পর্ব ৭
প্রসাধনী আয়না
মিটিয়ে তো দিতে পারে
কারো কারো বায়না।
বোঝা নয় শক্ত
কায়া-ছায়া যোগ করা
খুঁজে নাও অক্ত।
মিলনের রেশ ধরে
শুণ্যের দুই
এগোলেই সব পাবে
যদি খোঁড়ো ভুঁই।
পুরো ঠিক না এগোলে
কেউ কিছু পায় না
মিটিয়ে তো দিতে পারে
প্রসাধনী আয়না
ছড়াটি পড়ে অর্ণব কিছু বুঝে উঠতে পারল না। এটাও একটা ফাজলামো কি না সে সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিল তার মনে। কিন্তু কাগজের জীর্ণতা, লেখার নিষ্প্রভতা জিনিসটাকে পুরনো বলেই সূচিত করে। অর্ণব কয়েকবারই পড়ল লাইনগুলো। প্রথম তিন লাইনে প্রসাধনী আয়না অর্থাৎ ড্রেসিং টেবিলে ব্যবহৃত আয়নার উপযোগিতার কথা বলা হয়েছে। আসলে অর্ণব কাগজটাই খুঁজে পেল আয়নার পেছনে। এই ছড়া পড়ার আগে যে কাউকে আগে আয়নাটাকেই পেতে হবে। এমন স্ববিরোধী বক্তব্য পড়ে অর্ণবের প্রায় হাসিই পেয়ে গেল। তাছাড়া সাত এবং আট নম্বর লাইন দুটো কেমন যেন খাপছাড়া। শেষে আবার প্রসাধনী আয়নার গুণকীতর্ন! কিন্তু পুরো ব্যাপারটাকে ফালতু বলেও মেনে নিতে মন চাইছে না। প্রথমেই ওর মিস্টার জগলুল পাশার কথা মনে এলো। তাঁর সাথে একবার আলাপ করে এলে মন্দ হয় না! একটা ফটোস্ট্যাটের দোকানে ঢুকল ও। হঠাৎই মাথায় আইডিয়াটা এসেছে। দুটো কপি করাল ও কাগজটার। তার একটা পকেটে রেখে দিল। জগলুল পাশা সাহেবকে দিতে হতে পারে। অন্যটা একটা খামে ভরে চন্দনের ঠিকানায় পোস্ট করে দিল। হাতের লেখাটা কায়দা করে অন্যরকম করল। চিঠিটা পাবার পর চন্দনের মুখাকৃতি কল্পনা করতে বেশ মজাই লাগল অর্ণবের। বন্ধুকে ফাঁদে ফেলার যথার্থ প্রতিদান! তারপর ঢুকে পড়ল মিস্টার পাশার বাসায়। একটু চমকাল অর্ণব। ক দিন আগেই যে ঘরটি মোটামুটি সাজানো দেখেছে অর্ণব তা এখন খা খা করছে। বই-পত্র গুলোও বেমালুম গায়েব হয়েছে। মিস্টার পাশার নাম ধরে কিছুক্ষণ ডাকল ও। দরজা বন্ধ হবার শব্দে ঘুরে দাঁড়ালো অর্ণব। দেখল জগলুল পাশা ঢুকছেন। অর্ণব হাঁফ ছেড়ে বাঁচল যেন। বলল,
‘এই যে আপনি! আর আমি আপনাকে খুঁজে না পেয়ে অস্থির হয়ে গেছিলাম। শুনুন, সেদিন বলেছিলাম না যে আমি একটা রহস্যের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছি- আজকে সম্ভবতঃ তার শেষ অধ্যায়ে পৌঁছে গেছি। কিন্তু একটা ধাঁধা কিছুতেই সমাধান করতে পারছি না। তাই আপনার কাছে চলে এলাম-’, কথা বলার ফাঁকে অর্ণব কাগজটাকে হাতে নিয়ে এসেছিল। এগিয়ে দেবে পাশার দিকে। কিন্তু তিনি নিজেই ছোঁ মেরে ছিনিয়ে নিলেন ওটা। গভীর মনোযোগের সাথে দেখতে লাগলেন। একটা চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠল তাঁর কপালে। অর্ণবকে নিয়ে পাশের ঘরে এলেন তিনি। দু জন লোক কার্ড খেলছে ঘরটায়। অর্ণব ভেবেছিল পাশা সাহেব বুঝি একাই থাকেন এখানে। দ্রুত হাতে কাগজ-পত্র বের করলেন কয়েকটা। টেবিলে মেলে ধরলেন সেগুলো। আশ্চর্য ব্যাপার! আহসান মঞ্জিলের বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলের বিরাট সব স্কেচ সেগুলো। বার্ডস আই ভিউ থেকে আঁকা একটি ছবির ওপর পেন্সিল দিয়ে দুটো দাগ টানলেন ভদ্রলোক। পাশাপাশি দুটো ভবনের ভিত্তি থেকে শুরু করলেন রেখা দুটো। ‘মিলনের রেশ ধরে’ বাক্যটি বিড় বিড় করলেন কিছুক্ষণ। তারপর দুই রেখা যেখানে ক্রস করল সেখান থেকে একটা সরল রেখা মতো টানলেন। ছড়াটা পড়লেন আরেকবার। একটা হাসি ফুটে উঠল জগলুল পাশার ঠোঁটে।
‘বুঝলেন কিছু?’
জিজ্ঞেস করল অর্ণব। অর্ণবের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি মেলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন ভদ্রলোক। তারপর হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। গম গম করে প্রতিফলিত হলো তাঁর হাসির শব্দ। তাঁর এই হাসির সাথে একজন গবেষকের চরিত্র যেন ঠিক মিল খায় না।
‘আপনি হাসছেন যে?’
‘হাসব না! এত বছরের সাধনা সফল হতে চলেছে আর তুমি বলছ আমি হাসব না?’ এরপরও এক দফা হাসলেন তিনি। এমন একটা ভাব যেন অর্ণব হাসির কিছু বলেছে।
‘তাই বলুন। আপনিও আমার মতো এই রহস্যের পেছনে ছুটছেন?’
‘তোমার মতোন নয়- আমি আমার মতোন ছুটছি। এই জন্য কত কিছুই না আমাকে করতে হয়েছে। কিন্তু জিনিসটা শেষ অব্দি আমার হাতে পড়ল না। পেলে কি না তুমি! হাঃ হাঃ হাঃ! এখন তো আমারই হাসবার পালা। তবে তোমার জন্য রিয়েলি খুব দুঃখ হচ্ছে অর্ণব। তুমি আমার এত বড় একটা উপকার করলে আর বিনিময়ে সেই তোমাকেই আমার আটকে রাখতে হচ্ছে। চুক চুক চুক !!’
ভীষণ রকম শিউরে উঠল অর্ণব। সব বুঝে ফেলেছে ও। গবেষকের ছদ্মবেশে থাকা ওর প্রতিদ্বন্ধীর কাছে এতক্ষণ সব গোমর ফাঁস করেছে ও! এমনকি গুপ্তধনের নির্দেশনাও তুলে দিয়েছে। নিজেকে প্রচন্ড অসহায় মনে হলো অর্ণবের। একবার ভাবল ঝেড়ে দৌড় দেয়। তার আগেই শক্ত দুটো হাত পেছন দিক থেকে জাপটে ধরল তাকে। জোর করে হাত দুটোকে পেছন করে বেঁধে ফেলা হলো। মুখে রুমাল গুঁজে টেপ লাগিয়ে দিল কেউ। টানতে টানতে ঘরের বাইরে আনা হলো ওকে। এই বাড়িটাতেও এক চিলতে উঠোনমতো রয়েছে। রাস্তা সংলগ্ন জায়গায় একটা গ্যারেজ। গ্যারেজের প্রধান দরজা রাস্তায় উন্মুক্ত। পেছনের ছোট্ট দরজা দিয়ে অর্ণবকে ভেতরে ঠেলে দেয়া হলো। ঘুটঘুট্টি অন্ধকার, ভ্যাপসা গরম আর বিশ্রী রকমের একটা গন্ধ ভেতরে। অর্ণবের দম বন্ধ হয়ে যেতে চাইল। মনে হলো এক্ষুণি ও বমি করে ফেলবে। নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণেও ওকে এমন বিপদে পড়তে হলো। রাগে নিজেই নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু হাতটা যে বাঁধা! কিছুক্ষণ বেশ ভারি ভারি শব্দ হলো বাইরে। বাড়ি ছেড়ে দিচ্ছেন জগলুল পাশা। অর্ণব একটু স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করল। এই মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা না রেখে চিন্তা করলে হয়তো মরতেই হবে ওকে। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকল অর্ণব। যখন ওর মনে হলো কেউ আর নেই তখন কসরৎ করে উঠে দাঁড়ালো। দরজাটা কাঁধ দিয়ে আস্তে আস্তে ধাক্কা দিয়ে দেখল। উঁহু- নড়ানো যাচ্ছে না! (চলবে)
মন্তব্য
উঁহু উঁহু ।
কী হলো?
খুলছে না। নড়ছেই না তো.. । কঠিন ধাঁধাঁ।
কঠিন ! কঠিন !!
আপনি যখন লেখাটা লিখেছেন তখন বয়স কত ছিল ভাই? এমন ছড়া বানানো.. বাপ্স। এখনো ঢুকছে না কিছু মাথায়।
এত দিনের কথা সে কি আর মনে আছে ভাই!!!!
অর্ণব ব্যাটা বেকুব
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কোনো সন্দেহ নাই!!!!!!
নতুন মন্তব্য করুন