[justify]মানুষ প্রতিদিন ঘড়ির সাথে সাথে ছুটছে। মানুষের সময় ময় ঘুম পায়, ক্ষুধা পায়, ঘুম থেকে উঠে যায়, প্রতিদিনের কাজ করে, সুস্থতা, অসুস্থতা বোধ করে, আবার অসুস্থ অবস্থা থেকে সুস্থ হয়ে উঠে। সব কিছুতেই কেমন যেন একটা রুটিন বাঁধা। আপনি সচেতন ভাবে অনিয়ম করতে যান, দেখবেন, আপনার দেহ ঠিকই বলছে, আমার ক্ষুধা পেয়েছে, এইবার খাও দয়া করে। সারাদিন অনেক কাজ বা অকাজের পর একসময় আপনার দেহ ঠিকই ক্লান্ত হবে, বলবে আর পারছ
মানুষ প্রতিদিন ঘড়ির সাথে সাথে ছুটছে। মানুষের সময় মত ঘুম পায়, ক্ষুধা পায়, ঘুম থেকে উঠে যায়, প্রতিদিনের কাজ করে, সুস্থতা, অসুস্থতা বোধ করে, আবার অসুস্থ অবস্থা থেকে সুস্থ হয়ে উঠে। সব কিছুতেই কেমন যেন একটা রুটিন বাঁধা। আপনি সচেতন ভাবে অনিয়ম করতে যান, দেখবেন, আপনার দেহ ঠিকই বলছে, আমার ক্ষুধা পেয়েছে, এইবার খাও দয়া করে। সারাদিন অনেক কাজ বা অকাজের পর একসময় আপনার দেহ ঠিকই ক্লান্ত হবে, বলবে আর পারছি না, এইবার ঘুমাতে হবে, আপনি ঘুমাতে না চাইলেও একসময় দেখবেন আপনি ঘুমিয়ে পরেছেন, টেরই পাননি। আপনি চাইলেই পারছেন না, সম্পূর্ণ অনিয়ম করতে। বড়জোর আপনার রুটিন এলোমেলো করে দিতে পারছেন, একসময় হয়ত, ঐ এলোমেলো রুটিনটাই আবার আপনার রুটিনে পরিণত হয়ে যাচ্ছে, আপনার আর তখন আগের সময় মত ক্ষুধা পায় না, ঘুম পায় না, আগে যেটা অসময় ছিল, সেই সময়ে ক্ষুধা পায়, ঘুম পায়। শরীর ব্যাটা যথেষ্ট পরিমাণেই আপনার মুডের সাথে কম্প্রোমাইজ করে মানিয়ে নিচ্ছে। এই ব্যাপারটা এতোটাই স্বাভাবিক, যে আমরা এই নিয়ে একটুও চিন্তিত হই না, কেবল মা একটু গাইগুই করে, রাতের খাবার টেবিলে আপনাকে সবার সাথে না পেলে, বা বউ ভাবছে, আপনার সাথে একটা রোমান্টিক ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে বসবে, আপনি ক্ষুধা নেই বলে রোমান্টিকতা মাটি করে দিলে। ব্যাস এটুকুই, আর কিছু নয়, শরীরের নিয়ম নিয়মের মত চলছে, আপনার সাথে পরিমাণ মত মানিয়েও নিচ্ছে। আপনি বেশী ঝামেলা করলে শরীর ব্যাটা ঠিকই আপনাকে শাসাতে শুরু করে দিবে, তাতেও আপনি তার কথা মেনে না নিলে, ঠিক আপনাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবে। এক কথায়, আমরা অনেক অনিয়ম করলেও বেঁচে থাকার জন্য শরীররের নিয়মকে বুড়ি আঙ্গুল দেখিয়ে বসে থাকতে পারছি না।
এইসবের পিছনে নাটের গুরু হয়ে বসে আছে যে নিয়ন্ত্রণ কৌশল, তার নাম হোমিওস্ট্যাসিস। এই নিয়ন্ত্রক কৌশলটাই আসলে আমাদের দেহটাকে স্থিতিশীল করে রেখেছে, আপনার দেহের ভিতরে বা বাইরের পরিবেশে যা কিছুই ঘটুক না কেন, একটা সময় ঠিকই আপনি তাতে মানিয়ে নিচ্ছেন, বেঁচে থাকছেন, কাজ করছেন, করতে পারছেন। আমাদের দেহের কোষ, টিস্যু বা অংগপ্রত্যঙ্গ গুলো এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় যাতে কোষের বাইরের তরলে কোন পরিবর্তন আসা মাত্র দেহের ভিতরে একধরণের প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, যা শেষপর্যন্ত ঐ পরিবর্তনের প্রভাবটাকেই কমিয়ে দেয়।
হোমিওস্ট্যাসিস হল দেহের আপেক্ষিক স্থিতিশীল অবস্থা, যেখানে একটা নির্দিষ্ট চলক বা ভেরিয়েবল (যেমন দেহের তাপমাত্রাকে) স্থিতিশীল রাখা হয় বা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যা করার জন্য প্রয়োজন মত শক্তি দেহে যোগ বা বিয়োগ করা হয়। কঠিন কঠিন শোনাচ্ছে? আসুন সহজ করে শুনি একটু...
আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা, ৩৭ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ৯৮ ডিগ্রী ফারেনহাইট। যারা থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপেছেন, তারা জানেন, ৯৯ ডিগ্রী উঠলেই আমরা বুঝি, জ্বর এসেছে। শরীরও বিভিন্নভাবে জানান দেয় জ্বরের কথা।
এখন ধরুন, আজকের তাপমাত্রা আছে ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, হঠাৎ করেই নেমে আসলো ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। আপনি হুহু করে কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিবেন শীতে, যতক্ষণ না আপনার শীত কমছে, ততক্ষণ আপনি গরম কাপড় গায়ে চড়াতে শুরু করবেন, খেয়াল করে দেখেন, গুটিশুটি মেরে বসে আছেন, শীত কালে যারা গ্রামে গিয়েছেন, তারা জানেন, সকালবেলা ভোর হতে না হতেই গ্রামের লোকেরা, খড়ি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে, তার চারপাশে গোল হয়ে বসে আগুন পোহায়। একটা সময় ঠিকই আপনি ঐ ঠান্ডার মধ্যে স্থির হন, গায়ে যতই গরম কাপড় জড়িয়ে রাখার দরকার হোক না কেন, আপনি প্রতিনিয়ত আর কাঁপাকাঁপি করছেন না। হয়ত গুটিশুটি মেরে বা কম্বলের তলায় বসে মনের আনন্দে বই পড়ছেন, বা শীতের দেশে থাকলে রুম হিটার চালিয়ে দিয়ে নিত্যদিনের কাজ করছেন। তবে সহজে বাইরে বেরুচ্ছেন না। বাইরের বাতাসটা বড় বেয়াড়া হয়ে যায় যে মাঝে মাঝে!
কিন্তু এইযে এতো কান্ড করছেন তাপমাত্রা কমে গেছে বলে, কেন করছেন? জানলে এক অবাক হবেন খানিকটা, অসচেতন ভাবে কত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে ফেলছেন! নীচের ফ্লো চার্টটার দিকে একটু চোখ বুলিয়ে দেখেন।
কৃতজ্ঞতা: Vander et al, Human physiology, 2001, 8th edition
যখন আমাদের চারপাশের পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যায়, তখন আমাদের দেহ আগের চেয়ে বেশী পরিমাণে তাপ হারাতে শুরু করে, যথারীতি তাপগতিবিদ্যার সূত্রকে ধর্ম মেনে! যার ফলে আমাদের দেহের তাপমাত্রাও কমতে শুরু করে। আর তখনি এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় হোমিওস্ট্যাসিস (Homeostasis). দেহ তখন তার তূণে রাখা একেকটি অস্ত্র বের করতে শুরু করে। প্রথমে পারলে সচেতন ভাবে গরম কাপড় পড়ে। আর নিজে মারে গুটিশুটি। এই গুটিশুটি মারাটা কোন মামুলি ঘটনা নয়, এই কাজটা করে যাতে দেহ থেকে তাপের বিকিরণ কম হয় সেই জন্যই। একটা বড়সড় প্রশস্ত গরম বস্ত থেকে নিম্ন তাপমাত্রার পরিবেশে যে পরিমাণ তাপ বের হয়ে যাবে, স্বাভাবিক ভাবে একই পরিবেশে একই পরিমাণ গরম (তাপমাত্রা উভয় ক্ষেত্রে সমান) বস্তু থেকে তার চেয়ে কম তাপমাত্রা বের হবে। দুইটা বস্তুর সব বৈশিষ্ট্য এক হলেও শুধু মাত্র বস্তুর ক্ষেত্রফলের ভিন্নতার কারণেই তাপ বিকিরণের পরিমাণ ভিন্ন হচ্ছে। আপনার দেহটি এই কারণেই আপনার দেহের তাপ বিকিরণকারী স্থান কমিয়ে দিচ্ছে। ফলাফল যা হল, আগের চেয়ে কম তাপ বিকিরিত হচ্ছে।
এরপর আপনাকে না জানিয়ে যেটা করছে, তা হল আপনার রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে ফেলছে, এটাও আপনার দেহের ভিতর থেকে (দেহের অভ্যন্তরীণ তাপ পরিবহন বা রক্তনালীর ভিতরে তাপ পরিচলন কমিয়ে দিচ্ছে) সহজে তাপ বের হতে দিচ্ছে না, আবারও সে তার দেহের তাপ নিজের ভেতরেই রাখার ব্যবস্থা করে ফেলল। কিন্তু দেখা গেলো, গরম কাপড় পড়া, গুটিশুটি মারা, বা রক্তনালী সংকুচিত করে ফেলা, এসব করেও আশংকাজনকভাবে তাপ বেরিয়ে যাচ্ছে, বাইরের তাপমাত্রা যে খুব কম! এইবার সে কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিল। দাঁতে দাঁত ঠকঠক! একসময় দেখা গেলো, আস্তে আস্তে আপনার শীত লাগাও কমে গেলো, আবার কাঁপাকাঁপিও কমে এলো, কিন্তু থার্মোমিটার বলছে, বাইরের তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রীতেই আছে! তাহলে কিভাবে কি হল? এখন শীত কম লাগছে কেন আগের চেয়ে!
এর কারণ হল, আপনি যখন কাঁপাকাঁপি করছিলেন, তখন আপনার মাংশপেশী বারবার সংকুচিত আর প্রসারিত হচ্ছিল, এই সংকোচন আর প্রসারণের জন্য আপনার মাংসকোষের ভিতরে কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়েছে, যা উৎপাদন করেছে বাড়তি তাপ। আপনার কাঁপাকাঁপি তখনই থেমেছে, যখন আপনার দেহ থেকে বেরিয়ে যাওয়া তাপের প্রায় সম পরিমাণ তাপ আপনার দেহের ভিতরে উৎপাদিত হয়েছে! তারমানে আপনার সুরক্ষা আসলে হচ্ছে আপনার দেহের ভিতর থেকে, কেবল বাইরের গরম কাপড়ে না। এইবার আপনি আগের মতই স্বাভাবিক ভাবেই আপনার কাজ করতে পারবেন। কারণ এখন আপনি আপনার বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন!
গল্পে আরো কিছু টুইস্ট আছে, যা আপনি এখনো জানেন না। এইবার একটু নীচের গ্রাফটা দেখি,
কৃতজ্ঞতা: Vander et al, Human physiology,2001, 8th edition
Temperature (oC) Vs. Time এর এই গ্রাফটাতে কয়েকটা অপরিচিত শব্দ দেখা যাচ্ছে। প্রথমেই, সেট পয়েন্ট (Set point). সেট পয়েন্ট আসলে বোঝাচ্ছে, যে তাপমাত্রায় আমাদের দেহের কার্যক্রম পরিচালিত হয় তা, আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রাকে, ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যখন বাইরের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিল, তখন আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তখনও আপনার দেহ থেকে তাপ বেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু যতখানি বেরিয়ে যাচ্ছে ঠিক ততখানি তাপ আপনার গ্রহণ করা খাবার থেকে দেহের ভিতরেই উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু ঝুপ করে যখন বাইরের তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এ নেমে গিয়েছিল, তখন আপনার স্বাভাবিক তাপমাত্রাও আর স্বাভাবিক থাকেনি। সেও নীচে নেমে গিয়েছিল, আপনার দেহ হোমিওস্ট্যাসিস নামের সুরক্ষা কবজের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। কিন্তু সে সম্পূর্ণভাবে ফেরাতে পারেনি। অনেকটাই ফিরেছে, কিন্তু একটু কম আছে, মনে হয় ৩৬.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে এখন স্থির হয়েচে। এই যে আগের স্বাভাবিক তাপমাত্রার সাথে দেহের বর্তমান তাপমাত্রার একটা সূক্ষ পার্থক্য একে জীববিজ্ঞানের ভাষায় বলে এরর সিগন্যাল। কিন্তু ভুল করে সে মোটেও এই সিগন্যাল দিচ্ছে না। আসলে সে আগের তাপমাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি বলেই এই এরর সিগন্যালটা আসছে। কিন্তু এখনও সে চায়, আগের জায়গায় ফিরে যেতে। এটা হোমিওস্ট্যাসিস মেকানিজমের দূর্বলতা নয়, বরং সবলতা! যতক্ষণ আপনার বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রা আগের মত স্বাভাবিক না হয়ে ঘাড় ত্যাড়ামি করে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে গিয়ে বসে থাকছে, সেও ততক্ষণ এই এরর সিগন্যাল দিতেই থাকবে! এই এরর সিগন্যালটাই হল হোমিওস্টাসিস মেকানিজমের পরিচালক সিগন্যাল! যখন বাইরের তাপমাত্রা গুটিগুটি পায়ে আগের জায়গায় ফিরে আসবে, তখন এই এরর সিগন্যালটাও কমে আসবে! আর দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে আবার স্থির হয়ে যাবে। দেহের ভিতরে এরর সিগন্যালের মানে হল, দেহের বাইরে এখনো অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। সুতরাং সাধু সাবধান! ভুলেও তোমার হোমিওস্ট্যাসিস মেকানিজম নামের রক্ষা কবজকে শিথিল হতে দিয়ো না।
শুরুর দিকে বলেছিলাম, হোমিওস্ট্যাসিস আমাদের দেহের কার্যক্রমকে আপেক্ষিক ভাবে স্থির রাখে, তার মানে হল শতভাগ স্থির নয়, তাই প্রতিকূল পরিবেশে দেহের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ফিরিয়ে না গিয়ে নিয়েছে ৩৬.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে! শতভাগ ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হলে সে ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসেই ফিরিয়ে নিয়ে যেত। তখন আর হোমিওস্ট্যাসিসকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমারো আপেক্ষিক শব্দটা ব্যবহার করতে হত না।
এইখানে কিছু মজার ব্যাপার ঘটে, আমার গল্প বলি, আমি খুবই শীত কাতুরে! বাংলাদেশে শীতকাল আসতে না আসতে আমার গায়ে গরম কাপড় উঠে যেতো। মজা করে আমাকে আমার মামা বলত, তুমি গরম চাদর গায়ে জড়ালেই বোঝা যাবে, শীত আসছে! আমি তো ক্ষেপে গিয়ে মামাকে পালটা ক্ষ্যাপাতে শুরু করতাম। আর এইখানে, হিম হিম বাতাসের মধ্য দিয়ে হেঁটে যখন ল্যাবে এসেই যদি প্রফেসরের সাথে দেখা হয়ে যায়, তাহলে নির্ঘাত প্রফেসর আমাকে জিজ্ঞেস করবে, “Is it too cold!” আমিও একটা লাজুক হাসি দিয়ে বলি, ইয়েস প্রফেসর! কিন্তু আমি কেন শীত জেঁকে বসার আগেই গরম কাপড়ে আশ্রয় নিতে শুরু করি জানেন?
আমার অতীত অভিজ্ঞতা বলে, শীতের কবলে পড়লে আমার উপর দিয়ে মেলা ঝড় ঝাপটা যায়, গলা ভেঙ্গে রোবটের মত কন্ঠে কথা বলা থেকে শুরু করে অনেক কিছু। কি দরকার বাবা অহেতুক ঝামেলা টেনে আনার? তার চেয়ে আগে ভাগে নিজের প্রতিরক্ষা নিজে করিনা কেন! এটা তো আমি সচেতন ভাবেই করি। তবে দেহ এমন কিছু করলে অসচেতন ভাবেই করে। প্রতিটা মানুষের দেহের চামড়ার রিসেপটর গুলো যখনি সনাক্ত করে, বাইরের তাপমাত্রা কমছে, তখনি সে তার মস্তিষ্কে খবর পাঠিয়ে দেয় নিষ্ঠাবান দূতের মত, আর মস্তিষ্ক রক্তনালীগুলোকে নির্দেশ দেয় সংকুচিত হয়ে যেতে! এবং এইসব ঘটনা ঘটে যায় দেহের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা বাইরের মত কমে যাওয়ার আগেই। একে বলে ফীড ফরোয়ার্ড। অবাক হবার মত ব্যাপার বটে। তার চেয়েও অবাক হবার মত ব্যাপার হল, দেহের তাপমাত্রা কমে যাবার আগেই রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যাবার ঘটনাটাও ঘটে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকেই। হয়ত আগে কোন একসময় এইভাবে তাপ রক্ষা না করায় দেহখানাকে ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে, তাই এরপর দেহ আর কোন ঝুঁকি না নিয়ে আগেই পদক্ষেপ নিয়ে নেয়। উত্তপ্ত কোন বস্তুতে হাত লেগে গেলে আমরা যেমন সচেতন হবার আগেই হাত সরিয়ে নেই, স্বতঃস্ফূর্তভাবেই, তেমন। এই ব্যাপারটাকে বলে রিফ্লেক্স, যেখানে কোন একটা ঘটনা ঘটার জন্য আমাদের সচেতন হবার প্রয়োজন হয় না। রিফ্লেক্সের সাথে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শেখার ব্যাপারটা জড়িয়ে আছে অতোপ্রোতোভাবে। সেই সাথে হোমিওস্ট্যাসিস মেকানিজমও।
এইখানে মাত্র একটা ব্যাপারে আমি হোমিওস্ট্যাসিস ব্যাখ্যা করলাম। দেহের ভিতরে এই রকম আর অনেক হোমিওস্টাসিস প্রক্রিয়া চলতে থাকে। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, রক্তের পি এইচ নিয়ন্ত্রণ, গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, এমন অনেক রকমের নিয়ন্ত্রণ। অনেক সময়ে একটা ব্যাপার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আরেকটার সেট পয়েন্টে কিছু কম্প্রোমাইজ করতে হয়। দেহের পক্ষে সব কিছু একসাথে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা যম্ভব নয়। তখন দেহ বুঝে নেয়, এই মুহুর্তে কোনটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে বেশী জরুরী। একটাকে নিয়ন্ত্রণ করে আরেকটাতে কিছু কমতি দেয়। কিন্তু এতো কমতি কখনই দিতে চায় না, যাতে দেহ তার স্বাভাবিকতা হারায়। আর এইভাবেই আমাদের দেহের এমন কঠিন নিয়মের কবলে পড়ে অলস প্রজাতির মানুষগুলোর যন্ত্রণা পোহাতে হয়। না মানলে তো দেহ ব্যাটা আপনার বিরুদ্ধেই ১৪৪ ধারা আইন জারি করে দেবে।
মন্তব্য
দারুণ লেখা! এইসব লেখা আমি ভালো পাই। আরো লিখুন।
সবই বুঝলাম,তবে একটা প্রশ্ন আছে। শীতকালে আমাদের শরীরের উচিত এমন ব্যবস্থা নেয়া যাতে শরীর থেকে কম তাপ বের হতে পারে।কিন্তু এই সময়েই আমাদের বারবার বাথরুমে ছুট লাগাতে হয় যার ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ তাপ বের হয়ে যায়! এর কারণটা কী?
_________________
[খোমাখাতা]
ইয়ে মানে, নিটোল, আপনি না বহুত ইয়ে আছেন!
ভাই, শীতকাল বলে তো আপনি খাবার পানি কিছুই কম খাচ্ছেন না, খাচ্ছেন তো ঠিকই, পরিপাকও ভালোই হচ্ছে। আবার ঘামছেন কম... তাইলে?
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
চমৎকার লিখেছেন।
কয়েকটা টাইপো আছে, পারলে ঠিক করে দিয়েন।
হাত খুলে লিখতে থাকুন।
শুভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ আপনাকে, শমশের ভাই।
আমি তো এখনো সচল না, তাই যখন তখন ঠিক করতে পারিনা। ঠিক করতে গেলেই এখন নীড়পাতা থেকে লেখা গায়েব হয়ে যাবে। সময় মত ঠিক করে দেব
আমি লেখার সময় বানান দেখে নিলেও ভুল চোখে পড়ে না, চোখ অথবা মন ফাঁকি দিয়ে রয়ে যায়।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
লেখা ভালো লাগলো। ইয়ে... লেখা এডিট করতে গেলে কি গায়েব হয়ে যায়? এটা কি নতুন নিয়ম ? আমার জানা ছিলনা।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
এডিট বাটন চেপে দিলে হাচলদের লেখা আবার মডারেশন কিউতে চলে যায়। তাই গায়েব হয়...
ধন্যবাদ আপনাকে
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
ধন্যবাদ নীল রোদ্দুর।
আমার চোখে তিনটা বানান ভুল ধরা পড়েছে।
তৃতীয় প্যারার শুরুতে হোমিওস্ট্যাসিস, এর চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি ছবিগুলোর সূত্রে 'et el' লিখেছেন, আসলে তা হবে 'et al.' (এর পরে প্রকাশের সালটাও দিলে ভাল হয়)।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভুলগুলো দেখিয়ে দেবার জন্য।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
facebook
ধন্যবাদ বিশুদ্ধ সুন্দরের পিয়াসী।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
ভাল লাগল, ব্যাপারটা কিছুটা জানতাম, আরও একটু ডিটেইলস জানলাম
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
অসাধারণ......
আমাকে একবার একজন উপদেশ দিয়েছিল যে শীতকালে ice-cream খায়লে শরীরের জন্য ভালো । কারণ শীতকালে বাইরের তাপমাত্রা কম থাকে তাই আমাদের শরীরের বাইরের তাপমাত্রা ভিতরের থেকে কম থাকে, আর শরীরের ভিতরে তাপ উৎপাদন হয় বলে ভিতরে তাপমাত্রা বেশি থাকে। আমরা যখন ঠাণ্ডা কিছু খায় তখন শরীরের বাইরের ও ভিতরের অংশের মধ্যে ভারসমতা বজায় থাকে ।
এটা কতখানি সত্য???
কথাটা সত্যি বলে আমার মনে হয় না। পনি ঠান্ডা খাবার খেলেও তো ঐটা আসলে ঠান্ডা থাকছে না, পাকস্থলী পর্যন্ত যেতে যেতেই তো ঠান্ডার গায়ে গরম লেগে যায়, এই পথটাতে সংকোচন প্রসারণ চলতে থাকে। আর আইসক্রীমের ঠান্ডা কতক্ষনই বা ঠান্ডা থাকে?
সবচেয়ে জরুরী কথা হল, শরীরের অভ্যন্তরে কম তাপমাত্রা আসলে কখনই ভালো না। আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্রমের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ৩৭.৫- ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত। এটা শরীরের টলারেন্স লিমিট। ৩৫ ডিগ্রী এর নিচে দেহের তাপমাত্রা যখনি নামতে শুরু করে তখনই একটা একটা করে মানবদেহের একেকটা ফাংশন কল্যাপ্স করতে শুরু করে! ৩৫ ডিগ্রী এর নীচে দেহের তাপমাত্রা নামলে তাকে বলে হাইপোথার্মিয়া। এবং ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের দিকে পৌছালে আপনার খুব সম্ভবত ব্রেইন ডেথ/ ক্লিনিক্যাল ডেথ হয়ে যাবে। ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের পর থেকেই হাইপোথার্মিয়া সিভিয়ার হয়ে যায়, দেহের ভিতরে তাপ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া, নার্ভাস সিস্টেম আস্তে আস্তে অচেতন হয়ে যাওয়া, দেহের বিভিন্ন অংশের কোঅর্ডিনেশন ব্যাহত হওয়া সবই এইসময় শুরু হয়ে যায়।
আমার প্রথম গবেষণায় জড়িত হওয়া ছিল এই ব্যাপারটা নিয়েই, হাইপোথার্মিয়াকে হ্যান্ডেল করা।
কোন যুক্তিতেই আসলে আপনার শোনা কথাটা টেকে না।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
চমৎকার লেখা।
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
ধন্যবাদ অনুপ্রেরণার জন্য।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
শীত আবার পড়া শুরু হলো আর আপনি একটা হাড় কাপানো ঠান্ডা লেখা দিলেন।
ভালু পাইছি....
ইস, আরেকটু দিলে কি করতেন ভাবতেছি ...
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
ভাল লাগল।
এমন লেখা আরও চলুক।
ধন্যবাদ আপনাকে শাব্দিক!
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
নতুন মন্তব্য করুন