বৃষ্টির ঘ্রাণ পাচ্ছি,
জলের ঘ্রাণ পাচ্ছি,
জলমগ্নতায় কার অতল হৃদয়ের
কলরব শুনতে পাচ্ছি ।
এ কার নুপুর-নিক্কণ সকরুণ সুরে
আজো কাঁদে করোতোয়ার কচুরীর দামে?
রেণুকা? সে তো চৌদ্দ বছর আগেই
ভোকাট্টা হয়ে গেছে গোলাপী ঘুড়িটার মতো!
সেই ঘুড়ি, সেই নিরুদ্দেশ ঘুড়ি কতবার ছলে-বলে
আছড়ে পড়েছে রেনুকাদের ছাদে।
যতবারই কুড়োতে গিয়েছি
ততবারই বিদ্ধ হয়েছি শান্ত গভীর দু’চোখের মায়ায়।
তার বেনুনী করা চুলের দোলার বিভ্রমে
যত না চমকিত হয়েছে প্রতিদিন বিকেলের সূর্য
তারো বেশি বিস্ময়ে আমায় চিরকাল বিমূঢ় করে রেখে
ফেরার হয়েছে সে ঘুড়িটার মতোই।
রেণুকা এখন কেবলই এক বিস্মৃত অধ্যায়,
সবার অগোচরে টুপ করে ঝরে যাওয়া ভোরের শিশিরের নাম রেণুকা।
তবুও তার কথা মনে পড়ে,
বার বার কেন এতো মনে পড়ে?
রেণুকার মতোই ফিরে ফিরে আসে ভুবনপুরের মত্ত দুপুর,
পাহাড়ের কোল ঘেঁষা রেললাইন,
হুইসেল বাজিয়ে প্রচন্ড আক্রোশে ছুটে যায় ছুটে আসে ট্রেন,
সেই ট্রেনটাই বার বার আসে যেটা থেঁতলে দিয়েছিল
আমার ভাইয়ের ছোট্ট শরীর।
তার নিথর দেহ, অপলক দৃষ্টি মুছে যেতে না যেতেই
ভেসে ওঠে সেই খোঁড়া শালিকের মুখ।
আহ্, অপরাধ! কতো অপরাধ জমে আছে এই করতলে!
জমা আছে সঙ্গোপনে।
রেণুকার চলে যাওয়া,
ভাইয়ের মৃত্যু,
বাসা-ভাঙ্গা শালিক,
এমন কি কার্নিশের কাকটাও
আমাকে অপরাধী করে রেখে গেছে চিরকাল।
প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে দেখি সেই কাক
বসে আছে আমার জানালার কার্নিশে,
রোদে শুকোতে দেয়া এক ফালি আমসত্ত্ব চুরির দায়ে
যার মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করেছিলাম আমি।
জানালার ফাঁক দিয়ে নিপুন কৌশলে দক্ষ শিকারীর মতো
এক গুলতিতেই দিয়েছিলাম নিশ্চিত নির্বাণ আঠার বছর আগে।
কাকটি ফিরে এসেছে, যুগপৎ আমার অপরাধবোধ।
একটা কাক, দুটো কাক, অনেকগুলো কাক
একটানা কা-কা করে ডাকছে কাছে কোথাও।
পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি
ওদের চোখে প্রতিশোধের আগুন।
এখনই পালাতে হবে,
ওই যে বাসটা আসছে … বৃষ্টিও আসছে … খুব ভিড় …হৈ-চৈ
তবুও যে করেই হোক উঠতে হবে ..
যাচ্ছলে, পা ফস্কে গেল নাকি!
এখানে এতো রক্ত কেন!
বৃষ্টির ঘ্রাণ পাচ্ছি,
জলের ঘ্রাণ পাচ্ছি,
জলমগ্নতায় কোন এক ফুলকিশোরী
চুরির টুংটাং আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।
বৃষ্টি মুছে দিচ্ছে সব, সব লাল রং,
সব জমাট কষ্ট আর সব অপরাধবোধ।
* এই কবিতাটি লেখার অনুপ্রেরণা হাসান মোরশেদের "বৃষ্টির ঘ্রাণ পাচ্ছি" ফেইসবুকের এই স্ট্যাটাসটি।
মন্তব্য
"যতবারই কুড়োতে গিয়েছি
ততবারই বিদ্ধ হয়েছি শান্ত গভীর দু’চোখের মায়ায়।"
ভালো লাগলো। রিমঝিম বৃষ্টির মতো,,,,,,,,,
ধন্যবাদ, অনেকদিন পরে নিয়মিত হলেন বুঝি!
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
ভালো লাগলো আপনার কবিতা।
প্রখম ২টি লাইন এর বৃষ্টির ঘ্রান যেহেতু বলেছেন, পরের লাইন এর "জলের ঘ্রান" না লিখলে কবিতার জন্যে খু বেশী ক্ষতি হতো না। পাঠক হিসেবে, ঐ ২য় লাইনে এসে আমি ঘমকে গেছি; মনে হচ্ছিল একই লাইন ইউস করা হয়েছে॥ না করলেও কবিতা একিভাবে আমার ভালো লাগতো।
ক্রেসিডা
আমার ছন্দ জ্ঞান নেই। কবিতা পড়তে ভালবাসি, তাই পড়ি। তবে সচলে কবিতা পড়া হয় খুব কম। হয়না বললেই চলে। যে কবিতা পড়তে ভালো লাগে সেটাই পড়ি। লেখক বা প্রকাশনীর বাছ-বিচার করিনা। আমার কাছে কবিতাগুলিকে মনে হয়, জলের মত। আজঁলা ভরে পান করি, হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য। মাঝে মাঝে হাতের ফাঁক গলে কিছু জল পড়ে যায়, যার জন্য ক্ষনিকের দুঃখবোধ হয়। আবার নতুন করে পান করি। আপনার কবিতা পড়ে মনে হল, আমার সেই হাতের ফাঁক গলে পড়ে যাওয়া জল আবার আচমকা বৃষ্টি হয়ে আবার আমার হাতে এলো।
আপনার কবিতাগুলি আজ বসে বসে পড়লাম।
মনে হলো, পাঠকের ভালো লাগার কথাটি জানবার অধিকার আছে কবি'র।
চমৎকার লাগল। আমি কবিতা লিখতে জানলে আজকের দিনে এমন কিছুই লিখতাম
ভালো লেগেছে কবিতাটা, বৃষ্টি নিয়ে কবিতা আমার কেন যেন সবসময়ি ভালো লাগে।
কবিতাটা বেশ ভাল লাগল।
শব্দ দিয়ে যে ছবি এঁকেছেন, তা খুব সুন্দর।
ভাল কিংবা খারাপ কিছুই নয়। শুধূ পাঁচ ইন্দ্রিয়ই নড়েচড়ে উঠেছিল... কখনও না কখনও অবশ্যই। কবিতাটি পড়ার সময়।
লেনুকালে লয়্যা গেলা!!! সে আমার একলার আছিলো এদ্দিন
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
'
=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা
নতুন মন্তব্য করুন