মানুষ এই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত প্রাণী, কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে মানুষ অনেক উন্নত একথা সত্যি হলেও বিস্ময়কর ভাবে আমাদের মস্তিষ্কটিই আমাদের কাছে বিরাট একটি বিস্ময় রয়ে গেছে। আমরা এখনো জানতে পারিনি, ঠিক কি ঘটছে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে। আকাশের তারা দেখে যতটা ভাবনায় ডুব দিয়েছি, তার চেয়েও বিস্ময়কর ব্যাপার কিভাবে আমরা ভাবছি? কিভাবে শিখছি, কিভাবে সৃষ্টি করছি শিল্পের সব বিমূর্ত ধারণা? জানিনা, তবে থেমে নেই আমাদের জানার চেষ্টা। বিগত শতাব্দীর অনেকটা সময় জুড়েই মানুষের ধারনা ছিল, মানুষের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কি ঘটছে, তা জানা প্রায় অসম্ভব। চিকিৎসাবিজ্ঞানে হিউম্যান এনাটমী যেরকম যুগান্তকারী ভুমিকা রেখেছে, ততখানি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিউরোএনাটমি নিউরোসায়েন্সে রাখতে পারেনি। তার প্রধান কারনগুলোর মধ্যে পড়ে, মস্তিষ্ক বা নার্ভাস সিস্টেম মানব দেহের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ, যার ন্যূনতম বিচ্যুতির কারনে মানুষের কার্যক্রমে বড় রকমের প্রভাব পড়তে পারে। তার দরুন বর্তমান সময়ে এসেও আমরা সরাসরি জীবিত মানুষের মস্তিষ্কে কোন ইলেক্ট্রনিক প্রোব বসাতে পারিনা, মস্তিষ্কের কার্যক্রম বুঝতে গিয়ে যাতে মস্তিষ্কের ক্ষতি না হয়ে যায়, সেই দিকে সবসময় লক্ষ্য রাখতে হয়। মানব দেহ যতটুকু অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক প্রবাহ সহ্য করতে পারে, সেই সীমার মধ্যে আমাদের এক্সপেরিমেন্ট গুলো চালাতে হয়। কারণ মস্তিষ্কের একটি কোষও যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তা আর পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। মানবেহের অন্য সব কোষের স্বতঃস্ফূর্ত পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়া থাকলেও নিউরণের নেই। তাই মস্তিষ্কের আঘাত বা কোন রকম ক্ষতিকে এড়ানোর সর্বোচ্চ চিন্তা মাথায় রেখেই কাজ করতে হয় এখানে। এখনও পর্যন্ত অনেক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় সাবজেক্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয় মানুষের নিকট আত্মীয় শিম্পাঞ্জী বা বানরকে। মানুষের মৃত্যুর পর পরই এর জৈব কোষগুলোর পচন প্রকিয়া শুরু হয়ে যায়। তখন মস্তিষ্ক কেটেকুটে দেখেও খুব বেশী লাভ নেই, সমস্ত স্নায়ুতন্ত্র জুড়েই নিউরণ ও তার এক্সনগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, কিন্তু মৃত্যুর সাথে সাথে তাদের নিউরাল অ্যাকটিভিটি বন্ধ হয়ে গেছে। এই সমস্ত সীমাবদ্ধতা এবং সেই সাথে মানুষের অর্জিত জ্ঞানের অভাবের কারনেই একটা সময় পর্যন্ত বিজ্ঞনীদের ধারনা ছিলো, মস্তিষ্ক নামের এই ব্ল্যাক বক্সটার প্রকৃত কার্যপ্রণালী জানা সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষের আগ্রহ কি তাই বলে থেমে থাকতে জানে?
জৈবিক বুদ্ধিমত্তা কি?
মস্তিষ্ক নামের ব্ল্যাকবক্সটা যেমন আমাদের কাছে এখনও অব্দি বিশাল একটি বিস্ময়, তেমনি মানুষ এখন একটি প্রশ্নের কোন বৈজ্ঞানিক উত্তর দিতে পারেনা। প্রশ্নটি হল, বুদ্ধিমত্তা কি? প্রশ্নটি সরল মনে হলেও এরচেয়ে জটিল প্রশ্ন আমার জানা নেই। কোন একটি বিষয়কে বৈজ্ঞানিকভাবে সংগায়িত করতে গেলে সংগাটির অন্তত কতগুলো বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়, ১.পরিমাপ যোগ্যতা (quantifiability) ২.প্রমাণযোগ্যতা বা পর্যবেক্ষনযোগ্যতা(falsifiability), যার ভিত্তিতে সঠিকভাবে পূর্বাভাস দান করা সম্ভব যা বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞার পূর্বশর্ত। খানিকটা দুখঃজনক হলে আসলে জৈবিক বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত এদুটির কোনটিই সম্ভব না যার উপর ভিত্তি করে এর বৈজ্ঞানিক সংগা দেয়া সম্ভব, তাই এখনও আমাদের কাছে বুদ্ধিমত্তার কোন সর্বজন স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক সংগা নেই। তবে বুদ্ধিমত্তার আপাত সংগায়ন সম্ভব, ১৯৯৪ সালে “মেইনস্ট্রিম সায়েন্স অফ ইন্টেলিজেন্স” আকারে ৫২ জন বিজ্ঞানীর সম্পাদনায় বুদ্ধিমত্তার একটি আপাত সংগায়ন করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে,
A very general mental capability that, among other things, involves the ability to reason, plan, solve problems, think abstractly, comprehend complex ideas, learn quickly and learn from experience. It is not merely book learning, a narrow academic skill, or test-taking smarts. Rather, it reflects a broader and deeper capability for comprehending our surroundings—"catching on," "making sense" of things, or "figuring out" what to do.
অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে একটা সাধারণ মানসিক ক্ষমতা যা যুক্তিসংগত কারণ সনাক্তকরণ, পরিকল্পনা, সমাস্যার সমাধান, বিমূর্ত চিন্তা, জটিল ধারণা অনুধাবণ, শেখার দ্রুততা এবং অভিজ্ঞতা থেকে শেখার সাথে সম্পৃক্ত। এটা কেবল বই থেকে শেখা, সংকীর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা অথবা পরীক্ষায় বুদ্ধির স্বাক্ষর রাখা নয় বরং এটি বিশদ এবং গভীরভাবে আমাদের পরিবৃত্তকে অনুধাবন করার যোগ্যতাকে প্রতিফলিত করে।
বুদ্ধিমত্তার এইরকম আপাত সংগা ইঙ্গিত করে, উপোরক্ত সকল যোগ্যতা সম্পন্ন প্রানীরাই বুদ্ধিমান। কিন্তু বাকিরা কি বুদ্ধিহীন? বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের মাপকাঠি বা আদর্শ তাহলে কি? গাছে গাছে ঝুলে বেড়ানো বাঁদর যেভাবে তার চারপাশকে অনুধাবন করছে, তা তো তার জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ঠ, বা এককোষী অ্যামিবা যেভাবে ছদ্মপদ সৃষ্টি করে চলাফেরা করে, যেদিকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি অনুভব করতে পারে, সেদিকটা এড়িয়ে অন্য দিকে চলে, নিজের প্রয়োজনীয় খ্যাদ্যের সন্ধান করে নেয়... তবে অ্যামিবার বুদ্ধিমত্তা কি অ্যামিবার জন্য যথেষ্ট নয়? বুদ্ধিমত্তার পূর্বশর্ত কি তার স্নায়ুকোষ থাকতেই হবে বুদ্ধিমান হবার জন্য? খুব সম্ভবত না।
মানুষ বুদ্ধিমান, একথা স্বীকার করতে আমার কোন আপত্তিই নেই, তবে সত্য হল, মানুষের সমস্ত বুদ্ধিমত্তার মূলে আছে স্নায়ুতন্ত্রে সঙ্ঘটিত বিভিন্ন রকমের জৈবরাসায়নিক ক্রিয়াবিক্রিয়া। অর্থাৎ জৈবিক বুদ্ধিমত্তা হল প্রানীর দেহে সঙ্ঘটিত জৈবরাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়ার ফলাফল। মানব দেহে জৈবরাসায়নিক ক্রিয়া এবং তার ফলাফল বানর, তিমি, প্রজাপতি, স্পঞ্জ বা গাছের জৈবরাসায়নিক ক্রিয়ার চেয়ে ভিন্ন, তাই প্রত্যেক প্রজাতির প্রাণীর বুদ্ধিমত্তার ধরণ আলাদা। কিন্তু একটি প্রজাতির প্রাণীর সাথে তুলনা করে আরেক প্রজাতির প্রাণীতে বুদ্ধিহীন বলার মত কোন ভিত্তি নেই জৈবিক বুদ্ধিমত্তায়। কারণ দিন শেষে দেখা যায়, মানবের স্নায়ুতন্ত্র বলি আর হরিণের, বা স্নায়ুবিহীন অথচ প্রকৃতির বুকে সফল ভাবে টিকে থাকতে সক্ষম ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উদ্ভিদ বা প্রাণীই বলিনা কে, প্রত্যেক প্রজাতির জীবন এবং জীবন যাপন রহস্য নিহিত আছে তার ডিএনএ তেই। আমরা মানুষ বলেই মানব মস্তিষ্ক নিয়ে আমাদের আগ্রহ বেশী। আমরা বুদ্ধিমত্তার সংগা দিতে চাই মানব বুদ্ধিমত্তার আলোকে, আমাদের মনে থাকেনা, চিতাবাঘের মুখোমুখি পড়লে মানবীয় বুদ্ধিমত্তা দিয়ে চিতাবাঘের সামনে থাকে জান নিয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা কম, খুব কম। চিতাবাঘের যে ক্ষিপ্রতা, হিংস্রতা, তা তার স্নায়ুতন্ত্র, আরো সঠিক করে বললে তার জেনেটিক সিকোয়েন্সেরই ফলাফল।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) কি?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) জনক ব্রিটিশ গনিতবিদ অ্যালান টিউরিংও বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা কি তা নিরুপণ করতে পারবেন বলে মনে করেননি, বা এ নিয়ে কারোর সাথে বিতর্কেও যেতে চাননি। বুদ্ধিমত্তা কাকে বলে, তা একটি বহুল বিতর্কিত বিষয়, সেটা টিউরিং সময়কালে তো বটেই, এমনকি বর্তমানেও বুদ্ধিমত্তাকে বৈজ্ঞানিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু টিউরিং এর ধারণা ছিল, মানুষের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে ঠিক কি ঘটছে, তা মানুষ না জানলেও যন্ত্রের মাধ্যমে বুদ্ধিদীপ্ত কাজ করানো সম্ভব। তার এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই ১৯৫০ সালের দিকে গড়ে উঠেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শাখাটি।
তিনি বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা নিরূপনের ঝামেলায় না গিয়ে তিনি যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্ব প্রমাণে সচেষ্ট হয়েছিলেন বিখ্যাত টিউরিং টেস্টের মাধ্যমে। এটি এমন একটি পরীক্ষা যাতে যন্ত্রঘটিত কাজ মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেয়, কাজটি যন্ত্র করেছে নাকি মানুষ করেছে? এক্ষেত্রে একজন মানুষকে নিয়োজিত করা হয় কাজটির বিচারক হিসেবে, তাকে বলতে হবে, কাজটি কে করেছে। মানুষের বিবেচনায় যদি মনে হয় কাজটি যন্ত্র দ্বারা সম্পাদিত হয়েছে, তার অর্থ হল, যন্ত্রটির মানুষের অনুরূপ কাজ করার ক্ষমতা নেই, আর যন্ত্রের কাজ যদি মানুষকে এই অনুভূতি দেয়, যে কাজটি মানব দ্বারা সঙ্ঘটিত হলেও হতে পারে, সেক্ষেত্রে যন্ত্রটিকে মানুষের অনুরূপ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে। বর্তমান কালে যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ELIZA প্রোগ্রামটির সাথে পরিচিত, যাতে কোন প্রশ্ন করলে, প্রোগ্রামটি আমাদের দৈনন্দিন কথোপকথনের মত পালটা প্রশ্ন করে বসে। স্বাভাবিকভাবেই বিস্মিত হতে হয়, কিভাবে একটি প্রোগ্রাম এমন প্রশ্ন করছে? এইভাবেই টিউরিং টেষ্ট এবং টিউরিং মেশিনের মাধ্যমে প্রচলিত হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই শাখাটি, যা প্রথম দিকে কম্পিউটিং সায়েন্সের জগতে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। পরবর্তীতে কিছুটা সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই জগতে কাজ করা গবেষকেরা আশাজনক সাফল্য প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হন, বিধায় এই শাখাটি আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে যেতে থাকে, তবে এর পরবর্তী কালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করার প্রবণতা গবেষকদের মধ্যে আবারো বেড়েছে। বর্তমানে এর গবেষকেরা যা মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব যদি আরো বহুগুন দ্রুত কম্পিউটার আবিষ্কার করা যায়। অর্থাৎ তারা যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা অর্জন করতে চান গাণিতিক দ্রুততার মাধ্যমে।
অ্যালান টিউরিং এর যুগান্তকারী ধারনাগুলোর একটি ইউনিভার্সাল কম্পিউটিং, যার মাধ্যমে টিউরিং গাণিতিক ভাবে প্রমান করেন, একটা গণনাকারী যন্ত্র গঠনগত দিক থেকে যেমনই হোক না, এর কিছু গানিতিক কাজ করার ক্ষমতা আছে, ০ এবং ১ এর সমন্বয়ে যদি গণনাকারী যন্ত্রকে ঠিক মত কিছু কাজ করার নিয়মাবলী সরবারহ করা সম্ভব হয়, এবং কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা সরবারহ করা সম্ভব হয়, তবে এটি অনেক জটিল জটিল গানিতিক কাজ করে ফেলতে পারে। অর্থাৎ সমস্ত ডিজিটাল কম্পিউটার যুক্তিগতভাবে একই, এর আর্কিটেকচার যেমনই হোক না কেন। বর্তমানে এই কল্পিত গণনাকারী যন্ত্রকে বলা হয় ইউনিভার্সাল টিউরিং মেশিন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত ধারণার কেন্দ্রীয় বক্তব্য ছিল, মস্তিষ্ক স্রেফ আরেক ধরণের কম্পিউটার, কিভাবে একটি যন্ত্রকে বুদ্ধিমান করে তোলা হল, সেটা ব্যাপার না, ব্যাপার হল, মানবের অনুরূপ আচরণ প্রদর্শন করা। মস্তিষ্ক মস্তিষ্কের মত করে কাজ করবে, যন্ত্র যন্ত্রের মত করে কাজ করবে, বুদ্ধিমত্তা নিরুপিত হবে, কার্যপ্রণালী দিয়ে নয়, কার্যপ্রণালীর ফলাফল দিয়ে। কিভাবে মস্তিষ্ক কাজ করে, তা নিয়ে চিন্তিত না হয়ে নিয়োজিত হয়েছেন মস্তিষ্কের অনুরূপ কার্য প্রদর্শনে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকেরা মূলত আগ্রহী মানব সদৃশ আচরণ অর্জন করতে। এইখানেই একটা বিশাল পার্থক্য দাঁড়িয়ে গেছে যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তার সাথে জৈবিক বুদ্ধিমত্তার।
এইখানে বলে রাখি, মানব মস্তিষ্ক কিন্তু মোটেও দ্রুতগতিতে কজ করতে পারে বলে এতোটা বুদ্ধিমান নয়। এটি যেকোন চিন্তা, পদক্ষেপ, পরিকল্পনা ইত্যাদি দ্রুওতার সাথে করার জন্য মস্তিষ্ক অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করে। একটা বাড়ি থেকে হাসপাতালে যাবার বেশ কয়েকটা পথ থাকতে পারে, তার মধ্যে একটা সংক্ষিপ্ততর পথ আছে, যে পথ দিয়ে গেলে সময় কম লাগে। মস্তিষ্কের এমন সংক্ষিপ্ততম বা সংক্ষিপ্ততর নিউরাল সংযোগের মাধ্যমে কাজ করার পদ্ধতি জানা আছে।
মস্তিষ্কের বরং দ্রুততার একটা সীমা আছে। বিবর্তন প্রক্রিয়ায় যদি স্বাভাবিক ভাবে কোনদিন নিউরণ বর্তমানের চেয়ে চিকন অ্যাক্সন তৈরী করে, তখন নিউরণের তথ্যপ্রবাহের গতিবৃদ্ধির সাথে মানুষের কাজ করার গতিও হয়ত এখনকার চেয়ে বাড়বে, কিন্তু তা কখন হবে কিনা তাতে সন্দেহ আছে, কারণ প্রাণীর বিবর্তন তো কেবল দ্রুততাকে বাড়াবার জন্য হবে না, যদি সামগ্রিক ভাবে সরু নিউরণ প্রাণীকে মানসিক কাজ, ভারসাম্য, দ্রুততা ইত্যাদি ব্যাপার মিলিয়ে অধিক সুবিধা দিতে পারে তাহলে হয়ত কখনও সেরূপ বিবর্তন হলেও হতে পারে। সেটা কেবলি সুদূর ভবিষ্যতের একটা অনিশ্চিত প্রাকৃতিক ব্যাপার, আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এখান থেকে একটা ব্যাপারই পরিষ্কার হয়, মানব নিউরণের তথ্য প্রবাহের গতির একটা উর্ধ্বসীমা আছে। মানুষের বুদ্ধিমত্তার জন্য যদি নিউরণের দ্রুততা প্রধান কারণ না হয়ে থাকে, মানবের অনুরূপ বুদ্ধিমত্তার জন্য কেবল দ্রুততা বাড়িয়ে আদৌ কি লাভ হবে? তাই জৈবিক বুদ্ধিমত্তার আলোকে অনুমাণ করা যেতে পারে, অ্যালান টিউরিং এর চিন্তাপ্রসূত বা পরবর্তীতে তার পদাংক অনুসরণ করা গবেষকদের মাঝে গড়ে ওঠা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আচরণকেন্দ্রিক কেন্দ্রীয় ধারণাটি সম্ভবত ভুল ছিল। সত্যি সত্যিই মানবের বুদ্ধিবৃত্তিক আচরণের অনুরূপ আচরণ অর্জন করতে হলে কিভাবে মানব মস্তিষ্ক কাজ করে তা বিবেচনায় নেয়া জরুরী। বর্তমান সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যারা গবেষণা করে বা করবে, তারা এই মানব মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালীকে এই গুরুত্বটা দেবে বলে আশা রাখি, অনেকে হয়তো ইতিমধ্যে দিচ্ছেও।
অ্যালান টিউরিং এর সময়কালে মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণায় এতোটা অগ্রগতি ছিল না, সেই সময়ে মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী জানার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকলে আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তি এতোদূর আসতে পারা যেতো কিনা সন্দেহ আছে, কিন্তু এখন সময়টা বদলে গেছে, বিগত ৬০ বছরে আমাদের মস্তিষ্ককে জানার চেষ্টায় আমরাও অনেক এগিয়ে গিয়েছি। মানব মস্তিষ্ক নিয়ে বর্তমানে যত গবেষণা চলে, তা সন্দেহাতীত ভাবে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী। এখনকার সময়ের নিউরোসায়েন্টিস্টরা মনে করেন না মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী জানা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। একদিকে যেমন প্রতিদিন মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রিকাল অ্যাকটিভিটি কিভাবে আগের চেয়েও নিরাপদ ভাবে রেকর্ড করা সম্ভব, তা নিয়ে গবেষণা চলছে, ফাংকশনাল ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং টেকনোলজীর উন্নতি ঘটছে, মস্তিষ্ক নিয়ে নানাভাবে পরীক্ষানিরিক্ষা চলছে, আরেকদিকে থিওরিটিক্যাল নিউরোসায়েন্টিস্টের দল সচেষ্ট হয়েছে, পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম, নিউরনের থিওরিটিক্যাল মডেল, প্রাকটিক্যাল মডেল তৈরী করে চলেছে, যাতে ইচ্ছেমত পরীক্ষা নিরিক্ষা চালানোতে নেই কোন বাঁধা, এ গবেষণা যে জোরেশোরেই চলছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারি। হয়ত অদূর ভবিষ্যতেই আমরা এক এক করে মস্তিষ্কের সব কাজের প্রক্রিয়া আবিষ্কার করে ফেলব।
আর্টিফিসিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্কঃ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা যখন একটা সময় কাঙ্খিত সাফল্য প্রদর্শন করতে ব্যার্থ হচ্ছিল তখন ১৯৮০ সালের দিকে নতুন এক পথে বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা বেশ জমে উঠতে শুরু করে, যা মস্তিষ্কের বাস্তবতা তথা মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী উপেক্ষা না করে তাকে অনুকরণ করেই যাত্রা শুরু করে। এই নতুন পথটির নাম নিউরাল নেটওয়ার্ক। নিউরাল নেটওয়ার্কের পদক্ষেপটি ছিল অনেকটা এমন, কয়েকটি আর্টিফিশিয়াল নিউরণকে বা প্রসেসিং ইউনিটকে পরষ্পরের সাথে সংযুক্ত করে কি ঘটে তা দেখা যাক। এইখানে সাধারণত এক সেট নিউরণ থাকে যার মাধ্যমে ইনপুট দেয়া হয়, এই ইনপুট গ্রহনকারী নিউরনের স্তরটি সংযুক্ত থাকে গোপন আরেক সেট নিউরনের স্তরের সাথে, আর সবশেষে থাকে আউটপুট লেয়ার যেটি যুক্ত থাকে পূর্বোক্ত গোপন স্তরটির সাথে। এটি একটি সাধারণ নিউরাল নেটওয়ার্কের ধারণা, যেখানে ইনপুট লেয়ারে প্রশিক্ষন মূলক তথ্য এবং পরীক্ষার জন্য তথ্য উভয়ই দেয়া সম্ভব। এইখানে বারবার নিউরন নিউরণ বলাতে এটা ভাবার কোন প্রয়োজন নেই, যে সত্যি এইখানে হাইড্রোকার্বন বা সিলিকন বা এইরকম বিভিন্ন পদার্থ দিয়ে নিউরণ বানানো হয়েছে কৃত্রিম ভাবে। বরং একেকটি নিউরণকে প্রকাশ করা হয় গাণিতিক ফাংশন রুপে। এই গাণিতিক ফাংশনগুলোকেই বিভিন্ন প্যাটার্ণের প্রশিক্ষন মূলক তথ্য দিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে পরিচিত করে নিতে হয় প্যাটার্নের সাথে। নিউরাল নেটওয়ার্ক তাতে সরবারহকৃত প্রশিক্ষন মূলক তথ্য থেকে প্যাটার্ণ চিনতে শিখে নেয়, শিখে নেয় কোন ধরনের প্যাটার্ন পেলে কোন ধরণের আউটপুট দিতে হবে বা ফায়ার করতে হবে, আর কোন ধরণের প্যাটার্ণ পেলে চুপ করে থাকতে হবে। অর্থাৎ এর শেখাটা কেবল ট্রেইনিং পর্যায়েই সীমাবদ্ধ, এরপর যত তথ্যই দেয়া হোক না কেন, পরিবর্তিত তথ্য সে নিজের মধ্যে সংরক্ষন করেনা। অর্থাৎ নিউরাল নেটওয়ার্কের কার্যক্রম অনেকটা স্থির প্রকৃতির, পরিবর্তনশীল নয়। সে নির্দিষ্ট কয়েকটা প্যাটার্ন শিখে রেখেছে, সেইগুলোই সে চিনতে পারে, বাকিগুলোকে সে কখনই চেনে না।
কিন্তু গবেষকদের মধ্যে ছোট্ট একদল ছিল, যারা অন্য একটা পথ বের করেছিল যন্ত্রকে বুদ্ধিমান করে তোলার জন্য। সেখানে যেটা করা হত, যতবার একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক যে ধরণের প্যাটার্ণের জন্য আউটপুট দিতো, ততবার যন্ত্রটি আউটপুটের রেকর্ডটি রেখে দিত। একে বলা হয় অটো এসোসিয়েটিভ মেমরী। ফলে যে ধরনের প্যাটার্ণ বেশী পেত, সেই ধরণের প্যাটার্ণ চিনতে পারার ক্ষমতাও তাদের বেড়ে যেতো। একটা সময় দেখা গেল, কোন একটি পরিচিত প্যাটার্ণ পুরোপুরি আসার আগেই বা পুরোপুরি না আসলেও যন্ত্রটি আউটপুট দিয়ে দিচ্ছে। কারণ ঐধরণের ইনপুট থেকে আউটপুট পর্যন্ত যাবার পথটি এতটাই শক্তিশালী হয়ে গেছে যে, প্যাটার্ণটি পুরোপুরি আসার আগেই সে সনাক্ত করতে পারছে এবং এই প্যাটার্ণটির ইনপুট থেকে আউটপুটে যাবার পথের কাছে অপেক্ষাকৃত কমবার আসা প্যাটার্ণগুলো থেকে আউটপুটে যাবার পথটি দূর্বল হয়ে গেছে। অর্থাৎ স্বয়ংকৃতভাবে ভাবে নিজের ভিতরে ইতিহাস লিপিবদ্ধ রাখার যোগ্যতা সম্পন্ন যন্ত্রটির দক্ষতা সাধারন মডেলের চেয়ে বেশী।
২০০১ সালে প্রকাশিত ইয়েল ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অফ সাইক্রিয়াট্রির প্রফেসর রালফ হফম্যান এবং থমাস ম্যাকগ্লাশান রচিত বইয়ে তারা উল্লেখ করেন, তাদের গবেষক দল ভাষা সনাক্তকরণের জন্য তৈরী করা নিউরাল নেটওয়ার্ক মডেলের মাধ্যমে ভয়েস হ্যালুসিনেশন ঘটনা ঘটিয়েছেন, যা স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগীদের ডিলুশ্যনের ব্যাখ্যা দিতে পারে। এই নিউরাল নেটওয়ার্কটিতে আসলে যা ঘটেছে, তা হল, মডেলটিকে প্রথমে ভাষা সনাক্তকরনের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে যখন মডেলটি অধিকমাত্রায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়েছে, তখন মডেলটির কিছু আর্টিফিসিয়াল নিউরনের পথ অতি শক্তিশালী হয়ে গেছে, যার ফলস্রুতিতে বাইরে থেকে কোন প্রকার ইনপুট না দেয়া স্বত্তেও মডেলটি নিজ থেকেই আউটপুট দিচ্ছিল। এই নিউরাল নেটওয়ার্কের মডেলটি একাধারে ভয়েস হ্যালুসিনেশন, ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্ন দেখা, অন্যদের কন্ঠ শোনা ইত্যাদির আপাত ব্যাখ্যা দেয়, যদিও এইসম্পর্কে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হবার জন্যে আরো অনেক পরীক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে এখনও।
এই পর্যন্ত পড়লে মনে হতে পারে, নিউরাল নেটওয়ার্ক বা অটো এসোসিয়েটিভ মেমরী মডেল সফলভাবে বুদ্ধিমত্তার সৃষ্টির উদাহরন গড়তে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু আসলে তা নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কেন্দ্রীয় ধারণায় যে ভুলটি ছিল, সেই একই ভুল অর্থাৎ কার্যপ্রণালী বা এলগরিদম ভিত্তিক গবেষণার মনোযোগী হবার পরিবর্তে, কৃত্রিম আচরণে দক্ষতা অর্জনের নেশা নিউরাল নেটওয়ার্কের কার্যধারাকেও আক্রান্ত করেছে। নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে এখনো গবেষকেরা ব্যাপকভাবেই আগ্রহী, কিন্তু নিউরোসায়েন্টিস্টরা কিছুটা নিরাশ। তার একটি কারণ, নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম প্রতি বছর বিভিন্ন সংস্থা থেকে যে পরিমাণ অর্থায়ন পাচ্ছে, তা ইন্টেলিজেন্ট মেশিন বানাবার পরিবর্তে অনেকাংশেই বহু দিকে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে, একদল হয়ত শেয়ার বাজারের হালচাল বুঝতে চেষ্টা করছে, কারখানার উৎপাদনশীলতার বা বাজার দরের হালচাল বোঝার কাজে ব্যবহার করছে। অর্থলগ্নিকারীরা নিউরাল নেটওয়ার্কের অ্যাপ্লিকেশনের দিকেই বেশী ঝুকছে। অগত্যা গবেষকরাও চালাচ্ছেন সেসব গবেষণাই। আমি বলছিনা, এসবের দরকার নেই, অবশ্যই দরকার আছে, কিন্তু বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টিতে বা নিউরোসায়েন্সের দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের চাহিদা ভিন্ন। বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণার লক্ষ্যটা কেবল শেয়ারবাজারের হালচাল বোঝা নয়, বরং বেশ বিস্তৃত, মানবদেহের অনুরূপ জৈবিক বুদ্ধিমত্তাকে জৈবরসায়নের মোড়ক থেকে বের করে সিলিকন চিপের মোড়কে ঢুকিয়ে দেয়া, অর্থাৎ, মানববুদ্ধিমত্তার আপাত ধারনাটি যতগুলো বৈশিষ্ট্যর সমন্বয় নির্দেশ করে, তার সবকটাকে এক এক করে কৃত্রিম্ভাবে উদ্ভাবন করা। তাহলেই কেবল মাত্র অ্যালান টিউরিং এর সেই সুদূরপ্রসারী ভাবনা, যন্ত্রের দ্বারা বুদ্ধিদীপ্ত আচরণ করানো সম্ভব, তা বাস্তব রূপ নেবে।
এতোকাল অব্দি চর্চিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমস্যাগুলোঃ
প্রথমত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকদের বুঝে উঠতে হবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লক্ষ্য মানবের অনুরূপ আচরণ অর্জন করা, নাকি মানবের অনুরূপ বুদ্ধিদীপ্ত হয়ে ওঠা। এই দুটো ব্যাপারের মাঝে পার্থক্য অনেক। মানুষ হাটতে পারে, হাত, আঙ্গুল নাড়াতে পারে, বই পড়তে পারে, লিখতে পারে, কথা বলতে পারে, কথা শুনতে পারে। খেয়াল করে দেখুন, এইসব কটি ব্যাপার কিন্তু খানিকটা যান্ত্রিক আচরণ। এইবং এই যান্ত্রিক আচরণগুলো অর্জন করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে সফল হয়েছে, এটাও আমরা জানি, হয়ত যন্ত্রগুলো এখনো মানুষের মত দৌড়াতে পারে না, কিন্তু হাটতে তো পারে রোবট। কিন্তু মানুষের বুদ্ধিদীপ্ততা এইসব যান্ত্রিক ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ নয়। আমি সারাদিন ল্যাবের ডেস্কটায় বসে পড়ালেখা করি, আমার কাজ করি, করতে গিয়ে কখনো কিবোর্ডে খট খট শব্দ হয়, কখনো মাউসের ক্লিক। কিন্তু আঙ্গুল চালনা তো আমার বুদ্ধিমত্তার একমাত্র ব্যাপার নয়, বরং বলতে গেলে সামান্য একটি অংশ ছাড়া কিছুই নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রাথামিক চাওয়া ছিল, এটি একটি যন্ত্রকে আমার মত করে আঙ্গুল চালাবার ক্ষমতা দিতে চায়। কিন্তু আমি কেন আঙ্গুল চালাচ্ছি তা বুঝতে শেখাচ্ছে না এখনো। দিনের পর দিন যখন আমি পড়তে থাকি, এক একটি বিষয়ের রহস্যের অনুসন্ধানে অজস্র তথ্য খুজে বেড়াই, তখন যা আমাকে আমার কাজের পিছনে চালিত করে, তা আমার চিন্তা, আমার পরিকল্পনা, আমার অনুধাবন, আমার অনুসন্ধিৎসু মন। এই ব্যাপারটা পুরোপুরি পরাবাস্তব, যা বুঝতে প্রয়োজন একটি সৃজনশীল, চিন্তাশীল মনন। এই লেখাটি লেখার আগে আমি যতটা ভেবেছি, আমার চিন্তা, জ্ঞান সঠিক কিনা যাচাই করে দেখার জন্য যতটা তথ্য অনুসন্ধান করেছি, সেসবই ছিল আমার কীবোর্ডে খটখট করে আঙ্গুল চালিয়ে লেখাটি লিখে ফেলবার মূল চালিকা শক্তি, কেবল চোখ দিয়ে পড়ে ফেলা আর আঙ্গুল দিয়ে লিখে ফেলা নয়। মানবের অনুরূপ বুদ্ধিমত্তা অর্জন করতে হলে, যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তার গবেষণা এগুতে হবে, চিন্তাশীলতার প্রক্রিয়া, অনুধাবনের প্রক্রিয়া, স্থির লক্ষ্যে অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া, বহু জানা তথ্য সেচে নতুন সিদ্ধান্তে উপনীত হবার প্রক্রিয়া কৃত্রিমভাবে উদ্ভাবনের পথে, যে পথে পা বাড়ায়নি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লক্ষ্য যদি গানিতিক সমস্যার সামাধান আর যান্ত্রিক দ্রুততা, দক্ষতা অর্জন করাও হয়, তবুও শেষ অব্দি অনেক সূক্ষতা স্বত্বেও যান্ত্রিকতা পাড়ি দিতে পারেনি জৈবিক দক্ষতাকে এখনও। পারেনি বাতাসে ছুড়ে দেয়া একটি ক্রিকেট বল মানুষের মত করে হাতের মুঠোয় নিতে।
কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটারে গাণিতিক নির্দেশাবলী সরবরাহ করা হচ্ছে, কিভাবে কম্পিউটার একটি সমস্যার সমাধান করবে, আর কম্পিউটারও ওই নিয়মাবলীর বৃত্তেই ঘুরপাক খেতে থাকে। সমস্ত গাণিতিক নিয়ম শিখিয়ে পড়িয়ে দেয়া কম্পিউটার আর একজন গনিতবিদের মাঝে প্রকৃত পার্থক্য থেকে যায়, গনিতবিদ একসময় সাধারণ সমাধানের বাইরে এসে নিজের অনুধাবনের কারণে দীর্ঘদিনের অসমাধানে পড়ে থাকা সমস্যার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ একসময় বলে ওঠে, “ইউরেকা!” সমাধানটি হয়ত নিতান্ত সহজ, কিন্তু এই নিতান্ত সহজ সমাধানটি বের করার জন্য যে সৃজনশীলতা প্রয়োজন হয়, তা কম্পিউটারের নেই। এখন প্রশ্ন হল, খুব আশাবাদী হয়ে কি আমরা বলতে পারিনা, পারবে, পারবে... একদিন কম্পিউটার বা যন্ত্রও পারবে। আসলেই পারবে কিনা কখনো তা আমাদের জানা নেই হয়তো কারোর, কিন্তু আমার বেয়াড়া মন আমার ভিতর থেকে কিভাবে যেনো জানান দেয়, সম্ভব নয়, ঐ ইউরেকা মুহুর্তের সাথে জড়িয়ে আছে, গণিতের প্রতি ভালোবাসা, চেষ্টা, আগ্রহ! যন্ত্র গাণিতিক সমস্যার সমাধান দিতে জানলেও গণিতকে ভালোবাসতে জানে না, এইসব বিমূর্ত ব্যাপারস্যাপার নেই তার হার্ডডিস্কে! এম. আই. টির পরীক্ষাগারে কগ নামের যে রোবট তৈরী হয়েছে, সে মানুষের আবেগের সাথে সাড়া দিতে পারে। কিন্তু তার পক্ষে এটা বোঝা সম্ভব নয়, কেন একটি চলচিত্র দেখতে দেখতে মানুষ কেঁদে ফেলে!
কিসের অভাব তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়?
যদি ডিপ ব্লু নামের সুপার কম্পিউটার কতৃক গ্যারী ক্যাসপারভরের মত সেরা সেরা দাবাড়ুরা হেরে যায়, তবে কেন আমরা ডিপ ব্লু কে বুদ্ধিমান বলতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছি? হফম্যানের দলের নিউরাল নেটওয়ার্ক মডেল কিনা হ্যালুসিনেশন ব্যাখ্যা করে ফেলল, তবু কিনা আমরা বলছি, বুদ্ধিমত্তার সঠিক ধারণাই এই কৃত্রিম শাখাগুলো বুঝতে পারেনি। কিসের অভাব তাতে? অভাব আসলে দুটি।
১. একটি বা কয়েকটি এলগরিদমের, যে এলগরিদমের সাহায্যে মানব মস্তিষ্ক কাজ করে।
২. কানেকশন প্লাস্টিসিটি।
এইদুটো বৈশিষ্ট্যের কারণের জৈবিক বুদ্ধিমত্তার সাথে এখনো পর্যন্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিদ্বন্দীতা চলে না বা সুদূর ভবিষ্যতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানব বুদ্ধিমত্তার সমকক্ষ হয়ে উঠবে কিনা সন্দেহ আছে। জৈবিক বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে মানব মস্তিষ্ক কোন এলগরিদম অনুসরণ করে কাজ করছে, তা আমরা এখনও সঠিক ভাবে জানিনা, বড়জোড় কয়েকটি অনুমাণ নির্ভর অনুকল্প আছে, যার একটি হল জেফ হকিন্সের মেমরী-প্রেডিকশন ফ্রেমওয়ার্ক। কিন্তু বিজ্ঞানের জগতে অনুকল্পের গ্রহনযোগ্যতা প্রমাণসাপেক্ষ। এই মুহুর্তে যা বলতে পারি, এই একটি বা কয়েকটি এলগরিদমের পিছনেই নিউরোসায়েন্টিস্টরা মাথা ঠুকে মরছে। এইসব নিউরোসায়েন্টিস্টদের মত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকেরা মানব সদৃশ আচরণ অর্জনের জন্য এলগরিদমের ব্যাপারে অধিক মনোযোগী হলে বিজ্ঞানের জগতে হয় একটি সত্যিকারের বিপ্লব ঘটে যেতে পারতো। এমনও হতে পারতো, যেখানে নিউরোসায়েন্টিস্টরা মানবদেহে পরীক্ষণ চালাবার নৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারছেন না, সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণায় উদ্ভাবিত এলগরিদম হয়ত নিউরোসায়েন্টিস্টদের মস্তিষ্ক সম্পর্কে আরো পরিষ্কার এবং গভীর ধারণা দিতে পারতো।দিন শেষে তো উভয় শাখা কাজ করে বুদ্ধিমত্তা নিয়েই।
এইবার চলুন কানেনশন প্লাস্টিসিটি সম্পর্কে সামান্য জানার চেষ্টা করি। একটি মানব শিশুর যখন স্নায়ুতন্ত্র তৈরী হয়ে, প্রাথামিক অবস্থায়, তাতে প্রচুর সংখ্যক নিউরন বা স্নায়ুকোষ আর গ্লিয়াল সেল ছাড়া কিছু নেই, নেই কোন বুদ্ধিমত্তা। এরপর বহিঃজগত থেকে একটি একটি করে স্টিমুলেশন, যেমন ধরুন, শব্দ, গন্ধ, আলো ইত্যাদি যেতে শুরু করে, আর তার মস্তিষ্কের মধ্যে এই বাইরের স্টিমুলেশন ইলেক্ট্রিক সিগন্যালে রুপান্তরিত হয়ে মস্তিষ্কের মাঝে একটি নিউরণ থেকে আরেকটি নিউরণে চলতে শুরু করে। একটি ইলেক্ট্রিক সিগন্যাল যে কটি নিউরণের মধ্যদিয়ে চলাচল করে, সেই পথটিকে ধরা যায় ঐ সিগন্যালের জন্য নিউরাল পাথ। মস্তিষ্কে নতুন নতুন নিউরাল পাথওয়ে তৈরী হওয়া যেমন স্বাভাবিক ঘটনা, দীর্ঘদিন অব্যবহারে পুরনো পাথওয়ে দূর্বল হয়ে যাওয়া তেমনি স্বভাবিক ঘটনা, অর্থাৎ পাথওয়ে গুলো বৈদ্যুতিক তারের মত স্থির নয়। ধরা যাক, হঠাত আমি অন্ধ হয়ে গেলাম, তাহলে আমার দৃষ্টি শক্তির জন্য যে অঞ্চল নিয়োজিত ছিল তাও বেকার হয়ে যাবে। কিন্তু সে এভাবে বেকার থাকবে না, আস্তে আস্তে অন্যান্য নিউরাল প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে যতখানি কার্যক্ষম থাকা যায় তাই থাকার চেষ্টা করবে। এই নতুন কাজটা তাকে আগের মত লাল গোলাপ বা নীল আকাশ দেখতে দিচ্ছে না সত্যি, কিন্তু হয়তো, পাখির ডাক শুনে অনুভব করতে দিচ্ছে, এটা পাখি, এটা কোকিল, এখন বসন্ত। একটি নার্ভের হয়তো চোখের ফটো রিসেপ্টরের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, কিন্তু সেই নার্ভটি বসে না থেকে নতুন একটি নার্ভের সাথে সংযোগ তৈরী করে ফেলেছে। এতো কথায় যা বোঝাতে চাচ্ছি তা হল, নিউরাল প্লাস্টিসিটি বা কানেকশন প্লাস্টিসিটি, যা বোঝায় নার্ভ সংযোগগুলোর পরিবর্তনশীলতা। এতো স্বতস্ফূর্ত পরিবর্তনশীলতা জৈবিক দেহের বাইরে অর্জন করা সম্ভব কিনা, আমি সন্দিহান।
মানব মস্তিষ্ক ভুল করে, অনেক অনেক ভুল করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভুল করে না। একটি কাজ করার জন্য যদি তার একহাজার শর্ত পরীক্ষা করে দেখা দরকার হয় তবে, তাই করবে সফটওয়্যার, অতঃপর সঠিকতম সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু মানব মস্তিষ্ক মোটেও এত সঠিকের ধার ধারবে না, তাৎক্ষনিক ভাবে যে কটি সম্ভাব্য পথ এবং শর্তের কথা মনে পড়বে, সেই অল্পকটার মধ্যে যেটা সঠিক মনে হবে তাই করে ফেলবে, এবং কার্য সমাধা করে ফেলবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সব সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত পরীক্ষা করে শেষ করার আগেই। এই কারনের জৈবিক বুদ্ধিমত্তা সহস্র বিপদসংকুল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে স্বঃতস্ফুর্তভাবে টিকে থাকছে, থাকতে পেরেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে যদি প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হত, তাহলে, অনেক আগেই এটি হারিয়ে যেতো পৃথিবীর ইতিহাস থেকে, তা হয়নি, কারণ মানুষ এর উদ্ভাবনই করেছে তাদের কাজে সাহায্য করার জন্য। তবে কল্পবিজ্ঞানের লেখকেরা বা চলৎচিত্র নির্মাণকারীরা কি এক অদ্ভুত কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানব সভ্যতার জন্য হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করতেই বেশী ভালোবাসে। অথচত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তার জন্মকাল থেকেই মানবের কাজের সাহায্যকারী, এর কাজ মানুষের যান্ত্রিক আচরণের দক্ষতার অনুরূপ যান্ত্রিক দক্ষতা অর্জন করে, গানিতিক দ্রুততায় মানুষের কাজ সহজ করে দেয়া, মানুষের জৈবিক বুদ্ধিমত্তার প্রতিদ্বন্দী হয়ে ওঠা নয়। কল্পবিজ্ঞান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যতই আতংক সৃষ্টি করুক, একদিন মানব সৃষ্ট কৃত্রিম দানবের পদতলে চলে যাবে মানব সভ্যতা, বাস্তবে তা ঘটবে না কোনদিন। সেই সাথে যারা একদিন ভাবতো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চটজলদি অর্জন করে ফেলবে মানবের অনুরূপ বুদ্ধিমত্তা, বা আজো যারা বলে মানুষের মস্তিষ্ক আরেক ধরণের কম্পিউটার, সেসব ধারণা স্বপ্নবিলাসী মানুষের অযৌক্তিক স্বপ্নের অতিরঞ্জন বৈ আর কিছু নয়।
------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্রঃ
১/ Jeff Hawkins and Sandra Blakeslee, On Intelligence, Times Books (2004).
২/ Haring, K. Intelligence Considered. Brain (1998).
৩/ Davide Castelvecchi, Faster, Smaller, Better: Does Physics Put an Upper Limit on Brain Efficiency? (2011)
৪/ Hoffman, R.E. & Mcglashan, T.H. Neural Network Models of Schizophrenia. The Neuroscientist 7, 7-8 (2008).
মন্তব্য
আপনি কি এই নিয়ে গবেষণা করেন? এআই খুব ইন্টারেস্টিং বিষয়। এআই বা নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে একসময় একটু কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে এ বিষয়ক খবরটবর মোটামুটি ফলো করার চেষ্টা করি উৎসাহের সাথেই। স্টিভেন পিঙ্কার, স্যাম হ্যারিস বা ড্যানিয়েল ডেনেটের নিউরোসাইন্সের কাজকর্মও ইন্টারেস্টিং লাগে, প্রায় কিছুই বুঝিনা অবশ্য।
আমার গবেষণার ক্ষেত্র আসলে নিউরাল ইঞ্জিনিয়ারিং। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নয়, বরং পেরিফেরাল নার্ভ মডেলিং, নিউরোসায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং দুটোই সমানভাবে লাগে এখানে। এই কারণে নিউরোসায়েন্স, ইঙ্গিনিয়ারিং টেকনোলজী, ম্যাথমেটিক্স সবই সমান ভাবে ঘাটাঘাটি করতে হয়।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
আরিব্বাস!
চোখ কপালে তুলে দিলেন ভাই। আপনি ব্যস্ত মানুষ নিশ্চয়ই, তাই সাপ্তাহিক একটি পোস্টের আবদার করবোনা। তবু নিয়মিত লিখেন এআই বা ওইরকম জিনিষ নিয়ে, কিছুই জানা হয়নি ওসবের। এইসব টপিক পড়ে আমার কিছুই বুঝার কথা না তবু আপনার আজকের পোস্ট পড়ে কেন যেন মনে হল কিছু বুঝেছি। আরো লিখুন।
..................................................................
#Banshibir.
পড়ে যে আগ্রহ জেগেছে, বুঝতে পেরেছেন এটাই আনন্দের খবর।
অবশ্যই চেষ্টা করবো, আরো লেখার। ধন্যবাদ আপনাকে।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
অনেক ধন্যবাদ আপু। লিখবেন কিন্তু।
..................................................................
#Banshibir.
নীল রোদ্দুর একজন আপু
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
বিরাট মিসটেক হয়ে গেসে, এইবার আপু ডেকে মিটমাট করে দিয়েছি। তবে আপু লোক ভালো, আমি হইলে দিতাম ঝাড়ি এই ব্যাটা সত্যপীর দুনিয়ার সবাইরে ভাই ডাকিস তর সমস্যা কি?
..................................................................
#Banshibir.
এগুলো কোন ব্যাপার না ভাই, এইখানে তো আমার আইডেন্টিটি কার্ড ঝুলিয়ে দেইনি, ভুল হলে হতেই পারে... লিখছি যখন, ব্লগার ব্লগার ভাই ভাই... আপু ভাইতে কিছু আসে যায় না।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কিছু আলটপকা ধারণা আমার ভেতরেও ছিলো। আসল ঘটনাটা বুঝে নিতে এই লেখাটা বেশ ভালো একটা সূচনা হিসাবে কাজ করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনও মূলত তুলনীয় মানবিক আউটপুটকে লক্ষ্যস্থল ধরে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা কিছুটা হতাশার। আউটপুটের চেয়ে বরং কার্যপ্রণালীটাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর যৌক্তিক, আপনার এই মতের সাথেই কন্ঠ মেলাবো।
লেখায় পাঁচতারা। আপনার নতুন লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
এইভাবে ধারণাগুলোকে একটু ঝাঁকি দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতেই লিখেছি এটা।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
লেখা বেশ ভালো হয়েছে। লেখার স্পেক্ট্রামে নিউরোবিজ্ঞান থেকে এআইয়ের গোড়াপত্তন থেকে শুরু করে কানেকশনিস্ট এআই পর্যন্ত আপনার দখল বেশ স্পষ্ট। প্রায় পুরো লেখাটিতেই, বিশেষ করে এআইয়ের উচিত লক্ষ্য এবং বর্তমানের দুর্ভাগ্যজনক জনপ্রিয় লক্ষ্য নিয়ে করা মন্তব্যগুলোর প্রায় পুরোটাতেই একমত।
প্রশ্ন আর সমালোচনা কেবল অ্যাকাডেমিক ইন্টারেস্টে -
আমার দখল স্পেক্ট্রামের কৃত্রিম অংশে, জৈবিক অংশের চেয়ে অধিক। (জৈবিক অংশে দখল শূন্য বলা চলে)। জৈবিক অংশের বিষয়ে প্রথমে একটি প্রশ্ন রাখছি আগ্রহ থেকে।
এটা কি একেবারেই নেই? এর সাথে কি নিউরোরিজেনারেশন বিষয়টা সম্পর্কিত?
http://en.wikipedia.org/wiki/Neuroregeneration
(মডুরা, প্লিজ ছাইতে লিংকের রঙ দিয়েন না)
নিউরাল নেটওয়ার্কের গঠন বর্ণনায় ভেতরের নিউরনগুলো যদিও ইংরেজিতে হিডেন নিউরন নামে পরিচিত, কিন্তু বাংলায় গোপন নিউরন না বলে অভ্যন্তরীণ নিউরন বলা যায় কিনা ভাবছি। সেটাই বেশি অর্থপূর্ণ লাগছে।
শেষ প্যারার কাছে এসে গণ্ডগোল লেগে গেছে।
নিউরাল প্লাস্টিসিটিকে অ্যালগরিদমিক্যালি তো অনেকটা মিমিক করা গেছে, হুবহু না হলেও। আর্টিফিশাল নিউরাল নেটওয়ার্ককে যেসব অ্যালগরিদম দিয়ে ট্রেইন করানো হয়, সেগুলোতে তো সংযোগগুলো পরিবর্তন হয় অভিজ্ঞতার সাথে সাথে।
মেশিন লার্নিংয়ের কী হবে? বা রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং? সেখানে তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভুল করে ও অভিজ্ঞতা থেকে শেখে। উপরে নিউরাল নেটওয়ার্কের কথাই বললাম। এর জন্যে মান্ধাতার আমল থেকে ব্যাক প্রপাগেশান অ্যালগরিদম আছে, শুধু আউটপুট লেয়ারের জন্যে পার্সেপট্রন অ্যালগরিদম আছে, লিস্ট মিন স্কয়ার্স অ্যালগরিদম আছে, টেম্পোরাল ডিফারেন্স লার্নিং অ্যালগরিদম আছে। এদের প্রত্যেকটার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা অ্যাডাপ্টিভ। প্রথমে প্রচুর ভুল করে। কিন্তু যতো অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে, ভুলের হার কমতে থাকে। অর্থাৎ ভুল থেকে শেখে। এর মধ্যে টেম্পোরাল ডিফারেন্স লার্নিং অ্যালগরিদমের উইকিপিডিয়া লেখার নিউরোসায়েন্স সেকশানে যান। ওখানে দেখবেন, মস্তিষ্কের ডোপামিন ফায়ারিংয়ের সাথে এই অ্যালগরিদমের সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
কম্পিউটার সব সম্ভাব্য পথ দেখে তার মানে কিন্তু এই না যে তা সে করতে বাধ্য। কম্পিউটারের এই পথ যাচাইকে সীমিত করে দেয়া যায়। ফলে মানুষের মতো অল্প কয়টা পথ তাৎক্ষণিকভাবে দেখা তো তাত্ত্বিকভাবে একটা টিউরিং মেশিন দ্বারা সম্ভব।
এই কথাগুলো একটু জাজমেন্টাল, ডিসাইসিভ হয়ে উঠেছে, যা প্রবন্ধটার বাকি পুরো অংশের সাথে একেবারেই যায় না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যত নিয়ে বিস্তর তর্ক আছে। এর কোনোটি আপনার কথাটার মতোই ধারণা পোষণ করে। কিন্তু সেটায় উপনীত হতে যথেষ্ট যুক্তিতর্ক আনয়ন প্রয়োজন। সেটা ব্যতিরেকে সহজে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় কি?
লেখাটা অসাধারণ বলবো। চালিয়ে যান।
ভুল থেকে ও অভিজ্ঞতা থেকে শেখার রোবট-উদাহরণ দেখুনঃ
http://www.youtube.com/watch?v=2iNrJx6IDEo
এখানে ব্যবহৃত অ্যালগরিদম(কিউ লার্নিং)টা হলো টেম্পোরাল ডিফারেন্স লার্নিং অ্যালগরিদমের একটি ভ্যারিয়েন্ট।
খুব কাছাকাছি বক্তব্যসম্বলিত আমার একটা লেখা - কৃত্রিম জীবনের পথে: জীবনের অর্থ।
নিউরাল প্লাস্টিসিটিকে অ্যালগরিদমিক্যালি তো অনেকটা মিমিক করা গেছে, হুবহু না হলেও। আর্টিফিশাল নিউরাল নেটওয়ার্ককে যেসব অ্যালগরিদম দিয়ে ট্রেইন করানো হয়, সেগুলোতে তো সংযোগগুলো পরিবর্তন হয় অভিজ্ঞতার সাথে সাথে।
আমি এইখানে সংক্ষেপে নিউরাল প্লাস্টিসিটি সম্পর্কে বলেছি, বিস্তারিত না বলে, কেবল ধারণাটা দেবার চেষ্টা করেছি। এখন আরেকটু বিস্তারিত বলি, যদিও প্লাস্টিসিটি কয়েক লাইনে বোঝানো এখনও আমার পক্ষে সম্ভব না।
আর্টিফিসিয়ালি যেভাবে নিউরাল নেটওয়ার্কের প্লাস্টিসিটি কাজ করে, সেটা হল, ধরে নিলাম, ১, ২, ৩, ৪, ৫ পাঁচটি ভিন্ন ফিজিকাল ফাংশনের জন্য নিউরাল নেটওয়ার্ক ডিজাইন করা হয়েছে, প্রত্যেকটি ফাংশনের মাধ্যমে আলাদা আলাদা ধরণের ফিজিকাল ইনপুট দেয়া হচ্ছে। ১ এর ফিজিকাল ইনপুট ২ এর চেয়ে আলাদা, এবং ১ এর ইনপুট ২ চেনে না। পাঁচটি আলাদা ইনপুট ভিতরে গিয়ে হিডেন লেয়ারে প্রসেস হবে। এখন ধরে নিলাম, ক্রমাগত ১ এর ইনপুট দুর্বল হচ্ছে আর ৩ এর ইনপুট সবল হচ্ছে। তার ফলে প্রসেসিং ইউনিটে ৩ এর পথ শক্তিশালী হবে, অর্থাৎ অভিজ্ঞতা থেকে শিখে নিল সে। পরবর্তীতে ৩ এর ইনপুট আসা মাত্র অন্য ইনপুটের চেয়ে ভালোভাবে রেস্পন্স পাবো। বাকি ইনপুট গুলোর কোনটির যদি ৩ এর ইনপুটের সাথে মিল থাকে, তাহলে দেখা যাবে আসলে ইনপুট ভিন্ন হলে, অভিজ্ঞতার কারনে সামান্য মিল কে হিসাবে এনে সে ভুল করে ৩ এর রেজাল্ট দিয়ে ফেলছে।
এইদিকে বলেছি ১ ক্রমাগত দূর্বল হয়েছে, ধরে নিলাম ১ এ ইনপুট আসছেই না। তার অর্থ হল, ১ এর ইনপুট প্রসেস করার জন্য হিডেন লেয়ারে যে ডিজাইন করা ছিল, তা অলস হয়ে পড়ে আছে, সেটি কিন্তু ২, ৩, ৪, ৫ কোনটির প্রসেসিং এর দ্বায়িত্ব নিচ্ছে না, বরং অলস বা মৃত হয়ে পড়ে আছে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে যা হয় সেখানে নিউরাল প্লাস্টিসিটির অর্থটা আরো বিশাল। আমি উদাহরণে বলেছিলাম, ধরে নিলাম আমি হঠাত অন্ধ হয়ে গেছি, অর্থাৎ আমার ফটো রিসেপ্টর থেকে কোন সিগ্যনাল মস্তিষ্কে যাচ্ছে না। ফলে ফটোরিসেপ্টর থেকে যাওয়া সিগ্যনাল প্রসেস করার জন্য যে নিউরণ গুলো ছিল, তা সিগ্যনাল পাচ্ছে না। এটা আর্টিফিসিয়াল কেসের অনুরূপ হলে, মস্তিষ্কের এই প্রসেসিং পার্টটি অলস বা মৃত হয়ে যাবার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়না, বরং এটি দেখা যায়, অন্য যে ইন্দ্রীয়টা বেশী ব্যবহার হচ্ছে, বা অন্য যে ইনপুটটা বেশী আসছে, আস্তে আস্তে সেই প্রসেসিং পার্টের কাজ করতে শুরু করেছে। অথবা তৎসলগ্ন প্রসেসিং পার্টের কাজ শেয়ার করতে শুরু করে দিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ, তার কোন দিক থেকে কোন ইনপুট কম যাচ্ছে না, কোন সমস্যা নেই। ধরুন মানুষটি তেমন কোন গাণিতিক কাজ করে না সাধারণত। সেইসব মানুষদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, গাণিতিক সমস্যা সমাধান করার জন্য মস্তিষ্কের যে অংশটি থাকার কথা, তা অপর একজন যে নিয়মিত গাণিতিক সমস্যা সমাধানকারীর চেয়ে বেশ সংকীর্ণ। যদি মস্তিষ্কের সত্বঃস্ফূর্ত নিউরাল প্লাস্টিসিটি না থাকতো, তাহলে গাণিতিক সমস্যা সমাধাণের জন্য মস্তিষ্কের যে অংশটি তার আয়তনে ভিন্নতা আসতো না। যে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে না, তার সেই অংশটুকু তৎসংলগ্ন অংশগুলো নিজেদের জন্য নিয়ে নিয়েছে, আর যে বেশী গাণিতিক সমস্যা সমাধাণ করে তার ক্ষেত্রে তার গাণিতিক সমস্যা সমাধানের অংশটি চারপাশের অঞ্চল থেকে কিছু কিছু করে হয়ত আয়তন বাড়িয়ে নিয়েছে।
এভাবেই নিউরাল প্লাস্টিসিটির সাথে আর্টিফিসিয়াল ওয়েটিং এলগরিদমের পার্থক্য রয়ে যায়।
[বিঃদ্রঃ আমার কাজ যেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নয়, তাই সে সম্পর্কে আমার পড়ালেখা সীমিত, নিউরোসায়েন্স বা আমার রেগুলার পড়ালেখার চেয়ে বেশ কম, আমার আইডিয়াতে কোন ভুল থাকলে ধরিয়ে দিলে আমি স্বাগত জানাবো। ইনফ্যাক্ট সবসময়েই আমি জানতে চাই, ভুল থেকে বের হতে চাই। ]
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
বেশ ভালো বুঝিয়েছেন। চমৎকার! মস্তিষ্কের ব্যাপারটা এই ক্ষেত্রে হলো যে সে হোলিস্টিক উপায়ে কাজ করে। অর্থাৎ তাকে আলাদা আলাদা কয়েকটা ভিন্ন ফাংশন হিসেবে দেখলে কিন্তু এক বিষয়ে অলস হয়ে পড়া নিউরন অন্য বিষয়ে অংশ নিতে পারার কথা না। কিন্তু আপনি যদি পুরো মস্তিষ্কটাকে পরস্পর জড়িত একটা জটিল প্রকারের নিউরাল নেটওয়ার্ক হিসেবে দেখেন, তাহলে দেখবেন যে একই নিউরাল নেটওয়ার্কের ভিন্ন ভিন্ন অংশ ভিন্ন ভিন্ন ফাংশন শিখছে, তাদের নিউরনগুলোকে শেয়ারও করে নিচ্ছে, এসব অসম্ভব না। মেশিন লার্নিং এ ট্রান্সফার লার্নিং নামে একটি উপশাখায় এই প্রচেষ্টা করা হয়। সেখানে একই িনউরনের ভিন্ন ভিন্ন ফাংশন লার্নিংয়ে একই সময়ে অংশ নেয়ার সুযোগ থাকে। তখন একটা ফাংশনের ইনপুটের অনুপস্থিতিতে একটা নিউরন অন্য একট ফাংশন, যেটার ইনপুট বেশি বেশি উপস্থিত, সেটার লার্নিংয়ে বেশি অংশগ্রহণ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে। নিউরোবিজ্ঞানের সাথে এর সরাসরি সম্পর্ক এখনো হয়তো তৈরি হয় নি। তবে যদি চিন্তা করেন, এটা তাত্ত্বিকভাবে অসম্ভব কি?
এছাড়া আর্টিফিশল নিউরাল নেটওয়ার্কের ভিতরের লেয়ারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিউরনের সংখ্যা বর্ধন বা সংকোচন, এগুলোর উপরও বিস্তর গবেষণা হয়। উদাহরণস্বরূপ এটা দেখুনঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Cascade_correlation_algorithm
বা এটাঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Neuroevolution
একেবারেই নেই এই কথাটা ঠিক নয়, আছে কিছুটা। কিন্তু এইখানে ভেবে দেখার ব্যাপার হল, প্রসেসিং ইউনিটের পুনঃস্থাপন আর সেনসরী ইউনিটের পুনঃস্থাপন এর মাত্রা আলাদা। প্রসেসিং ইউনিট ক্ষতিগ্রস্থ হলে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তা রিকভার করা যায় না।
নার্ভাস সিস্টেমের পরিফেরাল নার্ভের কাজ হল, বহিঃজগত থেকে তথ্য গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় মস্তিষ্কে পাঠানো এবং কেন্দ্রীয় মস্তিষ্ক থেকে নির্দেশণা বহন করে দৈহিক কার্যক্রম ঘটানো। পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেম তথ্য যাচাই বাছাই, সিদ্দান্ত গ্রহনের কাজ করে না, সে কাজটি হয় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে। তাই নার্ভ ড্যামেজ পুনঃস্থাপনযোগ্য নয় বলে বাক্যটি তা আসলে কেন্দ্রীয় মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেই মূলত বলা, যেখানে ক্ষতি হয়ে গেলে জৈবিক বা কৃত্রিম ভাবে সহজে পুনস্থাপন সম্ভব নয়, বিধায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রসেসিং ইউনিট।
দ্বীতিয়ত, পেরিফেরাল নার্ভের হালকা পাতলা ড্যামেজ পুনঃস্থাপন যোগ্য, এমনকি, তা যদি পুনঃস্থপন হবার মাত্রায় নাও থাকে, তবুও বিকল্প ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে কাজ চালানো সম্ভব, অন্ধদের ক্ষেত্রে ব্রেইল রিডিং একটি উদাহরণ।
তৃতীয়ত গ্লিয়াল সেল মস্তিষ্কের মধ্যে থাকলেও সে ইনফরমেশন প্রসেসিং এর কাজ করে না, বরং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরণগুলোর জন্য সাপোর্ট সারফেস হিসেবে কাজ করে।
তাই নার্ভের পুনঃস্থাপন যোগ্যতা বিষয়টি নিয়ে যখন সাধারণভাবে কথা বলা তখন আসলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নার্ভের পুনঃস্থাপন যোগ্যতাকেই বোঝানো হয়, যেখানে পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়া আশাজনক পর্যায়ে নেই।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
এটা সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত বলা যাবে ভাইয়া, আমি জানতে আগ্রহী।
আর শেষে যে কথাগুলো বলেছি, সেটা একেবারেই আমার নিজস্ব মতামত আসলে, মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে। তবে আমি নৈরাশ্যের দলে নয়, বরং আশার আলো একটু বেশী হলে আমার চিন্তা আরো পরিচ্ছন্ন হবে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
যেমন, ধরুন প্রতি মুহূর্তে আপনার প্রোগ্রামটি সর্বমোট ১ হাজার ট্রিলিয়নটি শর্ত পরীক্ষা করে। ১হাজার ট্রিলিয়নটি শর্ত পরীক্ষা করতে ১০০ সেকেন্ড সময় লাগে ধরুন, কথার কথা। তো আপনি চাইলে বলে দিতে পারেন যে প্রতি মুহূর্তে শুধু ১ ট্রিলিয়নটি শর্ত পরীক্ষা করতে, সবগুলো না। এতে মোট সময় লাগবে ০.১ সেকেন্ড। বা আরো দ্রুত সিদ্ধান্ত চাইলে আরো কম সংখ্যক শর্ত পরীক্ষার করা যাবে। এখন মোট ১ হাজার ট্রিলিয়নটার মধ্যে কোন ১ট্রিলিয়নটা শর্ত বাছাই করা হবে পরীক্ষা করার জন্য, সেটার নানা উপায় থাকতে পারে। একটা খুব কার্যকরী উপায় হলো র্যান্ডমলি ১ ট্রিলিয়নটা বাছাই করা। আরেকটা উপায় হতে পারে, বর্তমান ইনপুটের সাথে কোন শর্তগুলো বেশি সম্পর্কিত তার একটা এস্টিমেট রাখা। সেই এস্টিমেটগুলোকে রাফলি সর্ট করে রাখতে পারেন। তাহলে ক্রমানুসারে কেবল প্রথম কয়টি শর্ত পরীক্ষা করবে প্রোগ্রামটা, সবগুলো না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ধারণা সংক্রান্ত প্যারাগ্রাফে আপনি বলেছেন -
এ বাক্যের অর্থের ব্যাপারে একটু দ্বিধান্বিত – আপনি কি বুদ্ধিমত্তার পরিমাপ সম্বন্ধে এ বাক্য বলেছেন? নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকদের মনোভাব সম্বন্ধে? যদি পরিমাপ সম্বন্ধে বলে থাকেন, তাহলে আপনার লেখারই রেফারেন্স টানবো।
তার মানে, বুদ্ধিমত্তা অর্জনের পন্থা ভিন্ন হতে পারে। আর এটাই যদি হয়, তবে মস্তিষ্ক “কীভাবে কাজ করে” তার পরিবর্তে “কী কাজ করে” সেটাই বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের জন্য ভালো নয় কি?
আর যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকদের স্ট্রাটেজি নিয়ে বলে থাকেন, তবে বলবো, আপনি বুদ্ধিমত্তার গবেষণা সম্বন্ধে খুব একটা অবগত নন। কারণ, এ শাখার গবেষকরা প্রতিনিয়ত চিন্তা করেন মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালি বুঝতে ও সেই ধারণা প্রয়োগ করতে। এর ছোট্ট একটা প্রমাণ আপনি নিজেই দিয়েছেন – নিউরাল নেটওয়ার্ক।
***
প্রথমতঃ “মানব নিউরণের উর্ধ্বসীমা আছে”, এই কারণে “বুদ্ধিমত্তার জন্য দ্রুততা প্রধান কারণ না” – এমন সিদ্ধান্তে আসা কিংবা এমন চিন্তা পোষণ করা যুক্তিযুক্ত না। যে গতিতে কাজ করে, সেটা সীমিত হলেও নিউরনের দ্রুততার প্রধান কারণ হতেই পারে।
দ্বিতীয়তঃ এই গতি ব্যাপারটার নানামুখী বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন ধরুন- আপনি ১০০০ টি সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় ১০ সংখ্যাটি বের করতে চাচ্ছেন। আপনি যদি প্রথমেই সংখ্যাগুলো সাজিয়ে নেন ও তা সেভ করে রাখেন, তাহলে প্রথমবারের পর কেবল একটা সংখ্যা দেখেই সবচেয়ে বড় সংখ্যা কোন্টা বলতে পারবেন। আর যদি সাজিয়ে না নেন, তাহলে প্রতিবার বড় সংখ্যাটি খুঁজতে হবে। গতি কমে যাবে। এখানে কাজ করার গতির সাথে কাজের ফলাফল সেভ করে রাখার (অর্থাৎ মেমোরির) একটা মারাত্মক ভূমিকা আছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোন গবেষক যখন বলেন, গতি বাড়ালে কাজ করবে, তখন এসব নানামুখী বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখেই বলেন।
তৃতীয়তঃ গবেষণার শুরুর দিকে যখন কম্পিউটারের গতি খুব-খুব কম ছিল, তখন তারা এমন ধারণা পোষণ করত যে, গতি বাড়ালেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এবং এ কথা সত্য যে, ক্লক ফ্রিকোয়েন্সি ও মেমোরি বাড়ার সাথে সাথে অনেক সমস্যা সমাধান হয়েও গেছে। মূলত এ কারণেই মেশিন লার্ণিংয়ের (http://en.wikipedia.org/wiki/Machine_learning) মতো শাখা ডেভেলাপ করেছে। তবে কেবল গতি দিয়েই সব করা যাবে, এমনটা বোধ করি কেউ ভাবেনি। এই গতি আর সক্ষমতাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেই গবেষণার কথা বোধ করি উহ্য ছিল। আর এই কাজে লাগানোর ব্যাপারটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণার মূল বিষয়বস্তু।
***
এখানে স্পষ্ট করে বলতে চাই, আচরণকেন্দ্রিক ধারণাটি কেবল বুদ্ধিমত্তার পরিমাপক, কিভাবে এ বুদ্ধিমত্তা অর্জন করতে হবে তার সাথে মোটেও সম্পৃক্ত নয়। বুদ্ধিমত্তা অর্জনের জন্য কেবল নিউরোসায়েন্স বিষয়ক জ্ঞান নয়, বরং সম্ভাব্য সকল শাখার জ্ঞানকেই (যেমনঃ গণিত, পরিসংখ্যান ইত্যাদি) বিবেচনায় আনা উচিত। গবেষণার ধর্মই হলো – কোন নির্দিষ্ট গন্ডিতে আটকে না থাকা। আরো স্পেসিফিকলি বলতে গেলে – কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকরা অনেক অনেক আগে থেকেই জীববৈজ্ঞানিক ফ্যাক্টগুলোকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথেই বিবেচনা করেন। এ কারণেই ইভোলিউশনারি এলগরিদমের (http://en.wikipedia.org/wiki/Evolutionary_algorithm) মতো বিভিন্ন পদ্ধতি এসেছে এ শাখায়।
***
আগেও উল্লেখ করেছি, আবারও করছি – কৃত্রিম আচরণে দক্ষতা অর্জন ব্যাপারটা বুদ্ধিমত্তা পরিমাপক হিসেবে ব্যবহৃত, মোটেও গবেষণার পদ্ধতি হিসেবে নয়। আর, গবেষণার হাজারটা পদ্ধতি থাকতে পারে, এর মধ্যে কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতিতেই এগোতে হবে এমন কথা কোথাও বলা নেই। এছাড়া, গবেষকরা এলগরিদম ভিত্তিক গবেষণার দিকে মনোযোগী না এমন দাবি যে মোটেও ঠিক নয়, সেটাও আগেই বলেছি।
***
এই আশা-নিরাশা মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক। কোন একটা শাখার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হলো সেই শাখা সম্বন্ধে ভালভাবে জানা। নিউরোসায়েন্টিস্টরা ততখানি জানেন না বলেই বোধ করি। আর নিরাশার কিছু নেই, কারণ কেবল গতি দিয়ে যেমন ইন্টেলিজেন্স অর্জন করা সম্ভব না, তেমনি কেবল টাকা দিয়েও সম্ভব না। আর বাস্তবতার নিরিখে বলতে হয়, “নিউরাল নেটওয়ার্কে লগ্নিকৃত অর্থ অনেকাংশে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে” – এমন কথা বলা বালখিল্যতার পর্যায়ে পড়ে। অর্থলগ্নিকারীরা জানেন, কিভাবে কোন্ জায়গায় টাকা লগ্নি করতে হয় ও কিভাবে সেই লগ্নিকৃত টাকার আউটপুট আদায় করে নিতে হয়। যদি অন্য দিকে টাকা গিয়ে থাকে, তবে এটা মানতে হবে, সেই লগ্নিকারী ইন্টেলিজেন্ট মেশিন বানানোর জন্য টাকা লগ্নি করেননি, বরং করেছেন আপনার দেয়া উদাহরণের মতো কাজেই। তাই “ইন্টেলিজেন্ট মেশিন বানাবার পরিবর্তে” এমন কথা বলা উচিত নয়। তবে ইন্টেলিজেন্ট মেশিন বানানোর পেছনে এগুলোর অবদান অস্বীকার্য নয়। এরকম ছোট ছোট সাকসেসফুল এপ্লিকেশন গবেষণার জন্য এসিড-টেস্ট স্বরূপ। গবেষকরা (আরো বিশেষভাবে বললে – গবেষণাসংক্রান্ত ম্যানেজমেন্টের মানুষরা) সাধারণত যা করেন, তা হলো, ইনভেস্টরকে তার কাজে লাগে এমন এপ্লিকেশনের মাধ্যমে তাদের গবেষণার পিছনে ইনভেস্ট করতে আকৃষ্ট করেন। বড় লক্ষ্য অর্জনের পথে এমন ছোট ছোট এপ্লিকেশনের মাধ্যমে তারা অর্থ যোগাড় করেন। নিউরোসায়েন্সে যদি নিউরাল নেটওয়ার্কের মতো ইনভেস্টমেন্ট না আসে, তবে নিউরোসায়েন্টিস্টদের নিরাশ না হয়ে বরং বড় লক্ষ্য অর্জনের পথে পথে ছোট ছোট অর্জনগুলো কিভাবে বাস্তব জীবনে এপ্লাই করা যায় তা ভাবা উচিত। এতে টাকা-পয়সার পাশাপাশি অর্জনগুলোর এপ্লিকেবলিটির টেস্টও হয়ে যাবে।
***
এই জিনিস উল্লেখ করার কারণ বোধগম্য নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকরা তাদের লক্ষ্য জানেন না – এমনটা আশা করি বুঝাতে চাননি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৃহত্তর লক্ষ্য অবশ্যই “বুদ্ধিমত্তা” অর্জন, আগে-পিছে কোন বিশেষণ ছাড়া। আর সেই বৃহত্তর লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথিমধ্যে ছোট ছোট আরো লক্ষ্য আছে, যেগুলোর রেজাল্ট (বা এপ্লিকেশন) একটু একটু করে দেখতে পাচ্ছেন শেয়ারবাজারসহ ক্যান্সার প্রেডিকশন, জেনেটিক প্রবলেম আইডেন্টিফিকেশন ও অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে।
***
প্রথম লাইনটা এক্কেবারে সঠিক হলেও দ্বিতীয় লাইনটা মোটেও ঠিক নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক ধরনের সমস্যা নিয়ে ডিল করে। এসবের মধ্যে আর্টিফিসিয়াল ইনটুইশনও আছে (http://en.wikipedia.org/wiki/Artificial_intuition)। আর এগুলো মোটেও “এতকাল অব্দি চর্চিত সমস্যা” নয়। একটু আগে যে ইভোলিউশনারি এলগরিদমের কথা বললাম, তা আছে ১৯৯০ এরও আগে থেকে (http://en.wikipedia.org/wiki/Evolutionary_computation)।
***
উল্লেখ্য, আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজিন্সের কিছু মূল আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে planning, creativity ও আছে (http://en.wikipedia.org/wiki/Artificial_intelligence)। এসব বিবেচনায় না এনে কেবল নিউরাল নেটওয়ার্কের উদাহরণ দিয়ে বিচার করলে জৈবিক বুদ্ধিমত্তার নিরিখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবস্থান একেবারেই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
***
একটু বেশি সারলীকরণ হয়ে গেল। কম্পিউটার প্রোগ্রাম তার লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করে। সেই লক্ষ্য যদি হয়ে থাকে এক্কেবারে সঠিকতম সিদ্ধান্ত খুঁজে বের করা, তবে তাই করে। সেই লক্ষ্য যদি হয়ে থাকে, একেবারে সঠিক না হলেও মোটামুটিভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া, তবে তাই করে। একারণেই এপ্রোক্সিমেট এলগরিদমের আবির্ভাব (http://en.wikipedia.org/wiki/Approximation_algorithm)। মূল কথা হলো – নির্ভর করে কিভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর। সাধারণভাবে যেখানে মানুষ হিমশিম খায়, সেখানে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়। তাই, সঠিকতম সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো প্রোগ্রামের প্রাচুর্য দেখা যায় আমাদের চারপাশে। তবে ভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামও আছে, আর সেগুলো ব্যবহার করা হয় কম্পিউটেশনাল্লি এক্সপেন্সিভ কাজের ক্ষেত্রে, যা সাধারণত আমাদের গোচরীভূত হয় না।
***
এগুলো ঠিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাব না, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষকরা মনে করেন এগুলো হলে তাদের গবেষণা অনেক-অনেক ত্বরান্বিত করে। এগুলো এই গবেষকদের কাছে এক ধরনের স্বপ্ন, যেগুলো তারা বের করতে চান কিংবা জেনে প্রয়োগ করতে চান। তবে, তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ১ম পয়েন্টটা (অভাব বলছি না) “এক্সেক্টলি” মানব-মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে তার এলগরিদম জানা নয়, বরং আরো একটু জেনেরিকভাবে বললে, এমন একটা মডেল (এলগরিদমের ভিত্তি) জানা যার মাধ্যমে বুদ্ধিদীপ্ত আচরণের এলগরিদম ব্যাখ্যা করা যায়। তবে, মানব-মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালি জানলে তারা যার-পর-নাই খুশিই হবেন। আর ২য় পয়েন্টটা অর্থাৎ কানেকশন প্লাস্টিসিটি কিন্তু আদতে মস্তিষ্ক কিংবা নিউরাল সিস্টেমের গতির পরিপূরকও বটে। এমন বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পারলে শুরুতেই যে বৈশিষ্ট্যটা দৃশ্যমান হবে তা হল কম্পিউটারের গতি।
***
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিস্তৃতি আসলে অনেক বিশাল। জ্ঞানের যে শাখা এত বড় হয়ে উঠেছে, সেই শাখা আরো ভালভাবে এক্সপ্লোর করলে আশা করি আপনিসহ অন্যান্য নিউরোসায়েন্টিস্টরা নিরাশ হবেন না, বরং এই শাখায় অর্জিত জ্ঞান কিভাবে আপনাদের শাখায় কাজে লাগানো যায় সেই দিকে বেশি উৎসাহিত হবেন।
না, আমি বুদ্ধিমত্তার পরিমাপ সম্পর্কে একবাক্যে বলিনি, বলেছি চলে আসা ট্রেন্ডটা সম্পর্কে।
এ
দেখুন, আমি যেহেতু এই শাখায় কাজ করিনা, এই শাখার আলোবাতাসে বড় হয়ে উঠিনি, তাই আমি গবেষণা সম্পর্কে অবগত নাও হতে পারি, অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমি জানার চেষ্টা করি, সাপোর্টিং রেফারেন্স থেকে। একটু কষ্ট করে আমার লেখার এক নম্বর রেফারেন্স- এর ২১ নম্বর পৃষ্ঠাটা পড়ে দেখতে পারেন। আমি কিঞ্চিত কোট করছি, বক্তা জেফ হকিন্স
পৃষ্ঠা ১৩
httpv://www.youtube.com/watch?v=G6CVj5IQkzk
এখান থেকেও কিছুটা জানতে পারবেন তার বক্তব্য। কিংবা তার অভিজ্ঞতা, কিভাবে এমআইটি, ইন্টেল এর কাছ থেকে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছিলেন যারা কৃতিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজনে মস্তিষ্কের গবেষণাকে গুরুত্ব দেয়নি তখন।
দ্বীতিয়ত, আচরণকে আমি বুদ্ধমত্তার সঠিক পরিমাপক মনে করিনা, এটা মনে না করার পিছনে উপরোক্ত ভদ্রলোক জেফ হকিন্স দায়ী নন, তার ব্যাখ্যা বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমার নিজসে ফিলোসোফিকে কিছুটা শকিশালী করেছে মাত্র। আমি নিজে যখন থেকে নিউরসায়েন্স নিয়ে পড়ছি, তখন আমার এই পড়া শুরু পিছনে ড্রাইভিং ফোর্স ছিল আচরন বৈচিত্র, আচরণকে আমি একটা ফাংশনের আউটপুট হিসেবেই দেখি। আমার দৃষ্টিতে বুদ্ধিমত্তার অর্থ আচরণ নয়, বরং এর পিছনের ফাংশনটি। আমি আমার সীমিত সামর্থ্য নিয়ে সেই ফাংশনটিই বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আমার ধারনা আপনার আমার লেখার রিজনিং ধরতে অসুবিধা হয়েছে, পুরো লেখা জুড়েই বুঝাতে চেষ্টা করেছি, কেন বুদ্ধিমত্তা ব্যাপারটা আচরণে সীমাবদ্ধ নয়। এইবার আরেকটা ব্যাপারে আসি,
আপনি এখানেও আমার রিজনিং ধরতে ব্যার্থ হয়েছেন। অর্থ লগ্নিকারীরা মেইন্সট্রিম সায়েন্স এর চেয়ে অ্যাপ্লিকেশনের দিকেই যে বেশী আগ্রহী এবং সেই কারণে গবেষকেরও অ্যাপ্লিকেশনেই বেশী মত্ত থাকতে হচ্ছে, আমি সেটাই বোঝাতে চেয়েছি। আপনি হয়ত আবার বলতে পারেন, আমার এই ব্যাপারে ধারণা নেই। এইক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, আমার কিছুটা হলেও ধারণা আছে।
যুগযুগ ধরে দেখা গেছে যখন অজানাকে জানার জন্য বিজ্ঞানের পিছনে অর্থের প্রয়োজন হয়, তখন অর্থলগ্নিকারীদের আগ্রহ কম দেখা যায়। কারণ যা জানা নেই, তার পিছনে অর্থ ঢালার অর্থ হল, যে অর্থ ঢালছি, তা থেকে ফলাফল পাবোই এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। মূল বিজ্ঞানের পিছনে অর্থ ধাললে, যদি এখান থেকে বড় কোন যুগান্তকারী আবিষ্কার হয়ও, তাও সেই আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়ে লগ্নি করা অর্থ থেকে কিছু বোনাস ঘরে তুলতে ২০ বছর ৩০ বছর ৫০ বছর লেগে যেতে পারে।
অপর পক্ষে, প্রযুক্তি বা অ্যাপ্লিকেশনের পিছনে অর্থ ঢালা মানে হল, ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন টেকনোলজী উদ্ভাবন করা। নতুন উদ্ভাবিত টেকনোলজী যদি বাজারে বিদ্যমান টেকনোলজীর চেয়ে উন্নত হয়, তাহলে তা পুরাতন কে ঠেলে রাজত্ব্য নিয়ে নেবে। স্বাভাবিকভাবে অর্থলগ্নিকারীদের আগ্রহ সেদিকেই বেশী থাকে।
অর্থের যেহেতু অর্থমূল্য আছে, লগ্নিকারীরা যদি, মূল বিজ্ঞানে অবদান রাখার চেয়ে অর্থমূল্যের কথা বেশী ভাবে, সেটাকে কি অস্বাভাবিক বলা যায়? তাই মূল বিজ্ঞানে কাজ করতে গেলে শুধু অজানার মুখোমুখি হতে হয় না, অর্থের যোগান নিয়েও নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়, যারা যুগ পরিবর্তঙ্কারী আবিষ্কারগুলো করেছেন, জীব রসায়ন বা পদার্থবিজ্ঞানে, তাদের জীবনীগুলো একটু দেখে নিতে পারেন, বিজ্ঞানের জন্য তাদের কতটা কষ্ট করতে হয়েছে। যাই হোক, লেখার সাব্জেক্ট বহির্ভূত কথা এখানেই শেষ।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
আপনি যেমন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের আলোবাতাসে বড় হয়ে উঠেননি, আমার কাছেও তেমনি নিউরোসায়েন্সের পরিবেশ খুব একটা চেনা না। আর চেনা না বলেই বলিনা, নিউরোসায়েন্সের ব্যাপারে আমি নিরাশ। খেয়াল করবেন, আমি বলেছি – আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বিস্তৃতি অনেক বিশাল, সেটা এক্সপ্লোর করলে হয়তো আপনিও আশাবাদী হবেন।
আর আপনার সাপোর্টিং রেফারেন্স কতখানি ঠিক বলছেন, সেটাও বিবেচ্য বিষয়। জেফ হকিন্স জ্ঞানী মানুষ, কিন্তু তিনি যা বলেন তাই সবসময় সঠিক, তা নয়। আশা করি, আপনিও এ ব্যাপারে একমত। আপনার দেয়া ইউটিউব লিঙ্ক থেকেই বলছি – উনি ইন্টেলিজেন্স-এর ব্যাপারে এআই এর ভিউ নিচের মতো বলেছেন-
এই ভিউ আসলে আংশিক সত্য, অন্যভাবে বললে আংশিক ভুল। এমন অনেক অ্যাপ্রোচ আছে যেখানে ভিউটা নিচের মতো।
হকিন্স ব্যাক-প্রোপাগেশনের (http://en.wikipedia.org/wiki/Backpropagation) যে লিংকটা এভয়েড করেছেন, সেটা দিয়ে দিলে এই মডেলটা আসলে হকিন্সের দেয়া নিচের সিস্টেমের মতোই হয়। আর এই জিনিসটা আছে সেই ১৯৭০ এর সময় থেকে। হকিন্স সাহেবের মতো বিজ্ঞজনের চোখ এমন একটা জিনিস এড়িয়ে গেলেন কীভাবে – তা আমার কাছে বিস্ময়কর ঠেকছে।
আরো একটা জিনিস আপনার দেয়া কোটেশন থেকেই বলছি-
AI philosophy was buttressed by the dominant trend in psychology during the first half of the twentieth century, called behaviorism
এখানে একটা Verb এর দিকে আপনার বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করছি – WAS. সময়ের সাথে গবেষণার ধরণ পাল্টায়, আই ও পাল্টিয়েছে। এবং আমি নিশ্চিত – এটা আরো পাল্টাবে, সময়ের সাথে আরো শাণিত হতে। (এর পিছনে আমার কোন সাপোর্টিং রেফারেন্স নেই এবং এটা মানা-না মানা যে কারো ব্যক্তিগত ব্যাপার)। বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্ট ব্যবহার করে পাল্টানোর বিষয়টা ঘটেছে অনেক আগেই।
আমি যেটা বলতে চাই, যে সাপোর্টিং রেফারেন্স আপনি দিয়েছেন, এটা এক প্রতিভাবানের উক্তি, তার চিন্তা। এ চিন্তা এখনো প্রমাণিত নয়, এর বাইরেও অন্য অনেক মানুষ, যারা হয়তো হকিন্স সাহেবের মতো বিখ্যাত প্রতিভাবান নন, তাদেরও চিন্তা আছে। তবে তাদের চিন্তার এমন হার্ট-টাচিং ভিডিও আছে কিনা আমার জানা নেই। কোন সিদ্ধান্তে আসার আগে সেসব চিন্তাও বিবেচনায় নিয়ে আসা উচিত। কিছু ভুল কিংবা অসম্পূর্ণ ধারণার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে আসা উচিত না। এবং অন্য চিন্তার উপর ভিত্তি করে কারা কাজকে “বিভ্রান্ত” বলে আখ্যা দেয়া ঠিক না।
আপনার চিন্তাকে স্বাগত জানাই। আচরণকে বুদ্ধিমত্তার সঠিক পরিমাপ বলে মানতেই হবে, এমন কোন কথা নেই। বরং এর সাথে সাংঘর্ষিক কোন চিন্তা থাকা গবেষণার জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর। তবে সমস্যা হলো, আজ পর্যন্ত বুদ্ধিমত্তার পরিমাপের সর্বজনগ্রহণযোগ্য কোন পরিমাপ নেই। টিউরিং সাহেব এক ধরনের পরিমাপ দিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে অনেক কিছু (অবশ্যই সব না, সব হলে সর্বজনগ্রহণযোগ্য হয়ে যেতো) ব্যাখ্যা করা যায়। হকিন্স সাহেবও আরেক ধরনের পরিমাপ দিয়েছেন – “Intelligence is defined by prediction.”। এটাও এখন পর্যন্ত সর্বজনগ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেনি। “প্রেডিকশন”-কে আপনার কতখানি সঠিক মনে হয়, তা জানলে খুশি হবো।
আরেকটা জিনিস মনে হয় উল্লেখ করা উচিত, ঠিকমতো প্রেডিকশন করাও কিন্তু এআই এর গবেষণার একটা বিষয়বস্তু। যে স্টক মার্কেট গবেষণাকে আপনি “বিভ্রান্ত” বলে আখ্যা দিয়েছেন, সেখানেও প্রেডিকশন নিয়ে গবেষণা করা হয়। প্রেডিকশন নিয়ে গবেষণা হয়, ক্যান্সার নির্ণয়ে। আজ জেনেটিক্স যে এতখানি এগিয়ে গেছে, সেখানেও এআইয়ের প্রেডিকশনভিত্তিক গবেষণা বিশাল ভূমিকা রাখছে। হ্যাঁ, বলতে পারেন যে, এ প্রেডিকশন খন্ডিত, কেবল একেকটা বিশেষ দিকে বিশেষজ্ঞ। তবে খন্ডিত এ জ্ঞানগুলো কি পূর্ণাঙ্গ কিছু পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী করতে পারে না? আমি আশাবাদী। আপনি হবেন কিনা সেটা আপনার ব্যাপার। তবে, নিরাশাবাদী হওয়ার আগে ও কোন একটা বিষয়কে অন্য বিষয়ের আলোকে বিচার করার আগে আরেকটু এক্সপ্লোর করার ব্যাপারটা আমি জোর দিয়ে বলবো।
ধন্যবাদ, জিনিসটা পরিস্কার করার জন্য। তবে এরপর আপনি যা বলেছেন (যেমন- অর্থলগ্নিকারীদের নগদ ইনকামের দিকে ঝোঁক, গবেষকদের অর্থচিন্তা নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটানো, যুগান্তকারী বিজ্ঞানীদের জীবনী পড়ে দেখা ইত্যাদি) এগুলো নিতান্তই ইমোশনাল নয় কি? আমি বলছি না, ইমোশনের দরকার নেই। গবেষণা করতে হলে অবশ্যই ইমোশনাল হতে হবে, প্যাশনেট হতে হবে। তবে, এই ইমোশনের কারণে অন্য কারো গবেষণাকে “বিভ্রান্ত” বলা ঠিক কি? সেই “বিভ্রান্ত” গবেষণাগুলো আরেকজনের (বুদ্ধিমান মেশিন বানানোর) টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, এমন মন্তব্য করা ঠিক কি?
সত্যি কথা বলতে, আমি ইমোশন বরং পছন্দই করি। তবে যেখানে যুক্তির কথা হচ্ছে, সেখানে না। আপনার দেয়া হকিন্স সাহেবের লেকচারেও ইমোশনের যথেষ্ট উপস্থিতি আছে। এত করে অন্যদেরকে কনভিন্স করা সহজ। নিজে এ ব্যাপারে ইমোশনাল না হলে, নিজে কনভিন্সড না হলে, অন্যকে কনভিন্সড করবেন কীভাবে?
ও হ্যাঁ, আপনার বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে একটা বেসিক জিনিস ভুলে গিয়েছিলাম। তা হলো, আপনার লেখনীর ও মতামত প্রেজেন্টেশনের (লেখায় ও মন্তব্য উভয় জায়াগায়) দারুণ গুণের কথা বলতে। লেখা হিসেবে ও অন্যকে নাড়িয়ে দিতে আপনার লেখা বেশ। নিঃশঙ্কচিত্তে সম্মান জানাই।
দুঃখিত, আমি এইধরনের কথা বলিনি, আপনি নিজে আমার কথা থেকে এটা বুঝেছেন, যেটা আমি বোঝাতে চাই নি মোটেও।
প্রথমটার ক্ষেত্রে, আমি বলতে চেয়েছি টার্গেটেড অ্যাপ্রোচের কথা। একটা শাখার গবেষণা হল অনেকটা ডায়েরীতে ক্রমান্বয়ে লিপিবদ্ধ রাখা উদ্যোগ এবং এর ফলাফলের সংকলন। এই সংকলনটি দেখলে বোঝা যায়, কোনদিকে এগুচ্ছে গবেষণার প্রবাহ। আমি যে কাজটি করতে শুরু করেছি, তা করতে করতে অন্য কোন কিছু যদি করা হয়ে যায়, তো ভালো কথা, কিন্তু তখন সেটির পিছে মেতে থেকে বা তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে গেলে, যে লক্ষ্য নিয়ে শুরু করেছিলাম কাজটি, তা অপরিপূর্ণ রয়ে যাবার ভালো একটা সম্ভাবনা রয়ে যায়। প্রত্যেকটা শাখার একটা টার্গেটও থাকে। AI এর শুরুতেই সেই টার্গেটটা পরিষ্কার ছিল। আমি এই টার্গেটেড অ্যাপ্রোচের কথা বলেছি। আমি জানিনা, এখনো বোঝাতে পেরেছি কিনা।
দ্বিতীয় মন্তব্যটা আমি করিনি, আপনি ভেবেছেন।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
দেখুন, যে জ্ঞান অর্জিত হয়, তা কাজে লাগানোই স্বাভাবিকতা। আপনার একটা টার্গেট আছে, সেই টার্গেট অর্জন করার পথে যে জ্ঞান অর্জন করেছেন, তা বসিয়ে রাখবেন – এমন ভেবে থাকলে আমার বলার কিছু নেই। আর যদি মনে করে থাকেন যে, এআইয়ের এই বিষয়ের কারণে গবেষকরা তাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে অন্য বিষয় নিয়ে মেতে রয়েছেন বা তারা এতেই পরিপূর্ণ সন্তুষ্টিবোধ করছেন, তাহলে সেই মনে করা কতখানি যৌক্তিক, সেটা আপনি নিজেই বিচার করবেন। এই বিচার করার সময়ে আমার আগের বলা গবেষণার অর্থায়ন ও অ্যাপ্লিকেবিলিটি টেস্টের কথা বিবেচনায় আনলে আশা করি ভাল হবে।
আমিও দুঃখিত, আমি ভাবিনি, আপনি ভাবিয়েছেন। আপনি ভাল করে নিজের লেখা পড়ুন।
খুব স্পষ্ট করেই বলেছেন- নিউরাল নেটওয়ার্কে অর্থায়িত টাকা ইন্টেলিজেন্ট মেশিন বানানোর পরিবর্তে বিভ্রান্ত দিকে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপরেও যদি বলতে চান যে, আমি ভুল বুঝেছি, তাহলে বলবো, বাক্য গঠন এমনভাবে করবেন যেন ভুল বুঝার আশঙ্কা না থাকে।
ভালো থাকবেন।
রালফ হফম্যান, এবং ম্যাকগ্লাশান ইয়েল ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অফ সাইক্রিয়াট্রির প্রফেসর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষক নন, তাদের কাজের জন্য এমন একটি মডেল দরকার ছিল বিধায় তারা এইরূপ মডেলের কথা চিন্তা করেছেন। এই ছোট্ট একটা উদাহরণ এটা বোঝায় না, এইরকম মডেল আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের গবেষকেরা অহরহ তৈরী করছেন।
http://www.painstudy.com/NonDrugRemedies/Pain/p10.htm
এই লিঙ্কটিতে নিউরণের গতি সম্পর্কে কিছু ধারণা পাবেন। এখন আপনি প্রশ্ন করেছেন, বা বলতে চেয়েছেন, নিউরণের গতির সাথে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক কি? নিউরনের গতি কম , এর একটি উর্ধসীমা আছে, এসব বুদ্ধিমত্তায় কি প্রভাব ফেলে?
যখন নিউরনের গতি কম তখন নুরণের মাধ্যমে তথ্য সঞ্চালন থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের প্রসেসিং ইউনিটের সিদ্ধান্ত নেবার গতি কমে যায়, নিউরণের গতি বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিক ভাবেই মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত নেবার জন্য সময় পূর্বের চেয়ে কম লাগবে। নিউরনের গতির সাথে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য কতটা সময় লাগছেম তা সম্পর্কযুক্ত, আর এইকারণের নিউরণের গতি নিয়ে কথা বলেছি। মানব নিউরণের গতি কম হলেও এটি ইফেক্টিভলি দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে, খুব দ্রুত বুঝে উঠতে পারছে, কোন পথে তাকে যেতে হবে। একটা বহুল চর্বিত উদাহরন দেই, এই মুহূর্তে আমি রেফারেন্স লিঙ্কটা খুজে পাচ্ছিনা, তবুও দিচ্ছি। ডিপব্লু প্রতি সেকেন্ডে ২০০ টা দাবার চাল সম্পর্কে সিদ্দান্ত নিতে পারে, যেখানে গ্যারী কাস্পারভের মত সেরা দাবাড়ু প্রতিসেকেন্ডে সর্বোচ্চ আটটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারপরও কিভাবে কাসপারভ পারল? আরেকজন মহিলা গ্রান্ড মাস্টার সুসান পলগা এর দাবায় মাস্টার হওয়ার পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষকেরা আগ্রহী, তার ব্রেইন ইমেজ থেকেও বুঝতে চেষ্টা করেছে কোন অংশটাকে সে ইফেক্টিভলি ব্যাবহার করে, আমি নিজেও সেইসব ডকুমেন্ট খুজে চলছি, তবে এখনও বুঝার ওঠার মত জ্ঞান অর্জন করতে পারিনি, হালকা কিছু ধারণা ছাড়া।
আরো কিছু পয়েন্টে কিছু বলার ছিল, আলোচনা করা যেতে পারা যেতো। কিন্তু আপনার অতিমাত্রায় ডিফেন্সিভ টোনের জন্য অনেকক্ষেত্রেই আলোচনাটা আনতে পারলাম না। যুক্তিকে ছাপিয়ে ডিফেন্সিভ টোনটাই মুখ্য হয়ে গেছে। আপনার ডিফেন্সিভ টোনের বিপরীতে আমি যা বলতে পারি, আমি আসলে যখন কিছু লিখি, তা নিয়ে যথেষ্ট পরিমান পড়ালেখা করার চেষ্টা করি, সেইসব পড়ালেখা থেকেই আমার ধারনা গড়ে ওঠে। আমার পড়ার উদ্দেশ্য বা লেখার উদ্দেশ্য কখনই একটি স্ট্রিমকে দূরে ঠেলে দেয়া বা আরেকটি স্ট্রিমকে হাইলাইট করা থাকে না। এই লেখায় আমি বুঝতে এবং বলতে চেয়েছি, জৈবিক বুদ্ধিমত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে কেমন দেখায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ধরে নিন, আমি একজন আমজনতা, যে নিউরোসায়েন্স, এ আই সম্পর্কে কিছুই জানেনা, কিন্তু জানার চেষ্টা আছে। সেই আমজনতা যখন দেখতে চেষ্টা করবে, কেমন দেখায় এ আইকে, নির্মোহভাবে, তার দৃষ্টিতে এর একট রূপ ধরা পড়বে। আমার দৃষ্টি যে রূপটা ধরা পড়েছে, সেটাই আমি লিখেছি। সেটা আপনার দৃষ্টির চেয়ে ভিন্ন হতেই পারে। আপনাকে স্রেফ এটুকু অনুরোধ করব, কেবল আমার দৃষ্টিটাকে ডিফেন্ড করার জন্য নয়, বায়াসড ভিউ থেকে বের হয়ে আমার জায়গাটাইয় দাঁড়িয়ে একবার দেখার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আমি একটা মেসেজ দিতে চেষ্টা করেছি, দাবী করছি না, তা শতভাগ সঠিক, কিন্তু নিতান্ত ভুল নয়, সেই মেসেজটা ধরার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যেমন আপনার মেসেজটা আমি ধরার চেষ্টা করেছি। এভোলিউশনারী এলগরিদম সম্পর্কে আমি আগেই জানতাম, তবে আপনার কমেন্টের পড়েই আমি অনুভব করছি, এভোলিউশনারী এলগরিদম নিইয়ে আরেকটু গভীরে পড়ালেখা করা দরকার।
ভালো থাকবেন, লেখায় কেবল প্রশংসা পাবার জন্য কখনোই লিখতে আমার ভালো লাগে না, সমালোচনা, কাউন্টার লজিক থাকলে, লিখে তৃপ্তি পাওয়া যায়। আপনার সাথে তর্ক করে বেশ খানিকটা সেই তৃপ্তি পেয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
কোন্ গবেষক কোন্ শাখার গবেষক, সেটা কি বড় বিবেচ্য বিষয়? যদি কোন আইডিয়া, কোন মডেল, একটা শাখায় থাকে, তবে সেই মডেলকে ঐ শাখার বলাই ঠিক না? আর এ ধরনের উদাহরণতো আরো দেয়া হয়েছে আমার ও ধ্রুব বর্ণনের মন্তব্যে। ইভোলিউশনারি এলগরিদমের উইকি পেজ এর সূত্র ধরে আরো অনেক এলগরিদমের নাম জানত পারবেন। আমি নিজেও সব জানি না। আমি গবেষণায় পটু নই, কেবল কয়েকদিন ধরে একটা টপিকের উপর পড়াশুনা করছি – ক্যান্সার প্রেডিকশন। সেটা মূলত বায়োইনফরমেটিএক্সের অংশ হলেও, মেশিন লার্ণিং টেকনিকগুলোই আমার পড়াশুনার বিষয়। আর বায়ো-ইনফরমেটিক্স পুরো বিষয়টাই বৃহত্তরভাবে এআইয়ের অংশ (বলতে পারেন বায়োলজিরও অংশ, ডিপেন্ড করবে আপনার ভিউ অফ এঙ্গেলের উপর)। এখানে পুরো বিষয়টাই বায়োলজির সাথে সম্পর্কযুক্ত। যদিও বায়োলজি জিনিসটা আমি খুব ভালভাবে জানি না, আমি যেটা করি, আমার জানা বায়োলজিক্যাল জ্ঞানগুলো থেকে মোটিভেটেড হয়ে, সেটা মেশিন লার্ণিংয়ের সাপেক্ষে ব্যবহার করার চেষ্টা করি। উদাহরণ হিসেবে আমি নিতান্তই চুনোপুটি। তবে এটা বলার জন্য যথেষ্ট যে, এই চুনোপুটিরাও বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্ট দ্বারা মোটিভেটেড।
নিউরনের গতি সম্বন্ধে আপনার দেয়া লিংকে নিউরনের গতি দেয়া আছে – মিটার/সেকেন্ডে। কম্পিউটারের গতি সাধারণত মাপা হয় ক্লক ফ্রিকোয়েন্সিতে। তবে, গতিই যে একমাত্র বিষয় নয়, তাতো আগেই বলেছি। এর সাথে আছে মেমোরি, তা একসেস করা ইত্যাদি ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় কথা বলো, কেবল এইসব সুবিধা থাকলেই হবেনা, এগুলো ঠিকভাবে ব্যবহারও করতে হবে। আর এই ঠিক ব্যবহার করাটা এখনো গবেষণার পর্যায়েই আছে।
একটু হাসি পেয়ে গেল যে। যুক্তি যুক্তিই, তাই না? একে ডিফেন্সিভ/অফেন্সিভ আখ্যা দেয়ার হেতু অবোধ্য। আমি আমার মনোভাব ও কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার সুবাদে যা জানি তা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি মাত্র। আপনি নিশ্চিন্তে আপনার মতামত জানিয়ে যান, তা আপনার ভাষ্যমতে অফেন্সিভ হলেও, আমি কিছু মনে করবো না। আফটার অল, এটা একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর তর্ক।
আপনার পড়াশুনা করে মতামত দেয়াকে সম্মান জানাই। তবে সেই সাথে এটাও বলতে চাই, যেটা আমি বারবার বলতে চেয়েছি, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে বিচার করার জন্য আরেকটু বেশি পড়াশুনার দরকার ছিল, বিশেষতঃ আপনি যেখানে বলেন – যথেষ্ট পরিমাণ পড়ালেখা থেকে আপনার ধারণা গড়ে উঠে। আর নির্মোহ দৃষ্টির কথা বললেন তো, এই নির্মোহ দৃষ্টি পেতে হলে হকিন্স সাহেবের কথার পাশাপাশি এর বিরুদ্ধবাদীদের কথাগুলোও বিবেচনায় আনা উচিত নয় কি? আপনার লেখায় এর অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। এআইয়ের খুব বেসিক জিনিসগুলো সম্বন্ধে আপনার ধারণা খুব স্পষ্ট বলে মনে হয়নি। হকিন্স সাহেবের মতো বিজ্ঞজনেরাও যে ভুল করতে পারেন!
এতক্ষণ বলে আসছিলেন, আমি আপনার রিজনিং ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। “আমার ভিউ বায়াসড, আপনার মেসেজটা আমি ধরার চেষ্টা করিনি” – এমন কথা শুনার পর আমারও একইরকম মনে হচ্ছে। আমি আগেও বলার চেষ্টা করেছি, এখন স্পষ্ট করে বলছি – বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্টগুলো এআইয়ের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এআই অনেক উপকৃত হবে। তবে, আপনার ধারণা – এআইয়ের গবেষকরা ব্রেইন কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে চাননা, এটা যে ভুল সেটা বলার চেষ্টা করেছি বারবার।
তৃপ্তি পেয়েছেন জেনে ভাল লাগলো, তবে আমি তৃপ্তি পাওয়ার জন্য তর্ক করি না, তর্কের মাধ্যমে ভুল-ত্রুটি থেকে বের হয়ে শিখতে পারলে খুশি হই। আশা করি, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দোষত্রুটির খবর দেয়ার পাশাপাশি নিউরোসায়েন্সের অর্জন সম্বন্ধেও চিন্তার খোরাক জাগানোর মতো লেখা উপহার দিবেন। সেই লেখা থেকে আমার শাখায় এপ্লাই করার মতো কিছু পেলেতো খুবই খুশি হবো।
চমৎকার লেখা। লগইন করতে বাধ্য হলাম। পাঁচতারা।
কিছু প্রশ্ন আছে, বাসায় গিয়ে করব।
আপনি আপনার বিষয়ে বেশি বেশি লেখা দিন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কৈ, প্রশ্ন কই?
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
চমৎকার লেখা।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ধন্যবাদ আপনাকে
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
ডুপ্লি ঘেচাং[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
Robot এর ভিতর কি অনুভুতি দেয়া সম্ভব? এটা করতে পারলে তো তার অন্য কোনও এল্গরিদম লাগবেনা, সে নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কি বলেন?
ভাই, অনুভূতি দেয়া সম্ভব ভালো করেই, কিন্তু তাহলেই রোবট নিজ থেকেই সব কিছু করতে পারবে না। আপনি মনে হয় আবেগের কথা বলতে চাচ্ছিলেন। অনুভূতি আর আবেগ, ব্যাপারদুটি আলাদা। বিমূর্ত এই ব্যাপারগুলোর জন্য চেষ্টা যে চলে না তা নয়, তবে চেষ্টা সফল হবে কবে, জানিনা আমরা। বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারটা যথেষ্ট জটিল, সমাধানটাও তাই আসতে যথেষ্ট সময় লাগবে বলেই আমার ধারনা, বাকিটা যারা গবেষণা করছেন, তারা বলতে পারবেন।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
অনেক দিন আগে কোথাও একটা পরীক্ষার কথা পড়েছিলাম। পরীক্ষাটি ছিল এরকম, একটা মা ইদুরকে বড় একটা খাঁচায় আবদ্ধ করে খাঁচাটির মাঝখানে একটা বিদ্যুতায়িত তাঁর দিয়ে খাচাঁটিকে দুইটা অংশে ভাগ করা হয়। অতঃপর, খাঁচাটির একপাশে ইদুরতিকে রেখে, অন্য পাশে খাবার রেখে পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা যায়, ইঁদুরটি দুই একবার শক খাওয়ার পর আবারো সেখানে যেতে সাহশ করেনা। কিন্তু যদি তাঁর বাচ্চাগুলো কে অন্য পাশে রেখে দেয়া হয় তবে সে শককে একরকম অগ্রাহ্য করে।
এইরকম অনুভূতি কি কোনও রোবটকে দিতে পারবেন যেটা তাকে নিজে থেকেই একটা এলগোরিদম তৈরি করতে শেখাবে? বুঝাতে পারলাম?
ভাই আপনি যে পরীক্ষাটার কথা বললেন, সেটি একটা জটিল মানসিক পরীক্ষা। আমি যা বলতে পারি, এইধরণের ঘটনার কারন বুঝে ওথার জন্য চেষ্টা চলছে, কিন্তু এখনও পরিষ্কার ভাবে বুঝতে পারা যায়নি। আবেগের ব্যাপারটি ঘটে স্নায়ুতন্ত্রে নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরনের ফলে, এর পরিমাণ বেড়ে গেলে বা কমে গেলে প্রাণীর আচরণে লক্ষনীয় পর্যায়ের পরিবর্তন ঘটে যায়।
রোবটে এই ধরণের আবেগ আনা সম্ভব কিনা, আমার জানা নেই।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
লেখায় পাঁচতারা।
ধন্যবাদ আপনাকে
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
আমি আসলেই এই বিষয়ে কিছুই জানি না। সব মাথার উপর দিয়ে চলে গেল।
কিন্তু ভালো লাগল লেখাটি।
কিছু জিনিস প্রথমে মাথার উপর দিয়ে গেলেও দেখবেন একসময় ঠিকই মাথার ভিতর দিয়েই যাচ্ছে। আগ্রহ জেগেছে কিনা তাই কন। নতুন কিছু জানাই তো জীবনের আসল মজা, মিস করলে পুরাই মিস করে যাবেন।
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
অসম্ভব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না
এআই নিয়ে স্টিফেন হকিং-এর সাম্প্রতিক মন্তব্য সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে আগ্রহ বোধ করছি।
http://www.bbc.com/news/technology-30290540
http://www.bbc.com/news/technology-30326384
****************************************
নতুন মন্তব্য করুন