আবদুল গণি সাহেবের বয়েস প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। যদিও উনাকে দেখলে মনে হয় সবে প্রৌঢ়ত্বে পা দিয়েছেন। উনার একটাই আফসোস সারা জীবন ভেজালে ভরা। তাই টিভিতে ভেজাল বিরোধী আন্দোলনের খবর প্রচারিত হলেই তিনি নড়েচড়ে বসেন। ইস্, যদি আমার জীবন হতেও এরকম করে ভেজাল নির্মূল অভিযান চালাতে পারতাম! কিন্তু বললেই তো আর সব করা যায় না। অতীতে যাওয়ার কোন টাইমমেশিন তো আবিষ্কার হয়নি যে উনি ভি.সি.আর-এর মতো রিউইন্ড বাটনে টিপ দিয়ে দুম করে অতীতে গিয়ে সংশোধন করে আসবেন। তাই মেনে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। গণি সাহেব তার ভেজালে ভেজালময় জীবনের কথা ভাবছিলেন দাওয়ায় বসে বসে।
কোনমতে ক্লাশ সেভেন পর্যন্ত ঠেলেঠুলে পাস করতে পেরেছিলেন, তারপর আর হয়ে উঠেনি। ক্লাশ এইটে উঠতেই পাটিগণিত, বীজগণিত আর জ্যামিতি মিলে এক মহাভেজাল লাগিয়ে দিলো। ভেজাল দিয়ে আর এ যাত্রা পাস করার কোন সম্ভাবনাই তিনি খুঁজে পেলেন না। এটা শিখেন তো ওটা ভুলেন অবস্থা। সবকিছু মিলিয়ে একটা মহাজট পাকিয়ে ফেলার পর লেখাপড়ার কপালে পারমান্যান্ট ঝাটা মারার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। তখন তিনি প্রায়ই ক্লাশ সেভেনে সারা বছর ধরে মুখস্থ করা ভাবসম্প্রসারণের দু'লাইন কপচাতেন-
গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন,
নহে বিদ্যা নহে ধন, হলে প্রয়োজন।
তাই গ্রন্থগত বিদ্যা বাদ দিয়ে পিতৃদেবের ধন-সম্পত্তি হস্তগত করার দিকেই মনোনিবেশ করলেন। কালক্রমে, তিনি অনেক সম্পত্তির অধিকারীও হলেন। তবে তার সাত সাতজন বোন তার এই সম্পদ ভান্ডারে কিয়ত আচড়ও কেটেছেন বৈকি।
যা হোক, যৌবনকাল শুরুর কিছু আগেই বিয়ে করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানেও এক ভেজাল। তাকে মেয়ে দেখানো হয়েছিলো একটা কিন্তু বিয়ে দেয়া হয় আরেকটা। বিয়ের পরের দিন তিনি বুঝতে পারেন উনাকে শ্বশুর মশায় তার ট্যারা মেয়েটিকে গছিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি হয়েছে কিন্তু লাভ হয়নি কিছুই। শ্বশুর মশায় জানিয়ে দিয়েছেন, 'তুমিও তো বাপু নির্ভেজাল নও। বলেছো আন্ডার ম্যাট্রিক কিন্তু খবর নিয়ে জানলাম তুমি ক্লাশ সেভেন পাশ।' গণি সাহেব বলেন- 'মিথ্যে কি করে হলো, ক্লাশ সেভেন তো আন্ডার ম্যাট্রিকই।' শ্বশুর মশায় বলেন- 'ওসব কথার প্যাচ দেখিয়ে লাভ নেই। ক্লাশ সেভেন পাশ না বলে তুমি অন্যায় করেছো। এখন বেশি ত্যাদড়ামো করলে নারী নির্যাতনের মামলায় ঠেসে দেবো কিন্তু। তখন বুঝবে কতো ধানে কতো চাল।' গনি সাহেব চুপ করে গেলেন। বুঝতে পারলেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন করার কিছুই নেই, এই ভেজাল বউ নিয়েই তাকে সংসার করতে হবে। তবে তিনি সেদিন থেকেই বউয়ের নাম রাখলেন ভেজালি। শ্বশুর বাড়িতে গেলেই শুনিয়ে শুনিয়ে বলেন- 'ভেজালি, একটা পান দিয়ে যাও তো।' শ্বশুর মশায়ও যেমন কুকুর তেমন মুগুর টাইপের। তিনিও শুনিয়ে শুনিয়ে বলতেন- 'যা তো মা, আমার আন্ডার এইট জামাইকে মিষ্টি জর্দা দিয়ে একটা পান দিয়ে আয় তো।' শেষ পর্যন্ত তিনি শ্বশুর বাড়ি যাওয়াই বন্ধ করে দিলেন।
** হঠাত যা মনে আসলো তাই লিখে ফেললাম, পরের পর্ব আসতেও পারে, আবার অসমাপ্ত পান্ডুলিপির মতো এখানেই থমকে যেতে পারে এই গল্প। তবে আপনারা চাইলে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন ঠিক এই জায়গা থেকে। সাদর আমন্ত্রণ রইলো।
মন্তব্য
আবার আমাদের ঘাড়ে ভেজাল চাপানোর দুষ্ট মতলব কেন? খাটাখাটনি করেন কিছু !
হাঁটুপানির জলদস্যু
জ্বি,আমরা চাই জনাব
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
পরের পর্ব আসুক।
গনি সাহেবকে টেনে নিয়ে ওসমান গনি বানাইয়া দেন।
কি মাঝি? ডরাইলা?
ধন্যবাদ সবাইকে। ভাবছিলাম আমিই একা ফাঁকিবাজ। কিন্তু এখন দেখি সেই লিস্টে আরো অনেকেই আছেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
নতুন মন্তব্য করুন