সকালে নাস্তা সেরে বের হয়েই দেখি একজন মধ্য বয়স্ক লোক বারান্দায় বসে পাতার বিড়ি টানতে টানতে সুপ্তির মা-বাবার সাথে আলাপ করছে। সাথে আরেকজন। সোহেল বিড়ি টানেওয়ালার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল, এটাই সুপ্তির মামা তুদিন চিসিম। মামার বাড়ি গারো হিলসে। সকাল বেলায় সীমান্ত পাড়ি দিয়েই বাংলাদেশে বোনের বাড়িতে চলে এসেছেন। মামার সাথের জন আসামের শিলচরের। তুদিন মামাদের গ্রামেরই। ৪৭ এর দেশবিভাজন চেংগ্নী গ্রামকে দ্বিখণ্ডিত করলেও মান্দিদের আত্মীয়তার বন্ধনে পুরোপুরি ফাটল ধরাতে পারেনি এখনো পর্যন্ত। মান্দিদের মাহারী প্রথার উৎপত্তি নিয়ে মামা নানান কথা বলছেন। আগ্রহভরে শুনছি পরাগ আর আমি। তুদিন মামা জানালেন বাংলাদেশের ন্যায় ভারতেও সংস্রেকদের সংখ্যা এখন হাতেগোনা। গারো হিলসের নিশান গ্রামে এখন বেশকিছু সংস্রেক ধর্মের অনুসারী মান্দিদের বসবাস রয়েছে। মামার সাথে আলাপ করতে করতে গারো হিলসে ওনার বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছাটা মাথায় বেশ বিগাড় তুলে দিল। কিন্তু পরাগ বা আমার কারোরইতো পাসপোর্ট নেই। তারপরও সোহলের মাধ্যমে মামার কানে আমার ইচ্ছের কথাটা তুলতেই মামা পকেট থেকে আরেকটা পাতার বিড়ি ধরানোর মতই সহজ-স্বাভাবিক ভাবে রাজি হয়ে গেলেন। মুখ থেকে বিএসএফের কথা তুলতেই তিনি সেটাকে গুরুত্বই দিতে চাইলেন না। অবশ্য চাইবেনই বা কেন? উনি সেখানকার মান্দিদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় একজন। বিএসএফ ক্যাম্পে উনার বেশ জানাশোনা। সুপ্তির মা-বাবা-সুপ্তিসহ অন্যরাও জানালেন তুদিন মামার সাথে গেলে ভয়ের কিছু নেই। সবার সমর্থনে আমার সাহস দ্বিগুন হলেও পরাগ যেন একটু মিইয়ে গেল। বলল-‘জুয়েল ভাই, আমাদের এভাবে যাওয়াটা ঠিক হবে না, ভিনদেশে এভাবে ঢুকতে গেলে যদি কোনো রকম বিপদে পড়ি?’ কথা সত্য, কিন্তু নো ম্যানস ল্যান্ড থেকে উত্তরের পাহাড়রাজির যে উদাত্ত আহ্বান সেটাকে পাশ কাটাই কীভাবে? তাছাড়া ‘মামা-ভাইগ্না যেখানে আপদ নাই সেখানে’ কথাটাকেও ঐ মুহুর্তে বেশ যুতসই লাগছিল, মামাতো আর যেমন-তেমন নন, তো ভয়ের আর কি! যাই হোক অনেক বলে কয়ে পরাগকে রাজি করানো গেল। ওরে সাহস দিলাম-‘আরে মিয়া কিছু অইলেতো আমার অইব, কারণ আমি বাঙাল। তুমারেতো কোনো কিছুই কইব না’। দুপুর বারোটার দিকে নো ম্যানস ল্যান্ডের দিকে হাটতে লাগলাম। মামা, মামার সঙ্গী, আমি, পরাগ, সোহেলসহ তুরার আরেকটি ছেলে-ছয়জনের এই বহর নিয়ে আমরা এগুতে লাগলাম গারো পাহাড়ের টানে। কাটা তারের বেড়া দৃষ্টির যত কাছাকাছি হচ্ছে বুকের পেলপিটিশনও তত বাড়ছিল। ভয় হচ্ছিল, যদি কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিএসএফ ফটাফট গুলি মাইরা দেয়! চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে তুদিন মামার নেতৃত্বে একটা ছড়া পার হয়ে ডান দিকে বাঁক নিতেই চোখে পড়ল বিএসএফ’র চৌকি। সেদিক তাকিয়ে মামা জানাল- নেই, লাঞ্চে গেছে। জানে পানি পেলাম। ক্যাম্পের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেটা এখান থেকে এতটাই দূরে যে ওরা যদি টেরও পায় আমরা নিরাপদে ফিরে যেতে পারব। চৌকি থেকে দেড়শ গজের মত দূরেই কাটাতারের বেড়া দেয়া। বিশাল লোহার গেটটা হা করে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। যাক, অবশেষে ছয়ফুটেই নির্বিগ্ন ভারতে ঢুকে পড়া গেল। কাটাতারের বেড়া ঘেষেই ভারত সরকার পিচঢালা রাস্তা তৈরি করেছে-কয়েকবছর আগে এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদও বেশ ছাপা হয়েছিল। সেই পিচঢালা রাস্তা ধরেই আমরা আরো পূর্বদিকে চড়াই পার হলাম। স্থানীয় মান্দি যুবক-কিশোরেরা আমাদের দিকে উৎসাহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে। খাড়া ঢাল বেয়ে নিচে নামার পর আরো কিছু পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌছে গেলাম মামার বাড়িতে। বেশ কয়েকজন পান্থি (যুবক) কেরাম খেলছে। মামাসহ আমাদের দেখে ওরা ওদের দখলে রাখা চেয়ার গুলা ছেড়ে দিল। আমরা বসেছি বারান্দায়-উত্তর দিকে মুখ করে। মামার বাড়িটা তিনদিক থেকে পাহাড় ঘেরা। উত্তরের বিশাল পাহাড়ের একেবারে পাদদেশে বসে হা করে তাকিয়ে আমি আর পরাগ। উহ! এমন সুন্দর জায়গাও আছে দুনিয়াতে। তুদিন মামার বড় মেয়েটা রান্না ঘরে কী যেন কাজ করছিল কোলে বাচ্চা নিয়ে। রান্না ঘর থেকেই আড় চোখে আমাদের দেখছে। মামী সামনে এসে বসেছেন। পরাগের সাথে বাৎচিত চলছে। মামা চালালেন আমার সাথে বাংলাতেই। মুগ্ধ বিষ্ময়ে আমাদের চোখ ঘুরছে চারদিকে। কিছুক্ষণ পর চা পান শেষে সোহেল আমাদের নিয়ে পাহাড়ের দিকে নিয়ে হাঁটা দিল। যাওয়ার আগে মামাকে বলে গেলাম যাতে বাড়িতেই থাকেন, সন্ধ্যার আগেই ফিরব, বর্ডার পার করে দিতে হবে। আমরা তিনজন চেংগ্নী গাঙের উজান ধরে হাটতে হাটতে পাহাড়ের একেবারে পাদদেশে চলে এলাম। একটা ব্যাপ্টিস্ট চার্চ তালা বদ্ধ পরে আছে। বাংলাদেশ থেকে আনা স্টার সিগারেট টানতে টানতে পাহাড়ে উঠতে লাগলাম। হাপাতে হাপাতে ঘন্টা খানেক পাহাড় ভাঙার পর একটামাত্র বাড়ি পাওয়া গেল। প্রায় ১০০০ ফুট উচ্চতায় পূর্বমুখী একটা মাচাবাঁধা ঘর আর তার ঠিক দক্ষিণেই একটা বড় রান্না ঘর। এত উচ্চতায় মান্দি বাড়ি পেয়ে পরাগ আর আমি বেশ খুশী হয়ে উঠলাম। মনে বাসনা জাগলো বাড়ির লোকজনদের সাথে ভাব জমাবার। কিন্তু উপায় কি! আব্দুস ছাত্তারের বইয়ে মান্দিদের সম্পর্কে জেনেছিলাম বাড়িতে কোনো অতিথি গেলে মান্দিরা চু দিয়ে আপ্যায়িত করে, সেই ধারণাকে পূঁজি করে প্রথম যখন মান্দি এলাকাতে প্রবেশ করেছিলাম আমাকে বেশ হতাশই হতে হয়েছিল। যাই হোক,সোহেলকে জানালাম পানি খেতে হবে। সোহেল নিয়ে চলল বাড়ির দিকে। বাড়ির সামনা-সামনি পৌছতেই বেশ কিছু তরুনীর ঔৎসুক চোখ আমাদের দিকে তাকিয়ে। দেখলাম মূলঘরে অনেক লোক, প্রভু যীশুর প্রার্থণা চলছে। আমরা রান্নাঘরে গিয়ে এক তরুনীর কাছে পানি চাইতেই সে জগভর্তি পানি আর গ্লাস নিয়ে এলো। আমাদের পানি পান শেষ না হতেই দেখি মূলঘর থেকে এক যুবক বেরিয়ে এসেছেন। আমাদের আগমনের উদ্দেশ্য জানতে চাইলে সোহেল আচিকে তা জানিয়ে দিলে সে আমাদেরকে প্রার্থণায় শরীক হওয়ার আমন্ত্রণ জানালো। আমরা বিনয়ের সাথে প্রত্যাখান করে প্রধান ঘরের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই ভেতর থেকে প্রার্থণা পরিচালনা কারী মান্দি মহিলা বলল-‘যীশুনা রাসং’। আমরাও স্বমস্বরে বলে উঠলাম-’যীশুনা রাসং’। আবারো আমাদের উপরে উঠার পালা। তবে এবারে পাহাড় বেশ খাড়া। পাহাড় কেটে যে পথ বানানো হয়েছে তা সোহেলের পিছু পিছু অনুসরণ করছি খুব সাবধানে। কেননা একবার পা ফসকালেই জান বাবাজির কেল্লাফতে, সাধের শরীর খানারও গতি কী হবে তা মালুম করার কোন সুযোগই থাকবে না। আধাঘন্টা পাহাড় ডিঙাবার পর একটা খাঁজে হেলান দিয়ে প্যাকেটের শেষ দুটো সিগারেট তিনজনে পালা করে টানলাম। তুদিন মামার বাড়িটা এখান থেকে আবছা দেখা যায়। বাংলাদেশের সিমসাং নদীর রূপালী জলরেখাও বেশ স্পষ্ট। যে পরাগ বর্ডার পারই হতে চাইছিল সে কিনা কাজু বাদামের গাছের দিকে মুখ করে বলে আর ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না! হঠাৎ সোহেল জানাল-’বস, আপনেরা একটু খাড়ান আমি আইতাছি’। ‘কে কই যাইবা?’ জানাল এক নম্বর করে শরীর হালকা করবে। যাইহোক ও ফিরে এলে আবারো মিনিট তিরিশেক সময় উপরে উঠলাম। সোহেল জানালো আমরা অর্ধেকও উঠিনি। এদিকে আমি সময়ের দিকে বেশ খেয়াল রাখছিলাম। কেননা সন্ধ্যার আগে-ভাগেই যে করেই হোক বর্ডার পার হতে হবে। তাই এবার ফিরে যাবার জন্য ওদের রাজি করালাম। যদিও সোহেলের ইচ্ছে ছিল আরো আধা ঘন্টা হাটিয়ে পিডব্লিউর রাস্তা অবধি নিয়ে যাবে। যাইহোক অর্ধেকেরও কম সময়ের মধ্যে আমরা সেই বাড়িটার কাছাকাছি কমলা বাগানে চলে এলাম। প্রার্থণা তখনো চলছে। ভাবছি প্রার্থণা শেষ হলে বাড়ির লোকজনের সাথে কুশল বিনিময় করব। তাই বাইরের কমলা বাগানেই বসে আছি। কিছুক্ষণ পর আমরা হাটতে হাটতে একটা জায়গায় চলে এলাম। পাহাড়ের একাবারে খাড়া পাড়ে খানিক পাথর কেটে দুইজনে চলার মতো রাস্তা, এই রাস্তা ধরে সামনে এগুতেই দেখি পাহাড়টা একটা চার-পাঁচ ফুট প্রশস্ত মত জায়গা, তার তিনদিকেই খাড়া পাহাড়। একদিকের খোলা। বাম পাশের খাড়া একটা পাহাড়ের ঝরণা থেকে একটি এবং ডান পাশে খোলা জায়গার প্রায় ৫০/৬০ গজ দূরের একটা ঝরণা থেকে দুইটা চিদারি (মুলি বাঁশ অর্ধেক করে ফেড়ে তা দিয়ে পাহাড়ি ঝরণার পানি কাঙ্খিত জায়গায় পৌছানোর ব্যবস্থা) এই প্রশস্ত জায়গাটাতে শেষ হয়েছে। বুঝতে বাকি রইল না এটা এই উচু পাহাড়ের এই পরিবারটির পানির যোগানকেন্দ্র। এরকম নান্দনিক-প্রাকৃতিক বাথরুম এর আগে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। প্রাণভরে প্রকৃতির নির্যাস পান করে আমরা ঐ বাড়ির সামনে আসতেই দেখি প্রার্থণা শেষ। সেই যুবকটিসহ কয়েকজন মান্দি মহিলা আমাদেরকে ঘরে প্রবেশ করার অনুরোধ জানালে আমরা সেই মাচাং ঘরে গিয়ে বসলাম। মহিলাদের অনেকেই সোহেলকে চেনে বলে মনে হল। গৃহকর্তার নাম কুনেন সাংমা। আশপাশের দুই-তিন পাহাড়ের অনেক যুবতী-মহিলারা এখানে প্রার্থণায় শরীক ছিলেন। সবার সামনে সোহেল আমাদের পরিচয় করিয়ে দিল। বিভিন্ন গল্প চলছে তার মাঝখানেই এক তরুনী সবাইকে চা দিয়ে গেল। চা আর টোস্ট আর নানান গল্পে ভালো সময় পার করে প্রাথর্ণাকারী নেতৃত্বে আমরা আবার পাহাড়ের নিচে নামতে শুরু করলাম। প্রার্থণাকারী মহিলা পরাগ আর আমাকে দুটি কমলা উপহার দিলেন। সেই কমলা খেতে খেতেই আমরা তুদিন মামার ওখানে পৌছে গেলাম। ওদিকে সূর্য হেলে পড়ায় তুদিন মামাকে নিয়ে আমরা বর্ডার পার হওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। পিচঢালা রাস্তায় উঠে সেখানে মামাকে রেখে আমরা তিনজন আরেকটি পাহাড়ে উঠলাম এই গ্রামের একমাত্র দোকানের উদ্দেশ্যে। দোকান বলতে একটা ঘরের অর্ধেকটাতে থাকার ব্যবস্থা আর অর্ধেকটাতে কিছু সদায়পাতি। আসার সময় সোহেল ৫০০ রুপির একটা নোট নিয়ে এসেছিল। ওঠা দিয়েই আমরা পাতার বিড়ি কিনলাম বেশ কয়েক প্যাক-প্রতি প্যাক ৫ রুপি, এক প্যাক উইলস সিগারেট। সোহেল বাড়ির জন্য চা-চিনি-বিস্কুট কিনে নিল এখান থেকেই। দোকানের মালিক এক তরুনী, নাম থুসিনা হাউই। সোহেলদের কেমন যেন আত্মীয় হয়। থুসিনার বড় বোন আমাদের থাবলচু (পাহাড়ি আলু) সেদ্ধ আর চা দিয়ে আপ্যায়িত করল। তুসিনার গুমী (দুলাভাই) কুমলেং আসামের মানুষ, তাই বাংলাতেই আড্ডা মন্দ জমল না। আড্ডার এক ফাঁকে আসাম আর চেংগ্নীর দূরত্ব কত জানতে চাইলে মুচকি হেসে কুমলেং জানাল-‘আপনার দিদি আসামে গিয়েছিল এক বিয়েতে, সেখান থেকেই আমাদের প্রেম এবং এখানে জামাই চলে আসা।‘ চা-থাবলচু আর আড্ডা শেষ করতেই দেখি তুদিন মামা হাজির। উনি আমাদেরকে কুমলেং এর হাতে তুলে দিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। মামার কাণ্ড দেখে আমারতো ভয়ে অবস্থা খারাপ। যার ভরসায় ছয়ফুটে বর্ডার পাড়ি দিলাম সেই কিনা আমাদের এভাবে আরেকজনের হাতে তুলে দিয়ে চলে গেল! কাউকে কিছু বুঝতে দিলাম না। তীব্র শংকা নিয়ে হাটতে হাটতে লোহার গেট দিয়ে প্রবেশ করে আরো কিছুদূর যেতেই চোখে পড়ল এক বিএসএফ’র। ওরে বাবা, এ দেখি আমাদের আমাদের দিকেই আসছে! এক কলস পানি একটানে শেষ করার মত দশা আমার। একেবারে মুখোমুখি হতেই আমাদের থামিয়ে দেওয়া হল। বিএসএফ সদস্য তার মোটা গোঁফের ফাঁক দিয়ে আমাদের প্রশ্ন করল- আপলোগ কাহাসে আইয়ে? কাহাসে যাইয়ে? সোহেল জোড়াতালি হিন্দিতে জানাল, আমরা তুদিন মামার বাড়ি গিয়েছিলাম; আমাদের বাড়ি ওপারের(বাংলাদেশের) চেংগ্নী গ্রামেই। এরপর বিএসএফ সদস্যটি পরাগের নাম আর ঠিকানা জিজ্ঞস করলে পরাগ কেবল নামটি বলল, চেংগ্নীর ঠিকানাটা দিল সোহেলই। এবার আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে নাম জিজ্ঞেস করলে নাম বলতেই বিএসএফ পাল্টা প্রশ্ন করল- ‘ও ডাক্তার জুয়েল? দাওয়াইকে লিয়ে যাইয়্যে?’ আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সোহেল বলে বসল- ‘হু, ডাক্তার জুয়েল, দাওয়াইক্যা লিয়্যে যাইয়্যে’ । বিএসএফটি এবার বেশ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পূর্বক জানাল আমার নাম নাকি তাদের ক্যাম্পের ডাইরিতে লেখা আছে। এরপর বিএসএফ সদস্যটি আমাদের বর্ডার পার হওয়ার অনুমতি দিয়ে উনি উনার পথ ধরলেন। আমি আর পরাগ দু’জনেই বেশ অবাক, কিছুই বুঝতে পারছি না। কিছুদূর এগিয়ে কুমলেংকে বিদায় জানালাম। সোহেল জানাল চেংগ্নী বাজারে জুয়েল নামের এক গ্রাম্য ডাক্তার আছে, ঐ বেটা নাকি মাঝে মাঝে ক্যাম্পে গিয়ে ইনজেকশন-টিনজেকশন দিয়ে আসে; বিএসএফটা আমাকে সেই জুয়েলই মনে করেছে। ঐ সময় একটি কথা না বলার জন্য কুমলেং এর উপর বেজায় ক্ষুদ্ধ হলেও এখন বেশ ভালোই লাগছে। বিপদ পার হওয়া গেছে বলে। নিজেকে বেশ হিরো হিরো লাগছে। বেশ ভাব নিয়ে ওদের দু’জনকে বললাম- ‘বেটারা এই জুয়েল ডাক্তারের জন্যই আজকে বেঁচে গেলে!’ বাংলাদেশ সীমান্তে চলে আসার পরও সেই ভাবটা আরো কয়েক ঘন্টা ছিল বৈকি!
মন্তব্য
তুরা পর্যন্ত যেতে পারেননি তাহলে?
একবার ভিসা লাগিয়ে ঘুরে আসুন খাসিয়া-জৈন্তা আর গারো হিলস । মেঘালয়ের মতো এতো মায়াবী জায়গা আর হয়না ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
না, তুরা পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। মেঘালয়ের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ে কয়েকদিন কাটিয়েছিলাম ২০০০সালের শেষ দিকে।
পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া এভাবে যাওয়াটা সমর্থন করতে পারলাম না, সাময়িক উত্তেজনায় বাস্তবতা ভুলে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
যা হোক পুরো সিরিজটা পড়লাম, আপনার লেখা অসাধারন লেগেছে। নিয়মিত লিখবেন আশা করি, আজ মধুপুর নিয়ে পোস্টটা না দিলে অনেকদিন অজানা থেকে যেতেন আমার কাছে।
ভালো কথা, আমার বাড়ী রসুলপুর। বাড়ীর ৩০০ গজ পেছনেই ইকো পার্কের দেয়াল।
...........................
Every Picture Tells a Story
ঠিকই বলেছেন এভাবে যাওয়াটা হয়ত ঠিক হয়নি। তবে বিপদের তেমন সম্ভবনা নেই এমনটা নিশ্চিত হওয়ার পরই পাড়ি দিয়েছিলাম।
আমার লেখা অসাধারণ লেগেছে! কি যে বলেন। আমি আসলে লেখক নই। এখানে আসি বিভিন্ন লেখকদের অসাধারণ সব লেখাগুলো পড়তে। তবে মাঝে মাঝে নিজের কিছু কিছু অনুভূতি অতিমাত্রায় কিলবিল করলে দু'চার কথা টাইপ করে ফেলি আরকি!
ও! আপনার বাড়ি রসুলপুর! তাহলেতো ঐখানকার অবস্থা সম্পর্কে আপনি বেশ ওয়াকিবহাল হওয়ার কথা। আশা করছি ঐখানকার আদিবাসীদের নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারব কোনো সময়।
নতুন মন্তব্য করুন