রেড ড্রাগন
আমাদের ছোটবেলায় খুব বেশি রেস্টুরেন্ট-টেন্ট ছিল না, আর মানুষের মাঝে বাইরে খেতে যাবার মানে যাকে বলে eating বা dining out এই প্রবণতাটা ছিল দুর্লভ। এখন যেমন অনেকেই রুচি বদল করতে বা ছোটখাটো উদযাপনে রেস্তোরাঁয় যান মাঝেমাঝেই, পনের-কুড়ি বছর আগে সেরকম চিন্তাভাবনা মধ্যবিত্তের মাঝে বেশ কম দেখা যেত। একটা কারণ মনে হয় সে সময়ে সাধ্যের মাঝে ভালো ভালো খাবার জায়গা ছিল কম, স্কয়ার ফিট মাপা অ্যাপার্টমেন্ট বাড়িও ছিল কম, কাজেই বাড়িতে দাওয়াত দিলে অতিথিদের স্থান সঙ্কুলানের সমস্যা হবে এমনটা কেউ ভাবতে পারতো না। ছোটখাটো অনুষ্ঠান তো বটেই, বিশালাকার বৈবাহিক যজ্ঞও সকলে নিজের বাড়িতেই সুসম্পন্ন করতেন।
আর তারপর ছিল এক একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে আমাদের বদমাইশি! একবার আমাদের গুরু, মানে আকার ও বয়সে বড় আমাদের দলনেতার মন্ত্রণায় আমি খুব ফিটফাট রুচিসম্পন্ন এক প্রতিবেশী পরিবারের বসবার ঘর বোঝাই নিমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে নিজের কেরামতি ফলাবার জন্যে, তাদের কাঠের চিকন আধুনিক এক নতুন শো-কেস বেয়ে উঠতে গিয়ে শেলফ সুদ্ধু উলটে ফেলে কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে ফেলেছিলাম প্রায়! অবশ্য বয়স তখন নেহায়েতই চার, আর দুনিয়ার সবকিছুই উলটে ফেলবো এমন একটা খামখেয়ালিপনা হয়তো সে সময় থেকেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে!
সে সময়ে যদি বা আমরা কারও বাসা বাদ দিয়ে বাইরে কোথাও খেতে যেতামও, তখন এত থাই, ইন্ডিয়ান, ইতালিয়ান, হরেক দেশের রকমারি আয়োজন থেকে বেছে নেয়ার উপায় ছিল না। চরম জনপ্রিয়, এবং প্রধান বিদেশী খাবারের দোকান হিসেবে ছিল ‘চাইনিজ’। বিটিভিতে বিজ্ঞাপন হতো ‘চলো যাই চাংপাই!’ কখনো ঢাকায় যাওয়া হলে আমার অনেক শখ ছিল চাংপাই-এ খেতে হবে! আরও নানান চাইনিজ রেস্টুরেন্টে খাওয়া হলেও, অনেকক্ষণ স্মৃতি হাতড়েও এই চাংপাই-এ খাওয়ার কোন স্মৃতি উদ্ধার করতে পারলাম না!
আমাদের ছোট শহরে যে আঙুলে গোণা দুই তিনটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘রেড ড্রাগন’। সে সময়ে, মানে আমরা যখন একেবারেই বাচ্চা, ইশকুলে ভর্তি-টর্তি হয়েছি কেবল,হঠাৎ হঠাৎ দারুণ সুখবর নিয়ে হাজির হতো একেকটা সেইরকম পারিবারিক বা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ছোটখাটো সামাজিক অনুষ্ঠান, যেগুলোতে দাওয়াত পড়তো এই ‘রেড ড্রাগনে’। মনে আছে লাল রঙের বিশাল ড্রাগনের ছবি আঁকা প্রবেশপথের মাথার সেই সাইনবোর্ড। ভেতরের নীলচে আলো, ডেকোরেশন জানালায় নকল সামুদ্রিক মাছ আর জলজ উদ্ভিদ। একবার রেনোভেশনের পরে এক কর্নারে দেয়ালে আটকানো ছিল হার্ডবোর্ডের তৈরি একটা বড় লাল ড্রাগন। আমার স্মৃতি এখন কল্পনায় মিশে জলো হয়ে গিয়ে থাকতেই পারে, কিন্তু আমার ছোট্ট মনের সেই আধো-অন্ধকারের লাল ড্রাগনটা ঢেউ ঢেউ প্যাঁচানো শরীর, গায়ে আঁশগুলো দেখলেই ভয় হয়, নাক দিয়ে আগুনের হলকা, মাথায় ক্ষুদে শিং আর বিশাল দেহের তুলনায় ক্ষুদ্র ডানা নিয়ে একাধারে ছিল ভয়ঙ্কর আবার সেইরকমই আকর্ষণীয়! আমার ইচ্ছা থাকতো যেন কখনো গেলে আমরা সেই কর্নারের টেবিলটাই ফাঁকা পাই!
সে সময়ে চিকেন ফ্রাই জিনিসটার চিকেন বাদ দিয়ে তার চলটাটা ভারি পছন্দের খাবার ছিল। কোক-এ এত ঝাঁঝ ছিল খাবার পরে নাক-মুখ দিয়ে বেরুনো ঝাঁঝকে দারুণ ভয় পেতাম। আমার পছন্দ ছিল কাচের বোতলে স্ট্র ঢোকানো কমলা পানীয় মিরিন্ডা! আমরা খেতাম এখনকার হিসেবে অতি সাধারণ, প্রায় খ্যাত, চিকেন কর্ন সুপ। আমার খাবার মধ্যে ছিল ঐটুকুই, সুপ, ভাজা মুরগির চলটাটা আর মিরিন্ডা! সে সময়ে আমি একাই কিনা, তাই মা-ও খুব জোরাজুরি করতো খাবার নিয়ে। আমি কিন্তু মুখে মিরিন্ডার স্ট্র নিয়ে ঠোঁট চেপে রাখতাম! আর মুরগির চলটার সাথে সামান্য মাংস গেলেই ফেলে দিতাম। বাইরে সবার মাঝে মা-ও বেশি কিছু বলতে পারতো না।
রেড ড্রাগনে শেষ খাবার স্মৃতিতে আমি মনে হয় ক্লাস সেভেনে পড়ি। সে সময়েও ছিল রেস্তোরাটা, পরে হাত আর নাম বদল হয়। নাম বদল হয়ে যাবার পরে বেশ কষ্ট পেয়েছিলাম এইটা মনে আছে। সে বয়সে একা একা টোটো করার সুযোগ বা সাহস কম ছিল, কাজেই সামনের ড্রাগনটা সাইনবোর্ড থেকে হটে গেলেও, একবার ভেতরে গিয়ে দেয়ালের ড্রাগনটা আর আছে কিনা তা আর জানা হয়ে ওঠেনি। আমার সব থেকে স্মরণীয় রেড ড্রাগন স্মৃতি হল ৯০-এর দশকের শুরুতে, মেজ চাচার বিলেত থেকে পিএইচডি করে ফেরার পরে এক চান রাতে আমাদের পুরো পরিবারকে চাচার খাওয়ানোর কথা। খুব আয়োজন করে পারিবারিক ডিনার আগেও হয়েছে, এবারের বিশেষত্বটা ছিল হুট করে ইফতারের পরে চাচার ফোন করে সবাইকে ডেকে নেয়া, (তখন কিন্তু মোবাইল ফোন ছিল না), রাত প্রায় সাড়ে আটটার দিকে হই হুল্লোড় করে সবাই মিলে জমায়েত হয়ে রেস্তোরার শেষ মাথার দেয়ালের আয়নার পাশে বড় টেবিলটা দখল করে নিয়ে বসে হই হই করতে করতে রাত এগারোটা বেজে যাবার পরে গিয়ে খাবার সার্ভ না হওয়া! হয়েছে কি ঈদের আগের রাতে রেস্টুরেন্টে ভিড় আশা করেনি সম্ভবত কর্তৃপক্ষ, আমাদের ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫-৩০ জনের পার্টিকে একবারে সার্ভ করার মতন বাজার করা ছিল না হয়তো। অন্য যে দুই একটা পরিবার আমাদের মতই বেরসিক ভাবে ঈদের আগের রাতে চলে এসেছে, তারা খেয়ে চলে গেল, আমরা এদিকে বুভুক্ষু বসেই আছি। শেষে রাত প্রায় দশটার দিকে আমাদের সামনে দিয়েই আরও দুইটা জ্যান্ত মুরগি এবং অন্য আরও বাজার সদাই এলো, রান্না হল, তারপর এগারোটার পরে খেয়ে দেয়ে আমরা বেরুলাম!
রেড ড্রাগনের স্মৃতি বেশি স্মরণীয় হলেও আরেকটা চাইনিজ রেস্তোরা ছিল যা এখনো আছে। ‘নানকিং’ চীনের নানকিং প্রদেশে না, বরং শুরু থেকেই সিএন্ডবি মোড়ে মণিবাজারে জেলা পরিষদ মিলনায়তনের নিচতলায় আছে, অন্তত আমার স্মৃতিতে। খুঁজলে এখনো অনেকগুলো ছবি বেরুবে যেখানে খাওয়াদাওয়া শেষে বাবা-মার কলিগ বা পারিবারিক উপলক্ষ ভেদে গ্রুপ ফটোতে বাইরে থেকে সরাসরি অডিটরিয়ামে উঠে যাবার মূল সিঁড়িতে আমরা সবাই লাইন করে দাঁড়িয়ে আছি।
'রেড হার্ট' হয়েছিলো আমরা কলেজে পড়তে মনে হয়। জিপিও-র কাছাকাছি, গ্রেটার রোডে। বাইরে থেকে সটান খাড়া সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠাটাই ছিল এক ব্যাপার। ওরাই প্রথম রাজশাহীতে 'সিজলিং ডিশ' বা 'সিজলারস' নিয়ে আসে। 'Sizzling' নামটা এসেছে ওর দারুণ চটপটে আওয়াজের জন্যে, কড়াইতে গরম তেলে কাঁচা সবজি বা মাছ ভাজার জন্যে ছেড়ে দিলে যেমনটা হয়, তেমনি। এটা হয় কারণ এই ডিশে তা সবজি হোক বা মাছ মাংসের কিছু, একটা উনুনের আঁচে গরম করা লোহার ট্রেতে সার্ভ করে বলে। কিচেন থেকে যখন আপনার টেবিলের দিকে ঐ চরম আওয়াজ করা ডিশটা এগিয়ে আসবে, ওয়েটারের হাতে, বিপুল ধুম্রদগীরণ করতে করতে, ছোট্ট রেস্তোরার আর সবাই চমকে গিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে আপনাকে দেখতে বাধ্য!
আইসক্রিম কিউব
রাজশাহীতে আসলে ভালো খাবার জায়গার বেশ অভাব আছে। অন্তত মুখের রুচি বদলের সহায় খুব কম। রহমানিয়ার শিক কাবাব, ঠাকুরের দোকানের ভোর বেলার লুচি-নিরামিষ সেই কবে থেকে এখনো তাদের স্বাদ বলতে গেলে মোটের উপরে ধরে রেখেছে ঠিকই। কিন্তু সেভাবে গিয়ে বসে খাবার, সময় কাটাবার জায়গার বড় অভাব। তবে রাজশাহীতে আসলে সবাই আড্ডা দেবার প্রধান পছন্দ হিসেবে বেছে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে। রেস্টুরেন্টগুলোতে এখন ভিড় বেড়েছে। তবে সেইভাবে নতুন নতুন, ভালো আর বৈচিত্রময় খাবারের জায়গা খুব কম।
একটা নতুন রেস্তোরা খোলা মানেই সেখানে আমাদের একবার হানা দিতেই হবে। 'কুকি জার' নামের একটা রেস্তোরা হল বছর দেড়েক আগে, ঠিক মণিবাজারে নানকিং-এর উল্টোদিকেই। বেশ ভালো সাজাল বাইরেটা, কেমন যেমন পাথরের চাঁই দিয়ে তৈরি এমন একটা লুক আনল, যদিও পাথরগুলো ক্যাটকেটে হলুদ। কয়েকদিন খেলাম আমরা সন্ধ্যায়। বড় বড় কাচের জানালা দিয়ে নিচে দেখা যায়, ভালো লাগে রাত্রে। যদিও ভেতরে স্থান সংকুলান খুবই কম। একবার খাবার পরে আইসক্রিম খাবার বাসনা জাগল। আমাদেরকে সার্ভিং ওয়েটার জানালো যে সে আইসক্রিম কিউব দিতে পারবে। বাবা বুঝতে না পেরে আমার দিকে তাকায়, আমি তাকাই ভাইয়ের দিকে। কিউব আইসক্রিম? এইটা তো অবশ্যই খেয়ে দেখতেই হবে! সার্ভ করার পরে যা এলো তা হল আইসক্রিম বউলে ইগলুর বক্স থেকে তুলে দেয়া স্কুপ। Scoop-কে বেচারা 'কিউব' বলেছে!
কুকি জারে যাওয়া ছাড়া হল কয়েকবার দিনের বেলায় বন্ধুদের সাথে গিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে। শহর জুড়ে যে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি আর কলেজ তাতে পড়তে আসা দূর-দূরান্তের ছেলেমেয়ে ডেটিং-এ আসে, একান্তে বসে থাকে, আমরা বড়রা (কী মুশকিল, আমি না চাইলেও সময় বলছে যে বড় হয়েই গেছি!) গিয়ে অপ্রস্তুত হই। ছোট্ট শহর, কেউ না কেউ চেনা মিলেই যায়। আমি নগণ্য মানুষ, বন্ধুদেরকে সালাম দেয়। কিন্তু আরও মুশকিল হল যখন টের পেতে শুরু করলাম এখানে ওয়েটার বা কাস্টমারের একটা বড় অংশই আসলে ভালো করে রেস্টুরেন্ট আচার জানে না। প্রচুর মানুষ দুপুরের খাবারের সময়ে আসে, কিন্তু অনেকেই মনে হয় রেস্টুরেন্ট ভেদে আচরণেরও যে তারতম্য হবে তা বোঝেন না। গতবছর কারও জন্মদিনে আমরা বান্ধবীরা দুইটা টেবিল জুড়ে বসেছি। একসাথে হলেই আজাইরা হাহা-হিহি প্রচুর হয় কাজেই তেমনটা চলছে। আমাদের সামনের টেবিলে দুই তিনজন লোক বসে খাওয়া দাওয়া করছিলেন, উঠে যাবার সময় হুট করে তাদের মাঝের একজন মধ্যবয়সী লোক উঠে এসে আমাদের টেবিলের মাঝ থেকে পানির বোতলটা তুলে নিয়ে পাশের একটা ফাঁকা গ্লাসে ঢেলে খেয়ে ফেললেন! আমরা মোটামুটি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। আমাদের মাঝ থেকে কেউ একজন বলল যে ভাই, এইটা তো আমাদের পানি। আপনি আপনার টেবিলেরটা খান।
উনি বেশ বিরক্তি নিয়ে বললেন, কেন?! পানিই তো খাচ্ছি!
ওয়েটার এসে বোঝানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু তিনি সমস্যাটা কোথায় ঠিক বুঝলেন বলে মনে হল না। তবে টং-য়ের দোকান থেকে শুরু করে ফেরিঘাটের হোটেল, আমার বিস্তীর্ণ খাদ্যাভিজ্ঞতায় এখনো মেয়েদের খাবার টেবিলে এসে কোন ভদ্রলোককে এমনটা করতে দেখিনি। আমার দেখা মতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কিন্তু অনেক ভদ্র আর ভালো মনের।
এরপরে সমস্যা হল ওয়েটারদের নিয়ে। একবার খাবার শেষ করার আগেই অন্য যাদের প্লেট সরাচ্ছিল তাদেরটা দুম করে আমার প্লেটের উপরে রেখে অভুক্ত খাবার সহ নিয়ে চলে গেল! আমি হাঁ করে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম, ঢের হয়েছে আর না এই মুল্লুকে! (খুব সম্ভবত খানিক রাগারাগিও করেছিলাম, কিন্তু সেসব কথা এভাবে সবাইকে না জানানোই ভালো!)
ঢাকার অ্যারিস্টোক্র্যাটের একটা ব্রাঞ্চ আছে সাহেববাজারে। এদের ইন্ডিয়ান খাবার ভালো হয়, চাইনিজ হয় জঘন্য। একবার স্কুলের দুই জুনিয়রকে নিয়ে গিয়েছি, মেনু দেখে আমি একটু নতুন কিছু পাওয়া যায় কিনা আশায় সি-ফুড কিছু একটা অর্ডার দিতে গেলাম, জানলাম উপকরণ নেই। অন্য আরেকটা, নাহ ঐটারও নেই। তিনমাসে-ছয়মাসে এইটার অর্ডার দেয় কেউ, তাই স্টোর করে রাখলে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়।
কী আর করা! ছোট শহরের ছোট ছোট মানুষ আমরা, বিলাসিতা শিখি নাই। বড় শহরের মানুষের মতন আচরণ করা, ভাব নেয়া আমরা এখনো আয়ত্ত করতে পারিনি, সত্যি কথা কী, আমরা তা চাইও না খুব একটা। এ শহরের মানুষ সুখী। এ শহরে তথাকথিত উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন-মধ্যবিত্তের জীবন-যাপনের মানাঙ্কে, গুণগত পার্থক্য এখনো নেহায়েতই কম। এই তো বেশ আছি আমরা নিজেদের মাঝেই, নিজেরা নিজেরা, আমাদের মতন।
শিখন
প্রচণ্ড ব্যস্ততা যাচ্ছে বলে গালিগালাজ করলেও কাজ করতে আসলে ভালো লাগে। কোন কোন বন্ধুর দাবি আমি কোনদিন খুব দ্রুত অ্যালকোহলিক হতে না পারলেও ওয়ার্কোহলিক অবশ্যই হতে পারবো। কী বলবো, আমার তো আসলেই কাজ ভালো লাগে। দম ফেলার ফুরসত না থাকলে আমি ভালো থাকি। মাথা জটিল জিনিসে ব্যস্ত থাকলে জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয় না।
বেশ কিছু নতুন জিনিস শিখেছি সম্প্রতি। শিখেছি এমএস অফিসের পাবলিশার-এ কী, কী করা যায়। টাইম ম্যানেজমেন্ট, আর স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের ক্র্যাশ কোর্স নিচ্ছি নিজের কাছেই। রাজশাহীর ভালো প্রেসটাও রঙিন ছাপার জন্যে ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে, দক্ষ টেকনিশিয়ান নেই যে আমার পাবলিশারে করা ডকুমেন্টকে ইলাস্ট্রেটরে নিতে পারবে। তাই আমাকেও এখন ইলাস্ট্রেটর জোগাড় করে ঘাঁটতে হবে। শিখেছি প্রেসে ইউনিকোড ব্যবহার করে না।
শিখছি আমি বিনা কারণে হিংসুটে হতে পারি। শিখছি মানুষকে আঘাত করা। শিখছি বিশেষ করে কাজের মাঝে ডুবে না থাকলে মুখে মুখোশ এঁটে ঘোরা।
শিখলাম আমি এখনো অন্তর্যামী হতে পারিনি। খুব পছন্দের মানুষেরও হঠাৎ করে বলা ছাড়াছাড়া, টুকরো টুকরো কথা থেকে উদ্ধার করতে শিখিনি আমার জন্যে বর্তিত হওয়া অলৌকিক বার্তা।
নির্লজ্জ হতে শিখিনি এখনো পুরোপুরি, নিজে থেকে প্রসঙ্গ তুলবো না, কথা রাখতে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারিনি, তাই জানা হয়নি জরুরি জিনিসটা।
আবার শিখছি আমি কিছু ক্ষেত্রে এখন অনেক বেশি নির্লজ্জ হতে পারি!
নিখোঁজ সংবাদ
ঢাকা থেকে প্রতি মাসের অন্তত দু’টো বৃহস্পতিবার ট্রেনে চেপে ছুটে আসতাম এই শহরে। শুধু কি মা-কে দেখার জন্যে? চাকরি ঠেলে, জ্যাম ঠেলে বাজার সদাই রান্নাবান্না টু বাথরুমের ড্রেন পরিষ্কার করা সংসারের গ্যাঁড়াকলকে এড়াতে, নাকি আসলে এই শহরের শান্ত নিরিবিলি গা ছেড়ে দিয়ে দুলকি তালে চলা ছন্দকে বেশি মিস করতাম বলে? একবার ঢাকার ট্রেইন থেকে নেমে স্টেশনে ফেরার টিকেট কাটার সময়ে লাইনে পেছনে দাঁড়িয়ে যারা ছিলো তাদেরই আবার দেখা মিললো নানকিং-এ খেতে গিয়ে পাশের টেবিলে। There is a rhythm to the slow moving beats of a small town’s pace.
এখানে প্রতি পদে পরিচিত দুইটা চেহারার দেখা মেলে। পরিচিত মানুষ কাজ বাদ দিয়ে দুদণ্ড দাঁড়িয়ে খোঁজ নেয় খালাতো বোনের বাচ্চা থেকে শুরু করে আমার ছোটবেলার কথা বলে। পুরানোরা সবাই সবাইকে চিনে। আমার বাজে স্মরণশক্তি দিয়ে আমি শুধু চেষ্টা করে যাই নাম, চেহারা, ঘটনা মনে রাখতে। এখানে ডিসেম্বরের শীতের সন্ধ্যায় আটটার সময়ে নিশুতি নামে পাড়ার রাস্তায়। শুধু সাহেববাজারে থাকে যৎসামান্য মানুষের আনাগোনা আর মাঠ আর ফাঁকা জায়গাগুলোতে লাইট জ্বালিয়ে, নেট টাঙিয়ে পাড়ার ছেলেরা শুরু করে ব্যাডমিন্টন খেলা। রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকাল কলেজ, রুয়েটে প্রতি বছর ভর্তি হওয়া দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা অগণিত ছাত্র-ছাত্রীই মূলত অন্যান্য সময়ে শহরটাকে সরগরম করে রাখে দোকানপাট, রেস্তোরায়।
বড় চাচা নিখোঁজ হয়েছিলেন বড়জোর আঠারো বছর বয়সে। বন্ধুদের সাথে পদ্মার চরে পাখি শিকারে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া টগবগে তরুণ ছেলে হারিয়ে মা-কে ভেঙে পড়তে দেখা কি বাবার ওভার প্রোটেকটিভনেসের পেছনে সাবকনশাসলি কাজ করে? বড় ফুপা নিখোঁজ হয়েছিলেন ১৪ই ডিসেম্বর, রাবির বধ্যভূমিতে শতশত বিকৃত লাশের মাঝে সনাক্ত করতে বাবা গিয়েছিল স্বাধীনতার পরে, এখন তাঁর ঠাঁই হয়েছে বুদ্ধিজীবী সিরিজের ডাকটিকিটে। ডিসেম্বর আসলে কি তাঁকে মনে পড়ে সেসময়ে ছোট্ট থাকা আমার বড় ভাইবোনদের, যারা নিজেরা আর কেউ দেশে নেই, নাকি খুব গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তারা ছেলেমেয়েকে স্কুলে ড্রপ করে অফিসে ছুটে, সেখান থেকে বাড়ি ফিরে ক্লান্ত হয়ে পরেরদিনের যান্ত্রিক জীবনের প্রস্তুতি নেয় আবার?
ঢাকাকে মিস করি মাঝে মাঝে, যখন একা একা হাঁটতে চাই... সবসময়ে ছুটে চলা ভিড়ে... যেখানে কৌতূহলী চোখ চেয়ে দেখে মনে করার চেষ্টা করে না, আরে এটা অমুক না?! বারিধারার মাঝে ফাঁকা রাস্তায় একা একা রিকশা নিয়ে ঘুরপাক খেয়ে চোখে আসা পানিকে সামাল দেয়া মিস করি। মিস করি কম্ফোর্ট ফুডকে। এ শহরে খানিকক্ষণের জন্যে স্বস্তি দেবার, আড্ডা দেবার বন্ধুরা আর নেই, ছড়িয়ে গেছে পৃথিবীর আনাচেকানাচে, ব্যস্ত হয়ে গেছে নিজেদের জীবনে। আমার আরেক শহর, কী আশ্চর্য আজকে আমি তোমাকে মিস করি কতই না অদ্ভুত ভাবে। গুলশান দুইয়ে 'কুল ওয়াটারের' ঐ বিলবোর্ডটা মিস করি, যেখানে লস্ট-এর সইয়ার-এর হাসিমুখ আরেকটা দমবন্ধ করা মুখোশ হাসির দিন হুট করে কেটে যাবে বলে বিভ্রান্ত করতো আমাকে!
আমার ছোট শহরে একা একা বাজারে আর নিউমার্কেটে ঘুরি আমি, হাসি পরিচিত দোকানীর স্নেহের কথায়। বইয়ের দোকানে দম নেই। নিউমার্কেটের বেকারিগুলোতে চিকেন প্যাটিস আর পাওয়া যায় না দেখে আক্ষেপ করি মনে মনে। তারপর ফিরে আসি ঘরে, আরামের জগতে!
শুধু পায়ে পায়ে হারাবার জায়গা খুঁজে মরি ...
Ornob - Hariye Giyechi .mp3 | ||
Found at bee mp3 search engine |
মন্তব্য
অনেক দিন পরে লিখলেন - আরেক দফা স্মৃতির শহর পড়তে গিয়ে কত যে মিল খুঁজে পাই!
ঢাকার আগেকার চাইনিজ রেস্তোরাগুলো বেশ অন্ধকার থাকত, ঢুকেই প্রায় অন্ধ হয়ে যেতাম - একদম আপনার রেড ড্রাগনের মত।
সবচেয়ে মিস করি - আগেকার বেড়ানো। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল - দরজা খুলে দেখলাম বিনা নোটিসে চাচা-চাচি, ভাই-বোনেরা সব সেজেগুঁজে মিষ্টি বা ফলের প্যাকেট নিয়ে আসত। সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনার ছুটি। কাজিনদের সাথে নানা বিদঘুটে গেইম (কম ভয়ংকর (!) একটা খেলা হল আলমারির উপর থেকে পর্দা ধরে টারজানের মত ঝুলতে ঝুলতে বিছানায় ল্যান্ড করা)।
আরেকটা কথা - আগে হোটেলে গেলে ওয়েটাররা কী একটু বেশিই আন্তরিক ছিল? ইয়াংজি নামে ফার্মগেইটে একটা চাইনিজ ছিল। আমরা সবাই খেতে গেলাম। এক ওয়েটার এসে অর্ডার নিচ্ছে। আব্বু ব্বলল সিজলিংটা বেশি ঝাল হবে, আম্মু বলল মোটেই না। ওয়েটার আমাদের অবাক করে দিয়ে বলল, "খালাম্মার চয়েস ঠিক আছে। এটা আমাদের স্পেশাল, দরকার হলে ঝাল কম দিতে বলব, বাচ্চারা মজা পাবে।" বলে এমন একটা ভাব করল যেন UN সিকিউরিটি কাউন্সিলে সুচিন্তিত মতামত দিচ্ছে। আমাদের বাচ্চা বলায় মেজাজ খারাপ হল কিন্তু পারিবারিক সিদ্ধান্তে ওয়েটার এর গুরুত্বপূর্ণ মতামত শুনে আমরা
তখন সবাই ভাই-আপা ডাকত মনে হয়। এখন তো সব জায়গায় স্যার-ম্যাডাম। আমার চেয়ে বয়স্ক একজন স্যার বলে ডাকছে - খুবই অস্বস্তিকর - টেকনিকালি হয়ত ঠিক আছে, তাও কেমন জানি , "কিন্তু কিন্তু" লাগে।
----
পর্বগুলোর সাথে ছবি আরেকটু জুড়ে দিন না। কিপ্টেমি করেন কেন? রাস্তাঘাটের সাধারণ ছবিও কিন্তু একসময় গুরুত্বপূর্ণ ডকু্মেন্টেশান হয়ে উঠে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
লিখতে পারি না।
এর আগের রাজশাহীনামাগুলো তো ছবিতে বোঝাই, ভাবলাম এবার শুধু লিখি...
রেড ড্রাগনের ছবি নেই আসলে... কোন পুরাতন ছবির নেগেটিভে থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করার সময় নেই ব্যস্ততার কারণে। আর পুরাতন রাজশাহীর রাস্তাঘাটের ছবি যদি তুলে রাখতে পারতাম! সে আমলে ক্যামেরা থাকা ছিলো ভাগ্যের ব্যাপার! অনুষ্ঠানাদিতে বড় ফুপুর ক্যামেরা আনা হতো। আরেকটু পরে আমাদেরও ক্যামেরা ছিলো। কিন্তু ফিল্ম কেনা, ছবি তোলা, নেগেটিভ ডেভেলপ করা আর ছবি প্রিন্ট করা দিয়ে পুরা কাজটা কি আর এখনকার একটা ক্লিকের মতন সহজ ছিলো নাকি! নিজের একটা ভালো ডিজিটাল ক্যামেরার আগে পর্যন্ত তো হাতের সুখ করে ছবিই তুলতে পেতাম না!
ফেসবুকে রাজশাহীর একটা খুব কাজের পেইজ আছে, তাদের সংগ্রহে পুরাতন রাজশাহীর অনেক ছবি আছে, মাঝে মাঝে শেয়ার করে দেখি। একবার সময় করে সেখানে খুঁজে দেখতে হবে রেড ড্রাগন বা রাস্তাঘাটের কিছু ছবি আছে কিনা...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
খুবই চমৎকার একটা লেখা, তবে কিছুটা বিষন্নতার সুর ধরা পরে।
...........................
Every Picture Tells a Story
ঐ আর কি...
ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
কি এক অনুভূতি হত যতবার ড্রাগন মূর্তিটিকে দেখতাম, মনের অজান্তেই মিল খুজতাম রিকশার পেছনে আঁকা মারকুতে ব্রুস লি আর ক্রোধী তেজসৃপকে দেখে। সত্যিই, যখন রেড ড্রাগন পাল্টে কফি হাউস হল খুব খারাপ লেগে ছিল, শেষ বার দেখি আরেক নাম।
লেখায় যতই ভাল হোক, ভাল বলতে পারছি না, কারণ এই রাত দুপুরে আমাকে স্মৃতিকাতরতার ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত করা হয়েছে, ভাবছি, মন ভাল করার জন্য রাজশাহীর কিছু পুরনো ছবি নিয়ে একটা পোস্ট দিব নাকি।
facebook
আচ্ছা, আজকে দুপুরে আরেকবার কল্পনা করে মনে হলো যেন ড্রাগনের ডানা ছিলো না... সাপের মতন লম্বা লাল ড্রাগন ছিলো সম্ভবত, ঢেউ খেলানো আঁকাবাঁকা শরীর। গায়ে আঁশ আঁকা ছিলো... দু'টো (নাকি চারটে?) খাটো পা ছিলো, বাঁকানো নখ আলা... ড্রাগনের মুখটা ছিলো লম্বা, আর কেশরের মতোন ছিলো, শিং ছিলো কি? (মনে যে ছবিটা আসছে এঁকে ফেলতে পারলে ভালো হতো)!
আপনার কাছে পুরানো ছবি আছে রাজশাহীর?? অবশ্যই অবশ্যই পোস্ট দেন। একটা না কয়েকটা দেন! তাহলে হয়তো এত এত দুনিয়া বেড়ায়ে ফেলার জন্যে আপনাকে গুম-খুনের সুপ্ত বাসনাটা সামান্য কিছুদিনের জন্যে ঠেকায়ে রাখা যেতে পারে...!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
পা চারটে, ঠিক কেশর না, তীব্র বেগে ছুটে চলায় মাথার বড় আঁশ গুলো পিছন দিকে কাঁটার মত হেলে থাকত। শিং তো মনে পড়ে না !
সেই ড্রাগনের ডানা না থাকলেও মিথোলজির অধিকাংশ ড্রাগনেরই ডানা ছিল।
facebook
হুঁ! আমারো পরে মনে হলো ডানাটা আমি অন্যখান থেকে কল্পনা করে নিয়েছি, তবে এই ড্রাগনের মুখ বা নাক দিয়ে বের হওয়া আগুনের হলকা ছিলো।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ঢাকা
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
হুম... ঢাকায় থাকতে জ্যাম আর দৈনন্দিন জীবনযাপনের ঝামেলাগুলোর কারণে অসহ্য লাগতো... এখন মাঝে মাঝে দৈনন্দিনের ঢাকাকে ভিন্ন কিছু কারণে ভালো লাগে...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
অনেকদিন পর লিখলেন। রেড ড্রাগন নাঙ্কিং এ খাওয়া হয়েছে প্রচুর। আমরা যেহেতু ঢাকা থেকে যেতাম, একবার সবাই মিলে বাইরে খাওয়া হতই। আর তাই এই দুই জায়গায় অনেক খেয়েছি। এর বাইরে বিদু্যতের সিঙারা আর লক্ষীপুর মোড়ের ফুলুরি/কাবাবের কথা মনে পড়ে খুব। ছোটবেলায় মনে হয় কাবাবের শিক ছিল ২টাকা, যেখানে ঢাকায় ছিল ৮-১০টাকা করে। খুবই অবাক লাগত। আরেকটা জিনিস নিয়মিত খেতাম, সেটা হল টপসি। কেন জানিনা এটা ঢাকায় পাওয়া যেতনা। নানীবাড়ির বাসার গলির মোড়ের দোকান ছিলো মামার বন্ধু রানা মামার। গেলেই টপসি। আম্মা বা মামা পরে যেয়ে এক সময় টাকা দিয়ে আসত। বড় হয়ে যাওয়ার পরে সবচেয়ে যেটা মিস করি তা হল মানুষের মাঝে আন্তরিকতা। আগে মানুষ খুব সহজে আপন হত, এখন সবকিছু অনেক কম্প্লিকেটেড। রিক্সা করে ঢাকা শহর ঘোরার সেই আনন্দ আর কোথাও পাব কী?
টপসি!! প্লাস্টিকের কাপে অরেঞ্জ ফ্লেভার ড্রিংক, রাইট?! জবের জিনিস মনে করিয়ে দিলেন! শুধু টপসি নিয়েই তো একটা পোস্ট দেয়া যায়! এইটা ঢাকায় পাওয়া যেত না? কী বলেন! আচ্ছা জিনিসটা কি আমাদের দেশে তৈরি ছিলো?
এখনো সবজি থেকে শুরু করে কাবাব, সবকিছুর দামই মনে হয় ঢাকার থেকে রাজশাহীতে অনেক কম।
আপনারা দেশে এলে রাজশাহীতে আসুন একবার, নানকিং-এ খাওয়া যাবে আবার।
কালকে কল্যাণ'দা আর আশালতা'পার সাথে যাবো ভাবছি।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
টপসি ঢাকায় মোহাম্মদ্পুরে অন্তত পাওয়া যেতনা সে কথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। ভারত থেকেই আসত মনে হয়। তবে ঝাপসা ঝাপসা মনে পড়ে যে টপসির বিজ্ঞাপন টিভিতে দেখেছিলাম, সেটা দূরদর্শনে নাকি বিটিভিতে তা মনে নেই। দেশে গেলে থাকিই কদিন, আর আলাদা করে রাজশাহী যাওয়া হবে কিনা, আর তাছাড়া রাজশাহীতে আর কেউ থাকেওনা ঘনিষ্ঠ এখন।
টপসির অ্যাডে কি একটা অ্যানিমেটেড টপসি প্যাক নাচানাচি করতো? তাহলে মনে হয় বিটিভিতেই দেখাতো? <কোলন স্মৃতি হাতড়ানো>
এইটা কী বলেন! বেড়াতে আসবেন! ছোটবেলার জায়গা ঘুরে দেখতে তো আমার এমনিতেই ভালো লাগে... আর আসার আগে আমাকে জানাবেন, আবার ঘনিষ্ঠ কাওকে লাগবে কেমন কথা!
আজকে কল্যাণ'দা আর আমি মিলে পুরা টপসি উদ্ধারকাণ্ড চালায়েছি!
যত গল্প করেছি আশালতা'পার কানের পোকা নড়ে গেছে মনে হয়! তবে মনে হলো টপসি নিয়েই একটা লেখা হয়ে যায়! কল্যাণ'দার মতে সে সময়ে টপসির দাম ছিলো ৭ টাকা করে। আমার অত মনে নাই, কিন্তু মনে আছে এইটা খাওয়ার জন্যে টাকা চেয়ে ঘ্যান ঘ্যান করে আব্বা-আম্মাকে মেলা জ্বালায়েছি। আর কল্যাণ'দা আরেকটা জোস জিনিস মনে করায়ে দিয়েছেন, আমরা টপসি খেয়ে আবার তার প্লাস্টিকের কমলা কাপগুলো জমাতাম!!
আআআহ! ছেলেবেলা!! জীবন কত্ত সহজ ছিল!!!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আশালতাদিও রাজশাহীর নাকি? টপসি নিয়ে লেখা দেন না। ৭টাকা বেশী মনে হচ্ছে। সেই সময়ে হাতে এত টাকা থাকতনা যে ৭টাকা দিয়ে টপসি কিনে খেতে পারতাম। আবার এই মন্তব্য লিখতে লিখতে মনে পড়ল কোক পেপ্সিও তখন ৭টাকা ছিলো। সুতরাং টপসিও হতে পারে। হাজার হোক কল্যাণদা বুড়া মানুষ, উনার মনে থাকার সম্ভাবিলিটি আমার মতন ছুডুদের চেয়ে বেশী.
যা বুঝছি, আশা'পা হাফ-রাজশাহিয়ান তো বটেই! টপসি নিয়ে ডিটেইলস মনে করতে পারছি না, তবে ছোটবেলায় লুকায়ে কিনে খাওয়া জিনিস নিয়ে একটা লেখা দেয়া যায়। আপাতত মনে হচ্ছে কল্যাণ'দারই উচিত টপসি লেখাটা দেয়া!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
টপসি মনে হয় বাংলাদেশি প্রডাক্ট ছিলো। কমলা রঙের একটা বড় বর্গাকৃতি কাপে পাওয়া যেত। চট্টগ্রামের সব দোকানেই পাওয়া যেত। বিটিভিতে টপসির এড দেখাত- 'টপসি ফ্রুট জুস টপসি, তাজা ফল তাজা স্বাদ...' এই রকম কী একটা জিঙ্গেল ছিলো। আর যাযাবরের কথা ঠিক বিজ্ঞাপনে একটা এনিমেটেড প্যাক নাচানাচি করত। টপসির কাপের সাইজ বড় ছিলো দেখে অনেকে জমাত। অনেকে আবার বারান্দায় টপসির প্যাকে ছোট ছোট চারা লাগাত। দাম ঠিক মনে নাই। ৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। পরে হয়ত ৭ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। টপসি মনে হয় পরে পাকিস্তানের সেজান জুসপ্যাকের কাছে ধরা খেয়ে মার্কেট আউট হয়ে গিয়েছিলো। কারণ, কমলা রঙের ঐ কাপের আকর্ষণ ছাড়া টপসি খেতে তেমন আহামরি ছিলো না। জুস না বলে একে কমলা রঙের একরকম পানীয় বলাই বেশি মানানসই
আমারও মনে হয় টপসি দেশী ছিলো তানভীর ভাই। তবে আমাদের দেশে তো মার্কেটিং অত জোর নয়, হয়তো চট্টগ্রামে তৈরি হতো আর এখানে কেউ সাপ্লাই এজেন্সিটা নিয়েছিলেন, সারা দেশে সেভাবে প্রসারতা পায়নি। আমরা যেমন রাজশাহীতে মিল্কভিটার দুধ পাই না কিন্তু কখনোই! অথচ কাছাকাছি সিরাজগঞ্জেই মিল্কভিটার মূল খামার, প্রোডাকশন কারখানা ইত্যাদি। টপসি-টা আসলে জুস ছিলো না, ঐ মিরিন্দার মতন মিষ্টি একটা কমলা পানীয় ছিল।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
রাজশাহীতে বাইরে বেশি খাওয়া হয় নাই, তবে নিউ ডিগ্রির কাছে বলে লক্ষীপুর মোড়ের রেস্টুরেন্টগুলোতে মাঝে মাঝে যেতাম।
চাইনিজগুলোতেও যাই নাই তেমন তবে নানকিং এ দুইবার গেছি ২০০৫/০৬ এর দিকে। আমার বরাবর ঢাকার চাইতে রাজশাহীকেই ভালো লাগে, শান্ত আর জ্যাম কম বলে। তবে ২০১০ এর শেষ দিকে মনে হলে রাজশাহী ও অনেক বদলে গেছে
লেখা ভালো লাগলে...ছবি থাকলে ছবি দেন, দেখি
রাজশাহী আসলেই বদলে গেছে, বা যাচ্ছে। রাস্তা নিয়ে মহানগরীর অনেক নতুন প্রকল্পের জন্যে পুরাতন অনেক এলাকার অনেক বাড়িঘর সরকারী অধিগ্রহণের ফলে ভেঙে ফেলেছে। রাস্তা নির্মাণ সময়মত শেষ না হওয়ায় বেশ সমস্যায় ভুগতে হচ্ছিলো এক বছরের উপরে, তবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহী সফরের কারণে সুসজ্জিত মহানগর প্রদর্শন প্রকল্পের আওতায় মাননীয় মেয়র মহোদয়ের নির্দেশের সম্ভবত খুব দ্রুত কিছু কাজ শেষ করে ফেলেছে, যার গুণগত মান নিয়ে আগামি বর্ষায় সন্দেহ প্রকাশের অবকাশ থাকতে পারে!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
রেড ড্রাগনের নাম শুনেই মনের মনিকোঠায় আঁচড় খেলাম। হায় গোল্ডেন ড্রাগন... একসময় তো সন্ধ্যা হলেই আমরাই ড্রাগন হয়ে যেতাম সেই আলো আঁধারীতে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বটে!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
মন খারাপ করা লেখা...
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
মন ভালো নাই হয়তো ...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
রেড ড্রাগনঃ চায়নিজ রেস্টুরেন্টের এমন গল্পগুলো আমি আরো দশ বছর দশেক আগে থেকে জানি। চিকেন কর্ন স্যুপ সাথে ওনথন, ফ্রায়েড রাইস, নুডুল্স্, ফ্রায়েড চিকেন, চায়নিজ ভেজিটেবল - সেই একই মেন্যু ঘুরে ফিরে, ঘুরে ফিরে। সিজলিং খাওয়া হতো কালে-ভদ্রে (দাম বেশি যে!), চপ্সি খাওয়া হতো আরো কম (ওটা অখাদ্য যে!), কখনো-সখনো বিফ-চিলি (পঁচিশ টাকা সেরের গরুর গোস্তের ডিশের অ্যাত্তো দাম!)। চায়নিজগুলোর ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনে আজো যে বিশেষ পরিবর্তন এসেছে তা নয়। আমার ভালোই লাগে। নামে চায়নিজ হলেও এটা এখন আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এমন চায়নিজ খাবার খেয়ে, চায়নিজ খাবারের ব্যাপারে যে ভুল ধারণা নিয়ে বড় হয়েছি; এবং পরে চীনে গিয়ে খাবার সময় নাস্তানাবুদ হয়েছি সে গল্প অনেক আগেই সচলে করে রেখেছি।
আইসক্রীম কিউবঃ আশির দশকের গোড়ায় দেশে প্রথম ‘কোন আইসক্রীম’-এর মেশিন নিয়ে আইসক্রিমের নতুন দোকান বসলো। পালা-পার্বণে দশটা টাকা যোগাড় হলে এক দৌড়ে একটা কোন আইসক্রীম খাওয়া। এখন আইসক্রীমের ফেরিওয়ালাদের কাছেই কোন আইসক্রীম পাওয়া যায়, তবে সেই মজাটা আর নেই। আরো পাঁচ-ছয় রকমের আইসক্রীমের কথা বলতে পারবো যেগুলো আজ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
শিখণঃ মানুষ মরার আগ পর্যন্ত নাকি শিখতেই থাকে। ফাঁকে ফাঁকে এলেমদারেরা তার প্রয়োগটাও করতে পারে। আমি এলেমদার নই, তাই শিখতেই আছি - শিখতেই আছি। সুরপুত্র কচের মতো জ্ঞান কেবল গিলে খেয়েছি, আত্মস্থ হয়নি কিছুই - প্রয়োগ শিখিনি কিছুই।
নিখোঁজ সংবাদঃ আমার ছোটবোনের সহপাঠী শিখার বয়স যখন আট, তখন একদিন তার বাবা লঞ্চে করে বরিশাল যাচ্ছিলেন। ষাটনলের কাছে লঞ্চডুবি হয়, সেই থেকে শিখার বাবা নিখোঁজ আছেন। অবশ্য এই ঘটনার একমাস পর থেকে শিখার পরিবারও কোথায় যেন চলে গেছে -সপরিবারে শিখা নিখোঁজ।
আমার শহরঃ আমার যা বয়স তাকে দুই দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল হয় তার সমপরিমান সময় প্রথমে আমার শহরে তারপর এই মহানগরীতে কাটাচ্ছি। আমার শহর এখন মহানগরের মর্যাদা পেয়েছে - তাই আমার শহর প্রায় হারিয়ে গেছে। এই মহানগরও এখন মেগালোপলিস - আমার মহানগরও হারাতে বসেছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ঢাকায় প্রথম কোন আইসক্রিম খেয়েছিলাম আশির দশকের মাঝামাঝি অথবা শেষদিকে... আপনার বর্তমান এলাকাতেই একটা দোকানে ... 'রানুকা' নামে একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ছিল সেখানে (আমার প্রিয় স্ট্যাম্পবুকটাও সেই সময়ে রানুকা থেকেই কেনা...ও আচ্ছা, নতুনদের জন্য একটা নোট, আমাদের সময় স্ট্যাম্প-কালেকশনের একটা শখ ছিল অনেকের, যেটাকে আবার ক্ষুদ্র পরিসরে ফিলাটেলিও বলতাম বটে)।
পরে মগবাজারের মোরের কাছে একটা আইসক্রিমের দোকান হল (একটা ব্রাঞ্চ ছিল ধানমন্ডি পুরানো ৩০এ) = আশ্চর্য, নামটা মনে করতে পারছি না)।
স্ট্যাম্প জমানো, বদলাবদলি, চুরি... স্ট্যাম্পের খাতা... মারামারিও করছি স্ট্যাম্প নিয়া...
কয়েনও জমাতাম। বিভন্ন রকমের ফাউন্টেন পেন জমাতাম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এগুলা ছাড়াও চকলেটের খোসা জামাবার একটা বাতিক ছিলো আমার। বহু দেশের বহু নজির এখন আনাচ-কানাচ থেকে বেরুয়।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
'রানুকা' নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ছিল। তার পাশে ছিল 'স্নো হোয়াইট' - আইসক্রীমের দোকান। তার কাছে এক কালে ঠাক্মা থাকতেন। 'স্নো হোয়াইট'-এর আরেকটা ব্রাঞ্চ ছিল ধানমণ্ডি ৩০ নাম্বার রোডে (৩০এ নয়), যেটা বর্তমান ১৩ নাম্বার রোড। ইস্কাটনে আরো ছিল, ফাস্টফুডের দোকান 'ইয়াম ইয়াম' আর চায়নিজ রেস্টুরেন্ট 'চপস্টিকস্' - মনে পড়ে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রাজশাহীতে কোন্ আইসক্রিম ঠিক কবে এসেছে তা মনে নাই, তবে নির্দিষ্ট কিছু বড় বেকারি ছাড়া মিলতো না এটা মনে পড়ছে। কাজেই শহরের কেন্দ্র সাহেববাজারে গেলে এইটা খাওয়ার সুপ্ত বাসনা থাকতো। তবে আব্বার প্রথম কোন্ খাবার গল্পটা জানি! রাবি স্টেডিয়াম মার্কেটে একটা কোন্ আইস্কিম মেশিন বসিয়েছিলেন বাবার এক বন্ধু। আব্বার আইসক্রিম প্রীতিটা বরাবরই কম, কিন্তু বন্দশখ করে প্রায় জোর করে খেতে দেন। পরপরই আব্বার সাথে সাথে ব্রেইন ফ্রিজ বলে যেটাকে সেটা হয়েছিলো সম্ভবত, দাঁতে ব্যথা আর চোয়াল-মাড়ি সব আটকে যাবার উপক্রম হয়। দ্রুত বাড়ি ফিরে গরম পানি দিয়ে কুলকুচি রেহাই পায়।
বেবী আইসক্রিম ছিলো বর্তমান নানকিং এর মালিকের রাজশাহীর প্রথম ভেঞ্চার। বাঁকা করে বেবী লেখা থাকতো লাল অক্ষরে আইস্ক্রিম ভ্যানে, ঐ বানানেই। খুলনা থেকে ডুলু চাচা যখন আসেন তখন বেবী আইসক্রিম ফ্যাক্টরি দিয়েই শুরু করেন বলে জানি।
রাজশাহীর প্রথম চাইনিজ রেস্টুরেন্ট 'শানতুং' (এটাই ছিলো সম্ভবত নাম, আমার বেশি ছোট ছিলাম, কোন স্মৃতি নেই, আবছা নামটা বাদে) করেন তিনিই, বরেন্দ্র যাদুঘরের কাছে ছিলো সম্ভবত। পরে নানকিং শুরু করেন মণিবাজারে, যেখানে ছোট্ট একটা রেস্টুরেন্ট থেকে ক্রমে ক্রমে রাজশাহীর সবথেকে জনপ্রিয় মালটিপারপোজ কমিউনিটি সেন্টার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাথে সাথে রাজশাহীর প্রথম ওয়ান স্টপ শপিং মল বা ছোট্ট একটা সুপারমার্কেট হয়েছে এখন, আর মহিলাদের পাশাপাশি জেন্টস স্যালনও করেছে সম্প্রতি। রেড ড্রাগন বেশি ভালো ব্যবসা করতো আমরা ছোট থাকতে। এটা করেছিলেন রাজশাহীর আঞ্চলিক কেউ। পরে কিনে নিয়ে 'কফি হাউজ' নামে চালান আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়া রাজশাহীর শুটার হায়দার (পুরা নাম মনে পড়ছে না)। কিন্তু সেটাও এখন নেই।
এই তথ্যগুলো ভেরিফাই করে পরে মূল লেখায় জুড়ে দিতে হবে পাদটীকা হিসেবে।
সম্পাদিত সন্ধ্যা ৬:৫৪ মিনিটে
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
যাযাবরের চীনদর্শনের দৌড় তো শুধু বেইজিং-এর কিছুটা পর্যন্তই, পাণ্ডবের সাথে তুলনা চলে না। সত্যিকারের চীনে খাবার কেমন হতে পারে তার একটা নজির তো পহেলা বৈশাখের ই-বই 'ভ্রমণীয়'তে দিয়েইছিলাম, তবে আমি শুধু ঐ কর্ন সুপটাতেই মিল পেয়েছিলাম এক জায়গায়।
অটঃ কচ কী ছিলো, অসুর? সুরপুত্র কি সেই অর্থই বহন করছে?
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ওহ! কচ ও দেবযানী...। পুরাণ সব ভুলে গিয়েছি দেখি। সেই সাথে গুলে খেয়েছি বাংলা শব্দার্থও! 'সুর' অর্থ 'দেবতা'।
কচ লিখে গুগল করে পেলাম এইটা... আর পেলাম লীলেন'দার এই লেখাটা।
এবার বুঝেছি অর্থ... আর উপলব্ধি করলাম একটু বেশি ভালো করেই...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
লেখাটা পড়তে পড়তে কত শত স্মৃতি হুড়মুড় করে মাথায় ভেঙ্গে পড়লো। একদিক দিয়ে আমি খুব ভাগ্যবান। ছেলেবেলা যেই পরিমানে আনন্দে কাটিয়েছি, এখনো একই অনুপাতে সুখে থাকি। পুরানো কথা মনে পড়লে ভালো লাগে, কিন্তু কেউ যদি বলত আমাকে ওইদিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, আমি কখনো যেতে চাইব না। আমার বর্তমানটা সব থেকে বেশি প্রিয়।
ধন্যবাদ। আর আপনার জন্যে শুভকামনা।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
সম্ভব হলে শুনবেন।
ভীষণ ভালো লেগেছে লেখাটা সকালে এই লেখাটাই সবার আগে পড়া হল...... তাই উপরের গানটা খুঁজে বের করে আনলাম।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
'মেঘপিওনের চিঠি' শুনেছি আগেও, এই গানটার উপমাগুলো সুন্দর, কিন্তু কম শোনা হয়। আমি বাস্তবমুখী মানুষ, কিন্তু আশাবাদী। 'মেঘপিওন'-এ ঋণাত্মকভাবটাই বেশি বাজে যেন, যেখানে অর্ণবের 'হারিয়ে গিয়েছি'তে হারাবার প্রচেষ্টার মাঝে দুনিয়ার প্রতি বেশ একটা উপেক্ষার সুর আছে, হারাবার সু্যোগ না পাওয়াতেও একটা স্বপ্ন আছে...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
পড়লাম লেখাটা। "রেড ড্রাগন" দেখে ভাবলাম হয়ত সিনেমাটার কথা বলা হচ্ছে! আমার বেশ পছন্দের সিনেমা কি না, তাই। হা হা হা। আমি প্রথম চাইনিজ খাই বগুড়ায়। মনে হয় ২০০০-এর দিকে। "ম্যান্ডোলিন" না কী যেন নাম ছিল। পরিষ্কার মনে নাই এখন। তবে পুরাতন কোনো নোটবুক খুঁজলে হয়ত পাওয়া যাবে। তখন আবার স্মৃতি টুকে রাখার (বদ)অভ্যাস ছিল।
অর্ণবের এই গানটা আমার সবসময়ের প্রিয় গানগুলার একটা।
তোমার চাইনিজাভিজ্ঞতা দেখি আমার হিসেবে তুলনামূলক সাম্প্রতিক, আমি তাহলে মেলা পুরাতন পাপী!
গানটা বাজছিলো দুইদিন ধরে... গানের সাথে সাথেই লেখা হয়েছে হয়তো... যখন খুব বেশি হারানো দরকার হয়ে পড়ে তখন হারাবার উপায় না থাকলে দমবন্ধ লাগে...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
রেড ড্রাগনের লাল ড্রাগনটা সবসময়ই চরম আকর্ষক ছিল। কিন্তু রেড ড্রাগনে যাওয়া হয়েছিল তার নাম বদলের পর, যখন কফি হাউস হলো। তবে আজকে যখন ঐপথ দিয়ে গেলাম দেখলাম কফি হাউসও নেই, মনে হলো কোন এক কোচিং সেন্টার দখল করে নিয়েছে ঐ জায়গা। রেডহার্টও আজকে আর নাই, কি এক চাইনিজ নামে চলছে সেটা। রেডহার্টটা খুব অন্যরকম মনে হতো তার বেতের আসবাবপত্রের জন্য।
আইসক্রিমের কথায় মনে পড়লো ছোটবেলা ঈদের বিকালে কোণ খেতে যেতাম ভূবনমোহন পার্কের উল্টা পাশের এক দোকানে। কোণ আইসক্রিম তখন প্রথম খাওয়া। এর আগে আইসক্রিম খেতাম 'পানসি'তে।
রাজশাহীতে অনেকগুলো চাইনিজ/থাই/দেশী মিক্সড রেস্টুরেন্ট আছে আসলে। কয়েকটা বেশ ভাল। বুনোহাঁসরা প্রায় বছর দেড়েক আগে রাজশাহী এলে নানকিং-এ খেয়ে প্রশংসা করেছিলো। মনে হয় ওদের রান্নাটাই ঘুরে ফিরে এখনো মোটামুটি একই মানের হয়। তাও আমি দেখি মেনু থেকে বেছে দেয়া একই সুপের স্বাদ, গন্ধ, রূপ, রস একেকবার একেক রকম!
'পানসি'তে আমার বড় ভাইরাও আইসক্রিম খেতে যেত। মেডিকেল কলেজ এলাকায় থাকতাম না বলে আমার কখনো যাওয়া হয়নি। আমার খুব ইচ্ছা ছিলো কিন্তু যে যাবো! ভাইয়েরা নেয় নি আমাকে। আমি অবশ্য আইসক্রীমের থেকে বেশি আকর্ষণ বোধ করতাম দো'তলায় 'পানসি'তে ঢুকবার জন্যে বাইরে দেয়ালের গায়ে ঐ ঘোরানো সিঁড়িটার জন্যে। ছোট থেকেই আমার অমন প্যাঁচানো সিঁড়ি খুব ভালো লাগে!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
দারুণ স্মৃতিজাগানিয়া একটা লেখা। ভাল লাগল। রাজশাহীতে যাওয়াটা জরুরী হয়ে উঠছে...।
ধন্যবাদ নৈষাদ'দা। এবার সত্যিই চলে আসুন।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
২০ আগস্ট ২০০৬ বিকেল বেলা। নতুন একটা শহরে নামলাম। আর অবাক হলাম বেশ সুন্দর পরিপাটি একটা শহর দেখে। বিশেষ করে প্রশস্ত বিভাজিত সড়ক আর সড়কদ্বীপগুলো দেশের অনেক শহরের থেকে একটু অন্যরকম। তিনদিন পর নানকিং-এ প্রীতিভোজ। সেবারই প্রথম রাজশাহী দর্শন হল। কাজের সূত্রে এরপর গিয়েছি কয়েকবার। দেশের ভেতর আমার দেখা সুন্দর শহরের তালিকায় একেবারে প্রধান একটা আসন রাজশাহীর জন্য থাকবে।
--------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
রাজশাহীতে দু'বার যাবার সুযোগ হয়েছিল। খুব সুন্দর শহর। মানুষগুল এত সুন্দর করে কথা বলে! আর রাস্তের পাশের দোকানের মালাই-চাইয়ের স্বাদ তো এখনও মুখে লেগে আছে। ঐ মালাই-চা বেহেশ্তেও পাওয়া যাবে না। লাখ টাকা দিলেও না।
লেখা খুব মনকাড়া হয়েছে
রাজশাহীর মানুষের 'কথা' ভালো লেগেছে আপনার? বুইলছেন কী?
নাহ্! লিখে ঠিক হয় না রাজশাহীর ভাষা প্রকাশ। উচ্চারণের টানটাই আসল! আর আমি ঠিকমতন বলতে পারিও না। শুদ্ধ উচ্চারণের ব্যাপারে ছোটবেলায় মায়ের কড়া নজর ছিলো। তবে বদ(!)লোকে বলে টানটা নাকি ভালোই চলে আসে আমার কথোপকথনে!
ধন্যবাদ আপনাকে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ভালো লাগল লেখাটা। অনেকদিন পর লিখলেন।
পুরো লেখাটাতে কীরকম একটা বিষন্নতা জড়িয়ে আছে।
ধন্যবাদ শাওন'দা। পারলে সময় করে একবার এদিকে আসুন, তাহলে আমরা হয়তো রাজশাহী নিয়ে একটা চমৎকার ব্যানার সংকলন পাবো কিছু দারুণ লেখা-ছবির সাথে!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ঠিক আমার মনের কথা।
আপু, এই লেখাটির জন্য আপনার ছোট্ট শহরটির আরেকজন ছোট মানুষ হিসেবে আপনাকে জানাই কৃতজ্ঞতা। আশা করি শহরটিকে আপনি এভাবেই ভালবেসে যাবেন, আমাদের ভালবাসতে শেখাবেন।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
বাংলাদেশের চাইনিজ খাইতে মন চায়
যাক! এই ইচ্ছার উদ্রেক করতে পারা মানেই লেখাটা তার সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
একটা না, দুইটা না, তিন তিনটা হাসি! খাইছে!!
দুপুরে নানকিঙাড্ডায় দেখা হবেনে! আশালতা'পাও চলে আসবেন ঠিক সময়ে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আপনেরা বিষম খান।
আড্ডার পরে এসে আমিও তিনটা দাঁত বের করা কমেন্ট দিবো, তখন আপনে বিষম খায়েন!
:D
:D
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
উপুরে দেখেন, আরও বিস্তারিত লিখেছি।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
অসাধারণ লেগেছে।
আমাদের চট্টগ্রামে ও বাইরে খাবার রেয়াজ কম, মানে স্থানীয়দের মধ্যে। তবে ইদানিং ধনিক শ্রেনীর উত্থানের কারণে পালটে গেছে চিত্র। রেস্টুরেন্ট নিয়ে আমার ও অনেক মজার স্রিতি আছে।
মিস করি আমার জীবনের জীবন্ত সাক্ষী চত্তগ্রামকে, এখনও বিপুলভাবে সশব্দে..................।
ধন্যবাদ ইফতি। আমার কিন্তু পুরাতন জায়গা ঘুরে দেখতে অনেক ভালো লাগে। কত গল্প-কথা মনে পড়ে যায়... আজকে আমাদের স্কুলের ভেতরে ঘুরে আসলাম অনেকদিন পরে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ফেসবুকেই কইচি, আবারো কইলাম, লেখাটা কিন্তু জব্বর! তা দেখ, আমেরিকা যখন বেড়াতে আইবা তখন ব্যাকপ্যাকে করে নানকিং-ইত্যাদির অনেককিছু রান্নাবান্না কিন্তু নিয়ে এস আমাদের জন্য!
কেনে? তোমার ভিসা আবারও নাকচ করে দিছে? তুমি কোন্ চোরাকারবারিতে যে যুক্ত হইছো! গরু নাকি ডাইল (ফেন্সিডিল)?
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
দেবেই তো মনয়, মন্ত্রীর মেয়ের ছিঃনেমা নিয়ে দুষ্টু কথা লিখলে কি আর...
লেখা আর মন্তব্যগুলো পড়ে আসলেই মনটা জানি ক্যামন ক্যামন করছে। অবশ্য এইটাকে ঠিক মন খারাপ বলা যায় না।
খুব ভালো একটা সিরিজ হচ্ছে এইটা। ছাপানো বই হিসেবে পড়তে ভাল লাগবে।
আর এইটা পড়তে পড়তে যেহেতু নাইন্টিজের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, এইটার সাথে অর্ণবের গান ঠিক যাচ্ছে না। তাই এইবার নাইন্টিজের সুপারহিট একটা গান দিলাম
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
হা হা হা! জটিল! কিন্তু নাইন্টিজ মনে পড়লে তো ভুল হচ্ছে, বেশিরভাগটাই তো এইটিজ নিয়ে। আর মন খারাপ হচ্ছে এই দশকে সেই জন্যেই তো অর্ণবের গান। তবে অর্ণবের গানটা পছন্দ হবার আরেকটা কারণ আছে, বললাম না, বিষণ্ণতার মাঝেও ওতে একটা বেশ ফাইট করার দৃঢ়তা আছে ...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নতুন মন্তব্য করুন