প্রথমে একটা গল্প বলে নেই।
একটা ছোট্ট ছেলে। বর্ণমালার অক্ষরগুলো শেখা হয়ে গেলে সে বাবার কাছে আব্দার করে শ্লেটের জন্য। বাবা প্রতিদিন আনবে বলে কথা দেয় কিন্তু ভুলে যায়। এরপর একদিন ছেলেটা খুব অভিমান করে, তার চোখে জল এসে যায়। ছেলের চোখের জল বাবার চোখ এড়াই না। পরদিনই বাবা শ্লেট নিয়ে আসেন। সেদিন ছেলেটার সে কি আনন্দ! কেউ পুরো পৃথিবীটা তার হাতের মুঠোয় তুলে দিলেও বোধহয় সেরকম সুখ সে পেত না। তার যতটা না আগ্রহ বর্ণমালার অক্ষর লেখায় তার চেয়ে বেশি আগ্রহ আঁকিবুকি করাতে। কখনো নদী, কখনো ফুল, কখনো মেঘ-ঘাস-নৌকা-মাছ-পাখি-গাছ আরো কতো কি হাবিজাবি। খড়িমাটি যাকে চক বলা হতো, সেই খড়িমাটি দিয়ে বিচিত্র সব চিত্রকর্ম আঁকতো সে আর ছুটে গিয়ে মাকে দেখাতো। মা খুশি হওয়ার অভিনয় করতেন আর উৎসাহ দিতেন- খুব সুন্দর হয়েছে বলে। ছেলেটি তখনো চক ধরতে শেখেনি ঠিকমতো। তাই প্রথম প্রথম সেগুলো ভেঙে তিনটুকরো হয়ে যেত। সেটা দেখে প্রথম প্রথম তার খুব কান্না পেতো। অসহায় চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকতো সে।
একসময় ছেলেটি লিখতে শিখলো। আঁকতে শিখলো। এরমাঝে সে দেখলো তার প্রিয় শ্লেটটি কেমন জানি মলিন হয়ে গেছে। পড়শী ছেলেটা একদিন কলম দিয়ে খুঁচিয়ে দিয়েছে তার প্রিয় আঙিনাটিকে। সেদিন সে সারারাত কেঁদে বুক ভাসিয়েছে সঙ্গোপনে। কেমন জানি বয়েসের ছাপ পড়ে গেছে শ্লেটটাতে। শিমুলের খোঁচাগুলি কলংকরেখার মতো ফুটে ওঠেছে ওটার বুকে। এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিলো।হঠাৎ একদিন সে আবিষ্কার করে তার সমবয়েসীরা অনেকেই ইতিমধ্যে খড়িমাটি আর শ্লেট ফেলে কলম দিয়ে রোলটানা খাতায় লিখতে শুরু করেছে। রোলটানা খাতায় নাকি লেখার মজাই আলাদা। সে প্রতীক্ষায় থাকে কখন সে দিন আসবে। অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই সে সুযোগটা পেয়ে যায়। এখন সেও রোলটানা খাতায় ইচ্ছেমতো আঁকিবুকি করতে পারে। মনের কথাগুলিকে প্রকাশ করতে পারে স্বচ্ছন্দে। ছেলেটা মশগুল হয়ে পড়ে নতুন লেখার পরিবেশে। এক অন্যরকম মুক্তির স্বাদে সে খুঁজে পায় নিজেকে।
তবুও মাঝে মাঝে কেমন একটা মায়া অনুভব করে সে পুরনো অতি প্রিয় শ্লেটটির জন্য। এখনো সে মাঝে মাঝে হাতে নিয়ে দেখে তাকে, গভীর মমতায় হাত বুলায়, আদর করে, একটা দুটো দাগ কাটে সন্তর্পণে। সে বুঝতে পারে, জীবনের প্রথম ভালোবাসা মনের দর্পণে যে সূক্ষ আঁচড় কেটে গেছে তাকে অস্বীকার করার ক্ষমতা তার নেই। সে করেও না। তাই সে বার বার ফিরে আসে তার ভালোবাসার কাছে।
গল্পটা শেষ। এবার মূল কথা বলি। আমি মূলত পাঠক। পাঠক হিসেবেই দু'চারটা লেখা প্রকাশ হয়েছে ভোরের কাগজ, প্রথম আলো, উন্মাদ, বাংলালাইভ আই পত্রিকা আর হাজারদুয়ারীতে (হাজারদুয়ারী সম্ভবত সবার লেখাই ছাপায়)। আমার লেখার ফল্গুধারা শুরু হয় সামহয়্যারকে কেন্দ্র করেই। আমার প্রায় দুশো পোস্টগুলি কখনো লেখা হতো না যদি এই ব্লগের ঠিকানা না পেতাম। মূলত পাঠকদের সাথে ইন্টার-অ্যাকশনই মূল আকর্ষণ এই ব্লগের। সেখানে এসেই পেলাম একঝাঁক প্রতিভাবানদের। দারুন সব লেখা, ভাবনা, বিতর্ক নিয়ে কখন যে বছর কেটে গেছে বুঝতেই পারিনি। তারপর এলো এক কালো মেঘ। সব লন্ডভন্ড হয়ে গেলো। ব্লগে ব্লগে ঘুরে বেড়াই, কিন্তু পড়ার মতো কিছু পাই না। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তখন। সেসময়ই হাসান মোরশেদের আমন্ত্রণ আসে সচলায়তন থেকে। এটা আমার জন্য বাড়তি উচ্ছ্বাসের ব্যাপার। কারণ হাসান মোরশেদ আমার কাছে অসাধারণ একজন লেখক। অতি ছোট্ট ঘটনাকে এমন নিপুণতার সাথে উপস্থাপন খুব কম লোককেই করতে দেখেছি। আরেকজন সে কাজটা পারেন তিনি বিগ. সি। সচলায়তনে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার সেই রোলটানা খাতা।
দারুন সব পোস্ট। অনেক অসাধারণ ব্লগারের লেখা সামহয়্যারইনে চোখ এড়িয়ে গেছে ভীড়ের কারণে তাদের আবিষ্কার করি সচলায়তনে। তার মধ্যে মুহম্মদ জুবায়ের, যূথচারী, সুমন রহমান অন্যতম। আর পুরনোদের লেখায় আগের চেয়ে আরো বেশি যত্নের ছাপ। আমি মুগ্ধ হই, আমি আপ্লুত হই। আমি ডুবে যাই সচলায়তনের ভালোবাসায়, ঘ্রাণ নেই নতুন সম্ভাবনার। কিন্তু সামহয়্যারইনকে কখনোই ভুলিনি। তাই এখনো নিয়মিত পোস্ট করি সামহয়্যারইনে। এ যেন আমার কাছে দুটো পিঠাপিঠি ভাই। সামহয়্যার অগ্রজ, পথ-প্রদর্শক আর অনুজ সচলায়তন, নতুন নতুন লেখক আবিষ্কারের কারখানা। এই দুই ভাইকে নিয়েই আবর্তিত হবে আমার ভার্চুয়াল পথচলা।
সবশেষে একটা লাইনেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে চাই। শেষের কবিতার মতো করেই বলি-
"সামহয়্যারইন আমার কাছে হচ্ছে ঘড়ায় তোলা জল, যখনই ইচ্ছে হবে লিখবো, আর সচলায়তন হচ্ছে দীঘি যেখানে স্বাধীনভাবে সাঁতার কাটবো।" সাঁতার কাটতে যে প্রস্তুতির প্রয়োজন।
মন্তব্য
কচু কাটতে কাটতে নাকি দামাল ছেলেরা ডাকাত হয়। আমি অন্তত চাই আর আমার চাওয়াটাকে আমাদের চাওয়া বানিয়ে বলি, আমরা চাই- দ্রুতই এমন দিন আসুক যখন আপনি এসে আমাদেরকে এমন করেই একান্ত আলাপনে বলবেন;
সচলায়তনের দীঘির জলে সাঁতার কাটায় এত অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি যে আজকাল ঘরের আঙিনায় তোলাজলে স্নান করতে ইচ্ছাই হয় না, করলে মনে হয় শরীরটা ঠিকঠাক ভিজলোই না, বরং যাই দীঘিতেই একটু ডুব দিয়ে আসি।
-----------------------------------------------
গাধারে সাবান দিয়া গোসল দেয়ানোটা গাধাপ্রীতির উজ্জ্বল নমুনা হতে পারে; তবে ফলাফল পূর্বেই অনুমান করা সম্ভব, গাধার চামড়ার ক্ষতি আর সাবানের অপচয়।
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ভাবনাটা ভাল লাগলো।
সামহোয়্যারের ঠোকরটা আগেও খেয়েছি দু এক জায়গায়, এখন তাই খানিকটা নির্লিপ্ততা এসে গেছে।
তবে একটা ব্যাপার ভেবে খুবই বিরক্ত লাগছে, আমি চাই না, তবু যেন অনেকেই আমাকে ওখানে অচ্ছ্যুত ঘোষনা করছে, যেন জোর করেই শুনতে চায়, আর যাবো না ওখানে!
খুব বাজে ব্যাপার।
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
দরকার ছিলো এটার ।
শোমচৌ শুরু করেছিলেন । আরিফ ও দেখলাম আজ ভালো প্রটেষ্ট দিচ্ছে ।
আরিফের একটা ব্যখ্যা ভালো লেগেছে ।মডারেশন সংক্রান্ত । সচলায়তনে মডারেশন লেখালেখি কেন্দ্রিক নয়, বরং সদস্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আবার গ্যাঞ্জাম শুরু হইছে নাকি?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ধন্যবাদ বিগ.সি., কনফু আর গুরুকে। আস্ত পাগল হইয়া গেছে। সচলায়তন যে তাকে কতো বড়ো আঘাত দিয়েছে তার বর্তমান মন্তব্যগুলো দেখলে বোঝা যায়। একই রকম আঘাত দিয়েছে তেলাপোকা আর ছাগুটাকেও। সচলায়তন সাক্সেসফুল। থাম্বস আপ সচলেরা। চালিয়ে খেলুন।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
সেটাই, অনেকেই বেশ আঘাত পেয়েছে।
কিছুই করার নাই(আস্তগো প্রসঙ্গে)। ঝরা দারুণ লেখা। শোহেইল ভাই যা কইল, সেইটা ধরেন আমারো মনের কথা
..................................
আমি মুঠোয় ধরে স্বপ্ন কিনি, মুঠোয় ভরে প্রেম...
তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
সামহোয়্যারে কমেন্ট করতে যাই মাঝে মাঝে, লেখা দিতে রুচিতে বাঁধে। মাত্র কয়েকজনের ব্লগারের জন্য এই অবস্থা, তাই খুব মিস করি বেশীরভাগ পাঠকদেরকেই।
সামহোয়্যারে অনেক ফিডব্যাক পাওয়া যায়, সেটা একটা বড় ব্যাপার।
দেখা যাক।
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে
দারুণ লেখা। দারুণ
ভাইসাব মনে কিছু লইয়েন না আপনার বয়স কত?
এরপর মন্তব্য করুম।
দৃশা
ড্যাবস!
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভ হোক সচলায়তনের এ পথচলা।
দৃশা ভাই,
এই তো পচিঁশে এসে গেছি আটকে।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
দৃশা তো বোন। আমার অবশ্য সবসময়ই সন্দেহ ছিলো ওইটা ধুসর গোধুলীর নিক। সন্দেহ এখনো কাটে নি।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনি খালি প্যাচ লাগান। বইন হইলে বইন। দৃশা তো আর আস্ত না !
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
সর্বোনাশ! আস্ত না!! কেমনে কি?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আস্ত মাইয়া পাগল হইয়া যাইতেছে সচলায়তনের শোকে।
একটা জিনিস খেয়াল করলাম- পুরনো লেখায় মন্তব্য করলে সেগুলো সাম্প্রতিক মন্তব্যে দেখায় না। আমি আজকে কর্ণজয় আর আপনার লেখায় মন্তব্য করলাম কিন্তু সেটা সাম্প্রতিক মন্তব্য কলামে দেখাচ্ছে না।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
ঝরাপাতাঃ আল্লাহগো এই কচি বয়সে এমুন জটিল লিখেন কেমনে?অসাধারন হইছে ঝরাপাতা বইন।
অছ্যুৎ বলাইঃ কেমনে কি?ওই আমি ধূসর গোধূলি হমু কেন?আমারে কারো শালীর খোঁজ নিতে দেখছেন? তবে কেউ যদি শ্যালকের খোঁজ দেয়
আই ডোণ্ট মাইন্ড (আমি লুইজ্জা পাইছি)
দৃশা
ধন্যবাদ দৃশা। কিন্তু আমাকে বইন ভাইবেন না। আমি প্রবলভাবে পুরুষ। কার কথা যেন টুকলিফাই করলাম জানলে খবর আছে।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
খুব ভাল লাগলো পড়ে।
নতুন মন্তব্য করুন