লকডাউন ভাবনা ১

জিপসি এর ছবি
লিখেছেন জিপসি [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২২/০৩/২০২০ - ৩:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিমলদা কে খুব মিস করছি বিগত দুই সপ্তাহ ধরে। মানুষটা কি এখনও বেঁচে আছে বাংলার কোন জনপদে? মহল্লার মোড়ের আলো ঝলমলে দোকানটা তো উঠে গেছে সেই কবে। দেয়ালে ছাঁটা পার্শ্বচিত্রের সেই সব সুকেশী রুপালি পর্দার নায়কদের অনেকেই আজ বয়সের ভারে কেশহীন।

সদ্য বয়ঃসন্ধি পেরুনো মহল্লার বালকের কোমল শ্মশ্রু আর কেশের পরিচর্চা করে শুরু হয়েছিল এক দীর্ঘমেয়াদি অনামী সম্পর্কের। পাশের ঝুপড়ির চায়ের দোকানের সিঙ্গারার আকর্ষণে জমায়িত মানুষের ভিড়েই গড়ে উঠে এক পাসওয়ার্ডবিহীন হটস্পট। কারণে আর অকারণে দিনের নানা প্রহরে নিজেকে বন্ধু পরিবেষ্টিত অবস্থায় খুঁজে পেতাম সেই গলির মোড়ে।

তারপর ধীরে ধীরে মনের অজান্তেই ভুলে গেলাম হটস্পটের ঠিকানা। তারুণ্যের হাজারো নতুন ঠিকানার জৌলুষে মলিন হয়ে গেল দাদার দোকানের ঝলমলে আলো। ঢাকা শহরের নিয়ন বাতির হলদে আলোয় চোখ ভাসিয়ে বেশ রাতে ফিরে আসতাম ঘিঞ্জি গলির বাসায়। রিক্সাওয়ালা ডানে মোড় নেয়ার সময় হয়ত হঠাৎ চোখাচোখি হয়ে যেত দাদার সাথে। দিনশেষের এক ক্লান্ত হাসি বিনিময় হত দুজনের।

সেই হাসিমুখটাই মিস করছি দুই সপ্তাহ ধরে। লকডাউনে সব থেমে থাকলেও থামছে না কেশের প্রসার। জানুয়ারি মাস শেষ হওয়ার আগেই চীনদেশীয় নরসুন্দর বিনা নোটিশে পালিয়েছে জানিনা কোথায়। সরকারি আদেশে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সব সেলুন বন্ধ। সরকারি গেজেট মাথায় ঢুকলেও মাথা ঢেকে রাখা কেশগুচ্ছ সেই গেজেটের তোয়াক্কা করছে না।

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় বন্ধ চোখে দেখি ঝলমলে আলোকিত বিমলদা'র সেলুনের আয়নায় সদ্য কৈশোরে পা দেয়া নিজের ছবি, পেছনে কাঁচি হাতে দাদার হাসিমুখ।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

লকডাউনের বাংলা প্রতিশব্দ চোখে পড়লো, "পরিরোধ"।

আপনার লকডাউন ভাবনা চলুক। সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

জিপসি এর ছবি

লকডাউন শব্দের বাংলা হিসেবে 'অবরুদ্ধ' একটু বেশি সহজবোধ্য।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

------------------------------------------------------------------------------
জিপসিরা ঘর বাঁধে না,
ভালবাসে নীল আকাশ

হিমু এর ছবি

অবরোধ = Siege। অবরোধের মধ্যে দুটো পক্ষ আছে, একটা আরেকটাকে অবরুদ্ধ করে। পরিরোধের জন্য একটা পক্ষই যথেষ্ট। একটু সূক্ষ্ম পার্থক্য, কিন্তু আছে।

জিপসি এর ছবি

ব্যাকরণগত ভাবে 'পরিরোধ' উপযুক্ত হলেও পাবলিক এটা খাবে না ; এখন পর্যন্ত যা দেখছি তাতে 'ঘরতাল' এর মার্কেট ভালো পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

------------------------------------------------------------------------------
জিপসিরা ঘর বাঁধে না,
ভালবাসে নীল আকাশ

হিমু এর ছবি

লেখক যদি খান... সে ভরসাতেই আপনাকে জানানো।

জিপসি এর ছবি

পরবর্তী ভাবনা গুছিয়ে লেখার চেষ্টায় ব্যস্ত আছি হিমু ভাই...... বন্দি জীবনের হতাশায় সেটাও মন মত হচ্ছে না। সরকারি গেজেট অনুযায়ী বাসা থেকে ২০০ মিটার দূরে গেলেই বুকপকেটে ফাইনের রসিদ ঢুকিয়ে দিবে!

পাশের ফ্ল্যাটের বারান্দায় খাঁচায় আটকে থাকা পাখিটাকে একটু বেশি আপন মনে হচ্ছে আজকাল।

------------------------------------------------------------------------------
জিপসিরা ঘর বাঁধে না,
ভালবাসে নীল আকাশ

হিমু এর ছবি

আপনি আপনার পাড়ার মানুষদের বাঁচিয়ে রাখছেন, নিজের পরিবারকে নিরাপদে রাখছেন, এভাবে চিন্তা করে দেখুন? এতে সান্ত্বনা হয় না, জানি। এমন পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না।

মন মাঝি এর ছবি

কিন্তু লকডাউনের মধ্যে যে একটা গদাম বা দড়াম ভাব আছে - যেন একটা পাহাড়ের তলা দিয়ে আলো-আঁধারির মধ্যে খননকৃত ভীতিকর প্রাচীণ পাথুরে সুড়ঙ্গপথ দিয়ে আপনি জান হাতে দৌড়ুচ্ছেন একাকি আর প্রতিটি টার্নে ডান-বাম-সামনে বা পিছনে একটি করে শত-শত টন ওজনের বিশাল পাথুরে দরজা উপর থেকে দড়াম করে মাটি কাঁপিয়ে আছড়ে পড়ে গুহামুখ বা সুড়ঙ্গমুখ বন্ধ করে দিচ্ছে একে একে.... এখুনি বেরুতে না পারলে একটু পরেই আটকা পড়ে যাবেন আপনি চিরতরে এই জীবন্ত সমাধিতে.... এমন একটা যেন ভাব আছে যেন "লকডাউনের" মধ্যে!!! আর "পরিরোধ" শুনলে মনে হয় কোন এক সৌখিন বাঙালি কবি কাঁধে ঝোলা ঝুলিয়ে ফিনফিনে পাঞ্জাবী গায়ে কবিতা উৎসবে কবিতা পড়তে যাচ্ছেন!!! হা হা হা....

****************************************

হিমু এর ছবি

তাহলে তো আরো ভালো। আটকও থাকলেন আবার আমোদও পেলেন।

পরিরোধের বিকল্প হিসেবে হরতালের সাথে ছন্দ মিলিয়ে "ঘরতাল"ও দেখলাম।

রাজর্ষি  এর ছবি

চোখ বন্ধ করে কল্পনায় বিমলদার সেই হাসিমুখ যেন দেখে নিলাম। চিরচেনা প্রাত্যহিক বাঙালির মুখ, যেমন হয়।

ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সময় চুল কাঁটাতাম এক সেলুনে, সেই লোকটা কাঁচি চালাতে চালাতে গল্প বলতে শুরু করত। শুনছে কিনা তা দেখার ফুসরত নেই, কথা চলছেই, তার বাড়ির গল্প, নেত্রকোনা, বারহাট্টা, নববধূকে ফেলে আসা কাজের টানে, কী নেই!

দূর জনপদে, সে লোকটা কেমন আছে কেজানে!

রাজর্ষি

জিপসি এর ছবি

বাংলাদেশে থাকা কাজিনরা লেখা পড়ে বিমলদা'র খোঁজে নেমেছিল কোমর বেঁধে। লাভ হয়নি।
কিছু কিছু চরিত্র জীবনে আসে জীবনের প্রয়োজনেই। প্রয়োজন ফুরোলে তাঁকে আর খুঁজে লাভ নেই।

------------------------------------------------------------------------------
জিপসিরা ঘর বাঁধে না,
ভালবাসে নীল আকাশ

সোহেল ইমাম এর ছবি

এই ঘরতালের মধ্যে আমারও সেলুনওয়ালা পালিয়েছে। কালোবাজারীতে দু’একজন সেলুন খুলেছে রুদ্ধদ্বার পন্থায় কিন্তু সেখানে গান বাজছে “করোনা ধারায় এসো”, কাজেই বাড়িতেই মাথাটা কামিয়ে নিয়েছি। লেখাটা ভালো লাগলো, একা নই এটাই সান্তনা দিচ্ছে। আমরা হয়তো একেবারে একা হয়ে যেতে অভ্যস্ত নই।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

জিপসি এর ছবি

সেলুন খুলবে জুন মাসে। বাসায় বসে আমিও একবার কেটেছি, অভিজ্ঞতা আর পরিণতি দুটোই ভয়াবহ।

------------------------------------------------------------------------------
জিপসিরা ঘর বাঁধে না,
ভালবাসে নীল আকাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।