আমাদের অফিস ভবনটি বারো তলা, আর আমার নিজের অফিস ঘরটি এগার তলায়। এ ভবনের প্রতিটি বিজোড় তলাতেই একটি করে ব্যাল্কনি আছে, তাই সৌভাগ্যবশত আমার তলাতেও সাদা রট আয়রনের চেয়ার পাতা একটি ব্যাল্কনি কর্মক্লান্ত বুদ্ধি-শ্রমিকদের অপেক্ষায় থাকে। এক শ্রান্ত বিকেলে সেই ব্যাল্কনিতে একা বসে আছি, আমার পাশে এসে বসলেন এ অফিসেই কাজ করা এক বাংলাদেশী ভাই। তিনি অবশ্য বসেন বারো তলায়, তবে এই ব্যাল্কনির লোভে মাঝে মধ্যেই বিকেল বেলায় কিছুটা সময় এসে কাটিয়ে যান এখানে। আমার সাথে কথার এক ফাঁকে তাকে বলছিলাম সেই দুপুরের খাবারের সমস্যার কথা। বেশ পুরু সাদা কাগজের কফির গ্লাসে বেশ লম্বা এক চুমুক দিয়ে তিনি বললেন, “আরে এটা আবার কোন সমস্যা হল? তোমাকে আজই এক বুদ্ধি বাতলে দিচ্ছি। এ ভবনের প্রতি তলায় দু কোণে দুটি মিটিং রুম আছে। সেখানে প্রায় প্রতিদিন দুপুর বারটা থেকে একটা পর্যন্ত মিটিং চলে, এগুলোকে বলা হয় লাঞ্চ মিটিং। মানে মিটিং এর সাথে দুপুরের খাবার দাবারেরও যৎকিঞ্চিত ব্যবস্থা থাকে। তুমি করবে কি ঠিক একটার পর এই মিটিং রুমগুলোতে ঢু মারা শুরু করবে। প্রথমে যেতে পার বারো তলায়, সেখানে না কিছু না পেলে যাবে এগার তলায়, এভাবে খুব বেশি নামতে হবেনা, বড় জোর ছ কি সাত তলায় নামার মধ্যেই বহু খাবার পেয়ে যাবে”। মানে তিনি বলতে চাচ্ছেন এই মিটিং রুমগুলোতে মিটিং শেষ হবার পর বেশ কিছু খাবার বেঁচে যায়, সেগুলো খুব সহজেই নিয়ে এসে উদর পূর্তি করা যায় আরকি। হুমম, বুদ্ধি মন্দ নয়। আমি এরপর যেদিন মধ্যাহ্ন-ভোজনে বাইরে যেতে ইচ্ছে করতো না, সেদিনই নেমে পড়তাম এই খাদ্য সন্ধানে। তিনি কিন্তু ভুল বলেননি, আমি এভাবে খাদ্য সন্ধানে গিয়ে কখনো বিফল হইনি। তবে সেই সফলতার সাথে সাথে আরেকটি ব্যাপার লক্ষ করে আমি প্রচণ্ড আত্মপীড়ায় ভুগতাম, আর সেটি হল বিপুল খাদ্য অপচয় দেখে। অনেক সময়েই দেখতাম থাই কিংবা ইন্ডিয়ান খাবারের সাথে হয়তো ভাতের ট্রে আনা হয়েছে দুটি, তার প্রায় দেড় ট্রে ভাতই পড়ে আছে অবশিষ্ট হয়ে। সে বছর মায়ানমারের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সাইক্লোনের কারণে বিশ্ব বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিকহারে বেড়ে গিয়েছিলো, আমেরিকায় প্রাচ্য থেকে আমদানিকৃত চালের দাম বেড়েছিল প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ অবধি। অথচ চালের সেই দুর্মূল্যের বাজারে ঠিক এমনিভাবে ট্রের পর ট্রে ভাত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ফেলে দেবার অপেক্ষায় থাকতো। আমার মা ছোটবেলায় বলতেন, “ভাত ফেলিস না বাবা, ওতে ভাতের অভিশাপ লাগে। তোরা হয়তো ভাতের কষ্ট বুঝবি না, কিন্তু আমরা জানি ভাতের কষ্ট কি। ৭১ এ ভারতের শরণার্থী শিবিরে থাকার সময়ে আমরা দিনের পর এই ভাতের অভাবে কাটিয়েছি”। মায়ের সেই কথাগুলো আজও ভুলতে পারি না। তাই এখানে এই অপচয় আমাকে বড্ড নাড়া দেয়, আমি এ দেশের এই খাদ্য অপচয় নিয়ে আরও কিছুটা জানা এবং বোঝার চেষ্টা করি। যতটুকু জানতে পারি তা রীতিমতো চমকে ওঠার মতো।
এদেশে খাবার-দাবার কেনার এক ঝামেলা হল ছোটখাটো মোড়কে খুব কম জিনিশই পাওয়া যায়। হয়তো বিস্কুট কিনতে ইচ্ছে হল কিন্তু তার জন্যে কিনতে হবে আস্ত এক বিশাল প্যাকেট বিস্কুট। আমি আবার নানা পদের বিস্কুট চেখে দেখতে পছন্দ করি। এভাবে দেখা যায় আমার আলমারিতে জমা হয়েছে অন্তত দশ-বারো পদের বিস্কুটের প্যাকেট। কিন্তু চায়ের সাথে দু তিনটে ছাড়া তো আর মুড়ি মুড়কির মতো করে বিস্কুট খাওয়া সম্ভব নয়। তাই দেখা যায় মাস পেরুলেই আমার বয়ামগুলোতে আধ-খাওয়া প্যাকেটের স্তূপ, যেগুলো এক সময় বাধ্য হয়েই আমাকে ফেলে দিতে হয়। খেয়াল করেছি আমি এভাবে আমার কেনা বিস্কুটের প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশই ফেলে দিচ্ছি। ব্যক্তিগতভাবে আমার এই অপচয়ের শতাংশের পরিমাণটি কিন্তু আমেরিকার গড় খাদ্য অপচয়ের প্রায় কাছাকাছি। প্রতি বছর আমেরিকার মোট উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশই আসলে অপচয়ের খাতায় ওঠে। অথচ পিদিমের নিচের অন্ধকারের মতো বিশ্বের অন্যতম ধনী এদেশে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ অনাহার অথবা স্বল্পখাদ্যে দিন কাটায়। এই বিপুল পরিমাণের খাদ্য অপচয় না করে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে এর কিছুটা হলেও এই অনাহারীদের পাতে তুলে দেয়া যায়।
তবে এই খাদ্য অপচয় না হলে কি কি হতো সে বিষয়ে আলোচনার আগে প্রথমে বলে নেই এই অপচয়ের স্থান-কাল-পাত্র কোথায়। যেহেতু এই লেখাটি শুরু করেছিলাম আমার অফিসের মিটিঙের সেই বেঁচে যাওয়া খাবার আর আমার ঘরের ফেলে দেয়া বিস্কুটের কথা দিয়ে, সে থেকে ভেবে নেয়ার কারণ নেই যে এই খাদ্য অপচয় ঘটে ভোক্তার পর্যায় থেকে। বরং কৃষিপণ্য উৎপাদন, ফসল আহরণ, বিপণন এবং বাজারজাতকরণ এই প্রতিটি পর্যায়েই বিপুল পরিমাণে খাদ্য অপচয় হয়। প্রথমে ধরা যাক ফসল আহরণের সময়টির কথা। আমি নিজেই কয়েকটি স্ট্রবেরি বা আপেল বাগানে গিয়ে দেখেছি সেখানে অল্প পোকায় খাওয়া, কিছুটা বেশি পেকে যাওয়া বা আকারে বেঢপ আকৃতির হলেই সেই ফলকে ফেলে দেয়া হয় বাতিল ফলের ঝুড়িতে। কিন্তু এভাবে যে বিশাল পরিমাণে ফল ছুঁড়ে ফেলা হয় তার একটা বিরাট অংশকে কিন্তু প্রক্রিয়জাতকরন অথবা ভিন্ন পদ্ধতির বিপণনের মাধ্যমে কিছু মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। বিপণন এবং বাজারজাতকরণের সময়েও ঘটে বিশাল অপচয়। এখানকার সুপার মার্কেটগুলো কৃষকের কাছ থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহের পরও শুধুমাত্র বাজারজাতকরণের চমকের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিটি কৃষিপণ্যের আকার, পক্বতার পরিমাণ, রঙ এই বিষয়গুলোর দিকে কঠোরভাবে নজর রাখে। যার ফলে যখন একটি চালানে এর কিছুটা ব্যাতয় ঘটে তখনই তারা সেই অংশটি দ্রুত ঝেড়ে ফেলে। ওদিকে আবার ভোক্তাদের একটি বড় অংশই খুব কঠোরভাবে মেনে চলেন খাদ্যের গায়ে লিখে রাখা মেয়াদ-উত্তীর্ণের তারিখ। আর তাই ওই তারিখের দিন বিক্রি না হলে দোকান থেকে সোজা ভাগাড়ে নিয়ে ফেলা হয় সেই খাদ্য। কিন্তু সত্যিই কি সেদিনই মৃত্যু ঘটে সেকল খাবারের? সাধারণত কিন্তু দেখা যায় অনেক খাবারই মেয়াদ উত্তীর্ণের ২-৩ পরও দিব্যি খাবার যুগ্যি থাকে। এই যেমন- দুধ, ডিম, কলা, ফলের রস। আমার নিজের একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। ডালাসে আমি যখন আমার মামার বাড়িতে কিছুকাল থেকে পড়াশোনা করতাম সে সময়ে আমার মামা কাজ করতেন একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। মামার শিফট ছিল দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত। রাতে শিফট শেষ করে বাড়ি যাবার আগে মামার কাজ ছিল সেদিনের মেয়াদ-উত্তীর্ণ খাবারগুলো জঞ্জালের স্তূপে ফেলে দেয়া। এই দোকানের একটি বিশেষ টুনা এবং চিকেন স্যান্ডউইচ ছিল আমার বিশেষ প্রিয়। তাই আমার মামাকে বলা ছিল জঞ্জালে না ফেলে তিনি যেন আমার জন্য কয়েকটি স্যান্ডউইচ নিয়ে আসেন, আমার মামার দোকানের সেই স্যান্ডউইচগুলো দিয়ে আমার পরের দু তিনদিনের দুপুরের টিফিন দিব্যি হয়ে যেত। কারণ মেয়াদ-উত্তীর্ণ হলেও সেই স্যান্ডউইচগুলো খাবারের অনুপযোগী হতো আরও ২-৩ দিন পর। কিন্তু এদেশে ওই ভোক্তার রুচি এবং খাবারের উচ্চ মান রক্ষার্থে কোনরূপ ঝুঁকিতে না গিয়ে খাবারের মেয়াদ-উত্তীর্ণের তারিখ ঠিক করা হয় একটি নিরাপদ সময়ের মধ্যে। সে থাকুক, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু কথা হল যে দু তিন দিনের হিসেব আমি দিলাম সে দু তিনের মধ্যে এই খাবারগুলো ফেলে না দিয়ে যদি অন্য কোথাও কাজে লাগাবার ব্যবস্থা করা যায় তবে সেটি একটি বিশাল জনগোষ্ঠী উপকারে আসতে পারে। একই কথা প্রযোজ্য এদেশের হাজার হাজার হোটেল রেস্তরাঁর ক্ষেত্রেও। এ দেশের হোটেল রেস্তরাঁগুলোতে এমনকি সবজি-তরকারি কুটে খাবার বানাবার সময়েও বিপুল পরিমাণে খাদ্য অপচয় করা হয়। হয়তো দেখা গেল ফুলকপি কেটে একটি পদ রাঁধা হবে, কিন্তু সেটি কাটতে গিয়ে ফুলকপির ফুলের যে ক্ষুদ্র অংশগুলো বেরিয়ে পড়ছে সেগুলোকে সোজা ফেলা হচ্ছে ময়লার ঝুড়িতে। কিন্তু অনেকেই ভাবেছে না এই উচ্ছিষ্ট অংশগুলো হয়তো স্যুপের মতো ভিন্ন কোন পদে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
ভোক্তার খাদ্যাভ্যাস এবং দৃষ্টিভঙ্গিও এই অপচয়ের পেছনে অনেকাংশে দায়ী। কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝাবার চেষ্টা করি। এদেশের ভোক্তারা দোকানের শূন্য শেলফ দেখতে অভ্যস্ত নয়, যদি তেমনটি তারা দেখে তবে ধরে নেয় সে দোকানের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে। ভোক্তার এই দৃষ্টিভঙ্গির কথা মাথায় রেখেই দোকানের সেলফগুলো সবসময় উপচে থাকে খাদ্যে। কিন্তু এই বিষয়টি চিন্তা করা যাক পচনশীল খাদ্যের ক্ষেত্রে। যে কমলাগুলো আজ উপচে আছে দোকানের শেলফে সেগুলোর সবই কি বিক্রি হয়ে যাবে? না, হবে না। হয়তো উপরের স্তরের গুলো বিক্রি হয়ে যাবে, কিন্তু নিচের স্তরের অনেক কমলাই কিন্তু অবিক্রীত রয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে কি বিক্রেতা নিচের স্তরের কমলাগুলো বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন নতুন কমলা এনে সেই সেলফটি ভরাবার জন্যে? উত্তর হল, না। বিক্রেতা এই সেলফটি সর্বদাই কমলায় উপচে আছে এমন একটি ছবি ক্রেতার সামনে তুলে ধরতে চান, সেজন্যে তাকে অধিক পরিমাণে এ ধরণের পচনশীল খাবার মজুদ করতে হয়। শুধুমাত্র এই অধিক মজুদের কারণেই দোকানের সেলফের প্রায় প্রায় পঁচিশ শতাংশের মতো পচনশীল খাদ্য নষ্ট হয়।
আমেরিকায় ভোক্তাদের মাঝে কেটে কুটে রাখা ফলমূল-সবজির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। যেখানে হয়তো পাঁচ ডলার দিয়েই কয়েক পদের ফলমূল কেনা সম্ভব, সেখানে মানুষ দশ ডলার দিয়ে ছোট এক বাক্স কাটা ফলমূল কিনছে। এদেশে মানুষ ওই ফলমূল বা সবজি কিনে বাড়িতে নিয়ে কাটবার মাধ্যমে তাদের সময় নষ্ট করতে চায় না। কিন্তু সমস্যা হল এতে যে শুধু তাদের বাড়তি খরচা-পাতি হয় তাই নয়, এই কেটে-কুটে বিক্রি করা ফলমূল-সবজি হল অপচয়ের আরেকটি উৎস। একটি আনারস আমি যখন বাড়িতে এনে নিজে কেটে খাই, তখন আমি হয়তো আনারসের বিশ ভাগ ফেলে দেই কাটার সময়ে, অন্যদিকে একই আনারস যখন বিভিন্ন কোম্পানি বাণিজ্যিকভাবে কেটে টুকরো করে বাক্সে ভরে বিক্রি করে তখন হয়তো আনারসের প্রায় চল্লিশ ভাগই ফেলে দেয়া হয়।
ওদিকে খাবারের আকারও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এই বিষয়টিতে। গত তিন-চার দশকে আমেরিকায় খাবারের আকার আকৃতি বেড়েছে প্রায় বিশ শতাংশ। পিৎজার আকার বেড়েছে, বেড়েছে রেস্টুরেন্টের প্লেটে খাবারের পরিমাণ। এদেশে অনেক সময় চাইলেও রেস্টুরেন্টে ছোট আকারের খাবার পাওয়া যায়না, মেন্যুর পদগুলো অনেক সময়ই একা খাবার পক্ষে বেশি ঠেকে। আর ক জনেই বা রেস্তরাঁর প্লেটের উচ্ছিষ্ট খাবার প্যাকেটে ভরে বাড়ি নিয়ে যায়?
আমি মাঝে মাঝে ভাবি আমেরিকায় খাবারের তুলনামূলক কম দামই কি ভোক্তাদের উৎসাহিত করে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার কিনতে? সেটি ও হতে পারে কিন্তু। এদেশে এখনও খাবারের দাম তুলনামূলকভাবে বেশ সস্তা। তবে খাবারের এই নিম্ন মূল্যটি অনেকাংশেই আবার ঊর্ধ্ব সরবরাহের সাথে সম্পর্কিত। ব্যাপারটি অনেকটা সেই মুরগী আর ডিমের মতো। অধিক সরবরাহের ফলস্বরূপ ভোক্তা কম দামে খাবার কিনে অপচয়ের পরিমাণ বাড়াচ্ছে, আবার ওদিকে যদি সরবরাহ কমানো হয় তাহলে হয়তো খাবারের দাম কিছুটা বেড়ে এক শ্রেণির ভোক্তার উপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে। তাই এক্ষেত্রে হয়তো অতীব সতর্কতার সাথে এমন কিছু খাদ্যের দাম বাড়ানো যায় যাতে করে ভোক্তার নাভিশ্বাস ওঠাবে না। আবারও আমার নিজের এক অভিজ্ঞতার কথা বলি। লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনুসের এক ম্যাকডোনালডের দোকানে গিয়ে স্যান্ডউইচ অর্ডারের পর বললাম, “কটা ক্যাচআপের প্যাকেট দাও দেখি”। আমার দিকে চেয়ে সেই বিক্রেতা মেয়েটি বলল, “ক প্যাকেট চাও”? এবারে আমার কিছুটা বিরক্ত হবার পালা, কারণ আমেরিকার সব ফাস্ট-ফুডের দোকানে খাবার অর্ডার করার পর ক্যাচআপ চাইলে ওরা বিনা-প্রশ্নে বিনামূল্যে এক মুঠো ক্যাচআপের প্যাকেট তুলে দেয়। আমার বিরক্তিটুকু মুখে রেখেই মেয়েটিকে বললাম, “এই দাও দেখি তিন-চারটে”। এবারে মেয়েটির পাল্টা প্রশ্ন, “ঠিক করে বল, তিনটে না চারটে”? ওদিকে আমার বিরক্তির মিটারে পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। যেন মনে হচ্ছিলো এ জিনিস হয়তো না চাইলেই ভালো হতো। কিন্তু চেয়েই যখন ফেলেছি তাই ভাবলাম শেষটা দেখা যাক। আমি তার কাছে তিনটে ক্যাচআপের প্যাকেট চাইলাম। এবারে মেয়েটির ঝটপট উত্তর, “আরও ষাট সেন্টু দাও, প্রতি প্যাকেটের জন্যে বিশ সেন্টু”। এবারে আমি বুঝতে পারলাম কেন মেয়েটি আমার কাছ থেকে ক্যাচআপের প্যাকেটের প্রকৃত সংখ্যা জানতে চাইছিল, কারণ এখানে ও বস্তু ফ্রিতে দেয়া হয় না। সেই ক্যাচআপ সহযোগে আমার স্যান্ডউইচখানা খাবারের সময় মনে মনে ভাবলাম, “এই ব্যাপারটি কিন্তু মন্দ নয়। কারণ ফ্রিতে পাবার কারণেই আমেরিকায় আমি দেখি সবাই ওই মুঠো মুঠো ক্যাচআপের প্যাকেট নিয়ে কেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করে, কেও আবার ব্যাবহার না করেই কয়েকটি প্যাকেট নিয়ে ফেলে দেয় ময়লার ঝুড়িতে। আর এভাবেই হয়তো অপচয় হচ্ছে বিশাল পরিমাণের ক্যাচআপের, অথচ ওই বস্তু যদি এমনকি পাঁচ সেন্ট দিয়েও কিনে খেতে হতো তাহলে হয়তো এতটা যথেচ্ছা অপচয় হতো না।
এভাবে নানা ঘাটে আমেরিকায় কি পরিমাণে খাদ্য অপচয় হয় তা বোঝাবার জন্যে কয়েকটি পরিসংখ্যান দেই। এদেশের দোকান এবং সুপার-মার্কেটগুলো বছরে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারের ফল ও সবজি আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে। পরিবারিক পর্যায়ে প্রতিটি আমেরিকান পরিবার বছরে গড়ে প্রায় দেড় হাজার ডলারের খাবার অপচয় করে এবং সারা আমেরিকায় এভাবে প্রতি বছর প্রায় ১৩৩ বিলিয়ন পাউন্ড খাবার অপচয় হয়। তাই হিসেব করে দেখা যাচ্ছে যে এই বিশাল খাদ্য অপচয় যদি বছরে অন্তত ১৫ শতাংশও কমানো যায় তবে প্রায় আড়াই কোটি আমেরিকানের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। যেকোন খাদ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত থাকে কৃষি জমি, সার, বিদ্যুৎ, কীটনাশক আর সেচের জলের ব্যাপারটি। আমেরিকায় সুপেয় জলের প্রায় আশি শতাংশই ব্যয় হয় কৃষিপণ্য উৎপাদনে। আর তাই বিশাল পরিমাণের এই খাদ্য অপচয়ের আরেকটি অর্থ হল আমেরিকার সেই মিঠা জলের অন্তত প্রায় পঁচিশ শতাংশকে অপচয়ের খাতায় ফেলে দেয়া। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুপেয় জলের পরিমাণ ক্রমশই সঙ্কুচিত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে আমেরিকার সব চেয়ে বড় কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় ভয়াবহ খরা দেখা দেয়ায় এই রাজ্যের কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত সুপেয় জলের বিপুল পরিমাণ নিয়ে নীতিনির্ধারকেরা বার বার ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। এমতাবস্থায় এই বিশাল অপচয় কমিয়ে এনে কৃষিকাজে ব্যবহৃত সুপেয় জলের পরিমাণও কমিয়ে ফেলা যায়। এখানেই শেষ নয়, আরও আছে। প্রতি বছর এই ফেলে দেয়া খাবারের পচনে যে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, তা আমেরিকার নির্গত মোট মিথেন গ্যাসের প্রায় এক চতুর্থাংশ। বলা বাহুল্য, এই মিথেন গ্যাস একটি গ্রিনহাউস গ্যাস যেটি বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্যে অন্যতম দায়ী।
তবে এতসব হতাশাব্যাঞ্জক চিত্রের মাঝেও কিছু আশার বাণী আছে। অপচয়ের এই বিশাল চিত্রটি দেখে অনেকেই ব্যাপারটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন, ভাবছেন এর প্রতিরোধের উপায় নিয়ে। এ নিয়ে ছোটখাটো এক সামাজিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটও তৈরি হয়েছে। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার বেন সাইমন এবং তার কয়েক বন্ধু তেমনই কিছু এগিয়ে আসা মানুষ। সাইমনের দলটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই তাদের ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের অপচয়ের বিষয়টি খেয়াল করে এ নিয়ে কিছু করবার প্রত্যয় ব্যাক্ত করে। পাশ করে বেরিয়ে কোন চাকরিতে না জড়িয়ে তারা খুলে বসে ‘ইমপারফ্যাক্ট’ নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। তাদের আইডিয়াটি ছিল অনেকটা এরকম, তারা ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন কৃষি খামারে গিয়ে কৃষকের ফেলা দেয়া ফল আর সবজি কম মূল্যে কিনে নিয়ে তারপর বিভিন্ন ধরণের ফল বা সবজি দিয়ে একটি ছোট বাক্স তৈরি করে সান ফ্রানসিসকো এলাকায় বিক্রি করবে বাক্স প্রতি ১২ কি ১৫ ডলারে। এই কেনা বেচার মাঝে যে নামমাত্র মুনাফা হবে সে দিয়ে তাদের পরিবহণ এবং দাপ্তরিক ব্যায় নির্বাহ করা হবে। অল্প কিছুদিনের মাঝেই তারা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিলো। কারণ এতে করে কৃষকের ফেলে দেয়া ফল-সবজি যেমন ক্রেতা মুখ দেখল, তেমনি করে কিছু ক্রেতাও মূল দামের প্রায় অর্ধেক দামে এই ফল-সবজির বাক্স বুঝে পেলেন। এ ধরণের আরও কিছু স্বেচ্ছাসেবী এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও আজকাল এগিয়ে আসছে খাদ্য অপচয় রোধে কার্যকর কিছু করবার জন্যে, এমনকি বসে নেই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারও। কেন্দ্রীয় পরিবেশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে অপচয়ের মাত্রা শতকরা পঞ্চাশ ভাগ কমিয়ে আনার। তবে সরকারি-বেসরকারি এতসব উদ্যোগের সাথে সাথে মূল যে জিনিসটি প্রয়োজন সেটি হল এ উদ্যোগে জনমানুষের সম্পৃক্ততা, সচতেনতা এবং প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তবেই হয়তো ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হতে পারে।
মন্তব্য
২০৩০ সালের মধ্যে কিছু হবে এমনটা আশা করা ঠিক হবে না। মার্কিন দেশে সরকারের নিয়ন্ত্রণ অন্য পশ্চিমা দেশ থেকে কম মনে হয় আমার কাছে। ব্যবসায়ের উপর কন্ট্রোল করাটা তাদের কোর ফিলসফির সাথে যায়ও না। আর ক্যালিফোর্নিয়াতে সব সময় এরকম হিপশটার গ্রুপ সবসময় ছিল। ওরা পুরো আমেরিকা বদলাতে পারবে না। বর্ডার পেরিয়ে অ্যারিজোনা গেলেই মুখ থুবড়ে পড়বে তাদের সাধ আহ্লাদ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হাসিব ভাই,
আমেরিকায় ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ একেবারেই স্বল্প সেটি সত্যি, তবে ফেডারেল সরকারের কোনো পলিসি যদি একেবারেই না থাকে এ ব্যাপারে তাহলে সরকারি-বেসরকারি কোনো মহলেই কোনো দিক নির্দেশনা থাকেনা। এ দেশে এক সমস্যা হলো সব কিছুকেই এত বিপুল ভাবে মুনাফার সাথে মেপে দেখা হয় যে জনকল্যাণ এর ব্যাপারটি উবে গিয়ে শেষে মুনাফাই মুখ্য হয়ে ওঠে.
আর ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যাপারটির ক্ষেত্রে আমি মনে করি, যদি অন্তত এ রাজ্যেও অন্তত কৃষি খামার গুলোতে এই অপচয়ের ব্যাপারটি কমিয়ে আনা যায় তবে মন্দ কি? কারণ ক্যালিফোর্নিয়া আমেরিকার বৃহত্তম সবজি এবং ফলমূল উৎপাদনকারী রাজ্য। তাই খাদ্যের সাথে এ রাজ্যের বেশ ভালোরকমের সংযুক্তি আছে.
গুডরিডস
আমেরিকান সরকার হস্তক্ষেপ কম করে এটা ঠিক, তবে এখানকার সব বিজনেসই একটা জিনিসকে গুরু মানে---কাস্টোমার। আমেরিকার ফুড ওয়ার্ল্ডে গত কয়েকবছরে অনেকগুলা ভালো ভালো পদক্ষেপ এসেছে কাস্টোমারের চাপে পড়ে, সরকারের ভয়ে নয়। ওয়ালমার্টের মত কোম্পানি গাঁও-গেরামের স্টোরেও অনেক জিনিস অর্গানিক রাখে নিয়মিত, যে অর্গানিক বছর দশেক আগেও হিপস্টার ব্যাপার ছিলো। টিনজাত খাবারে ক্ষতিকর বিপিএ লাইনিং বাদ দিয়েছে কনএগ্রা, সেটাও কাস্টোমারের চাপে।
তবে খাদ্য অপচয়ের ব্যাপারটা আরো জটিল, খাবার-দাবার সস্তা হওয়ার কারণে ব্যাক্তিগত লেভেলে অপচয় বন্ধ করাটা কঠিন। তবে লেখকের সাথে একমত---জনমত (কাস্টোমার প্রেশার) এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
----কৌতুহলী
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে, আমারো তাই মনে হয়, ব্যাপক ভিত্তিক জন সচেতনতা তৈরী না করা গেলে কোনো সফলতাই আসবে না. কারণ কৃষি কোম্পানি বা ফুড স্টোর গুলো দিন শেষে তাদের মুনাফার ব্যাপারটাতেই বেশি প্রাধাণ্য দেবে।
অন্যদিকে বছরের পর বছর সস্তা খাবার পেয়ে যথেচ্ছ অপচয়ের যে সংস্কৃতি এ দেশের মানুষের মধ্যে গড়ে উঠেছে, তা শোধরানো ও একটি বেশ জটিল ব্যাপার।
গুডরিডস
ভালো পোস্ট। গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট যেমন অসুন্দর/অসম্পূর্ণ খাবার ফেলে দেয়া, সবসময় শেলফ ভরে ভরে রাখা যেন মানুষ কিনতে উৎসাহী হয়, অতিরিক্ত বড় খাবারের আকার ইত্যাদি অত্যন্ত সত্য কথা। জনসচেতনতা এবং আচরন পরিবর্তন করা দরকার এগুলো আটকাতে। তবেঃ
"এদেশে ওই ভোক্তার রুচি এবং খাবারের উচ্চ মান রক্ষার্থে কোনরূপ ঝুঁকিতে না গিয়ে খাবারের মেয়াদ-উত্তীর্ণের তারিখ ঠিক করা হয় একটি নিরাপদ সময়ের মধ্যে। সে থাকুক, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু কথা হল যে দু তিন দিনের হিসেব আমি দিলাম সে দু তিনের মধ্যে এই খাবারগুলো ফেলে না দিয়ে যদি অন্য কোথাও কাজে লাগাবার ব্যবস্থা করা যায় তবে সেটি একটি বিশাল জনগোষ্ঠী উপকারে আসতে পারে।"
এইটি একটি অপেক্ষাকৃত জটিল সমস্যা। সচলের মেনুবার উধাও না হয়ে গেলে ঝুঁকি শব্দটা বোল্ড করে দিতাম উপরে। সে যাক। কথা হল, কোন দোকান এই ঝুঁকি (তার প্রবাবিলিটি যতই কম হোক) নিবে না। হাজার হাজার লোকের উপকার হবার পরে যদি মাত্র একটি ফুড পয়জনিংঘটিত মামলাহামলা হয় তবে দোকানটিকে কড়া আর্থিক ও ব্র্যান্ডিক জরিমানা গুণতে হতে পারে। খাবার বিলিয়ে দেয়া একটি চ্যারিটি। কোন আর্থিক মাশুল না গুণে যদি চ্যারিটি করা যায় (যেমন ভলান্টিয়ারিং ইত্যাদি) তাহলে কর্পোরেশনগুলো তাতে রাজি হয়ে যাবে, কিন্তু সদ্য মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিলিবন্টনঘটিত চ্যারিটির ঝুঁকি তারা নিতে চাইবে না।
তবে, তারা যদি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয় (যেমন ফুড ইন্সপেকশন, যথাযথ হট-কোল্ড স্টোরেজ এর ব্যবস্থা ইত্যাদি) চ্যারিটিতে দেবার আগে তাহলে নষ্ট খাবার পৌঁছানোর ঝুঁকি কমে আসবে। কিন্তু সেটা করতে গেলে তাদের খরচ বেড়ে যাবে, চ্যারিটির জন্য রানিং কস্ট কেউ বাড়তে দেবে না। সুতরাং সেই পথও বন্ধ।
একটা ফুড ফর থট দিলাম। আপনার সাথে দ্বিমত নাই যে এই খাবারগুলা কাজে লাগানো যেত। টেবিলের ঐপাশের যুক্তিটাও তুলে ধরলাম আর কি।
..................................................................
#Banshibir.
পীর দা,
লেখাটি লেখার সময়ে আপনার এই পয়েন্টটির কথাও আমি ভেবেছিলাম। সদ্য মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার চ্যারিটি তে দেবার খরচ খুব সম্ভবত কোম্পানি গুলো বহন করবে না, সেটা সত্যি, আর ঝুঁকির ব্যাপারে বলতে হয় এ ব্যাপারে যদি সরকারি-বেসরকরি কিছু ফান্ড এবং দাতব্য সংস্থা পাওয়া যায় যারা সেই খাবারের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে এবং যথাযথ সংরক্ষণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিলি বন্টনের ব্যবস্থা করবে তবে হয়তো কিছু উপকার পাওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে হয়তো বা কিছু আইন সংশোধনের ব্যবস্থাও থাকা প্রয়োজন, এই যেমন মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবারগুলো এই দাতব্য সংস্থা গুলোর হাতে তুলে দেবার পর প্রদানকারী ফুড স্টোর গুলোর আর কোনো দায় থাকবে না, ইত্যাদি।
গুডরিডস
"অথচ
পিদিমের নিচের অন্ধকারের
মতো বিশ্বের অন্যতম ধনী
এদেশে প্রতিদিন হাজার হাজার
মানুষ অনাহার অথবা স্বল্পখাদ্যে
দিন কাটায়।"
ভাল্লাগসে ভাই। মার্কেটিং ট্রিকসের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়।
জনৈক অমুক
ধন্যবাদ আপনাকে
গুডরিডস
খাবারদাবার অপচয় নিয়ে আমেরিকার এই ফুটানির কালচার কতো পুরনো? মনে হয় পঞ্চাশ বছরের পুরনোও নয়। অ্যারিজোনার জন ভ্যান হেঙ্গেলের ফুড ব্যাংকের আইডিয়া পঞ্চাশ বছরের কম পুরনো। অবশ্য ফুড ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তার সাথে খাবার নষ্টের ফুটানির সরাসরি সম্পর্ক নেই। যেখানে এই অপচয় নেই সেখানেও ফুড ব্যাংক দরকার আছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়েও আমেরিকাতে ‘ক্লিন প্লেট’ আন্দোলন ছিল, কিন্তু সেসময়েও অপচয়টা এমন বাড়াবাড়ি পর্যায়ের ছিল না।
১৯৬০ সালে আমেরিকার পার ক্যাপিটা জিডিপি ছিল ৩,০১০ ডলার ২০১৫ সালে সেটা দাঁড়ায় ৫৫,৮০০ ডলারে। মানে ৫৫ বছরে পার ক্যাপিটা জিডিপি ১৮.৫৪ গুণ বেড়েছে। ‘পার ক্যাপিটা জিডিপি দিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নতি বোঝা যায় না’ জাতীয় অ্যাকাডেমিক চেহারার এঁড়ে তর্কগুলো যদি এড়িয়ে যাই তাহলে যে কেউ বুঝবে গত পঞ্চাশ বছরে আমেরিকার লোকজনের আয়-রোজগার এবং ব্যয় করার ক্ষমতা ঢেড় বেড়েছে। সুতরাং আয় বাড়ার সাথে সাথে আচরণে কিছু ফুটানি যোগ হতেই পারে। কিন্তু ব্যাপারটা তাহলে ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকতো, প্রাতিষ্ঠানিক বা জাতীয় রূপ পেতো না।
আমেরিকার কালচার মূলত হয় ইনডিউসড অথবা ইমপোজড। খাবার নষ্ট করার ফুটানির এই কালচারটা সম্ভবত ইমপোজড, এবং এটি অকারণে ইমপোজ করা হয়নি। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের খাবার নষ্ট করতে দেবার মাধ্যমে ‘আমেরিকা খুব ধনী’, ‘তারা খুব ভালো আছে’, ‘তাদের নষ্ট করার মতো বহু কিছু আছে’ জাতীয় চুলকানি সুখ নিজেদের নাগরিকদের দেয়া যায়, সাথে অন্য দেশের নাগরিকদের হীণমন্যতায় ফেলা যায়। তবে ইমপোজের কারণ সম্ভবত এতো হালকা-পাতলা নয়।
ফুটানি কালচারের শুরুর সময়টা বের করতে পারলে কোন মহামানবেরা এর পেছনে আছেন, এবং তাদের উদ্দেশ্য কী হতে পারে সেটার একটা আঁচ করা যেতো।
আমেরিকার এই ফুড কালচার যে কিছুটা ইনডিউসড বা ইম্পোজড সে ব্যাপারে আমি আপনার সাথে একমত। তবে সেটা শুধু বাইরের বিশ্বকে দেখাবার জন্যে নয়, বরং ব্যবসায়িক মুনাফাও একটি বড় কারণ এর পেছনে।
গুডরিডস
‘পার ক্যাপিটা জিডিপি দিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নতি বোঝা যায় না’ জাতীয় অ্যাকাডেমিক চেহারার এঁড়ে তর্কগুলো যদি এড়িয়ে যাই
- আমেরিকার মানুষের সক্ষমতা বেড়েছে এটা বলতে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত একাডেমিক জ্ঞানকে এঁড়ে তর্ক বলে কি যা বলতে চান সেইটা একটু কুল টাইপ কিছু হয় মনে করেন?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
পার ক্যাপিটা জিডিপির হিসেব দিয়ে সক্ষমতা বাড়া/কমার যে একটা গ্রস ধারণা পাওয়া যায় সেটার ওপর ভিত্তি করে বাকি কথাগুলো বলা যেতো। কিন্তু তাতে আমার আশংকা ছিল এতে আমি যে বাকি ফ্যাক্টরগুলোর কথা বললাম না সেই পয়েন্ট ধরে কেউ তর্ক জুড়ে দিতে পারে। তাহলে আলোচনাটা মূল বিষয় থেকে সরে যেতো। প্রতিষ্ঠিত অ্যাকাডেমিক বিষয়কে আমি অস্বীকার করিনি, অন্য কিছু প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাও করিনি।
অনেকদিন পর আপনার লেখা পেলাম। স্মৃতিকথা মূলক লেখাই হয়তো চাইছিলাম কিন্তু এ লেখাটাও ভালো লাগলো। আপনার লেখার মধ্যে যে সাবলীলতা আছে তাই টেনে নেয়, শেষ না করা পর্যন্ত উঠতে দেয়না। ভালো থাকবেন।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
মাঝে কিছুদিন হাওয়া হয়ে গেছিলাম।
এবার একটু সাহস করে অন্য ধরণের লেখা লিখলাম। স্মৃতিকথা মূলক লেখাও আসছে সামনে, যদি সময় করে উঠতে পারি।
ধন্যবাদ আপনাকে
গুডরিডস
আপনার লেখা সবসময়ই পছন্দ করি। অনেকদিন পর লিখলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম আবারও কোন ভ্রমন কাহিনী পাচ্ছি। কিন্তু যা পেয়েছি সেটাও কম নয়। আমেরিকানদের খাবারের অপচয়ের ব্যাপারটা আগেও শুনেছিলাম। মেজো খালা নেভাদা'তে থাকেন, তিনিও বিষয়টি বলেছিলেন। তবে আপনার পোস্টের মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারলাম। ধন্যবাদ।
ফাহমিদুল হান্নান রুপক
ধন্যবাদ রুপক ভাই, আমিও ফিরে এসে আপনার দার্জিলিং কাহিনি পড়ছি
গুডরিডস
ধন্যবাদ রুপক ভাই, আমিও ফিরে এসে আপনার দার্জিলিং কাহিনি পড়ছি
গুডরিডস
অফিসের ক্যাফেতে দেড়টায় লাঞ্চ সার্ভিস বন্ধ হয়। এরপর ট্র্যাশ ব্যাগ নিয়ে এসে অবিক্রীত সব খাবার ময়লায় ফেলে দেয়া হয়। কোন কারনে সময়মত লাঞ্চ নিতে না পারলে গিয়ে এই দৃশ্য দেখতে ভীষণ কেমন করে।
আর আমেরিকার রেস্টুরেন্টের খাবার আমি কোনদিনও পুরো শেষ করতে পারিনি। একবেলা রেস্টুরেন্টে খেলে উচ্ছিষ্ট দিয়ে আরও দুবেলা চলে যায় আমার।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
একই দৃশ্য বহুবার আমাকেও দেখতে হয়েছে
গুডরিডস
কানাডাতেও একই সমস্যা, তবে কম। ফ্রান্স সম্প্রতি এই ব্যাপারে আইন করেছে, সুপারমার্কেটের খাবার বিলিয়ে দিতে হবে টাইপ। এইটা ভাল্লাগছে।
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
ফ্রান্সের ওই পরিকল্পনাটি আমারও ভালো লেগেছে, ওই ব্যাপারটি এই উত্তর আমেরিকা তে প্রচলন করতে পারলে ভালো হতো.
গুডরিডস
খুব ভাল লেখা, অপচয় এমনিতেই আমেরিকার ভোক্তা-সর্বস্ব অর্থনীতির সমস্যা। জি-এম-ওর হাত ধরে খাদ্য উৎপাদন বাড়ার পরে এই সমস্যা আরও বেড়ে গেছে। আমি এর কোন নন-রেগুলেটরি সমাধান দেখি না। এই বিষয়ে আমেরিকা পশ্চাদপদ, কাজেই সমস্যা শীঘ্র সমাধান দেখবে না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সহমত, দিগন্ত দা
গুডরিডস
এ সংক্রান্ত কোন লিঙ্ক টিঙ্ক দিতে পারেন নাকি ভাই?
এটা দেখতে পারেন-
http://www.feedingamerica.org/hunger-in-america/news-and-updates/hunger-blog/doing-the-numbers-on-food.html
গুডরিডস
নতুন মন্তব্য করুন