নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণে একটা অধ্যায় ছিলো 'একই শব্দের বিভিন্নার্থে প্রয়োগ' নামে। যেমন, 'চাল' শব্দটির কথা ধরা যাক। যখন শব্দটির অর্থ খাদ্য শস্য তখন কর্তার কপালের ভাঁজের সংখ্যাবৃদ্ধি, যখন সেটি ফন্দি বোঝায় তখন দুরাভিসন্ধির পূর্বাভাষ। আভিধানিক ও ব্যবহারিক অর্থের কারণে শব্দের এই বিভিন্ন প্রয়োগ যে আমাদের জন্য যথেষ্ঠ বিরক্তির এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির কারক হতে পারে তা জানতেই এই 'শীবের গীতের' সূচনা।
বাংলাভাষায় বহুত প্রচলিত একটি শব্দ হলো মালামাল বা সংক্ষেপে মাল যার আভিধানিক অর্থ জিনিসপত্র বিশেষ। কিন্তু ব্যবহারিক অর্থে এর বিস্তৃতি আরো ব্যাপক। এই শব্দটির বহুবিধ প্রয়োগের মধ্যে একটি সম্পর্কে ধারণা কৈশোর পেরুবার আগেই জানা হয়ে যায়- যখন পাড়ার মোড়ে বড় ভাইদের কথাবার্তার অফিল্টারিত অংশ কর্ণকুহরে আঘাত করে- 'দেখ দেখ, জটিল মাল'। অতপর ক্লাশে গিয়ে সবার সাথে যখন চুলচেরা বিশ্লেষণ সম্পন্ন হয় ততক্ষণে বয়েসের তুলনায় অভিজ্ঞ মানে ইচঁড়ে পাকাদের অভিধান থেকে এই শব্দের অর্থের সাথে সাথে আরো অনেক শব্দেরই জটিল-কুটিল সব অর্থই জানা হয়ে যায়।
আমার এক বন্ধুর 'মাল' শব্দটির আরেকটি অর্থ আবিষ্কার করতে ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ার পর্যন্ত লেগেছিলো। তার ভাষায়, একদিন সকালে তার বিছানা ভেজা ভেজা মনে হলে সে চিৎকার করে আম্মাকে এনে হাজির করে, অতপর ভেজা স্থান দেখায়। তার আম্মা কিছু না বলে অচিরেই সে স্থান ত্যাগ করে আর তারই ছোটভাই অদূরে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি করে হাসে। এই গল্প শোনার পরে সেদিন সবাই মিলে বেচারার যে কি অবস্থা করেছিলো বলাই বাহুল্য।
যাক- এই তো গেল ব্যবহারিক কিছু প্রয়োগ। কম্পিউটার সায়েন্সের একটা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের নাম হলো অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজ। সেখানে গুন করার জন্য যে কীওয়ার্ড (অপকোড) লিখতে হয় সেটা হলো এমইউএল বা মাল। তো এই 'মাল' অপারেশন পড়াতে যেয়ে (প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমি একটা ইউনিতে অ্যাসেম্বলি পড়াই এবং এই কোর্সে মেয়ের সংখ্যা বারো ) আমি আগে থেকেই একটু সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম। তার কারণটা আগে একটু বর্ণনা করে নিই।
আমার এক বন্ধু একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির লেকচারার। সে যখন এই কোর্সটা নিচ্ছিলো তখন যে লেকচার দিচ্ছিলো তার কিছু অংশ পাঠক সমীপে তুলে ধরি। "এখন তোমাদের যে টপিকটা পড়াবো সেটা হচ্ছে মাল। মাল খুবই ইর্ম্পট্যান্ট। মালটা ভালো করে পড়তে হবে, পরীক্ষায় আসতে পারে। যদিও এটার আরেকটা ভার্সন আছে আইমাল কিন্তু মালটাই আসল . . . . ." প্রথমে বন্ধু বুঝতে না পারলেও একটু পরে বুঝতে পারছিলো ক্লাশে শিক্ষার্থীরা কি কষ্ট করে হাসি আটকে রেখেছিলো। সেদিন তাই সেই বিজ্ঞানশিক্ষার প্রজনন চ্যাপ্টারের মতো বাকিটা নিজেরা পড়ে নিও বলেই ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি বলে পালালো।
তাই আমি বন্ধুর সেই করুণ অবস্থা সম্যক স্মরণপূর্বক লেকচারের আদি হতে অন্ত পর্যন্ত সংক্ষিপ্তকরণ বাদ দিয়ে মালকে এম.ইউ.এল বলতে বলতে গলা শুকিয়ে ফেললাম। লেকচার শেষে বরাবরের মতো জিজ্ঞেস করলাম, এটা খুব ইর্ম্পট্যান্ট। ভালো করে পড়বে, এক্সারসাইজগুলো সলভ করবে। আর .... অ্যানি কোয়েশ্চন?
ক্লাশের সবচেয়ে অ্যাটেনটিভ মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো, স্যার, মাল কি আসবে?
পুরো ১০০০ ভোল্টের শক খাওয়ার মতো অবস্থা হলো, একটু কেশে বললাম আসতেও পারে নাও আসতে পারে। বলেই ক্লাশের বাইরে পা বাড়ালাম।
ততক্ষণে বেচারীর তার সহপাঠীদের তুমুল বাক্য-তোপের মুখে বড়ই করুণ অবস্থা।
মন্তব্য
হইছে।
যদিও এই কারণেই দুষ্ট বালকদের পোষ্ট পড়ি না, নানা রকম স্মৃতি উগড়াইয়া দেয়।
এনিওয়ে, তা, ফাইন্যালি, মাল কি সত্যিই এসেছিলো?
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
হা হা হা, তা আর বলতে ! ! !
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
আপনার বলা উচিত ছিলো,
১. মাল আসুক বা না আসুক, তারজন্যে তোমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
২. তোমরা কী চাও, মাল এলে ভালো হয়?
৩. মাল আসবে কি না, নির্ভর করে তোমাদের আচরণের ওপর।
৪. ...
হাঁটুপানির জলদস্যু
ঠিকাছে, নেক্সট সেমিষ্টারে আপনার অপশনগুলো বিবেচনায় রাখলাম। হ্যাটস অফ. . .
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
এই মাল আমার ও এই সেমিস্টারে ছিলো। বড় মজা হত ক্লাসে এটা নিয়ে।
হিমু ভাইকে বিপ্লব।
-------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনিও তাহলে মাল-এর খপ্পরে পড়েছেন বোঝা যাচ্ছে।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
হু। তবে আমাদের শিক্ষক মহোদয় খুবই সজ্জন ব্যক্তি হওয়াতে এবং আমরা তাকে বিশেষ পছন্দ করাতে এটা নিয়ে তেমন আগাই নাই। আর বুঝেনই তো, এখন আর সেই স্কুল কলেজের দিন নাই, এইসব ব্যাপার নিয়ে সেই আগের মত হাসাহাসিও ক্লাসে করা যায় না
-------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
পুলাপাইন দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাতিছে।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ঘোর কলি . . . .
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
নতুন মন্তব্য করুন