পরদিন সকালেই দেখা করলাম তাঁর সাথে। রুমে ঢোকা মাত্রই রিভলভিং চেয়ারটি আমার দিকে ঘুরিয়ে বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেন, “আমি চাই তুমি কনফারেন্সটিতে যাও, কিন্তু এদিকে আমার তহবিলের অবস্থাও খুব একটা সুবিধের নয়, ওখান থেকে মনে হয় না তোমাকে কিছু দিতে পারবো। তবে পরিবর্তে আমি তোমাকে কিছু বুদ্ধি বাতলে দিচ্ছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ইউনিওনের ওরা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রদের এ ধরণের কনফারেন্সে যাবার জন্যে প্লেনের টিকেট কেটে দেয়। তুমি ওদের বরাবরে আজই আপ্লাই করো। আর ওদিকে আমাদের ডীনের অফিসেও একটা আবেদনপত্র দাও, ডীনের অফিস থেকেও প্রায় দুশো ডলারের একটা ট্রাভেল স্কলারশিপ পাবে আশা করছি। এছাড়া কনফারেন্সের ওরা তোমার মতো ছাত্রদেরকে বিনামূল্যে তিন দিন হোটেলে রাখবে বলেছে। তাই তেমন কোন সমস্যা দেখছি না তোমার যাবার ব্যাপারে”। আমি উৎফুল্ল হয়ে সেদিন থেকেই অনুদান অনুসন্ধানের কাজে আদাজল খেয়ে নেমে পড়লাম। এর ঠিক দু দিন বাদেই কনফারেন্স কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আরেকটি চিঠি পেলাম, তারা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে একটি ট্যুরের আয়োজন করেছেন, যারা তাতে যোগ দিতে চায় তাদেরকে আরও পঞ্চাশ ডলার বেশি দিতে হবে রেজিস্ট্রেশনের সময়ে। আমি ভাবছি ডীনের অফিস থেকে যদি ট্রাভেল স্কলারশিপখানা জোটেই তবে আর এই ট্যুরে যেতে সমস্যা কি, তৎক্ষণাৎ আমি তাদেরকে হ্যা বলে দিলাম। এবার শুধু দিন গোনবার পালা।
সেপ্টেম্বর মাসের এক সকালে প্রথমে উড়ে গেলাম মিসৌরি রাজ্যের সেইন্ট লুইসে। কার্বনডেল শহরটি ইলিনয় রাজ্যে হলেও এটির কাছের সবচেয়ে বড় শহর হল এই সেইন্ট লুইস। সেইন্ট লুইস থেকে আমাকে বেশ ছোট একটি প্লেনে করে কার্বনডেলে যেতে হবে। ‘বেশ ছোট প্লেন’ যে এতটা ছোট হবে সে আমি পূর্বে কল্পনা করিনি, মাত্র দশ কি বারো সিটের প্লেন। ওড়বার সময় পাইলটের প্রতিটি কার্যকলাপ পেছনের যাত্রী আসন থেকে দেখা যায়, আর সেই সাথে অনুভব করা যায় প্লেনের প্রতিটি বাঁক নেয়া, প্রতিটি কম্পন। আগেই বলা ছিল আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে ডিপার্টমেন্টের কেও একজন নিতে আসবেন, কিন্তু সেই একজন যে স্বয়ং ডিপার্টমেন্টের প্রধান তা কিন্তু জানা ছিল না। রঙচটা এক লালচে টি শার্ট আর মাথায় বেসবল ক্যাপ চড়িয়ে মধ্য পঞ্চাশের এই ভদ্রলোক এসেছেন আমাকে রিসিভ করতে। হাত বাড়িয়ে করমর্দনের পর বললেন, দাঁড়াও আরও কয়েক জনের আসবার কথা একই ফ্লাইটে। তাদেরকেও তুলে নিই। সেই আরও কয়েক জনরা হল হাইতির একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা তিন জন, তাদের দলনেতা হল ক্যালিক্স নামের এক তরুণ প্রফেসর। ক্যালিক্স এসেছে ওর দু ছাত্রকে সাথে করে। ক্যালিক্স রীতিমতো গল্পবাজ, বিমানবন্দর থেকে হোটেলে যাবার স্বল্প সময়ে তাই ওর সাথে ভাব জমে উঠতে দেরী লাগে না। হাইতি থেকে দু ছাত্রসহ এসেছে শুনে আমি কিন্তু কিছুটা অবাক না হয়ে পারি না, কারণ হাইতি তো বেশ দরিদ্র দেশ। এমন দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসরের সাথে দুটি ছাত্রকে খরচ দিয়ে পাঠিয়েছে, এ তো রীতিমতো প্রশংসাযোগ্য ব্যাপার। আমি ক্যালিক্সকে বলি সে কথা। জবাবে ক্যালিক্স বলে, “আমি পিএইচডি করতে গিয়েছিলাম জাপানে। তো সেখানে গিয়ে দেখলাম ওরা এমন কোন সম্মেলনে কোন ছাত্রের গবেষণাপত্র গৃহীত হলে, তা সে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে হলেও, যাবার পুরো খরচ বহন করে। কারণ এটাকে ওরা ভবিষ্যতের জন্যে এক ধরণের বিনিয়োগ বলে মনে করে। তুমি বলছ গরীব দেশের কথা। আরে ভাই এইসব গরিব দেশে নানান সরকারি আজেবাজে প্রকল্পে কত টাকা নয় ছয় হয় জানো সেটা? সে তুলনায় এ ধরনের কনফারেন্সে এসে নিজেদের গবেষণাপত্র তুলে ধরার জন্যে যে টাকাটার প্রয়োজন হয় সেতো কিছুই না, যদিও এক্ষেত্রে টাকা খরচের কারণটা যথেষ্ট যৌক্তিক”। ক্যালিক্সের কথা একেবারে অমূলক নয়।
পরদিন আমাদের কনফারেন্সে দেখা হয় দেশ-বিদেশের নানা ছাত্র-ছাত্রী আর মুখভার প্রফেসরদের সাথে। সবচেয়ে চমক বোধ করি ছিল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষে একটি দাঁত ভাঙা বই পড়ে এসেছি, এমন একটি বইয়ের রচয়িতার সাথে পরিচিত হবার ব্যাপারটা। তাঁর বই আমাদের পাঠ্য ছিল জানার পর জানতে চাইলেন কেমন লেগেছে বইখানা, আমি স্মিত হেসে বলি বই খাসা তবে আমি বোধ হয় ছাত্র খাসা নই, তাই টেনেটুনে ওই কোর্সে পাশ করেছিলাম। তিনি আমার কথায় মুচকি হাসতে থাকেন। আধবেলা নানা মহারথীর ভাষণ শুনবার পর আমি এক মেঘলা দুপুরে কার্বনডেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়া ঘেরা বনানী-মণ্ডিত ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার মধ্যেই অধিকতর আনন্দ খুঁজে পাই। আগের দিন বিমান বন্দর থেকে শহরে আসার সময়েই দেখেছি পুরো পথটি ঘিরে ছিল চেরিবার্চ ওক, ম্যাপল বা হথর্নের মতো বিশাল সব বৃক্ষরাজি। এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর আর তাই আশপাশে এত সব ঘন বনানী। প্রথম যে সাদা মানুষেরা দক্ষিণের টেনিসি বা মিসিসিপি থেকে এই শহরে এসে বসতি গেড়েছিল তারাও এসেছিলো ওই কাঠের ব্যবসার লোভেই। তবে তারপরও বহুকাল এ অঞ্চল তেমন একটা ঘন বসতিপূর্ণ ছিল না, এখানে লোকসমাগম শুরু হয় মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের সময়কালে। তাদের পদভারেই ধীরে ধীরে মুখরিত হতে থাকে এই কার্বনডেল শহর, প্রাণ পায় এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।
পরদিন আমাদের সেই প্রমোদ-ভ্রমণে যাবার কথা। কনফারেন্সের সবাই এই ভ্রমণে আমাদের সঙ্গী হচ্ছে না, অনেকেরই আজ তাদের নিজেদের গবেষণা পত্র উপস্থাপনের কথা। আমাদের দলটিতে আমরা তাই দশ পনের জনের মতো মানুষ। আগের দিনের পরিচিতদের মাঝে একমাত্র মস্কোর কাইলেরই আমার সঙ্গী হয়ে যাবার কথা আজকের ভ্রমণে। কাইল মস্কো থেকে এসেছে শুনে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, “বাব্বা তুমি সেই রাশিয়া থেকে এসেছ”? শুনে ও হেসে গড়িয়ে পরে বলল, “আরে না না, আমি এসেছি আইডাহ রাজ্যের মস্কো শহর থেকে”। আমেরিকায় সে বছর নতুন এসেছি, তখনো আমার জানা ছিলো না এই দেশে ইউরোপের বহু শহরের নামেই একটি করে শহর আছে, এই যেমন, স্টুটগার্ট, মস্কো, ডাবলিন, শেফিল্ড, বারমিংহাম, লিডস, ইত্যাদি। হয়তো এককালে ইউরোপের ওই নগরগুলো থেকে অভিবাসীরা এসেছিলো এসব স্থানে, আর তারপর ফেলে আসা শহরের স্মৃতিকে ধরে রাখবার বাসনায় নতুন দেশের শহরটির নামকরণ ও তারা করে ফেলে সেই পুরনো শহরের নামে।
আমাদের যেখানে যাবার কথা সে স্থানটি কার্বনডেল শহর থেকে এই মিনিট ত্রিশ চল্লিশ দূরে। সেটি মূলত এক জলাভূমি। তবে এটি শুধুই জলাভূমি নয়, তার সাথে আরও কিছু ব্যাপার জড়িয়ে থাকার কারণেই সেটি আজ আমাদের গন্তব্য। এই ব্যাপারগুলো অবশ্য জেনেছি সেখানে যাবার পর, আগে নয়।
আজ থেকে প্রায় দশ কি বারো হাজার বছর আগে তুষার যুগের শেষ ভাগে খরস্রোতা ওহাইও নদী গতিপথ পরিবর্তন করে বিদেয় নেয় এই অঞ্চল থেকে। তবে নদী চলে গেলেও রয়ে যায় তার পদচিহ্ন, নদীর ফেলে যাওয়া সেই ভাটি অঞ্চলে ধীরে ধীরে জল জমে জন্ম নেয় এক জলাভূমি। সময়ের পরিক্রমায় কি করে যেন সেই জলাভূমিতে বেড়ে ওঠে কিছু সাইপ্রেস গাছ। কি অবাক করার মতো ব্যাপার, দিব্যি জলের মাঝ থেকে ডুব দিয়ে উঠে ঊর্ধ্বপানে বাড়তে থাকে এই গাছগুলো। আজ সেই গাছগুলোই পরিণত হয়েছে বয়োবৃদ্ধ, মহীরুহে। এদের একেকটির বয়স প্রায় হাজার বছর। সেই হাজারবর্ষী জলো গাছ আর তাকে ডুবিয়ে রাখা শ্যাওলা জলের জলাধার টেনে আনে নানা প্রান্তের মানুষকে। আমারাও তেমনই কেও।
সকাল সকালই গাড়ি এসে তুলে নেয় আমাদের হোটেল থেকে। পুরো দলটিকে নিয়ে ভ্যান চালক যখন এক সিদ্ধহস্ত টার্ন নিয়ে সেই জলাভূমির ধারের এক পল্টুনের কাছে গাড়ি থামালেন, তখনো সেখানে মাঝি সর্দার উপস্থিত হননি। আমরা এদিক সেদিক তাকিয়ে তীরে বাঁধা কোন নৌকো বা ওজাতীয় কিছুর উপস্থিতি খুঁজি, কিন্তু তেমন কিছুই খুঁজে পাই না। এই জলাভূমিটি টলটলে জলের নয়, বরং পুরোটাই ঢেকে আছে সবুজ শ্যাওলায়, তাই পা ডুবিয়ে বসে যাবো কিংবা নাইতে নামবো তেমন উপায়ও নেই। তবে খুব বেশিক্ষণ আমাদের এই আশাহত মুহূর্ত কাটে না, অচিরেই আমরা দেখতে পাই পেছনে কিছু ছোট নৌকো বেঁধে এক ট্রাক এসে হাজির সেই জলাধারের কোণে। ট্রাকের চালক ওরফে আমাদের আজকের মাঝি সর্দার রিচার্ড একাই সেসব নৌকো নামাতে নামাতে বললেন, দুঃখিত একটু দেরী করে ফেললাম, তবে আজ তোমাদের এমন কিছু দেখাব তাতে হয়তো তোমরা আমাকে এই দেরির জন্যে গাল দেবার ফুসরত পাবে না।
ইগল পণ্ডের সবুজাভ জলে আমাদের নৌকো ভাসাবার আগে আমাদের প্রত্যেকের হাতে উঠে যায় একটি করে বৈঠা। প্রতি নৌকোয় দু জনকে বসতে হবে, বাইতেও হবে নিজেদেরই। আমাদের অগ্রগামী নৌকোয় রিচার্ড আমাদের পথ নির্দেশ করে নিয়ে যাবে। আমার নৌকোয় বৈঠা বাইছি আমি আর সেই মস্কোর কাইল। কাইলের মাঝে কেমন যেন এক অন্যমনস্কতা আর আড়ষ্টতা। বাকি নৌকোগুলো বেশ কিছুটা তফাতে গেলে আমি ওকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। বেচারা আসলে আজ এই ইগল পণ্ডে সশরীরে এলেও ওর মনটি পড়ে রয়েছে মস্কোর গৃহকোণে, যেখানে আছে ওর স্ত্রী আর দু ছেলে। দু ছেলের কথা শুনে আমার কিছুটা অক্কা পাবার দশা হয়। কারণ কাইল বয়সে আমার চেয়েও বছর দুয়েকের ছোট আর এখনও ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোয়নি, এর মাঝেই এতো কিছু? পরে কোন এক ফাঁকে যেন কাইল আমাকে বলেছিল ওরা মরমন। আমেরিকায় মরমন গোষ্ঠীর একটি বিশাল আবাস আছে ইউটাহ আর আইডাহ রাজ্যে। মরমন সম্প্রদায়ের মানুষেরা বেশ ধার্মিক। আধুনিক যুগের খ্রিষ্ট মতের ধারাগুলোর মাঝে কেবল এই ধারাটিতেই এখনও মানুষ বহুবিবাহ এবং বহু সন্তানের ধারণায় বিশ্বাস করে। আর তাই ওই অল্প বয়সেই কাইলের দু ছেলের বাবা হওয়াটা হয়তো একজন মরমন হিসেবে তেমন কোন আশ্চর্যময় ব্যাপার নয়।
নৌকো বাইবার আগেই অবশ্য রিচার্ড একখানা ছোটখাটো বয়ান দিয়ে রেখেছে, এটি নদী কিংবা সাগর না হলেও এখানে কিন্তু বেশ কিছু ঘড়িয়াল আছে। তাই কাপ্তানি করে নৌকো বাইতে গিয়ে দেখো আবার উল্টে ফেলো না। ধীরে বৈঠা চালাও, জলকে সরে যেতে দাও তোমাদেরকে পথ করে দেবার জন্যে। রিচার্ডের কথার মাঝে ঘড়িয়াল শব্দটি শুনে কিছুটা আতঙ্কের চোখে শ্যাওলায় ঢাকা কালচে জলের দিকে তাকাই, ভেসে থাকা কোন কালো চোখের দেখা সেখানে পাওয়া যায় কি?
সাইপ্রেস গাছটি মেলা প্রকারের হয়। পূর্ব ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে গাড়ি হাঁকালে ধনী কৃষকের বাড়ির আঙিনায় সরু থামের ন্যায় ঊর্ধ্বপানে বেড়ে ওঠা যে সাইপ্রেস দেখা যায় সেই ইটালিয়ান সাইপ্রেসের ধরণ গড়নের সাথে কিন্তু আবার এই জলো সাইপ্রেসের যোজন যোজন ফারাক। এই জলো সাইপ্রেসের গুড়ি জলের কাছটায় এসে হয়ে যায় কিছুটা যেন হাতির পায়ের নিম্নাংশের মতো, আর এই গাছের চারপাশে জল ফুঁড়ে বেড়ে ওঠে কিছু শ্বাসমূল, অনেকটা যেন আমাদের সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ গাছের মতো।
আমরা সাইপ্রেস গাছের ছায়ায় ঢাকা সেই জলাভূমিতে শ্বাসমূলগুলো এড়িয়ে সন্তর্পণে বৈঠা চালাই, পাছে আমাদের শব্দে কোন বুনো পাখির ঘুম ভেঙ্গে যায়। যদিও আমাদের দেখেই হয়তো বা ততক্ষণে কিছু কটন মাউথ আর ফিঙ্গার নেইল পাখি কিচির-মিচির শুরু করেছে আশেপাশের গাছের ডালে। পাখিরা যখন জেগেই গেছে তখন আর নীরবতা ভাঙতে দোষ কোথায়? সেই ভারটা রিচার্ড নিয়ে নেয় ওর নিজের কাঁধে। আমাদের নির্দেশ করে ও নিয়ে আসে এক সাড়ে আটশ বছরের পুরনো সাইপ্রেস তরুতলে। আমাদের নৌকোগুলো গোল হয়ে ঘিরে ধরে রিচার্ডের নৌকোটিকে। এবার ও ফাঁস করে আমাদের ঠিক এখানে জড়ো করবার গুঢ় কারণ। নিজের নৌকোর পাটাতনের নিচ থেকে আবিষ্কৃত হয় ওর তামাটে বর্ণের গিটার আর তাতেই ও সুর ধরে ইলিনয়ের এক লোকগীতির। এই সুরের মাঝে কোথায় যেন এক গভীর বেদনা লুকিয়ে আছে। সাইপ্রেস গাছের বজ্রাহত মগডাল পেরিয়ে বহু দূর পানে রিচার্ডের শূন্য দৃষ্টি আর সেই সাথে গিটারে সুর তোলা দেখে আমার কেন যেন মনে হয় নিজের অব্যক্ত বেদনাকে সুর আর সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রকাশের যে চলন, সে হয়তো পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষের জন্যেই একই ভাবে প্রযোজ্য। হটাৎ এক টুকরো হাওয়া এসে কম্পন তৈরি করে জলাশয়ের ঘোলাটে জলে, কিছুটা যেন কেঁপে ওঠে আমাদের নৌকো, আর সেই সাথে হয়তো কেঁপে ওঠে রিচার্ডের হালকা গলার গান।
মন্তব্য
প্রথমেই অভিনন্দন গবেষনাপত্রের জন্য। জলো সাইপ্রেসের কোন ছবি কি তুলেননি? বর্ণনা অসাধারণ । মরমনদের কথা প্রথম জানলাম।
এ্যানি মাসুদ
এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন, এই কাহিনিটি কিন্তু আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগের। তবে সে আমলে অভ্র কিংবা সচল কোনটির নামই আমার জানা ছিল না. তাই কিছু খসড়া টুকে রেখেছিলাম নোট খাতায়। আজ এতদিন বাদে সেটার সাথে নিজের স্মৃতির পাতায় থাকা কথাকে জোড়া লাগিয়ে এই লেখাটি লিখলাম।
১০ বছর আগের সেই দিনের বেশ কিছু ছবি আছে আমার কাছে, কিন্তু সচলে কেন যেন ছবি আপলোড করা যাচ্ছে না. এই সমস্যটা দূর হলে আমি ছবিগুলো হয়তো আপলোড করে দেবো।
গুডরিডস
আপনার লেখা এত ভালো লাগে যে থামলেই মনে হয় আরে লোকটা থামলো কেন, বেশতো চলছিল। এবার মোক্ষম জায়গায় এনে থামালেন, আরো কিছু দেখতে ইচ্ছে করছিল।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
থামুক, এর পরের পর্বে হয়তো নিয়ে যাব অন্য কোনো খানে। আকাশ ছোয়া বৃক্ষের সন্ধানে আমার অভিযান চলবে
গুডরিডস
বরাবরের মতোই মচমচা ভ্রমণ কাহিনী। কিন্তু কোন ছবি নেই কেন? মরমনদের কথা আমিও প্রথম জানলাম।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
ছবি নেই সচলের টেকনিক্যাল কারণে, কেন যেন ছবি আপলোড হচ্ছে না. ছবিগুলো ছাড়া লেখাটা দিতেও একটু মন খচখচ করছিলো
গুডরিডস
ল্যাঞ্জায় ১ পর্যন্ত নেই! এর চেয়ে তো ২-নাম্বারিই ভাল ছিল!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
১ যদিও নাই, তবে তার পরও ২ হয়তো আসতে পারে।
গুডরিডস
গানের ছবি না হয় নাই দিলেন; কিন্তু গাছগাছালির দুয়েকটা ছবি তো আশা করা যায়
০২
বর্ণনার ধরনটা দুর্দান্ত
লীলেন দা নেন দিলাম ছবি
গুডরিডস
বর্ণনা আর ছবিগুলো দারুন। একত্রিশ বছর আগে পাঁচ বছর কার্বন্ডেলে ছিলাম। ইগল পন্ডের কথা কেউ বলেনি। ইন্টারনেট ও ছিল না যে কারবন্ডেলের আশেপাশে দর্শনীয় কি আছে খুঁজে দেখবো তখন। আমরা লেকের ধারে মিসিসিপি নদীর ধারে আর নানান পার্কেই গেছি তখন। আমেরিকায় আমার প্রথম বাসা কারবন্ডেলে। ছেড়ে আসার পরেও কয়েকবার গেছি। এরপর গেলে অবশ্যি ইগল পন্ডে যাবো। মক্কার মানুশ হজ্জ পায় না কথাটা আমার বেলায় খেটে গেলো। আপনি দুদিন থেকে এমন সুন্দর একটা জায়গায় গেলেন আমি পাঁচ বছর থেকেও যায়নি। পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম। ধন্যবাদ।
কযেকদিন আগে কার্বন্ডেলের কথা হটাত মনে পরে, আর তখনই লেখাটার কথাও মাথায় আসে. আমারও ইচ্ছে আছে আবারও কখনো ওখানে যাবার। সময় পেলে ঘুরে এসেন, ভালো লাগবে।
গুডরিডস
এমন ঝাঁঝালো সুন্দর ছবির ভান্ডার নিয়ে চুপচাপ বসে ছিলেন ! ছবি সহ লিখাটি " ডালের মধ্যে রসুন আর পাঁচ ফোঁড়নের বাগার" এর কথা মনে করিয়ে দিল। রান্না যেহেতু জানেন ধরে নিতে পারি এমন ডালের ঘ্রান আর স্বাদ আপনার জানা আছে।
এ্যানি মাসুদ
ধন্যবাদ আপনাকে। ....
গুডরিডস
আমার মনে হয় গল্পটা এখানে থামিয়েই ঠিক করেছেন। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় লেখা 'নৌকা ভ্রমণ' জাতীয় রচনায় যেমনটা লিখতে হতো, মানে বাড়ি থেকে একবার বের করলে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে হতো, অমনটা না করায় এই লেখাটা পরিমিত হয়েছে। এটা তো আর আপনার কনফারেন্সের গল্প না যে এরপর কী করলেন, না করলেন সেই গল্প করতে হবে!
হথর্নকে কি ঠিক বিশাল বৃক্ষ বলা যায়? এটা তো আসলে গুল্ম (shrub)।
নৌকা বাইলেন কী করে? পূর্বাভিজ্ঞতা না থাকলে নৌকা বাইতে গেলে হয় নৌকা কেবল এক জায়গায় ঘুরতে থাকবে অথবা কেবল পানি ছিটাছিটি সার হবে।
গল্প-বর্ণনা যথারীতি চমৎকার, মেদহীন, সাবলীল। এমন টুকরো গল্প আরও আসুক।
আপনার চোখকে ফাকি দেই, সেই সাধ্য কি আমার আছে? ঠিক ধরেছেন, নৌকা বাইবার জন্যে পূর্ব অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। আমি প্রথমে কযেকবার চেষ্টা করে দেখলাম নৌকো একই জায়গায় ঘুরপাক খায়. পরে আমি হাল ছেড়ে দিয়ে কাইলকেই বললাম বৈঠা বাইতে, ও দেখলাম এ ব্যাপারে রীতিমতো পাকা। কিছুদুর যাবার পর ও আমাকে কিছুটা টেকনিক শিখিয়ে দেয়, সেই দিয়েই পরে হাত লাগিয়েছিলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।
গুডরিডস
ঝকঝকে বর্ণনা! মনে হলে আপনার সাথেই নৌকা বেয়ে আসলাম।
যুক্তরাষ্ট্রে মরমনদের বহুবিবাহটুকু বাদ দিলে বাকি খৃষ্টধর্মালম্বীদের মধ্যেও বহুসন্তান এর বিষয়টা খুবই প্রচলিত। অনেক এখানে অনেক অঙ্গরাজ্যেই গর্ভপাত বিষয়টাকে কঠিন করে ফেলা হচ্ছে। এক মেকানিকের সাথে পরিচয় হয়েছিল, ২৫ বয়সে ৪ সন্তানের পিতা। এখানে অনেকেই হাইস্কুল শেষ করে কাজ শুরু করে, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যাবার মত আয়ও করে। বিয়ে করে (বা না করে) সংসার শুরু করতে বাধা থাকে না তেমন।
শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ মেঘলা মানুষ সময় নিয়ে পড়বার জন্যে।
গুডরিডস
নতুন মন্তব্য করুন