মার্কিন কলা বাণিজ্য

জীবনযুদ্ধ এর ছবি
লিখেছেন জীবনযুদ্ধ [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২১/০৯/২০১৬ - ৫:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


গ্রাম বাংলার হাট বাজারের টং ঘর থেকে শুরু করে ইট পাথরের খাঁচায় ঢাকা পড়া মহানগরীর আনাচে কানাচের মুদি দোকান- সর্বত্রই একটি পচনশীল ফল সম্মুখে ধাবমান জনসমুদ্রের দিকে নির্বাক দৃষ্টি দিয়ে অপেক্ষায় থাকে সম্ভাব্য কোন ক্ষুধার্ত পথিকের। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকেই হয়তো এসে দোকানিকে বাড়তি ব্যস্ততায় না ফেলে নিজের প্রয়োজন মতো সংখ্যায় সেই ফলটি হস্তগত করে জামার বাঁ পকেটে হাত রাখেন পয়সা মেটাবার জন্যে। তাঁদের কেও কেও ক্ষণিকের ক্ষুধা মেটাবার জন্যে দোকানের সামনেই পেতে রাখা নাতিদীর্ঘ বেঞ্চে বসে আয়েশ করে পাটি উঠিয়ে এক হাতে সেই ফলটি খান আর হয়তো বাঁ হাতে ধরে রাখেন শুকনো একখানা রুটি। আবার কেওবা বাড়ির লোকের জন্যে কিনেছেন বলে বাজারের থলেতে প্রয়োজন মতো উঠিয়ে বাড়ির পথ ধরেন। বঙ্গদেশের নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে সকল বিত্তের মানুষের সামর্থ্যের নাগালের মাঝে থাকা সর্বজনে পরিচিত এই ফলটির নাম কলা। সকালের প্রাতঃরাশের রুটির সাহচর্যে হোক, অথবা মধ্যাহ্নের হটাৎ চেগিয়ে ওঠা খিদে মেটাবার নিমিত্তে হোক- বাঙালির প্রাত্যহিক আহার্যের আর সব উপাদানের মাঝে কলার সবিশেষ উপস্থিতি চোখে পড়বার মতো। তবে বঙ্গদেশের খাদ্য সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে থাকা কলা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি এ লেখার প্রতিপাদ্য নয়, বরং মার্কিন দেশে এই কলাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক সুবিশাল মুনাফালোভী বাণিজ্য এবং গুটিকয়েক মার্কিন কোম্পানি কর্তৃক বিশ্বের কলা বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করাই এ লেখার প্রকৃত উদ্দেশ্য।

মার্কিন দেশে আসবার পর পর আমরা আমরা সপ্তাহান্তের সদাই-পাতি করতে যাই ‘ওয়াল মার্ট’ নামক একটি ডাইনোসরসম বিপণী বিতানে। ডাইনোসরসম বলবার কারণ এ দোকানে মানুষ মারবার বন্দুক থেকে শুরু মানুষ বাঁচাবার জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, ইঁদুর মারার বিষ থেকে শুরু করে রসালো ফল সবই ওই এক সামিয়ানার নিচে পাওয়া যায়। আমরা সেই দোকানে বাজার করতে যাই গভীর রাতে, এটাই আমাদের কাছে এক ধরণের আমোদ। যেহেতু দোকানটি চব্বিশ ঘণ্টাই খোলা থাকে, তাই রাতে বাজার করতে দোষ কোথায়! প্রথম প্রথম আমি খাদ্যপণ্যের শেলফগুলোর সামনে থমকে দাঁড়াতাম, বেশ বিপাকে এবং চিন্তায় পড়তে হতো বাজারের থলেতে কিছু ভরতে হলে। আর তা হবেই বা না কেন? শুধুমাত্র বিস্কুটই হয়তো এখানে পাওয়া যায় ত্রিশ কি চল্লিশ পদের, দুধের বোতল হয়তো আছে দশ প্রকার, চিপসও আছে নিদেনপক্ষে দশ কি পনের প্রকার। এর মাঝে ঠিক কোনটি আমার চাই সেটি বুঝে নেয়া এক দুষ্কর কর্ম বৈ আর কিছু নয়। আমি এক সময়ে বুঝে যাই, এ দেশে থাকতে হলে আমাকে কিছু পয়সা এই সকল প্রকারের খাদ্যের পেছনে বিনিয়োগ করতে হবে, মানে প্রতিটি খাবারের একেকটি ব্র্যান্ড কিনে চেখে দেখে তবেই ঠিক করে নিতে হবে নিজের পছন্দের প্রকারটি। এই সকল খাদ্যসম্ভারের নানা প্রকারের মাঝে হতবিহবল হয়ে কেবল একটি শেলফে এসে আমার মুখে হাসি ফোটে, সেটি কলার শেলফ। হাসির কারণ এখানে আমার বাছাই পর্বের কোন পরিশ্রম নেই, শেলফে রাখা প্রায় সকল কলাই এক পদের, একই পক্বতা-সম্পন্ন এবং প্রায় একই আকারের। এখানে যে প্রকারের কলা আমার চোখে পড়ে সেটি খুব সম্ভত বাংলাদেশের সাগর কলার জাতের কাছাকাছি। আমি তাই প্রায় চোখ বন্ধ করে এক কাঁদি কলা থলেতে পুরে বাদবাদি সদাইয়ের দিকে নজর দেই।

পরদিন সকালে তাড়াহুড়োয় স্কুলে যাবার আগে কলা ছুলবার মুহূর্তে আমার আগের রাতের সেই শেলফটির কথা হটাৎ মনে পড়ে। আর তখনই কেন যেন ঘড়ির কাটা টিক টিক করে ক্লাসের নির্ধারিত সময়ের দিকে এগিয়ে চললেও আমার চিন্তার ট্রেন তা অমান্য করে কলা বিষয়ক কিছু প্রশ্ন আমার সামনে হাজির করে। আমি ভাবতে থাকি, দেশে থাকা অবস্থায় তো কলা দেখেছি হরেক জাতের- এই যেমন সাগর কলা, সবরি কলা, বিচি কলা, চিনিচাম্পা কলা, কাঁচা কলা। কিন্তু এই মার্কিন মুল্লুকে কেবল এক পদের কলা চোখে পড়লো কেন? এমনকি বঙ্গদেশে কলার কাঁদি থেকে ডজন খানেক কলা কিনলে সেই কলার মাঝে বিভিন্ন পক্বতার মাত্রায় কলা পাবার সম্ভাবনা অত্যাধিক, ওদিকে এই দেশে সব কলাই যেন প্রায় একই পক্বতা প্রাপ্ত। এতটা নিখুঁতভাবে আকার, পক্বতার পরিমাপ, প্রকার মেনে দোকানের শেলফে এই কলার আগমনের পেছনে যে এক নিগুঢ় রহস্য সেটি বুঝতে শার্লক হোমস হবার প্রয়োজন নেই। তবে ক্লাসের তাড়া থাকায় সেদিন আর এই নিয়ে বাড়তি চিন্তা ভাবনার সুযোগ পাই না। সেই সুযোগ মেলে তারও প্রায় আট বছর পর।

ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ ক্লাসে ভর্তি হলে সেখানে আমাকে ‘নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা’ নামক একটি কোর্স ধরিয়ে দেয়া হয়। যদিও আমি প্রথমে ভাবছিলাম এই দেশে তেমন কোন অসৎ কর্ম তো আপাত দৃষ্টিতে চোখে পড়ে না তবে অনর্থক এমন একটি কোর্স নেবার যথার্থতা কি? সেটি অবশ্য আমার কাছে খোলাসা হয়ে যায় কোর্সটি নেবার কিছু দিনের মাঝেই। বেশ কিছু গবেষণাপত্রে এ দেশের ব্যবসায়িক মহলে ছড়ানো উচ্চমাত্রার দুর্নীতি বা নৈতিক স্খলন সম্পর্কে পড়াশোনা করে আমি নড়ে-চড়ে বসি। আর অনেকটা সে সময়েই আমার কাছে এ দেশের কলা ব্যবসা সংক্রান্ত আরও কিছু গবেষণাপত্র চলে আসে। পুরনো সেই কৌতূহল বজায় থাকায় আমি গোগ্রাসে গিলতে থাকি সেসব, আমার বেশ কিছু পুরনো প্রশ্নের উত্তর তো পাইই তার সাথে জোটে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য।

প্রথমে কলা নিয়ে দু একটা কথা বলে নেই। অনেকে বলেন কলা ফলটির আদি জন্মস্থান নাকি চীন দেশে। তারপর নানা বণিকের হাত ধরে এটি ছড়িয়ে যায় ভারত হয়ে আফ্রিকায়, তারপর সেখান থেকে হয়তো কোন নাবিকের পালতোলা জাহাজের যাত্রী হয়ে এটি একসময় পা রাখে ল্যাটিন আমেরিকায়। আজ সারা বিশ্বে এই ফলটি এতটাই জনপ্রিয় যে বিশ্ব কৃষিপণ্যের বাজারে সর্বাধিক চাহিদার দিক দিয়ে গম এবং কফির পরেই স্থান করে নিয়েছে এটি। নিরক্ষরেখার দশ ডিগ্রী উত্তর আর দক্ষিণে যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশ ভালো আর মাটিও বেশ উর্বর, সেখানেই এই কলা চাষের জন্যে উত্তম স্থান। সে হিসেবে এ গোলার্ধে বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ-পুবের দেশগুলো আর পশ্চিম গোলার্ধে হন্ডুরাস, কলম্বিয়া বা নিকারাগুয়ার মতো দেশগুলো কলা চাষের জন্যে উপযুক্ত। আর এ ব্যাপারটি খুব সহজেই বুঝে নিতে মার্কিন কৃষি-পণ্য ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলোর খুব একটা বিলম্ব হয়নি।

যদিও বলে ফেললাম কোম্পানিগুলোর, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমেরিকায় কলার ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হয় ডোল, চিকিতা এবং ডেল মনটে নামক তিনটি কোম্পানি দ্বারা। এরা যে শুধু আমেরিকাতেই এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে তাই নয়, বিশ্ব কলা বাজারের এক বিরাট অংশও এদের হাতের মুঠোয়। আমেরিকার মাটি কলা চাষের জন্যে তেমন পোক্ত নয়, তাই এই তিনটি কোম্পানি কলা ব্যবসার জন্যে ল্যাটিন আমেরিকার দিকে হাত বাড়ায় সেই প্রায় এক শতাব্দী পূর্বে। সে নিয়ে বিস্তারিত বলতে হলে এই কোম্পানিত্রয়ের প্রারম্ভিক ইতিহাস একটু বলে নেয়া ভালো।

প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ডোল কোম্পানি ‘স্ট্যান্ডার্ড ফ্রুট’ নামক একটি কলা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কিনে নিয়ে এ ব্যবসায় আদা-জল খেয়ে নামে সত্তরের দশকের শেষ দিকে। আর নামার পরেই তারা আমেরিকায় দ্বিতীয় বৃহত্তম কলা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ডেল মন্টেও ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক একটি শতবর্ষী কৃষি-পণ্য কোম্পানি, এদের অবস্থা আজ এমন যে প্রতি দশ জন আমেরিকানের ভেতর হয়তো আট জনের গৃহেই এই কোম্পানির কোন না কোন পণ্য মিলবে। ওদিকে চিকিতাও কলা ব্যবসার পাকা এবং পুরনো খেলোয়াড়। ল্যাটিন আমেরিকা থেকে কলা পরিবহনের জন্যে এরা সেই একশ বছর আগেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাহাজের প্রচলন করেছিলো। এই যে তিনটি কোম্পানির কথা বললাম এরা বা এদের পূর্বসূরি কোম্পানিগুলো গত শতাব্দীর প্রারম্ভে যখন ল্যাটিন আমেরিকায় কলা চাষের ব্যাপারে মনোযোগী হয় তখন ল্যাটিন আমেরিকা ছিল চাষবাসের জন্যে এক স্বর্ণভূমি। প্রতুল পরিমাণে বৃষ্টিপাত, কৃষি চাষের উপযোগী অবারিত প্রান্তর এই কোম্পানিগুলোকে মহুয়া মাতাল ভালুকের মতো টেনে নিয়ে আসে এই মহাদেশে। তবে এখানে পা দিয়েই তারা আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে একদা কুটচালে মগ্ন সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতোই নানাবিধ কাজে-কর্মে জড়িয়ে পড়ে, বলাই বাহুল্য সবই কেবল মুনাফা বৃদ্ধির অভিলাষে এবং অজুহাতে।

প্রথমেই এই বেনিয়ারা যেটি করেছিলো সেটি হল ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ করে তারা কৃষকদের কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে কৃষি জমি কিনতে শুরু করে। তারপর বিশাল একেকটি এলাকা নিয়ে গড়ে তোলে নিজেদের ফার্ম হাউস। ওদিকে গরীব কৃষক জমি বিক্রির টাকা শেষ হয়ে এলে একসময় কোম্পানির জমিতে দিনমজুর হিসেবে হাল দেয়। শুধু জমি কিনেই এই কোম্পানিগুলো ক্ষান্ত হয়নি, নিজেদের কলা পরিবহনের সুবিধার্থে তারা নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করে রেলপথ-বন্দর। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতির সুবিধে ছাড়া কি আর লুটপাটের ব্যবসার কার্যসিদ্ধি হয়? হয় না। আর তাই এক সময় এই কোম্পানিগুলো সখ্য গড়ে তোলে ল্যাটিন আমেরিকান রাজনীতিবিদ এবং সেনাবাহিনীর জেনারেলদের সাথে। এই সখ্যতার মূল্যেই তারা তাদের ইচ্ছেমাফিক সরকারকে দিয়ে জমি বণ্টন করায় এবং নিজেদের রেল ব্যবসা সমুন্নত রাখবার জন্যে সড়কপথ উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বিশের দশকের শেষ দিকে কলম্বিয়ায় এমন একটি মার্কিন কলা কোম্পানির মদদে সরকারি বাহিনী প্রতিবাদ্রত কলা চাষিদের সমাবেশে গুলি করে বেশ কিছু দরিদ্র এবং নিরপরাধ চাষিকে মেরে ফেলে। নিকারাগুয়া, গুয়েতেমালা কিংবা কিউবায় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে ধূলিসাৎ করতে যে মার্কিন তর্জন-গর্জন সেকালে ছিল তার পেছনেও ছিল এই কলা কোম্পানিগুলোর সুবিশাল কালো হাত। স্নায়ুযুদ্ধের সেই কালে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে একের পর এক সমজাতান্ত্রিক ঝাণ্ডা ওড়ায় বেশ শঙ্কিত হয়ে পড়ে কলা কোম্পানিগুলো, তারা বুঝে যায় এতকালের নিপীড়িত কৃষকদের এবার ফুঁসে ওঠার সময়, আর সেটি হলে যে সুবিশাল ভূমির একচ্ছত্র অধিকার তারা এতকাল ভোগ করেছে সেই ভূমি কৃষকদের মাঝে পুনর্বন্টিত হতে সময় লাগবে না।

বিগত কয়েক দশক থেকে অবশ্য এই কলা মুঘলরা কৌশল কিছুটা বদালতে শুরু করে। প্রত্যক্ষভাবে জমির মালিকানা রেখে নিজেরা কলা উৎপাদন না করে তারা এবার কলা উৎপাদনকে ছেড়ে দেয় স্থানীয় উৎপাদনকারীদের হাতে। তবে কলার আকৃতি, জাত, কীটনাশক, সার ইত্যাদি বিষয়ে মূল ক্রেতা কোম্পানির কড়া নজরদারি বলবত থাকে কলা চাষিদের উপর। এতে করে বেশ কিছু সুবিধে হয় এই মার্কিন ক্রেতা কোম্পানিগুলোর। এই যেমন বন্যা, খরায় কৃষকের উৎপাদন কম হলে সেই ক্ষয়ক্ষতির চাপ এখন পুরোটাই গিয়ে পড়ে কৃষকের কাঁধে। আর ওদিকে পরিবেশবাদীদের দিক থেকে কীটনাশক বা সার নিয়ে কোন বিতর্ক তৈরি হলে তারা আলগোছে সটকে পড়ে, যেহেতু এখন আর তারা সরাসরি উৎপাদনে উপস্থিত নেই। এক ঢিলে দু পাখি মারা বোধ হয় একেই বলে। এখানে একটি প্রশ্ন উঠতেই পারে তাহলে এই মার্কিন কোম্পানিগুলোর হাতে কলা তুলে না দিয়ে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর আঞ্চলিক কোম্পানিগুলো নিজেরাই কেন বিশ্ববাজারে কলার পরিবহণ এবং বাজারজাতকরণের সুযোগ ছিনিয়ে নিচ্ছেনা? সোজা কথায় কারণটি হল অর্থ এবং ভু-রাজনৈতিক দাপট। এই আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণের পেছনে যে বিশাল বিনিয়োগ প্রয়োজন তা এই দরিদ্র দেশগুলোর আঞ্চলিক কোম্পানির নেই। আর আগে থেকেই গড়ে ওঠা যে প্রভাব এবং জাল এই মার্কিন কোম্পানিগুলো নানা মহাদেশে ছড়িয়ে রেখেছে তাকে ছিন্ন করাও তেমন সহজ নয়।

যাকগে, কলা নিয়ে আমার এই খামোখা প্যাঁচালের উদ্দেশ্য হল পাঠকের কাছে কয়েকটি বার্তা পৌঁছে দেয়া। যারা ভাবেন আমেরিকা একটি মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ, তারা অনেকেই এও ভেবে বসেন এদেশে সকল ব্যবসাই চলে উন্মুক্ত এবং সুষম প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। ব্যাপারটি মোটেও তেমন সরল নয়। এদেশের অধিকাংশ ব্যবসায়িক ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রিত হয় কেবল গুটিকয়েক কোম্পানি দ্বারা, তারাই বাজার এবং মূল্য অলক্ষ্যে নিয়ন্ত্রণ করে। আর সেসব করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তারা নিষ্ঠুর এবং অনৈতিক পথ গ্রহণেও বিন্দুমাত্র পিছপা হয় না।


মন্তব্য

সোহেল ইমাম এর ছবি

মার্কিনি কলা কৌশলতো জানা গেলো। আমাদের দেশে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে ইঁচড়ে পাকা পাকানো কলা কৌশলও কম যায়না। ভালো লাগলো।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

কেলিয়ে পাকানো সেই কলাগুলোর কথা বাদ দিলে বাকি সব বাংলা কলার তুলনা হয় না. ধন্যবাদ সোহেল ভাই ভালো লাগার জন্যে।

অতিথি লেখক এর ছবি

কলার কাঁদির গোড়ায় গর্ত করে মসুর ডাল রেখে, কলার কাঁদিকে নিশিন্দা বা জহরবাজ পাতা দিয়ে ঢেকে, কলার কাঁদিকে শুকনো খড় দিয়ে ঢেকে পাকানোর পদ্ধতি বহু বহু পুরনো। এখন অত কষ্ট না করে কলার গুদামে ক্যালসিয়াম কার্বাইড রেখে দেয়া হয়। একটু উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ক্যালসিয়াম কার্বাইড থেকে অ্যাসিটিলিন নিঃসরণ হয়। তার প্রভাবে কলা পেকে যায়।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

কলা পাকানোর এই আদি উপায় সম্পর্কে জানা ছিল না, সমৃদ্ধ হলাম, ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

কলা খাওয়া ইদানিং কমে গেছে। বাংলাদেশে এইরকম বেনিয়াবৃত্তি শুরু হওয়ার আগেই যা পারি খেয়ে নিতে হবে। কাল থেকে প্রতিদিন একটি কলা, এই হল আমার অঙ্গীকার। অনেকদিন পর আপনার লেখা পেলাম। বরাবরের মতই সুপাঠ্য এবং কলার মতই উপাদেয়। চোখ টিপি

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

কলায় কিন্তু নানা পদের ভিটামিন থাকে, তাই প্রতিদিন একটি করে খাওয়া মন্দ নয় হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

দেশে কলা খাইতাম, এইখানে আসার পর ্দেখি এই কলা ভাই মুখে কেন জানি রুচে না। অর্ধেক পেটে যায় তো বাকিটা গার্বেজে। তাই খাওয়ায় ছেড়ে দিয়েছি। ধন্যবাদ কলা অর্থনীতির আদি ও চলমান রুপ খানা জানিলাম।
এ্যানি মাসুদ

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

না রুচলেও মাঝে মাঝে খাওয়া হয়তো মন্দ নয়, কারণ কলায় কিন্তু বেশ ক পদের খনিজ থাকে, যা আমাদের দেহের পক্ষে উপকারী।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

সব এক আকারের, এক পক্কতার কলা কী করে হয় সেই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু লেখায় পাওয়া গেলো না।

১৮৯৮ থেকে ১৯৩৪ পর্যন্ত চলা 'কলা যুদ্ধ' নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত থাকলে বিষয়টার গভীরতা আর গুরুত্ব আরও স্পষ্ট হতো।

ছবিতে কলার পেছনে যে ফলটা দেখা যাচ্ছে সেটা নিয়ে লড়াইটাও কিন্তু কম নয়।

***************************************

কলার উৎপত্তি সম্ভবত পাপুয়া নিউগিনিতে অথবা অস্ট্রেলিয়ায়। পাপুয়ানরা তাদের কুক উপত্যকায় কলার চাষ শুরু করেছিল মাত্র হাজার দশেক বছর আগে। পরের হাজার তিনেক বছরে এর চাষ ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আর অস্ট্রেলিয়াসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। পূর্ব আফ্রিকাতে কাঁচকলার চাষ শুরু হয়েছে মাত্র হাজার পাঁচেক বছর আগে। দক্ষিণ আমেরিকাতে কলা চাষ শুরু হয়েছে বাইশশ' বছর আগে, আর চীনে শুরু হয়েছে তারও পাঁচশ' বছর পরে।

কলা বাণিজ্য শুরু হয় আরবদের হাতে। তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে কলাকে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে গেছে হাজার দেড়েক বছর আগে। সেই পথ ধরে ইউরোপে, আফ্রিকায়। অবশ্য ইউরোপে এর আগেও টুকটাক কলা এসেছে। স্পেনিশ আর পর্তুগীজরা একে গাঙ পাড়ি দিয়ে উত্তর আমেরিকাতে নিয়ে গেছে শ'পাঁচেক বছর আগে। ব্রিটেনে কলা চাষের কলা আবার উলটো গাঙ পাড়ি দিয়ে বারমুডা থেকে এসেছে শ'চারেক বছর আগে।

কলাগাছের তন্তু দিয়ে কাপড় বানানোর পদ্ধতির আবিষ্কারক জাপানীরা। আটশ' বছর আগে তারা কলাতন্তুর জন্য ব্যাপক আকারে কলা চাষ শুরু করে।

***************************************

একটা ভৌমপুষ্পদণ্ডের মধ্যে কয়েক সারিতে থাকা কলার বিন্যাসকে প্রচলিত ভাষায় 'কাঁদি'/'গাউড়' বলে। প্রতিটি সারিকে 'ছড়া'/'ফানা' বলে। কলার ফুলকে 'মোচা' আর ভাসকুলার বান্ডলকে 'ভাড়ালি' বলে। কুঁচো চিংড়িমাছ দিয়ে মোচা অথবা ভাড়ালির চপ অমৃত সমান।

বাংলাদেশে পাওয়া যায় (যেতো) এমন কলার নামের একটা তালিকা বানানোর চেষ্টা করা যাক। প্রায় চল্লিশটা ভ্যারাইটি নাকি ছিল।

১। সাগর
২। শব্‌রী
৩। কব্‌রী
৪। চাঁপা
৫। চিনিচাম্পা
৬। মর্তমান
৭। অমৃতসাগর
৮। বিচীকলা/আইট্যা
৯। তুলা আইট্যা
১০। কাঁচকলা/আনাইজ্যা
১১। বাংলা
১২। অগ্নিসর
১৩। দুধসর
১৪। দুধসাগর
১৫। চন্দনকব্‌রী
১৬। জাবকাঠালী
১৭। বতুর আইট্যা
১৮। সাঙ্গী আইট্যা
১৯। বনকলা
২০। গোমাকলা
২১। ভেড়াভোগ
২২। মন্দিরা
২৩। বেউলা
২৪। ভাইগ্না
২৫। বিয়াবাত্তি
২৬। চৌলপোশ
২৭। মেহেরসাগর
২৮। মামাকলা
২৯। মাণিক
৩০। অনুপম

সিঙ্গাপুরী, নেপালী, কাবুলী নামের হাইব্রিড কলাও বাংলাদেশে চাষ হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট 'বারিকলা' নামে হাইব্রিড কলা আবিষ্কার করেছে যার ১ (সাগর), ২ (আনাজী) ও ৩ (কব্‌রী) নং ভ্যারাইটির চাষ বাংলাদেশে প্রচলিত। ৪ নং ভ্যারাইটি এখনো বাণিজ্যিক চাষের জন্য ছাড়া হয়নি।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

কত রকম কলা!!!

অতিথি লেখক এর ছবি

অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

আমারও মাথা ঘুরতাসে এই লিস্টি দেইখা

সোহেল ইমাম এর ছবি

বাপরে !! কলা দেখি ষোলকলাও ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের এতো কলা আগে ধারনাই ছিলোনা। চিন্তিত

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

সব এক আকারের হয় খুব সম্ভবত জেনেটিক্যালি মডিফায়েড চারা ব্যবহারের কারণে, আর একই পক্ক্বতার পরিমান ধরে রাখা হয় এদের সুনিপুণ অপারেশনাল ম্যানেজমেন্টের কল্যাণে।

এই লেখাটি লেখবার আগে আমি আমার পরিবারের চার-পাঁচ জনকে বাংলাদেশের কলার বিভিন্ন জাট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, সবার উত্তর ই এসে ঠেকেছিল ৪ কী পাঁচ এ. বহু খুঁজেও বাকি জাতগুলোর নাম আমি সংগ্রহ করতে পারিনি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই সব গুলো জাতের নাম এখানে তুলে ধরবার জন্যে, এতে হয়তো বাকিরাও জানতে পারবে।

কলার আদি উৎপত্তিস্থল নিয়ে আসলে কিছুটা বিতর্ক আছে, কেও বলেন ওই নিউ গিনি-অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের কথা, আবার কেও বলেন দক্ষিণ চীনা অঞ্চলের কথা. তবে ওই দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের কোনো একখান থেকে যে এই বস্তুর উদ্ভব সে নিয়ে বোধ করি খুব একটা সন্দেহ নেই.

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কলাবিদের নাম কৈ? বাংলাদেশে অতজাতের কলা আছে কল্পনা করাও কঠিন। কিন্তু আপনের তিরিশজাতের কলায় শাইলকলা আর রামকলার নাম পাইলাম না (সিলেটি নাম এইগুলা; অন্য কোনো নামে ঢুকে গেছে কি না)

অতিথি লেখক এর ছবি

শাইলকলা আর রামকলা সম্ভবত ‘সিলটী মাত্‌’ তাই তথাকথিত প্রমিত বাংলা ভাষায় এগুলোর নাম কী বুঝতে পারছি না। দেখতে পেলে হয়তো চেষ্টা করা যেতো।

‘রামকলা’ নামের একটা ফল বাংলাদেশে আছে তবে সেটা কলা গোত্রের নয়, ঢ্যাঁপ গোত্রের সমূল ভাসমান জলজ উদ্ভিদের ফল। আকারের ছোট সাইজের পটলের মতো তবে একটু সরু আর গায়ে ঝিঙের মতো রিজ্‌ আছে। ভেতরে ঢ্যাঁপের মতো বীজ ভর্তি, তবে মিউকাসের পরিমাণ বেশি।

‘তরুকলা’ বা ‘তুরিকলা’ নামের একটা ফল বাংলাদেশে আছে যেটা আসলে বিন/পড্‌/লিগিউম দেখতে অনেকটা তেঁতুলের মতো কিন্তু গায়ে রোম আছে। ভেতরটা অন্য বিনের মতো ফাঁপা নয়, সলিড। তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। লতানো গাছ অন্য বড় গাছ বেয়ে বেড়ে ওঠে।

বাংলা ভাষায় ‘পরকলা’ বলে একটা শব্দ আছে যেটার অর্থ হচ্ছে লেন্স।

বাংলা ভাষায় ‘মনকলা’ বলে একটা জিনিস আছে যেটা সবচে’ সুস্বাদু ফল, বিশেষত বঞ্চিত, প্রতারিত মানুষের কাছে।

বাংলা ভাষায় ‘কলা দেখানো’ বলে একটা ব্যাপার আছে, সেটা যে দেখেছে সেই বুঝেছে তার স্বাদ কেমন।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

ছলাকলা নামেও একটি বিষয় খুব সম্ভবত আছে হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

কস্কি মমিন!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মন মাঝি এর ছবি

ভাইজান কি কৃষিবিদ বা হর্টিকালচারিস্ট / পোমোলজিস্ট নাকি?! হাসি

ছোটবেলায় আমাদের বাসায় একধরণের কলাগাছ প্রায় গোটা ৩০-৪০টা ছিল মনে হয়। যদ্দুর মনে পড়ে আম্মার কাছে শুনেছিলাম এই গাছের চারা থাইল্যাণ্ড থেকে আনানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত না, তবে এই জাতের কলাও আমি আর দেখিনি। কলাগুলি পাকলেও বাইরে থেকে পুরোপুরি সবুজ থাকতো। সাইজে খুব বেশি লম্বা না আবার খুব ছোটও না - মাঝারি গোছের। কিন্তু প্রচণ্ড হৃষ্টপুষ্ট, ইয়া মোটকু। সবচেয়ে বড় কথা হলো - এর শাঁস। কোমলতায় প্রায় বিদেশী নরোম ক্রীমী চিজের মতো, রঙ আর টেক্সচারও খানিকটা অগতানুকতিক। কিন্তু স্বাদে তুলনাহীণ, দুর্দান্ত মিষ্টি এবং সুস্বাদু। একেবারেই অন্যসব কলার মতো না। মুখের ভিতর প্রায় মধুর মতো গলে যেত।

মজার ব্যাপার হলো, আমাদের বাসার সামনে ও পেছনের কিচেন গার্ডেন থেকে অন্যান্য অনেক ফলগাছের ফল প্রায়ই চুরিটুরি হতো। কলাও। কিন্তু এই গাছের কলা কখনই হতো না। কারন এগুলি কাঁদি-কাঁদি পুরো পেকে টসটসে হয়ে প্রায় মাটি ছুঁয়ে ঝুলে থাকলেও বোঝা যেত না যে পেকেছে, আর চতুর চোট্টাবাবাজিরা কাচা কলা বা কাঁচকলা চুরি করার পেছনে খাটনি দেয়া বা ঝুঁকি নেয়ার মতো "বোকা" ছিলেন না! এনিয়ে আমরা বেশ মজা পেতাম, আর কলাগুলি যে শেষমেশ নিরাপদেই আমাদের পেটে যাবে, সে ব্যাপারেও নিশ্চিন্ত থাকতাম। তবে, সবচেয়ে মজা হয়েছিল যেবার আমরা এক কাঁদি এই জাতের সুপক্ক কলা আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলাম। পরের দিনই তাঁরা (কিম্বা সেদিনই, এখন মনে নেই) তড়িঘড়ি সেই কলা কাজের লোককে দিয়ে পত্রপাঠ ফেরৎ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন! কাজের ছেলেটাকে বলে দিয়েছিলেন বলতে - "আমরা কাঁচকলা খাই না!" ভাব দেখে মনে হয়েছিল, আমরা তাদের আক্ষরিকভাবেই "কাঁচকলা দেখাচ্ছি" মনে করে তাঁরা বেশ ক্রুদ্ধ ও অপমানিতও বোধ করেছিলেন। আমাদের শুভেচ্ছার জবাবে প্রতিবেশীর এই অভাবিত আনএডুকেটেড প্রতিক্রিয়ায় বাসায় প্রথমে হাসির রোল পড়ে গিয়েছিল। এখনও ভাবলে আমার মজাই লাগে।

তো এই হলো আমার কদলী-বৃত্তান্ত। বহু-বহু বছর হয়ে গেছে ঐ কলাগাছগুলি আর নেই, আর এর নামও আমার জানা নেই। তবে জানতে পারলে ভালো হতো। অনামা কৃষিবিদ ভাই কি কোনরকম আন্দাজ দিতে পারেন?

****************************************

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

এমন থাই কলা তো কোনোদিন খাইনি! থাই দোকানগুলোতে খুঁজে দেখবো পাওয়া যায় কিনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন মাঝি ভাই, দেরিতে উত্তর দেবার জন্য দুঃখিত। আসলে এই লেখাটাতে আর ফিরে আসা হয়নি তাই আপনার কমেন্ট চোখে পড়েনি। না ভাই, আমি এগ্রিকালচারিস্ট/হর্টিকালচারিস্ট/পোমোলজিস্ট নই, নিতান্তই অবিশেষজ্ঞ একজন।

আপনার বলা সবুজরঙা থাই কলাকে ঠিক চিনতে পারলাম না। সম্ভবত গোল্ডফিঙ্গার বা ব্লু জাভা'র কোন ভ্যারাইটি হতে পারে, আমি নিশ্চিত না। আর এটা যদি বারিকলা'র মতো কোন উদ্ভাবিত জাত হয় যেটা কোড নাম্বার দিয়ে শনাক্ত করা হয় তাহলে এটা পুরোপুরি আমার জানার বাইরের ব্যাপার।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমাদের ওদিকে (সাতক্ষীরা) বিচিকলা/আইট্যা কলাকে 'ডয়রা' কলা বলে। চিকনা টাইপ পিচকা একটা জাতকে বলে ঠঁইটে কলা। সম্ভবত এটাকেই শুদ্ধ বাংলায় চম্পাকলা বলে। আমার জানানেই। ঠঁইটের একটা জাতকে বলে পান্তারস ঠঁইটে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আগে কি সুন্দর কলা খাইতাম......

একবার এক ফকির এক গেরস্তের বাড়ীতে এসে বললো- উপবাসী আছি, মাগো চারটা ভাত দাও। গেরস্তের বউ ফকিরকে জিজ্ঞেস করলো- ইলিশ মাছ দিয়ে গরম ভাত দেবো, নাকি সবরি কলা দিয়ে পান্তাভাত? ফকির পড়লো মহাবিপদে, কোনটা ছেড়ে কোনটা খায়। শেষে বললো- মাগো, আমি দুইটাই খাবো, আমারে দুইটাই দ্যাও।

আমাদের ছোটবেলায় মাঝে মাঝে হাট থেকে সবরি কলার একটা কাঁদি কিনে আনা হত। তখনও এ দেশে পদ্ধতিগত কলার চাষ শুরু হয় নাই, ফলে কলা মাত্রই গৃহস্তের বাড়ীর আঙ্গিনায় ফলা কলা। যে ঘোরে কলা রাখা হত, সে ঘর মো মো করতো পাকা কলার সুগন্ধে, তার আকর্ষণ উপেক্ষা করে দীর্ঘক্ষণ খেলাধুলা করে বেড়ানো সম্ভব হত না। দুয়েকটি দিন প্রায় কলা খেয়েই জীবন নির্বাহ করা হত। আশির দশকে যখন প্রথম ঢাকায় আসি, দেখি- দোকানে দোকানে বিশাল সাইজের এক ধরনের কলা ঝুলে আছে, নাম তার অমৃতসাগর, এক টাকা দাম। যেমন নাম, তেমনি তার কাম, খাইলে মনে হইত অমৃত খাইলাম।

দেশে এখন কলার অভাব নাই, দামেও এখন তুলানামুলক ভাবে আরো সস্তা। কিন্তু সেই ঘ্রান আর স্বাদ যে কোথায় অন্তর্হিত হয়েছে কে জানে।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

কলা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীতে ষোলতম, সুতরাং এখনো এদেশে বেশ ভালো পরিমানেই কলা উৎপাদিত হয়, তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ভালো সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকলে হয়তো বাংলাদেশ এশিয়ার বাকি দেশগুলোতেও কিছু কলা রপ্তানি করতে পারতো, কিন্তু সেটি করা এই মুহূর্তে বেশ জটিল।

অতিথি লেখক এর ছবি

কলা নিয়ে অনেক তত্ত্ব সমৃদ্ধ লেখা, মন্তব্য এই লেখার সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে দিলো। অনেক কিছু শিখা হলো। শুভেচ্ছা রইলো লেখক।

জীবনযুদ্ধ এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।