প্রসাধনী আয়না

জহিরুল ইসলাম নাদিম এর ছবি
লিখেছেন জহিরুল ইসলাম নাদিম [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১৩/১১/২০১১ - ১১:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্ব ১
পর্ব ২

এই উটকো ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে কিছুদিন গা ঢাকা দেয়া যায় কি না চিন্তা করল ও। এবং সংগে সংগেই প্ল্যানটা বাতিল করে দিল।

ভদ্রমহিলা স্রেফ বিদেশি বলে এসব ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আর কেউ দেখাবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া পলায়নপর মনোবৃত্তি কোনো কাজের কথা নয়। এবার সে ভদ্রমহিলার বাসভবনে যাবে কি না ভাবতে বসল। ব্যাপারটা চন্দনের একটা ফাজলামোর শেষাংশ মাত্র। এতে আবার নিজেকে জড়ালে বিপত্তি হতে পারে না? অবশ্যি পারে। না যাওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু মন সব সময় যুক্তির লাগাম মানে না। অর্ণব প্রচন্ডরকম রহস্যপ্রিয় ছেলে। একটা অজানা, অনুদঘাটিত রহস্য যার সমাধানের সাথে অর্ণবও সম্পৃক্ত হতে পারে- ব্যাপারটাকে ও পাশ কাটাবে কীভাবে? এক সকালে এসব সাত-সতেরো ভেবে শেষে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল- যাবে।

একটা লম্বা ঘুম দিয়ে শরীরটাকে ফুরফুরে করে ও যখন রাস্তায় বেরুলো তখন বয়স্ক বিকেলের দখলে চলে গেছে সময়টা। পুরনো ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাস সার্ভিসের তেমন ব্যবস্থা নেই। যেতে হবে রিকশায় বা স্কুটারে। একটা মিশুক চলে আসাতে সেটায় চড়ে বসল অর্ণব। ‘চড়তে আহা কী সুখ!’ বিজ্ঞাপনটির সত্যতা যাচাই হয়ে যাক আজ। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ওর মনে হলো বিজ্ঞাপনের অই লাইনটায় সামান্য পরিবর্তন হওয়া দরকার, ‘চড়লে অসুখ-বিসুখ’!

প্রাচীন ঢাকার অভিজাত এলাকা ওয়ারী। সময়ের নিষ্ঠুর পদাঘাতে এর চাকচিক্য অনেকটাই প্রতিস্থাপিত কিছু অপরিকল্পিত দোকান পাট দ্বারা। তবু অনেক বাড়িতে সে আভিজাত্যকে ধরে রাখার প্রয়াস নজর এড়ালো না অর্ণবের। ১০০১ নং বাড়িটা খুঁজে পেতে কষ্ট হলো না মোটেই। বিশাল গেট, অবশ্য বন্ধ সেটা ভেতর থেকে। একটা সাব-গেট লোক পারাপারের কাজ করছে। গেটের দু মাথায় দুটো লাইট ফিটিংস- হাল ফ্যাশনের নয়! ভেতরে ঢুকে অর্ণব বিস্মিত হলো। পুরনো ঢাকায় কেউ এতটা জায়গা খালি ফেলে রাখে না। ভেতরে বেশ অনেকটা জায়গায় বাগান করা হয়েছে। পঞ্চাশ গজের মতো সোজা রাস্তা, যার দুদিকে ঝাউ গাছের বেষ্টনীর মধ্যে বাগান, পেরিয়ে বাড়ির মূল ভবনে পৌঁছুনো যায়। পাথরে খোদাই করা নামটি দূর থেকেই পড়া গেল- ‘উদয়ন’। দোতলা বাড়ি। তার মুখ-মন্ডলে ঊনিশ শতকের একটা ভাব লেপ্টে আছে যেন। কিন্তু অর্ণব নিশ্চিত বাড়িটা অত পুরনো নয় কিছুতেই। ওর ধারণা বাড়িটা যার, রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-চেতনা দ্বারা তিনি দারুণভাবে প্রভাবিত। প্রমাণ পেল ও বসবার ঘরে ঢুকেই। ভদ্রমহিলা উলের সোয়েটার বুনছিলেন একটা সোফায় বসে। এখন তার পরনে একটি দৃষ্টিনন্দন নীল রংয়ের স্কার্ট। অর্ণবকে স্বাগত জানিয়ে বসতে বললেন তিনি। তাঁর বোনা তখন দুই কাঁটার মাঝামাঝি পর্যায়ে। এভাবে রেখে দিলে ঘর ছুটে যেতে পারে। তিনি দ্রুত সেইটুকু বুনতে লাগলেন যাতে সমস্তটা একটা কাঁটায় এনে রাখা যায়। ভদ্রমহিলার বুননে হাত আছে বলতে হবে। অদ্ভুত তাঁর ক্ষিপ্রতা। এই ফাঁকে অর্ণব তার অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি চালালো ঘরটায়। বিদেশি তেমন কোনো ছোঁয়া নেই ঘরটার কোথাও। পুরোদস্তুর বাঙালি ছাঁট। বেতের চেয়ারে ফোম লাগানো রয়েছে। একটা ড্রেসিং টেবিল বেশ পুরনো স্টাইলের কিন্তু বেশ নতুন মনে হলো! একটা আলমারির তাকে অসংখ্য বই। দু একটা বই অর্ণব চিনতে পারল। রবীন্দ্র গল্প সমগ্রঃ ২য় খন্ড, সোনারতরী ইত্যাদি। আর বাড়িটার নামটাও তো কবি গুরুর দেয়া!
একটা জিনিস অর্ণবের মনে খটকা লাগালো। সে ঢোকাবধি মিসেস শেখর ছাড়া অন্য কারোর সন্ধান পায়নি। মিসেস সিলভিয়া শেখর উলের কুন্ডলী এক পাশে সরিয়ে রেখে সুস্থির হয়ে বসলেন।
‘তা - এ বাড়ি খুঁজে পেতে কষ্ট হয়নি তো তোমার?’
‘জ্বী না- এমন বড় বাড়ি, না পাওয়ার তো কথা নয়...’
ভদ্রমহিলা বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়লেন। অর্ণব বুঝল না কারণটা। ‘হ্যাঁ বড় বাড়ি, ভী-ষ-ণ বড় বাড়ি’, বিড়বিড় করলেন তিনি। অর্ণব এইটুকু বুঝল যে একাকীত্বের বেদনা হয়তো প্রকাশ পেল তাঁর দীর্ঘনিঃশ্বাসে। কিন্তু মিস্টার শেখর কোথায়?
‘আচ্ছা আপনি কি একাই এখানে থাকেন?’
‘সঙ্গী কোথায় পাব?’
‘মানে- ইয়ে - মিস্টার ...’, শেষ করতে হলো না অর্ণবকে। তার আগেই বুঝে নিলেন মিসেস শেখর। আঙ্গুল তুলে ঘরের একটা নির্দিষ্ট স্থান দেখালেন অর্ণবকে। একটা ছবিতে দৃষ্টি পৌঁছুলো ওর। এক সৌম্যমূর্তি চেহারার ভদ্রলোক। রবীন্দ্রনাথ নন! মিস্টার শেখর। অর্ণবের চোখ বাধাঁনো ছবির নিচে ঘোরাঘুরি করল কতক্ষণ- তারপর স্থির হয়ে থাকল। তারিখটা দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে না - কিন্তু বামে ‘জন্ম’ এবং ডানে ‘মৃত্যু’ শব্দ দুটো ঠিকই চেনা যাচ্ছে। অর্ণব মনে মনে দুঃখিত হয়ে পড়ল। নিজের অজান্তে সে ভদ্রমহিলার মনে হয়তো আঘাত দিয়ে ফেলেছে। একদম উচিৎ হয়নি ওর। প্রসঙ্গ পাল্টাবার তাড়া অনুভব করল অর্ণব।
‘আচ্ছা কী যেন সমস্যার কথা বলছিলেন সেদিন?’
শব্দগুলো উচ্চারণ করে অর্ণব নিজের কাছেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল কিছুটা। ও একজন পেশাদার ডিটেকটিভ হয়ে গেল নাকি!
‘ওহ্ ভালো কথা তুলেছ’ - মিসেস শেখর উঠে দাঁড়ালেন। তিনি অর্ণবকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন - ঢুকলেন বাগানে। একটা চমৎকার স্বাস্থ্যবান বাগান! এর সৌন্দর্য অর্ণবের মন ছুঁয়ে গেল। এ রকম একটা বাগান যদি ওর নিজের থাকত! মানুষের মন এক সাথে অনেক কিছুই ভাবতে পারে। না হলে, বাগানের সৌন্দর্য যখন ওর মনকে আপ্লুত করে দিচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে ও চূড়ান্ত প্রশ্নবাচকতায় ডুবে ছিল কী করে? ‘কী হতে পারে সেই সমস্যা?’ জাতীয় প্রশ্ন অর্ণবের অস্তিত্বকে নাড়িয়ে দিচ্ছিল তখন। যেখানে এসে ভদ্রমহিলা দাঁড়ালেন সেখানে এসে অর্ণব চমকে গেল। (চলবে)


মন্তব্য

কল্যাণF এর ছবি

আছি আছি আছি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

জহিরুল ইসলাম নাদিম এর ছবি

থাকুন না! কে মানা করেছে?! দেঁতো হাসি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

জহিরুল ইসলাম নাদিম এর ছবি

চলবে।

দ্যা রিডার এর ছবি

চলুক

জহিরুল ইসলাম নাদিম এর ছবি

ধন্যবাদ।

লাবন্যপ্রভা এর ছবি

উত্তম জাঝা! গুল্লি

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

পর্ব আরও লম্বা করা যায় না?
চলুক। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

শাব্দিক এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

জহিরুল ইসলাম নাদিম এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

তাপস শর্মা এর ছবি

হুম চিন্তিত

জহিরুল ইসলাম নাদিম এর ছবি

মন খারাপ

তাপস শর্মা এর ছবি

আমি কেইস নিয়া চিন্তা কত্তাসি তো আপনার মন খ্রাপ কেন হয় মিয়া রেগে টং

জহিরুল ইসলাম নাদিম এর ছবি

অর্ণবের কথা চিন্তা কইরা মন খ্রাপ হইয়া গেল! না জানি কোন বিপদে পড়ে পোলাটা!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।