নববর্ষের শুভেচ্ছা-স্বরূপ: ফকা চন্দ্র রাজার বোকা চন্দ্র সামন্ত

ঝরাপাতা এর ছবি
লিখেছেন ঝরাপাতা (তারিখ: সোম, ১৪/০৪/২০০৮ - ৯:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

** এই গল্পটি ২০২০ সালের কোন একদিনে লেখা হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু নববর্ষে এই বেশ ভালো আছি বলতে না পারায় অগ্রিম দু:খ লাঘবের অপচেষ্টা করছি। গল্পের সব চরিত্রই কাল্পনিক। কোন ঘটনার সাথে মিল পাওয়া গেলে তা নিতান্তই কাকতাল।
----------------------------------------------

ফকা চন্দ্র রাজা একদিন সভাসদবৃন্দের কাছ হইতে রাজ্যের ভালো-মন্দ সম্পর্কে খোঁজ খবর লইতেছিলেন, আর- পাশে দাঁড়াইয়া বোকা চন্দ্র সামন্ত আপনমনে জাবর কাটিতেছিলেন। সভাসদদের মধ্যে যিনি সালিশী বিভাগের দায়িত্বে আছেন তিনি বুকের ছাতি বিয়াল্লিশ ইঞ্চি বিস্তৃত করিয়া বলিলেন- জনাব রাজ্যে কোন বিশৃঙ্খলা নেই। সবার মুখে কলুপ আঁটিঁয়া দিয়াছি। খাইয়া মরুক আর না খাইয়া মরুক টু শব্দটিও কেহ করিতে পারিবে না। চেষ্টা করিবামাত্র ড়্যাপিড অ্যাকশন, ঠাস-ঠাস-ঠাস, সব শেষ। এই বেয়ারা জাতিকে ঠান্ডা করিতে এরকম ডান্ডার ব্যবহারই সবোর্ত্তম। জন্ম হইতেই ইহাদের উপর প্যাঁদামাইসিন এপ্লাই করা আবশ্যক। সালিশী প্রধানের বক্তব্যের সাথে বোকা চন্দ্র সামন্ত সহমত জানাইলেন- হুম, সব ব্লাডি সিভিলিয়ান, মাইরই এদের একমাত্র ওষুধ। ফকা চন্দ্র রাজা মৃদুস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন- তা ঠিক আছে, কিন্তু পত্রিকায় দেখিলাম, কোথায় যেন এক পিতা খাবার জোগাড় করিতে না পারিয়া তার তিন শিশুসন্তানকে নিজ হাতে জ্যান্ত কবর দিতে লাগিয়াছিলেন! এহেন ঘটনায় তো সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হইয়া যাইতেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের কি কোন উপায় নাই? দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে রাখিতে না পারিলে তো সর্বনাশ হইয়া যাইবে। ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার কথা শুনিয়া প্রতিরক্ষা প্রধান ঈষৎ ক্রোধান্বিত হইয়া উঠিলেন- এসব মিডিয়ার বাড়াবাড়ি, তিল পরিমাণ ঘটনাকে তাহারা তাল বানাইয়া ছাড়ে। আমাদের উচিত হইবে আরো কিছু সংবাদমাধ্যম ও টিভি চ্যানেলকে বন্ধ করিয়া দেওয়া। আসলিম জলিলের মতো আরো কয়েকজন সাংঘাতিকের পাছায় প্যাঁদামাইসিন এপ্লাই করা। কয়দিন আগে দেখিলাম, এক প্রাক্তন সভাসদ চাল কিনিতে খোলা বাজারের লাইনে দাঁড়াইয়াছেন, আর তাহা নিয়া মিডিয়ার সে কি উল্লম্ফন! পত্রিকার প্রথম পাতায়, টিভি সংবাদের প্রথমভাগে সে খবর ফলাও করিয়া প্রচার করা হইয়াছে। অথচ আমরা দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসাইয়া ফেলিলেও তাহার কোন খবর মিডিয়ায় আসে না। চাল লইয়া এই যে রাজনীতি শুরু হইয়াছে ইহা থামাইতে হইলে বোকা চন্দ্র সাহেবের ফর্মূলা প্রয়োগ করিতে হইবে। বোকা চন্দ্র সামন্ত নড়িয়া-চড়িয়া উঠিলেন। জাবর কাটা থামাইয়া বলিলেন- আমি কিন্তু বারবার ভাতের বিকল্প হিসেবে সবাইকে আলু খাইতে উৎসাহিত করিতেছি। আলু যে সব দিক দিয়া ভাতের চাইতে উত্তম ইহা তাহাদিগকে বুঝাইতে হইবে। এজন্য আমি এখন সবসময় এমনকি সভা সমাবেশেও আলু খাওয়া শুরু করিয়াছি, যদিও আলু খাইতে খাইতে নিজেও আলুর মতো গোল হইয়া যাইতেছি তবুও আমার যুগান্তকারী “দেশী আলু, বেশি ভালু” থিয়োরী সবার ঘরে ঘরে পৌঁছাইয়া দেবার চেষ্টা চালাইতেছি। যদি এতে কাজ না হয়, তাহলে আইন করিয়া হইলেও বাধ্য করিতে হইবে, কিন্তু আলু খাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নাই। জন্ম হইতে মৃত্যু অবধি তাহাদের আলু খাইতেই হইবে, খাইতেই হইবে, খাইতেই হইবে। বোকা চন্দ্র সামন্ত কথা শেষ করিয়া আবার জাবর কাটিতে লাগিলেন। ফকা চন্দ্র রাজা বোকার দিকে চাহিয়া বড়ই বিমর্ষ বোধ করিলেন। ইস্ বোকা কেমন করিয়া গরুর মতো জাবর কাটিতে আছে তো কাটিতে আছে বছর দেড়েক ধরিয়া- আমিও যদি এমন করিয়া পারিতাম। কিংবা আমার প্রজারা যদি পারিত, তাহা হইলে একবার ভালো করিয়া খাইয়া দুই বছর ধরিয়া জাবর কাটিত। দেশে কোন খাদ্যাভাব হইতো না বরং উদ্বৃত্ত থাকিত। হঠাৎ বোকা চন্দ্রের মচমচ শব্দে দন্ত পেষণে ফকা চন্দ্র রাজা সম্বিত ফিরিয়া পাইলেন। দেখিলেন বোকা পরম সুখে কতগুলো কাষ্ঠ দন্ড চিবাইতেছেন। রাজা ভালো করিয়া খেয়াল করিয়া দেখিলেন- বোকা চিকেন টোস্ট সহকারে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাইতেছে। তিনি কহিলেন- বোকা তুমি সবাইকে আলু খাইতে বলিয়া নিজে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাইতেছ, ইহা কি ঠিক? বোকা চন্দ্র সামন্ত সমস্ত দরবার প্রকম্পিত করিয়া অট্টহাসিতে ফাটিয়া পড়িলেন- মহারাজ, যাহা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তাহাই আলু ভাজি। সারাজীবন ধরিয়া আমরা চিকেন টোস্ট দিয়া ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাইয়া যাইবো আর ব্লাডি সিভিলিয়ানরা খাইবে শুধু আলু-সিদ্ধ। ইহাই রাজ্যের নিয়ম। ইহাই আমার ওন ব্রান্ড থিয়োরি। বলিয়া বোকা বক্রহাসি হাসিয়া যত্ন করিয়া চিকেনে কামড় দিলেন। ফকা বিষণ্ণ বদনে ভাবিতে লাগিলেন- বড়ই রহস্যময় বোকা! না জানি, কি আছে বোকার মনে!


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হায় ফকা-খাইলি ধোঁকা হাসি

xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দিগন্ত এর ছবি

আমার যুগান্তকারী “দেশী আলু, বেশি ভালু” থিয়োরী সবার ঘরে ঘরে পৌঁছাইয়া দেবার চেষ্টা চালাইতেছি।

মগজ ধোলাই যদি থাকত ... হাত কামড়াচ্ছেন ফকা চন্দ্র ...


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সর্বনাশ!!!
এটা কী লিখলেন!!!

শেখ জলিল এর ছবি

আসলিম জলিলের মতো আরো কয়েকজন সাংঘাতিকের পাছায় প্যাঁদামাইসিন এপ্লাই করা।
.....সর্বনাশ! খাইছে...

...লেখাটা ভালো হইছে। শুভ নববর্ষ।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- শ্রী ফকারামের মনে কী আছে তবে, উহা জানিতে এবং জানাইতেও আজ্ঞা হয় মহাশয়!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

দ্রোহী এর ছবি

খাড়ান! ফকা আইতাছে!


কি মাঝি? ডরাইলা?

অতিথি লেখক এর ছবি

হায়রে ফকা......।
-নিরিবিলি

ঝরাপাতা এর ছবি

কি জানি কি আছে বোকার মনে . . . @গোধু

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ এবং আবারো নববর্ষের শুভেচ্ছা।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।