অনেকেই বলে থাকেন চিটাগনিয়ানরা নাকি শব্দের শুরুতে 'ক' থাকেলে সেটাকে 'খ' উচ্চারণ করে থাকেন। এই যেমন, খেক খাবেন, না খোক খাবেন? একটা খান্ট আর খি ! হেলো, খে বলছেন যে? . . .ইত্যাদি। যদিও আমি তাদের সাথে একমত নই এবং তাদেরকে নিন্দুক বলেই বিবেচনা করি। কারণ কি? জানেনই তো, খাক খকনো খাকের মাংস খায় না। যাই হোক, আমার লেখাটা সে প্রসঙ্গে নয়। হালকা লেখা বলেই শুরুতে একটু জোর করে হাসানোর প্রচেষ্টা, সেজন্যে সম্মানিত পাঠককূলের নিকটা করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আসুন মূল গজালে ফিরে যাই। আমার বন্ধু বলছে-
- ভাই পঞ্চাশ টাকা কম রাখেন।
- না।
- তাহলে বিশ টাকা কম রাখেন।
- না।
- আচ্ছা দশ টাকা কম রাখেন (একটু বিনয়ের সুরে)। একটা কোক খাবো।
- না।
- ঠিক আছে, আপনাকে নিয়ে খাবো।
- না।
এ পর্যায়ে আমি অধৈর্য্য হয়ে উঠি। কি ব্যাপার আপনি রোবটের মতো একস্বরে না না করছেন কেন? আপনার স্টকে কি আর কোন শব্দ নেই?
- না।
এবার অন্য সেলস্ম্যানও হেসে ওঠে। আমি আর আমার বন্ধু ওই রিয়েল টাইম সিস্টেমের সাথে কথা না বাড়িয়ে ক্যাশের দিকে হাঁটা দিলাম। এর মধ্যে আমার বন্ধু প্রতিজ্ঞা করলো- সে অবশ্যই দশ টাকা কম দিবে এবং সে টাকা দিয়ে কোক খাবে। আমি বলি- দেখা যাক। ক্যাশে বসা লোকটি বেশ বয়স্ক। তাই আমার বন্ধু উনাকে দাদু বলেই সম্বোধন করল-
- দাদু, গুড আফটারনুন।
দাদু হাসলেন (মুচকি হাসি)।
- দাদু খাওয়া-দাওয়া হয়েছে?
দাদু হ্যাঁ সূচক মাথা দোলালেন।
খাওয়া প্রসঙ্গে আরো কিছু সৌজন্যমূলক কথাবার্তার পরে-
- জানেন তো দাদু, খাওয়া-দাওয়ার পরে কোল্ড ড্রিংকস হজমের জন্য ভালো। এক কাজ করি- তিনটি কোকের অর্ডার দিই।
- আমি তো কোক খাই না। আমেরিকান পণ্য।
- তাহলে ভার্জিনের অডর্ার দেই। কুয়ালালামপুরের খাসা ড্রিংকস।
- তাও তো বিদেশী।
- ঠিক আছে ইউরো কোলার অর্ডার দিই। দেশী জিনিস।
- না না। নামটার মধ্যে কেমন যেন ইউরোপীয় ইউরোপীয় গন্ধ আছে।
- তাহলে জুস্। এই ধরুন প্রাণ বা স্লাইস। দেশি আমের বেশি মজা।
- আরে বাবা, ওই আমগুলো যে ক্যামিকেল দিয়ে পাকানো হয়।
- তা ঠিক, আচ্ছা তিনটে ডাব নিয়ে আসি। একেবারে ন্যাচারাল।
- তাতেও ভরসা পাই না। একবার পত্রিকায় দেখেছি কোন জায়গায় নাকি ডাবের পানিতেও আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
- আচ্ছা দাদু, আপনিই বলেন কোন্ ড্রিংক্সের ব্যাপারে আপনার আপত্তি নেই? এবার আমার বন্ধু অধৈর্য্য হয়ে ওঠে।
- বাবা, আমার পছন্দ হচ্ছে নির্মল, বিশুদ্ধ পানি।
- ও বুঝেছি। আপনি মিনারেল ওয়াটারের কথা বলছেন।
- না না। সেগুলো তো যথাযথ স্ট্যান্ডার্ডই ফলো করে না।
- তাহলে?
- বাবা, দোকনের একটু সামনে ডানের গলিতে একটা আসেনিকমুক্ত সবুজ রং করা ডিপ টিউবওয়েল আছে। ওখান থেকে তুমি চাইলে তিন গ্লাস পানি নিয়ে আসতে পারো। একেবারে সুপার ন্যাচারাল। যত ইচ্ছে কলিজা পুরে খাও।
কলিজা পুরে খাবে কি ! ততক্ষণে তো আমার বন্ধুরই কলিজা পুড়ে হাওয়া হয়ে গেছে। তবুও আমতা আমতা করে বলল- না না ওটাও একেবারে বিশুদ্ধ নয়। অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে।
দাদু বিজ্ঞ হাসি হেসে বললেন- বাবা, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ ওই পানি খেয়েই দিব্যি বেঁচে আছ।
দাদুর মতলব আমার জানা হয়ে গেছে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে দাম পরিশোধ করে আমার বিধ্বস্ত বন্ধুকে নিয়ে বেরিয়ে আসি। বেরুনোর আগে দাদু বললেন, বাবারা আবার এসো। আমার বন্ধু এমনভাবে তাকালো আরেকটু হলে দাদু ভস্ম হয়ে যেতেন নিশ্চিত। আমি বাইরে এসে হালকা রসিকতা করে বললাম, কোক নিয়ে কিন্তু ভালোই জোকস্ হলো, কি বলিস! সে এমনভাবে হাসলো সে হাসি বাংলা পাঁচকেও হার মানায়।
** লেখাটা 2004 সালে উন্মাদে এবং পরে সামহয়্যারে প্রকাশিত। কয়েক জায়গায় সামান্য চেইঞ্জ করে পোস্ট করলাম।
মন্তব্য
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
দিল ঠান্ডা তো সব ঠান্ডা।
সুন্দর।
আপনা মতলব কোকাকোলা!!
(কোক কিন্তু কোন উপকার করে না, হজমেও না। বরং অনেক ক্ষতি করে)
খেক খাবে , না খোক খাবে ?...
খেকও খাবো না খোকও খাবো না....ছা দিয়ে চমুচা খাবো ।
দৃশা
মহাশয় কোকের ইংরেজী বানান জানিলে কিছু ভিন্নরূপ জোক কহিতাম।
_________________________
সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র
_________________________
সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র
_________________________________
<স্বাক্ষর দিমুনা, পরে জমিজমা সব লেইখা লইলে!>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন