যখন খুব অল্প পরিচিত রুয়া ঊঠা নেড়ী কুকুরটা তার পাশে বসলো, কুকুরেরা যেভাবে বসে সেইভাবে, মনসুরের মনে হলো তার পাশে একজন মানুষ চাই । ঘন্টাখানেক একইভাবে ঝিম মেরে, ডিম প্রহরী উষ্ণতাদায়িনী মুরগীর মত সে উত্তপ্ত করছিল বা পাহারা দিচ্ছিল ব্যাস্ততাহীন মাটি আর তার নিতম্বের মধ্যেকার বায়বীয় শূন্যতা । আকাশ একটু মেঘলা, কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছেনা । সাত সকালে, আসমা কাজে বেরুবার ঠিক আগে বিছানায় মৃদু আলস্যের সাথে সংগ্রামরত মনসুরকে বলে গিয়েছিল, চালের ফুটার নিচে কাসেম মিয়ার ভাংগারীর দোকান থেকে কেনা জং ধরা বালতি টা যেন পেতে দেয়, নতুন লেপা ঘরের যেন শ্রী হত্যা না হয়ে যায় । সে এখনো তা দেয়নি । পুরোপুরি মিউয়ে যাওয়া মুড়ি দিয়ে সকালের খাওয়া টা সারার পর থেকেই তার ঘরের পিছনের দিকে এসে তার এই ঝিম অবস্থান ।
কুকুরটা লেজ নাড়ছে এমনভাবে, যেন কোন নৈকট্যের সন্ধান পেয়েছে । বস্তির এই নির্জন পেছনের দিকটা মনে হয়, নৈকট্য তৈরীর জন্যই স্বাভাবিক । গেল হপ্তায় মনসুরের দোস্ত উসমানের ছেনাল বউটা, পাশের ঘরের ছোট লস্করের সাথে এখানে এসেছিল । বস্তি মালিকের অনেক দিন গরিমসি করার পরে অবির্ভূত বস্তির এই সীমানা দেয়াল ও তার ঘরের পেছনের জায়গাটুকু, যাকে অধো অন্ধকার করে রেখেছে তিনটি অফলা নারিকেল গাছ, সেই আধো অন্ধকারে দুজন আধানেংটা আলুথালু মানুষকে সুউচ্চ বিকারের সাথে তার ঘরের বেড়ার ফুটা দিয়ে দেখে ফেলেছিল । আজন্তে হাত চলে গিয়েছিল লুংগির নিচে, দু উরোর ফাঁকে এবং ব্যাথার কুকড়ে উঠেছিল । উত্তেজনায় ভুলে গিয়েছিল, নিভৃত, অনেক দিনের ক্ষুদার্থ অংগে বিষফোড়ার কথা । তার যন্ত্রনার অস্ফুট শব্দে ভীত হয়ে পরেছিল দুটি উত্তেজিত বিভ্রান্ত শরীর , তৎক্ষনাৎ আদিমতা মেরামত করে , শরীর ঢেকেঢুকে পালাল দুজন ।
প্রায় তিনমাস আগে, যে রাতে আসমার সাথে , বিছানায় স্বরনাতীতকালের সবচেয়ে বেশী হুলুস্থুলু হয়েছিল, তার পরের দিন সকালে জলবিয়োগের সময় মনসুর অনাহূতভাবে আবিষ্কার করে, তার অন্ডকোষে ব্যাথ্যা আর লালা চাকা চাকা দাগ । একটু পরেই তার রিকশা নিয়ে বের হয়ে যাবার কথা ছিল , কিন্তু ব্যাথার জন্য বের হতে পারে নি । আসমা চলে গিয়েছিল কাজে, সে যে বাসায় কাজ করে, সেই বাসার খালা, খালু আর ভাইয়া ৮ টার মধ্যে বের হয়ে যান । তাই অনেক ভোরেই বের হতে হয় তাকে । সারা সকাল দুপুর ব্যাথায় কাতরানোর পরে আসমা এসে, তাকে ধরে ধরে দক্ষিণ বাজারের বুড়া ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল । কয়েকটা ঔষুধ আর মলম লিখে দিয়ে ডাক্তার বলেছিল সাপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে । সেই সাপ্তাহ আজো পার হলো না ।
তাই সে ঘরে বসে থাকে, সকাল দুপুর । দুপুরে আসমা খাবার নিয়ে আসে, সে সেগুলো গোগ্রাসে গিলে, একই ব্যবস্থা রাতেও, তার আগে আসমা আবার কাজে চলে যায় । পশুর মত খাটে মেয়েটা সারাদিন আর সে সময়টা ঢের ঢের অবসর । ঘরের পেছন দিকটায় এসে বসে শূন্যতাকে উষ্ণতা দেয়, পড়শীদের নিত্য দিনের ঝগড়া, অশ্লীল খিস্তি খেঊর শোনে । আসমা ভালো মেয়ে, তাকে তার সাম্প্রতিক অকর্মন্যতা নিয়ে কথা শোনায় না ।
এই মাত্র বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল । মনসুর উঠে গিয়ে বালতি টা পেতে দিল । এখন ঘরে বসে বসে আসমার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কাজ নেই । বালতি পাতা মাত্রই যখন অসমার জন্য অপেক্ষা করা শুরু করতে যাবে, তখনই আসমা দৌড়াতে দৌড়াতে ঘরে এসে ঢুকল । তার হাতে দুটো খাবারের প্যাকেট । মনসুর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ
- এতো তারাতারি চইল্ল্যা আইলি যে!
- খালা বাসায় নাই, দ্যাশে গ্যাছে, ভাইয়াও নাই, খালু একলা বাসায়, কাজ নাই, তাই চইল্যা আইসি । দ্যাখো, তুমার জইন্য কি আনছি !
- কি? কি আনছোছ ?
- বিরানি, বিরানি আনছি । ছাগলের। লও, খাইয়া লও ।
- কই পাইলি বিরানি?
- খালু কিন্না দিছে ।
- বিরানি কিন্না দিলো কেন? কি জইন্নে দিসে ?
- দিতে ইচ্চা হইসে, দিসে । আর কথা কইয়ো না তো! লও খাইয়া লও ।
মনসুর কথা বাড়ালো না । বড়লোকদের খেয়ালগুলো সে বুঝতে পারে না, তেমন । হাত ধুরে খেতে বসলো । প্রথম লোকমা দিল মুখে । আহা কি স্বাদ ! ............
দুজনে খাওয়ার পরে একটু শুল । আসমা এমনিতে শোয় না । ফুসরৎ পায় না । আজকে আর কাজে যাওয়া লাগবে না । খালু নাকী বলে দিয়েছে ।
হঠাৎ উসমান একহাত রাখলো আসমার পুষ্ট বাম বুকে । আসমা কেঁপে উঠল একটু , এভাবে সে কাঁপে না , এরকম সময় । কাল সন্ধ্যায় তো এই রকম আধাখেচরা করেছিল, তখন এমন করেনি । উসমান ব্লাউজের হুক খুলতে লাগল । আসমা নিথর । বেরিয়ে গেল, কালো তুলতুলে ।
ঠিক ডান স্তনের বোটার বাম পাশে পরিস্কার দাতের ছাপের মত দেখতে পেলো । কাল সন্ধ্যাও তো এটা ছিল না?
চকিতে খালুকে সে দেখতে পেল আসমার বুকে দাঁত গুজেছেন । বসিয়ে দিয়েছেন দাঁত । আসমা কি সুখ পাচ্ছে ? আসমার মুখটা দেখার চেষ্টা করলো । না , আসমা সুখ পাচ্ছে । কিন্তু মুখটা বিব্রত , বিভ্রান্ত ও সুখী । ঠিক যেন উসমানের ছেনাল বউটার মতো ।
ধ্যাত্ত্যেরি ! কি ভাবছে এসব ! এটা সেই হয়তো দিয়েছিল, কাল রাতে, ঘুমের ঘোরে !!
আসমা উসমানের চোখের বিভ্রান্তিকে দেখতে পেল । উসমানের ভেতরের সন্দেহের দোলা টের পেল !
হঠাৎ বলে উঠলো আসমাঃ
- আজকে বিরানি টা অনেক স্বোয়াদের হইছে না আজকে?
মন্তব্য
এভাবেই হয়তো অসুন্দরকে পাশ কাটিয়ে আমরা প্রবেশ করতে চেষ্টা করি যাপিত জীবনে। পেছনের অন্ধকারকে ভুলে পদক্ষেপ ফেলতে চেষ্টা করি আলোকিত আঙিনায়।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
পড়েছেন বলে, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ।
সৌন্দর্য্যে কাতর হয়ে পরার পরপরই হতাশ হয়ে পরি, তাঁর নশ্বরতায় ...
ভালো লাগলো।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ধন্যবাদ, সৌরভ ।
সৌন্দর্য্যে কাতর হয়ে পরার পরপরই হতাশ হয়ে পরি, তাঁর নশ্বরতায় ...
ভাল...
---------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
ধন্যবাদ, রাফি ।
সৌন্দর্য্যে কাতর হয়ে পরার পরপরই হতাশ হয়ে পরি, তাঁর নশ্বরতায় ...
আপনি খুব ভাল লেখেন। জীবনধর্মী লেখাটা পড়ে ভাল লাগল। খুব সত্য ঘটনা আমাদের সমাজের। সামনে আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য আন্তরিক শুভকামনা।
--------------------------------------------------------
নতুন মন্তব্য করুন