দরজা খুলে অর্ণব অবাক হয়ে গেল। লম্বা, একহারা গড়নের একজন ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে। অর্ণব তাঁকে কখনো
দেখেছে কি না মনে করার চেষ্টা করল। নাহ্ মনে করতে পারছে না। তাছাড়া ওঁর চেহারাও অর্ণবকে দারুণ ধাঁধায় ফেলে দিল। ভদ্রমহিলা বিদেশী! পাশ্চাত্যের অঙ্গে তাঁর প্রাচ্যের শাড়ী! অর্ণব অভিভূত হয়ে দেখতে লাগল।
‘এটা কি মিস্টার অর্ণবের বাসস্থান?’, ভদ্রমহিলার বিদেশী স্বরে স্বদেশী উচ্চারণ শুনে ওর হুঁশ হল। এই যা! ভদ্রমহিলাকে ঘরে এনে বসাবার ভদ্রতাটুকুও করা হয়নি। সে দ্রুত ভদ্রমহিলার কথায় সায় দিয়ে দরজা ছেড়ে দাঁড়াল। অচেনা মহিলা নির্দ্ধিধায় ঘরে ঢুকলেন। বসবার আগে প্রাথমিক আলাপচারিতাটুকু শেষ হলো। ‘আমি মিসেস সিলভিয়া শেখর’ বলতে বলতে ভদ্রমহিলা তাঁর হাত বাড়িয়ে দিলেন। অর্ণব অভিভূততাকে অতিক্রম করে এসে কিছুটা ধাতস্থ তখন। হ্যান্ডশেক করল ও। ভদ্রমহিলার হাত অসম্ভব নরম। ভদ্রমহিলাকে নিরীক্ষণ করল ও এক ফাঁকে। বয়স পঞ্চাশ বা পঞ্চান্ন- দুটোর একটা। অর্ণবের চেয়ে ঢের উঁচু- প্রায় ছ ফুট হবেন। শনের মতন চুল- মাঝারি সাইজের। অর্ণব অনুমান করল আগে অই চুল ‘বব’ ছিল। কিন্তু সেটাকে দীর্ঘ করবার প্রচেষ্টার মধ্যবর্তী স্তরে আছে বলে এখন মাঝারি। তাঁর রঙও বেশ উজ্জ্বল। যেহেতু বাংলা বলছেন এবং অনেকটা নিখুঁত উচ্চারণে তাই অনেক দিন ধরেই এ দেশের বাসিন্দা - তা ধরে নেয়া যায়। ভদ্রমহিলা শুধু বাংলা বলতে নন, সম্ভবত পড়তেও পারেন। অর্ণবের অন্তত এ রকম মনে হলো। কারণ তিনি ডান হাতে তখন একটা বাংলা ম্যাগাজিন ধরে রেখেছিলেন। অবশ্যি শুধু কারো হাতে কোনো ভাষার পত্রিকা ধরা থাকলেই যে তিনি সে ভাষা পড়তে পারেন এমন ভাবাটা বোকামী। তবে অর্ণব এমন সিদ্ধান্তে এলো কারণ তিনি ম্যাগাজিনটার একটা বিশেষ পাতা খুলে রেখেছিলেন। কিন্তু ভদ্রমহিলা তার অপরিচিত। অর্ণবের পরিচিত কারোর পরিচিতও যে এমনও মনে হচ্ছে না। অর্ণব যে অন্ধকার সেই অন্ধকারেই রয়ে গেল।
‘আপনি - মানে তুমিই অর্ণব?’, ভদ্রমহিলাকে যদিও একটু আগে পরিচয় দেয়া হয়েছে তবু সন্দিহান কন্ঠে এই প্রশ্নটা করলেন। তার মানে তিনি অর্ণব হিসেবে অন্য কাউকে আশা করেছিলেন!
‘যাই হোক আসল কথায় আসি। ক দিন ধরে আমি একটা প্রবলেম ফেস করছি। এই সামান্য বিষয় নিয়ে পুলিশের কাছে যাওয়া ঠিক হবে না মনে করলাম। তাছাড়া এদেশে প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর হিসেবে কাউকেই চোখে পড়েনি আমার। আশা করি তুমি আমার সমস্যার সমাধান করতে পারবে। একদিন সময় করে আমার এখানে এসো- তখন সব কথা হবে’। ভদ্রমহিলার আসল কথায় একটা সুস্পষ্ট পেশাদারী ছাপ নজর এড়ালো না অর্ণবের। ভদ্রমহিলা ঘড়ি ধরে উঠে পড়লেন। অন্য একটা জরুরী কাজ নাকি আছে। আসলে এখানে আসার জন্য নিজেকে বরাদ্দকৃত সময়টুকু শেষ হয়েছে বলেই উঠে পড়া। বিদেশীদের এই একটা গুণ অর্ণবকে চমৎকৃত করে। সময়ানুবর্তিতা। ভদ্রমহিলা যাওয়ার আগে তার ঠিকানা লেখা একটা কার্ড অর্ণবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলেন। অর্ণব দরজা লক করে এসে কাগজটা পড়ল। সিলভিয়া শেখর, উদয়ন, ১০০১ র্যাঙ্কিন স্ট্রীট, ওয়ারী। ভদ্রমহিলা সম্পর্কে আরো একটি ধারণা পাওয়া গেল। তিনি রবীন্দ্র ভক্ত না হয়ে যান না। ও আশা করল ভদ্রমহিলার বাসায় গেলে কবিতার বই আর রবীন্দ্রসঙ্গীতের কালেকশন পাওয়া যাবেই।
কিন্তু এই সব কী? সিলভিয়া শেখর- পুলিশ- প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর- সমস্যা সব তালগোল পাকিয়ে গেল অর্ণবের মনে। এসবের তার সম্পর্কই বা কী? কোথাকার এক সিলভিয়া শেখর অর্ণবের কাছে এসে সমস্যা-সমাধান করে গেলেন! তবে তিনি যে অর্ণবের কাছেই এসেছেন তা নিশ্চিত। তিনি যে ঠিকানায় এসেছেন সেখানে অর্ণব নামে একজন থাকে বৈকি। অর্ণব নিজেকে একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর ভাবতে পছন্দ অবশ্য করে তাই বলে সে ইনভেস্টিগেটর নয় কখনই। সে সদ্য এসএসসি পেরুনো একজন কিশোর মাত্র। কিন্তু ভদ্রমহিলাকে এরকম ইনফরমেশনই বা দিল কে যে অর্ণব প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর? হঠাৎ একটা কথা মনে পড়াতে ও দৌড়ে রিডিংরুমে এলো। চলতি সংখ্যা 'রহস্যপত্রিকা' উল্টাতে লাগল গভীর মনোযোগের সাথে। একশ পনের পাতায় এসে কাঙ্খিত জিনিসটি পেয়ে গেল ও। এবং সাথে সাথে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার হয়ে গেল অর্ণবের সামনে। নিজের কথা বিভাগের একটি বিজ্ঞাপন এ রকম-‘সুখবর! বাংলাদেশের প্রথম প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর আপনাদের চমকপ্রদ রহস্য সমাধানের অপেক্ষায়--যোগাযোগ করুন।’, এরপর যে ঠিকানাটি দেয়া আছে সেটি ফলো করেই যে ভদ্রমহিলা এসেছিলেন সে সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই। অর্ণব যেন উদ্যোগী হয়ে নিজের নামে বিজ্ঞাপনটি ছাপতে দিয়েছে! অথচ সে এর ‘ব’ও জানে না। হঠাৎ অর্ণব বুঝে ফেলল কার কাজ এটা! ওকে ফাঁদে ফেলবার ভালো ফন্দিই বের করেছে চন্দন। ওকে এর জন্য তেমন খরচও করতে হয়নি। নিজের কথা বিভাগে বিজ্ঞাপন ছাপতে হলে শব্দ হিসেব করে পয়সা দিতে হয়। দুশো টাকারও কমে বন্ধুকে ঠেঙ্গানোর সর্বোত্তম উপায়! এখন একজনের পর একজন আসবে। ভদ্রমহিলার মতো সিরিয়াস হয়ে কেউ আসবে। কেউ আসবে স্রেফ ঠাট্টা-তামাশা করতে! অর্ণবের চোয়াল শক্ত, হাত দৃঢ়বদ্ধ হয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্য। এই মুহূর্তে চন্দনকে কাছে পেলে হোত! (চলবে)
মন্তব্য
চলুক চলুক
ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য। চালানোর ইচ্ছে আছে!
ইন্টারেস্টিং!
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
থ্যাংকস!
উউউউ! গোয়েন্দা গল্প!!! চলুক চলুক!
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
শখের গোয়েন্দা যাকে বলে আর কী!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ কবি!
চলুক
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
চলবে!
চলুক
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
পড়লাম, পরের পর্বের অপেক্ষায়।
চেষ্টা করব আপনার অপেক্ষা দীর্ঘায়িত না করার।
চলবে চলবে। ভালু পেলুম। কে জানে বাংলা সাহিত্যে আমার পর আরেকটা গোয়ান্দার জন্ম হয়ে যাবে, খারাপ নয় ।
ঐ ফেলু কিংবা ব্যোমকেশরা তো আজকাল বুড়ো হয়ে গেছে, আর আমি একা কত গোইয়েন্দাগিরি করতে পারি হেহে । আপনি নতুন গোয়েন্দা গড়ার কাজে হাত দিলেন হে হে আমি সন্তুষ্ট হলুম
মন্তব্য নিষ্প্রেয়োজন!!!
ক্যান !! কয়ি শক হে স্যার
(বাংলায়)
হে হে আমি বলছিলুম নিজগুনেরচমতকারিত্বানির্যাসে আমার গোয়েন্দানিধিমৃতেসে আপনার অন্রঘাতসুচক অভিব্যাক্তির কারণ অনুসন্ধান করিয়া পাইলাম না । দিলের মইধ্যে ধুকধুকানি ছুইট্যা গেছে
নতুন মন্তব্য করুন