লার মন বুঝা গেলে আমেরিকার মনও বুঝা যায়। চরদখলই তার নেশা। টাকা এবং লোকবল তার মিডিয়া। মিছা ডাকাতির মামলায় ফজলকে জেলে ঢুকায়। তদোপরি পাকাপাকি আঞ্চলিক ভাষার অপূর্ব ভাষা এ উপন্যাসকে মহিমা দান করেছে। নতুন করে আবু ইসহাকের বইগুলো পড়ে দেখার অনুরোধ রইল পাঠকদের প্রতি।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

সূর্য-দীঘল বাড়ী এবং পদ্মার পলিদ্বীপ নামের দুটো উপন্যাসের মধ্যে আমার কাছে পদ্মার পলিদ্বীপ মনে হয়েছে অসাধারণ একটি উপন্যাস। বাংলার গ্রামীন চিত্রের পরিপূর্ণ এক ক্যানভাস যেন।
বলতে দ্বিধা নেই যে, একই জিনিস সবার কাছে একই রকম মনে হয় না। সূর্য়-দীঘল বাড়ী পড়া ও দেখার পরও মনে হয়েছে পদ্মার পলিদ্বীপই অসাধারণ।
পোস্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মাশা।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

আলমগীর এর ছবি

নিরদ সি চৌধুরিকে বাদ দিলেন কেন? রুশদি বেজন্মা হলে চৌধুরি বাবুর জন্য আর কোন বিশেষণ থাকে না।

আবু ইসহাকের লেখা কিছু একটা ৯/১০ এ পড়েছি মনে হয়।

জাহেদ সরওয়ার এর ছবি

আলমগীর
ভদ্রে সি চৌধুরীর সেন্স অব হিউমার অনন্যা।
আত্মঘাতী হলেও তার মধ্যে ভারতীয়ত্ববোধ বেশী যে কারণে ভারতীয়দের কে তিনি এত গাল পাড়েন। কিন্তু রুশদী অন্য মাল তারকা হওয়াই যার জীবনের ব্রত। সি চৌধুরীর বই গুলোর ভেতর চিন্তার খোরাক থাকে। অটোবায়োগ্রাফী অব আননোন ইন্ডিয়ান, প্যাসেজ টু ইংল্যান্ড অথবা আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ অথবা বাঙ্গালী জীবনে রমণী বইগুলো পড়লে বুঝা যায়। কিন্তু রুশদীর বইগুলোতে উচ্চাশাটা বাদ দিলে আর কি থাকে? শুধো নিষিদ্ধ হবার জন্য একজন মানুষ কি রকম বিখ্যাত হতে পারে রুশদী একমাত্র উদাহরন নয় তসলিমাও।

*********************************************

আলমগীর এর ছবি

আত্মঘাতী হলেও তার মধ্যে ভারতীয়ত্ববোধ বেশী যে কারণে ভারতীয়দের কে তিনি এত গাল পাড়েন।

এটুকু ছাড়া বাকিটুকুর সাথে প্রায় একমত। তার সব বই আমি একাধিক বা পড়েছি, চিন্তার কিছু পাইনি। একাধিকাবর পড়েছি ভাল/মন্দ লাগার কারণে না; শুধু খুঁজতে চেয়েছি ভদ্রলোক কী চাচ্ছেন তার মানব জীবনে। আমার ধারণা হয়েছে, মাইকেল কেবল পা চাটতে গিয়েছিলেন, পারেননি, আর নিরদ বাবু ব্রিটিশদের বিষ্ঠা খেয়ে মরার আগ পর্যন্ত তাদের গুণগান করে গেছেন।

একটা লোক নিজে অহংকারি/উচ্চবংশের/ভালো রক্তের/এরোগেন্ট এবং সেটা ছাপার অক্ষরে লিপিবদ্ধ করে যেতে পারে এটা কখনও বিশ্বাস হয়নি।

আমি রুশদীর স্যাটানিক ছাড়া বাকী কিছু পড়িনি। বৃটিশদের শুধু বৃটিশদের গুণগান করেছে এমনও শুনিনি। বরং নাইট পাওয়ার পর সেটা গ্রহণ করতে তার অস্বস্তির কথা শুনেছি।

দুর্দান্ত এর ছবি

আবু ইসহাকের বিষয়ে আমি আপনার সাথে এক মত।

ব্যাক্তি রুশদি আর তসলীমা কে ঢংগী, ভন্ড বলা চলে, তবে এঁদের লেখাকে খাটো করে দেখার কারনটা বুঝি না।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

রূশদীর ধারায় হালে ভিএস নাইপলকেও ফেলা যায়। সম্প্রতি এনাকে ধোলাই করে একটা কবিতা লিখেছেন, ক্যারিবিয় কবি ডেরেক ওয়ালকট। http://www.newstatesman.com/books/2008/05/derek-walcott-jamaica-naipaul
এ বিষয়েই আরেকটি লিংক
http://www.newstatesman.com/society/2008/05/naipaul-walcott-poem-literary

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

'প্রবাসে জল দেখিলে দেশের কথা মনে পড়ে'
এই লাইনটির জন্য নীরদ চৌধুরীকে চিরকালের জন্য ক্ষমা করে দিয়েছি। আর আমলে নিয়েছি, তাঁর ভাবনা জাগ্রত করার ক্ষমতা ও ভাষার শক্তির জন্য। সাম্রাজ্যের দাস অনেক আছে, কিন্তু সুলেখক তো সবাই নন!

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।