তোমাদেরকে একটা মজার ঘটনার কথা বলবো আজকে। কালকে সন্ধ্যায় আমার আর মায়ের সাথে কী হয়েছিল সেই গল্প। আমার বয়স বারো, আর আমি মেয়ে। আমার মায়ের বয়স চৌত্রিশ হলেও আমি কিন্তু এখনই প্রায় মায়ের সমান লম্বা।
কালকে বিকেলে মা আমাকে লন্ডনে নিয়ে গিয়েছিল ডেন্টিস্টের কাছে। ডেন্টিস্ট আমার পেছনের দাঁতে ফুটো খুঁজে বের করলো, বেশি ব্যথা না দিয়ে ফুটো ফিল-আপও করে দিলো। তারপর আমি আর মা গেলাম একটা ক্যাফেতে, আমি নিলাম একটা বানানা-স্প্লিট, আর মা নিলো কফি। আমরা যখন যাবার জন্যে উঠলাম তখন প্রায় ছ’টা বাজে, এদিকে ক্যাফে থেকে বেরুতেই শুরু হলো বৃষ্টি।
“ক্যাফেতে ফিরে গিয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করলে হয়না?” বললাম আমি। আরেকটা বানানা-স্প্লিটের মতলব কষছিলাম আসলে, চমৎকার ছিল স্বাদটা।
“বৃষ্টি থামবে না। আমাদের বাড়ি যাওয়া দরকার।“
আমরা ফুটপাথে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে যখন ট্যাক্সি খুঁজছিলাম, অনেক ট্যাক্সিরই দেখা মিলছিল কিন্তু সবগুলোতেই যাত্রী ছিল।
“আহারে! যদি একটা গাড়ি থাকতো, আর ড্রাইভারও...”, মা বললো।
ঠিক এই সময় লোকটা এগিয়ে এল আমাদের দিকে। ছোট একটা মানুষ আর বেশ বয়স্কও। সত্তরেরও উপরে হবে হয়তো বয়স। নাকের নিচে তার সাদা গোঁফ, সাদা ঝোপের মতো ভুরু, আর কুঁচকানো গোলাপি মুখ। ভদ্রলোক এগিয়ে এসে হ্যাট ছুঁয়ে সামান্য অভিবাদন করে মাকে বললেন, “মাফ করবেন, অনুগ্রহ করে বিরক্ত হবেন না...”
ভদ্রলোকের হাতে ছিল একটা ছাতি, আর সেটা তিনি মাথার অনেক উপরে ধরে ছিলেন উঁচু করে।
“জ্বি?” মা উত্তর দিল, বেশ দূরত্ব বজায় রেখে, ঠাণ্ডা স্বরে।
“আমি ভাবছিলাম আপনার কাছে সামান্য একটু সাহায্য পাবো কিনা। খুবই সামান্য একটু সাহায্য দরকার।“
আমি দেখলাম মা কেমন সন্দেহ নিয়ে তাকালো ভদ্রলোকের দিকে। আমার মা বেশ সন্দেহপ্রবণ, বিশেষ করে দু’টো জিনিসের ব্যাপারে – অপরিচিত লোক আর সেদ্ধ ডিম। যখন মা সেদ্ধ ডিমের উপরটা কেটে চামচ দিয়ে খুঁচিয়ে দেখে, মনে হয় ঠিক ওর ভেতরে ঠিক একটা ইঁদুর বা আর কিছু লুকিয়ে আছে, এখনই লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসবে!
অপরিচিত মানুষের ব্যাপারে মায়ের চিরকালীন বক্তব্য হলো, “যত বেশি ভদ্র, ততই সন্দেহজনক”। এই বুড়ো লোকটা অনেক বেশি ভদ্র আচরণ করছিলেন, তাঁর ভাষা ছিল মার্জিত, পোশাক রুচিসম্মত। একেবারেই নিপাট ভদ্রলোক একজন, এটা বুঝতে পারছিলাম কারণ ওঁর জুতো।
‘মানুষকে চেনার উপায় হলো তার জুতো’, এটাও মায়েরই আরেকটা পছন্দের কথা। এই লোকটা পরে ছিলেন চমৎকার খয়েরি জুতো।
“ব্যাপারটা হয়েছে কী, আমি একটু ঝামেলায় পড়েছি,“ ভদ্রলোক বলতে থাকেন। “বেশি না, নিশ্চিন্ত থাকুন। তেমন কিছুই না আসলে। কিন্তু আমার একটু সাহায্য বড়ই প্রয়োজন। দেখুন ম্যাডাম, আমার মতো বুড়ো মানুষেরা আসলে বেশ ভুলো মনের হয়ে পড়ে...”
মা থুতনি উঁচু করে, নাক বেয়ে, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছিলো, ভদ্রলোকের দিকে। এটা হলো মায়ের ভয়ঙ্কর দৃষ্টিগুলোর একটা, এই শীতল-নাক-চাহনিটা। অধিকাংশ মানুষই এই দৃষ্টির সামনে পড়লে কেঁচো হয়ে যায়। একবার আমি নিজে আমার স্কুলের হেডমিস্ট্রেসকে মায়ের এই দৃষ্টির সামনে বোকার মতো তোতলাতে শুরু করতে দেখেছিলাম। কিন্তু এই ছোট্ট লোকটা, ছাতার নিচে কিন্তু নিরুত্তাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন মায়ের ঐ শীতল-নাক দৃষ্টির সামনে, চোখের পলক না ফেলে।
উনি স্মিত হেসে বললেন, “বিশ্বাস করুন, প্লিজ। আমি ঠিক অমন নই যে রাস্তাঘাটে ভদ্রমহিলাদেরকে থামিয়ে আমার ঝামেলার কাহিনি শোনাই।“
“আমিও আশা করি তা না,“ মা বলল।
মায়ের কথার ধরণে আমার আসলে বেশ লজ্জাই লাগছিল। আমি মাকে বলতে চাইছিলাম, “ ওহ! মা, লোকটা ভীষণ বুড়ো, আর উনি ভদ্র আর মিষ্টভাষী। আর নিশ্চয়ই উনি কোন বড় রকমের ঝামেলায় পড়েছেন। অতটা রূঢ় না হলেও হয়তো চলে,” কিন্তু মুখে আমি কিছুই বললাম না।
ছোট্ট লোকটা ওঁর ছাতা এক হাত থেকে অন্য হাতে নিলেন, “ এর আগে আসলে কখনো ভুলি নাই।“
“কী ভোলেন নাই?” আমার মা কড়াভাবে জিজ্ঞেস করলো।
“আমার ওয়ালেট। আমি নিশ্চয়ই আমার অন্য জ্যাকেটের পকেটে ফেলে এসেছি। কী হাস্যকর ব্যাপার দেখুন।“
“আপনি কি এখন আমার কাছে টাকা চাচ্ছেন?”
“ছি, ছি! তা কেন?!” ভদ্রলোক প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন। “খোদা না করে কখনো তা করতে হয়!”
“তাহলে? কী চাচ্ছেন আসলে আপনি? যা বলবার তাড়াতাড়ি বলুন। আমরা বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে গেলাম দাঁড়িয়ে দঁড়িয়ে।“
“জি, দেখছি তো। আর সে জন্যেই আপনাদেরকে আমার ছাতাটা অফার করছিলাম। আপনাদেরকে রক্ষা করতো বৃষ্টি থেকে... শুধু যদি... শুধু...”
“শুধু কী?”
“শুধু যদি বিনিময়ে আমাকে একটা পাউণ্ড দিতেন বাড়ি ফেরার ট্যাক্সি ভাড়া হিসেবে।“
মা সন্দেহভরে তাকালো, “আপনার কাছে যদি টাকা নাই থাকে একদম, তবে এখানে পৌঁছুলেন কী করে আগে?”
“হেঁটে,“ জবাব দিলেন ভদ্রলোক। “প্রতিদিনই আসলে হাঁটি আমি। তারপর একটা ট্যাক্সি ডেকে বাড়ি ফিরে যাই। এটাই রুটিন আমার, বছরের প্রতিটা দিন।“
“বেশ তবে হেঁটেই ফিরছেন না কেন?”
“ওহ! পারলে তাই করতাম, সত্যি। কিন্তু পারবো না আসলে, এই বুড়ো হাড়ে আবার অতটা পথ হাঁটা সইবে না আমার। ইতিমধ্যেই অনেক বেশি দূরে চলে এসেছি।“
মা নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। একটু নরম হয়ে এসেছিল ইতিমধ্যেই, দেখতে পাচ্ছিলাম আমি। আর এই রকম বৃষ্টিতে একটা ছাতা পেয়ে যাবার ব্যাপারটা আকর্ষণীয় নিঃসন্দেহে।
“এটা একটা চমৎকার ছাতা”, বুড়ো লোকটাও বুঝেছিল তা।
“হুম, দেখেছি তা।“
“সিল্কের।”
“হ্যাঁ, তাও দেখতে পাচ্ছি।“
“তাহলে নিন না কেন ম্যাডাম। আমার কিনতে লেগেছিল ২০ পাউণ্ড। কিন্তু সেটা মোটেও ব্যাপার না, যতক্ষণ আমি বাড়ি ফিরে আমার বুড়ো পা দুখানা জুরোতে পারছি।“
আমি দেখলাম, মা ব্যাগের মুখ খুলবে কিনা ভাবছে। মা খেয়াল করলো যে আমি তাকে খেয়াল করছি। আমিও তাকে সেই বিখ্যাত শীতল-নাক-চাহনির আমার নিজের ভার্শনটা দিচ্ছিলাম কিনা। আর মা বুঝতে পারছিলো আমি ঠিক কী ভাবছি। আমি ভাবছিলাম, “দেখ মা, তোমার মোটেও উচিত হবে না এই বুড়ো ক্লান্ত মানুষটার অসহায়ত্বের ফায়দা নেয়া।“
মা একটু ভেবে আমার দিকে ফিরে তাকালো। তারপর ছোট্ট মানুষটাকে বললো, “আমার মনে হয় না আপনার থেকে ২০ পাউণ্ড দামের একটা সিল্কের ছাতা এভাবে নেয়া ঠিক হবে। আমি বরং আপনাকে আপনার পুরো ট্যাক্সির ভাড়াটা দিয়ে দেই, সেটাই উচিত।“
“না, না, না!”, চেঁচিয়ে উঠল প্রায় ভদ্রলোক। “এমনটা প্রশ্নেরও বাইরে! আমি ভাবতেই পারি না অমন! হাজার বছরেও না! আমি আপনার কাছ থেকে এমনি এমনি টাকা নিতে পারিনা! আপনি প্লিজ ছাতাটা নিন, আর নিজেকে আর মেয়েটাকে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করুন।“
মা ভদ্রলোককে আড়াল করে আমার দিকে বিজয়ীর দৃষ্টিতে তাকালো, আমি ঠিক বুঝছিলাম মনে মনে বললো, “দেখেছিস? তুই ভুল ভাবছিলি, লোকটা চায় আমি ছাতাটা নেই।“
এবার মা পার্স থেকে এক পাউণ্ড বের করে দিল লোকটাকে। ভদ্রলোক সেটা নিয়ে ছাতাটা বাড়িয়ে দিলেন মায়ের দিকে। টাকাটা পকেটে ভরে, টুপি ছুঁয়ে, চট করে সামান্য সামনে ঝুঁকে সৌজন্য দেখিয়ে, “ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ ম্যা’ম,” বলেই চলে গেলেন।
“ছাতার নিচে আয়, বৃষ্টি থেকে,” মা বললো আমাকে। “আমরা বেশ ভাগ্যবান বুঝলি। আমার এরকম সিল্কের ছাতা ছিল না, আর এটা আমাদের পক্ষে বিলাসিতা করে কেনাও সম্ভব না।“
“ওনার সাথে এত খারাপ আচরণ করছিলে কেন শুরুতে?” আমি প্রশ্ন করি।
“নিশ্চিত হতে চাইছিলাম, যে লোকটা ঠক নয়। আর হলামও তো। ভারি অমায়িক ভদ্রলোক,“ মা বললো। “আমার ভালো লাগছে যে ওনাকে সাহায্য করতে পেরেছি।“
“হ্যাঁ, মা।”
“সত্যিকারের একজন ভদ্রলোক। বড়লোকও, না হলে এমন সিল্কের ছাতা থাকে? আমি অবাক হবো না যদি দেখি উনি কোন নামকরা উপাধিরও অধিকারী। মনে কর, স্যার হেনরি গোল্ডসওয়ার্থ, বা অমন নামের কোন বিশিষ্ট মানুষ।“
“হুঁ, মা।“
“এটা তোর জন্যেও বেশ ভালো একটা শিক্ষা হলো। কখনো তাড়াহুড়ো করতে নেই। সবসময় মানুষকে বুঝতে খানিক সময় নিবি, তাহলে আর কখনো ভুল হবেনা।“
“ঐ যে দেখ, ঐ যে যাচ্ছে ভদ্রলোক।“
“কোথায়?”
“ঐতো, রাস্তা পার হচ্ছে। মা, দেখ ভদ্রলোকের মনে হয় প্রচণ্ড তাড়া আছে!“
আমরা দুইজনে ছোট্ট মানুষটাকে ট্রাফিক বাঁচিয়ে, দ্রুত রাস্তা পার হয়ে যেতে লক্ষ্য করি। ওপাড়ে গিয়ে বাঁয়ে মোড় ঘুরে দ্রুত হাঁটতে থাকে ভদ্রলোক।
“আমার তো ওনাকে দেখে খুব একটা ক্লান্ত লাগছে না মা, তোমার কি লাগছে?”
মা উত্তর দেয় না।
“ওনাকে দেখে ট্যাক্সি নেবার ইচ্ছা আছে বলেও মনে হচ্ছে না।“
মা বেশ শক্ত আর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তার ওপাড়ে ছোট্ট মানুষটার কার্যকলাপ দেখতে থাকে। আমরা তাকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম, আর অনেক তাড়ায় মনে হচ্ছিল তাকে। অনেকটা সৈনিকের মতো মার্চ করে, অন্য পথচারীদেরকে অতিক্রম করে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলো লোকটা।
“কিছু একটার তালে আছে এই লোক”, মা জলদ-গম্ভীর গলায় বলে।
“কিন্তু কী, মা?”
“আমি জানি না, কিন্তু দাঁড়া, বের করে ছাড়ছি। আয় আমার সাথে,” আমার হাত ধরে টান দিল মা। আমরা রাস্তা পেরিয়ে বাঁয়ে মোড় নিয়ে ছুটলাম লোকটার পিছু পিছু।
“দেখতে পাস ওকে?” মা জিজ্ঞেস করে।
“হ্যাঁ, ঐতো! পরের রাস্তায় ডানে মোড় ঘুরছে।“ আমরাও ডানে মোড় নেই। ছোটখাট বুড়ো লোকটা এখন আমাদের ২০ গজ সামনে। কিন্তু প্রায় খরগোশের মতো ক্ষিপ্র গতিতে এগুচ্ছে তখনো, আমাদেরকে পুরো হিমশিম খেতে হয় তাল রাখতে গিয়ে। এদিকে বৃষ্টি নামে আগের চেয়েও তোড়ে, আমি দেখতে পাই লোকটার হ্যাটের কানা থেকে পানি ঝরছে।
“করছেটা কী এই লোকটা?” মা জানতে চায় নিজের মনে।
“যদি ঘুরে তাকিয়ে আমাদেরকে দেখে ফেলে মা?”
“কিছুই যায় আসে না। মিথ্যা বলেছে সে আমাদেরকে। বলেছে হাঁটার মতো শক্তি অবশিষ্ট নেই আর। আর দেখ এখন, এখন কেমন দৌড়ে চলেছে! ব্যাটা এক নম্বরের মিথ্যুক! জোচ্চোর একটা!”
“মানে উনি কোন নামকরা উপাধিধারী বিশিষ্ট ব্যক্তি নন বলছো?”
“চুপ কর্।”
পরের মোড়ে ছোট্ট লোকটা ডানে ঘুরে আবার। তারপর বাঁয়ে। ফের ডানে।
“আমি এত সহজে হাল ছাড়ছি না!” মা বলে।
“যাহ! হারিয়ে গেল তো!” আমি বলি। “কোথায় গেল?”
“ঐ দরজা দিয়ে ঢুকেছে! দেখেছি আমি। ঐ বাড়িটায়। হায় খোদা! এতো দেখি একটা পাব!”
হুঁ, রীতিমতো পাব একটা। বড় বড় লাল অক্ষরে সামনেই লেখা – রক্তিম সিংহ।
“তুমিও নিশ্চয়ই ভেতরে যাবে না, মা?”
“নাহ! বাইরে থেকেই দেখবো, দাঁড়া।“
পাবের সামনের দিকে একটা বিশাল কাঁচের জানালা, আর ভেতরে কিছুটা বাষ্প থাক্লেও, আমরা কাছে দাঁড়িয়ে ভালোই দেখতে পাচ্ছিলাম ভেতরটা, দুইজনে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে খুঁজছিলাম লোকটাকে। আমি মায়ের হাত ধরে ছিলাম শক্ত করে, আর বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটাগুলো আমাদের ছাতার উপরে ছপছপ আওয়াজ তুলে পড়ছিল জোরেশোরে।
“ঐ যে, দেখো,” আমি বলি, “ঐখানে।”
ভেতরটা আবছা হয়ে ছিল মানুষের ভিড়ে আর সিগারেটের ধোঁয়ায়, আর আমাদের ছোটখাটো বুড়ো লোকটা ঠিক তার মাঝে দাঁড়িয়ে ছিল হ্যাট-কোট ছাড়া, আর ভিড় ঠেলে আগাচ্ছিল বারের দিকে। বারের কাছে পৌঁছে, দুই হাত বারের উপরে রেখে বারম্যানের সাথে কথা বলছিল। আমি দেখলাম তার ঠোঁট নড়ছে, অর্ডার দিচ্ছিল বারম্যানকে। বারম্যান খানিক্ষণের জন্যে সরে গিয়ে পরক্ষণেই ফিরে আসলো একটা বড় মগ কানায় কানায় ভর্তি হালকা বাদামি তরলে পূর্ণ করে। ছোট্ট লোকটা সেই এক পাউণ্ডটা এবার রাখলো কাউণ্টারে।
“ঐটা আমার পাউণ্ড!” মা হিসহিস করে বলে উঠলো আমার পাশ থেকে। “লোকটার সাহস কত!”
“গ্লাসের ভেতরে কী?” আমি জিজ্ঞেস করি।
“হুইস্কি।”
বারম্যান কিন্তু পাউণ্ড নিয়ে কোন খুচরা ফেরত দিল না। “প্রায় ট্রেবল হুইস্কি হবে”, মা বললো।
“ট্রেবল কী, মা?”
“সাধারণ মাপের তিনগুণ”।
লোকটা মগ উঠিয়ে ঠোঁটের কাছে ধরলো, তারপর আস্তে করে কাত করলো, আরো কাত করলো, আরো উঁচু করে কাত করলো... আরো... আর দ্রুত সবটুকু হুইস্কি চোঁ চোঁ করে সাবড়ে দিল এক দীর্ঘ ঢোঁকে।
“এটা বেশ দামী ড্রিঙ্ক হলো কিন্তু!” বললাম আমি।
“কী আজব!” মা বললো। “ভেবে দেখ্, পুরো এক পাউণ্ড দিয়ে এক ঢোঁকে অতগুলো হুইস্কি গেলা!”
“এক পাউণ্ডের বেশি দাম, মা। ছাতাটাতো সিল্কের, পুরো কুড়ি পাউণ্ড দাম”।
“হুম, তা ঠিক! লোকটা পাগল!”
ছোটখাটো লোকটা এদিকে বারের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল খালি মগটা হাতে। হাসছিলো লোকটা এখন, আর তার গোলাপী মুখে তৃপ্তির একটা স্বর্ণালি আভা ছড়িয়ে পড়ছিল। আমি তাকে তার জিভ বের করে সাদা গোঁফ চাটতে দেখলাম, যেন সেই অমূল্য হুইস্কির শেষ বিন্দুটাও খুঁজে ফিরছে।
এবার ধীরে ধীরে বার থেকে ঘুরে, আবার ভিড় ঠেলে দরজার কাছে হ্যাট-কোট রাখার জায়গায় ফিরে গেল সে। তারপর হ্যাট চাপালো মাথায়, কোটটা পরলো। আর তারপর...
তারপর জগত-সংসারের প্রতি চরম একটা উদাসীন ভাব নিয়ে, কারো মনে কোন সন্দেহের উদ্রেক না করে, সুন্দর একটা ছাতা উঠিয়ে নিল কোট র্যাকে রাখা অনেকগুলো ভেজা ছাতার থেকে, আর বেরিয়ে পড়লো আবার!
“দেখলি?! দেখলি তুই, কী করলো??!”
“শশশশ! এইদিকেই আসছে!”
আমরা আমাদের ছাতা নিচু করে নিজেদের মুখ ঢেকে ফেললাম। আর ছাতার তল দিয়ে দেখতে থাকলাম আর কী করে লোকটা। কিন্তু আমাদের দিকে বিন্দুমাত্রে না তাকিয়ে, নতুন ছাতা খুলে, মাথার উপরে ধরে যে পথে এসেছিল সেই পথে দ্রুত রওনা হয়ে পড়লো লোকটা।
“এবার করবেটা কী?” মা ভাবে।
“বাহ!” আমি বলি, “অসাধারণ!”
আমরা লোকটাকে ফলো করে প্রধাণ সড়কে চলে আসি, যেখানে প্রথম দেখা হয়েছিল। এবং দেখলাম প্রায় কোন জঞ্ঝাট ছাড়াই, এবার লোকটা তার নতুন ছাতাটা আরেকটা পাউণ্ডের বিনিময়ে হাতবদল করে নিলো, এবার একজন লম্বা, পাতলা লোকের সাথে, যার কিনা গায়ে কোন কোট বা মাথায় হ্যাটও ছিল না! আর যেই না কাজ হাসিল হলো, অমনি ছুট লাগালো উল্টো দিকে, আর নিমিষেই হারিয়ে গেল ভিড়ের মাঝে!
“দেখলি? লোকটা কী ভীষণ চালাক?” মা বললো। “কখনো একই পাবে দুইবার যায় না!”
“কিন্তু পুরো রাত জুড়েই এইটা করতে থাকতে পারবে এই লোকটা।“ আমি ফোড়ন কাটি।
“হুম, অবশ্যই! ...
কিন্তু আমি ভাবছি, নিশ্চয়ই পাগলের মতো দোয়া করে বৃষ্টির দিনের জন্যে।“
মূল গল্প: রোয়াল্ড দাল-এর The Umbrella Man
শুভ জন্মদিন মেটাল ডক ওডিনদা!
এইটা তোমার জন্যে!!
মন্তব্য
দুর্দান্ত অনুবাদ। ঝরঝরে, মুচমুচে।
হায়! কতদিন বৃষ্টি দেখি না!
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
বাহ, মজার গল্প
হ!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
দুর্দান্ত গল্প!!!!!
-অতীত
বাহহহহহহহ। চমতকার গল্পতো।
শুভ জন্মদিন দাদা।
- ইতি
একনিষ্ঠ ভক্ত (পড়ুন মিনিয়ন) ক্ষুদ্র ভগিনী।
[অনুবাদ চলুক চলুক ]
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
অনুবাদ্রোগাক্রান্ত! ভাবতেছি এই কাজের চাপে চিঁড়ে-চ্যাপ্টা অবস্থা কাটার আগেই এই সদ্যোজাগ্রত আগ্রহটার সদ্বব্যবহার করে ফেলা উচিত!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
দুর্দান্ত গল্প, অনুবাদ অসাধারণ।
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই। প্রথম অনুবাদ। মূল গল্পটার স্বাদ, মজা ঠিক আছে কিনা সেই ভয় করছিলাম!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
শুভ জন্মদিন ওডিন!
গল্প মজাদার। আর মেটাল ডকের সৌভাগ্যে ঈর্ষান্বিত!
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
গল্পটা আগে পড়া। ঝরঝরে অনুবাদে পাঁচ তারা।
মেটাল ডককে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
হুম! অনেক অনেক গো দ্রোহীদা। থেঙ্কু, থেঙ্কু।
আমার প্রিয় একজন ব্লগারের অনুবাদ অতটা ভালো লাগে নাই মনে হলো। তবে আমি ভাবানুবাদ করতে গিয়েও করি নাই, দালের বলার স্টাইলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই। আগে ভাবতাম অনুবাদের কাজটা অনেক সহজ, বা হুবহু অনুবাদ না করে বরং আসল কাহিনিটা ঠিক রেখে ভাবানুবাদ করলেই হয়। কিন্তু মূল গল্পের ভাবটা ধরে রেখে অনুবাদ করেও গল্পের মজাটা, বা পাঞ্চ লাইনগুলোকে ঠিকভাবে প্রকাশ করার কাজটা যে কতটা কঠিন তা নিজে করতে গিয়ে টের পেলাম!
তবে এটা ঝড়ের বেগে করা। আশা করি ভবিষ্যতে আরো ভাল হবে। আপনাদের ভালো মনে হয়েছে, এটাই সার্থকতা।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
অনুবাদ তোফা হয়েছে। গল্প ভালো লাগলো।
ওডিনদাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
দুর্দান্ত অনুবাদ হইছে!
আর 'যাযাবর ভাই'কে এক্সট্রা । আর যারা আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের সবাইকে বিশাল বিশাল দুই দিনের দুনিয়া ভাইসকল, তাই মেক লাভ, নট ওয়ার!
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
তোমার উপযুক্ত ছোটগল্প পছন্দ করতে গিয়ে পুরাই হিমশিম অবস্থা দাদাই! শেষে গত কয়দিনে আমি মনে হয় প্রায় সবার উপযোগী একটা করে গল্প পেয়ে গেলাম তোমারটা বাদে! আর এই করছি করবো করতে করতেই কালকে রাতে হঠাৎ দেখি নয় তারিখ হয়ে গেছে!! শেষে হুড়মুড়িয়ে বসে এটা অনুবাদ করা। তাও আবার শুরুতে চেকভের একটা অর্ধেক অনুবাদ করে ফেলেছিলাম, কিন্তু পরে মনে হলো ওটা ঠিক তোমার সাথে যায় না।
এই গল্পটা ভারি মজার লাগে আমার। তবে কেন শেষতক এইটায় আটকালাম তা বুঝতে পারছি। আজকে তোমার সাথে বার্থডে শেয়ার করছে আমার খুব স্নেহের আরেকটা মানুষ - আমার ছোটবোন/কাজিন/বন্ধু - গোধূলি।
এই গল্পটা তাই ওকেও ডেডিকেট করে দেয়া। আর উইশও করে দেই এইখানে তোমার সাথেই, আমার প্রিয় ভাই আর বোন দু'জনাকেই একসাথে -
শুভ জন্মদিন জি!!
ভালো থাক, যেখানেই থাক, পৃথিবীর যে প্রান্তে, যখনই... আমার কাছে তুই আছিস এটাই অনেক অনেক বড় পাওয়া। স্বপ্নরা সব সত্যি হোক তোকে ঘিরে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
তার মানে, এই গল্পটা ওডিনদার সাথে যায়।
তার মানে, গল্পের লোকটার সাথে ওডিনদার কিছু একটা মিল আছে...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হা হা হা!
নাহ্! আমার মনে হয় ওডিনদা বুঝেছে আমি কী মিন করেছি, দেখ, যে অংশটা উনি কোট করেছে, সেই অংশের সারকাসম আর মজাটা আমারো প্রিয়। আমি মিন করছিলাম যে দাদাই এর এই গল্পটার ডেডিকেশনটাই বেশি পছন্দ হবে। ওর ভালো লাগাটা জরুরি। আশা করি সেক্ষেত্রে আমি সার্থক।
আর ঐ যে বললাম, এই গল্পটার মেয়েটা আর ওর এই মজার অ্যাডভেঞ্চারটা আমার অন্য ফ্রেন্ড/বোনকে মনে করিয়ে দেয় বলেই শেষতক এটাই অনুবাদ করতে স্থিরকরে ফেলেছি। আশা করি তারো এটা ভালো লাগবে। ওডিনদা তার আজব সব মজার গল্প জানে, তাই দু'জনাকে একসাথে ডেডিকেশন।
কিন্তু স্পর্শ, চেকভের যেটায় অনুবাদে হাত দিসিলাম ফার্স্টে, ঐটা কিন্তু তোমার সাথে ভালো যায়... কাজেই খিয়াল কইরা!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
অনুবাদ ভাল লেগেছে, গল্পটাও ভাল।
ওডিনের জন্য রইল জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ অতীত, নামহীন অতিথি লেখক, পান্থদা, অদ্রোহ, স্পর্শ, নৈষাদদা।
মূল গল্পটা অনেক মজার। সেই আকর্ষণ কিছুটা হলেও ঠিকভাবে ধরে রাখতে পেরেছি ধরে নিচ্ছি সবার মন্তব্যে।
তবে একবারে তাড়াহুড়ো করে লেখায় কিছু টাইপো থেকে গেছে দেখলাম। বিশেষ করে - পাব-এ কোট র্যাক থেকে ছাতা তুলে নেয়। আর লোকটা হবে কয়েক জায়গায়। পরে এডিট করে ঠিক করে দেব।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
শুভ জন্মদিন ওডিন।
চিকিতসা শাস্ত্রের বারোটা বাজিয়ে দিয়ে অন্য সব কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান
যাযাবর - অনুবাদ খুব ভালো হয়েছে কিছু জায়গা বাদ দিয়ে
মুসলিম সম্প্রদায়ের ছাড়া আর কেউ তো আল্লাহ বলবেনা। এখানে গল্পের চরিত্রদের মুসলিম ভেবে নিতে কষ্ট হয়। ঈশ্বর বা গড ভালো শোনাতো।
আরো কিছু শব্দ যেমন প্রধানশিক্ষিকা। এখানে হেডটিচার শব্দটা থাকলে বোধহয় আরো ভালো লাগতো শুনতে।
ব্যস্ত হবার আগেই আরো কিছু গল্প দিন। আপনার অনুবাদ অনেক সুন্দর।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
রানাপা, খেয়াল কইরা, যাযাবর কিন্তু লিখছে বাংলার পাঠকদের লাইগা। সে হিসেবে আল্লাহ শব্দটাই সবচেয়ে যুতসই শব্দ। আর অনুবাদে লোকাল ফ্লেভার আসাটা আমার কাছে জরুরি মনে হয়।
ধন্যবাদ পান্থদা।
আমিও ঠিক এই কথাটা ভেবেই 'আল্লাহ'/'খোদা' লিখেছি। ঈশ্বর - শব্দটা অনুবাদের মাঝে আসলেই আমার ঐটাকে 'অনুবাদ' মনে হয়। আর আমার অনেক অমুসলিম বন্ধুকেও আমি এইভাবে 'আল্লাহ-র' নাম নিয়ে এক্সক্লেইম করতে শুনেছি, কারণ এটা 'হা ইশ্বরের' চাইতে বিস্ময়ের ভাবটা বরং অনেক বেশি অর্থবহ করে বহন করে। ব্যাপারটা ধর্ম রিলেটেড নয়, এখানে এক্সপ্রেশন শুধুই।
তবে রানাপু আমি আরো ভাবব্যঞ্জক করতে চেয়েছিলাম, ঐ যেমন আপনি যেটা ধরেছেন - 'প্রধাণশিক্ষিকা'; এটা আমি 'হেডমিস্ট্রেস' লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অনেকেই দেখি বাংলার মাঝে অনেক ইংরেজি শব্দ রেখে দেয়াটা ভালো মনে করেন না, তাই কী ভেবে আবার ঐটাই রেখেছি। কিন্তু আমি এডিটিং করার সময়ে এইটা চেঞ্জ করে দিতে চাই, দেখি... তবে অনেক শব্দই আমি ইংরেজিটাই রেখেছি, যেমন 'বানানা-স্প্লিট'-এর বা 'পাব'-এর আসলে বাংলা হয় না, যেটা আমরা চট করে ভিজুয়ালাইজ করতে পারবো।
অনেক ধন্যবাদ আলাপ আর উৎসাহের জন্যে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
যাযাবর
অমুসলিম অনেকেই আল্লাহ বলেন তারা যদি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিক হন। যেমন এখানে আমি মাঝে মাঝেই ওহ জিসাস বলি, এটাই বেশি শুনি বলে।
এ গল্পটার চরি্ত্ররা তো ব্রিটেনে থাকে, তারা তো এভাবে বলবেনা, তাই না?
যদি শব্দ বদলাতে চান তবে হেডটিচার করতে পারেন। হেদমিস্ট্রেস কথাটা এখানে কাউকে বলতে শুনিনি। জানিনা আগে বলা হতো কিনা।
পান্থ - বাংলা ভাষার পাঠকদের জন্য অনুবাদ করলে মূল গল্পের কোন ফ্লেইভার থাকবেনা লোকাল স্বাদ আনার জন্য? গল্পের মূলে যেতে না পারলে আর অনুবাদের মজা কোথায়? এরকম গল্প নিশ্চয়ই বাংলা সাহিত্যে বিরল কিছু নয়।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
বাঙালি পাঠক আল্লাহ বলতে যা বুঝছেন গড বা ঈশ্বর বলতে কিন্তু একই জিনিস বুঝে নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে পাঠক হিসেবে বাঙালি আল্লাহ শব্দটার সাথেই বেশি নৈকট্যবোধ করছেন। এক্ষেত্রে গল্প মোটেই মূল থেকে দূরে যাচ্ছে না! বরং মূলের কাছে যাওয়ার একটা রাস্তা তৈরি হচ্ছে গল্পের অন্ত:স্থিত শক্তির উপলদ্ধির দ্বারা। এ নিয়ে প্রমথ চৌধুরীর একটা বক্তব্য স্মরণ করা যেতে পারে- পরের জিনিসকে আপনার করে নেবার নামই তরজমা। যাযাবর ভাইয়ার গল্পে 'আল্লাহ' শব্দটির ব্যবহার ওই আপনার করে নেয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখলেই বোধহয় ভালো হয়।
রানাপু, আমি জানি ব্রিটিশরা এখন স্কুলের প্রধাণশিক্ষকদেরকে সাধারণত হেডটিচারই বলে (গ্রামার আর কেতাদুরস্ত এক্সপেন্সিভ স্কুলে মনে হয় বলে না, জিজ্ঞেস করবো)। দালের সাথে আমার পরিচয় ইংল্যান্ডেরই স্কুলে। কিন্তু খেয়াল করেন, যেই সময়ের গল্প, সেই সময়ে লণ্ডনে হ্যাট পরতো লোকে, এখন হ্যাটের চল নেই। ঐ সময়ে স্কুলের হেডদেরকে কিন্তু হেডমাস্টার/হেডমিস্ট্রেসই বলত।
এটা ছোটগল্প, আর আমার মনে হয়েছে পাঠকের কাছে চরিত্রগুলোকে দ্রুত ফুটিয়ে তোলা জরুরি, গল্পের আসল রসটা আস্বাদনের জন্যে। আমি ইচ্ছা করেই শব্দগুলোর চয়েস অমন করেছি, কারণ ঐটাই আবেদন বেশি রেখে, মূল বিষয় থেকে মনোযোগ সরাবে না বলে অনুবাদক হিসেবে আমার মনে হয়েছে। ভবিষ্যতেও এভাবেই শব্দ পছন্দ করবো মনে হয়।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ওডিন'দা আবারো শুভ জন্মদিন।
লেখক, অনুবাদ সুন্দর হয়েছে।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
যাযাবর ভাই এইটা একটা কাজ করলেন ?? এই গল্পটা আমি আধেক অনুবাদ করে ফেলি রাক্সি পরে শেষ করবো বলে, আপনি মাঝে দিয়ে এইভাবে দই মেরে দিলেন ??
দালের যতগুলো গল্প পড়েছি, বলতে গেলে সবগুলোতেই মুগ্ধ হয়েছি। আমব্রেলা ম্যান আর হিচহাইকার আমার সবচেয়ে পছন্দের দুটো গল্প। সাইজে ছোট আর মালেও সরেস বলে এই গল্পটা বেছে নিয়েছিলাম- কিন্তু আপনি সাড়ে সর্বনাশ করে দিলেন।
যান, পড়লামই না। মেজাজ ঠান্ডা করে পরে পড়ে এজ্ঞাদা ভুল ধরে দিয়ে যাবো।
তবে ধন্যবাদ- উপলক্ষটা চমৎকার বলে। প্রাণখোলা, হাসিখুশি, কামেল গোলকীপার ওডিনদা আমার খুবই পছন্দের মানুষ। তাঁর জন্যে লিক্সেন বলে মাফ করে দিলাম।
শুভ জন্মদিন নর্সদেব
হই মিয়া! আমারে কইসিলা নি যে এইটা আধেক লিখসো? অসুবিধা কী? তোমার অনুবাদ হবে আরেকরকম, শেষ করে ফেল, অন্য কোথাও দাও, ফেসবুক হোক বা তোমার নিজের ব্লগ, পড়ি।
হিচহাইকার আমারো পছন্দ। এটা আর আরেকটা অনুবাদ করবার ইচ্ছাতালিকার উপরের দিকে আছে, দেখি সময় মেলে কিনা। সচলায়তনে দালের তেমন কোন অনুবাদ খুঁজে পেলাম না, তবে তুমিও এত মারাত্মক দাল প্রেমী হলে বেশ, এরপরেরবার কনসাল্ট করে নেয়া যাবে।
আর ওডিনদার গোল্কিপিং গুমর আর ফাঁস কইরো না থাক! সে কিন্তু চশমা খুলে রেখে মারামারি করে, যাতে করে প্রতিপক্ষ বেশি মার খেয়ে ফেললে দয়ামায়া না হয়, দেখতে পাবে নাতো এলোপাথাড়ি মারতে পারবে!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ভালো অনুবাদ। দারুণ লাগল।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
ওরে! মৃদলদা যে!! কেমন আছেন? পিচ্চিটা কেমন আছে?
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
জন্মদিনে উত্তম উপহার!
শুভ জন্মদিন, ওডিন
চমৎকার! মূল গল্পটা আগে পড়ি নি, তবে অনুবাদ পড়ে রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে গেছি। দুয়েকটা জায়গায় ছোটখাটো এটা-ওটা বাদ দিলে আগাগোড়া অসাধারণ অনুবাদ হয়েছে এটা। রানা আপুর সাথে একমত। "আল্লাহ্" আমার কাছেও একটু খটকা লেগেছে। তবে আবারও বলি, দারুণ! গল্পটা পড়া শুরু করার পর আক্ষরিক অর্থেই থামতে পারছিলাম না। দ্রুত পড়ে যাচ্ছিলাম এরপর কী হবে, সেটা জানার জন্য। খুব কম লেখাই এতো প্রবল আগ্রহের সাথে পড়ি। গল্পটা আসলেই কতো ভালো লেগেছে, সেটা বোঝানোর জন্যই এতো কথা বলা। আশা করি, আগামীতে আরও দারুণ সব অনুবাদ পাবো আমরা, তা অন্য কারো জন্মদিন আসুক বা না আসুক।
শুভ জন্মদিন, বিশাল মনের অধিকারী ওডিন'দা।
ভাই, সকালে কাজে যেতে যেতে এসএমএস-এ পাওয়া তোমার ফিডব্যাক ছিল সেকেন্ড। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
দাল একটা জিনিয়াস। ওনার ছোটদের গল্পগুলো অসাধারণ। কিন্তু ছোট গল্প আসলে কমই পড়া হয়েছে। যারা আগে পড়েননি তাদের কাছে গল্পটার মজা ধরে রাখতে পেরে থাকলেই অনুবাদের সার্থকতা।
কিন্তু এত প্রশংসা কোর না। শেষে ফুলে ফেঁপে গ্যাস বেলুনের মতো জানালা গলে বেরিয়ে গেলে আর পাবে না নতুন অনুবাদ, হ!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
অনুবাদটা খুবই চিত্তাকর্ষক হয়েছে। এরকম আরো অনুবাদ গল্প নিয়মিত বিরতিতে চাই।
ইনশাআল্লাহ!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আজকেও একপ্রস্থ খোঁচাখুঁচি করিয়ে এলাম দাঁতে... উ...উ...উ...
বস্তুত দাঁতের মেরামতি করাতেই আরো দেশে আসা। ওখানে একটা দাঁতের পেছনে যা চাইছে তা আমার মাসমাইনের চেয়ে বেশি।
কিন্তু ওডিন্দাও নাকি দাঁক্তারদের পছন্দ করে না, সেক্ষেত্রে ওসব দিয়ে শুরু করা গল্প উৎসর্গ করাটা কি ঠিক হল?
দন্তসমস্যাবিহীন জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইল।
যাগ্গে, অনুবাদ ভালৈছে, সেইটাই হল কথা!
আর কয়েন না কৌদা, দাঁতের যন্ত্রণার শেষ নেই। আমি যখন বাঁকা হয়ে ওঠা আক্কেল দাঁত তুলতে গেলাম সেবার, আমাদের ডেন্টিস্ট চাচার ৭০+ শিক্ষক এলেন আক্কেল দাঁতের একই সমস্যার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে! বোঝেন, কোথায় উনি ৭০ বছর বয়েসে আক্কেল গজাচ্ছেন আর আমি কিনা ২৪-এই...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
উপরওয়ালার কৃপায় আমার এখনও আক্কেল হয় নাই... তা বলি কি, ব্যাকপ্যাকার-দিদি, আমি হলেম গিয়ে বয়সে আপনার ছুডু ভাইয়ের মতন, আমাকে দা'য়ভারগ্রস্ত করা কেন? (ইয়ে, কৌদা শব্দটা বেশ, একটা উপজাতি-আদিবাসী টাচ আছে)
আরে আমি তো ছুডু ভাইয়ের মতন আদর করেই বলি।
আর দেইখেন উপজাতী/আদিবাসী রেসিজমের দায়ভারে পইড়েন না আবার!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
দাঁক্তার কি দাঁতের ডাক্তার?! বাহ! ভালু পেলুম শব্দ!!!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ঐটা ওডিন্দার বলা শব্দ...
দুইটা নুতন শব্দ শিখলাম
১। কৌদা
২। দাঁক্তার
...........................
Every Picture Tells a Story
আম্মোও!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
শব্দে শব্দ ঢাকে, গন্ধ ঢাকে কিসে?
হাহাহাহা! বেশ মজা পেলাম পড়ে। আরো লেখো।
ওডিনদারে আরো একবার জন্মদিনের শুভেচ্ছা
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
অনার্যদা, সুমিমা, খেঁকুদাকে- উৎসাহের জন্যে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আমি মুরগার সালুন খাইতে খুবেকটা পছন্দ করি না, কারণ রান্না ভালো না হৈলে তাতে মুরগা মুরগা গন্ধ লাগে। অবশ্য কৈতে পারেন, মুরগার সালুনে মুরগা মুরগা গন্ধ হবে না তো কি হাতি হাতি গন্ধ হবে? এই প্রশ্নে কোবি নিরূপায় হয়ে রবে, নো জবাব!
অনুবাদের ক্ষেত্রেও আমার মুরগা সালুন থিওরি কাজ করে। অনুবাদ হলে সেটা থেকে অনুবাদ অনুবাদ গন্ধটা চলে যেতে হবে, এইটা আমার মত। ভাবানুবাদ না করেও একটা ছত্রকে প্রচলিতভাবে সাজানো যায় বলেই আমার ধারণা। অনুবাদ পড়ার সময় বাক্যগুলো স্বতস্ফুর্ত হোক, এটা আমি চাই। কোনো ভাষা থেকে ভাষান্তর করার ফলে কেমন জানি যান্ত্রিক যান্ত্রিক একটা অনুভূতি থাকে বাক্যগুলোতে, এটাই আমার কাছে ভালো লাগে না।
দরকার হলে একটু মশলা দিয়ে অনুবাদের গন্ধটা ঢেকে দেয়ার পক্ষপাতি আমি। যাতে মূল গল্পের স্বাদটা না বদলে অনুবাদকের কিছু হাদুমপাদুম ঢুকিয়ে দেয়া যায়। আর ভাষান্তর করার ফলে লেখকের মূল টোন'টা এমনিতেই চলে যায়। তাই অনুবাদ করার সময় সেটাকে জোর করে ধরে রাখার কোনো মানে নেই।
আবারও বলছি, এগুলা সম্পূর্ণই আমার মত। ভালো বলতে পারবেন পারদর্শী অনুবাদকেরা।
আর আপনার লেখার শিরোনামের ব্যাপারে বলি, "ছাতার মালিক" না হয়ে "ছাতাওয়ালা" হলে বোধ'য় ভালো হতো। এই শব্দটা দিয়ে অনেক কিছুই বুঝানো যায়। ছাতার ব্যাপারী, ছাতার মেস্তরী, ছাতার আড়তদার কিংবা ছাতার মাথা— সবকিছুই!
সবশেষে, লাট্টু ওডিন মিয়াকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমার লাস্ট নেইমসেকের জন্যও তাই।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হ!
নাম নিয়ে যখন খুঁতখুঁত করছিলাম, তখন 'ছাতাওয়ালা' জানালে ভালো হতো, সাউন্ডস বেটার দ্যান 'ছত্রীধর'! তবে 'ছাতাওয়ালা' ছাতা বিক্রেতা বা মেরামতকারি মনে হলেও, এটার একটা ক্যাচ আছে, শুরুতে মনে হবে এক, আর পড়তে গিয়ে দেখা যাবে আসলে অন্যরকম। কিন্তু 'ছাতারমাথা' বেশি লাইক করলাম!
গল্পতে কিন্তু নিজের মতো করে সামান্য মশলা অ্যাড করা আছে, দুই এক জায়গায়, যেখানে দরকার মনে হয়েছে আসলে। কিন্তু একটা ব্যাপার আছে, যেমন এই গল্পের শুরুটা আমার খটোমটো লেগেছে পড়তে গিয়ে, আবার ঐ জায়গার অনুবাদও খুব ফ্লো আলা করতে পারিনি নিজের মতে। কিন্তু আজকে আমার ছোট ভাইকে পড়াবার সময়, সে একটা জিনিস পয়েন্ট আউট করলো, তা হলো ড্যানি দ্যা চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য ওয়ার্ল্ড বা মাটিল্ডা, শুরুটা দাল ঐভাবেই করেন, 'আমি অমুক, বয়স এত, করছিলাম এই...' দালের স্টাইলটা ঐরকম অনেকটা। আমি দালের লেখার খুব বড় ভক্ত বলা যায়, ওর স্টাইলটাকে নিজের মশলাপাতি দিয়ে দেশি মুরগির সালুন না বানিয়ে ফেলার পক্ষপাতি।
অনেস্ট মন্তব্যের জন্যে ।
আর নেইমসেক এই অনুবাদ পড়লে আপনার শুভেচ্ছা পেয়ে যাবে আশা করছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
দুর্দান্ত।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনার সব লেখাই আগ্রহ নিয়ে পড়ি যাযাবর আপু। এই অনুবাদটাও অসাধারণ লেগেছে। মূল গল্পটাও হয়তো এতোটা ভালো না ও লাগতে পারতো। আমার আবার ইংরেজিভীতি আছে। তা'ই অনুবাদই সহজপাচ্য।
ওডিন ভাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা! উইশিং মেনি রিটার্নস।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
তাসনীম ভাই, রাতঃস্মরণীয়দা।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ডুপ্লি ঘ্যাচাং
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
খুব মজার গল্প তো! অনুবাদও বেশ ভাল লেগেছে। আর ওডিনকে বিলম্বিত শুভ জন্মদিন।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
মূল গল্প পড়া হয় নি। আপনার অনুবাদ পড়লাম। পড়ে মুগ্ধ হলাম।
খুব ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
অনেক আগে একবার শখ চেপেছিল অনুবাদ করার। তখনই বুঝেছিলাম কি ভীষণ কঠিন সেটা। অথচ কি চমৎকার করে কাজটা শেষ করেছ। বিদেশি গল্প বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু কোথাও একটুও আটকাতে হলনা। দারুন।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আমার প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধ সংগ্রহের তরজমার মূল বক্তব্য ও রবিন্দ্রনাথের রক্তকরবীর মূল বক্তব্য কালকের মধ্যে ৭।৩।১৩ দরকার।কারন আমার পরীক্ষা,
নতুন মন্তব্য করুন