সেদিন আমি, আরিফ আর তামিম ভাই বেরুচ্ছিলাম টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম ক্লাশ থেকে।
বের হতে হতে আরিফ জিজ্ঞেস করলো- তামিম ভাই, পিটুপি কমিউনিকেশন বলতে কি বুঝালো কিছুই তো বুঝলাম না।
তামিম ভাই একগাল হাসি নিয়ে চশমাটা ডান হাতের তর্জনী দিয়ে কিয়ত উপরে ঠেলতে ঠেলতে বললেন- 'আরে এইটা বুঝলা না। এইটা হলো এক ধরনের কমিউনিকেশন। তোমারে যে কেমনে বোঝাই! আচ্ছা- এই যেমন ধরো আমার সাথে সুরাইয়ার রিলেশন এইটা হচ্ছে একটা পিটুপি মানে পয়েন্টু টু পয়েন্ট কমিউনিকেশনের উদাহরণ। এক পয়েন্টে আমি আর এক পয়েন্টে সুরাইয়া, মাঝে কিচ্ছু নাই।'
আরিফ বললো- কিন্তু আপনার সাথে তো এখনো সুরাইয়ার ভালো করে কথাই হয়নি। এর মাঝে রিলেশন হলো কি করে? তাও একেবারে পয়েন্ট টু পয়েন্ট!
তামিম ভাই আবার হাসলেন। আরে সব রিলেশন কি বাইরে থেকে বোঝা যায়? এইটা হলো আন্ত:সংযোগ। তোমার বুঝনের কাম নাই।
আমি তামিম ভাইয়ের কথায় সম্মতি জানাই। এরই মাঝে কখন যে সুরাইয়া পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করিনি। সে জিজ্ঞেস করলো, সিরিয়াস আলাপ হচ্ছে মনে হয়। আরিফকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।
এখানে বলা রাখা বলো, সুরাইয়া হচ্ছে পারস্য দেশের ললনা যাকে নিয়ে তামিম ভাই দিবানিশি গান ধরেন- 'দিন গেলো তোমার পথ চাহিয়া।' আরিফ সবসময় বলে আসছে, সে তামিম ভাইয়ের সাথে সুরাইয়ার সম্পর্ক সুপার গ্লু দিয়ে জোড়া লাগানোর জন্য অনুঘটক হিসেব কাজ করছে, কিন্তু তাকে বিশ্বাস করা মুশকিল। একে তো কন্যা রাশির জাতক, তার উপর আবার বিশ্বপ্রেমিক। আমি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো। দুজনের কথাতেই সায় দিয়ে যাই আর মজা দেখি।
সুরাইয়া আরিফের কথা জিজ্ঞেস করাতে আরিফ একটু গর্বিত হয়। মনে মনে ভাবে সুরাইয়া আমার সবকিছু খেয়াল করে। তামিম ভাই একটু মনক্ষুণ্ণ হন। তারপর বলেন- 'তেমন কিছু না, ওকে পিটুপি সম্পর্কে বলছিলাম।' হঠাৎ দেখি দাড়ি নাচাতে নাচাতে মৌলবী (যদিও আমরা দুষ্টুমি করে বলি মৌ-লোভী) এসে হাজির। মৌলভী খুবই ধর্মপ্রাণ মানুষ। আমরা তার সাথে দুষ্টুমিও করি আবার তাকে অসম্ভব পছন্দও করি। মৌলবী যদিও প্রেম-ভালোবাসাকে জায়েজ মনে করেন না তবুও পারস্য দেশের রাজকন্যার (!) প্রতি যে তার কিছুটা দুর্বলতা আছে তা ক্ষেত্রবিশেষে প্রকাশ হয়ে পড়ে।
মৌলবী আমাদের অবাক করে দিয়ে বলেন- কেমন আছো সুরাইয়া? আমাদের অবাক হওয়ার কারণ এই প্রথম তিনি কোন মেয়েকে এরকম প্রশ্ন করলেন। তাও মুখের দিকে তাকিয়ে। সে যাক গে।
সুরাইয়া তার মারাত্মক অস্ত্র 'ভুবন ভোলানো হাসি' দিয়ে বলে- আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
মৌলভী বিনয়ে বিগলিত হয়ে গেল। উত্তর দেয়ার সময় এমনভাবে মাথা ঝুকালো মনে হলো এই বুঝি সুরাইয়ার সাথে একটা কলিশন হয়ে গেলো। আরিফ আর তামিম ভাই যে তখন মনে মনে মৌলবীর চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধারে নেমেছিল তা বলাই বাহুল্য।
যা হোক, অতপর আরো কিছুক্ষণ কথা হলো। যাওয়ার আগে সুরাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো- তুমি তো ক্লাশ লেকচারটা নোট করেছো দেখলাম। ওটা একটু আমাকে দিলে উপকার হতো।
ক্লাশ লেকচার মানে মূলত স্লাইডের বাইরে টিটার যে কথাগুলো বলেন সেগুলো। আমি বললাম- আমি তো পয়েন্টগুলো বাংলাতে লিখেছি। কাজেই সেগুলি ইংরেজিতে কনভার্ট করতে হবে। আর আমার ইংরেজি জ্ঞান একেবারে 'ক অক্ষর গো মাংস'। তুমি যদি হেল্প করো তবে ভালো হতো।
সুরাইয়া রাজি হলো। সে বললো- তোমার ফোন নাম্বারটা দাও। আমি ফোন করে সময় জানাবো। আমি বুঝতে পারলাম, যদি দিব্যশক্তি থাকতো তবে তামিম ভাই আর আরিফের অগ্নিদৃষ্টিতে আমি এতোক্ষণে ভস্মীভূত হয়ে যেতাম। কিংবা মৌলবীর লানতে ছাগুরাম হয়ে ম্যা ম্যা ও শুরু করে দিতাম। মোবাইল নাম্বার দিয়ে আমরা বিদায় নিলাম।
সেদিন রাতে যখন তামিম ভাইয়ের রুমে যাই তখন বাইরে থেকে শুনি আরিফ আর তামিম ভাইয়ের দ্বৈত সঙ্গীত সাধনা। দুজনে গান ধরেছে উদাস কন্ঠে- 'থাকতে যদি না পাই তারে, চাইনা মরিলে, ভালোবাসি বলে রে বন্ধু আমায় কাঁদালে'। তবে দুজনের মুখ দু'দিকে ফেরানো। আমি বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে চলে এলাম। নামতেই সিড়ির মুখে মৌলবীর সাথে দেখা, নামায পড়ে আসছিলেন। তিনি গুনগুন করে গাইতে গাইতে উপরে উঠছিলেন- '৭০টা হুর পরীতে বন্ধু আমার তো কাম নাই, আমি দোযখে যাবো।' শুনে তো আমার আক্কেলগুড়ুম।
আমাকে দেখে মৌলবী একটু লজ্জা পেলো মনে হয়। আমি মৌলবীকে বললাম- আপনি যদি ক্লোজ-আপ ওয়ানে অংশ নিতেন তবে সালমা-টালমা ভাত পেতো না কিংবা ওই দারুচিনি দ্বীপের নায়িকার সন্ধানে থুক্কু নায়কের সন্ধানে। মৌলবী লজ্জামাখা মিষ্টি হাসি দিলো। এরপর পকেট থেকে টুপি বের করে মাথায় দিলো। মৌলবীকে এখন জামাই জামাই লাগছে।
** লেখাটি প্রথম লেখা হয়েছিলো সামহয়্যারে। কিন্তু এই লেখাটি লেখার পিছনের কারণ ধুসর গোধূলির 'ললনা দুর্ঘট'। তাই গোধু বসকে উতসর্গ করে রিপোস্ট করলাম।
মন্তব্য
শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে শিকে ছিড়লো, আপনার নাকি মৌলবীর?
আর, কন্যা রাশির জাতকদের কি আলাদা কোন সমস্যা থাকে নাকি বলেন তো?
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
হা হা হা, কনফু। কারো ভাগ্যেই শিকে ছিড়েনি। ওটা আসলে বানানো গল্প। তবে এটুকু সত্যি- সুরাইয়া নামে একটা ইরানী মেয়ে পড়তো আমাদের সাথে এবং তানিম ভাই মেয়েটার প্রতি দুর্বল ছিলো। এখানে নামগুলো একটু চেইঞ্জ করে সুমাইয়া আর তামিম করে দিয়েছি।
_______________________________________
পোড়াতে পোড়াতে ছাই, ওড়াতে ওড়াতে চলে যাই . . .
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
কন্যারাশির ব্যাপারটা আমি ঠিক জানিনা। তবে শুনেছি কন্যা রাশির জাতকেরা নাকি রমণীলিপ্সু (কেউ যেন মাইন্ড না খায় আবার) হয়। হিমু ভাই কোন রাশির জাতক জানা দরকার।
_______________________________________
পোড়াতে পোড়াতে ছাই, ওড়াতে ওড়াতে চলে যাই . . .
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
তাই নাকি??
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
মজা পাইলাম।
====
মানুষ চেনা দায়!
সামহোয়্যারে পইড়া কইতে চাইছিলাম "তোফাজ্জল হোসেন, তোফা!"অহন চান্স পাইলাম।
ইরানী মেয়েরা সাধারণত ভালো খাইদাই টাইপ হয়। বেশি প্রেম দেখাইতে গেলে ধরা।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বাটে পড়ছিলা নাকি কোন ইরানির?
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
ধন্যবাদ বদ্দা, মুর্শেদ ভাই।
বলাইদা, আমারো সেরকমই ধারণা।
_______________________________________
পোড়াতে পোড়াতে ছাই, ওড়াতে ওড়াতে চলে যাই . . .
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
না বদ্দা বাটে পড়ি নাইক্কা। আসলে সুযোগই পাই নাই। তানিম ভাই আগে থেইক্কা ঘোষণা দিয়া দিছিল--- আমি হবো পারস্যদেশের রাজকুমার।
_______________________________________
পোড়াতে পোড়াতে ছাই, ওড়াতে ওড়াতে চলে যাই . . .
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
- বুঝছি, আমারই আসতে হইবো স্টকহোম।
আর বস, গরীবরে স্মরণ করলেন বইলা অশেষ কৃতজ্ঞতা জানবেন আমার।
_________________________________
<স্বাক্ষর দিমুনা, পরে জমিজমা সব লেইখা লইলে!>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন