১.
_______________________________
শুদ্ধ পারিজাত
_______________________________
তোমার জন্য একটা জলপ্রপাত এনেছি।
না, মোহনীয় জলতরঙ্গে হৃদয়ে পুলক জাগাবার
জন্য নয়, বিস্ময়ে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকার জন্যও নয়।
এনেছি তোমাকে শুদ্ধ করতে, তোমার ঘুণে ধরা জরতী
বিশ্বাসগুলোকে আর কলঙ্কিত ইতিহাসের প্রকোষ্ঠগুলোকে
প্রভাতের শুভ্র সাগরের ফেনিল জলের মতো
পরিশ্রুত করতে, সত্যাগ্রাহী করতে তোমার অন্তরকে।
আজ তোমাকে তুমুল ভেজাবো বলে
নায়াগ্রাকে আমার সাথে করে নিয়ে এসেছি।
ভিজতে ভিজতে, ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে
তোমার তুমিতে নামতে নামতে যখন-
সমর্পণের যূপকাষ্ঠে নিজেকে আত্মাহুতি দেবে,
বিবেকের দংশনে জর্জরিত হবে,অঙ্গার হবে
অনুশোচনার অনলে- অবুঝ শিশুর মতো
দু'চোখ মেলে তাকাবে, খুজঁবে পরম নির্ভরতা-
নিশ্চিত জেনো, আমি এসে ধরবো তোমার দুটি হাত।
বুঝে নিও- তুমি তখন নির্মল, বিশুদ্ধ পারিজাত।
২.
_________________________________
আমারে ছাড়ায়ে আমার ছায়া
_________________________________
আমি একটা ছায়া বয়ে চলেছি নিজের সাথে সর্বদা।
কেউ বলে- ওটা তোমার প্রতিকৃতি, আবার-
কেউ বলে- ওটা তোমার অধরা অবয়ব।
মাঝে মাঝে সেই ছায়াটাই আমাকে ছাপিয়ে উঠে
ক্রমে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে আর
আমার অস্তিত্বকে দাঁড় করিয়ে দেয় এক অজানা
প্রশ্নের সামনে। আমার সম্মোহনের পৃথিবীর রঙ্গিন
কাঁচগুলো ঝনঝন শব্দে ভাঙ্গতে থাকে,ক্ষয়ে যাওয়া
মূল্যবোধের শেষ তলানিটুকু সাপের মতো হঠাৎ মাথা
তুলে দাঁড়ায়। অবিরাম ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে, নিজের ভেতর
নামতে নামতে আমি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকি,
আর শেষে বিন্দুতে পৌঁছালে সে প্রশ্ন করে-
এবার বুঝতে পেরেছো অর্বাচীন মোহে কতটা
অন্ধ হয়ে ছিলে এতোদিন? বুঝতে পেরেছো তোমার
জরতী ভাবনারা কতো তুচ্ছ মহাকালের খতিয়ানে?
আমি নির্বাক- ভাবনায় শুধু একটি কথাই ঘুরপাক খায়-
সবার ছায়াগুলি যদি ঠিক এভাবে প্রশ্ন করতে জানতো !!!
৩.
__________________________________
ফিরে আসবেই কালের ঈগল অভ্রভেদী আলোক ডানার বিস্তারে
__________________________________
কতদূরে যাবে?
মৃত্যু মানেই কি
চিরতরে চলে যাওয়া?
না, তা নয়। বরং-
তার চেয়ে বেশি ফিরে আসা বার বার।
তুমিই তো গেয়েছিলে ইলেকট্রার গান,
নিহত জনক এ্যাগামেননকে শুনিয়েছিলে
আগামীর বিশ্বাস, হাওয়ার নীলিমায়
জ্বলন্ত মেঘের মতো উড়িয়েছিলে আসাদের শার্ট,
মৌলবাদীর শিশ্নসমাবেশে জ্বালিয়েছিলে
দ্রোহের দীপক রাগ- সেই রাগিনি আজ
শত বীণার ঝংকার হয়ে রাজপথ পেরিয়ে
ব্যারিকেড ডিঙিয়ে পৌঁছে গেছে বস্তিবাসী ফুল্লরার ঘুপচি-ঘরে।
অগনন হৃদয়ের অবারিত প্রেম শুধু তোমারই জন্যে,
চিরভাস্বর তুমি মানসপটে চিরকাল।
হে কালজয়ী কবি,
কালের ঈগল-
আমি নিশ্চিত, তুমি ফিরে আসবেই-
অভ্রভেদী আলোকডানার বিস্তারে
আমাদের স্মরণে বার বার,
চেতনার জ্বলজ্বলে রাঙা পোস্টার হয়ে।
** প্রিয় কবি শামসুর রাহমানের স্মরণে।
মন্তব্য
পড়েছিলাম তখন ।
আবারো পড়লাম ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
প্রথম আর শেষ কবিতাদুটো আগে পড়া ছিলো।
ভালো লাগলো আবার পড়তে...
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
হ্যাঁ। তবুও ধন্যবাদ আবার পড়ার জন্য।
ডিসক্লেইমার : শেষের কবিতাটি বাংলালাইভ আই পত্রিকাতে প্রকাশিত।
লিংক - http://banglalive.com/ipatrikaa/sanglap/SanglapDetail7_9_2006.asp
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
ধন্যবাদ ইমরুল হাসান ভাই। আপনি নির্ভয়ে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন, সমালোচনা করবেন এটা প্রত্যাশা করি। একজন কবির ব্যবচ্ছেদ আমার এই কবিতা লেখার প্রচেষ্টাকে পথ দেখাবে নি:সন্দেহে। আবারো কৃতজ্ঞতা।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
নতুন মন্তব্য করুন